কারণে অকারণে ভালোবাসি02 পর্ব-০৮

0
626

#কারণে_অকারণে_ভালোবাসি02
#সুরাইয়া_আয়াত

8.

রান্না ঘরে রান্না করছেন অনিকা খান আর পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে আরু, খুব মন দিয়ে সবজি কাটা দেখছে কারন ও রান্নাবান্না তেমন একটা জানে না তাই হয়তো দেখে শেখার চেষ্টা করছে, কিন্তু কথায় আছে না যে প্র্যাকটিক্যাল আর থিওরির মাঝে আকাশ পাতাল তফাত আছে, থিওরি আরুর সবই পড়া কিন্তু প্র্যাকটিক্যাল নামক বিষয় গুলোতে আরু বড্ড কাঁচা তা সে ভালোবাসা হোক বা রান্নাবান্না। আরুর রান্নার প্রথম কৌতুহল দেখে অনিকা খান মৌন সুরে প্রশ্ন করে উঠলেন

— তা আজকে হঠাৎ কিচেনে আপনার আগমন! কীভাবে? আরিশ কিছু বলেনি?

আরু অনিকা খানের হাতের দিকে তাকিয়ে আছে, আর কোন এক সুপ্ত কৌতুহলের খাতিরে দাঁত দিয়ে নখ কামড়াচ্ছে কারন কথা বলার সাথে সাথে অনিকা খানের হাতটাও সমান তালে চলছে তা ভেবে আরুর বেশ খানিকটা অবাক লাগছে তা মুখ থেকে হাত নামিয়ে প্রশ্নটা না শোনার ভান করে বলল

— কিছু বললে শাশুড়িআম্মু?

অনিকা খান ধমকের সুরে বললেন

— কতোবার বলেছি না দাঁত দিয়ে নখ কাটবিনা, তাও?

ওনার কথার পরিবর্তে আরু একটা হাসি দিতেই ওনার হৃদয়টাকে গলতে শুরু করলো উনি ধমকের সুরটা পরিবর্তন করে আগের ন্যায় আল্হাদী সুরে বললেন

— তা আজকে যে তুই কিচেনে এসে রান্না বান্না শেখার ধান্দায় আছিস তা কি আরিশ জানে?

আরু ওনার গা ঘেষে খানিকটা সরে এসে দাঁড়িয়ে বলল
— নাহ তো!

আরুর কন্ঠে ভয় ব্যাতিত এমন ভাবলেশহীন কন্ঠ শুনে উনি বলে উঠলেন

— আরিশ দেখলে কি হবে জানিস?

ওনার কথাটা শেষ হওয়ার জো নেই তার আগেই আরু লঙ্কা গুঁড়োর কৌটোটা নাকের কাছে এনে একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে বলল

— ফুপি এটা কি?

উনি তৎক্ষণাৎ সেটা আরুর নাকের কাছ থেকে সরিয়ে আনলেন আর ধমক দিয়ে বললেন

— ওটা লঙ্কার গুঁড়ো, এভাবে কেও নাকের কাছে আনে ওটা? যা তোকে কিছু দেখতে হবে না তুই হাত ধুয়ে এখানে বস না হলে রুমে যা আর আরিশের সাথে গল্প গুজব কর।

আরু মুখ ভাঙচি দিয়ে বলল

— মানুষ তো মানুষের সাথে গল্প করে, উনি কি মানুষ নাকি?

অনিকা খান কৌতূহল নিয়ে বলল

— তাহলে আমার ছেলেটা কি শুনি?

আরু হাত দিয়ে আকৃতি করে বোঝালো

— সে তো একটা রাক্ষস, যার কাজ হলো সারাদিন আরুপাখিকে অত্যাচার করা।

আরু চুপ হয়ে গেল এটা বলে, আর একটা স্পুন নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে বলল

— সুখে থাকতে ভূতের কিছুই তাই মানুষ বিয়ে করে☺

অনিকা খান মুচকি মুচকি হাসছেন কিছু বলছে না, উনি জানেন যে আজকে আরিশের উইকেন্ড তাই আরু এমন অনেক কাজ ই করবে যাতে আরিশ বিরক্ত হয়, কিন্তু আসলেও কি আদতেও বিরক্ত হয় নাকি উপভোগ করে? ( উত্তর দিবেন পাঠক পাঠিকা গন)

— ভাই আপনার কাছে আমি ক্ষমা চাই, সেদিনের কথা আপনি ভুলে যান আর আমাকে রেহায় দেন, আপনি যা ভাবছেন তা আপনার ভুল ধারনা, আপনার প্রথম আমার বিন্দুমাত্র ইন্টারেস্ট নাই।

বেশ বিরক্ত হয়ে সানা আরাভকে কথা গুলো বলে উঠতেই আরাভ বলে উঠলো।

— তাহলে অকারণে সেদিন আমাকে রেস্টুরেন্ট এ ডাকার মানে কি? কিছু তো কারন ছিলো সেদিন যার জন্য তুমি আমাকে ডেকেছিলে।

সানা হাটতে হাটতে জানালার কাছে গিয়ে বলল

— দেখুন ভাইয়া আমি বহুত জনদরদী একটা মহিলা, এত জনদরদী যে আপনার কল্পনার ও বাহিরে, আমার খুব ইচ্ছা হয়েছিলো যে আপনারে খাওয়ানোর তাই অনেক মায়া দয়া দিয়ে আপনারে রেস্টুরেন্ট ডাকছিলাম আর খাইয়েওছিলাম কিন্তু তার পরিবর্তে আপনি কি করলেন? আমি যেই সবার সামনে পড়ে গেলাম তখনই আপনি আমাকে নিয়ে ঠাট্টা করতে লাগলেন, এটা কি কোন ভদ্রতা ?

আরাভ বরাবরের মতোই ভাবলেশহীন কন্ঠে বলল
— বাট বিল টা তো আমিই পে করেছিলাম, আর আপনার ভাবি ও তো পে করে নাই, আর আপনার মতে আমি তো গরিব তাই এখন আমার টাকা ফেরত দেন।

সানার মুখ হা হয়ে গেল, অবাক হয়ে বলল

— লাইক সিরিয়াসলি? খাইসেন তো খাইসেন, অর্ডার আমি করসি বিল আপনি দিয়েছেন তা আর জন্য আবার টাকা চাইছেন? আপনি না ডক্টর? আপনার না অনেক পয়সা?

আরাভ জেদ করেই বলল
— আই নিড মাই মানি ব্যাক।

সানা রেগে গিয়ে বলল
— বিকাশ নাম্বার বলেন।

আরাভ মুচকি হেসে বলল
— দেখা সাক্ষাৎ আর খাবার দাবার ও কি বিকাশে খেয়েছিলেন ম্যাডাম! কাল বিকাল 4.30,বনানী1, আপনার দেখা না পেলে খবর আছে।

কথাটা বলে আরাভ কল কেটে দিলো। সানার চোখেমুখে বিরক্তিভাব আর চিন্তার রেশ, যতখনে ফোনটা ছুঁড়ে ফেলবে যতখনে ফোনে ম্যাসেজের নোটিফিকেশন ও এলো

— কাল যেনো ভাবীকে নিয়ে আসো না আবার, তাকে তোমার ভাইয়ের সাথে প্রেম করতে দাও, তাকে এতো অযথা ডিস্টার্ব করো কেন?

সানা রাগে দুই কিড়কিড় করে বলল

— আরাভের বাচ্চার বাচ্চা!

— আমরা সবাই মিলে যে আজকে দুপুরে বাইরে লাঞ্চ করতে যাবো সেটা আপনি একবার ও বলেননি কেন আমাকে?

বাকা দৃষ্টিতে আরিশের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো আরু, আরুর চোখে চোখ মিলিয়ে বলল

— আফা আপনাকে কেমন চেনা চেনা লাগছে, আপনি কি আমাদের বাসাতে থাকেন? না মানে মনে হচ্ছে দেখেছি, আপনিও কি কোথাও যাচ্ছেন আফা?

আরিশের চোখে দুষ্টুমি ছেয়ে যাচ্ছে। আরু এবার চোখ ছোট ছোট করে আরিশের কাছে গেল আর গিয়ে প্রথমে আরিশ এর দিকে মুচকি হেসে থেমকে রইলো কিছুখন। হঠাৎই আরু দু হাত দিয়ে আরিশের চুলের মুঠি ধরে বলল
— হয় আরিশ ভাই আমি তোর বউ লাগি, আমাকে চিনো না?

আরিশ বুঝতে পারলো আরু রেগে গেছে, আরিশ আরুর হাত ছাড়িয়ে আরুর হাতটা মুঠিবদ্ধ করে আরু কে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে আরুর কাধে মুখ রেখে হাসতে লাগলো ভীষন, আরু রাগে ফোঁসফোঁস করছে, আর এদিকে আরিশ হেসেই চলেছে অনবরত।
আরু হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলল

— ছাড়ুন আমাকে, আমি কোথাও যাবো না, আমি তো আপনাদের কেও না, আপনাদের ফ্যামিলিতে তো শুধু চারজন আমি আর কোথায়?

কথাগুলো বলতে বলতে আরুর উচ্চস্বরে বলা কথাগুলো থমকে থমকে আসছিল হয়তো আরুর চোখ ভিজে আসছে জলে, তা আরিশ অনুভব করতে পারলো, আরিশও ওর হাসি থামিয়ে দিয়ে আরুর কাজেই মুখ রেখে সবটা শুনতে লাগলো।

আরিশের নিরবতাতে আরুর অভিমানের রেশ বাড়লো।
আরু পুনরায় বলতে শুরু করলো

— সকাল থেকে জিজ্ঞাসা করছি যে আমাকে পিকনিকে নেবেন কি না, আপনি খালি কথা পেঁচাচ্ছেন, বললেই হয় আমাকে নিবেন না তাহলে আমি যাওয়ার জন্য জেদ করতাম না তাইনা?

আরিশ আরুর হাতটা ছেড়ে দিলো, আরুর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে শান্ত ভঙ্গিতে প্রশ্ন করলো
— তোমাকে রেখে আমি কখনো কোথাও গেছি?

আরু নিরুত্তর, আরিশ আবার বললো

— কখনো তোমাকে অন্যর হাতে এক মুহূর্তের জন্যও একা ছেড়েছি?

আরু্ চোখ দিয়ে জল গড়াচ্ছে, আরিশ আরু কে কাছে টেনে বুকে জড়িয়ে বলল

— এতোটা অবুঝ কেন তুমি আরুপাখি, জানো না তোমাকে ছাড়া আমি একা কোথাও যায় না, আর যাবোই বা কি করে, আমার বউটা তো আর অন্যদের মতো শান্ত শিষ্ঠ না যে যাকে একা রেখে এক মুহূর্তও চিন্তামুক্ত থাকা যায়। সারাদিন লাফালাফি, দৌড়ঝাপ, ইনক্লুডিং ধপাস ধপাস করে পড়ে যাওয়া। আমি তো ভাবি সেদিন রেস্টুরেন্ট এ তুমি না পড়ে সানা পড়লো কি করে।

আরু অরিশের কথা শুনে ফিক করে হেসে ফেলল আর বলল
— জানেন তো সেদিন না আমারো ভীষন হাসি পেয়েছিলো কিন্তু আমি হাসলে সানা রেগে যাবে তাই হাসিনি।

আরিশ আরুকে ছেড়ে দাঁড়ালো আরু হঠাৎ করে গম্ভীর সুরে বলল

— হাহ! আমি কি আপনাকে বলেছি যে আমাকে একা রেখে কোথাও যাবেন না, বরং আপনি গেলে আমার ভালো লাগে, আহ কি শান্তি করে দিন কাটাই, একা একা রেস্টুরেন্ট চলে যাই, আমি আর সানা কখনো পার্কে তো কখনো ঢাকার রাস্তায় রিকশা চড়ি, লাফালাফি করে নাচতে পারি, শাশুড়িআম্মু কে না বলে মাঝ রাতে বেরিয়ে যেতে পারি। স্বাধীনতা পেয়ে যায় বুঝেছেন? আর আপনি তো সবসময় আরুপাখি এটা করো না, ওটা করো না, ওখানে যেও না, এটা কেও না এমনটা করতে থাকেন।

আরিশ মৃদু ছন্দে হাসলো আর বললো
— একমাস পরে আমার চিটাগাং এ চারমাসের ডিউটি আছে তাহলে ওটা দেখছি ক্যান্সেল করাতে হয়। আর যাই হোক তোমাকে একা ছাড়া যাবেনা।

আরু মুখ ভাঙচি দিলো আরিশের কথা শুনে কারন ও জানে যে আরিশ ওকে ঢাকাতে একা রেখে কখনো কোথাও যাবে না। কিন্তু এবার যে আরিশ কে যেতেই হবে তা আরু জানে না, জানলে হয়তো যেতে দিতো না।

আরিশ ঘড়ি টা পরে বলল
— জলদি নীচে নামো আমি অপেক্ষা করছি।

আরু বলল
— হমম হমম।

আরিশ বার হতে গিয়েও ফিরে এসে ওয়াড্রব থেকে আরুর একটা গোলাপী রঙের টেডি দেওয়া টুপি নিয়ে আরু কে পরিয়ে দিয়ে বলল
— এটা যেন মাথা থেকে না খোলা হয় মনে থাকবে? বাইরে অনেক শীত।

আরু বিরক্ত হয়ে বলল

— আমি পরবো না মি অভদ্র।

আরিশ রুম থেকে বার হতে হতে বলল
— নো মোর ওয়ার্ড!

আরু মুখ ভাঙচি দিলো। আরিশ মজা করে বলল
— টিভির ওই জুন আন্টিকে প্রায় ধরেই ফেলেছো হ্যাঁ!

আরু আরিশের কথা শুনে নিজের গালেই একটা থাপ্পড় মেরে বলল
— আরু আব তো শূধার যাও। আহহ, চড় টা এতো জোরে করলাম কেন? আমারই তো লাগলো!

#চলবে,,,