কারনে অকারনে ভালোবাসি02 পর্ব-১০+১১

0
607

#কারনে_অকারনে_ভালোবাসি02
#সুরাইয়া_আয়াত

১০+১১.

— ভাবী আপনাদের সবার দাওয়াত রইলো, মধুর বিয়ে, আমাদের গ্ৰামেই, ওই যে আরুর সাথে আরুর নানাভাই যে ছেলেটার বিয়ে ঠিক করেছিলো না তার সাথেই, মাহিন নাম, সবাই ভোলা বলে ডাকে।

অনিকা খান আরুর মামীর মুখে এমন কথা শুনে কিংকর্তব্যবিমূঢ়, তিনি আদতেও বুঝে উঠতে পারছেন না কি ভাবে এতো সহজ ভাবে উনি কথাটা নির্দিধায় বলে যাচ্ছেন কারন এই কথাটা কোন গোপন বিষয় নয় যে আরুর সাথে সেই ছেলের একবার বিয়ে ঠিক করা হয়েছিলো জোর করেই কিন্তু বিধায় একটা ব্যার্থ প্রচষ্টা চালিয়েছিলেন আরুর নানাভাই, কারন ওনার এই প্রচেষ্টাকে আরিশ অতি সহজেই ব্যার্থ করে দিয়েছিলেন আর যার অন্তিম ফলাফল হিসেবে আরিশই লাভবান হয়েছিলো যার ফলে ওর আর আরুর সত্বর এনগেজমেন্ট হয়ে যায় আর তাতে তার আরুপাখিকে তার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া খুবই দুষ্কর।

উনি আরুর দিকে এক পলক দৃষ্টিপাত করলেন, এই বিয়ে সম্পর্কে আরু অবগত কিনা অনিকা খান আরুর মুখ দেখে বুঝে উঠতে পারছেন না, তার জানামতে আরু যদি একবার জানতে পারে যে সেই ছেলের সাথে মধুর বিয়ে হচ্ছে তাহলে আরু তা কখনোই হতে দিতো না, তবে তার ভাবনার সুতো কেটে ফোনের অপর পাশ থেকে ব্যাতিব্যাস্ত কন্ঠে উনি বলে উঠলেন

— ভাবী আপনারা হলেন আমাদের নিজেদের মানুষ, কোন না শুনতে চায় না আপনাদের তরফ থেকে তাই বিয়ের যতদিন আগে পারেন ততদিন আগেই আসবেন কিন্তু দেরি যেন না হয়।

অনিকা খান মুখে বৃথা হাসি ফুটিয়ে বললেন
— নিশ্চয়ই ভাবি, ইনশাআল্লাহ যাবো।
আচ্ছা আপনি আরুর সাথে কথা বলুন আমি কিচেনে ভাত বসিয়ে এসেছিলাম,আমি একটু আসছি।

অপর পাশ থেকে দ্বিধামুক্ত কন্ঠে মামী বলে উঠলেন
— আচ্ছা ভাবী, তবে মনে করে রাখবেন, দেরি করবেন না কিন্তু আসতে।

অনিকা খান ঘটনার আকস্মিকতা না বুঝে হাত কচলাতে কচলাতে কিচেনে গেলেন। আরু গায়ে ব্ল্যাঙ্কেট জড়িয়ে সোফাতে শুয়ে শুয়ে পপকর্ন খাচ্ছে আর টিভিতে কার্টুন দেখছে।

অনিকা খান কিচেন থেকে মাঝে মাঝেই আরুর দিকে তাকাচ্ছেন, আরু ফোনটা কেটে দিয়ে পুনরায় টিভিতে মনোযোগ দিলো। কয়েক মুহূর্ত পর উনি এসে আরুর পাশে বসলেন আর আরুর মাথায় হাত বোলাতে লাগলেন, আরু আদর পেয়ে মুচকি হেসে পুনরায় টিভি দেখায় মনোযোগী হতেই অনিকা খান বলে উঠলেন
— হ্যাঁ রে মধুর বিয়ের ব্যাপারে কিছু শুনলি? ইনভাইট করলেন আমাদের সবাইকে।

আরু টিভির দিকে তাকিয়ে বলল

— হমম।

উনি আবার প্রশ্ন করলেন

— ছেলেটা কে চিনিস?

আরু পুনরায় লাপাত্তা ভঙ্গিতে বলল

— হমম।

— দেখেছিস তাকে?

— হমম।

— নাম কি?

— হমম!

ওনার শেষের প্রশ্নের উত্তর হিসেবে আরুর মুখ থেকে হমম শব্দটা বেরোতেই উনি বিষয়টা বুঝে ফেললেন, উনি আর কোন প্রশ্ন না করে টিভির দিকে তাকালেন, টিভিতে হরিড হ্যানরি চলছে, আরুর এটা প্রিয় কার্টুন, আগে ওনার ভালো লাগতো না কিন্তু দিনের পর দিন আরুর পাশে বসে দেখতে দেখতে এখন এই কার্টুনটা ওনারও ভালো লাগে। আরও তিন মিনিট দেখা হয়ে গেলে কার্টুন টা শেষ হতেই আরু টিভিটা বন্ধ করে দিয়ে অনিকা খানের কোলে মাথা রেখে গুটিগুটি হয়ে শুয়ে পড়লো, ওনারও কার্টুন এর ঘোরটা কাটলো, উনি আরুর মাথায় হাত বোলাচ্ছেন আর আরুও চুপটি করে আছে, হঠাৎ এই গাঢ় নিস্তব্ধতা ভেঙে আরু বললো

— ফুপি!

উনিও মৌনতা সুরে বললেন
— হম বল!

আরু এবার একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো যার অর্থ ওর অনেক কিছু বলার আছে তাকে। তেমনি তার অনিয়ম হলো না, আরু বলতে আরম্ভ করলো
— ওরা দুজন দুজনকে ভালোবাসে ফুপি, আর ভালোবাসাটা তো কোন অন্যায় না বলো।

উনি আরুর থেকে এমন কথা শুনে আপন খেয়ালে হেসে উঠলেন, আরু আবার বললো

— মিঃ অভদ্র আমাকে সেই ছোটবেলা থেকে নিজের পুতুল বউ ভাবতো, আমাকে তার নিজের কোন ব্যাক্তিগত সম্পত্তি বলে মনে করতো আর এখনো করেন, আমাকে হারানোর ভয় পেতেন উনি প্রতি মুহূর্তে, আমি ওনার চোখে সেই ভয় দেখতে পেতাম আর এখনো পাই, তবে এখনকার ভয়ের কারন আমি জানি না। আর সত্যি বলতে এইচ এস সি দেওয়ার সময় উনি আমার পুরো ক্লাসরুম কে বলে রেখেছিলেন যে উনি আমার বি এফ তাই কেও যেন কোন সুযোগ না নেওয়ার চেষ্টা করে, তখন ভীষন রাগ হতো আমার জানো তো।

কথাটা শুনতেই অনিকা খান হেসে হেসে বললেন
— এইগুলো হলো জেলাসি বুঝলি তো? তোকে কোন ছেলের সাথে কথা বলতে দেখলে ও ভীষন রেগে যেত।

আরুর মুখেও একপ্রকার ভালোবাসার প্রাপ্তির হাসি, আরু আবার বললো
— জানো তো ওনার জন্য আমি কখনো কোন প্রপোজাল ও পাইনি, সানা কে যখন যে ছেলে প্রপোজ করতো তার ফ্রন্ডরা আমাকে বলত
‘ তোমাকে আর প্রপোজ করে কি লাভ, তুমি তো মিঙ্গেল! তোমাকে প্রপোজ করলে তোমার বি এফ বলে গেছে যে মেরে বালি চাপা দিয়ে দেবে একদম।

তখন আমি খালি মুখ বুজে শুনতাম তখন, তবে এখন আমার আর কোন নিষেধাজ্ঞা নেই, উনি বলেন ছেলে ফ্রেন্ড থাকলেও সমস্যা নেই তবে নির্দিষ্ট সীমা পার করে কোন ফেন্ডশিপ না করতে, কিন্তু এখন আর আমার ভালো লাগে না কোন ছেলের সাথে কথা বলতে। তবে ওনাকে রাগাতে অনেক ভালো লাগে।

কথাটা বলে দুজনেই হেসে ফেলল।

অনিকা খান হাসতে হাসতে বলল

— হ্যাঁ রে আরিশ জানে মধুর কথাটা?

আরু এবার ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে বলল

— সে আর বলতে? উনিই তো প্রথম জানতে পেরেছিলেন তারপর উনিই তো আমাকে বোঝালেন যে ওরা পরস্পরকে ভালোবাসে তাই আমি যেন কিছু না বলি মধুকে, আর একটা সিক্রেট শুনবে?

উনিও কৌতূহল নিয়ে বললেন

— কি রে?

আরু মুখ চেপে হেসে বলল

— উনিই মামা আর মামী কে বলে মধুর বিয়েটা তে রাজী করিয়েছেন।

অনিকা খান একটু ভাব নিয়ে বললেন

— দেখেছিস তো আমার ছেলের ট্যালেন্ট।

আরু রাগী সালে বলল

— ফুপি তুমি একদম ওনার হয়ে কথা বলবে না, তুমি আমার একমাত্র শাশুমা তুমি জানো না! উনি আমাকে কি বলেছে জানো?

— কি?

— নো ক্যান্ডি, নো হাওয়াই মিঠাই মিসেস উইইইমা টুইটুই!

উনি হাসছেন শুনে আর বলছেন
— তোরা পারিস ও বটে, সত্যি!

আরু রেগে বলল

— উনি যদি না এনেছে তাহলে পরের দিন ওনাকে আর নাস্তা দিবে না বলে দিলাম।
কথাটা বলে আরু দৌড়িয়ে রুমে চলে গেল। অনিকা খান হাসতে হাসতে ওনার রুমে চলে গেলেন।

রুমে গিয়ে আরু ধম করে বিছানাতে লাফ দিলো আর বেশ আরাম করে শুয়ে পড়লো আরু, ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো চারটে পনেরো বাজে, খালি খালি হাত আর পা নাড়িয়েও যেন কোনপ্রকার শান্তি লাগছে না, না পেরে আরিশকে কল করলো, অনেকখন ধরে রিঙ হলো তবে ফোনটা আরিশ ধরলো না দেখে আরু আর কল করলো না কারন আরিশের কড়া নির্দেশ যখন হসপিটালে থাকবো তখন ফোন করে যদি দেখ আমি কল না ধরি তবে বারবার কল করবে না, ভাববে আমি বিজি আছি, আর আমি ফ্রি হলে তোমাকে নিশ্চয়ই কল করবো।
আরু আর কল করলো না, ও জানে যে আরিশ কল করবে। চারটের সময় সানার কলেজ শেষ হয়, যদিও প্র্যাকটিক্যাল এর দিনগুলো ব্যাতিক্রম। আরুর কলেজে এক সপ্তাহের উইন্টার ভ্যাকেশন, সানার ও আজকের পর থেকে, এরপর দুইজন অনেক জায়গায় ঘুরবে ভেবে ভিষনরকম খুশি আরু। সানার কাছে কল করলো, রিঙ হচ্ছে তবে সানাও ধরছে না,,,,

অন্যদিকে,,,,

— আপনি হাতে গুনে গুনে দশ মিনিট লেট, আর একটা ডক্টরএর কাছে সময়টা ঠিক কতোটা মূল্যবান তা আপনার জানা উচিত মিস সানা খান!

সানার দিকে ঈষৎ ঝুকে কথাগুলো বলতেই সানা রেগে গিয়ে ওর হাতটা আরাভের মুখের ওপর দিয়ে, আরাভকে দূরে ঠেলে বলল

— আপনি হয়তো অন্য গ্ৰহে থাকেন তাই ঢাকা শহরের জ্যাম সম্মন্ধে আপনার কোন ধারনা নেই মিষ্টার আরাভ!

আরাভ একটু লেজি ভাব নিয়ে বলল
— আমি তোমার থেকে বয়স আর ক্লাস দুটোর দিক থেকেই বড়ো, রেসপেক্ট দিয়ে কথা বলো, আফ্টার অল আমি তোমার সিনিয়র!

সানা বিড়বিড় দাঁতে দাঁত চেপে বলল
— তা আপনাকে কি বলবো আপনিই বলেন, চাচা? মামা? নাকি খালার জামাই খালু কোনটা,,,,

সানার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে আরাভ বলল
— দূর পাগলি ওসব কে বলে, কল মি জাআআআআন! ইভেন আমার নিক নেম ও জান!

সানা অবাক না হয়ে পারলো না, লম্বা আর টানা সুরে বলল
— জাআআআআআন!
হোয়াট! লাইক সিরিয়াসলি!

আরাভ বুকের ডানদিকে হাত দিয়ে বলল
— উফফফ ডাকটা বুকে এসে লাগলো!

সানা ভ্রু কুঁচকে বলল
— ফ্লার্ট করছেন আমার সাথে? আর মানুষের হার্ট কি ডানদিকে থাকে নাকি?

আরাভ প্রতি উত্তরে কিছু বলতে যাবে তখনই আবার আরু কল করলো,
সানা আমার যেই কেটে দিতে যাবে কলটা তখন আরাভ বললো
— কাটছো কেন কলটা? ভাবী যে, তুমি কথা না বলতে চাইলে দাও আমি কথা বলি!

আরাভ ফোনটা হাতে নিলো, কলটা রিসিভ করতে যাবে তার আগেই সানা হুঙ্কার সহকারে থ্রেট দিলো

— ফোনটা দিন না হলে মাথায় আর একটা চুল ও থাকবে না।

আরাভ ভয় পাওয়ার ভান করে বলল
— নাহ নাহ আমি কথা বলবো না, তুমিই বলো।

সানা ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরতেই অপর পাশ থেকে আরু বলল
— কি রে বিজি?

— নাহ, বিজি না, তবে রাস্তার একটা বাজে জ্যামে আটকে গেছি, তাই ফিরতে দেরি হচ্ছে, আম্মুকে বল চিন্তা না করতে আর তুই ও চিন্তা করিস না। ঝামেলায় মিটিয়ে আমি আসছি।

আরাভ সব শুনছে আর পিটপিট করে হাসছে, আরু জিজ্ঞাসু সুরে বলল
— ঝামেলা? কিসের ঝামেলা আবার?

সানা আমতা আমতা করে বলল ও কিছু না। তুই কি করছিস?

পাশ থেকে অরাভ বলে উঠলো বেশ জোরেই,
— ভাবী আপনার ননদীনি আমাকে জান বলেছে।

আরু বলতে যাচ্ছিল,

— মিঃ অভদ্রর নামে বানী ঝাড়ছিলা,,,

তখনই আরাভের কথা শুনে থমকে গেল আরু, সানা প্রশ্ন করে উঠল
— তোর পাশে কে ওটা? গলাটা চেনা চেনা লাগছে!

সানা ফিসফিসিয়ে মাথা নীচু করে বলল
— বাসায় গিয়ে তোকে সব বলছি।

আরু কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে কল কেটে দিল। সামনের দিকে তাকিয়ে দেখলো আরাভ মুচকি মুচকি হাসছে, তা দেখে সানার রক্ত গরম হয়ে গেল যেন, রেগে গিয়ে বলল
— না জানি কি পাপ করেছিলাম তাই কলেজ কনসার্টে সব সিনিয়রদের মধ্যে আপনাকে ভুলবশত পছন্দ করেছিলাম আর সেই সুযোগে আপনি,

আরাভের ফোন বেজে উঠলো, আরাভ পকেট থেকে ফোন বার করলো তবে এদিকে সানা বলেই চলেছে

— আপনি তারপর থেকে আমাকে বিরক্ত করেই চলেছেন আমি যতই ইগনোর করার চেষ্টা করছি ততই। আপনি যথেষ্ট ভালো একটা ডক্টর আর কোথায় আমার পিছনে সময় নষ্ট করছেন।

আরাভ শান্ত কন্ঠেই বলল
— বলা শেষ? আমি কি কলটা ধরতে পারি?

সানা এবার রেগে গিয়ে আরাভের হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে ধম করে টেবিলে রেখে বলল

— প্লিজ লিভ মি।

কথাটা বলে একটা দীর্ঘশ্বাস নিলো, ততক্ষণে কলটা কেটে গেছে, আরাভ হাত বাড়িয়ে ফোনটা নিতে গেলেই সানার সাথে চোখাচোখি হলো, ফোনটা আবার বেজে উঠতেই সানার ফোনের দিকে নজর গেল,
ফোনের স্ক্রিনে রুপসা( রুপ) নামটা ভাসছে, সানা কিছু না বলে রেগে গিয়ে ওখান থেকে উঠে বেরিয়ে গেল। সানা চলে যেতেই আরাভ ফোনটা ধরলো,

— ভাইয়া তুই তাড়াতাড়ি আয়, আম্মু অসুস্থ, নিশ্বাস থেমে থেমে যাচ্ছে, হাত পা ও অবশ হয়ে যাচ্ছে, আমি আম্মুকে নিয়ে হসপিটাল যাচ্ছি।

আরাভের হাত পা শীতল হয়ে এল, এই পৃথিবীতে আপন বলতে ওর মা আর ওর বোন রুপ, আরাভ থমথমে কন্ঠে বলল

— আম্মুকে চোখ বন্ধ করতে দিবি না আমি এক্ষুনি আসছি।

আরাভ দৌড়ে ছুটলো, চোখটা কেমন ভিজে ভিজে হয়ে আসছে, সামনে টুকু ঝাপসা, সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে ধাক্কা লেগে একজন পড়ে গেল তা অনুভব করলো ও, ভেজা আর ঘোলা চোখে সানা সিড়িতে বসে পড়েছে দখল, ব্যাস্ততায় শুরু সরি বলে দৌড়ে ছুটলো আরাভ এদিকে আরাভের এমন ব্যাবহারে সানার রাগটা মাত্রাতিরিক্ত হলো, আর পা টা মচকে গেছে তাতে পা টা কনকনে করে উঠল।

রাত, সাড়ে এগারোটা, রুম জুড়ে পাইচারি করছে আরু, আরিশ ফেরেনি এখনো আর তারপর না ওকে কল ব্যাক করেছে। অনিকা খান আরিশ আর আরু দুজনের খাবারই ঘরে রেখে গেছেন কারন আরু আরিশকে রেখে খাবেনা।
পাইচারি করতে করতেও পা টা ব্যাথা হয়ে গেল আরুর, বিরক্ত হয়ে ব্যালকনিতে গেল একবার, আজকে অনেক ঠান্ডা বাইরে, কুয়শায় কিছু দেখাও যাচ্ছে না ঠিকঠাক, নতুন বছর শেষের পথে, পরের বছর জানুয়ারির ২২ তারিখ এলেই আরিশের বয়স ২৬ হবে, আর এবার আরিশকে আরু সারপ্রাইজ দিতে চায় যেমনটা প্রত্যেক বছর আরিশ আরুকে দেয়। পায়ে মোজাও পরেছে আরিশের ভয়ে, গায়ে সোয়েটার, মাথায় টুপি আর শীতকালে প্লাজো পরাটাও আরিশের ভয়ে বন্ধ আছে, কিন্তু সবই ঠিক আছে, আরিশ বাসায় ফিরছে না আবার কল ও করছে না দেখে চিন্তা হচ্ছে ওর। নীচে ড্রয়িং রুমে অনিকা খান বসে বসে আরিশের জন্য অপেক্ষা করছেন। সানা আরুকে সব বলেছে, তবে ও পা এ ব্যাথা পেয়েছে বলে আরুও আর বেশি কিছু জানতে চাইনি।

আরু রুমে এসে এবার ব্ল্যাঙ্কেটের মধ্যে ঢুকে পড়লো, ফোনটা ধরতেও ইচ্ছা করছে না, দরজার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ও।
গুনে গুনে আরও পাঁচ মিনিট পর হঠাৎই আরিশ দরজা খুলে রুমের ভিতর ঢুকলো, আরু গাল ফুলিয়ে বসে আছে। আরুকে এভাবে বসে ওর জন্য অপেক্ষা করতে দেখে আরিশ বললো
— কি ব্যাপার মিসেস টুইটাই, আমার জন্য অপেক্ষা করছিলেন নাকি আপনার কটন ক্যান্ডির জন্য কোনটা।

আরু বিছানা থেকে নেমে আরিশের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে কোমরে হাত দিয়ে জিজ্ঞাসা করলো
— এতো দেরি হলো কেন? আর ফোন করেননি কেন?

আরুর এমন ব্যাবহারে আরিশ অবাক হলো, আর সন্দেহের সুরে বলল
— কি ব্যাপার আজ এমন হাউজওয়াইফের মতো জিজ্ঞাসা করছো যে!

আরু গম্ভীর সুরে বলল
— যা জিজ্ঞাসা করেছি বলুন।

আরিশ আরুর দিকে এগিয়ে বলল
— এমারজেন্সি অপারেশন পড়ে গিয়েছিলো তাই, আর কল করার সময় হয়নি। ওই জন্য দেরি হয়েছে!

আরু আর বেশি কিছু জিজ্ঞাসা না করে বলল
— নেক্সট টাইম কল করে বলে দেবেন আগে থেকে।

আরিশ মুচকি হেসে বলল
— কেন চিন্তা হয় বুঝি?

আরু আরিশের দিকে দুষ্টুমি চাহনিতে তাকিয়ে বলল
–বয়েই গেছে আপনার জন্য অপেক্ষা করতে, শাশুড়ি আম্মু চিন্তা করে আমি তো তাই বললাম।

আরিশ মুচকি হেসে আরুর পিছন পিছন হাটতে লাগলো, আরু রুমের এপাশ থেকে ওপাশ যাচ্ছে আর আরিশও পিছন পিছন যাচ্ছে দেখে আরু ভ্রু কুঁচকে বলল
— কি হলো?

— আজ এমন এমন ব্যাবহার যে তাই আরকি, আমার প্রেমে ট্রেমে পড়ে যাওনি তো আবার! যদিও প্রেমে পড়ারই কথা, আমার মত একজনকে দেখে আপনার মাথা ঠিক. থাকার কথা না।

আরু আরিশের পিঠে কিল মেরে বলল
— আমি হাউজওয়াইফের মতো দায়িত্ব পালন করেছি অর কিছুই না, আর আপনার ওপর প্রেমে পড়তে আমার বয়েই গেছে, দুনিয়াতে ছেলের অভাব আছে?

আরিশ আরুর হাতটা ঘুরিয়ে আরুকে ওর বুকের সাথে মিশিয়ে বলল
— কিন্তু এই দুনিয়ার সবাই তো আর আরু পাখির মি অভদ্র ওরফে আবরার আরিশ খান নয়।

আরু অরিশের চোখের লিকে তাকিয়ে রইলো অপলক, এই একটা লাইন ওর জীবনের অনেকটা অস্তিত্ব বহন করে, আরুর মুখে হাসি ফুটে উঠলো। আরিশ আরুকে ছেড়ে দিয়ে বাইরে গেল তারপর হাতে করে যখন রুমে ঢুকলো তখন হতে একটা চকলেট এর বক্স আর অনেকগুলো কটন ক্যান্ডি।

আরু অবাক হলো না কারন ও জানতো যে ও আরিশের কাছে চেয়েছে মানে আরিশ তা আনবে।
কটন ক্যান্ডি আরুর হাতে দিয়ে বলল
— ভেবেছিলাম সন্ধ্যায় ফেরার পথে কিনবো কিন্তু অপারেশন শেষ করতে করতে দশটা বেজে গেল, আর জানো তো এতোরাতে দোকান খোলা থাকে না, তাই গুলশানের একটা বাড়িতে আমি ওরকম কটন ক্যান্ডি বানায় শুনেছি, তাদের কাছ থেকে কিনে আনলাম, আর আইসক্রিম টা পার্লার থেকে আনলাম আর তারপর জ্যাম কাটিয়ে ধানমন্ডি চলে এলাম। কটন ক্যান্ডিওয়ালাকে আমার জন্য এই শীতের রাতে ঘুম নষ্ট করে উঠতে হয়েছে তাই ফ্রিতে দুটো কথা শুনিয়ে দিলো। যাই হোক তুমি খেয়েছো ?

আরু কিছু বললো না, হাওয়াইমিঠাই টা বেডের ওপর রেখে গুটিগুটি পায়ে আরিশ এর কাছে গিয়ে আরিশকে জড়িয়ে ধরলো,

— আমার না শীত করছে খুব, আপনাকে একটু জড়িয়ে ধরলাম কিছু মনে করবেন না কিন্তু।

আরিশ হেসে ফেলল, আরুকে জড়িয়ে ধরলো আরিশও। আরু আরিশের বুকে মাথা দিয়ে আরিশের সব ক্লান্তি দূর করার চেষ্টা করছে, মানুষটা ওর জন্য কি না করে! আর দিনশেষে আরিশকে এটুকু ভালোবাসা আরু দিতেই পারে!

আরিশ আরুকে একটু রাগাতে বলল
— একটু আগে কি যেন বেশ একটা বললে, হাউজওয়াইফ! তাইনা!

— হমম তো।

— তা আফা আপনি হাউজওয়াইফের মানে বোঝেন? 🤭

আরু দুষ্টুমি করে বলল

— ফুফাতো ভাইয়ের সাথে যেভাবে রোজ মারামারি আর কিল ঘুষি আর চুল ধরে টানাটানি করে যেভাবে রোজ সংসার করা যায় তাকেই হাউজওয়াইফ বলে!😇

আরিশ আর কিছু বললো না কারন আরুর পক্ষেই সবকিছুর এমন ডেফিনেশন দেওয়া সম্ভব।

#চলবে,,,,