কারণে অকারণে ভালোবাসি০২ পর্ব-১২+১৩

0
607

#কারণে_অকারণে_ভালোবাসি০২
#সুরাইয়া আয়াত

১২.

মধ্য রাতের গাঢ় আভা সমস্ত নিস্তব্ধতাকে গ্ৰাস করছে ক্রমে ক্রমে, এই শহরের হয়তো অর্ধেক মানুষই এখন তন্দ্রাচ্ছন্ন আবার কেও বা এক সমুদ্র কষ্টের বোঝা বয়ে চেতন।
পায়ের ব্যাথাটা টনটনিয়ে উঠতেই ঘুম ভাঙলো সানার, পাশে অনিকা খান শুয়ে আছেন, সানা পায়ে ব্যাথা পাওয়ার দরুন তিনি মেয়ের সঙ্গে ঘুমিয়েছেন যদি তার কোন প্রয়োজন পড়ে। মাঝে রাতে ধড়ফড়িয়ে ঘুম থেকে উঠলে যদি অনিকা খানের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে তাই ঠোঁট চেপে উঠে বসলো সানা, পা থেকে ব্ল্যাঙ্কেটটা সরিয়ে রেখে পা মেলিয়ে বসলো, ঠান্ডায় ক্রমে ক্রমে পা অবশ হয়ে যাচ্ছে। চোখটা বন্ধ করে লম্বা শ্বাস ফেলতে লাগলো ক্রমাগত, আরাভের ওপর রাগটা যেন ওর রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়ছে। চোখ বন্ধ করে বিছানায় হেলান দিয়ে বসে রইলো বেশ অনেকখন হঠাৎ খানিকটা একঘেয়েমি কাটাতে ফোনটা হাতে নিতেই স্ক্রিনের ওপর নোটিফিকেশন ভাসছে দেখে সানার ভ্রু জোড়া কুঞ্চিত হলো, ম্যাসেজের নোটিফিকেশন আর কার থেকে তাও আবার আরাভের থেকে, পড়ার ইচ্ছা না থাকলেও প্রথম লাইনটা যেন ওর মস্তিষ্ক দ্রুত স্বরন করে নিলো
— সরি তখন তুমি হয়তো পড়ে গিয়ে ব্যাথা পেয়েছো আর আমি তো সুযোগই পেলাম না তোমার পা টা চেক করার, আসলে আমার মা হ,,

এই টুকু এসএমএস পড়ার সুযোগ হলো তবে মা কথাটার পর যে আরাভ আরও কিছু লিখেছে বা লিখতে চেয়েছে তা সানার কাছে স্পষ্ট তাই ম্যাসেজটা সিন করা ব্যাতিত কোন উপায় সানা না দেখে পড়তে শুরু করলো

— আসলে আমার মা হসপিটালে ভর্তি, আমার বোন রুপ, তুমি হয়তো ওকে চেনো না আর না চেনারই কথা, তখন হঠাৎ ও ফোন করে জানালো যে আম্মুর খুব কষ্ট হচ্ছে আর হাত পা অবশ হয়ে আসছে, আমি কথাটা শুনে আর এক মুহূর্তও দেরি করতে পারলাম না তাড়াতাড়ি ওখান থেকে বেরিয়ে এলাম আর তোমার সাথে ধাক্কাও লাগে, তার জন্য আমি সরি। পায়ে ব্যাথা পেয়েছো খুব?

আরাভের সব কথা শুনে সানার মনে আরাভের জন্য এতখন ধরে পুষে রাখা রাগ যেন পুরোটা মেঘের মতো উড়ে গেল, আর আরাভের করা শেষের প্রশ্নটা দেখে সানা ঈষৎ কেঁপে উঠলো তবে তা উপেক্ষা করার চেষ্টা করে প্রতিউত্তরে কেবল জিঞ্জাসা করলো

— কোন হসপিটালে আছে আপনার মা?

মনের সাথে অনেক যুদ্ধ বিগ্ৰহ করে অবশেষে এস এম এস টা পাঠিয়ে দিলো সানা, বেশ অনেকখন ফোনটার দিকে চেয়ে রইলো ভাবলো হয়তো দ্রুত আর তৎক্ষণাৎ উত্তর আসবে কিন্তু এলো না।

নার্সের সাথে কথা বলে নিজের মায়ের কেবিনে ঢুকলো আরাভ, ফোনটা ওর মায়ের পাশেই ছিলো, রুপ ও এতখন ধরে জেগে ছিলো তবে আরাভের জোরাজুরি তে একটা বার্গার খাওয়ার পর ঝিমাতে ঝিমাতে ঘুমিয়ে পড়েছে রুপ, ক্লাস নাইনে পড়ে মেয়েটা তবে এই টুকু বয়সে ওর মায়ের কষ্টটা বোঝে। আরাভ যখন দশ বছর, রুপের তখন হবে তিন বছর বয়স। পরকীয়া করে আর একটা বিয়ে করেন আরাভের বাবা, বিধায় আত্মসম্মানের খাতিরে একরত্তির সেই ছোট্ট মেয়ে আর ছেলেকে নিয়ে নিজের বাপের বাড়ি রাজশাহীতে চলে গিয়েছিলেন আরাভের মা, তার ভাই নেহাতই ভালো মানুষ তাই সেখানে তাদেরকে সবাই অনেক ভালোবাসতো। তবে আরাভ যখন ক্লাস এইটের এক্সাম দিলো তখন উনি একটা সেলাইয়ের ফ্যাক্টরিতে কাজ পান তারপর ঢাকা এলেন, তারপর নট্রিডেম কলেজে ভর্তি করলেন আর সেখান থেকেই আরিশের সাথে আরাভের পরিচয় হয়, দুজনেই নট্রিডেম এ পড়তো, তবে আরু পড়েছে হলি ক্রসে। আরাভ আর আরিশের বন্ধুত্বটা ছিলো একদম আঠার মতো,তারপর আরিশ ঢাকা মেডিকেল এ চান্স পায় আর আরাভ সেহরাওয়ার্দীতে তবে সানা কখনও আরাভকে দেখেনি।

রুপের গায়ে একটা চাদর দিয়ে চেয়ারে বসলো আরাভ, সে এই হসপিটালেই ডিউটিতে আছে তাই রুপের হসপিটালে এডমিট করা অবধি কোন অসুবিধা হয়নি।
চোখটা ডলতে ডলতে সময় দেখার জন্য ফোনটা হাতে নিতেই দেখলো সানা তার জবাব পাঠিয়েছে, সত্যি বলতে সে এতো রাতে সানার থেকে উত্তর এর আশা করেনি। তবে এসএমএস দেখে বিষন্নতার মাঝেও বেশ উৎফুল্ল হয়ে উঠলো আর চটজলদি উত্তর দিলো

— স্যার সলিমুল্লাহ তে। কিন্তু তুমি এখনো জেগে আছো যে?

সানা ফোনটা আবার চেক করতে গেলেই দেখলো আরাভ উত্তর পাঠিয়েছে, তবে আরাভের করা প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মতো সম্পর্ক তাদের না তাই অযথা সময় নষ্ট না করে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো। অনিকা খান চোখ পিটপিট করে দেখছিলেন এতখন, ওনার ঘুম অনেক পাতলা তাই সানা একটু নড়াচড়া করতেই ওনার ঘুম ভেঙে যায় আর সানার মাঝে এমন তৎপরতা দেখে উনি বিষয়টাকে ভাবনার খাতায় জমিয়ে রাখলেন।
সানার তরফ থেকে উত্তর পাওয়ার আশায় অনেকখন ফোনের দিকে চেয়ে রইলো আরাভ কিন্তু মান অভিমানের সুতোটা এখনো বেশ পাকাপোক্ত আছে তা বোধহয় ক্ষনিকের জন্য ভুলে গিয়েছিলো সে।

,,,,

ভোরবেলা ফোনের এলার্ম বাজতেই আরুর ঘুমটা ভেঙে গেল, ব্ল্যাঙ্কেটের ভিতর থেকে আলতো করে মুখ বার করে বাইরের দিকে তাকিয়ে দেখলো, বাইরেটা দেখে মনে হচ্ছে কেও যে এক আকাশ সমান কুয়াশা তার ঘরের সামনে রেখে চলে গেল, মেঘের মতো সাদা চারিদিকে। এলার্ম এর বিকট আওয়াজটা যাতে আর ঘুমের অশান্তি না ঘটায় তার জন্য আরু হাত বাড়িয়ে হাতড়ে হাতড়ে ফোনটা খুঁজতে লাগলো,আরিশের শরীরের ওপর দিকে হাত বাড়িয়ে অপরদিকে ফোনটা হাতড়ে খোঁজার চেষ্টা করছে আরু, নি সন্দেহে এটা আরিশের ফোন থেকে বাজছে তা বুঝতে দুটো মিনিট ও সময় লাগলো না আরুর, ফোনটা হাতড়ে হাতড়াতে একপ্রকার আরিশের গায়ের ওপর উঠে গেল আরু। হঠাৎ করে আরিশের আরুর হাতটা ধরে আরু কে ব্ল্যাঙ্কেটের মধ্যে নিয়ে নিলো আর আড়ষ্ট ভঙ্গিমায় বললো

— এলার্ম আমি বন্ধ করছি, নো ছটফটানি এখন আমি যা বলবো তাই শুনবে।

কথাটা বলে আরিশের ওর বালিশের নীচ থেকে ফোনটা বার করে এলার্মটা বন্ধ করে দিলো। আরু বুঝতে পারছে না যে আরিশ ঠিক কি বোঝাতে চাইছে, ঘুম ঘুম কন্ঠে বেশ রেগেই বলল

— কি হচ্ছে এসব? এলার্ম বাজিয়েছেন কেন? আমার কিউট ঘুমটা নষ্ট করেছেন আপনি।

আরিশ ধমকের সুরে বলল

— স্টপ, নো মোর ওয়ার্ডস! এতো কথা একসাথে কিভাবে বল? হোয়াটএভার! আমি এখন যা বলছি সেটা মন দিয়ে শোনো।

আরু চোখ মুখ ছোট করে কাচুমাচু সুরে বলল

— কি?

আরিশ ও কৌতুহলী ভাব নিয়ে আরুর দিকে খানিকটা সরে গিয়ে বলল

— আরাভকে চেনো?

হঠাৎ এই সময়ে আরাভের কথা শুনে আরু চমকে গিয়ে বলল্

— হমম চিনি তো, সানার সিনিয়র হয় জানতাম কিন্তু আপনি এই প্রশ্ন করছেন যে?

আরিশ একটা লম্বা নিশ্বাস নিয়ে বলল

— ও আমার বন্ধু!

কথাটা শুনে আরু চমকে উঠলো, ভাবলো যে আরিশ এবার ওকে অনেক বকাঝকা করবে তাই হুঠ করে চোখ বন্ধ করে বলল
— গুড মর্নিং মি অভদ্র, আমার ঘুম পাচ্ছে ঘুমাতে দিন।

আরিশ নরম সুরেই বলল

— সানা আর আরাভের কথা আমি জানি। তুমি তো জানো আরু পাখি যে দুইদিন হলো আমি ট্রান্সফার নিয়েছি। কালকে আমি তাড়াতাড়ি ফিরছিলাম হঠাৎ একটা এমারজেন্সি পেশেন্ট চলে আসে, আর ওটা আরাভের মা ছিলো, আমি আন্টির সাথে সাথেই ছিলাম, আরাভ যে ওই হসপিটালে ডিউটিতে আছে তা আমি জানতাম, ওর সাথেই ছিলাম অতখন, আন্টির কন্ডিশন যতখন না স্বাভাবিক হয় ততখন আমি ওখানেই ছিলাম আর তাই ফিরতে দেরি হয়েছিল কাল।

আরু যেন ঝটকা আছে সব শুনে তাড়াতাড়ি চোখ খুলে বিস্ময় নিয়ে বলল

— আপনি এটা আগে বলেননি কেন আমাকে?

আরিশ আরুর গালে হাত রেখে বলল

— আসলে তুমি শুরু থেকে কিছু জানতে না তাই কিছু বলিনি তোমাকে।

আরু আরিশের চোখে চোখ রেখে বলল
— আমাকে কালকে একটু নিয়ে যাবেন হসপিটালে? আমি ওনার সাথে দেখা করতে চায়!

আরিশ আরুর কপালে ভালোবাসার পরশ একে বলল

— আচ্ছা। কিন্তু আমি ভাবছি অন্য কিছু!

আরু জিজ্ঞাসু সুরে বলল

— কি?

— আরাভ সানা কে পছন্দ করে আর খুব শীঘ্রই হয়ত বলবে তা, আর আই থিংক সানাও আরাভকে পছন্দ করে নাহলে আরাভকে সেদিন রেস্টুরেন্ট এ কফি খাওয়ার বাহানায় নিয়ে যেত না। তবে আরাভ হয়তো সানা রাজী থাকলে খুব দ্রুত সানা কে বিয়ে করবে।

আরু আরও বেশি অবাক হয়ে বলল
— সত্যি?

আরিশ মাথা নাড়ালো আর বলল
— হমম! বাট জানি না কতোটা কিভাবে এগোবে।

আরু আরিশের বুকে মাথা রেখে বলল

— এতো বিয়ে, সবার খালি বিয়ে হয়ে যাচ্ছে শুধু আমি বাদে😞

আরিশ ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলে
— হোয়াট! আর ইউ সিরিয়াস আরু পাখি? তিনি জানো আদেও যে তুমি কি বলছো!

আরু মুচকি হেসে বলল
— জি আরিশ ভাইয়া, সবাই তো আমাকে দেখে বলে আমি নাকি অবিবাহিত! আমার তখন আপনার কাচুমাচু মুখটার কথা মনে পড়ে খালি🤭

আরিশ রাগী কন্ঠে বলল

— স্টুপিড, তাদেরকে বলতে পারো না যে তুমি বিবাহিত!

আরু আরিশকে রাগাতে বলল

— ওহ আমি তো আবার হাউজওয়াইফ!

আরিশ বাকা চোখে তাকিয়ে বলল

— দেখো এবার ধুমধাম করে আবার বিয়ে করবো, পুরো ঢাকার মানুষজন জানবে যে তুমি বিবাহিত বুঝলে!

— তাড়াতাড়ি একটা বিয়ে করেন ভাইয়া, বরযাত্রী যাবো কান্ট ওয়েট🤭

আরিশ বাকা চোখে তাকিয়ে রিয়েকশান দিলো কিছু বলল না

— আর একটাও আজাইরা কথা বললে জানালা দিয়ে ফেলে দেবো😒

আরু হেসে কুটিকুটি খাচ্ছে। আরিশকে জালানোর কোন সুযোগ হয়তো ও মিস করবে না কখনো।

#চলবে,,

কারনে_অকারনে_ভালোবাসি02
#সুরাইয়া_আয়াত

১৩.

–মধুর বিয়ের শপিং করবে না তুমি?

ড্রাইভ করতে করতে আরুর উদ্দেশ্যে বলে উঠলো আরিশ। আরিশের কথা শুনে আরু বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে বলল

— সেটা আবার বলতে? কেন আপনি কি ভেবেছিলেন?

আরিশ সোজা সাপ্টা উত্তর দিলো

— আমি ভেবেই দেখেনি কিছু?

আরু এবার আরিশের দিকে ঘুরে ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলো

— কেন কেন?

— ভাবার প্রয়জন ই পড়েনি কারন আমি তখন আগে থেকে জানি যে তোমার হাজরটা ড্রেস থাকলেও তুমি কিনবে আর কিছু না থাকলেও কিনবে তাই আমার অতো ভেবে লাভ কি! টাকা তো আমারই যায় তাই না!

আরু আরিশের দিক ঝুকে গিয়ে একটা গম্ভীর ভাব নিয়ে বলল

— এখন ধার নিচ্ছি ঠিকই কিন্তু যখন আমি ডক্টর হবো তখন আপনাকে সব টাকা ফিরিয়ে দেবো।

আরিশ অবাক হওয়ার ভান করে বলল

— তাই নাকি? তা কতো টাকা ফেরত দেবে শুনি!

আরু খুবই রিল্যাক্স একটা মুড নিয়ে বলল

— যত লাখ অথবা যত কোটি আপনার খরচ হয়েছে।

আরিশ আর কিছু না বলে বলল

— বুঝলাম!

— কি বুঝলেন আপনি?

আরিশ এবার একটা ধমক দিয়ে বলল

— স্টপ ননসেন্স, স্টুপিড একটা। কথা বলার উপায় নেই, আমি কি বলেছি আমার টাকা লাগবে!

আরু মুচকি মুচকি হেসে বলল

— তাহলে আরিশ ভাইয়া আমরা কি আজ শপিং এ যাচ্ছি?

হুঠ করে আরিশ গাড়ি থামিয়ে দিলো, আর আরু সামনের দিকে ঝুকে গেল, সামনে কপালে ধাক্কা লাগতে গেলেই আরিশ আরুকে টেনে নিলো। আরিশ দাঁতে দাঁত চেপে বলল

— বলেছি না ভাইয়া বলবে না? আর একবার ও ভাইয়া বললে শপিং তো দূর থাক, ভাইয়া বললে মধুর বিয়েতেও যেতে দেবো না, ঘরের মধ্যে বসে কার্টুন দেখবে বুঝেছো!

আরু মুখ গোমরা করে বলল

— আচ্ছা আর বলব না। বাট আমি মধুর বিয়েতে যাবো।

কথাটা বলে পিটপিট করে মুখ তুলে আরিশ এর দিকে তাকালো অবস্থা বোঝার জন্য, আরিশ স্বাভাবিক ই আছে তবে একটু রাগী ভাব নিয়ে ওর দিকে চেয়ে আছে তবে নিস্তব্ধতা বজায় রেখে। আরু এই সুযোগে বলল

— থামলেন কেন চলুন।

আরিশ রাগী ভাব নিয়ে বলল
— আমরা পৌছে গেছি।

আরু পিছন ঘুরে তাকিয়ে দেখলো হসপিটালের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আরু, আরু খুশি হয়ে আরিশ কে বলল
— আচ্ছা তাহলে নামি।

খুশি হয়ে আরু একপ্রকার লাফিয়ে গাড়ি থেকে নামতে গেলেই আরিশ আরুর হাতটা ধরে ফেলল। হঠাৎ বাধা পেয়ে আরু আরিশ এর দিকে তাকিয়ে বলল

— কি হলো যাবো না?

আরিশ রেগে বলল

— সিটবেল্ট পরোনি কেন? এগুলো কি নতুন করে শেখাতে হবে? এগুলো তো বাচ্চাদের লেখানো হয়, এখন কি তোমাকেও বলে দিতে হবে এগুলো?

আরু ভয় পেল না উল্টে হুঠ করে আরিশ এর গালে একটা চুমু দিয়ে হেসে হেসে বলল

— আপনিই তো বলেন যে আমি বাচ্চা তাই তো এমন করলাম!

আরিশ আর বলার সাহস পেল না, হাতটা ছেড়ে দিয়ে বলল
— নেক্সট টাইম সিট বেল্ট না বাধলে গাড়ি থেকেই ফেলে দিবো বলে দিলাম।

— হমম হমম মনে থাকবে! এবার যাই?

আরিশ আর কিছু বললো না, গাড়ি থেকে নেমে গেলো, আরিশ গাড়ি থেকে নেমে আরুর হাতটা ওর হাতের মাঝে মুঠিবদ্ধ করে নিয়ে হাটতে শুরু করলেই আরু বলল

— আরে বাবা আমাকে হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছেন কেন! আমার ক্যাম্পাস এখানে আর আমি এখানে তো আমি মাঝে মাঝেই আসি, আমি সব চিনি।

আরিশ হাটতে হাটতে বলল

— থাপ্পড় খাবে নাকি চুপ করে শান্ত মেয়ের মতো হাটবে কোনটা?

আরু আর কিছু বললো না, চুপচাপ হাটতে লাগলো।
থার্ড ফ্লোরে রয়েছে আরাভের মা, আরিশ সিঁড়ি বেয়ে উঠে দরজায় সামনে গিয়ে দরজায় নক করতেই আরাভের বেরিয়ে এলো হন্তদন্ত হয়ে, দরজা খুলতেই আরাভের মুখে ঈষৎ হাসি দেখে আরিশ এর বুঝতে অসুবিধা হলো না যে ওনার জ্ঞান ফিরেছে। আরিশ কিছু বলার আগেই আরাভ বলল

— আম্মুর জ্ঞান ফিরেছে।

আরাভের খুশিতে আরিশ এর মুখেও হাসি ফুটে উঠলো, আরিশ আরুকে নিয়ে ভিতরে গেল, আরাভের মা আধশোয়া হয়ে বসে আছেন আর ক্লান্তি মাখা দৃষ্টিতে চেয়ে আছেন তা দেখে আরু ওনার কাছে গিয়ে ওনার হাতে হাত রেখে বলল

— এখন কেমন লাগছে আন্টি?

উনি উত্তর দিতে গেলেই আরিশ বলল

— উহু, আন্টি আপনার কথা বলার দরকার নেই, আপনি রেস্ট করুন। আরাভ আন্টি কে কথা বলতে দিবি না বেশি খেয়াল রাখবি!

আরাভের মায়ের চোখের কোন বেয়ে জল গড়ালো উনি ভাঙা কন্ঠে বললেন
— তোমাকে অনেক ধন্যবাদ আরিশ তুমি,,,

ওনাকে পুরো কথা বলতে না দিয়ে আরিশ বলল

— উহু, একদম না, কোন ধন্যবাদ না, আপনি আমার মায়ের মতো। আর আপনার কথা বলা একদম বারন, আপনার ভালবাসা নেব পরে আগে আপনি সুস্থ হন।

উনি মৃদু হাসলেন যে হাসিতে তৃপ্তি আছে।

— আরাভ তুই আন্টির সাথে থাক আমি আর আরু পাখি আসছি।

আরু গিয়ে আরিশ এর পাশে দাঁড়ালো, আরাভ বলল

— চল বাইরে গিয়ে কথা বলি, আর রুপ বাইরে আছে ও রুমে আসুক।

— হমম চল।

আরিশ আরু আর আরাভ বাইরে গেল, আরিশ আর আরু বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলছে আর আরু চুপচাপ শুনছে, সেদিনের জন্য আরাভ কে সরি বলবে কি ভাবছে আরু। আরিশ এর দিকে তাকিয়ে ভাবলো যে নাহ থাক ও আর কিছু বলবে না পরে আরিশ যদি ওপর বকা দেই তাই।

কথা শেষ হতেই আরিশ বলে উঠলো
— আরাভ আমি আন্টির সাথে এক মিনিট কথা বলে আসি।

আরিশ কেবিনে ঢুকলো। আরাভ আরুর সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে, আর সুযোগ পেলো বলার কিন্তু আমরা আমতা করে বলল

— ভাইয়া সেদিনের জন্য সরি, আসলে সেদিন আপনাকে যা তা বলে দিয়েছিলাম, আসলে মি অভদ্র মানে আপনার বন্ধু তো আমাকে আগে জানায়নি যে তিনি আর আপনি ফ্রেন্ড। তাই আর কি!

কথাটা বলে আরু মাথা নীচু করে নিল, আরাভ ও লজ্জা পেয়ে বলল

— আরে ভাবী সরি বলছেন কেন, সেদিন যা হয়েছিলো সবই কোয়েনসিডেন্স, ইট ওকে।

আরু মুচকি হেসে তাকালো। আরাভ প্রশ্ন করলো

— সানার পায়ে ব্যাথা কমেছে?

আরু উত্তর দিলো
— নাহ কমেনি।

তখন একজন নার্স সেখান দিয়ে যেতে গিয়ে আরাভ আর আরুকে একসাথে দেখে বলল

— স্যার আপনি এনগেজড এটা বলেননি তো।

আরিশ কেবিন থেকে বেরোতে বেরোতে নার্সের বলা কথাটা কানে গেল। আরু আর আরাভ দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে আরিশের দিকে তাকালো। আরু ভড়কে গেল, আরাভ থতমত খেয়ে নার্সকে বলল

— সরি আপনি ভুল ভাবছেন উনি তো আমার ভাবী হয়, উনি তো ডঃ আরিশের স্ত্রী।

কথাটা শুনে নার্স ও বোধহয় লজ্জা পেয়ে গেলেন। উনি ঝটপট সরি বলে সেখান থেকে কেটে পড়লেন।

আরাভ আরিশের মুখের দিকে তাকালো, আরিশ আরুর দিকে থমথমে চোখে তাকিয়ে আছে, আরু যে মনে মনে হাজারও কল্পনা জল্পনা করছে তা আরাভ ও বুঝতে পেরেছে আসলে আরু কে দেখে কোনভাবেই বোঝা যায় না যে ও বিবাহিত তাই এমন প্রশ্ন স্বাভাবিক।

আরিশ আরাভের কাধে হাত রেখে বলল

— আমি আসছি একটু পর।

আরু আরাভকে আল্লাহ হাফেজ বলে আরিশ এর সাথে বেরিয়ে গেল। হসপিটাল থেকে বেরিয়ে আরু চুপচাপ গাড়িতে উঠে গেল কারন ও জানে যে আরিশ ওকে বাসায় দিয়ে আসবে। আরিশ ড্রাইভিং সিটে বসলো, স্বাভাবিক ভাবেই বললো

— তোমাকে দেখছি আবার বিয়ে করে এটার একটা পারমানেন্ট সলিউশন বার করতে হবে কিন্তু তার আগে আরও একটা জিনিস করতে হবে।

আরু ভয় আর আবাক হয়ে বলল

— কি?

আরিশ কিছু না বলে ড্রাইভ শুরু করলো আর বললো
— যখন হবে দেখতেই পাবে।

#চলবে,,,