কারনে অকারনে ভালোবাসি02 পর্ব-০৫

0
745

#কারনে_অকারনে_ভালোবাসি02
#সুরাইয়া_আয়াত

৫.

— কি হয়েছে? না বলে চলে এলে যে! আমি কি বলেছিলাম আমার পারমিশান ছাড়া কোথাও যেতে? নাকি পাখির মতো ডানা গজিয়ে গেছে কোনটা?

কিড়কিড় করে প্রশ্ন করে উঠলো আরিশ, আরু চুপ করে পাশ ফিরে শুয়ে আছে কোন কথা বলছে না। আরিশের কথাতে ওর ভাবান্তর হলো বলে মনে হলো না, নাহলে আরিশ রেগে আছে যেনেও কখনো এমন ভাবে নিজেও রাগ দেখানোর সাহস দেখাতো না। আজ ওর রাগের পাল্লাটাও আরিশের রাগের সাথে সমান হয়তোবা তার থেকেও বেশি। আরু গায়ের ব্ল্যাঙ্কেটটা টেনে এবার মাথাটাও ঢেকে নিয়ে মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়তেই আরিশ এবার রেগে গেল আগের তুলনায় বেশি, এক ঝটকাতেই আরুর গা থেকে ব্ল্যাঙ্কেটটা সরিয়ে নিয়ে আরুর হাত ধরে তুলে জোর করে বসিয়ে বলল

— আমার প্রশ্নটা কি তোমার কান অবধি পৌছায়নি যে গুরত্ব দিচ্ছো না।

আরুর চোখ দিয়ে রাগে অভিমান আর ক্ষোভে জল গড়িয়ে পড়তেই আরিশ আরুর হাতের বাধন খানিকটা আলগা করে দিল, আরুকে কাঁদতে দেখে আরিশের পাহাড়সম রাগ মুহূর্তেই গলে সমুদ্রতে পরিনত হতে
লাগলো। আরু কথা না বাড়িয়ে আরিশের হাতটা ঝটকা মেরে ফেলে রুম থেকে দৌড়ে ছুটে পালালো। আরিশ ও আরুর পিছনে যেতে লাগলো কিন্তু ততখনে আরু ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়েছে ওর অভিমানের তালা দিয়ে।
আরিশ আরুর রুমের দরজার সামনে গিয়ে কড়া নাড়লো অর আদেশ করার সুরে বলল

— আরু পাখি দরজা খোলো, কি হয়েছে আমাকে বলো, তারপর আমাকে খুন করতে চাইলে তাও করতে পারো আমি দ্বিধা বোধ করবো না।

আরু দরজা খুললো না এবং পাল্টা কোন জবাব ও দিলো না দেখে আরিশ আবারও দরজা ধাক্কাতেই আরুর মা আফসানা বেগম এলেন,ঘটনার আকস্মিকতাতে কোন কিছু বুঝতে পারলেন না উনি, কৌতুহল মিশ্রিত কন্ঠে জিজ্ঞাসা করলেন

— কি হয়েছে আরিশ দরজা ধাক্কা দিচ্ছো যে, আরু কি দরজা লক করে দিয়েছে?

আরিশ দরজার কাছ থেকে সরে এসে ওনার দিকে এগিয়ে কপালে হাত দিয়ে বললেন

— হমম, কিছু জিজ্ঞাসা করলাম তাও উত্তর দিলো না।

আফসানা বেগম বোধহয় কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছিলেন তাই উনি আরিশ কে ঈশারায় ওনার সঙ্গে সঙ্গে আসতে বললেন। আরিশ অবান্তর কথা বাড়িয়ে বা কোন প্রশ্ন না করে ওনার পিছন পিছন গেলেন। উনি আরুর ঘরে ঢুকেছেন দেখে আরিশ ও আরুর ঘরে ঢুকেছে।

আরিশকে ঘরে ঢুকতে দেখে উনি বলে উঠলেন

— আরিশ বসো এখানে তারপর আমি বলছি আরু কেন রেগে আছে।

আরিশ বিছানায় বসে মাথা নাড়ালো। উনি বললেন

— বিষয়টা নতুন কিছু না আবার পুরোনোও না। আসলে আরু বোধহয় রেগে গেছে তুমি ওর ফোনটা দাও নি বলে, ও নাকি অনেকবার চেয়েছিলো তাও কলেজে যাওয়ার পথে তুমি দাওনি তাছাড়া লাঞ্চ টাইমে ও তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলো কিন্তু তুমি তো আসোনি বাবা তাই ও রাগ করেছে।

আরিশের গলা ভারী হয়ে এলো, বেশ কিছু সেকেন্ড নিস্তব্ধ থেকে বলল

— ডক্টর মিতার কথা তোমাকে কিছু বলেছে আরু?

উনি কিছুটা সময় মনে করার চেষ্টা করে বললেন

— কই না তো তেমন কিছুই তো বলেনি আরু, শুধু তো রাগ করে এখানে চলে এলো, বেশি কিছু জিজ্ঞাসা করলে আমার ওপর রাগ দেখালো ও। তাই আমিও আর কিছু জিজ্ঞাসা করিনি তাছাড়া তোমার মামুও আমাকে বকাঝকা করলো ওকে এতো প্রশ্ন উত্তর করার জন্য। বাপ-মেয়ের ওপর আমার আর কথা বলার সাধ্য কি।

আরিশ চাপা কন্ঠে বলল

— মামী আমি গাড়িতে অপেক্ষা করছি, তুমি আরুকে নীচে আসতে বলো। বাবা আর আম্মু বাড়ি এসেছে কিছুখন আগে, আরুকে দেখতে না পেয়ে ওরা বাড়িতে হইচই শুরু করে দিয়েছে। আমি অপেক্ষা করছি।

কথাটা বলে আরিশ চলে গেল। আফসানা বেগম এখন কি অজুহাতে আরুকে আরিশের গাড়ি অবধি পাঠাবেন তিনি জানেন না তবুও চেষ্টা করতে তো আর দ্বিধা নেই তাই উনি গেস্ট রুমের দিকে গেলেন, আরু গেস্ট রুমে নিজেকে তালা বন্দী করে রেখেছে। উনি দরজার সামনে গিয়ে বললেন

— আরু দরজা খোল, আরিশ চলে গেছে, গাড়িতে অপেক্ষা করছে তোর জন্য।

ভীতর থেকে আরুর কোন উত্তর এলো না, উনি না পেরে আবার বললেন

— তোর ফুপি বাসায় ফিরেছে আর তোকে দেখতে চাইছে। আরিশ তোকে নিতে এসেছে, আয় মা আর রাগ করিস না।

আরু নিরুত্তর কিন্তু দরজার ওপারে কাঙ্খিত কন্ঠ থেকে উত্তর পাওয়ার আশায় রয়েছে আফসানা বেগম তবে কোন উত্তর পেলেন না তিনি তবে দরজার ওপাশে ফোনে কারোর সাথে কথা বলার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছেন উনি,
অপর পাশ থেকে আরু ফিচেল কন্ঠে বলে উঠলো

— সানা ফুপি কি বাসায় ফিরেছে?

সানা উত্তেজিত হয়ে বলল

— তোকে নিয়ে নাকি আম্মু কি বাজে স্বপ্ন দেখেছে কালকে রাতে চাই তো তৎক্ষনাৎ তাড়াহুড়ো করে ফিরে এলো আম্মু আর আব্বু। ওরা বাসায় ফিরেছে চার টের দিকে বাসায় ফিরে আমাদের জন্যই অপেক্ষা করছিলো তারপর যখন দেখলো যে আমি বাসায় ফেরার পর ও তুই বাসায় ফিরিসনি তখন আম্মু চিন্তা শুরু করে দিলো, না পেরে ভাইয়াকে ফোন করলো ৮ টার দিকে আর,,,

বাকি কথা আরু আর শুনলো না হয়তোবা রাগের খাতিরে শোনার প্রয়োজন ও বোধ করলো না, আরু ফোনটা কেটে দিয়ে গায়ে ওড়নাটা টেনে নিয়ে ওর আম্মুকে জড়িয়ে ধরলো আচমকাই।
আরুর মা যতখনে আরুকে আগলে নেবে তার আগেই আরু বলে উঠল

— তোমরা সবাই আমাকে এতো ভালোবাসো কেন বলোতো! তুমি আর আমার শুশুড়ি আম্মুর ( ফুপির) কোন জবাব নেই, এককথায় অসাধারনের থেকেও অসাধারণ যাদেরকে আমি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি।

কথাটা বলে আরু ওনাকে ছেড়ে দিয়ে বেরিয়ে গেল আফসানা বেগমকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে। উনি স্মিত হাসলেন, মেয়ের থেকে এমন প্রশংসা শুনে আবেগে কেঁদে ফেললেন উনি।

আরু বাসা থেকে বেরিয়ে দেখলো আরিশ ড্রাইভিং সিটে এ বসে আছে। আরু গিয়ে পিছনের সিটে বসলো। আরিশ লুকিং গ্লাসের দিক তাকিয়ে আরুর দিকে চেয়ে বলল

— সামনে এসে বসো।

আরুও লুকিং গ্লাসের দিকে আরিশের দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো আর বড়ো বড়ো শ্বাস নিতে লাগলো যা একটু ভালো ভাবে উপলব্ধি করলেই আরিশের কান অবধি সেই শব্দ পৌছাবে। আরিশ বুঝতে পারলো যে আরু রেগে আছে। তাই আর কথা না বাড়িয়ে ড্রাইভ করতে শুরু করে দিলো।
রাস্তার জ্যামের ভীড়ে শরীরের ক্লান্তি গুলোও যেন আরও জেকে বসেছে। আরিশের মাথাটা ভার ভার হয়ে আসছে, হয়তো মাথা ব্যাথা করছে। বেশ কয়েক মিনিট জ্যামে আটকে থাকার পর রাস্তা ফাকা হতেই বেশ স্পিডেই ড্রাইভ করলো আরিশ। মীরপুর থেকে ধানমন্ডি দূরত্বটা কম হোক বা বেশি তবে রাস্তার জ্যামটা লম্বা বেশ। গাড়ি জ্যামে থাকাকালীন আরিশ আরুকে বেশ ক্ষমাপ্রার্থনার সুরে বলেছিলো

— বোধহয় ডক্টর মিতার সাথে তোমার কথা হয়নি। যাই হোক, কথা হলে হয়তো জানতে পারতে যে রিপোর্ট এ কি লেখা আছে। তুমি জানো হয়তো যে মাঝে মাঝে তোমার কিছু টেস্ট আই মিন চেক আপ করাতে হয় আমাকে আর তুমি যদি জিজ্ঞাসা করো যে কেন করি তার হয়তো উত্তর আমি গুছিয়ে কখনোই দিতে পারবো না তোমাকে। আমি লাঞ্চ টাইমে বার হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলাম, ইভেন আমি গিয়েছিলাম কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল আর লাঞ্চ টাইম ও শেষ হয়ে গেছিলো তখন। আমি ঢাকা মেডিকেল থেকে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল এ ট্রান্সফার নিয়েছি আর তার ই সব ব্যাবস্থা করছিলাম তাই আর আসার সময় হয়নি।

আরিশ লুকিং গ্লাসের দিক তাকালো, দেখলো আরুর চোখের কোনা বেয়ে জল গড়াচ্ছে, আরিশের ভীষন রকম ইচ্ছা হলো আরুকে ঝাপটে ধরার কিন্তু সবসময় পরিস্থিতি সমান থাকে না, অতঃপর জ্যাম কাটতেই আরিশ ফাস্ট ড্রাইভ করে বাসায় ফিরে এলো।
বাসায় ফিরতেই আরু হুটপাঠ করে গাড়ি থেকে নেমে বাসার দিক দৌড়ে ছুটলো। আরিশ গাড়ি লক করলো, আরুর এমন পাগলামো দেখে মুচকি হাসলো, ইতিমধ্যে আরিশের চোখ রিতীমতো লাল হয়ে গেছে, হয়তো হালকা জ্বর ও আসছে তবে আচমকা শারীরিক অবস্থার এতো অবনতির কারন একটা ডাক্তার হয়ে নিজেই বুঝতে পারছে না আরিশ, হয়তো এটা ওর কোন মনের অসুখ যা মন থেকে ছেয়ে গেছে ওর শরীরে। মন বিষন্ন থাকলে বুঝি শরীরের আঙ্গগুলোও নিজেদের কে গুটিয়ে নেয়!
আরিশ কি একটা ভেবে গাড়িটা নিয়ে আবার কোথায় বেরিয়ে গেল।

বাসায় ঢুকে আরু ওর ফুপিকে জড়িয়ে ধরলো। অনিকা খান আরুর কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিলেন, খারাপ স্বপ্ন দেখার পর থেকে ওনার মনটা কেমন কু ডাকছিলো তবে তা এখন ঠিক হয়ে গেছে আরুকে সুস্থ থাকতে দেখে।
আরু ওনার বুকে মাথা রেখে ওনাকে জড়িয়ে ধরলেন।
আরুর চোখের কোনা ভেজা ভেজা, কেন তার কারন ও নিজেরও জানা নেই। অনিকা খান আরুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন

— যখন থেকে বাজে স্বপ্ন দেখেছি তখন থেকেই যেন মনের ভিতর কু ডাকছিলো, আমি আর তোর শশুর বাবা আর দেরি না করে চলে এলাম।

আরুও বেশ কাঁদোকাঁদো কন্ঠে বলল

— তোমাকে ছাড়াও আমার অনেক একা একা লাগে শাশুড়ি আম্মু, তুমি এবার থেকে কোথাও গেলে আমাকে নিয়ে যাবে প্লিজ, তোমাকে আমি অনেক মিস করি।

অনিকা গানের চোখেও জল চলে এলো। সানা এসে বলল

— আম্মু ভাইয়াকে দেখলে?

আরু অনিকা খানের পাশ থেকে সরে এসে চোখটা মুছে সোফায় বসলো।
উনি চিন্তিত হয়ে বললেন

— কই আরিশ কে তো বাসাতে ঢুকতে দেখলাম না।
আরুর দিকে তাকিয়ে বললেন

— আরিশ কই গেল রে আরু মা!

আরু মাথা নীচু করে রেখেই বলল

— জানিনা। ফুপি আমার খুব ঘুম পাচ্ছে আমি ঘুমাবো তোমার সাথে। আমি রুমে যাই?

অনিকা খান আর সানা পরস্পরের দিকে তাকালেন বুঝলেন যে নিশ্চয়ই কিছু হয়েছে। তবে আরুকে এখন কিছু না জিজ্ঞাসা করাই ভালো তাই উনি বললেন

— আচ্ছা যা। আর তোর শ্বশুর বাবাকে বল গেস্ট রুমে যেতে।

আরু উত্তর দিলো না, সিড়ি বেয়ে উঠে গেল।

আরু যেতেই অনিকা খান ঈশারায় সানাকে ডেকে বললেন

— কি হয়েছে রে? ওদের কি আবার ঝামেলা হয়েছে!

সানা ও ফিসফিসিয়ে বলল

— দুজনেই তো সারা দিন ফাইট করে কিন্তু এবার মনে হচ্ছে সিরিয়াস ঝগড়া। দেখতে হচ্ছে ব্যাপারটা কি।

অনিকা খান মুচকি হেসে বললেন

— চিন্তা নেই আরিশ সামলে নেবে, আমার ছেলে কি কম যায় নাকি।

কথাটা বলে ওনারা দুজনেই হেসে ফেলল।

রাত প্রায় ১১.৪৫ বাজতে চলল, আরিশ বাসায় ফিরেছে। কালকে ওদের বিয়ের ৬ মাস পূর্ন হবে তাই আরুর জন্য কিছু কিনতে গিয়েছিল আরিশ। হালকা জ্বর টা ক্ষনে ক্ষনে বাড়ছে, আরিশ রুমে ঢুকে দেখলো আরু রুমে নেই। আরিশ গিফটটা রেখে একটা দীর্ঘশ্বাস নিলো। হাতঘড়ির সময় বলছে রাত ১১.৪৮।

ল্যাম্পের হ্যান্ড সুইচ বারবার চেপে লাইটটা একবার অন আর একবার অফ করছে আরু, ঘুম আসছে না ওর। আরিশের ওপর যতোই রাগ করুক না কেন কিন্তু আরু এখনো অপেক্ষায় আছে যে আরিশ ওকে নিয়ে রুমে চলে যাবে কিন্তু কই আরিশ তো এখনো আসছে না। আরু মনে মনে ভাবছে,

— আপনার ওপর রাগ দেখিয়েছি বলে আপনিও কি আমার ধৈর্য্যের পরীক্ষা নিচ্ছেন! বেশ! আমিও ততখন ঘুমাবো না যতখন আপনি আসছেন।

কথাটা বলে আরু চোখ বন্ধ করলো, চোখের কোনের নোনা জল গড়িয়ে পড়লো। ১১.৫৩ হবে হয়তো, দরজা খোলার প্যাচ প্যাচ আওয়াজ শুনে আরু নিজেকে একটু স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে এবার ঘুমানোর ভান করলো।

অন্ধকারের মধ্যেও আরিশের চিনতে অসুবিধা হলো না যে কোনটা তার আরু পাখি। আরিশ আরুর সামনে গিয়ে হাটু ভাজ করে আরুর সামনে বসে আরুর হাতটা নিজের মুঠিবদ্ধ করে নিয়ে হাতে চুমু দিয়ে ফিকে কন্ঠে বলল
— সরি আরুপাখি আসতে একটু লেট হয়ে গেল।

আরিশের জ্বর এ থাকা উষ্ণ হাতটা আরুর শীতল হাতের সংস্পর্শে আসতেই আরু হালকা কেপে উঠলো।
আরিশ আরুর গা থেকে ব্ল্যাঙ্কেটটা সরিয়ে আরুকে পাঁজকোল করে কোলে নিলো যেন আরু একটা সদ্যোজাত শিশু।

আরিশ আরুকে নিয়ে বেরিয়ে যেতেই অনিকা খান শোয়া অবস্থা থেকে উঠে বসলেন আর হাসতে ফিসফিসিয়ে বললেন

— আমি তো জানতাম যে আমার ছেলেটা তার আরুপাখিকে ছেড়ে একটা রাত ও থাকতে পারবে না, আরু ঘুমায়নি আমি জানি আমিও আরুমার সাথে অপেক্ষা করছিলাম তোর আসার, না আসলে ঘরছাড়া করতাম তোকে হু, আমার মেয়েটাকে কষ্ট দেওয়া হু!

কথাটা বলে উনি মুচকি হেসে শুয়ে পড়লেন।

ঘরে এনে আরিশ আরুকে বিছানায় শুইয়ে দিলো, ঘরটা অন্ধকার তবে ছোটো একটা ডিমলাইটে হালকা আভা ছড়িয়ে পড়ছে। আরিশ আরুকে শুইয়ে দিয়ে আরুর দুটো হাত আঁকড়ে ধরলো

— আমি জানি তুমি ঘুমাওনি, জেগে আছো।

আরু কোন সাড়া শব্দ দিলো না তবে নিজের কান্নাটাকে অনেক কষ্টে আটকে রেখেছে।

আরিশ কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল

— রাগ করেছো? কষ্ট পেয়েছো ভীষন? আমার বিহেভিয়ার এ!?

আরু নিজেকে শক্ত রাখলো, যে কোন সময় কেঁদে দেবে।
হঠাৎ দুজনেরই নিস্তব্ধতা ভেঙে ঘড়ির কাটার টংটং আওয়াজ হলো, বারোটা বাজে। আরিশ আরুর ফ্লোরে হাটু ভাজ করে বসে আছে আর আরুর হাতটা শক্ত করে ধরে রেখে হাতের ওপর মাথা রেখে বলল

— আমার ছোট্ট পুতুল বউটা আজ আমার কাছে ছয় মাস ধরে আমার নিজস্ব অধিকার হয়ে রয়েছে,ভাবা যায়! হ্যাপি হাফ বিবাহবার্ষিকী আরুপাখি। না বললেও কিন্তু আমি কারনে অকারনে ভালোবাসি।

আরিশের কথাটা শোনা মাত্রই আরু আর নিজেকে সামলাতে পারলো না, বেশ সশব্দে ফুঁপিয়ে কেঁদে ফেললো।

কারণে অকারণেও যে ওরা দুজন দুজনকে ভালোবাসে!

#চলবে,,,