#কারণে_অকারণে_ভালোবাসি02
#সুরাইয়া_আয়াত
৬.
ঘর জুড়ে কেবল নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে আর তার মাঝে দীর্ঘশ্বাসের ন্যায় বার হয়ে আসছে আরুর ফুপিয়ে কান্নার আওয়াজ। আরিশ আরুর হাতের ওপর মাথা রেখে বড়ো বড়ো শ্বাস নিচ্ছে, আজ অনেক কিছু ঘটছে আর অনেক কিছু বলতেও ইচ্ছা করছে ওর কিন্তু পারছে না।
আরিশের এই মৌনতা ভঙ্গ করতে আরু এবার আরিশের হাতের মুঠোয় থেকে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে কোনরকমে উঠে বসলো। হাতের পাতার উল্টো পিঠে দিয়ে আলতো স্পর্শে চোখটা মুছে নিয়ে নীতি নেমে আরিশের সামনে গিয়ে বসলো। আরিশ মাথা বিছানার সাথে হেলান দিয়ে চুপ করে বসে আছে। আরু আরিশের দিকে শান্ত ভাবে দৃষ্টিপাত করলো, আরিশের কোন ভাব ভঙ্গির পরিবর্তন নেই। হঠাৎ আচমকাই আরু আরিশ কে ওর নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো। আরিশ আরুকে জড়িয়ে ধরে আড়ষ্ট কন্ঠে বলল
— হ্যাপি হাফ ম্যারেজ অ্যানিভার্সারি মাই ওনলি ওয়ান হ্যান্ডসাম আর ওয়ার্ল্ড মোস্ট মি অভদ্র জামাই। না বললেও কিন্তু আমিও কারনে অকারনে ভালোবাসি! ভাবা যাই এই মি অভদ্র কে আমি এমন ভাবে সারা জীবন ধরে জ্বালাচ্ছি।
আরুর কথা শুনে আরিশ হেসে ফেলল। আরুকে জড়িয়ে ধরে আরুর কানে আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়ালো। আরু আরিশের কানের কাছে নিস্প্রভ কন্ঠে বলল
— শুধু আরু পাখির যত্ন নিলে হবে? আর নিজেরটা! নাকি সেটা তার আরু পাখির জন্য?
আরিশ ও বেশ শব্দ করে হেসে বলল
— নাহ আরুপাখি আই এম ফাইন।
কথাটা বলে আরিশ উঠতে গেলেই আরু আরিশের হাতটা ধরলো, আরিশের দিকে শান্ত চাহনিতে তাকিয়ে বলল
— আমাকে বেবি বলেন এদিকে আপনি নিজেই যে এতোটা অবুঝ সেটা কবে বুঝবেন।
আরিশ আরুর হাতটা ধরে আরুকেও তুলে দাঁড় করালো। আরিশ বিছানা থেকে গোলাপটা নিয়ে আরুর কানে গুঁজে দিলো। আরু আরিশের দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। আরিশ আরুকে বিছানার ওপর বসিয়ে দিলো আরুর পাশে থাকা একটা মাঝারী সাইজের বাক্স থেকে একটা ছোট্ট টেডিবেয়ার দেওয়া গোলাপী রঙের জুতো বার করে আরুর পায়ে পরিয়ে দিলো। আরু জুতোদুটো দেখে আনন্দে বলে উঠলো
— উইইইমা টুইটুই!
আরিশ হেসে ফেলল আরুর এমন কথাতে। আরু আরিশ কে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে বলল
— থ্যাংক ইউ মি অভদ্র। এটা তো আমি কিনতে চেয়েছিলাম কিন্তু সময়ের অভাবে কিনতে পারেনি।
হঠাৎ আরিশ আরুকে ওর থেকে একটু দূরে সরিয়ে বলল
— হমম তা তো জানি আর আমার আরুপাখির সব দায়িত্ব পূরন করার দায়িত্ব টা তো আমারই তাইনা?
আর শুধু থ্যাঙ্ক ইউ? আজকের দিনেও কি আমার অন্য কিছু প্রাপ্য নয়?
আরু বুঝতে পারলো যে আরিশ কি বোঝাতে চাইছে কি আরিশের কাছে তো ও হলো ড্রামা কুইন তাই একটু ড্রামা না করলে চলে? তাই আরু না বোঝার ভান করে বলল
— আরকি নেবেন বলুন? আমার কাছে দেওয়ার মতো তো কিছুই নেই। না আমার কোন টাকা আছে আর না অন্য কিছু, আমি তো আপনার টাকা প্লেনের মতো ওড়াই তাই তো নিজের টাকার দরকার হয় না।
আরিশ শান্ত কন্ঠেই বলল
— তোমার এই মাথামোটা বুদ্ধিতে এর বেশি আর কি ই বা আসে বলোতো! সবকিছু তো আমাকেই করে আর বুঝে নিতে হয়। পিচ্চি মেয়েদের বিয়ে করার এটাই প্যারা। যাই হোক, আমার জিনিস আমাকেই বুঝে নিতে হবে না হলে চিরকাল নিরামিষ ই থেকে যেতে হবে আমাকে।
আরু মুচকি হাসলো, আর লজ্জায় মাথা নামিয়ে নিলো।
আরিশ ওর হাতটা আরুর থুতনিতে রাখলো, আরুর মুখটা খানিকটা উঁচু করে আরিশ আরুর কোমরে ধরে কাছে টেনে আনলো, আরু চমকালো না, হৃদস্পন্দন বাড়লো, ঠোঁটটা ঈষৎ কাঁপতে লাগলো, লজ্জায় চোখে চোখ রাখতে পারছে না কিন্তু চোখ নামালেই বিপদটা ওর ই হবে। আরু লম্বা লম্বা শ্বাস ফেলতে লাগলো, আরিশ আরুর দিকে আরও খানিকটা ঝুকে গেল, আরিশ আরুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, আরু এবার হাতটা আরিশের বুকে রাখলো, আরিশ আরুকে নিজেদের মাঝে দূরত্বটা কমালেই আরু আরিশের শার্টটা আঁকড়ে ধরলো, আরিশ নেশালো কন্ঠে বলল
— আর একটু লম্বা হতে তাহলে আমাকে এতোটা কষ্ট করতে হতো না।
আরু লজ্জা পেলো তবে সব অনুভূতিরা তালগোল পাকিয়ে একাকার, অশান্ত মন নিয়ে আর হাসা সম্ভব হলো না কেবল ঘন ঘন নিশ্বাস পড়তে লাগলো। আরিশ এবার আরুর ঠোঁটের কাছে এগিয়ে গিয়ে আরু ঠোঁটে ঠোঁটের স্পর্শ করতেই আরু চোখ খুলে বন্ধ করে নিলো, আরিশ আরুকে আরো খানিকটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আরুর চোখে ভেসে উঠলো প্রথম দিনের কথা, সবাই বলে প্রথম দিনের স্পর্শ নাকি সবচেয়ে স্পেশাল হয় কিন্তু আরুর কাছে সবটাই যেন স্পেশাল মনে হয় কোনটা পুরোনো বা নতুন অনুভূতি না, আজও যেন প্রথম দিনের মতো অনুভূতি, আর কেবল অনুভব করতে করতে কিভাবে আরিশের নেশা তে হারিয়ে গেল আরু নিজেও তা জানে না।
—-
সকাল সকাল নাস্তা করতে বসেছে সবাই, আরিশ ব্রেডে বাটার দিয়ে আরুর প্লেটে রেখে দিলো, সানা খাচ্ছে আর ফোনে টেক্সট করছে। অনিকা খান কিচেন থেকে সব খাবার আনছেন একে একে। আরু খালি গালে হাত দিয়ে বসে আছে আর নিজের প্লেটের দিকে তাকিয়ে চোখ মুখ পাকাচ্ছে তা দেখে আরিশ ধমক দিয়ে বলল
— কি হলো খাও। বসে আছো কেন? এমনও তো না আজকে কলেজ আছে যে তাড়াহুড়ো করে খেতে হবে, তাই এখন নো ড্রামা খাওয়া শুরু করো।
আরু আরিশের দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বাটার লাগানোর চাকু আরিশের দিকে ঈশারা করতে লাগলো কিন্তু আরিশের তাতে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই কারন ও জানে যে ওর বউ কেমন।
হঠাৎ আফজাল খান কিছু বলা শুরু করতে গেলেই আরুর হাত থেকে ছুরি টা পড়ে গেল। আরু পুলিশের হাতে ধরা খাওয়ার মতো অপরাধীদের মতো একটা ভাব নিলো।
আরিশ ব্রেডটা আরুর প্লেটের ওপর রেখে বলল
— বাবা তুমি কিছু বলতে চাইছিলে বোধহয়!
উনি আরুর মুখের দিকে তাকিয়ে নিজের হাসিটাকে সংযত রেখে বললেন
— নাহ মানে বলতে চাইছিলাম যে আমাদের একটা ফ্যামিলি ট্যুর করলে কেমন হতো! ট্যুর ঠিক না, পিকনিক ধরনের।
কথাটা শুনে আরু ছুরীটা তুলে এক্সাইটমেন্টে আফজাল খানের দিকে তা ধরে বলল
— একদম ঠিক বলেছো ফুপা শ্বশুরবাবা সরি শ্বশুরবাবা।
আরিশ আরুর দিকে তাকাতেই আরু শান্ত হয়ে গেল, ছুরি টা ওনার দিকে ধরায় উনিও বেশ খানিকটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন।
আরু চুপচাপ খাচ্ছে। অনিকা খান বলে উঠলেন
— তা একটা ঠিক কথা বলেছো তাছাড়া শীতের মরশুম, গেলে আমাদের পরিবার আর ভাইয়াদের পরিবার মিলে গেলে হয়।
আরু কাচুমাচু মুখ করে বললো
— আচ্ছা আমি কোন পরিবারে?
আরিশ আরুর দিকে তাকিয়ে ধারালো কন্ঠে বলল
— তুমি আউট অফ লিস্ট, তোমার কথা কেও জানতে চেয়েছে?
আরু বিরক্ত হয়ে বলল
— শশুড়িআম্মু তোমার ছেলেকে কিছু বলো।
অনিকা খান আরিশ কে ধমকাতেই আরিশ মুচকি মুচকি হাসলো।
আরিশ সানার দিকে তাকিয়ে সবাইকে উদ্দেশ্যে করে বলল
— পিকনিকে হয়তো আমার ফ্রেন্ড ও থাকবে আমি ওকেও বলে দেবো।
সানা হঠাৎ প্রশ্ন করে উঠলো
— তোর কোন ফ্রেন্ড ভাইয়া?
আরিশ বললো
— তুই চিনবি না, আসলেই দেখবি কে।
আরু চুপচাপ খাচ্ছে আর পিটপিট করে এদিক ওদিকে তাকাচ্ছে কারন ও চিন্তায় আছে যে ও কোন পরিবারের অন্তর্ভুক্ত নাকি আদতেও ওকে লিস্টে রেখেছে কি আরিশ। ইহা একটি গভীর প্রশ্ন!
#চলবে,,,,,