আলোকবর্ষ পেরিয়ে পর্ব-০৬

0
439

#আলোকবর্ষ_পেরিয়ে ( উপন্যাসটি সম্পূর্ন পোস্ট হবে অক্ষরের পেজে ) ( ষষ্ট পর্ব )
#ঈপ্সিতা_মিত্র
<১২>
সেদিন এরপর ঐশী একটু অবাক হয়েই বলেছিল,
—-” তুমি এখানে?”
এই প্রশ্নে অভীক আস্তে গলায় ই উত্তর দিয়েছিল,
—-” না মানে তোমাকে নিতে এলাম। তিনদিন ধরে এখানে!”
কথাটা শুনে ঐশী স্থির গলায় বলেছিল,
—-” কিন্তু আমি তো এখন যাবো না। কদিন থেকে যাবো।”
এই উত্তরে অভীক সঙ্গে সঙ্গেই বলে উঠেছিল,
—–” যাবে না কেন? কি হয়েছে? ”
ঐশী এই প্রশ্নের উত্তর দিতে যাবে, এমন সময়ই ওর বাবা এসে বলেছিল হঠাৎ পাশ থেকে,
—– ” আরে অভীক তুমি এখানে! আর বাইরে দাঁড়িয়ে কেন! ভিতরে এসো। কি রে ঐশী, তুই ছেলেটাকে এইভাবে বাইরে দাঁড় করিয়ে কথা বলছিস কেন!”
প্রশ্নগুলো এক সাথে করেছিল ঐশীর বাবা, কিন্তু এই মুহূর্তে ঐশী আর দরজা আটকে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনি এরপর। সরে এসেছিল অভীক কে ঢোকার রাস্তা করে।
অভীক সেই মুহূর্তে ড্রয়িং রুমে ঢুকে বলেছিল,
——” আসলে ঐশী তো কদিন হলো এখানে আছে, তাই ওকে নিতে এসেছিলাম। ”
ঐশী এই কথায় আবার বলে উঠেছিল কিছুটা দৃঢ় গলায়, ——” আমি যাবো না আজ। আরো কদিন থাকবো বাবার সাথে।”
অভীক সেই মুহূর্তে কথাটা শুনে কেমন অসহায় মুখে দাঁড়িয়ে ছিল যেন। কিন্তু ঐশীর বাবা অভীক কে দেখে বুঝেছিল ব্যাপারটা। নিশ্চয়ই কোন মন কষাকষি হয়েছে দুজনের। তাই এইভাবে মান অভিমান, দূরে থাকার পর্ব চলছে। তাই নিজেই এবার বলে উঠেছিল,
—–” অভীক, তুমি আজ থেকে যাও এখানে। এমনিও তুমি এত ব্যাস্ত থাকো, আসা তো হয় না বিশেষ। আজ যখন এসেছ, তখন আর ছাড়ছি না!”
কথাটা শুনে অভীক একটুও সময় না নিয়ে হাসি মুখে বলেছিল,
——” হ্যাঁ, আমিও সেটাই ভাবছিলাম। থেকেই যাই এখানে। ”
কিন্তু এই মুহূর্তে ঐশী একটা অজুহাত সাজিয়ে সঙ্গে সঙ্গে বলেছিল,
—– ” কিন্তু ও থাকবে কি করে! মেঘা বাড়িতে একা আছে। না না, তুমি বাড়ি যাও। পরে এসো আবার।”
অভীক ঐশীর এই রকম কথার আসল মানেটা বুঝতে পেরেছিল। আসলে ঐশী অভীক কে দূরেই রাখতে চায় নিজের থেকে, তাই এইভাবে বলছে। কিন্তু অভীক তো এই দূরত্ব দূর করবেই যেভাবে হোক। কথাটা ভেবেই ও বলেছিল আলতো হেসে,
—–” বাড়িতে অনেক কাজের লোক আছে। মেঘা একা তো নেই। আর এর আগে যখন আমরা দুজন কাশ্মীর গেছিলাম, তখনও মেঘা একাই ছিল বাড়িতে। তাই ওর কোন প্রব্লেম হবে না। ডোন্ট ওরি।”
কথাগুলো বেশ জোর দিয়ে বলেছিল অভীক, তাই আর ঐশী এর বিপক্ষে কোন যুক্তি দেখাতে পারেনি। চুপ করে গেছিল হঠাৎ সেই জন্য।
কিন্তু এরপর ডিনার টেবিলেও অভীক এর সামনে নিঃস্তব্ধ ই ছিল ঐশী! অভীক যদিও টুকটাক কথা এগোনোর চেষ্টা করছিল; এই যেমন ” রান্নাটা খুব ভালো হয়েছে “, ” বাবার সাথে এই কটা দিন কেমন কাটলো?” , ” মেঘা খুব মিস করছে সব সময় ঐশীকে ” , এরকম নানা রকম এলোমেলো কথা। কিন্তু ঐশী সব কথারই একটা কি দুটো শব্দে উত্তর দিচ্ছিল ওকে। যাইহোক, এরপর বেডরুমে এসে ঐশী একেবারেই চুপ করে গেছিল যেন। আলো নিভিয়ে অভীকের থেকে মুখ ফিরিয়ে এমনভাবে শুয়েছিল, যেন অভীক ওই ঘরেই নেই। এটা যে অভীকের সেদিনের ব্যবহারের উত্তর ছিল নীরবে, সেটা বুঝেছিল ও। কিন্তু এই মূহুর্তে অভীক আর দূরে সরে থাকতে পারেনি। মুখ ফিরিয়ে শুয়ে থাকা ঐশীকে জরিয়ে ধরেছিল হঠাৎ পেছন থেকে। ঐশী যদিও সঙ্গে সঙ্গেই নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করেছিল। অভীকের হাতটা সরিয়ে দিতে চেষ্টা করেছিল রাগে অভিমানে। কিন্তু পারেনি। অভীক আসলে নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে যেন বেঁধে রাখতে চেয়েছিল ওকে। ঐশীকে আঁকরে ধরেছিল ও ভীষণ ভাবে, আর এই আঁকরে থাকার মুহূর্তেই ওর কানের কাছে এসে বলেছিল ধীর গলায়, ” সরি, মাঝের এই দিনগুলোর জন্য। আমার ওইভাবে চুপ করে থাকাটা উচিত হয়নি। প্লিজ আর এইভাবে দূরে সরিয়ে রেখো না আমাকে। বাড়ি চলো। ”
ঐশী কথাগুলো শুনে কিছু আর বলতে পারেনি। অস্ফুটে কেঁদে ফেলেছিল কেমন। রাগ অভিমানগুলো যেন হঠাৎ গলতে শুরু করেছিল ওর। অভীক সেই মুহূর্তে আরো বেশি করে জরিয়ে ধরেছিল ওকে। জোর করে ঐশীকে ঘুরিয়ে নিয়ে ছিল নিজের কাছে, তারপর চোখের জলটা মুছিয়ে ছিল আলতো করে। ঐশী তখন নিস্পলক দৃষ্টিতে এক পলক তাকিয়ে ছিল শুধু অভীকের দিকে। আর খেয়াল করেছিল অভীকের ভিজে চোখের কোণ। ছেলেটা কাঁদছে! কথাটা ভেবেই ঐশী আর চুপ করে থাকতে পারেনি। ও নরম স্বরে বলেছিল,
——” কি হয়েছে? তুমি কাঁদছো? ”
অভীক তখন থমকে থাকা গলায় উত্তর দিয়েছিল,
—– ” না, কিছু না। এমনি। আমি জানি আমি মেঘা কে নিয়ে একটু বেশীই ভাবি। আর ওকে নিয়ে চিন্তার মধ্যে থাকলে আমার আর কোন কিছুই মাথায় থাকে না! কারোর সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে করে না। কিন্তু আই প্রমিজ, এই কদিন যেটা হয়েছে, এরকম আর কখনো হবে না। প্লিজ, তুমি বাড়ি চলো কাল।”
কথাটা বলেই অভীক আরো বেশি করে আঁকরে ধরলো ঐশীকে। কেমন বাচ্চার মতন ওর বুকে মাথা রেখে নিজের শরীর মনের পুরো ভারটা দিয়ে দিল ঐশীর ওপর। এই মুহূর্তে ঐশীর খেয়াল হলো, ছেলেটার মা বাবা নেই। ছোট থেকে অনেক দায়িত্ব, খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে গেছে। ফ্যামিলি বলতে কাছের মানুষ ছিল শুধু ঐ এক বোন! তাই হয়ত ওকে নিয়ে এত চিন্তা! আগলে রাখার এরকম চেষ্টা! কথাগুলো মনে হতেই আর রাগ করে থাকতে পারলো না ঐশী কিছুতেই। আসলে অভীকের প্রতি একটা অদ্ভুত মায়া এসে ঘিরে ধরলো ওকে। তাই আলতো করে ওর কপালে হাত বুলিয়ে দিল ঐশী। তারপর আস্তে গলায় বললো,
—– ” আমি যাবো কাল। ”
এটা শুনে অভীক ওকে ভালোবাসতে শুরু করলো আরো বেশি করে। একদিনের দূরত্বকে শেষ করে রাতটাকে ভরিয়ে দিল আদরে, ঠোঁটের নরম ছোঁয়ায়।
<১৩>
সেদিনের পর ঐশী ফিরেছিল অভীকের সাথে বাড়ি। দিনগুলো এরপর ভালোই চলছিল বেশ। ঐশী রোজের মতন ব্যস্ত থাকতো নিজের রান্না, অফিস, এই সমস্ত কিছু নিয়ে; অভীক ব্যাস্ত থাকতো এজ ইউজুয়াল বিজনেস নিয়ে, আর মেঘা নিজের লাইফ, কলেজ, পড়াশোনা, এসব নিয়ে। তবে এর মধ্যে একদিন মেঘা কলেজ থেকে ফেরার সময় এড দেখলো একটা মোবাইলে। গাড়ি ড্রাইভিং শেখানোর এড। ব্যাস, সেটা দেখার পর মেঘা কিছুতেই আর নিজেকে আটকাতে পারলো না। ড্রাইভিং শেখার ইচ্ছে এমনিতেও ওর বহুদিন ছিল। আর এডটা দেখে সেই ইচ্ছেটা আরো বেড়ে গেল। আগে হলে যদিও কথাটা নিজের মনেই রাখতো। কিন্তু বৌদিভাই আসার পর ওর ছোট বড় ইচ্ছে গুলো পূরণ হচ্ছে যেহেতু ধীরে ধীরে, তাই সাহসটা একটু বেড়ে গেছে যেন। দাদাকে ঠিক কোনভাবে বুঝিয়ে রাজি করিয়েই নেবে বৌদিভাই আর ও। কথাগুলো ভেবেই সেদিন বাড়ি ফিরে ঐশীকে বলেছিল সব। মোবাইলের এডটাও দেখিয়েছিল নিজে থেকে। ঐশী এরপর আর কি বলে! মেঘার মুখের ওপর না বলতে ও সত্যি পারে না। মেয়েটা এখন ওর একদম নিজের বোন হয়ে গেছে যেন। আর ও তো অন্যায় কোন আবদার করছে না। ড্রাইভিং শিখে রাখা তো ভালো। কখন কি কাজে লেগে যায়! কথাগুলো ভেবেই ও ওই ড্রাইভিং ইনস্টিটিউট এর ফর্ম নিয়ে মেঘার সাথে হাজির হয়ে ছিল অভীকের সামনে। অভীক সেই মুহূর্তে কোন একটা ফিন্যান্স এর ফাইল চেক করছিল মন দিয়ে। হঠাৎ এর মধ্যে ঐশী আর মেঘাকে একসাথে দেখে একটু অবাক হয়ে ছিল। তারপর নিজে থেকেই জিজ্ঞেস করে উঠেছিল,
—— ” কি ব্যাপার? কিছু বলবে?
ঐশী এটা শুনে নিঃশব্দে ইনস্টিটিউটের ফর্মটা রেখেছিল অভীক এর সামনে, টেবিলে। অভীক এটা দেখে ঠিক কিছু বুঝতে পারেনি! হঠাৎ ড্রাইভিং ইনস্টিটউটের ফর্ম কিসের জন্য! কথাটা ভাবতেই ঐশী নিজে থেকে বলেছিল,
——” মেঘা ড্রাইভিং শিখতে চায়। ও এই ফর্মটা এনেছে তাই। তুমি যদি পারমিশন!”
না, কথাটাকে ও ঠিক শেষ করতে পারলো না। তার আগেই অভীক একটা শব্দে খুব কঠিন গলায় উত্তর দিল, ——” ইমপসিবল..”
ঐশী এই কথাটা শুনে সঙ্গে সঙ্গে খুব বোঝানোর মতন করে বলে উঠেছিল ওকে,
—–” প্লিজ অভীক। মেঘার সত্যি খুব ইচ্ছা ড্রাইভিং শেখার। আর ড্রাইভিং জেনে রাখলে তো খারাপ কিছু না! সব সময় ড্রাইভারের ওপর ডিপেন্ড করতে হবে না। ”
কথাগুলো বেশ জোর দিয়ে বলেছিল ঐশী। কিন্তু অভীক সব শুনেও ভীষণ কঠিন গলায় ই উত্তর দিয়েছিল,
——” কক্ষনো না। বাড়িতে অনেক ড্রাইভার আছে। ওর একা একা গাড়ি চালিয়ে কোথাও যাওয়ার কোনই দরকার নেই। আর ড্রাইভিং শিখতে গিয়ে যদি কোন এক্সিডেন্ট হয়ে যায় তখন! এই কথাটা জাস্ট মাথা থেকে বার করে দে মেঘা।”
কথাটা বেশ অর্ডারের সুরে বলেছিল অভীক। কিন্তু মেঘা এবার কেঁদে ফেলেছিল হঠাৎ। তারপর কিছুটা জেদ করেই বলেছিল,
——” আর কত তোর কথা শুনবো! লাইফটা আমার। ডিসিশন গুলোও আমিই তো নেব! আমার অনেকদিন ড্রাইভিং শেখার ইচ্ছা। প্লিজ আমাকে একটু ইন্ডিপেন্ডেন্ট হতে দে এবার। প্লিজ..”
কথাগুলো বলেই মেঘা আর দাঁড়ালো না। জোড়ে পা চালিয়ে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে অভিমানে। কিন্তু এরপরও অভীকের মন গললো না। তবে মেঘার সেদিন থেকে একটা জেদ চেপে গেছিল যেন! ড্রাইভিং ও শিখবেই। যে কোন মূল্যে। তাই রাগে খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল হঠাৎ। ঐশী এসব দেখে আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলো না, পরের দিন ব্রেকফাস্ট টেবিলে ও কিছুটা অধৈর্য হয়েই বললো অভীককে,
—– ” মেঘা কাল রাত থেকে কিছু খায়নি। প্লিজ তুমি রাজি হয়ে যাও। আর ড্রাইভিং শিখলে প্রবলেমটা কোথায়; এটাই আমি বুঝতে পারছি না!”
অভীক এই কথার উত্তরে সেই আগেরদিনের মতন কঠিন গলায় ই বললো,
—–” মেঘা যা বলবে সেই সব কথাই যে আমাকে শুনতে হবে, এরকম কোন মানে নেই। আমার এখনও মনে আছে, ও যখন স্কুলে, তখন একবার সাইকেল শিখতে গিয়ে গাছে ধাক্কা মেরেছিল। হাতটা ভেঙে তারপর কি অবস্থা! দেড় মাস প্লাস্টার রাখতে হয়েছিল হাতে। আর এটা তো গাড়ি! কোনভাবে যদি একটা এক্সিডেন্ট হয়ে যায়, তখন! আমি জানি, মা বাবা বেঁচে থাকলেও ওকে ড্রাইভিং শেখার পারমিশন দিত না। যাইহোক, তুমি চিন্তা কোরো না। মেঘার এটা পুরনো থিওরি। অনশন করে নিজের কথা মানিয়ে নেয়। কিন্তু এইবার সেটা হবে না। আর কিছুক্ষণ বাদে যখন খিদে পাবে, তখন আপনাআপনি ই জেদ শেষ হয়ে যাবে।”
কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে অভীক আর কোন প্রত্যুত্তর শোনার অপেক্ষা করেনি। ব্রেকফাস্ট শেষ করে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গেছিল অফিসে। কিন্তু অভীকের ভাবনাটা মেলেনি ঠিক। মেঘা সেদিন দুপুরেও কিছু খায়নি। এমনকি অনেকক্ষণ দরজা বন্ধ করে বসেছিল নিজের ঘরে। ঐশী এইসব দেখে আর আটকাতে পারলো না নিজেকে। মেঘার যখন এত ইচ্ছা ড্রাইভিং শেখার, তখন আর না বলার জায়গা নেই। ঐশীকে এই মুহূর্তে অভীকের কথা না শুনে ডিশিশনটা নিতেই হবে। কথাটা ভেবে ও ড্রাইভিং শেখার কোর্সের পুরো টাকাটা মেঘাকে দিয়ে দিল সেদিন নিজের স্যালারি থেকে। শুধু তাই না, ড্রাইভিং ইনস্টিটিউটে গিয়ে মেঘার এডমিশনও করে দিল অবশেষে।
তবে এরপর যে বাড়ি ফিরে অশান্তি হবে, এটা ঐশীর জানা ছিল। অভীক এই পুরো ব্যাপারটা জেনে মেঘার থেকেও বেশি ঐশীর ওপর রেগে গেছিল সেদিন। তাহলে ওর কথার কোন দামই নেই কারোর কাছে! ওর এগেনস্টে গিয়েই সবাইকে সব ডিসিশন নিতে হবে! কথাটা নিজের অজান্তেই মনে এসে ভিড় করেছিল। আর অভীক সেই খারাপ লাগা থেকেই মেঘা ঐশী দুজনের সাথেই কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিল কেমন।
তবে ঐশী ওকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিল এইবারও। অভীক যখন একা একা বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল, তখন ঐশী গেছিল ওর কাছে, তারপর শান্ত গলায় বলেছিল,
—–” মেঘা ঘরের দরজা বন্ধ করে রেখেছিল নিজের। খায়নি সারাদিন কিছু। এসব দেখে আমি এই ডিসিশন টা নিয়েছি। প্লিজ তুমি রেগে যেও না! আর ড্রাইভিং শেখাটা কোন খারাপ কিছুই না! মেঘার আরেকটা স্কিল বাড়বে বরং!”
কথাগুলো বেশ জোর দিয়ে বললেও অভীক সেই মুহূর্তে ঐশীকে মুখের ওপর থামিয়ে দিয়ে বলেছিল,
——-” আমি আর এই নিয়ে কোন কথা বলতে চাই না। তোমাদের যেটা ঠিক মনে হয়েছে, করেছো। আর সেটার জন্য কোন এক্সপ্লিনেষণ দেওয়ার দরকার নেই আমাকে।”
কথাটা বেশ গম্ভীর ভাবেই বলেছিল অভীক, তাই ঐশী আর কোন উত্তর দিতে পারেনি ঠিক। কিন্তু এরপর দু দিন অভীক ওদের কারোর সাথেই আর কথা বলেনি। মেঘা যদিও অনেক চেষ্টা করেছিল দাদার রাগ ভাঙ্গানোর। কথা বলার। তবে অভীক কোনভাবেই রেসপন্ড করেনি ওকে।
কিন্তু এরপর বাইশে এপ্রিল অভীকের জন্মদিনে ঐশী আর মেঘা প্ল্যান করেছিল একটা। অভীকের সব বন্ধুবান্ধব কে ডেকে একটা সারপ্রাইজ পার্টি দিয়েছিল সন্ধ্যেবেলা ওকে। সেদিন ঐশী অভীকের পছন্দ মতন সব কিছু রান্না করেছিল নিজে হাতে। মেঘা পুরো ড্রয়িং রুমটা সাজিয়েছিল অভীকের প্রিয় ফুল দিয়ে।
না, এরপর আর অভীক মুখ ফিরিয়ে থাকতে পারেনি কিছুতেই। এই দুটো মানুষই তো আছে ওর জীবনে; যাদের নিয়ে এত ভাবনা, এত চিন্তা! এদের ওপর আর কতক্ষণই বা রেগে থাকা যায়! কথাটা সেদিন সন্ধ্যে বেলা বাড়ি ফিরে এইসব আয়োজন দেখে মনে হয়েছিল অভীকের খুব। তাই আপনাআপনি একটা হাসি চলে এসেছিল মুখে। আর কটা দিনের মেঘলা আকাশ কাটিয়ে রোদ এসে ধরা দিয়েছিল জীবনে।

চলবে।