কারনে অকারনে ভালোবাসি০২ পর্ব-১৪+১৫

0
621

#কারনে_অকারনে_ভালোবাসি০২
#সুরাইয়া_আয়াত

১৪.

আরু গাড়ির মধ্যে আধো স্বরে ফিসফিসিয়ে বলল
— কোথায় যাচ্ছি আমরা? আর এটা তো আমার শ্বশুর বাসার রাস্তাও না আর বাবার বাড়ির রাস্তাও না! আপনি কি শুনশান কোন রাস্তায় আমাকে রেখে আসার প্ল্যান করছেন নাকি বলুন তো?

আরুর এমন বেহুদা কথা শুনে আরিশ ধমক দিয়ে বলল
— এক সেকেন্ড ও কি চুপ করে থাকা যায় না? আর বললেও এতো লজিকলেস কথাবার্তা বলো কেন?

আরু আর কথা বাড়ালো না, চুপচাপ হয়ে গেল। আরিশ গাড়িটা নিয়ে একটা গোল্ড শপের সামনে দাঁড়াতেই আরু ভ্রূ কুঁচকে তাকালো, আচমকা বলে উঠলো
— প্লিজ আমাকে জোর করে নাকফুল পারবেন না তাহলে আমি কিন্তু বেসুরা কন্ঠে কান্না করে পুরো শহর তোলপাড় করে দিবো।

আরিশ গাড়ি থেকে নামতে নামতে বলল
— নাকের ছিদ্র তো বোধহয় তোমার জ্বালায় আর লজ্জায় বন্ধ হয়ে গেছে, মনে হয় না যে ওই নাকে আর নাকফুল ঢুকবে। হোয়াটএভার। আসো, আর নো বকবক!

আরিশ আরুর হাত ধরে নিয়ে গেল দোকানে। আরু দোকানে ঢুকে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে আর চারিদিকে দেখছে, তবে চুপচাপ ই আছে। আরিশ পেন্ডেন্ট এর কালেকশানের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো, আর সামনে থাকা লোকটাকে বললো
— ভাইয়া এখানে কি অর্ডার দেওয়া যাবে? মানে আমি একটা অর্ডার দিয়ে বানাতে চাইছিলাম আর কি।

দোকানদার বলে উঠলেন
— হমম পাওয়া যাবে, কেমন বানিয়ে হবে বলুন।

— হার্ট শেপের মধ্যে নাম লিখে দিতে হবে একটা। আরিশ+ আরু() নাম হবে।

আরু আরিশের দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইল, কিন্তু কিছু বলছেনা তবে নিজে ভেবে ভেবেও কুল কিনারা পাচ্ছে না আরু।

দোকানে অর্ডার দিয়ে ওরা দুজন বেরিয়ে আসতেই আরু আরিশের হাত থেকে হাত ছাড়িয়ে দু হাত কোমরে রেখে জহুরির নজরে তাকিয়ে বলল
— ওটা কিসের জন্য বানালেন?

— তোমার জন্য বানালাম, আর ওটা সবসময় পরে থাকবে আর যখনই তোমাকে দেখে কেও ভাববে যে তুমি অবিবাহিত তখনই একটা সুইট স্মাইল দিয়ে লকেটটা দেখাবে তারপর দেখবে এভরিথিং ওকে আর আমার চিন্তাটাও কম হবে।

আরু রাগী সুরে বলল
— পরবো না আমি হু!

আরিশ হাত ধরে আরুকে গাড়িতে বসিয়ে বলল
— না পরলে খবর আছে মিস টুইটুই!

,,,,,,

— আন্টি আপনি কিন্তু আপনার নিজের শরীরের যত্ন নেবেন আর ঠিকঠাক খাওয়াদাওয়া করবেন বুঝেছেন! একদম বেখেয়ালি হবেন না কিন্তু, নাহলে আবার এমন হসপিটালাইজড হতে হবে আর নেক্সট নাইম আপনাকে আর হসপিটালের বেডে শুয়ে থাকতে দেখি তো আপনাকে আমি কিন্তু অনেক বকে দিবো।

এক প্রকার অধিকার খাটিয়ে বলে উঠলো সানা তবে আরাভের মায়ের সাথে কথা বলতে বলতে এই কিছুখনের মধ্যে কোথা থেকে এতো অধিকারবোধ কাজ করতে শুরু করলো সানা তা জানে না। সানার এমন কড়া শাষনগুলো বেশ ভালোই উপভোগ করছেন আরাভের মা আর চেয়ারে বসে প্রেসক্রিপশনে চোখ বোলাচ্ছে আরাভ আর মুচকি হাসছে ক্রমাগত যা সানার চোখ এড়াচ্ছেনা, আরাভের এমন কাজে সানা খানিকটা হলেও বিরক্ত তবে তা চোখেমুখে বোঝাচ্ছে না, আরাভ কে একা পেলে হয়তো বহু কথা শুনিয়ে দিতো সানা। সানার এমন কথা শুনে আরাভের মা মৌন সুরে হাসলেন আর বললেন

— এই তো আমি এমন একজনকেই এতোদিন চাইছিলাম যে আমাকে এমন বকবে আর ধমক দেবে।

সানা বরাবরের মতোই মুখে হাসি ফুটিয়ে রাখলো। উনি এবার বেশ সিরিয়াস ভাবে বলে উঠলেন
— একটা অন্যায় আবদার করবো রাখবি মা?

ওনার এমন কথা শুনে সানার মুখের হাসিটা ক্রমশ ছোট হয়ে এলো। হয়তো উনি কোন এক গুরুতর দায়িত্ব সানার ঘাড়ে তুলে দেবেন সারা ঘাড়ে আর সেই ভয়েই জর্জরিত হলো সানা, আর ঠিক তেমনই হলো। আরাভের মা বলে উঠলেন
— আমার ছেলেটার ছন্নছাড়া জীবনের একটা বটগাছ হবি মা যে ওকে একটা বন্ধন এ সারাজীবন আটকে রাখবে।

ওনার এমন কথাতে সানা অপ্রস্তুত না হয়ে পারলো না, আরাভের দিকে তাকাবে না আর যাই হোক, আরাভ হয়তো কিছুটা হলেও আন্দাজ করেছিলো যে তার মা এমন কিছু একটা বলবে। আরাভ সানার মুখের দিকে তাকালো, মেয়েটার মুখটাতে কোন পতিক্রিয়া নেই, মনে হচ্ছে বারবার সেখান থেকে পালিয়ে যেতে চায়। আরাভের মা কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সানা বলল
— আন্টি বেশ অনেকখন হলো এসেছি, আম্মু চিন্তা করবে হয়তো, আজ আসি নিজের খেয়াল রেখো।

কথাটা বলে সানা বেরিয়ে গেল। সানা বেরিয়ে যেতেই আরাভের মা আরাভ কে উদ্দেশ্যে করে বললেন
— হ্যাঁ রে মেয়েটা রাগ করেছে নাকি?

আরাভ ওর মা কে আর কোন রকম অসস্তির মধ্যে ফেলতে চাই না তাই বলল
— রাগ করবে কেন! হয়তো লজ্জা পেয়েছে। তুমি একটু থাকো আমি ওর সাথে কথা বলে আসছি।

কথাটা বলে আরাভ ও বেরিয়ে গেল। আরাভ দৌড়ালো না বা বেশি জোরে হাটলোও না কারন ও জানে যে সানা পায়ে আঘাত পেয়েছে তাই চাইলেও দৌড়ে যেতে পারবে না। কিছুদূর যেতেই দেখলো সানা দেওয়াল ধরে দাঁড়িয়ে আছে আর এক হাতে পা ধরে ব্যাথায় কাতরাচ্ছে হয়তো দৌড়ে যেতে গিয়ে পায়ে আঘাত পেয়েছে। আরাভ এবার দৌড়ে দ্রুত সানার কাছে গেল, আর ধমকের সাথে বলল
— পায়ের অবস্থা এমন জেনেও দৌড়ানোর খুব দরকার ছিলো? আমি কি বাঘ নাকি ভাল্লুক যে খেয়ে ফেলবো।

সানা আরাভের দিকে রাগী চোখে তাকালো বেশ তবে আরাভ তার তোয়াক্কা না করে সানার হাতটা ধরে চেয়ারে বসাতে গেলেই সানা হাতটা ঝাকি মেরে ফেলে দিয়ে কিছু বলতে গেলেই আরাভ বলল
— তোমার ভাইয়া কি একটা বেশ বলে না! ওই যে নো মোর ওয়ার্ডস! আমাকেও বলতো তোমার ভাইয়া, আজ আমি তোমাকে বলছি নো মোর অয়ার্ডস, চুপ থাকো।

কথাটা বলে সানা কে কোলে তুলে নিয়ে চেয়ারে বসিয়ে আরাভ বলল
— কোথাও যাবে না তুমি যতখন আমি আসবো।

আরাভ চলে গেল। সানার বিরক্তির মাত্রা বাড়লো। তবে আরাভের প্রতি সানার এই বিরক্তর কারনের উত্তর হিসেবে সানা কোন উত্তর পাইনি হয়তো সেদিন ও পড়ে গিয়েছিলো আর আরাভ তা নিয়ে হেসে ছিলো তাই। সানার মন চাইছে উঠে পালাতে কিন্তু পায়ে যা নতুন করে ব্যাথা হলো তাতে বেশি দূর পালিয়েও লাভ হবে না বরং আরাভের হাতে ধরা খেলে বিপদ আসন্ন তাই অযথা চুপটি করে বসে রইলো।

কিছুখন পর দেখলো আরাভ একটা স্প্রে হাতে এগিয়ে আসছে, সানা অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। সানার পা টা যত্ন করে ধরে আরাভ স্প্রে দিয়ে দিল, সানা চোখটা খিঁচে বন্ধ করে নিল। পা টা কনকন করছে। আরাভ সানার দিকে এক পলক তাকিয়ে নিয়ে বলল
— পায়ের ঠিক মতো যত্ন নেবে, ডক্টর হয়ে নিজেই পা ভেঙে বসে আছো হ্যাঁ!

সানা চোখ বন্ধ করেই ধমকের সুরে বলল
— তা ডক্টরদের কি পা ভাঙা বারন?

আরাভ চোখ টিপ মেরে বলল
— এত পা ভাঙার শখ আছে তোমার জানতাম না তো! সমস্যা নেই বিয়ের পর পা ভাঙার দায়িত্বটা আমিই নিয়ে নেবো।

আরাভের কথা শুনে সানা আরাভ কে হাত দিয়ে আলতো ধাক্কা মেরে বলল
— বিয়ে মাই ফুট!

আরাভ মজা করে বলল
— হ্যাঁ বিয়েও তার আর পা ও তোমার।

আরাভ পা টা আবার ব্যান্ডেজ করে বলল
— গাড়ি অবধি আমিই দিয়ে আসবো আর কোন কথা না।

সানা আর কৌতুহল চেপে না রেখে বলল
— আমার ভাইয়া কে আপনি আগে থেকে চিনতেন?

আরাভ মুচকি হেসে বলল
— ও আমার ফ্রেন্ড অনেক আগে থেকেই।

সানা বিরক্ত হয়ে বলল্
— ধূর! আপনাকে যেন আমার বাসার আশেপাশে না দেখি, দেখলেই ঠ্যাং খোড়া করে দেব।

আরাভ মজা করে বলল
— যে নিজেই খুড়িয়ে হাটছে সে কি আমাকে ধমক দিচ্ছে?

সানা অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে তাকিয়ে রইলো।

মানুষটার সাথে কিভাবে একটা সহজ সম্পর্কে আসবে ও যেখানে ও নিজেই কঠিন হয়ে আছে।

#চলবে,,,,

#কারণে_অকারণে_ভালোবাসি02
#সুরাইয়া_আয়াত

১৫.

— আম্মু আজ রাতে ওই বাসায় যেতে বলেছে আমাকে। আমার কিন্তু রেডি, আর শাশুড়িআম্মুও পারমিশন দিয়েছে তাই আপনি না করলে শ্বশুরবাবার কাছে নালিশ দিবো আমি।

একনাগাড়ে কথা গুলো বলে ক্ষান্ত হলো আরু। আরিশ হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো গুনে গুনে বিকাল ৪.৩৫, এখন শীতের সময় আর পাঁচটা বাজতে না বাজতেই সন্ধ্যা হয়ে যায়। আরিশ জিজ্ঞাসু সুরে প্রশ্ন করলো

— মামী কিসের জন্য তোমাকে যেতে বলেছে শুনি আগে।

— আম্মু আজকে অনেক কিছু রান্না করেছে তাই আমাকে ডেকেছে, শুধু আমাকে।

শুধু আমাকে কথাটা স্বাভাবিকের তুলনায় মাত্রাতিরিক্ত টেনে বলার দরুন আরিশ বলে উঠলো
— আমাকে বলেনি? তোমাকে একা বলেছে? আমি না তাদের একমাত্র মেয়ের একমাত্র জামাই।

আরু রিল্যাক্স একটা ভাব নিয়ে বলল
— নাহ, আম্মু তো বলেছে আপনাকে যেন না নিয়ে যায়।

কথাটা শোনা মাত্রই আরিশ দ্রুত আরুর দিকে তাকিয়ে অবাক হওয়ার ভান করে বলল
— খবিশ শাশুড়ি আম্মু!

আরু রাগী কন্ঠে বলল
— খবরদার আমার আম্মুকে একদম বাজে কথা বলবেন নই, আপনি খবিশ আর মি অভদ্র, আমার আম্মু তো আপনাকে দাওয়াত দিয়েছে, আমি আপনাকে মিথ্যা কথা বলেছি আর আপনি আমার আম্মুকে খবিশ বলছেন!

আরু একনাগাড়ে ফর ফর করে সব বলতে শুরু করলেই আরিশ একটা ডেভিল লুক দিল আরু কে, বাকা হেসে বলল
— এটা হলো সত্যি বার করার নিনজা টেকনিক বুজলে? এবার পানিশমেন্ট হিসাবে কি নেবে ইটস ইউর চয়েজ।

আরু বুঝতে পারলো আরিশ এর পাতা ফাঁদে সে বেশ ভালো ভাবেই জড়িয়েছে, অতঃপর না পালানো অবধি রেহায় নেই। আরু একটা বোকা বোকা হাসি দিয়ে দু এক পা করে পেছাতে লাগলো, আজ আরিশ এর হাতে নাতে ধরা পড়লে আর রক্ষে নেই।
আরু পেছাচ্ছে আর আরিশ একজায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পালাতে গেলেও আরিশ এর পাশ দিয়েই পালানো ছাড়া আর কোন উপায় নেই দেখে আরিশ সটান এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে।

আরিশ হাত ভাজ করে বলল
— কি হলো বলো কি পানিশমেন্ট লাগবে!

আরু বোকা বোকা হয়ে তাকিয়ে বলল
— আমি আপনার পাশ দিয়ে টুক করে পালানোর চেষ্টা করবো আর আপনি মহা পন্ডিত পা দিয়ে আমাকে ফেলে দেবেন তারপর আমি পড়ে গিয়ে ভ্যা ভ্যা করে কাঁদবো আর শাশুড়িআম্মু কান্নার আওয়াজ শুনে আপনাকে গণধোলাই দেবে এমন একটা পানিশমেন্ট দিন প্লিজ।

আরিশ আরুর এমন ফিউজওড়া টাইপের কথাতেও অবাক হলো না, সে এমন একটা ভাব করলো যেন সে আরুর প্রস্তাবে একদম রাজি অতঃপর আরুর পালানোর রাস্তা থেকে খানিক দূরে সরে গিয়ে বলল
— যাও পালাও।

আরু অবাক হলো বেশ কারন তবুও আরিশ যে একবার হাতে নাতে ধরলে ওর খবর আছে সেটা জানে তাই দৌড়ানোর প্রস্তুতি নিয়ে আরিশ এর পাশ কেটে যেতে গেলেই আরিশ খপ করে ওর হাতটা ধরে নিয়ে জাপটে ধরলো পিছন থেকে।
ভয়ে আরুর বুকের ভিতর দুরুদুরু করছে। কিছু বলছে না। আরিশ সটান বলে উঠলো
— যা জিজ্ঞাসা করবো ভদ্র মেয়ের মতো সত্যি কথা বলবে ওকে?

আরু মাথা নাড়ালো।

আরিশ আরু কে বেশ কাছে টেনে নিলো আরও, প্রশ্ন করলো
— সত্যিই মামী যেতে বলেছে নাকি মিথ্যা বলছো কোনটা?

আরু ভীষনরকম উত্তেজিত হয়ে বলল
— বিশ্বাস করুন আম্মু যেতে বলেছে, আম্মু রাতে কাচ্চি রান্না করবে তাই আপনাকে আর আমাকে যেতে বলেছে।

আরিশ আরুর কাধে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল
— আর?

আরু অবাক এর সাথে বলল
— আর মানে?

— আপনার একা যাওয়ার উদ্দেশ্যেটা কি মিস টুইটুই?

আরু এবার চুপ হয়ে গেল, খুব কম সময়ে যদি ফাটাফাটি মিথ্যা বলার নিনজা টেকনিক থাকতো তাহলে আরু তা এপ্লাই করতো তবে এই টেকনিক টা ওর জানা নেই তাই কি বলবে তাও ওর ছোট্ট মস্তিষ্কের ধারে কাছেও এসে পৌচ্ছাচ্ছে না।

— আমার কোন মতলব নেই তো। ইচ্ছা হলো এমনিই একা যাওয়ার তাই আর কি!

আরিশ এবার আরু কে সামনে ঘুরিয়ে আরুর চুলগুলো এলোমেলো করে বলল
— সরি এতো বড়ো মিথ্যাটা হজম হচ্ছে না, ভালো কোন এক্সকইউজ দাও।

আরু এবার মাথা নীচু করে মুখ গোমরা করে বলল
— সত্যিটা শুনবেন?

— নাহ মিথ্যাটা বলো, আপনার তো আবার সত্য কথার থেকে মিথ্যা কথার টেস্ট বেশি।

আরু বললো
— আপনি না গেলে আমার সাথে সেই তো আপনি হয়তো বাসার গাড়ি করে আমাকে পাঠাতেন আর আমাকে রাতেই ফিরে আসতে হতো কারন আপনি তো আমাকে একটা রাতের জন্য হলেও একা ছাড়েন না, একা কোথাও যেতেও দেননা।

অভিমানী কন্ঠে আরুর এমন অভিযোগ শুনে আরিশ বলল্
— একদম ঠিক বলেছেন! কারন আমার বউ তো আর আর পাঁচ জনের মতো নয় যে তাকে নিয়ে আমার চিন্তা থাকবেনা তাই তো চোখে চোখে রাখতে হয়। বাট বাট বাট তারপরের কাহিনী কি?

— তারপর আর কি! একেই তো শীতকাল, আর এখন যদি বলি আপনাকে আমি আইসক্রিম খাবো আপনি হয়তো আপার দাঁত কপাটি ফেলে দিতেন একটা চড়ে তাই ভাবলাম একা একা গেলে একটু আইসক্রিম খাবো উইথআউট এনি বকাঝকা।

কথাটা বলে আরু থেমে গেল তবে আগের মতোই মাথা নীচু করে আছে। আরিশ ও বেশ চুপচাপ, আরিশ কে চুপচাপ থাকতে দেখে আরু ধীরে ধীরে মাথা তুলে তাকিয়ে দেখলো আরিশ ও ওর দিকে তাকিয়ে আছে তবে চাহনিতে মনের ভাব অস্পষ্ট। আরু হালকা ভয়ে ভয়ে বলল
— এখন যদি আপনি যেতে বারন করেন আমি আপনার কথা শুনবো না, আমি জানি যে আপনি আইসক্রিম খেতে দিবেন না, তবে আপনি না গেলে আম্মু আমাকে বকা দিবে।

কথাটা বলে আরু পিছু ঘুরে যেতে গেলেই আরিশ আরু কে থামিয়ে বলল
— গাড়িতে গিয়ে বসো আর আমি শার্টটা চেন্জ করেই আসছি।

আরু বেশ খুশি হলো শুনে কারন ও ভেবেছিলো আরিশ হয়তো মিথ্যা বলার জন্য ওকে যেতেই দেবে না তবুও আরিশ সাথে যাচ্ছে এটা ভেবে খুশি। আরু বেড থেকে টুপি নিয়ে মাথায় পরলো, চুলগুলো ছাড়া। ফোনটা নিয়ে দৌড়ে নীচে গেল। আরিশ শার্টের বোতাম লাগতে লাগাত বললো
— চিরকাল এমন চঞ্চলটাই থেকো আরুপাখি! ভালোবাসি!

_______

— আপনি কি আপনার আম্মুকে এসব শিখিয়ে দিয়েছেন বলার জন্য? নিজের বিয়ের করার ইচ্ছা সেটা ওই অসুস্থ মানুষটাকে দিয়ে বলাচ্ছেন?

বেশ কঠোর সুরে বললো সানা। আরাভ একরোখা হেসে বলল
— নাহ, আম্মু তার নিজের মনের কথাটা বলেছে আর আমারটা আমি এখন বলবো।

আরাভের এমন অকপট কথাতে সানা বিব্রত বোধ করলো, বুঝতে পারলো যে সে এখন সানাকে চরম দোটানাময় এক পরিস্থিতির সাথে আলাপ করাবে। সানা এতো দোটানায় পড়তে চাইনা তাই ও কঠোর সুরে বলল
— আপনার মনের কথা শোনার বিন্দু মাত্র ইচ্ছা নেই আমার। রাখছি আমি।

আরাভ সতর্কতার সুরে বলল
— উহু একদম না, কল কাটবে না।

সানা রেগে গিয়ে বলল
— আপনার ইচ্ছা নাকি?

আরাভ হাসলো, সানা এখন তুমুল অস্বস্তির স্বীকার।

— তুমি চাও কি না চাও জানি না তবে আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই আমি তা স্পষ্ট তোমাকে জানালাম। এখন তোমার ব্যাপার্। তুমি এখন রাজী না হলেও সমস্যা নেই, আমি অপেক্ষা করতে রাজী আছি।

সানার গলা শুকিয়ে এলো, তীব্র অধিকার বোধ নিয়ে আমাদের এমন অকপট আবদার। আরাভের গলার সুরে সানার প্রতি তীব্র অধিকার ব্যাক্ত হচ্ছে যা বুঝতে কিঞ্চিৎ অসুবিধা হয়নি সানার, এই ধরনের অধিকার ফলানো মানুষগুলো ভয়ংকর হয়, ভীষনরকম ভয়ংকর যাদের থেকে চাইলেও পালানো যায়না, যেমনটা আরু ও পারেনি আরিশ এর থেকে পালাতে।

সানা বেশ ভয় পেলে, ভীত কন্ঠে বলল
— দেখুন আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই না সেটা আপনার বোঝা উচিত।

আরাভ সানার বিষ্ময়কর কাটাতে বলল
— আমি বুঝি, আর এতো ভয় পাওয়ার কারন নেই, আমি মানুষ ই কোন জীব জন্তু না যে ফোনের ওপাশ থেকে তোমাকে খেয়ে ফেলবো। তোমাকে আমি অনেক সময় দিচ্ছি যতোটা তুমি চাও, কিন্তু তুমি আমারই। বুঝেছো।

সানা চুপ করে আছে, শীতের ঠান্ডায় আর আরাভের শীতল কন্ঠের এই দীর্ঘ উপমাতে ওর রক্ত হিম করে দিচ্ছে। ভয় পেলো সানা।

সানাকে আরও অবাক করে আরাভ বললো
— তুমি না আমাকে পছন্দ করতে তাহলে সমস্যা কোথায়?

সানা ঢোক গিলে বলল
— সেটা আমার সাময়িক ভ্রম ছিলো। আপনি কোন ভাবেই আমার উপযুক্ত না আর না আমি আপনার।

আরাভ আর বেশি কথা না বলে বলল
— আচ্ছা এখন এসব কথা না হয় থাক, পায়ের ব্যাথা কেমন আছে এখন?

সানা মিথ্যা করে বললো
— আমার ঘুম পাচ্ছে আমি ঘুমাবো। আর আমি ভালো আছি।

কথাটা বলে রেখে দিল সানা, ফোনটা পাশে রেখে গুটিশুটি হয়ে শুয়ে পড়লো সানা। মানুষটাকে মেনে নিতে ওর সমস্যা টা কোথায় সেটা বুঝছে না ও।

______

— কি হলো এখানে গাড়ি থামালেন যে! বাসায় যাবেন না?

আরিশ আরুর প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বলল
— গাড়িতে থাকবে নাকি আইসক্রিম পার্লারের ভিতর যাবে কোনটা?

আরু অবাক হলো, হঠাৎই আরিশ কে চিমটি দিয়ে বলল
— সত্যি করে বলুন না আপনাকে জিনে ধরেছে কি।

আরিশ রেগে গিয়ে বলল
— হোয়াট!

আরু ভয় পেয়ে বলল
— নাহ আপনাকে একটু অস্বাভাবিক লাগছে আমার, নাহলে আপনি তো কখনো আমাকে এতো রাতে আইসক্রিম খাওয়ার পারমিশন দেবেন না।

আরিশ বিরক্ত মুখ করে বলল
— যাবে নাকি বাসায় ফিরে যাবো।

আরু আনন্দে আরিশকে জড়িয়ে ধরে বলল
— আপনি নিয়ে আসেন আমি বসে আছি, আর বেশি করে আনবেন প্লিজ।

আরিশ আরু কে ছাড়িয়ে বলল
— থাক থাক হয়েছে, বাসায় চলো দেখাচ্ছি মজা।

আরু মুচকি হেসে বলল
— আপনি এতো কিউট আর সুইট হয়ে গেলেন কিভাবে বলুন তো😇

আরিশ আড় চোখে তাকিয়ে বেরিয়ে গেল।

#চলবে,,,