একথোকা কূষ্ণচূড়া পর্ব-০৪

0
193

#একথোকা_কূষ্ণচূড়া
#পর্বঃ৪
#আর্শিয়া_ইসলাম_উর্মি

৭,
” তোমার আর ভাইয়ার বিয়ের দিন ধারাকে প্রথম দেখেছিলাম। সেখানে তাকে প্রথম দেখেই তার প্রতি একটা ভালো লাগা-ভালোবাসার সৃষ্টি হয়। যেটাকে অনেকে লাভ এট ফার্স্ট সাইড বলে আখ্যায়িত করে। আমার কাছে সেসবের গুরুত্ব ছিলো না তেমন। কিন্তু সেদিন ওকে দেখে মনে হয়েছিলো এই মায়াবতীকে ভালোবাসা যায়। ঐ যে কথায় আছে না, ‘ যাকে ভালো লাগে তার সবকিছুই ভালো লাগে।’ সেদিন ধারা বিয়ে বাড়িতে সব ছোটো বাচ্চাদের নিয়ে তোমার বাড়ির উঠোনের এক কোণে আনন্দ উল্লাসে মেতে ছিলো। বাথরুমে গিয়েছিলাম, আমার পান্জাবিতে তরকারির ঝোল লেগেছিলো, সেটা পরিস্কার করতে গিয়ে তাকে দেখি৷ বাচ্চাদের সাথে বাচ্চামি গম্ভীর ভাব সবকিছু মিলিয়ে আমি মোটামুটি রকম ওর প্রতি দুর্বল হয়ে পরি। আগ বারিয়ে কথা বলতে যেতে ধরি। তখন সৃজান ওর কোলে তাহসিনকে দিয়ে যায়। আমি ভেবেছিলাম, হয়তো সৃজান ওর স্বামী বাচ্চাটা ওর। কিন্তু এতো ছোটো মেয়ের আবার বিয়ে হয়েছে, বাচ্চা আছে মানতে পারিনি। গিয়ে বলেই বসি, যে লোকটা ওর কাছে বাচ্চা দিয়ে গেলো, সে ওর স্বামী কিনা। রে’গে ও চট করে আমায় থা”প্পড় দিতে হাত উঠিয়ে ফেলে। কিন্তু পরক্ষণে নিজেকে সামলে রা’গী কন্ঠে বলে, কাউকে না জেনে ভুলভাল প্রশ্ন করবেন না৷ আপনি প্রশ্ন টা এভাবেও করতে পারতেন, যে লোকটা কে? আমাদের ভাইবোনকে স্বামী-স্ত্রী ভেবে বসলেন? কিন্তু আমাকে এসব প্রশ্ন করার আপনি কে? আপনাকে তো আমি চিনিও না৷’ তার কথা শোনার পর স্যরি বলি৷ ক্ষমা চাই, সে রে’গে ওখান থেকে চলে যেতে ধরে তাহসিনকে নিয়ে৷ পরে পিছ থেকেই বলেছিলাম, লোকটা যেহেতু ভাই হয়! তাহলে বাচ্চাটা কে? ভাইয়ের ছেলে?’ সে পিছু না ফিরেই বলে যায় তার ছেলে।”

তাহিরার কথার উত্তরে সবকিছু খুলে বলে শ্রাবণ। তাহিরা শ্রাবণের কথা শেষে গালে হাত দিয়ে বসে পরে৷ ভালোবাসা এভাবেও হয়! শ্রাবণ তখনও পুকুরপানে তাকিয়ে রয়েছে নির্বাক হয়ে। তাহিরা এরপর বলে,

” এজন্য আমার ফোনে যখন ধারার ছবি, তাহসিনের ছবি দেখো আর আমার ১৪গুস্টির সম্পর্কে জানতে বসো তাইনা? ”

” ১৪গুস্টি নিয়ে আমার আগ্রহ ছিলো না।ছিলো ধারাকে নিয়ে। সেজন্য তোমার কাছে সবার কথা জানার উছিলায় ধারা কে এটা জানতে চাই। জানার পর খোজ নিয়ে ধারার কাছে ক্ষমা চাওয়ার বাহানায় রোজ ওর কলেজের সামনে যেতাম। সেখান থেকেই ধারা আমায় একটু চিনে। যে জন্য আমায় দেখে তখন ওরকম ভাবে রিয়েক্ট করে। ”

শ্রাবণের কথা শুনে এবার তাহিরার মাথায় হাত। এতোকিছু কান্ড ঘটিয়ে বসেছে শ্রাবণ, অথচ সে এখন জানছে। তাহিরা এবার বসা থেকে উঠে শ্রাবণের সামনে দাড়িয়ে বলে,

” দেবরজী? এই আমি তোমার ছোটো বোনের মতো ভাবী? এটাই তো বলো তাইনা? ডু’বে ডু’বে জল খাও! আর পানি নাকেমুখে ঢুকলেই ভাবীকে নিজের সুবিধায় ব্যবহার করো। যাও রাগ করলাম তোমার সাথে। ”

” আরে ভাবী তুমি এটুকুতেই রে’গে গেলে যে! আরও ঘটনা বাকি আছে৷ আমি তোমার সাহায্যে এখানে কেনো আসলাম শুনবেনা? ”

” কি কারণে? ”

শ্রাবণের কথার উত্তরে চোখ দুটো ছোটো ছোটো করে উত্তর দেয় তাহিরা। শ্রাবণ তাহিরাকে পাশ কা”টিয়ে পুকুরে নামার এক সিড়ির উপর দাড়িয়ে পকেটে হাত গুজে বলতে শুরু করে,

” কলেজের সামনে গিয়ে রোজ যখন ধারাকে ফলো করতে লাগলাম; সে রে”গে একদিন আমার সামনে দাড়িয়ে জিগাসা করে, আমি কে? বিয়ের দিন তাকে দেখার পর কিছুদিন পরথেকে তাকে এভাবে ফলো করছি, সে কে, এই কলেজে পড়ে জানলাম কি করে? এসব প্রশ্নের এসব উত্তর দিতে মুখ খোলার আগেই তা ফ্রেন্ড’স-রা এসে পরে। ওর সাথে মজা করতে বলে আমি ওর বয়ফ্রেন্ড কিনা! আমাকেও জিগাসা করে। আমিও মজার ছলে বলি, ‘ হ্যাঁ আমিই ওর বয়ফ্রেন্ড। ‘ এমনিই আমার উপর রে”গে ছিলো। আবার আমার এই কথা আ”গুনে ঘি ঢালার মতো হয়েছিল। অতঃপর বিষয়টা এতোদূর গড়ায় ওর ফ্রেন্ড’স রা ওকে সবসময় আমায় নিয়ে প”চাতো ওকে। যার ফলে ওদের সাথে ধারার ফ্রেন্ডশিপ ভে”ঙে যায়। ধারা কলেজেও যায়না, কয়েকদিন। আমি ঐ ঘটনার প্রায় ৪-৫দিন পর কলেজের সামনে যাই তখন ওর একটা ফ্রেন্ড আমায় দেখে কথাগুলো বলে। পরিক্ষার আর ছিলোই ক’দিন বাকি৷ স্যার -রা দায়িত্ব নিয়ে সবাইকে সাজেশন ধরিয়ে পড়াচ্ছেন, অথচ সে কলেজে যায়না। কতটা ক্ষ’তি আমি করেছি ভাবো! সেজন্য তোমার ফোন থেকে ওর নাম্বার নিয়ে মেসেজ দিই, আর সেখানও ব্লক খাই। ও না জেনেই আমায় ব্লক করে দিয়েছে। ”

” মেসেজগুলো আপনি দিয়েছেন আইডিয়া ছিলো না। তবে ব্ল’ক করেছি যখন নিশ্চিত থাকুন সে ব্ল’ক আর খুলবেনা।”

৮,
আবারও কথার মাঝে ধারার কন্ঠস্বর পেয়ে পেছন ফিরে তাকায় শ্রাবণ আর তাহিরা। টর্চ হাতে পুকুর থেকে একটু উঁচুতে দাড়িয়ে আছে ধারা।তাকে দেখে তাহিরা বলে উঠে,

” আবার আসলে যে? শ্রাবণের সব কথা শুনে নিয়েছো?”

” কারোর কথা আড়ি পেতে শোনার ইচ্ছে বা রুচি কোনোটাই আমার নেই বুবু৷ রাত হয়ে আসছে, একবার ডেকে গেলাম, আসলে না। তাই সাজিয়া বুবু তোমাদের নিতে পাঠালো। চিন্তা নেই, আমি শুধু উনিই আমায় মেসেজ দিয়েছিলেন এটুকু কানে উড়ো কথার মতো ভেসে এসে পরেছে। বাকি কিছু আমি শুনিনি। তোমরা কি এবার যাবে আমার সাথে? রাতের আধার নেমে গেছে, পুকুরপারে থাকা বি”পদের। কখন কি এসে কা”মড়ে দেয় কে জানে। ”

ধারা কথাটুকু বলে পিছু ফিরে হাটা ধরে বাড়ির দিকে। তার পিছু শ্রাবণ আর তাহিরাও হাফ ছেড়ে নিশ্বাস নিয়ে বাড়ির দিকে যায়। যেতে যেতেই তাহিরা শ্রাবণের উদ্দেশ্যে বিরবির করে বলে,

” দুনিয়ায় মেয়ে পাওনি ভাই? এই ধা”নিলঙ্কাকেই পছন্দ করতে হলো! দেখো তার ঝাঁজে না পু'”ড়িয়ে দেয়। ”

শ্রাবণ তার ভাবীর কথায় শুধু মুচকি হাসলো কিছু বললো না৷

ওরা বাড়িতে ফিরতেই সাজিয়া একটু ব”কাঝকা করে খেতে বসিয়ে দিলো বারান্দায় লম্বা করে পাটি পেরে। চেয়ার টেবিলে সবাইকে আটবেনা বলে।ওরা মানুষজন কম,কোনোরকম ৪জন বসে খেতে পারবে এমন চেয়ার টেবিল কিনে রেখেছে, কিন্তু এখন মানুষ বেশি। গ্রামের বাড়ি, সন্ধ্যা ৭টাই এই শীতের সময় মাঝরাতের মতো। সাজিয়ার বড় আম্মু আর ছোটো আম্মু সবাইকে বেড়ে খাওয়াতে সাহায্য করছে তাকে। ধারা তরকারির বাটি এটা ওটা এগিয়ে দিচ্ছে তাদের দিকে। সাজিয়া এতোক্ষণ ব্যস্ত থাকায় তাহসিনের দিকে নজর দিতে পারেনি।সেজন্য এখন একটু তাকে খাওয়াতে বসেছে। তৃপ্তি লামকে খাইয়ে ঘুম পারিয়ে এসে বসলো খেতে সবার শেষে। গ্রামের তাজা সবজি আর মাছের তরকারি, দেশি মুরগীর ঝোল সামান্য আয়োজনেই সবাই তৃপ্তি সহাকরে খাচ্ছে। সাজিয়া এক নজরে সবাইকে দেখে নিলো। সবাই অনেক টা উপভোগ করছে, খুশি হয়েছে এই ব্যাপারগুলোয়, ভালো লাগছে তার সবাইকে খুশি খুশি দেখে। ইট পাথরের শহরের দমবন্ধকর পরিবেশ থেকে বেরিয়ে গ্রামের এই সতেজতায় যেনো সবাই মন মাতিয়ে আনন্দ করছে এসে থেকে, ভাবতেই ভালো লাগছে সাজিয়ার। ইশ যদি থেকে যাওয়া যেতো গ্রামে একেবারে! সবার খাওয়া শেষে প্রায় সাজিয়া তাহসিনকে সৃজানের কাছে দিয়ে বোন আর চাচীদের নিয়ে খেতে বসলো। তারা চলে যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু সাজিয়া যেতে দিলো না। দুই চাচীরই তার একজন ছেলে একজন মেয়ে, বিয়ে করে বউ নিয়ে আলাদা তার চাচাতো ভাইয়েরা আর বোনদেরও বিয়ে হয়ে গিয়েছে। তাই চাচীদের সাথে নিয়ে খাওয়া শেষে চাচাদের জন্য খাবার গুছিয়ে দিলো সাজিয়া আর ধারা। উনারা চলে যেতেই দুবোনে ঝটপট সব থালাবাসন ধুয়ে নিয়ে সবার জন্য বিছানা ঠিক করে দিতে গেলো। তিনঘর ঠিক করা হলো সৃজানের সাথে শ্রাবণ থাকবে। সাজিয়া আর তৃপ্তি বাচ্চাদের নিয়ে তার একঘরে,তাহিরা আর ধারা তার ঘরে থাকবে। বিছানা তৈরি করে সাজিয়া যখন ঘরে যাচ্ছিলো, শ্রাবণ বারান্দায় থামিয়ে সাজিয়ার উদ্দেশ্যে বলে,

” ভাবী আপনার কাছে একটা আবদার ছিলো! ”

সাজিয়া অবাক নয়নে শ্রাবণের কথার উত্তরে বলে,

” কি আবদার? ”

ধারাও সেই সময় নিজের ঘরের দরজার সামনে দাড়িয়ে শ্রাবণের কথা শুনেছে। এই লোক আবার কি চায়? চি’ন্তা ধরে যায় ধারার। আবার উল্টোপাল্টা কিছু বলবে না তো তাকে ঘিরে। এমন যদি হয় শ্রাবণকে যাচ্ছেতাই ভাবে অ”পমান করবে সে। এমনটাই মনে মনে ভেবে নেয় ধারা। কিন্তু তার ধারণাকে মি’থ্যে প্রমাণ করে শ্রাবণ সাজিয়াকে বলে,

চলবে?