একথোকা কৃষ্ণচূড়া পর্ব-০৫

0
195

#একথোকা_কৃষ্ণচূড়া
#পর্বঃ৫
#আর্শিয়া_ইসলাম_উর্মি

৯,
” আসলে ভাবী আমি বিয়ে করবো ভাবছিলাম। আপনাদের গ্রাম টা অনেক সুন্দর। আপনাদের গ্রামেই আমার জন্য উপযুক্ত মেয়ে আছে কিনা একটু দেখুন তো খুজে। ”

শ্রাবণের কথায় পুরো ভ্যা”বা”চে’কা খেয়ে যায় সাজিয়া। ছেলের পড়াশোনা শেষ হয়নি, চাকরির খবর নেই। সে করবে বিয়ে আশ্চর্য! ওদিকে ধারাও কেমন সন্দেহের চোখে তাকিয়ে আছে শ্রাবণের দিকে। ঘুরিয়ে পেচিয়ে কি তার বোনের কাছে তাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিচ্ছে না তো শ্রাবণ? একটুপর সাজিয়া হতবাক হয়ে প্রশ্ন করলো,

” তুমি সিরিয়াস শ্রাবণ?”

” হ্যাঁ ভাবী আমি সিরিয়াস। ”

” কিন্তু তোমার কথাবার্তা কেমন খামখেয়ালি লাগছে আমার কাছে। ”

” কেনো ভাবী?”

” তোমার পড়াশোনা শেষ হয়নি এখনও। চাকরিও তো করছোনা তুমি। ”

” রিযিকের মালিক উপরওয়ালা ভাবী। চিন্তা করিয়েন না।আমি বিয়ে করবো এটাই ফাইনাল। আপনি বউ খুজে দেন।”

” বললেই কি বউ পাওয়া যায়? এভাবে কিভাবে বউ পাওয়া সম্ভব? ”

” তাহলে কিভাবে সম্ভব ভাবী? ”

” ঘটক লাগিয়ে খুজতে হবে। মেয়ের খোজ ঘটকদের ভালো জানা থাকে। ”

সাজিয়ার এই কথায় শ্রাবণ সোজাসুজি ধারার দিকে তাকায়। সে আগেই খেয়াল করেছে ধারা দাড়িয়ে তাদের কথা শুনছে। সে ধারার দিকে তাকাতেই ধারা চট করে ঘরের ভেতরে চলে যায়। সাজিয়া শ্রাবণের চাহনী লক্ষ্য করে পিছন ফিরে দেখে। কিন্তু কিছু দেখতে না পেয়ে শ্রাবণকে ফের প্রশ্ন করে,

” কি হলো কিছু বলছো না যে? ”

” ঘটককে বলার দরকার কি ভাবী? ঘরেই তো মেয়ে আছে। ”

” মানে কি বলছো তুমি? কে আছে? ”

আনমনা হয়ে শ্রাবণ কথাটা বলে ফেলে। সাজিয়ার প্রশ্নে সে মনে মনে নিজেকে নিজেই ধ’মক দিয়ে হেসে উত্তর দেয়,

” না কেউ না ভাবী৷ যান ঘুমিয়ে পরুন। অনেক রাত হয়েছে। ”

কথাটা বলেই শ্রাবণ হনহনিয়ে ঘরে ঢুকে যায়। এমনিই শীতের দিন গ্রামে যেনো আরও শীত বেশি। সাজিয়া শ্রাবণের এহেন কান্ডে অবাক হয়ে কিছুক্ষণ ওখানেই দাড়িয়ে থেকে ঘরের দিকে চলে যায়। যেতে যেতে ভাবে এই শ্রাবণ ছেলেটাই কেমন যেনো।অদ্ভুত রকম, কোনো কথার আগামাথা থাকেনা। প্রতিটা কথায় কেমন রহস্য লুকিয়ে যায়৷ ঘরে গিয়ে ঘুমন্ত ছেলের পাশে শুয়ে পরে সাজিয়া।

এদিকে ঘরে ঢুকেই ধারা চুপচাপ পড়ার টেবিলে বই খুলে মুখ গুজে চোখ বন্ধ করে আছে। শরীরে পরে থাকা শাল চাদরের একপাশ মাটিতে গড়াগড়ি করছে। শরীরে শীতের জ্যাকেট যেনো অসম্ভব রকম ভারী লাগছে তার। তবুও ঝিম মে*রে ওভাবেই বসে আছে সে। এই শ্রাবণের কর্মকান্ড তার যথেষ্ট বি’রক্তির কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। এতোদিন কলেজের সামনে আর এখন সোজা বাড়িতে৷ চায় কি এই ছেলেটা! মাথায় ঢুকছেনা ধারার। জীবনের বি’রক্তির একটা অধ্যায় এখন এই শ্রাবণ নামক ব্যক্তি হয়ে দাড়িয়েছে।

” কি হলো ধারা? ওভাবে বসে আছো। ঘুমোবেনা? ”

ধারাকে টেবিলে ওভাবে বইয়ে মুখ গুজে শুয়ে থাকতে দেখে শুয়ে থেকেই প্রশ্নটা করে তাহিরা। এতোক্ষণ স্বামীর সাথে কথা বলছিলো সে মেসেজে। রাতের বেলা, অন্য কারোর ঘরে ফোনে কথা বলে বি’রক্ত করতে চায়নি সে,যার দরুণ মেসেজেই কথা বললো। কথা বলা শেষে প্রশ্নটা করে সে। ধারা তখনও নিরুত্তর। অপ্রোয়জনে কথা বলতে তার ভালো লাগেনা। আবার সে সবার সাথে মিশতেও পারেনা। এটা তার দো’ষ নাকি তার কপালের বুঝে আসেনা ধারার। একটা কথা মনে হতেই নিজের কপাল চা’পড়াতে ইচ্ছে করছে তার। কেনো যে সে তাহিরার জোড়াজুড়িতে তার ফোনে ছবি তুলেছিলো আর তাহিরার কাছে তার নাম্বার রয়ে গেছিলো। নয়তো শ্রাবণ নামক এই বি’রক্তির অধ্যায়ের সূচনা তার জীবনে আসতো না।

” কি হলো? কথা উত্তরও দিচ্ছো না,শুয়েও পরছোনা? যতদূর জানি তোমার কয়েকদিন গ্যাপ আছে পরবর্তী পরিক্ষার আগে। এভাবে ঠান্ডার ভিতর বসে না থেকে শুয়ে পরো। ”

তাহিরার ফের কথায় কিছু বললো না ধারা। উঠে দাড়িয়ে বই বন্ধ করে গুছিয়ে রেখে সে গিয়ে চুপচাপ শুয়ে পরে। তাহিরা ধারার এই আচরণে কিছু মনে করতে চেয়েও করলো না।সে জানে ধারা এমনই চুপচাপ স্বভাবের৷ তার মাঝে তার দেবরের কর্মে নিজেই কেমন লজ্জিত বোধ করছে ধারার কাছে।তাই তাকে আর কিছু না বলে ঘুমানোর চেষ্টা করলো।

১০,
পরদিন সকালবেলায় ঘুম থেকে উঠার পর শ্রাবণের দুইচোখ ধারাকেই খুজে চলেছে। উঠোনে সবাই আছে। হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হচ্ছে। কিন্তু ধারার চিহ্ন কোথাও নেই। শ্রাবণের এরকম উৎকন্ঠা দেখে তাহিরা ব্রাশ করতে করতে তার দেবরের দিকে এগিয়ে এসে শ্রাবণের পাশে দাড়িয়ে বলে,

” যাকে খুজছো সে তার বড় আম্মুর বাড়িতে। আমাদের সকালের খাবারের আয়োজন উনারা করেছেন। তাই ধারা সেখানে গিয়ে সব গুছিয়ে এগিয়ে দিতে গেছে। ফ্রেশ হও। আমাদের সাথে চলো, দেখা পাবে। ”

তাহিরার কথায় শ্রাবণ মাথা চুলকে হেসে সৃজানের কাছে যায় লুঙ্গিরজন্য। সে তো তেমন কাপড় আনেনি, তাই লুঙ্গি পরে একেবারে গোসল দিয়েই ফ্রেশ হয়ে নেবে।

” ভাবী শ্রাবণের মতিগতি আপনার কাছে কি করো ঠিকঠাক লাগছে? কেমন একটা চো’রা চো’রা ভাব তারমাঝে। খেয়াল করেছেন আপনি? ”

তাহসিনকে মুখ ধুইয়ে দিচ্ছিলো সাজিয়া। এরমাঝে তৃপ্তি তার পাশে দাড়িয়ে ফিসফিসিয়ে কথাগুলো বলে তাকে৷ তৃপ্তির কথা যে ভুল এমনটা না, সেটা রাতেও ভেবে দেখেছে সে। হুটহাট গ্রামে আসতে চাওয়া, আবার বিয়ের কথা বলা কেমন একটা গোল মেলে ব্যাপার লাগছে তার কাছে। তৃপ্তির দিকে তাকালো সাজিয়া৷ তৃপ্তি কথাটুকু বলে লামকে কোলে নিয়ে চুপচাপ তার মুখের দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে আছে তার উত্তরের প্রত্যাশায়। সাজিয়া তৃপ্তির কথার মানে বুঝলেও উত্তর দিলো,

” এসব নিয়ে ভাবিও না তৃপ্তি। তাহিরার দেবর, নতুন আত্মীয়। তার আচার আচরণে স’ন্দেহ করছি কোনোভাবে জানলে কি ভাববে বলো তো! চলো লাম বাবুকে ফিডিং করিয়ে নাও। বড় আম্মুদের বাসায় আবার খেতে বসে তাকে আর খাওয়ানোর সুযোগ পাবে না। ”

কথাটা বলেই সাজিয়া তৃপ্তিকে পাশ কা’টিয়ে ঘরে গেলো। তৃপ্তিও বড় জা-য়ের কথা শুনে পিছু পিছু ঘরে চলে গেলো।

সৃজান আর শ্রাবণ দুজনই একসঙ্গে সৃজানদের পুকুর থেকে গোসল দিয়ে উঠেছে। একে তো শীতে কুয়াশায় চারদিকে কিছু দেখা যাচ্ছে না সকাল সকাল। তারমাঝে গোসল। দুজনে কা’পতে কা’পতে ঘরে আসলো। পানির ভিতর থাকার সময় এতোটা শীত লাগেনি, যতটা উঠে এসে লাগছে। শীতের কাপড় পরতে পরতে শ্রাবণ সৃজানকে বলে,

” আচ্ছা তোমার এই দুটো বোনই দেখি গম্ভীর স্বভাবের আর তুমি চঞ্চল, ঠিক আমার মতো। কিন্তু তারা এমন গম্ভীর কেনো বলো তো! ”

” বড় আপু গম্ভীর নয়, হাসিখুশিই আছে। কিন্তু বিয়ের পর একটু কেমন পাল্টে গেছে। কথাবার্তা আগের তুলনায় কম বলে। কিন্তু ধারা আগে থেকেই এমন, রা’গ আর গম্ভীরতা যেনো তার ভাত তরকারি। যেগুলো ছাড়া জীবন চলে না।”

সৃজানের উত্তরে শব্দ করে হাসলো শ্রাবণ। সৃজান তা দেখে আবার বললো,

” তুমি হাসছো শ্রাবণ ভাই! ”

” তাহলে কি করবো বলো? ”

” এই দুই গম্ভীর বোনের জন্য আমায় যে এতো চুপচাপ ভদ্র হয়ে মেপেজোকে কথা বলতে হয়! সেই কষ্টে কষ্ট পাও আমার সাথে। ”

” তুমি প্রচুর মজার মানুষ সৃজান। আচ্ছা বড় আপুর ব্যাপারটা না হয় বুঝলাম। কিন্তু ধারা! সে তো ছোটো। সে এমন গম্ভীর কেনো বলো তো? কিছু বলা যায় না,বললে হয় এড়িয়ে যায় নয়তো রে’গে যায়। ”

” কারণ আছে কিছু । মূলত আম্মুর বিষয় নিয়ে পে’ত্নী অনেক গম্ভীর। ”

কথাটা বলেই মন খারাপের রেশ দেখা দিলো সৃজানের মুখে। শ্রাবণ কথাটার মানে বুঝলো না। সে আগ্রহের সহিত প্রশ্ন করলো,

” পে’ত্নী টা কি ধারা? তাকে পে’ত্নী বলো তুমি? আর আম্মু? বুঝলাম না ব্যাপারটা! ”

শ্রাবণের কথা শেষ হতেই সাজিয়া দরজার সামনে এসে দাড়ায়। দুজনকেই দাড়িয়ে থাকতে দেখে বলে,

” তোমাদের কি সকালের খাবার খেতে হবে না? চাচীরা বসে আছেন আমাদের জন্য। চলো তাড়াতাড়ি। ”

সাজিয়ার কথায় দুজনই দরজার দিকে তাকায়। শ্রাবণ কিছু টা হ’তাশ হয়। তার আর কিছু জানা হবে না এখন। সৃজান বড় বোনের কথায় চটপট রেডি হয়ে বের হয়। শ্রাবণও পিছুপিছু আসে। উঠোনে পা দিতেই গেট দিয়ে একজনকে ঢুকতে দেখে সাজিয়া। তৃপ্তি লামকে নিয়ে আগেই উঠোনে ছিলো। মানুষ টাকে দেখে সাজিয়া থমকে দাড়ায়। তাহসিনকে সৃজানের কোলে দিয়ে মানুষটার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,

” আপনি? আবার এসেছেন?”

অনেকটা রেগে জোড়ে কথাটা বলে। উঠোনে বাকি সবাই সাজিয়া আর মানুষটার দিকে তাকিয়ে আছে। তাহিরা আর তৃপ্তি সৃজানের কাছে দাড়িয়ে একসাথেই বলে,

” উনি কে সৃজান? ভাবী এতো রেগে গেলো কেনো উনাকে দেখে? ”

চলবে?

ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।আসসালামু আলাইকুম