ইরাবতীর চুপকথা পর্ব-০২ও০৩

0
533

#ইরাবতীর চুপকথা
লেখক:হৃদয় আহমেদ
পর্ব ২ ও ৩

জ্ঞান ফিরতেই আগুন্তকের বাহুডোরে নিজেকে আবিষ্কার করবে এ দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারেনি ইরা। পিঠপিঠ করে তাকাতেই চমকে উঠলো সে। মস্তিষ্ক পরিস্থিতি বোঝাতেই তড়িৎ গতিতে দূরে সরে গেলো ইরা। আগুন্তক ছোট্ট একটা শ্বাস ফেললো। ক্ষীণ স্বরে বিরক্ত কন্ঠে বললো,

‘ ভয় পাচ্ছেন? ‘

ইরা নিজের সর্বাঙ্গে একপলক চেয়ে দেখলো। না! কোথাও কোন পরিবর্তন ঠাওর করতে না পেরে প্রশ্ন ছুড়লো ছেলেটিকে,

‘ কে আপনি? কেন ভাঙলেন আমার বিয়ে? ‘

উত্তর না দিয়েই উঠে দাড়ালো ছেলেটি। ঘারের কলার ঝেড়ে অদ্ভুত চোখে তাকালো ইরার দিকে। বললো,

‘ আপনার মস্তিষ্ক খুব ছোট। সৃতিশক্তি নেই বললেই চলে। তাও যে কিভাবে ফার্স্ট ক্লাস পাচ্ছেন এটা বুঝলাম না। বাই দা ওয়ে, আমার কাজ শেষ। আমি আসছি! ‘

ছেলেটি যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই ইরা ঝড়ের গতিতে সামনে গিয়ে দাড়ালো। থেমে গেলো আগুন্তক। প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো ইরার দিকে। ইরা কড়া গলায় বলে উঠলো,

‘ বলে যান, কেন ভাঙলেন এ বিয়ে? কেন বিয়ের আসরে পেতে হলো ধর্ষিতা তকমা? আর কে আপনি? ‘

ইরার চোখের কোনে পানি জমেছে বলতে বলতে। সেদিকে তোয়াক্কা না করেই আগুন্তক ইরার কানে ফিসফিস করে বলে উঠলো,

‘ সূদুর চীনে যাবো বলেছিলাম
গেলাম পার্শ্বদেশে,
অনেক দ্রুত ভুলেছো আমায়
থাকো এভাবে। ‘

বলেই বেলকনির দিকে ছুটলো ছেলেটি। ইরা বুঝলো না কিছু। পিছু ফিরে আর পেলো না ছেলেটিকে। তবুও একটু আশায় ছুটলো বেলকনির দিকে। কিন্তু পেলো না। এত দ্রুত দোতলা থেকে কেউ কিভাবে নামতে পারে? ইরা জানে না। হয়তো জানতে চাইলো না। তার মাথায় ঘুরছে কিছুক্ষণ আগের কথা। কি বলে গেলো ছেলেটি? কেনো বললো? হতভম্ব হয়ে বেলকনিতেই দাড়িয়ে রইলো সে। আজ বাতাসের বড্ড দাপট। সা সা শব্দ তুলে ছুটে চলেছে দমকা হাওয়া। কোথথেকে পাতাগুলো হাওয়ায় ভেসে বেলকনিতে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ছে। ইরার লাগানো দুটো কালো গোলাপের টপ পিঁজরাপোলের আসামির মতো উবু হয়ে পড়ে। ইরা ধপ করে বসে পড়লো। এ সমাজ আর তাকে ভালো চোখে দেখবে না। কেউ বুঝবে না তাকে। হয়তো চাইবেই না বুঝতে। পুরো সমাজ তাকে খারাপ চোখে দেখবে। কি থেকে কি হয়ে গেলো চোখের পলকে।

‘ ইরা কতক্ষণ থেকে দরজা ধাক্কাচ্ছি! দরজা খুলছিস না কেন? এগুলো করার আগে মনে ছিলো না? লোকে বললেই দোষ? ‘

ইরার ভাবিসহ আরও কয়েকজন বিষ মিনিট যাবৎ দরজা ধাক্কিয়ে চলেছে। এতক্ষণ যেন এগুলোর একটাও কানে আসেনি ইরার। এবার এসেছে। ইরা উঠে দাড়ালো। হালকা পশ্চিম দিগন্তের বাতাসে উড়ে উঠলো অবাদ্ধ চুলগুলো। অতঃপর দরজা খুললো। ইরা লক্ষ্যই করেনি তার বানানো ফাঁস আর চেয়ার সেখানে নেই। কেউ সড়িয়েছে। কিন্তু কে? সেই আগুন্তক?

ঘরে ডুকেই ইরার ভাবি ইলিমা এক প্রকার হামলে পড়লো ইরার উপর। কটাক্ষ স্বরে বলে উঠলো,

‘ এতক্ষণ পর দরজা খুললি যে? ‘

‘ এমনি। ‘ বললো ইরা। কন্ঠ খাদে তার।

‘ ওরা কি বললো শুনেছিস? যা বললো সব কি সত্যি? ‘

চোখ ভরে উঠলো ইরার। দু’চোখ ভর্তি জল নিয়ে করুন চোখে ভাবির দিকে তাকালো ইরা। ইলিমা ইতস্তত হয়ে পড়লেন ইরার চাউনিতে। আটকানো গলায় বললেন,

‘ বলছিস না যে? ‘

ইরা চোখ সড়ালো। হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে চোখের পানি মুছলো। সে কাউকে বোঝাতে চায় না। আর কেউ কেউ বুঝলেও না বোঝার ভান ধরে। তেমনি মানুষ ইলিমা। আজ থেকে তিন বছর আগে রিয়াদের সাথে বিয়ে হয় ইলিমার। এতোদিনের সম্পর্কে ইরার মনে পড়ে না যে কখনো ঝগড়া হয়েছে বলে। ইরাকে কখনো ইলিমা গালি দিয়েছে বলে। কিন্তু ইলিমা আজ এক কথায় কি করে এমন কুৎসা মিথ্যেটা বিশ্বাস করলো রহস্যই বটে। ভাববার বিষয় বটে। কি লাভ? ইলিমার খুব বাজে একটা স্বভাব রয়েছে। ‘লোকে কি বলবে?’ কথা মনে-প্রানে মানে ইলিমা।

‘ আব্বা আম্মা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তোকে ডাকছে তোর ভাই। ‘

ইরা তাকালো। তার পুরো পৃথিবী তার মা বাবা। ইলিমার মুখ হঠাৎ বিষন্ন হয়ে উঠলো। কথাগুলো ভারী মনে হলো ইরার। ইরা কিছু একটা ভেবে পাশ কাটিয়ে বেড়িয়ে গেলো। হাজারো আলোয় ভরা বাড়িটায় আজ আলো নেই। থেকেও নেই। খানিক আগেই যে বাড়ি মেতে উঠেছিলো আনন্দ-উল্লাসে, এখন তার বিপরীতে। বড্ড নিকষ,থমথমে।

______

ত্রপা বেগম এবং ইরফান সাহেব চিন্তায় ব্যাস্ত। চিন্তায় মাথা পাগল হয়ে যাচ্ছে। কোন ছেলে বিদেশ থেকে এসেই শহর ঘুরতে বেরোয়, তিনি কিছুতেই বুঝতে পারছেন না। না কিছুতেই না। ফোনটা অদ্ধি বন্ধ। বিদেশে থেকে কি শিক্ষা নিয়ে এসেছে এখন সন্দেহ হচ্ছে ইরফান আলীর। তার মতে, একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ ফোন বন্ধ রাখতে পারে না। সেখানে আয়াতের এমন কান্ড দেখে বেশ বিরক্ত উনি। এই নাকি বিদেশ ফেরত শিক্ষা।এর থেকে যদি দেশে বাপ মায়ের হাতে মার খেয়ে পড়তো। অনেক ভালো হতো ছেলেটি। চোখদুটিতে বিরক্তি নিয়ে ত্রপা বেগমের দিকে তাকালেন তিনি। বললেন,

‘ আজ আসুক,তার হচ্ছে। ‘

‘ পাগল নাকি? তিন বছর পর ছেলেটা আসবে আর তুমি ওকে মারবে? ‘

‘ তুমিই বলো, তিন ঘন্টা আগে বাংলাদেশের মাটিতে পা রেখেছে ছেলেটি। আর এয়ারপোর্ট থেকে কতটা দূর আমাদের বাসা? আধ ঘন্টার পথ। আর তার কোন দেখাই নেই। সে যদি মনে করে থাকে সে বড় হয়েছে তাহলে সে ভুল ভাবছে। কাঠের চলায় কিন্তু এখনো তেল লাগাতে ভুলি না আমি! ‘

ত্রপা বেগম ক্ষিপ্ত বাঘিনীর মতো গর্জে উঠলেন,

‘ যখন বলেছিলাম ছেলেটাকে গিয়ে নিয়ে আসতে তখন কি বলেছিলে মনে আছে? এখন এসব বলে কি লাভ? ছেলে হাড়ালে ওই চলা তোমার পিঠে ভাঙবো বলে রাখলাম! ‘

একনাগাড়ে কথাগুলো বলে দম ফেললেন ত্রপা বেগম। ইরফান আলী কেশে উঠলেন। নতজানু হয়ে বললেন,

‘ আমি তো ভেবেছিলাম ছেলে হয়তো একটু চালাক হয়েছে। এখনো যে গরুই আছে তা কি বুঝতে পেরেছি? এতটুকু পথ সে একা আসতে পারে না? ‘

ত্রপা বেগম একটু চুপ থাকলেন। অতঃপর নিচু কন্ঠে বললেন,

‘ তুমি একবার গিয়ে দেখো না। এতক্ষণে তো আসারই কথা। ‘

ইরফান আলীও চিন্তিত কন্ঠে বললে,

‘ ঠিক বলেছো। ‘

যেই ইরফান আলী উঠবেন, অমনি বেজে উঠলো কলিং বেল। সাথেসাথে মুখে হাসি ফুটলো ত্রপা বেগমের। ইরফান আলীর চিন্তিত মুখখানায় রাগের বিচরণ তখন। ত্রপা বেগম ছুটে গেলেন দরজা খুলতে। মিললো প্রানপ্রিয় আয়াতকে। ঘামে জর্জরিত আয়াতের সাদা শার্ট। কিছু না বলেই ক্লান্ত ভঙ্গিতে বাড়িতে প্রবেশ করলো সে। ত্রপা ছেলের কান্ড বুঝলেন না। চিন্তিত ভঙ্গিতে বললেন,

‘ কই ছিলিস তুই? ‘

আয়াত ক্লান্ত চাউনি নিয়ে তাকালো। ভরছাড়া দেহের মতো হাত পা ছেড়ে বলে উঠলো,

‘ কাজ ছিলো! ‘

‘ তা দেশে এসে বাবা-মায়ের সাথে দেখা না করে কি কাজ বেশি ইমপর্টেন্ট মনে হলো তোমার? আমাদেরও বলো। জানি একটু। ‘

ইরফান আলী গম্ভির স্বরে বললেন। আয়াত তাকালো। তার চোখেমুখে ভরা ক্লান্তি। না জানি রাজ্যের কাজ করেছে সে। বাবার দিকে ফিরে বললো,

‘ আগে ফ্রেশ হই? তারপর বলছি। ‘

বলেই একপা এগিয়ে থামলো আয়াত। পিছু ফিরে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,

‘ শুনলাম তোমরা আমার বিয়ে ঠিক করেছো? এটা কি সত্য? ‘

ত্রপা বেগম ও ইরফান আলী একে অপরের দিকে চাইলেন। অবাক হয়ে বললেন,

‘ তুই কিভাবে জানলি? ‘

#চলবে….

ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন।
#ইরাবতীর_চুপকথা
লেখক: হৃদয় আহমেদ
পর্ব ৩

অঝড়ে ঝড়ছে পানি। একঘন্টা ধরে চালু রয়েছে মাথার উপরে থাকা ঝর্ণাটা। রাত তখন এগোরাটার কাছাকাছি। হিম ঠান্ডা পানিতে মন খানেক ভারি লেহেঙ্গা পড়ে থম মেরে বসে আছে ইরা। বড্ড কষ্ট হচ্ছে তার। কাছের মানুষগুলোর থেকে পাওয়া আঘাতগুলি বুঝি রাতেই বেশি কষ্ট দেয়। বুক ফাটা আর্তনাদ করে।ঝিরিঝিরি ঝর্ণার পানিতে সর্বাঙ্গ ভিজে স্যাতস্যাতে ইরার। বারবার নাক থেকে পানি মুছে চলেছে ইরা। তার কষ্ট হচ্ছে রিয়াদের কথায়। গালে চড়া দুটো থাপ্পড় মেরেছে রিয়াদ ওকে। অথচ এই ভাইটাই সারাক্ষণ ইরা বলতে পাগল। আজ ইরার কাছে সবটা অপরিচিত। সাদিক সাহেব অসুস্থ। ইরার মা ও ভেঙে পড়েছেন। এতোকিছুর বোঝা ইরা পারলো না সহ্য করতে। ওয়াশরুমে এসেই ঝরনা ছেড়ে বসে আছে। তার মস্তিষ্ক অচল। কাজই করছে না।

পরপর কয়েকটি মেসেজের শব্দে ধ্যান ছুটলো ইরার। আসছেই মেসেজ। থামার নাম নেই। ইরা ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে এলো। ফোন হাতে নেয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে জাগলো না তার। বিছানার এক কোনে বসে আবারো তাকালো বেলকনির দিকে। মাথা ঘুরছে, ছেলেটির বলা প্রতিটা কথা অক্ষরে অক্ষরে গেঁথে রয়েছে মাথায়। আজ তার বাসর ছিলো। এতক্ষণে ইরা হতো কারো স্ত্রী। একজন নারীর প্রথম সেই রাত নিয়ে কত কল্পনা জল্পনা থাকে। ইরারও ছিলো। আকাশ নামক মানুষটার সাথে তার এরেন্জ্ঞ ম্যারেজ ঠিক হয়েছিলো ঠিকিই, কিন্তু ইরার মনে তার জন্য ছিলো ভালাবাসা। ছিলো সুপ্ত ভালোলাগা, অনুভূতি।

বুকে গহীন থেকে তপ্তশ্বাস ছাড়লো সে। কত মেসেজ, কথা বলতো তারা। এক বাক্যে সব কর্পুরের মতো উড়ে গেছে, নয়তো কাঁচের মতো টুকরো টুকরো হয়েছে। কথাগুলোর দামই হয়তো ছিলো না।

ইরা যখন এসব ভাবনায় মগ্ন, তখনি ফোনটা বেজে উঠলো দৈবিক নিয়মে। খানিক চমকে তাকালো ফোনের দিকে ইরা। একবার, দুইবার৷ বেজেই চলেছে। বিরক্ত হয়ে ফোন হাতে নিতেই মিললো ভাবনার জগতের সেই লোকটাকে। আকাশকে! কিন্তু তার তো ফোন করার কথা নয়। না! ইরা ভুল দেখছে না। আকাশই ফোন করেছে তাকে। ইরা ফোন রিসিভ করলো। ভেসে এলো আকাশের কন্ঠ,

‘ মেসেজ কতগুলা করেছি খেয়াল আছে আপনার? ‘

‘ কেন করেছেন এটাই তো বুঝলাম না। ‘

‘ মানে? ‘

‘ মানেটা তো পরিষ্কার আকাশবাবু, আপনার তো ফোন কিংবা মেসেজ করার কথা নয় তাইনা? ‘

‘ আপনাকে কিছু বলার ছিলো? ‘

‘ অপমান কম হয়েছে? ‘

ইরার সোজা কথায় চমকালো আকাশ। প্রকাশ না করেই ব্যাতিব্যাস্ত কন্ঠে বললো,

‘ রবিনকে চেনেন? ‘

ইরার নিশ্চুপ শিকারোক্তি, ‘না। ‘

এরপর কোন কথা হলো না। আত্মসন্মানে টান পড়ায় ফোন কেটে দিলো ইরা। হাতের ফোনটা ছুড়ে ফেললো বিছানার কোনায়। ইরার চোখ আবারো ঠেকলো বেলকনিতে। হঠাৎ জিবনে এসে সব তছনছ করে দেওয়া সেই আগুন্তকের চিন্তায় ডুব দিলো ইরা। ঘৃনায় ঝাকি দিয়ে উঠলো পুরো শরীর।
_
ফ্রেশ হতেই যে আব্বুর হাতের ঠাটিয়ে একটা চড় খাবে তা কল্পনাতেও ভাবতে পারেনি আয়াত। আকস্মিক ঘটনায় হকচকিয়ে উঠলো সে। অতঃপর যখন চোখদুটি বড়বড় করে তাকালো, দেখলো ইরফান আলীর অগ্নিঝড়া মুখখানা। বুঝতে না পেরে কেশে উঠলো আয়াত,

‘ এসব কি-? ‘

‘ বয়স কত আপনার? ‘

‘আপনি’ শব্দটিতে বিষম খেলো আয়াত। আশেপাশে মাকে না দেখে চিন্তা ভর করলো মাথায়। আর বাঁচাবার কেউ নেই। ছোট থেকে মার খেয়ে বড় হয়েছে। ভেবেছিলো, বিদেশ গেলে আর এমন করবেন না তার পিতা। কিন্তু এমন হলো না। তার ভাগ্য নেই। আয়াতের এমনো বন্ধু আছে যারা আজ পর্যন্ত চড় কি তা জানেই না। সেখানে আয়াতকে টর্চারের থেকে কম কিছু করা হচ্ছে না। ইরফান ছেলের নিশ্চুপতা মানতে না পেরে আবারো হাত তুললেন,

‘ কিছু বলবি-‘

‘ কই দেখছো এতো বড় ছেলেকে কেউ মারে? ‘

‘ তুই কই দেখছিস পঁচিশ বছরের দামড়া ছেলেকে ব্যালেচর থাকতে? বিয়ে করবি, সংসার করবি৷ নাতি-নাতনীদের মুখ দেখার সুযোগ করে দিবি তা-না! তোর বিয়ে হচ্ছে, এটাই ফুল এন্ড ফাইনাল ডিসিশন। মাইন্ট ইট! ‘

বলেই আয়াতের রুম ত্যাগ করলেন ইরফান। এই চড়ের কারনটা বুঝতে সমস্যা হলো না আয়াতের। সেই তখন মুখের উপর বলেছিলো,’রাজকুমার আমি,রাজকুমার’ই থাকবো। বিয়ের জন্য ফিলিংস হচ্ছে হোক, আমি বিয়ে না করার লোক!’ ব্যাস! এতেই ক্ষেপে গেলেন ইরফান আলী। আয়াত তখন তড়িঘড়ি করে রুমে এলেও এটা জানতো না যে ওয়াশরুমের বাইরেই দাড়িয়ে ছিলেন তার পিতা।
_
খুব সকাল। আটটা বোধহয়। ধোয়া ওঠা গরম কফির কাপ হাতে ইলিমার। ইরার রুমে প্রবেশ করলেন উনি। ইরা বিছানায় হেলান দিয়েই ঘুমিয়ে পড়েছে। ইলিমার বুঝতে বাকি নেই কিয়ৎক্ষন আগেই ঘুমিয়েছে ইরা। ডাকাটা কি ঠিক হবে? কিন্তু এসব ও তো আর হতে দেয়া যায় না। এরপর অসুস্থ হয়ে পড়লে আরেক মুসিবত।ইলিমা কন্ঠে একটু ঝাঁঝ টেনে বললেন,

‘ ইরা..ইরা ওঠ-‘

হকচকিয়ে উঠলো ইরা। ইলিমার মুখ মলিন হয়ে উঠলো সদ্য ঘুম থেকে ওঠা ইরার মুখ দেখে। ইলিমার মাঝেমাঝে হিংসে হয়। খুব জানতে ইচ্ছে হয় ইরার সৌন্দর্যের কারন কি? কেন মেয়েটা এতো সুন্দর? মুখ ফুটে কখনো বলেননি ইলিমা। যখন ইলিমার প্রথম বিয়ে হলো, তখন ইলিমা মাঝেমধ্যেই ইরার ঘরে চুপিচুপি ডুকতো। খুজতো ইরার সৌন্দর্যের কারন। পায়নি। আর পাবার কথাও নয়। ‘ইরাবতী’ সুন্দর নামটার সাথে যেন সৃষ্টিকর্তা নিখুঁত সুন্দর ভাবে ইরাকে বানিয়েছেন। কিছুকিছু মানুষ ন্যাচারাল ই সুন্দর। তেমনি ইরা, অপুর্ব।

ইলিমা ইরার পাশে বসলেন। কফির মগটা হাতে ধরিয়ে বললেন,

‘ কত রাতে ঘুমিয়েছিস হুম? ‘

‘ জানিনা। ‘

‘ কাল তোকে ওভাবে বকা-ঝকা করাটা ঠিক হয়নি। তোর খুব খারাপ লেগেছে তাইনা? ‘

‘ তুমি অনুতপ্ত? ‘ ইলিমা আঁতকে উঠলেন। নিরদ্বিধায় বলা শব্দদুটি চমকালো তাকে। একচোখে তাকিয়েই রইলো ইরার দিকে ইলিমা। ইরা ফিক করে হেঁসে উঠলো। বললো,

‘ আরে খারাপ লাগবে কেন? প্রথমত আমার হবু স্বামী আমায় ধর্ষিতা বললেন। এরই পরিপেক্ষিতে আমার শাশুড়ী মা আমায় বারোনারী বললেন। পাড়া মহল্লার লোক মাকে-বাবাকে বললেন তারা নাকি ব্যাবসা শুরু করেছে। আর তুমি? যাগগে, সব ঘিরে আমিই কিন্তু রয়েছি। কারো সতিত্ব নিয়ে কেউ কিছু বললে খারাপ লাগবে না…বলো? ‘

ইলিমার মুখ মুহুর্তে ফ্যাকাশে হয়ে ওঠে। তিনি কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলেন। অতঃপর বললেন,

‘ তোর ভাই তোকে কলেজে যেতে বলেছে। কে এমন কাজ করলো সেটাও দেখবে বলেছে। ‘

ইরা আবারো তাকালো সেই বেলকনির দিকে। অস্পষ্ট স্বরে বললো,

‘ আগুন্তকঃ-‘
ইরার মনে ভেসে উঠলো ছেলেটির প্রতিচ্ছবি। আজ তার জন্য যদি ইরার এমন অবস্থা হয়ে থাকে, তাহলে তার শাস্তি প্রাপ্য। কঠিন শাস্তি। মনস্থির করলো ইরা,আগুন্তককে শাস্তি পেতেই হবে। পেতে হবেই!
__
‘আসরাফ আরমান আয়াত এর বিয়ে’ গোটা গোটা অক্ষরে লেখা বাক্যটি দেখে চমকালো আয়াত। সকাল সকাল বাকহারা হয়ে উঠলো সে বিরাটকার বোর্ড দেখে। ইরফান আলী ঠিকিই করে ফেলেছেন ছেলের বিয়ে দিয়েই ছাড়বেন। কথার নরচর হবে না। এককথার মানুষ তিনি। আবার তার নিচে সুন্দর ছোটছোট করে লেখা,

‘ ছেলের বিয়ে না করার ফিলিংস হচ্ছে। হোক,
আমরাও ছেলের জোর করে বিয়ে দেয়ার লোক। ‘

#চলবে….