এক টুকরো নূর পর্ব-০৩

0
118

#এক_টুকরো_নূর
—————(৩য় পর্ব)
লেখা: উম্মে হানি মিম

নেকাব পড়া অবস্থায় নূরাকে ওদের সামনে নেয়া হলে,জাহিদ এবং তার মা বলেন নেকাব এবং হিজাব খুলে তারপর ওরা কথা বলবেন নূরার সাথে।নূরা কথাগুলো মানতে না পেরে উঠে চলে আসে।আলেয়া নূরাকে বুঝান বিয়ের জন্য দেখা করা জায়েজ আছে।কিন্তু নূরা কিছুতেই হিজাব খুলতে রাজি না।সে বড়জোর নেকাব খুলতে রাজি হয়।
জাহিদ কথাটা মেনে নেয়।
নূরা আর জাহিদ একটা ঘরে বসে আছে। নূরার কথা অনুযায়ী সেখানে তাদের সাথে জাহিদের বাচ্চাটাও উপস্থিত।
নূরা মাত্র একবার জাহিদের দিকে তাকিয়েছে পয়ত্রিশ বছরের একটা লোক অথচ দেখে মনে হয় ত্রিশ এর ভিতরেই বয়স।কোটপ্যান্ট পড়া।আধুনিকতার ছুঁয়া পুরোটাতেই।মুখে লেশ মাত্র দাড়ি নেই।ক্লিন শেভ করা।যেটা নূরার ভালো লাগলো না।
জাহিদ একদৃষ্টিতে নূরার দিকে তাকিয়ে আছে।অপূর্ব সুন্দরী বললেও কম হবে এই মেয়েকে।জাহিদ বললো,এই বিয়েতে আপনার আপত্তি নেই তো?
নূরা আস্তে করে বললো,আম্মা,চাচ্চুরা যেটা চাইবেন সেটাই আমার মত।
“আমার সম্পর্কে আপনার কিছু জানার আছে?”
“আপনি নামাজ পড়েন পাঁচ ওয়াক্ত?”
জাহিদ কেমন জানি আমতা আমতা করে বললো,”চেষ্টা করি পড়ার।আর কোনো প্রশ্ন নাই?
নূরা মাথা নাড়ালো।”
জাহিদ বললো,”আমাকে আপনার পছন্দ হয়েছে?আমার দিকে তো তাকালেনও না একবার।”
নূরা আস্তে করে বললো,”আল্লাহ যাকে আমার জন্য পছন্দ করে রেখেছেন তাকেই আমার পছন্দ।”
“আমি কি সেই মানুষ হতে পারবো”
“সেটা আল্লাহতালাই নির্ধারণ করবেন”
“তবুও একে অপরকে পছন্দের তো একটা ব্যপার আছে তাই না? আমার কিন্তু আপনাকে খুব পছন্দ হয়েছে নূরা।”
নূরা মাথাটা আরও নিচু করে ফেললো।আমতা আমতা করে বললো, “এবার আমি আসি।”

জাহিদ আর নূরার বিয়েটা ঠিক হয়েই গেল।নূরার যদিও অনেক কিছুই ভালো লাগেনি কিন্তু যেহেতু মানুষটা বলেছে নামাজ পড়ার চেষ্টা করে সেহেতু সে নামাজিই হবে।এটা ভেবেই তার ভালো লাগলো।
—————–
শুটিং এ ব্যস্ত সাদমান,নায়িকার সাথে একটা ঘনিষ্ঠ দৃশ্য সুট করতে হবে এখন।এগুলো তার কাছে এখন ডালভাতের মতো মনে হয়।তার যে নাটকই রিলিজ হয় সুপারহিট হয়ে যায়।দর্শক খুব পছন্দ করতে শুরু করেছে তাকে।সিনেমার অফার নিয়ে এসেছেন কয়েকজন ডিরেক্টর।সাদমান স্ক্রিপ্ট গুলো পড়েছে।একটা সিনেমার গল্প বেশ ভালো লেগেছে তার।ভাবছে সেই সিনেমাটা করবে।শুটিং শেষে বের হতেই একদল ফ্যান এসে ঘিরে ধরলো সাদমানকে।অটোগ্রাফ এবং ফটোগ্রাফের জন্য।সাদমান কিছুতেই সামলে উঠতে পারছিল না।কিছু সংখ্যক ভক্তকে অটোগ্রাফ আর ছবি তুলতে দিয়ে দ্রুত গাড়িতে উঠে পড়লো।বাসায় পৌঁছে ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে আসলো।আজকে ডিনারটা মায়ের সাথেই করবে সে।বেশ কিছুদিন সময় বের করতে পারেনি।সাদমানের মা মিসেস লিপি আনমনে খাবার তুলে দিচ্ছেন প্লেটে।সাদমান বিষয়টা খেয়াল করে বললো,”কি হয়েছে মা?”
লিপি অন্যমনস্কভাবে বললেন, “কই কিছু না তো।”
“আমি বুঝতে পারছি কিছু একটা হয়েছে।কি হয়েছে বলো আমাকে”
লিপি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,তুমি এবার সিনেমাও করবে?”
“হ্যাঁ ভাবছি তো করবো।”
“এখনই বাইরে বাইরে থাকো সিনেমা করা শুরু করলে তোমাকে তো আমরা পাবোই না।অন্য কিছু করা যায় না বাবা?”
সাদমান মুচকি হেসে বললো,”কি যে বলো মা,ব্যস্ততা সব কাজেই আছে।এটাতে একটু বেশি আমি মানছি।কিন্তু এটা আমার স্বপ্ন।”
“তোমার বাবা কখনই চায়নি সাদমান তুমি তোমার খালার মতো মিডিয়ায় কাজ করো।আমি তোমার বাবাকে জোর করে রাজি করিয়েছি।এখনও তিনি এটা পছন্দ করেন না।তুমি বুঝতে পারছো সিনেমার কথা শুনলে কতটা রিয়েক্ট করবেন তোমার বাবা?”
” ওনার রিয়েক্টে আমার কিছু আসে যায় না মা।তোমরা যদি এখন আমার কাজে বাধা সৃষ্টি করো তাহলে আমি এই বাসা ছেড়ে নিজে আলাদা বাসায় চলে যাব।তাছাড়া এমনিতেই ফ্ল্যাটে বন্ধুবান্ধব আনা যায় না এটাতে আমার খুব সমস্যা হয়।”
লিপি ছেলের আচরণে বেশ ঘাবড়ে গেলেন,দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,”তোমার বাবার ধারণা ঠিকই ছিল তুমি উচ্ছনে যাবে।আমি আগে বুঝিনি।”
সাদমান খাবার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,এর জন্য বাসায় আসতেই ইচ্ছে করে না।তোমাদের মত অনুযায়ী না চললে যদি উচ্ছনে যাওয়া হয় তাহলে সেই উচ্ছনে আমি নিজের ইচ্ছায় যাব।ছেলের স্বপ্ন, ছেলের ক্যারিয়ার বুঝো না, কেমন বাবা মা তোমরা?খালামনির মতো হওয়ার চেষ্টা করো মা।”
কথাগুলো বলে সাদমান তার ঘরে চলে গেল।লিপি দুহাতে মুখ ঢেকে বসে রইলেন।
লিপির ছোট মেয়ে সুহা মায়ের মাথায় হাত রেখে বললো,”মন খারাপ করো না মা।ভাইয়ার কথাগুলো মেনে নাও নাহলে সে বাসা ছেড়ে চলে যাবে।তাছাড়া ভাইয়ার কত ফ্যান ফলোহার হয়েছে দেখেছো? এত কম সময়ে কেউ এত উন্নতি করতে পারে না।বাবা যে কেন ভাইয়ার কাজ করা পছন্দ করে না কে জানে। বাবাকে একটু যুগের সাথে মানিয়ে চলতে বলে দিও মা।এভাবে তার জীবন যাবে না।”
লিপি গভীরভাবে ভাবছেন।ওনার স্বামী ঠিকই বলেন।ছেলে মেয়েদের বেশি আধুনিক বানাতে নেই।পলিকে নিয়ে এই আফসোস ছিল তাদের বাবা মায়ের।এখন স্বামীর কথা না শুনে তাকেও না আফসোস করা লাগে।

সাদমান বাসা থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠেছে।আজকে তার মিডিয়ার ফ্রেন্ড আরেকটা হিরোর বাসায় যাবে।ওখানে প্রতিদিন রাতে ম’দের আসর বসে।সাদমানও কয়েকদিন থেকে ড্রিংক করা শুরু করেছে।প্রথম দিকে ভালো লাগেনি কিন্তু সবার সাথে তাল মেলাতে গিয়ে আস্তে আস্তে এখন অভ্যাস হয়ে গেছে।আজকে জমে যাবে পুরো।এসব ভাবতে ভাবতেই সাদমান ড্রাইভ করছে। তখনই মিহির কল আসলো।মিহির আচার আচরণ ইদানীং সাদমানের কাছে অতিরিক্ত মনে হয়।তবুও সে মিহিকে ছাড়তে পারে না।কাউকে কথা দিয়ে সেই কথাটা না রাখতে চায় না সে।যত যাই হোক মিহির সাথে সে একটা সম্পর্কের বন্ধনে আটকা পড়ে আছে।ওর একটা দায়িত্ব হচ্ছে সেই সম্পর্কের পরিচর্যা করা।
কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে মিহির কান্নামিশ্রিত কন্ঠস্বর ভেসে এলো,সাদমান আমার কল রিসিভ করছিলে না কেন?আমি কতবার সরি লিখে তোমাকে ম্যাসেজ করেছি সেগুলোও সিন করছো না।এরকম করো না জান প্লিজ।সরি বলছি আর তোমাকে রাগাবো না আমি।
সাদমান এপাশ থেকে গম্ভীর কন্ঠে বললো,ইটস ওকে।এখন একটা কাজে যাচ্ছি মিহি। পরে কথা হবে।
“এতরাতে আবার কাজ?”
“আমার কাজের রাত দিন আছে?”
“বুঝেছি।ঠিক আছে কালকে কিন্তু আমরা দেখা করবো।”
“কালকে হবে না।মুভি সাইনিং নিয়ে আমি ব্যস্ত থাকবো।”
“তুমি মুভি করবে?”
“হ্যাঁ ”
“ওহ মাই গড আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।ঠিক আছে আমাকে তাহলে সাথে নিয়ে যেও”
“পরে জানাচ্ছি তোমাকে”
সাদমান কল কেটে দিলো।চোখের সামনে সব স্বপ্ন সত্যি হয়ে ধরা দিয়েছে তার।অবিশ্বাস্যই বটে।

নূরার বিয়ের কেনাকাটা শুরু হয়ে গেছে।নূরা এগুলো কিছুই চায়নি।সে চেয়েছে যত সাধারণভাবে করা যায় সেরকমই বিয়েটা হবে।কিন্তু আশরাফ সাহেব কিছুতেই এটা মানলেন না।বিয়েটা ঘরোয়াভাবে হলেও কেনাকাটা তো করতেই হবে।এদিকে জাহিদ আবদার করেছে একদিন নূরাকে নিয়ে শপিং এ যাবে।নূরা যেভাবে যায় নেকাব করে সেভাবেই যাবে, শুধু একা যেতে হবে।নূরাকে আলেয়া এটা বললে সে চুপ হয়ে গেল।
আলেয়া বললেন,বিয়ের আর কয়েকদিন আছে মা।
নূরা নির্লিপ্ত জবাব দিলো,”তবুও আমার একা দেখা করার ইচ্ছা নেই মা।তুমি যদি সাথে যাও তাহলে যাব নাহলে না”
আলেয়া বললেন,”এটা যদি ওনারা না মানে?”
নূরা নিশ্চুপ হয়ে গেল।
আলেয়া আবার বললেন,কিছু ভাবছিস নূরা?
“ওরা কেমন জানি আম্মা”
“জাহিদের কথা বলছিস”
নূরা নিশ্চুপই রইল।
আলেয়া বুঝতে পারলেন। নূরার চিন্তাধারা আর জাহিদের চিন্তাধারা পুরোপুরি আলাদা।সে জন্য মেয়েটা কষ্ট পাচ্ছে।মনে মনে দোয়া করলেন বিয়ের পর যেন সব ঠিক হয়ে যায়।

জাহিদের মা হেনা যখন তাকে বললেন আলেয়া এবং তিনি সাথে যাবে শপিংয়ে।এটাই নূরার ইচ্ছা।জাহিদ তখন তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে বললো,”মেয়েটা কি পাগল?এসব কি আবদার করে এই মেয়ে।”
হেনা বিরক্ত হয়ে বললেন,”আগেই বলেছি মেয়েটা তোর সাথে যায় না।বিয়েটা কেন করতে চাইলি বল তো?”
“মেয়েটা প্রচন্ড সুন্দরী মা”
“তাতে কি হয়েছে এর থেকেও সুন্দর মেয়ে আছে।সবচেয়ে বড় কথা মেয়েটা মোটেও স্মার্ট না।তুই ওর সাথে সারাজীবন কীভাবে কাটাবি।”
জাহিদ ভ্রু কুচকে বললো,তোমার এসব ভাবতে হবে না।আমি এই মেয়েটাকেই বিয়ে করবো সে যেরকমই হোক।”
কথাটা প্রকাশ্যে বললেও জাহিদ মনে মনে বললো,আনস্মার্ট মেয়েটা এত সুন্দরী যে এই মেয়েকে দেখে আমি পাগল হয়ে গিয়েছি মা।তোমার ছেলে একটা মেয়েকে পছন্দ করবে আর তাকে পাবে না সেটা কি করে হয়।বিয়েটা তো পরের বিষয়।

জাহিদ গাড়ি নিয়ে এসেছে নূরাকে শপিংয়ে নিয়ে যাবে বলে।সাথে যাচ্ছেন আলেয়া আর নোহাও।
শপিংয়ে গিয়ে নূরা প্রচন্ড অস্বস্তিতে পড়লো।জাহিদ বার বার গা ঘেষে এসে এটা ওটা জিজ্ঞেস করে।লজ্জা, অস্বস্তি দুটোই লাগছে তার।
জাহিদ একটা দোকানের অন্য কর্ণার থেকে ডাক দিলো নূরাকে।আলেয়া ইশারা করলেন যাওয়ার জন্য।নূরা ইতস্তত করে উঠে গেল।জাহিদ কিছু ওয়েস্টার্ন ড্রেস পছন্দ করেছে নূরার জন্য।সেগুলোই নূরাকে দেখাচ্ছে।নূরা ড্রেসগুলোর দিকে এক পলক তাকিয়ে বললো,এই ধরনের ড্রেস আমি পরি না।
জাহিদ ভ্রু কুচকে বললো,”আমার এগুলো পছন্দ।আমি চাইছি তুমি এগুলো পরবে।”
নূরা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,”আমি এগুলো পরতে পারবো না। দয়া করে আমাকে জোর করবেন না।পোষাকগুলো ছেলেদের পোষাকের মতো দেখতে।ছেলেদের পোষাক পরা মেয়েদের জন্য হারাম।আর ছেলেদেরও মেয়েদের পোষাক পরতে নিষেধ করা হয়েছে হাদিসে।আপনি বরং পছন্দ করে একটা বোরকা কিনে দিন আমাকে।
জাহিদের মাথা ধরে গেছে কথাগুলো শুনে।এটা মেয়ে না যেন আস্ত হাদিসের বই।এমন একটা মেয়ের সাথে সারাজীবন দূরে থাক কিছুদিনই থাকা যায় না।গেঁও ভূত একটা।জাহিদ আনমনে কথাগুলো ভাবলো।তারপর নূরাকে কিছু বুঝতে না দিয়ে বললো,” ঠিক আছে তোমার যেমন ইচ্ছা”
কথাটা মেনে নেয়ায় নূরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো।
জাহিদের তো মুড খারাপ হয়ে গেছে তখনই।তাই পরবর্তী শপিংটা দায়সারা ভাবেই সে শেষ করলো।

এভাবে বেশকিছুদিন কেটে গেল।দুইদিন পর নূরার আঁকত।বাসায় আয়োজন হচ্ছে সব।পলি আলেয়াকে ডেকে বললেন তার শুটিং আছে আজ।আশরাফ সাহেবও ব্যস্ত।কিছু বাজার বাকি আছে সেগুলো যেন আলেয়া করে আনেন।আলেয়া নোহাকে নিয়ে বাজারে গেলেন।বাসায় একা রইল নূরা।পলি বলে গেলেন বাসায় কেউ আসে না এই সময়ে কারণ ওনারা সবাই বাইরে থাকেন।তাই কোনো প্রকার সমস্যা হবে না বাসায় নূরা একা থাকলে।নূরা একা একা বসে কিছুক্ষণ কোরআন তেলাওয়াত করলো।তারপর বেলকুনিতে গিয়ে কিছুক্ষণ বসলো।হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠলো।নূরা ভাবলো আলেয়া বেগম বাজার শেষ করে এসেছেন তাই না দেখেই দরজাটা খুলে ফেললো।এটাই বোধহয় তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ালো।
জাহিদ এসেছে।নূরা চমকালো।হঠাৎ করে এই সময়ে জাহিদ কেন এসেছে! সে মাথা নিচু করে বললো বাসায় কেউ নেই,আপনি পরে আসুন।নূরা দরজাটা লাগিয়ে দিতে যাবে তখনই জাহিদ দরজা টেনে ধরে ভিতরে প্রবেশ করলো।দরজাটা ভিতর থেকে আটকে দিলো।দরজায় চাবি লাগানো ছিল, একেবারে লক করে চাবিটা পকেটে রেখে দিলো।নূরা কেঁপে উঠলো।কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো,”আপনি দরজা লক করলেন কেন?বললাম তো বাসায় কেউ নাই এখন।আপনি দয়া করে চলে যান।”
জাহিদ রহস্যময় হাসি হেসে বললো “যাব তো ঠিকই,এসেছি যখন কিছুক্ষণ তোমার সাথে সময় কাটিয়ে যাই।”
নূরা এবার রুক্ষকন্ঠে বললো,আমি আপনার সাথে একা সময় কাটাতে চাই না এখন।চলে যান আপনি।সবাই যখন থাকে তখন আসবেন।”
জাহিদ ফিক করে হেসে দিলো,তুমি তো রাগটা ভালোই করতে পারো।তবে মুখটা এভাবে ঢেকে রাখো কেন? আমরা তো দুইদিন পরেই স্বামী স্ত্রী হয়ে যাব। আমার সামনে এত লজ্জা পেতে হবে না।ওড়নাটা সরাও তোমার সুন্দর চেহারাটা দেখি।”
নূরার সারা শরির কাঁপছে।জাহিদের একটা কথাও তার ভালো লাগছে না।যখন দুইটা ছেলে মেয়ে একা থাকে তাদের মাঝখানে শয়তান হাজির হয়ে যায় এটা সে জানে।এখনও জাহিদ তার ননমাহরাম।এভাবে কথা বলা মোটেও উচিৎ হচ্ছে না।কোনরকমে বললো,”দয়া করে আপনি যান এখন।”
জাহিদ বিদ্রুপ করে বললো,”আর না গেলে কি করবে?”
নূরা আর কথা না বাড়িয়ে ভাবলো ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে বসে থাকবে তাই চলে যাচ্ছিল, তখনই জাহিদ তার হাতটা চেপে ধরলো।
নূরা আঁতকে উঠলো।হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে সে প্রাণপণে।সারা শরির কাঁপছে তার।অস্থির হয়ে বললো,”আপনি আমার হাত ছাড়ুন।এমন করবেন না দয়া করে।”
জাহিদ ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো আজকে যে কি কি করবো তুমি তা কল্পনাও করতে পারবে না।তোমার মতো গেঁও একটা মেয়ের এত সুন্দর হয়ে জন্মাতে হলো কেন বলো তো।একটু স্মার্ট হতে বিয়েই করে নিতাম তোমাকে।কিন্তু তুমি তো আস্ত একটা গেঁও ভূত।কিন্তু ভিষণ সুন্দরী। তোমাকে বিয়ে করা যায় না কিন্তু…
নূরা পরের কথাগুলো আর শুনতে চাইল না হেচকা টানে হাতটা ছাড়িয়ে, দুইহাত দিয়ে কান চেপে ধরলো।ওর চোখদুটো জলে ভরে উঠেছে।এই কোন বিপদের মধ্যে আল্লাহ তাকে ফেললেন।এত ছোট মানসিকতা জাহিদের সে এই মানুষটাকে বিয়ে করার কথা ভাবছিল।কিন্তু এখন নিজেকে রক্ষা করবে কি করে।আল্লাহ ছাড়া আর কেউ নাই যে তাকে রক্ষা করতে পারে।মনে মনে ফরিয়াদ করলো আল্লাহ আমার হেফাজত কারী বানিয়ে কাউকে পাঠিয়ে দাও।
জাহিদ হাসতে হাসতে নূরার হাতটা আবার চেপে ধরলো।এবার কিছুতেই নূরা নিজেকে ছাড়াতে পারছে না।শুধু অঝোরে কেঁদেই যাচ্ছে।

চলবে…