এক টুকরো নূর পর্ব-৮+৯

0
96

#এক_টুকরো_নূর
——————–(৮ম পর্ব)
লেখা: উম্মে হানি মিম

সাদমান নূরাকে টেনে নিয়ে গেল তার ঘরে।তারপর দু-হাত জোর করে বললো,দয়া করে আমাকে ক্ষমা করে উদ্ধার করুন আর আমার মা জননীকে গিয়ে ঔষধটা খাওয়ান।
নূরা বিচলিত হয়ে বললো,কি হয়েছে মায়ের?
“প্রেশার হাই।আমি আপনার কাছে ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত তিনি ঔষধ খাবেন না বলেছেন।”
নূরা মাথা নাড়িয়ে বললো,ঠিক আছে আমি যাচ্ছি।”
নূরা মিসেস লিপিকে ঔষধ খাইয়ে শুইয়ে দিলো।কিছুক্ষণ ঘুমালে উনি ঠিক হয়ে যাবেন।সন্ধ্যা হয়ে আসছে।মাগরিবের আযান হবে।এই বাসায় হক সাহেব ছাড়া কেউ তেমন নামাজ পরে না।তারা হয়তো জানেই না কেয়ামতের দিন বান্দার
কাজসমূহের মধ্যে সর্বপ্রথম সালাতের হিসাব নেওয়া হবে ।
(সহীহ তিরমিযী :৪১৩,ইবনু মাযাহ :১৪২৫,১৪২৬)
নূরার বুঁকটা কেঁপে উঠে।নূরা গেস্ট রুমেই নামাজ পড়ছে।সাদমানের ঘরে অসংখ্য ছবি টানানো।যে ঘরে প্রাণীর ছবি থাকে সে ঘরে রহমতের ফেরেস্তা আসেন না।তাই নূরা আর ঘরে নামাজ পড়লো না।নামাজ পড়ে উঠতেই আমেনা এসে বললো সাদমানের ছোটবোন সুহা এসেছে তাকে ডাকছে।সে তার ঘরে আছে।সুহার সাথে আর দেখা হয়নি নূরার কারণ সে ফ্রেন্ডদের সাথে ট্যুরে ছিল।এই প্রথম দেখা হবে তাদের। নূরা ভয়ে ভয়েই সুহার ঘরের দিকে গেল।নূরাকে দেখে সুহা ভ্রু কুচকালো,তুমিই নূরা?
“জি”
“আমার ভাবতেই অবাক লাগছে তুমি আমার ভাবী।কীভাবে সম্ভব এটা।আস্ত গ্রাম্য একটা মেয়ে তুমি।বাবা – মা জোর করে তোমার সাথে ভাইয়ার বিয়ে দিয়েছে তাই না?”
নূরা নিশ্চুপ রইল মাথা নিচু করে।
সুহা আবার বললো,”মিহি আপু আসছে তোমার খবর আছে এবার।”
নূরার মনে পড়লো সেদিনের কথাটা।যখন মিহি নামের একটা মেয়ে নোহাকে চড় মেরেছিল।কিন্তু সুহা এই মেয়েটার ভয় তাকে কেন দেখাচ্ছে বুঝতে পারলো না।কথা বলতে বলতেই কলিংবেল বেজে উঠলো।সুহা বললো,”এবার হবে আসল মজা।
চলো গিয়ে লাইভ সিনেমা দেখে আসি।”
সুহা নূরাকে টেনে নিয়ে গেল সাদমানের ঘরে।মিহি সাদমানের শার্টের কলার ধরে টানছে আর পাগলের মতো কাঁদছে।নূরা কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না।সাদমান মিহিকে শান্ত করার প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে।এক পর্যায়ে মিহি সাদমানকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে, আর মুখে বলে,”কেন এমন করলে আমার সাথে? কেন এতবড় প্রতারণা করলে?
নূরার পায়ের তলার মাটি যেন কাঁপছে।দৃশ্যটা মোটেও তার জন্য দৃষ্টিনন্দন নয়।দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,”আপনার ভাইয়ের সাথে কি সম্পর্ক মেয়েটার? ”
সুহা মুচকি হেসে বললো,”এখনও বুঝতে পারছো না? তুমি তো দেখি আস্ত বোকা।ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড হচ্ছে মিহি আপু।”
নূরার বুকের ভেতরটা কেমন করে উঠলো।সে জানে না এমন লাগার কারণ শুধু জানে যেই মানুষটার সাথে সে জড়িয়ে গেছে সেই মানুষটাকে সব রকমের হারাম থেকে তারই তো মুক্ত করতে হবে।এটা তার উপর ফরজ।

সাদমান কোনোরকমে মিহিকে শান্ত করলো। মিহি একটু শান্ত হতেই দরজায় তাকিয়ে দেখলো নূরা আর সুহা দাঁড়িয়ে আছে।নূরাকে চিনতে তার অসুবিধা হলো না।এই বাসায় এই ধরনের পোষাক কেউ পরে না।মিহি এগিয়ে গেল নূরার দিকে।সাদমানও পেছন পেছন গেল।মিহি নূরাকে ধাক্কা দিয়ে বললো,”তাবিজ করেছো না সবাইকে?তোমার মতো হুজুর সেজে থাকা মেয়েরা এটাই ভালো পারে।কেন করলে আমার এতবড় ক্ষতি?”
নূরা কোনো রকমে ধাক্কাটা সামলে নিলো।নিজেকে প্রস্তুত করে বললো,”যা হওয়ার আল্লাহর হুকুমে হয়েছে আমি কিছু করিনি।সেটা আমার আল্লাহ ভালো জানেন।”
মিহির রাগ আরও বাড়লো।কতবড় সাহস মুখে মুখে কথা বলে আবার।দাঁত কটমট করে বললো,”তোমাকে তো আজ আমি জুতাপেটা করবো”।বলে জুতা হাতে নিলো তার।সাদমান এগিয়ে এসে মিহিকে আটকালো।মিহি পাগলামী শুরু করলো।সাদমান এক পর্যায়ে মিহির গালে ঠাশ করে একটা চড় বসিয়ে দিলো।মিহি আঁতকে উঠলো।
সাদমানের প্রচন্ড রাগ হচ্ছে।মিহির হাত দুটো টেনে ধরে বললো,”যা বলার আমাকে বলতে বলেছি।তুমি মেয়েটাকে মারতে গেলে কেন?এখানে যা হয়েছে কিছুর জন্যই আমি বা মেয়েটা দায়ী নয়।অকারণে তুমি তার গায়ে হাত তুলতে পারো না।আমাকে বুঝার চেষ্টা করো মিহি, আমি এখনও তোমাকেই ভালোবাসি।”
মিহি সাদমানের হাত ছাড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে গেল।পেছন পেছন সুহাও বেরিয়ে গেল।সাদমান বিছানায় বসে একটা সিগারেট ধরালো।বুকের ভেতরটা জ্ব’লছে তার।কি থেকে কি হয়ে গেল।সবকিছু কেমন এলোমেলো হয়ে গেল।
নূরা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।
সাদমান সিগারেটটা শেষ করে অন্য আরেকটা ধরালো।নূরা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে।মানুষটা কি ভালো? নাকি খারাপ?সবকিছুর মিশ্রণে যেন তৈরি সে। কখনও নূরাকে বিপদের হাত থেকে বাঁচায় সে আবার কখনও খারাপ আচরণ করে।মানুষটার জীবনে যে ঝড় তুলেছে নূরা সেটা আঁচ করতে পারে। কিন্তু তার জীবনটা ঝলমলে হলেও তো ঠিক জীবন না।এভাবে তো একটা মুসলিমের জীবন বিধান গড়ে উঠতে পারে না।নূরা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।
সাদমান কিছুক্ষণ খেয়াল করে বললো,”হা করে তাকিয়ে আছেন কেন? কিছু বলার থাকলে বলুন।”
নূরা ভয়ে ভয়ে বললো,” ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতি কারক ও বিভিন্ন রোগের কারণ। সুতরাং ধূমপান সেবন করা নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়ার নামান্তর। অথচ ইসলামে নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া হারাম। (সূরা বাকারা: ১৯৫)
সাদমান ভ্রু কুচকালো,”আপনার কোনো কথা আমার মাথায় ঢুকে না কেন বলুন তো?কোন ভাষায় কথা বলেন আপনি?
নূরা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,”বুঝার চেষ্টা করলে বুঝতে পারতেন।”
“আমার বুঝার দরকার নাই এসব।আপনি আপনার নিজের কাজ করুন আমাকে আমার মতো থাকতে দিন।”
নূরা মাথা নাড়ালো।সাদমান উঠে বেরিয়েল গেল বাসা থেকে।

সাদমান সেই যে বাসা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল ফিরতে তার অনেকটা দেরী হয়ে গেল।সবার খাওয়া হয়েগেছে।নূরাকেও লিপি জোর করে খাইয়ে দিয়েছেন।সাদমান রাতে বাইরে থাকলে ওখানেই খেয়ে নেয় সে।সবাই যার যার মতো ঘুমাতে চলে গেলেন।নূরা বসে বসে অপেক্ষা করছে সাদমানের।সাদমান ঢুলতে ঢুলতে ঘরে ঢুকলো।নূরা বুঝতে পারছে না কি হয়েছে তার।এগিয়ে গিয়ে বললো,কি হয়েছে আপনার শরির খারাপ? সাদমান বিড়বিড় করে বললো,”না তো”
‘তাহলে কি হয়েছে?”
“সাদমান আনমনে বললো ড্রিংক করেছি আমি,আমাকে দেখে বুঝতে পারছেন না”
তার মানে সাদমান ম’দ পান করেছে।আঁতকে উঠলো নূরা।তার বুক ফেটে কান্না আসছে।
এই মানুষটার জীবনে নূরের আলো কি করে আনবে সে।সম্ভব আদৌ!
এরকম স্বভাবের একটা মানুষের সাথে কি করেই বা সারাজীবন কাটাবে।তার তো পাপ হবে।স্বামীকে ঠিক পথ দেখানো তো স্ত্রীর দায়িত্ব।নূরা বিড়বিড় করলো,”আল্লাহ মানুষটাকে সব রকমের হারাম থেকে মুক্ত করে দাও।নাহলে এই মানুষটার থেকে আমাকে মুক্ত করে দাও।”
সাদমান বললো,শুনুন নূরা।আপনি একদম আমার বউয়ের মতো না।জীবনে আমার মনের মতো হয়েও উঠতে পারবেন না।তাছাড়া আমি মিহিকে ভালোবাসি।তাকেই আমি বিয়ে করবো।আপনি আপনার রাস্তা দেখুন।একঘরে থেকেও আমরা আকাশ আর মাটির মতো দূরত্বে থাকবো বুঝলেন।
নূরা সাদমানকে থামিয়ে বললো,এসব কথা পরেও বলা যাবে আপনি এখন ঘুমান।আপনার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না আমার।”
সাদমান বিড়বিড় করতে করতে বিছানার উপর ধপ করে পড়লো।

পরদিন সকালে নূরা সাদমানের জন্য কফি বানিয়ে আনলো।সাদমান ঘুম থেকে উঠেছে মাত্র।নূরা কফির ট্রে হাতে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বললো,আসসালামু আলাইকুম।
সাদমান নিশ্চুপ তাকিয়ে রইল।
নূরা আবার বললো,সালামের জবাব দেয়া ওয়াজিব। ওয়ালাইকুম আসসালাম বলুন।
সাদমান আস্তেকরে বললো,”ওয়ালাইকুম আসসালাম।”
নূরার কেন জানি খুব ভালো লাগলো ব্যপারটা।সাদমান তার কথা শুনলো।যেভাবে শিখিয়ে দিলো সেভাবেই সালামের জবাব দিলো।তাহলে তো এই ছেলেটাকে ভালো পথ দেখানো সম্ভব। যদি নূরা একবার চেষ্টা করে তো দেখতে পারে।যত যাই হোক ছেলেটা তার স্বামী।পবিত্র বন্ধনে তারা আবদ্ধ।এত তাড়াতাড়ি হাল ছেড়ে দিলে আল্লাহ তো তাকে ক্ষমা করবেন না।সংসার টিকুক বা না টিকুক মানুষটাকে ভালো পথের নিশানা দেখানো তো তার দায়িত্ব।
নূরা মুচকি হেসে কফিটা সাদমানকে দিলো।
সাদমান কফিতে চুমুক দিয়ে বললো,”নূরা আ’ম রিয়েলি সরি।সাধারণত আমি বাসায় ড্রিক করে আসি না।কালকে একটু বেশি মাথা গরম ছিল তাই..আপনাকে কিছু উল্টাপাল্টা বলে দেইনি তো?”
নূরা ঢোক গিলে বললো,”না।কিন্তু ড্রিংক করা ভালো না।হারাম আপনি জানেন?”
সাদমান শিশুসুলভ প্রশ্ন করলো,”হারাম মানে কি?”
নূরার মনে হলো এটা বাচ্চা একটা শিশু।আসলেই সে ইসলাম সম্পর্কে কিছু জানে না। এই শিশুটাকে নতুন করে সব শিখিয়ে দেয়া যায় তারপর সে নির্ধারণ করবে কোন পথটা নিজে বেছে নিবে।
নূরা গলা পরিষ্কার করে বললো,”হারাম মানে যেটা করতে আল্লাহ নিষেধ করেছেন সেটা।রাসুল ﷺ বলেনঃ প্রত্যেক নেশাদার বস্ত্তই মাদক এবং প্রত্যেক মাদকই হারাম’ (মুসলিম হা/২০০৩; মিশকাত হা/৩৬৩৮)
এগুলো শরিরের যেমন ক্ষতি করে তেমন আল্লাহও নারাজ হন এসব কাজে।”
সাদমান কি বুঝলো কে জানে, বাচ্চাদের মতো মাথা নাড়িয়ে বললো,”বাবা বলেছিল মনে হয় একবার।আপনি আবার বাবাকে এসব বলে দিয়েন না।ড্রিংক না করলে এখন ভালো লাগে না।আপনি এসব বুঝবেন না।তবে আপনি ড্রিংক করতে চাইলে আমি একদিন নিয়ে আসতে পারি আপনার জন্য।খেলেই বুঝতে পারবেন কি জিনিস এটা”
নূরা বিড়বিড় করে বললো,”আস্তাগফিরুল্লাহ।”

হক সাহেব নাস্তার টেবিলে বললেন,”আমি আমার ছেলে বউমার ওয়ালিমা করতে চাই খুব ঘটা করে।কি বলো লিপি?”
মিসেস লিপি সায় দিয়ে বললেন,”অবশ্যই।তা তো করাই লাগবে।”
হক সাহেব নূরাকে এই ব্যপারে জিজ্ঞেস করলে সে বললো,হারাম কোনোকিছু যেন সেখানে না করা হয় বাবা।”
হক সাহেব মাথা নেড়ে বুললেন,”ইনশাআল্লাহ এমন কিছু হবে না”
সাদমান খাবার দলা পাকাচ্ছে হাত দিয়ে।সে চায়না এই ব্যপারে সবাই জেনে যাক।কিন্তু কিছুই করার নাই তার। কালকে মিসেস লিপির শরির খারাপ হয়েছিল।আজকে কিছু বলতে গেলে আবার হক সাহেব কী প্রতিক্রিয়া দেখান কে জানে।তাই চুপ থাকাই শ্রেয়।
লিপি বললেন, “সাদমান আজকে একটু শপিং করে আয় নূরাকে নিয়ে।”
সাদমান বিরক্তি নিয়ে বললো,”আমার কাজ আছে মা।তোমরা আমাকে এত বেকার কেন ভাবছো বুঝি না।”
“এটা তোমার দায়িত্ব, কর্তব্য। কাজের থেকে বড় কাজ এটা।ওয়ালিমার আগ পর্যন্ত সুটিং ফুটিং সব বাদ।এত হিরোগিরি দেখিও না আমাদের।”
সাদমান নূরাকে উদ্দেশ্য করে বললো,রেডি হন গিয়ে।দুপুরের পর থেকে আমার শিডিউল করা।এখনই বেরোতে হবে।”

নূরা বোরকা এবং নেকাব পড়ে বের হলো।সাদমান মাস্ক পরে নিলো।মার্কেটে গেলে লোকজন তাকে ঘিড়ে ধরবে।কেউ জাতে চিনতে না পারে তাই মাস্ক পরে নেয়া।
আজকে সাদমান ড্রাইভ করবে গাড়ি।নূরা গাড়ির কাছে দাঁড়াতেই সাদমান গাড়ির দরজা খুলে দিলো।সাদমান ড্রাইভ করতে করতে খেয়াল করলো নূরা সিট বেল্ট বাধেনি।ইশারা করে বললো,সিট বেল্ট বেধে নিন।”
নূরা আমতা আমতা করে বললো,”আমি তো জানি না কীভাবে বাধতে হয়।”
সাদমান গাড়ি থামিয়ে নূরার সিটবেল্ট বেধে দিলো।

শপিংমলে সাদমান নূরার কোনো পছন্দেই হস্তক্ষেপ করছে না।নূরা একটা বোরকা কিনলো।আর দুইটা ড্রেস।লিপি কড়াভাবে বলে দিয়েছেন যেন কয়েকটা ড্রেস কিনে নেয় সে।শপিং মলের সেলস গার্ল একটা এসে কিছু ওয়েস্টার্ন বের করে দিলো।সাদমানকে উদ্দেশ্য করে বললো,”স্যার ম্যামের জন্য এগুলো নিন।খুব ভালো লাগবে পড়লে।”
নূরা অপেক্ষা করলো সাদমান কি বলে দেখার জন্য।
সাদমান গম্ভীরভাবে বললো,”না ম্যাম এসব পরেন না।”
সেলস গার্ল আবার বললো,”বাসায় পড়তে পারেন উনি এসব।খুবই আরামদায়ক এগুলো। গরমে খুব ভালো লাগে।ফ্যাশনেবলও।”
সাদমান বিরক্ত হয়ে বললো,”বললাম তো এসব উনি পরেন না।যে যেটায় কম্ফোর্ট ফিল করে সে সেটাই পড়ুক।ফ্যাশন হচ্ছে সেটা যেটায় মানুষ কম্ফোর্টেবল ফিল করে।আপনি এগুলো রাখুন।কিছু বোরকা এনে দেখান ওনাকে।”
সাদমানের আচরণে নূরা পুরোপুরি স্তব্ধ হয়ে গেল।মুগ্ধও।জাহিদ ওয়েস্টার্ন পরার জন্য বলছিল নূরাকে এদিকে সাদমান নূরার জন্য বোরকা পছন্দ করছে।”
নূরা মনে মনে বললো,”আপনি ততটাও খারাপ না।”

নূরাকে নিয়ে মার্কেট থেকে বের হতেই ঘটলো বিপত্তি…
চলবে..

#এক_টুকরো_নূর
——————-(৯ম পর্ব)
লেখা: উম্মে হানি মিম

সাদমান নূরাকে নিয়ে মার্কেট থেকে বের হতেই রাস্তায় তাওসিফের সাথে দেখা হয়ে গেল।তাওসিফ সাদমানের ছোটবেলার বন্ধু।তাওসিফ তো পারলে একশোটা প্রশ্ন করে।সাথে কে? যা সব শুনেছে তা সত্যি কি না। ফোন ধরছিল না কেন।একনাগাড়ে কতগুলো প্রশ্ন করে থামলো সে।
সাদমান তাওসিফকে ইশারা করে বললো,” বাসায় আসিস সবটা বলছি।এখানে না”
তাওসিফ বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন করলো,”কিন্তু তোর সাথে কে?”
সাদমান আমতা আমতা করে বললো,”ওনার নাম নূরা।”
“নূরা তো বুঝলাম,কিন্তু পরিচয় তো দিবি।”
“বললাম তো পরে বলবো,এখন যেতে দে আমাকে”
সাদমান দ্রুত গাড়িতে উঠে বসলো।নূরাকে উদ্দেশ্য করে বললো,তাওসিফ আমার বন্ধু।একবার কথা বলতে শুরু করলে আর থামবে না তাই চলে এলাম।”

সাদমান আর নূরার ওয়ালিমার সব আয়োজন সম্পন্ন হয়ে গেল।এদিকে সাদমানের ভয় তত বাড়ছে।সবাই যখন জেনে যাবে এসব কে কি প্রতিক্রিয়া দেখাবে কিছুই সে জানে না।আর মিহিকে কীভাবে সামলাবে সে।
ওয়ালিমার আয়োজনে নূরা বলে দিলো সে যেখানে থাকবে যেন কোনো পুরুষ মানুষ প্রবেশ করতে না পারে।হক সাহেব সেভাবেই পুরুষ মহিলাদের বসার জায়গা আলাদা করে দিলেন।নূরা লাল রঙের সুন্দর একটা আবায়া পরলো।লিপি পার্লারে যাওয়ার জন্য জোর করছিলেন নূরা রাজি হয়নি।সুহাই অল্প একটু সাজিয়ে দিলো তাকে।তবুও নূরাকে দেখতে নিষ্পাপ প্রজাপতির মতোই সুন্দর লাগছিল।সুহা নূরাকে সাজিয়ে বেরিয়ে যেতেই সাদমান ঘরে ঢুকলো।সে সাদা রঙের ব্লেজার পরেছে।নূরাকে দেখে এই প্রথমবার সাদমানের মনে হলো সে অনেক সুন্দরী।যতটা সুন্দরী হলে একবার তাকিয়ে চোখ ফেরানো যায় না,ততটা সুন্দরী।
নূরা সাদমানকে সালাম দিলো,”আসসালামু আলাইকুম।”
সাদমান অন্যমনস্কভাবে বললো,”ওয়ালাইকুম আসসালাম”
নূরা উঠে এসে বললো,”আমি আবায়া পরে সবার সামনে যাব আপনার আপত্তি নেই তো?”
“আপনার যেটা ভালো লাগে সেটাই পরবেন আমার এখানে কীসের আপত্তি। তাছাড়া আপনাকে ভিষণ সুন্দর দেখাচ্ছে এই পোষাকে।”
নূরা লজ্জামাখা চেহারায় মুচকি হাসলো।
সাদমান নিজেই অবাক হয়ে গেল কথাটা বলে।অন্যমনস্কভাবেই সে নূরার প্রশংসা করে ফেলেছে।যেটা হয়তো উচিৎ হয়নি তার।
সাদমান চলে যেতে গিয়েও ফিরে তাকালো তারপর বললো,আপনি আমার কেউ না তাই আপনি কি পরছেন,কি করছেন সেগুলো নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যথা নেই।আপনার পছন্দ অনুযায়ীই আপনি চলুন।”
নূরার মনটাতে এবার বিষাদের মেঘ দেখা দিলো।

ওয়ালিমার আয়োজন সুন্দর ভাবেই সম্পন্ন হচ্ছিল।
হঠাৎ লিপি এসে বললেল।বাইরে মিহি মিডিয়ার লোক নিয়ে এসেছে।সে নাকি বলছে তার সাথে প্রতারণা করে সাদমান নূরাকে বিয়ে করেছে।
সাদমান তৎক্ষণাৎ উঠে চলে গেল মিহির কাছে।মিহিকে কোনো রকমে মিডিয়ার সামনে থেকে সরিয়ে আনলো।মিহি পাগলামী করেই যাচ্ছে।
সাদমান মিহিকে শান্ত করার চেষ্টা করে বললো,”মিহি প্লিজ আমার কথা শুনো।আমাকে বুঝার চেষ্টা করো।
মিহি কাঁদতে কাঁদতেই বলল,”কী বুঝবো তোমাকে?
তুমি কীভাবে এই গেঁও ভূত মেয়েটাকে মেনে নিয়ে তার সাথে রিসেপশনপার্টি করছো?
“কে বললো আমি মেনে নিয়েছি ওকে?”
“দুনিয়াকে জানাচ্ছো এটা তোমার স্ত্রী আবার মেনে নিচ্ছো না? এত বড় ধো’কাবাজ তুমি।”
সাদমান মিহিকে জড়িয়ে ধরে বললো,”বিশ্বাস করো মিহি আমি পরিস্থিতির স্বীকার। নূরাকে আমি মোটেও পছন্দ করি না।সে আমার মতো না একদম।তাছাড়া আমি তো তোমাকে ভালোবাসি। কী করে অন্য কাউকে তোমার জায়গা দিবো বলো তো।”
মিহি কিছুটা শান্ত হয়ে বললো,”তুমি তাহলে মেয়েটাকে ডিভোর্স দিচ্ছো না কেন?”
“সেটার জন্য আমার তো পরিস্থিতিকে নিজের আয়ত্তে আনতে হবে তাই না? আমার বাবা-মা দুজনেই আমার বিপক্ষে কথা বলছে।মিডিয়ায় যা কিছু হয়েছে এরপরে যদি আমি দ্রুত কিছু করতে চাই হিতে বিপরীত হয়ে আমার ক্যারিয়ারটা যাবে।তুমি কি তাই চাও?”
মিহি মাথা নাড়ালো।
“তাহলে এবার মিডিয়ার লোকজন নিয়ে এখান থেকে যাও।আমি আজকেই নূরাকে সব বলবো।দেখো মেয়েটারও তো কোনো দোষ নেই।সেও পরিস্থিতির স্বীকার। ”
মিহি চোখ মুছে বললো,”ঠিক আছে, কিন্তু আমি তোমাকে বেশিদিন সময় দিতে পারবো না। যা করবে তাড়াতাড়ি করো।”
কথাটা বলে মিহি হনহন করে চলে গেল।সাদমান যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো।সবকিছুর আগে তার ক্যারিয়ার সেটাকে কিছুতেই খারাপ হতে দিবে না সে।

ওয়ালিমার আয়োজনে নূরার চাচা আশরাফ, চাচি পলি আর পরশিও এসেছে।পরশি নূরার সামনে এসে মুখ বাকিয়ে বললো,”সেই তো সাদমান ভাইয়াকেই বিয়ে করলে তাহলে এত নাটক কেন করলে বলো তো।আগেই স্বীকার কর‍তে সাদমান ভাইয়ার সাথে তোমার সম্পর্ক আছে।মাঝখান থেকে আমার বান্ধবী মিহিটারই স’র্বনাশ হলো।”

নূরা মাথা নিচু করে বললো,”বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক হারাম।এমন কিছু কখনই আমি করিনি।তোমরা আমাকে ভুল বুঝেছো পরশি।”

পরশি বিদ্রুপ করে বললো, হয়েছে আর মিথ্যে বলতে হবে না।যতসব ভান তোমার।”
কথাটা বলে পরশি চলে গেল।

আলেয়া আর নোহা এসেছেন।নূরা আলেয়াকে দেখতে পেয়ে জড়িয়ে ধরলো ওনাকে।
আলেয়া নূরার কপালে চুমু এঁকে দিয়ে বললেন,”মাশা আল্লাহ অনেক সুন্দর লাগছে আমার মেয়েটাকে।তুই ভালো আছিস তো মা?”

নূরা মুচকি হেসে মাথা নাড়লো।

নোহা উৎফুল্ল হয়ে বললো,আপা তোমাকে পুরো ইরানি বউদের মতো লাগছে।এত মিষ্টি লাগছে বলে বুঝাতে পারবো না।”

নূরা লজ্জা মিশ্রিতভাবে হেসে বললো,”তোরা ভালো আছিস নোহা?”
নোহা মাথা নাড়ালো।

লিপি আপ্যায়ন করে আলেয়া আর নোহাকে খাবারের জায়গায় নিয়ে গেলেন।
সবকিছু ভালোভাবেই সম্পন্ন হলো।আলেয়া আর নোহা চলে যাওয়ার সময় নূরা খুব কাঁদলো। নিয়তির কাছে সব মেয়েরাই অসহায়।

লিপি ডেকোরেশনের লোক দিয়ে সাদমানের পুরো ঘরটা ফুল দিয়ে সাজিয়েছেন।নূরাকেও শাড়ি পরিয়ে নববধুর সাজে সাজিয়েছেন তিনি।
একটা ভারি স্বর্নের হার পরাতে পরাতে বললেন,”এটা আমার শ্বাশুড়ির থেকে পেয়েছি।আজ তোমাকে দিলাম তুমি এটা তোমার বউমাকে দিবে।”কথাটা বলে লিপি হাসলেন।
নূরা লজ্জামাখা চেহারায় মাথা নাড়ালো।
লিপি চারিদিকে তাকিয়ে একটু ফিসফিস করে বললেন,”শুনো নূরা।আজকে সাদমান তোমাকে মিহি নামের মেয়েটার কথা বলবে হয়তো।অন্যকিছুও বলতে পারে।তুমি শুধু মাথায় রাখবে মেয়েদের বিয়ে একবারই হয়।যেভাবে পারো আমার ছেলেটার মন ফিরিয়ে নিও তুমি ঐ মেয়েটার থেকে।ভাবতে পারো শাশুড়ী হয়ে এসব কি বলছি! কিন্তু পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে আমাকে এসব কথা বলতেই হলো মা।”
নূরা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।লিপি নূরাকে সাজানো বিছানায় বসিয়ে রেখে চলে গেলেন।

সাদমান ঘরে ঢুকে আগে ফ্রেশ হলো।ব্লেজারটা ছেড়ে একটা টিশার্ট পরলো।নূরাকে এই প্রথমবার শাড়ি পরা অবস্থায় দেখছে সে।বেশ ভালো দেখাচ্ছে তাকে।
সাদমান বিছানার পাশের সোফায় বসতে বসতে বললো,”আপনি ফ্রেশ হবেন না?এগুলো পরে ঘুমাবেন নাকি?”
নূরা উঠে ফ্রেশ হলো।একটা সুতির সেলোয়ার-কামিজ পরে এসে বসলো বিছানায়।সাদমান নূরার জন্যই অপেক্ষা করছিল।নূরা আসতেই গলা পরিষ্কার করে বললো,”দেখুন নূরা আপনার সাথে আমার ভালো-খারাপ কোনো প্রকারই সম্পর্ক নেই।সম্পর্ক কী আপনাকে আমি পুরোপুরি চিনিও না পর্যন্ত। একটা মানুষের সাথে সারাজীবন কাটাতে হলে তাকে জানতে হয়,চিনতে হয়,বুঝতে হয়।জানেন তো এসব?আসলে আপনি এসব বুঝবেন না। আপনি তো আদী কালের মানুষের মতো হুট করে বিয়ে-শাদিতে অভ্যস্ত। গ্রামে এভাবেই যার তার সাথে যখন তখন বিয়ে হয়ে যায় তাই না?”
নূরা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,”মিহিকে আপনি পুরোপুরি চিনেন?বুঝেন?”
সাদমান কিছুটা ঘাবড়ে গেল।কারণ সে মিহিকেও বুঝে না।কখন কি করে বসে মেয়েটা এতদিনের সম্পর্কেও বুঝে উঠতে পারেনি সে।আমতা আমতা করে বললো,”হুম,মিহিকে আমি ভালোবাসি।একসাথে থাকার জন্য ভালোবাসার দরকার আছে এতটুকু তো বুঝেন আপনি? নাকি এটাও বুঝেন না।”
নূরা কয়েক মুহুর্তে নিঃশব্দে সাদমানের দিকে তাকিয়ে থাকলো।তারপর মিহিকন্ঠে বললো,”ভালোবাসা আল্লাহতায়ালার একটা অনেক বড় রহমত।তবে অবশ্যই সেটা হালাল ভালোবাসা।আমরা যাদের ভালোবাসি বলে মনে করি হয়তো প্রকৃত ভালোবাসা তৈরিই হয়নি তার জন্য।আমরা সেটা বুঝতে পারি না।আল্লাহতায়ালাই আমাদের বুঝিয়ে দেন একটা সময়।হালাল ভালোবাসা কত সুন্দর জানেন আপনি? জানলে হারামে ডুবে থাকতেন না।”
সাদমান বিরক্তি প্রকাশ করে বললো,”প্লিজ হারাম হালালের বক্তৃতা রাখেন।আমার মাথায় এসব ঢুকে না।আমার মেজাজ খুব খারাপ হয়ে আছে বুঝতে পারছেন?”
“মাথা ঠান্ডা করুন রাগ শয়তান প্রদত্ত আসে।রাসুল (সা.) বলেন, ‘সে ব্যক্তি শক্তিশালী নয়, যে ব্যক্তি কুস্তি লড়ে অন্যকে ধরাশায়ী করে, বরং প্রকৃতপক্ষে সে ব্যক্তিই শক্তিশালী, যে রাগের সময় নিজেকে সংবরণ করতে পারে।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৮০৯)”

সাদমান মাথা চাপড়ে বললো,” কি জিনিস নিয়ে এলাম ঘাড়ে করে আমি।আপনি যে আস্ত বিরক্তিকর একটা চরিত্র বুঝতে পারেন?”
নূরা মুচকি হেসে বললো,”হতে পারে।”
“শুধু বিরক্তিকর না অসহ্যকর। আপনার সাথে একঘরে থাকা কতটা অসহ্যকর আমিই বুঝতে পারছি।কেন যে এতবড় বিপদে পড়লাম আমি কে জানে”
“আল্লাহ ভালো জানেন”
সাদমান এবার বিস্মিত হয়ে বললো,”এই যে এতগুলো কথা বললাম আপনার রাগ হচ্ছে না?”
নূরা স্মিত হেসে বললো,”হচ্ছে”
“তাহলে বেরিয়ে যাচ্ছেন না কেন ঘর থেকে?বাইরে গিয়ে বলুন সবাইকে আমার সাথে থাকা সম্ভব না”
“ঐ যে বললাম আমাদের রাসুল (সাঃ) রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে আদেশ দিয়েছেন।আমিও সেটাই করছি।আপনি সারাদিন চেষ্টা করলেও আমাকে রাগাতে পারবেন না।”
সাদমান বিরক্তির চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।এই মেয়েটা আস্ত পাথর।কোনো অনুভূতিই নেই মেয়েটার।ওকে রাগিয়ে স্বার্থ হাসিল করার প্ল্যান এখানেই শেষ হয়ে গেল।
সাদমান রেগেমেগে বললো এবার,”ঠিক আছে সময়মতো আমিই বলে দিবো সবাইকে।এর আগ পর্যন্ত আপনাকে সহ্য তো করতেই হবে।শুনে রাখুন আমি কিন্তু মিহিকে ভালোবাসি।”
নূরা নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বললো,ভালোবাসা প্রমাণ করার জন্য এতবার বলতে হয় না।ভালোবাসা থাকলে সেটা এমনিই প্রকাশ হয়ে যায়।”
“কি বলতে চান আপনি আমি মিহিকে আসলে ভালোই বাসি না?”
“তা কখন বললাম? তবে যে ভালোবাসায় আল্লাহর ভালোবাসাই উপস্থিত নেই সেই ভালোবাসা আমার কাছে কোনো মূল্য রাখে না।”
“আপনার কাছে মূল্য থাকুক বা না থাকুক আমাদের ভালোবাসা বদলাবে না”
নূরা মাথা নাড়ালো।সাদমান এবার দম নিয়ে বললো,”মা বলেছে আজকে আপনাকে কিছু উপহার দিতে।সেটা যদি না দেই আমার উপর তো সাইক্লোন নেমে আসবে।কী চান বলুন?”
“সত্যিই দিবেন?”
সাদমানের মনে হলো এবার কাজ হয়েছে।উপহারের লোভ দেখিয়ে এই মেয়েকে কবজা করা যায়।
নড়েচড়ে বসে বললো,”হ্যাঁ বলুন কী চাই”
নূরা চারিদিকে চোখ বুলিয়ে নিয়ে বললো,দেয়ালে টানানো প্রাণীর ছবিগুলো নামিয়ে রাখুন।ঢেকে রাখুন কোথাও।”
সাদমান অবাক হয়ে বললো,”মানে ছবিতে কী সমস্যা?”
“যে ঘরে প্রাণীর ছবি টানানো থাকে সে ঘরে রহমতের ফেরেস্তা প্রবেশ করেন না।আমি একটু পরে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়বো।ছবিগুলো থাকলে আমার নামাজ হবে না।”
“কোন হুজুরের পাল্লায় পরলাম রে আমি।”সাদমান বিড়বিড় করতে করতেই ছবিগুলো সব নামিয়ে ড্রয়ারে রাখলো।”
নূরা মুচকি হেসে বললো,”ধন্যবাদ।”

নূরার কান্নার শব্দে সাদমানের ঘুম ভাঙ্গলো।সোফায় এমনিতেও ভালো ঘুম হচ্ছিল না তার।নূরা মোনাজাতে বসে ফুপিয়ে কাঁদছে।মনে হয় ফজরের সময় এখন।সাদমান চোখ কচলে গভীরভাবে চিন্তা করলো।কী এমন স্বাদ আছে এই নামাজে যে মেয়েটা ঠিক করে ঘুমায়ও না।ঘুম বিসর্জন দিয়ে উঠে নামাজে দাঁড়িয়ে যায়।সাদমানকে তো কোটি টাকা দিলেও কেউ এই সময়েরর ঘুম বিসর্জন দিবে না।মেয়েটা তাহলে কোন লাভের আসায় ঘুম ছেড়ে উঠে নামাজে দাঁড়ায়! ভাবতে ভাবতেই সাদমান আবার গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল।

সকালে নাস্তার টেবিলে হক সাহেব সাদমানকে দুইটা প্ল্যানের টিকেট দিয়ে বললেন।আগামীকালকের টিকেট এটা।নূরাকে নিয়ে কক্সবাজারে ঘুরে আসতে।সাদমান ভ্রুক্ষেপহীন বললো,”না বাবা আমার যাওয়া হচ্ছে না কোথাও।আমি অনেক কাজের ক্ষতি হয়েছে এই কয়দিন।”
হক সাহেব গম্ভীর কন্ঠে বললেন,”তৈরি হয়ে নাও যাওয়ার জন্য।”
কথাটা বলে উঠে চলে গেলেন তিনি।সাদমান রাগ করতে যাচ্ছিল, তখনই তার মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেল।এখানে থেকে আর যাই হোক নূরার থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব না।বাবা-মায়ের থেকে দূরে নিয়ে গিয়েই নূরাকে সব বুঝাতে হবে।তার সাথে যে সাদমানের কোনোভাবেই যায় না সব প্রমাণ বাইরে নিয়ে গিয়েই দিতে হবে।
মুহুর্তে তার চেহারার রঙ পালটে গেল।মিসেস লিপির দিকে তাকিয়ে বললো, ঠিক আছে যাব।তোমাদের বউমাকে তৈরি হয়ে নিতে বলো…
চলবে..