গোধূলিতে তুমিই প্রিয় পর্ব-১১

0
431

#গোধূলিতে_তুমিই_প্রিয়
#পর্ব_১১
#লেখিকা_রুবাইতা_রিয়া

লাবিবা নিজে খাবার খাচ্ছে আর ইথানকে খায়িয়ে দিচ্ছে।মুখে ভাত নেয়ার সময় ইথান ইচ্ছা করে জোরে একটা কামড় বসিয়ে দিলো লাবিবার হাতে।হাতে ব্যাথা পেয়ে লাবিবা রাগী চোখে ইথানের দিকে তাকালো আর ইথান ডেভিল হাসি দিয়ে বলে উঠলো,,

ইথান—-তোমার হাতটা না অনেক সফ্ট জানো লাবুপাখি।হাতটাই যদি এতো নরম হয় তাহলে না জানি ওই লাল টমেটোর মতন গালটা কতটা সফ্ট হবে।মন তো চাচ্ছে ভাতের বদলে ওইটা খেয়ে ফেলি।

ইথান এমন লাগাম ছাড়া কথা শুনে লাবিবার চোখ দুটো কোটর থেকে বেড়িয়ে আসার উপক্রম।রাগী চোখে সে ইথানের দিকে তাকিয়ে ঝাঁঝালো গলায় বলে উঠলো,

লাবিবা—-আপনি তো বেশ লুচু।বের হন বলছি এখান থেকে।আর খাওয়া লাগবে না আপনার।নিচে গিয়ে খানতো যান।

লাবিবার কথা শেষ হতেই ইথান কিছু বলতে যাবে তার আগে ওর ফোনটা বেজে উঠলো।ইথান কিছুটা বিরক্তি নিয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে রইলো।ডাক্তার সাহিলের নাম্বার উঠে আছে।লাবিবার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,,

ইথান—-আমি একটু আসছি।আমার কাজ আছে।

কেনো জানি ইথানের এমন কথা মোটেও পছন্দ হলো না তার।ইথান আর ওখানে না থেকে নিজের রুমে চলে আসলো।অন্যদিকে লাবিবা গাল ফুলিয়ে বসে রইলো।কেনো জানি ইথানের ফোনে কথা বলা মোটেও পছন্দ না তার।ফোনে এতো কি কথা কে জানে?

ইথান রুমে এসে দরজাটা লক করে দিলো।তারপর ফোনে ডক্টর সাহিলের সাথে কিছু একটা নিয়ে কথা বললো যেটা শুধু তাদের দুজনের মাঝেই গোপন থাকলো।কথা বলে ফোনটা কেটে দিয়ে সে রেডি হয়ে নিলো বের হওয়ার জন্য।

রুমের বাহিরে আসতেই বাড়ির সকলে চেপে ধরলো ইথানকে।সবার একটাই কথা কালকে ফারিহা আর ইহানের রিসিপশন তাই আজকে বাহিরে যাওয়া যাবে না।বিশেষ করে ইহান বেশি যেতে দিতে চাচ্ছে না তাকে।ইথান সবাইকে কোনোভাবে বুঝ দিয়ে হস্পিটালের বাহানা দিয়ে চলে আসলো।

অন্যদিকে ইথান রুম থেকে বেরুতেই লাবিবা কোনোভাবে বাকি খাবারটা কমপ্লিট করে ঘুমিয়ে পরলো।আসলে তার শরীরটা বড্ড দূর্বল লাগছে আজকাল কেনো জানি।তাইতো একটু শুলেই ঘুমিয়ে পরে।

লাবিবা ঘুমোতেই কেউ তার রুমে করিডর দিয়ে প্রবেশ করে।ঘুমন্ত লাবিবার দিকে এগিয়ে গিয়ে ওর বিছানার পাশে বসে সয়তানি হাসি দিয়ে বলে উঠলো সে,,

—-বাহ লাবু বেবি তোমাকে ঘুমালে তো আসলেই কিউট লাগে অনেক।ওই ইথান তোমার এই কিউটনেসের প্রেমে পরছিলো নাকি হুম?অবশ্য সে তোমার প্রেমে পরছে এটাই যথেষ্ট আমার কাছে।এখন আমি তোমাকে আকাশে পাঠিয়ে দিয়ে ওকে অনেক কষ্ট দিবো।সারা জীবনের জন্য ওর জীবনটাকে কষ্টে ভরিয়ে দিবো।

কিছুক্ষণ লাবিবার নিশ্পাপ মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে সে চোখটাকে ফিরিয়ে নিলো।তার লাবিবার প্রতি মায়া হচ্ছে ঠিকই কিন্তু এই মায়ার থেকেও তার যে ইথানের প্রতি ঘৃনার পরিমানটা আরো অনেক গুন বেশি।তাইতো ইথানকে কষ্ট দেয়ার জন্য সে একটা নিশ্পাপ প্রাণকে মারতেও দু বার ভাবছেও না।

লোকটা তার ব্যাগ থেকে একটা ব্লাডের ইনজেকশন বের করলো।ইনজেকশনটা হাতে নিয়ে সে লাবিবার হাতে পুশ করে দিলো।ইনজেকশন প্রথমে লাবিবার হাতে ফুটানো হলে একটু নড়ে উঠে সে।কিন্তু সে এতোটাই ক্লান্ত যে চোখ মেলে বিষয়টা না দেখে আবারো ঘুমিয়ে যায়।আর অন্যদিকে সেই অচেনা ব্যাক্তিটি পুরো ব্লাডটা ওর শরীরে পুশ করে দিয়ে একটা সয়তানি হাসি দেয়।সে জানে এই ব্লাডটাই লাবিবাকে শেষ করার জন্য যথেষ্ট।একটা বিশ্বজয়ের
হাসি দিয়ে সেখান থেকে সে চলে যায়।

অন্যদিকে ইথান ড্রাইব করে ডক্টর রিমানের হস্পিটালে চলে আসে।গাড়ি পার্ক করে ডক্টর রিমানের চেম্বারে কোনোরকম নক না করেই ঢুকে পরে।হুট করে ইথানকে এভাবে আসতে দেখে বেশ চমকে উঠে ডক্টর রিমান।ইথানের দিকে তাকিয়ে জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বলে উঠে সে,,

ডক্টর রিমান—-তুমি এখানে এখন কি করছো ইথান বাবা?কোনো সমস্যা হয়েছে কি?

ডক্টর রিমানের কথায় ইথান তাচ্ছিল্যের সুরে বলে উঠলো,,

ইথান—-সমস্যা তো মনে হয় আপনার হয়েছে আঙ্কেল।এইজন্য আমার রিপোর্ট নিয়ে এতো ঘুরপাক করছেন আর সেটা ভুল ও বানিয়েছেন।

ইথানের কথায় এবার সে ঘামতে শুরু করে।ইথানের দিকে তাকাতেই ভয়ে তার কলিজার পানি শুকিয়ে যায়।কারন ইথানের চোখ প্রচুর আকারে লাল হয়ে আছে।ভয়ে ভয়ে বলে উঠে সে,,

ডক্টর রিমান—-এইগুলো জি বলছো তুমি ইথান বাবা?তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে।

ইথান এবার রেগে বলে উঠে,,

ইথান—-ভুল আমার না আপনার হচ্ছে রিমান আঙ্কেল।কেনো এমন করলেন আপনি?ইচ্ছা করে কেনো আমার রিপোর্ট ভুল বানালেন আপনি?আমি জানি আপনি এটা ইচ্ছা করেই করেছেন আর সেটা আমার বিয়ের দিনই পাঠিয়েছেন যাতে আমার আর লাবিবার বিয়েটা ভেঙে যায় আর সবাই কষ্ট পায়।কিন্তু কেনো এমন করলেন আঙ্কেল?আপনি তো আমার বাবার কাছের বন্ধু।আমাকে আর লাবিবাকে কত ভালোবাসেন তাও এমন একটা জঘন্য কাজ কেনো করলেন?আমাদের বিশ্বাস নিয়ে খেললেন এভাবে??

ইথানের এমন কথায় ডক্টর রিমান নিজেকে মনে মনে অপরাধী ভাবতে লাগলো।সত্যি সে ইচ্ছা করে রিপোর্টটা ভুল বানিয়েছে আর সেইটা ইথানের বিয়ের দিনই পাঠিয়েছে যাতে বিয়েটা ভেঙে যায়।ইথানের দিকে তাকিয়ে কান্না ভেজা কণ্ঠে বলে উঠলো সে,,

ডক্টর রিমান—-আমি এমনটা বাধ্য হয়ে করেছি ইথান।না চাইতেও আমাকে তোমাদের বিশ্বাস নিয়ে খেলতে হয়েছে।কিন্তু আমার কাছে এছাড়া আর কোনো উপায় ছিলো না আর।

ডক্টর রিমানের কথা শুনে ইথান অবাক সূরে বলে উঠলো,,

ইথান—-উপায় ছিলো না মানে?কে আপনাকে বাধ্য করেছে আর আপনি কেনোই বা তার কথা শুনলেন?

ইথানের কথায় এবার ডক্টর রিমান একে একে বলতে শুরু করলো,,

ডক্টর রিমান—-তুমি যেইদিন আমার মেয়ের ডেলিভারির জন্য রক্ত দিয়েছিলে সেদিনই কেউ আমাদের ছোট্ট আভিদকে কিডনাপ করে ইথান।আর যে কিডনাপ করে সেই আনাকে বলে আমি জানো তোমার মিথ্যা রিপোর্ট বানায় আর সেটা তোমার বিয়ের দিনই তোমাকে দি নাহলে সে আভিদকে মেরে ফেলবে।

(একটা ছোট্ট কথা, আভিদ হচ্ছে ডক্টর রিমানের নাতী)

ডক্টর রিমানের কথা শুনে ইথানের মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো।এইগুলে তাহলে কেউ ইচ্ছা করেই করেছে যাতে ওকে আর লাবিবাকে আলাদা করতে পারে।কিন্তু কেনো?ওর সাথে তো কারোরই শত্রুতা নেই যে এতো জঘন্য একটা কাজ করবে।

ইথানের চিন্তার মাঝেই ডক্টর রিমান বলে উঠলো,,

ডক্টর রিমান—-দেখো ইথান আমি জানি না সেই ব্যাক্তি কে।তবে এটা বুঝতে পেরেছি সে তোমাকে খুব ঘৃণা করে আর তোমাকে কষ্ট দিতে চাই।আর সে এটাও খুব ভালো করে জানে যে লাবিবাকে তোমার থেকে আলাদা করলেই তুমি সবথেকে বেশি কষ্ট পাবে।তাই সে তোমাকে আর লাবিবাকে আলাদা করতে চাইবে সবসময়।তুমি লাবিবাকে যতটা পারো নিজের কাছে আগলে রাখবে নাহলে ওকে হারিয়ে ফেলতে হবে।আমি জানি আমি তোমাদের সাথে খুব বড় অন্যায় করেছি কিন্তু একটা বাচ্চার প্রাণ বাচানোর জন্য আমি এমনটা করতে বাধ্য হয়েছি,,,,,

#চলবে?