এক টুকরো নূর পর্ব-১০+১১

0
102

#এক_টুকরো_নূর
—————–(১০ পর্ব)
লেখা: উম্মে হানি মিম

কক্সবাজার পৌঁছে একটা ফাইভস্টার হোটেলে উঠলো সাদমান নূরাকে নিয়ে।দুজনেই ফ্রেশ হয়ে রুমেই রাতের খাবারটা আনিয়ে নিলো।
নূরা খাবারটা শেষ করে বিড়বিড় করছিল।সাদমান প্রশ্ন করলো,” কি বিড়বিড় করছেন আপনি?”
নূরা পানির গ্লাসে চুমুক দিয়ে শেষ করে বললো,
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাঃ) বলেছেনঃ
আল্লাহ তায়ালা সেই বান্দার ওপর অবশ্যই সন্তুষ্ট হন, যে বান্দা কোনো খানা খেয়ে কিংবা পানীয় পান করে এর জন্য আল্লাহর হামদ ও প্রশংসা করে।
জামে আত-তিরমিজি ১৮২৩।

সাদমান ভ্রু কুচকে বললো, এতসব আপনি মুখস্থ করে রাখেন?
“আমার মনে থাকে।”
“কীভাবে জেনেছেন এগুলো?”
“আমি অনেক হাদিসের বই পড়ি।”
“বিরক্ত লাগে না?”
“বিরক্ত লাগবে কেন অনেক বেশি ভালো লাগে।”
কিছুক্ষণ থেমে নূরা আবার বললো,”এই যে আমি কথায় কথায় হাদিস বলি আপনার বিরক্ত লাগে?”
সাদমান মনে মনে ভাবলো তার ততটাও বিরক্ত লাগে না।বরং শুনতে ভালোই লাগে। মনে হয় নতুন কিছু জানতে পারছে।”
সাদমান না সূচক মাথা নাড়ালো।
নূরা মুচকি হেসে বললো,”আমরা কালকে কখন সমুদ্রে যাব?”
“আমার ঘুম থেকে উঠার উপর ডিপেন্ড করে,কাজ না থাকলে আমি দেরী করে ঘুম থেকে উঠি।”
“এত সুন্দর একটা জায়গায় এসে আপনি ঘুমাবেন?”
“সুন্দর জায়গায় যারা থাকে তারা কি ঘুমায় না?”
নূরা কাচুমাচু করে বললো, “তা না।বললাম আরকি।আচ্ছা আপনি তো একজন মুসলিম কিন্তু আপনাকে আমি কখনই নামাজ পড়তে দেখি না কেন?আপনি কখনই নামাজ পড়েন না?”
“পড়তাম ছোটবেলায়। বড় হয়েছি থেকে কাজের চাপে আর পড়া হয় না।”
নূরার ভিতরটা কুকড়ে উঠলো।এই মানুষটার কতদিনের নামাজ কাযা হায় আল্লাহ।
নূরার মুখটা কালো হয়েছে দেখে সাদমান জিজ্ঞেস করলো,” কি সমস্যা?”
“আমি সব সময় কি ভাবতাম জানেন?”
“কি ভাবতেন?”
“আমার যিনি স্বামী হবেন তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজি,আমলদার।আল্লাহভিরু।রাসুলপ্রেমী হবে।তার গালভর্তি থাকবে ঘন দাড়ি।একদম আমার চোক্ষুশীতলকারী হবে সে।অথচ.. কথাটা শেষ না করেই নূরা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।
সাদমান কথাটা টেনে নিয়ে বললো,”অথচ আমি তেমন না।”
নূরা মাথা নিচু করে ফেললো।
সাদমান বিদ্রুপ করে বললো,”যেখানে বিয়েটা আমাদের মতের বিরুদ্ধে হয়েছে সেখানে এত এক্সপেকটেশন রাখার মানে হয়?বিয়েটা তো ভেঙ্গেই যাবে।আমি দায়িত্ব নিয়ে এমন একজন হুজুরের সাথে আপনাকে বিয়ে দিবো।কথা দিচ্ছি।”
নূরার বুকটা ছ্যাঁত করে উঠলো।বিয়েটা যেভাবেই হোক।কবুলটা তো সে মন থেকেই বলেছে।স্বামী হিসেবে মেনে নিয়েছে সাদমানকে।এটাই তো উচিৎ ছিল তার।এই কয়দিনে সাদমানের মধ্যে কোথাও একটা ভালোমানুষি দেখেছে সে।সেই ভালোমানুষিটাতে সে মুগ্ধও হয়েছে।আজকে যখন সাদমান অকপটে বললো বিয়েটা ভেঙ্গে যাবে তখন বুকের মধ্যে চিনচিনে ব্যথা লাগাটা স্বাভাবিক।
নূরা সাদমানের দিক থেকে সরে এসে জানালার পাশে দাঁড়ালো।পূর্ণ চাঁদ উঠেছে আজ।এখান থেকে অনেক দূরে সমুদ্র দেখা যাচ্ছে।চাঁদের আলোয় সমুদ্রের পানি ঝলমল করছে।অপূর্ব সুন্দর দৃশ্য।দৃশ্যটা আরও সুন্দর হয়ে উঠতো যদি পাশে থাকা মানুষটা তার নিজের মানুষ হতো।
সাদমান এসে নূরার পেছনে দাড়ালো,”কি দেখছেন এখানে? ”
নূরা না তাকিয়ে বললো,”চাঁদ দেখছি।”
“সে তো রোজই দেখা যায়।এখানে আবার নতুনত্ব কি?”
এবার নূরা সাদমানের দিকে তাকালো,”রোজ দেখলেও কিছু জিনিস পুরোনো হয় না বরং মুগ্ধতা আরও বাড়ে।একদম হালাল সম্পর্কের মতো।যত দিন যায় মুগ্ধতা আরও বেড়ে যায় সম্পর্কে।চাঁদ ঠিক তেমনই।যত দেখি তত মুগ্ধ হই।”
সাদমানের এবার মনে হয় নূরার মাথায় গণ্ডগোল আছে।উত্তরে কিছু না বলেই সে ঘুমাতে চলে যায়।”

নূরা ফজরে উঠে নামাজ পড়ে।চারিদিকে সূর্যের আবছা আলো ছড়িয়ে পরেছে।জানালা দিয়ে সমুদ্র দেখতে বেশ ভালো লাগছে।নোহার কথা মনে পড়ছে খুব।নোহা খুব চাইত সমুদ্রে আসতে।আব্বার কাছে আবদার করতো।তিনিও আশ্বাস দিতেন একসময় চারজন মিলে সমুদ্র দেখতে আসবেন।অথচ সেই কথা তিনি রাখতে পারলেন না।নূরার মনটা খারাপ হয়ে গেল।চোখদুটো ঝাপসা হয়ে এলো।নোহাটা সাথে থাকলে কি ভালো হতো।নূরা চোখ মুছে পেছনে তাকাতেই দেখতে পেলো ঘুম ঘুম চোখে সাদমান দাঁড়িয়ে আছে।নূরা খানিকটা অবাক হয়ে বললো,”আপনি এত সকালে উঠলেন যে?”
সাদমান চোখ কচলে বললো,”ঘুম ভেঙে গেল।আপনি এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছেন কেন?”
নূরা সরল স্বীকারোক্তি দিলো,”আম্মা আর নোহার কথা মনে পড়ছে খুব।নোহার খুব শখ ছিল সমুদ্রে আসার।”
সাদমান মাথা চুলকে বললো, “আগে বলতেন ওনাদের নিয়ে আসতাম।”
সাদমানের এমন সরল সহজ উত্তরটা নূরার খুব ভালো লাগলো।
সাদমান নিজের ফোন এগিয়ে দিয়ে বললো,”ওনাদের সাথে কথা বলুন মন ভালো হয়ে যাবে।আপনি যে কী বুঝি না।এই যুগের নাকি আদী যুগের।ফোনটা পর্যন্ত ইউজ করেন না”
নূরা সাদমানের হাত থেকে ফোনটা নিলো।ওয়ালপেপারে মিহি আর সাদমানের পাশাপাশি ছবি।একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো ভিতর থেকে।

সমুদ্রের ঢেউ তীরে এসে আচড়ে পড়ছে একের পর এক।আনমনে সেই ঢেউয়ে পা ভেজাচ্ছে নূরা। ঢেউরের সাথে খেলছে।সাদমান কিছুটা দূরত্বে দাঁড়িয়ে আছে।ভাবছে মেয়েটা কত সহজ সরল।বাচ্চাদের মতো ঢেউয়ের সাথে খেলছে।বোরকা পরা আপাদমস্তক ঢাকা মেয়েটাকে কেন জানি ততটাও খারাপ লাগছে না সাদমানের।বউ হিসেবে না হোক একটা মানুষ হিসেবে মেয়েটা ভালোই।সহজ সরল।
কিন্তু মিহির কল দেখে তার ভাবনার তারটা কেটে গেল।মিহির কল ধরলেই এখন হাজারটা প্রশ্ন করবে তার চেয়ে ভালো তাওসিফকে ফোন দিক।তাওসিফের থেকে একটা বুদ্ধি ধার নেয়া যায়।এভাবে বসে থাকলে কিছুই হবে না।মিহিকে সে কথা দিয়ে এসেছে।
সাদমান এসব ভাবতে ভাবতে তাওসিফকে কল দিলো।ওপাশ থেকে তাওসিফ ভাড়ি গলায় বললো,”হানিমুন কেমন চলছে দোস্ত?”
সাদমান বিরক্ত হয়ে বললো,”শা’লার হানিমুন বউই নাই যার।”
“কি বলছিস সাদমান আস্ত একটা বউ সাথে রেখে এসব কি কথা!”
“সব জেনেশুনে এসব বলছিস তুই?”
তাওসিফ শব্দ করে হেসে বললো,”জানিস আমার খুব মজা লাগছে।তোরে শিক্ষা দেয়ার জন্য এমন একটা বউই তোর থাকা উচিৎ। তোর তো আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা উচিৎ মিহির মতো পা’জি মেয়ের থেকে বেঁচে গেছিস।এমনে ছাড়াইতে পারতি?”
“মিহিকে আমি ছাড়াতে চাইনি কখনও।হতে পারে ওকে আমি আগে থেকে প্রপোজ করিনি সেই করছে।তাই বলে আমাদের সম্পর্ক তো মিথ্যা না।”
“মিহি তোর জীবন তেজপাতা করে দিচ্ছিল এটা কি কিথ্যে?”
“মিহি অনেক পেইন দেয় আমাকে এটা ঠিক।কিন্তু এখন এসব বলার জন্য তোকে কল দেইনি। তুই বল এই মেয়েটার থেকে মুক্তি পাবো কীভাবে? ”
“নিজের বউরে এই মেয়ে বলছিস?”
“ফা’জলামি বন্ধ করে বুদ্ধি দে।”
“বুদ্ধি আর কি দিবো।এখন তো শহর থেকে দূরে আছিস, সেখানেই রেখে আয় ওরে।পরে এসে বলবি হারিয়ে গেছে।শেষ কাহিনী।”
“কি বলছিস সত্যি এটা করবো? ”
“হ্যাঁ এটাই কর।এখন রাখছি রে।”
তাওসিফ ফোন রেখে দিলো।সাদমান ভাবছে বুদ্ধিটা খারাপ দেয়নি।এখানে মেয়েটাকে রেখে গেলে জীবনেও একা একা ফিরতে পারবে না। শুধু বুদ্ধি করে একটা জায়গায় রেখে চলে যেতে হবে।

হোটেলে ফিরে নূরা ফ্রেশ হয়ে নিলো। আসরের নামাজ পড়লো।কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে মাগরিবের পরে আবার বের হবে তারা।নতুন একটা জায়গায় ঘুর‍তে যাবে।নূরা খুব উৎফুল্ল হয়ে আছে। এদিকে সে কল্পনাও করতে পারছে না সাদমান কি পরিকল্পনা সাজিয়েছে।
মাগরিবের পরে সাদমান নূরাকে নিয়ে বের হলো।রাস্তা পার হয়ে গাড়িতে উঠতে হবে এখানে।সাদমান খুব সাবধানে নূরাকে বা-পাশে সরিয়ে দিলো।নিজে ডানপাশে এসে নূরার হাত ধরে রাস্তা পার হলো।নূরার ব্যপারটা বেশ ভালো লাগলো।

অন্য একটা বিচে এসেছে তারা।নূরা মুগ্ধ হয়ে রাতের সমুদ্র সৈকত দেখছে।সাদমান হঠাৎ বললো,নূরা আপনি আর কখনও কক্সবাজার আসেননি তাই না?”
“না”
“এখানে রাস্তাঘাট চিনেন?”
নূরা না সূচক মাথা নাড়ালো।
“এখান থেকে একা একা আমাদের বাসায় ফিরতে পারবেন?”
“আমি একা একা এতদূর কখনই যাইনি।এখান থেকে আমি একা ফিরতেও পারবো না।এসব কেন জিজ্ঞেস করছেন?”
“না এমনিই জেনে নিলাম।আমি যদি এখান থেকে কোথাও হারিয়ে যাই আপনার তো ফিরতে হবে।”
“হারিয়ে যাবেন মানে?”
সাদমান ঠোঁট বাকিয়ে হেসে বললো,এই ধরেন সমুদ্রে ডুবে গেলাম।”
“আস্তাগফিরুল্লাহ।এসব কথা বলতে হয় না।”
নূরার মুখটা কালো হয়ে গেল।
সাদমানের বেশ মজা লাগছে।এই মেয়েকে এখানে ছেড়ে গেলে আর কোনোদিন তার চেহারা দেখতে হবে না।দারুণ হবে ব্যপারটা।সবাই জানবে নূরা হারিয়ে গেছে।আসল কাহিনী তো অন্য।
সাদমান আনমনেই হেসে উঠলো।
নূরা চমকে উঠে তাকালো তার দিকে।মানুষটার হাসি খুব সুন্দর।সমুদ্রের ঢেউয়ের থেকে বেশি সুন্দর।

সাদমান হঠাৎ বললো,নূরা আমি একটু আসছি আপনি এখানে বসুন।বেশি সময় লাগবে না, চলে আসবো।”
নূরা অবাক হয়ে বললো,”কোথায় যাবেন আপনি?”
“মাস্কটা চেঞ্জ করে আসছি।ঘেমে গেছে পুরো।এখানে সামনে মাস্ক কিনতে পাওয়া যায়।”
নূরা বিষন্ন মনে বললো,”ঠিক আছে, তাড়াতাড়ি আসবেন কিন্তু।”
সাদমান যেতে যেতেও ফিরে এলো।নূরার দিকে একবার তাকিয়ে বললো,একটু যুগের সাথে নিজেকে তাল মিলিয়ে চলতে শিখুন।আদী যুগে পরে থাকবেন না।একটু চালাক হন।”
নূরা বিস্মিত হয়ে বললো,হঠাৎ এটা বললেন কেন?”
“না এমনিই।”
কথাটা বলে সাদমান হনহন করে হেটে চলে গেল।সমুদ্র তীরে একা বসে রইলো নূরা..
চলবে..

#এক_টুকরো_নূর
——————(১১ পর্ব)
লেখা: উম্মে হানি মিম

সাদমান নূরাকে ফেলে রেখে এসে মনে মনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো।এবার অন্য একটা হোটেল ঠিক করে উঠতে হবে।বলা তো যায় না হোটেল পর্যন্ত যদি নূরা চলে আসে।সাদমান অন্য একটা হোটেলে গিয়ে উঠলো।ফ্রেশ হলো।মনের মধ্যে কিছু একটা নিয়ে খচখচ করছে।নূরাকে রেখে আসার জন্যই কী এমন লাগছে বুঝতে পারলো না।হঠাৎ সাদমানের মনটা বেকুল হয়ে উঠলো।অপরাধবোধ কাজ করতে শুরু করলো।নূরার সাথে খারাপ কিছু হবে না তো?সন্ধ্যাবেলা একটা মেয়েকে বিচে রেখে এলো।কত রকমের বিপদ তো হতে পারে।নূরা যদি সত্যি সত্যি হারিয়ে যায়।সত্যিই যদি কোনো বিপদ হয় তার।সাদমানের আর মাথা কাজ করছে না।দ্রুত বের হলো।সোজা চলে গেল বিচে।যেখানে নূরাকে বসিয়ে রেখে গিয়েছিল সেখানে নূরা নেই।সাদমানের অস্থির লাগছে খুব।এতবড় একটা অন্যায় কী করে করলো সে।একা একটা মেয়েকে কেন এখানে রেখে গেল।চারিদিকে লোকজনকে জিজ্ঞেস করলো নূরার ব্যপারে।কেউ দেখেছে বলে বলতে পারে না।সাদমানের পাগল প্রায় অবস্থা।তাওসিফকে কল দিলো সে।
তাওসিফ ফোন রিসিভ করে ওপাশ থেকে বললো,”কি অবস্থা দোস্ত।”
“সা’লা রাখ তোর অবস্থা।আমি নূরাকে হারিয়ে ফেলেছি রে।ওরে কই পাবো এখন বল।আমার অশান্তি লাগছে অনেক।ওর যদি কোনো বিপদ হয়।আমি ওরে তোর কথায় বিচে ফেলে চলে গিয়েছিলাম সা’লা।”
ওপাশ থেকে তাওসিফের হাসির শব্দ শুনা গেল,নূরা মানে তোর বউটা?”
“হ্যাঁ”
“কখন ফেলে রেখে গিয়েছিস।”
“বেশ অনেক্ষণ আগে।”
“আমার ধারণা মোটামুটি ভুল ছিল পুরোটা না।”
“মানে কি তাওসিফ?”
“মানে হচ্ছে আমি যখন তোরে বুদ্ধিটা দিয়েছি তখনই বুঝে গিয়েছি তুই কাজটা করতে পারবি না।তোর যদি সত্যিই নূরার থেকে পালানোর ইচ্ছে থাকতো তুই বিয়েটাই করতি না।আর এতদিনে নিজেই পালিয়ে যেতিস।এত পেইন নিয়ে নূরার সাথে থাকতি না।তোর নিজেরও নূরার প্রতি একটা সফট কর্ণার তৈরি হয়ে গিয়েছে যেটা নিজেও বুঝতে পারছিস না।আমি ভেবেছি তুই নূরাকে রেখে যেতেই পারবি না।যাই হোক ফিরে আসাটাও বুঝায় নূরার জন্য তোর টান কাছ করে।”
“সা’লা আমারে রোবট পাইছিস তুই? সব মানুষের জন্যই মানুষের একটা সহানুভূতি কাজ করে।তুই এখন বল আমি নূরাকে কোথায় পাবো।আমার অস্থির লাগছে এখন।পুলিশে জানাবো আমি?”
তাওসিফ ভেবেচিন্তে বললো,”পুলিশে জানালে নিজেই ফাসবি।আগে চারিদিকে খোঁজে দেখ।তারপর হোটেলে গিয়ে দেখ নূরা সেখানে গেল কী না।

সাদমান ফোন কেটে এদিক ওদিক খুঁজে অস্থিরের মতো হোটেলে গেল।ওখানে গিয়েও নূরাকে পেল না।দিশেহারা হয়ে আবার বিচে ফিরে এলো।এবার নূরাকে যেখানে রেখে গিয়েছিল সেখানেই বসে থাকতে দেখলো।সাদমান দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেল।নূরাকে দেখে খুব ক্লান্ত মনে হচ্ছে।সাদমানকে দেখতে পেয়েই নূরা উঠে দাঁড়ালো।ছলছল চোখে বললো,”আপনি খুব রাগ করেছেন তাই না?বিশ্বাস করুন আমি সজ্ঞানে কিছু করিনি।”
সাদমানকে বিভ্রান্ত দেখাচ্ছে।সে আশা করেনি নূরা এমন কিছু বলবে।নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,কী হয়েছিল?
নূরার পাশে আরেকজন মহিলা দাঁড়িয়ে আছেন।তিনি বললেন,আসলে ভাই আমরা এদিকেই হাঁটছিলাম হঠাৎ ওনাকে এখানে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে আমাদের হোটেলে নিয়ে যাই।আমাদের হোটেল পাশেই ছিল।ওনার প্রেশার লো হয়ে গিয়েছিল।যখন ওনার হুশ আসে তখন উনি পাগলের মতো আপনাকে খুঁজচ্ছিলেন।বলছিলেন ওনার স্বামী বিচেই আছেন।তারপর আমরা আবার ওনাকে এখানে নিয়ে আসি।”
নূরা কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো,”আপনি নিশ্চয়ই ফিরে এসে আমাকে না পেয়ে রাগ করেছেন।আমি আসলে বুঝতে পারিনি কখন সেন্সলেস হয়ে গিয়েছি।”
পরিস্থিতি এভাবে নিজের নিয়ন্ত্রণে চলে আসায় সাদমান খানিকটা ভড়কে গেল।নূরাকে সেটা বুঝতে না দিয়ে বললো,আমি আপনাকে কত খুঁজেছি তারপর ভাবলাম হোটেলে চলে গেছেন।সেখানেও খুঁজে ফিরে এলাম।”
নূরা মাথা নিচু করে বললো,”সরি।”
“ঠিক আছে আর সরি বলতে হবে না এখন চলুন।”
মহিলাকে উদ্দেশ্য করে সাদমান বললো “ধন্যবাদ আপনাদের।”
কথাটা বলে নূরাকে নিয়ে চলে এলো হোটেলে।সাদমান আজকে বড় বাঁচা বেঁচে গিয়েছে।একে তো নূরাকে পাচ্ছিল না তার উপর আবার ফেলে রেখে যাওয়ার অপরাধবোধ। নূরার সামনে দাঁড়াতো কীভাবে সে।
নূরা ফ্রেশ হয়ে এশার নামাজ আদায় করলো।সাদমান নূরার খাবার আনিয়েছে।দুইটা ডিমও আছে সাথে।নূরা একটা ডিম নিজের প্লেটে নিয়ে অন্য ডিমটা সাদমানের প্লেটে তুলে দিতে যাচ্ছিল।সাদমান বারন করে বললো,আমি ডিম খাবো না।এগুলো আপনার জন্য আনিয়েছি।আপনার এত ঘনঘন প্রেশার লো হয় কেন?প্রতিদিন ডিম খাবেন।এখন এই দুটি খান।
নূরা বিস্মিত হয়ে বললো,”দুটি ডিম একসাথে কি করে খাবো।”
সাদমান জোর দিয়ে বললো,”খাওয়া লাগবে তাই খাবেন।চুপচাপ খেয়ে নিন।”
নূরা খেতে খেতে ভাবলো, সাদমান কী তার ভালো মন্দের খেয়াল রাখা শুরু করেছে। নাকি তারই মনের ভুল।আজ সাদমানকে সে দিশেহারা অবস্থায় ছুটে আসতে দেখেছে বিচে।এত অস্থিরতা তাহলে কীসের জন্য!

খাওয়া শেষ হতেই সাদমান বললো,হোটেলের ছাদে নাকি বসার জায়গা আছে।ওখান থেকে সমুদ্র দেখা যায় ভালো।চাঁদও আছে আকাশে, যাবেন একবার?”
নূরা বেশ অবাক হয়ে বললো,যাওয়া যায় কিন্তু হঠাৎ ছাঁদে কেন যাবেন?
“না এমনিই,ভালো লাগছে না।আপনি তো চাঁদ দেখতে ভালোবাসেন চাঁদ দেখাও হবে।
নূরা মাথা নাড়ালো।

আকাশে পূর্ণ চাঁদ আজ।সমুদ্র পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে।চাঁদ যেন সমুদ্র রূপ ঢেলে দিয়েছে সমুদ্রের জলে।নূরা আর সাদমান পাশাপাশি বসে আছে মাঝখানে একহাত সমান দূরত্ব।সাদমানের খুব অপরাধবোধ হচ্ছে।মেয়েটা বড্ড সহজ সরল।ভালোও বটে।এই মেয়েটাকে কি করে একা ফেলে রেখে এসেছিল সে।যদি তার কোনো বিপদ হতো কীভাবে ক্ষমা করতো সাদমান নিজেকে।সাদমান আজ কতবড় অন্যায়টা করেছিল অথচ মেয়েটা তার কিছুই জানে না।কত বোকা সে।সাদমান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,” নূরা আপনার সাথে যদি কেউ কোনো বড় অন্যায় করে আপনি তাকে ক্ষমা করতে পারবেন?
নূরা মুচকি হেসে বললো,” কেন করবো না? আল্লাহ ক্ষমাশীলদের পছন্দ করেন।যে ভুল করবে সে যদি নিজের ভুল বুঝতে পারে তাহলে তো আমার উচিৎ তাকে ক্ষমা করা।
ক্ষমাশীল ও ধৈর্যবানের প্রশংসায় আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি ধৈর্য ধরবে ও ক্ষমা করবে, সন্দেহাতীতভাবে এটা বড় উচ্চমানের সাহসিকতাপূর্ণ কাজের অন্যতম।’ (সুরা আশ শুরা, আয়াত : ৪৩)
সাদমান মুগ্ধ হয়ে নূরার কথা শুনলো,নিজের অজান্তেই বলে উঠলো,”আপনি এত ভালো কেন নূরা?”
নূরা নিশব্দে হাসলো।
সাদমান আবার বললো,”আপনি কল্পনা করতে পারেন আপনার সাথে কি হয়েছিল আজকে?
“কী?”
“আমি আপনাকে ইচ্ছে করে বিচে ফেলে এসে ছিলাম।”
নূরা কিছুটা বিস্মিত হয়ে বললো,”তাহলে আবার ফিরে গেলেন কেন বিচে?”
“অপরাধবোধ কাজ করছিল।”
নূরা স্লান হেসে বললো,এই যে অপরাধবোধ এটাই সুন্দর।আবার আমার সামনে সত্যিটা এখন স্বীকার করলেন এটাই উত্তম গুণ।”
সাদমান হঠাৎ নূরার হাতটা আলতো করে ধরে বললো,”সরি নূরা,আজকে সত্যিই বড় ভুল হয়েছে আমার।আপনার সাথে সম্পর্ক না মানলেও আমার কোনো অধিকার নেই আপনার সাথে এতবড় অন্যায়টা করা।”
নূরা মাথা নিচু করে বললো,”আপনি যে ভুলটা বুঝতে পেরেছেন এটাই অনেক।আমিই তো আপনার জীবনে ঝড়ের মতো এসেছি।একটু তো সময় লাগবেই সব ঠিক হতে।শেষ পর্যন্ত কী আছে আমার কপালে আল্লাহই ভালো জানেন।চলুন রুমে যাই ঘুম পাচ্ছে আমার।”
নূরা উঠে দাঁড়ালো।সাদমানও দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।

সাদমানের ঘুম ভাঙ্গলো ফোনের রিংটোন শুনে।কল রিসিভ করে হ্যালো বলতেই আঁতকে উঠলো।দ্রুত উঠে দাঁড়ালো।নূরা সাদমানকে অস্থির হতে দেখে বললো,কী হয়েছে?
“মিহি সু*ইসাইড করার চেষ্টা করেছে।এখন হসপিটালে আছে….
চলবে…