গোধূলীতে তুমি প্রিয় পর্ব-১২

0
438

#গোধূলীতে_তুমি_প্রিয়
#পর্ব_১২
#লেখিকা_রুবাইতা_রিয়া

ডক্টর রিমানের কথা শুনে ইথানের ব্রেন জানো কাজ করতে বন্ধ করে দিলো।সব জানো ওর মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।ইথান ভেবেছিলো ডাক্তার রিমানই সবকিছুর মূল।কিন্তু এখানে এসে জানতে পারলো ডাক্তার রিমানকে এগুলো করার জন্য বাধ্য করা হয়েছে।ইথান ডাক্তার রিমানকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,,

ইথান—-আপনি চিন্তা করবেন না আঙ্কেল।যেই এই জঘন্য কাজটা করে থাকুক না কেনো তাকে এর যোগ্য শাস্তি দিবো আমি।আর আভিদকেও সুস্হ ভাবে ফেরত নিয়ে আসবো ওই সয়তানটার কাজ থেকে।কিন্তু আমি ভাবছি কে আমার সাথে এমনটা করবে?আমি তো কারোর কোনো ক্ষতি করিনি!

ইথানের কথা শুনে ডাক্তার রিমান চুপ করে রইলো।সেও বুজতে পারছে না যে আসলে কে এমন করছে।

ইথান ডাক্তার রিমানকে বলে উঠলো,,

ইথান—-আঙ্কেল আমি এখন আসছি।আমার একটু কাজ আছে।ডাক্তার রিমানকে আর কিছু বলতে না দিয়ে সেখান থেকে চলে আসলো ইথান।

গাড়ি ড্রাইভ করে বাড়ি চলে আসলো সে।ইথানকে বাড়িতে ঢুকতে দেখে ইহান ভ্রু কুচকে রইলো।ইথান কারোর সাথে কোনো কথা না বলে সোজা লাবিবার রুমে চলে গেলো।লাবিবা এখনো গভীর ঘুমে বিভোর।

ইথান লাবিবার বেডের পাশে গিয়ে বসে ওর ঘুমন্ত চেহারাটা দেখতে রইলো।তার কেনো জানি মনে হচ্ছে যে কোনো খারাপ কিছু ঘটতে চলেছে।এমন মনে হচ্ছে যে সে তার লাবুপাখিকে হারিয়ে ফেলবে।লাবিবার মুখের উপর থাকা চুলগুলো হাত দিয়ে সড়িয়ে দিয়ে ওর কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একে দিলো।তারপর আস্তে আস্তে লাবিবাকে ডাকতে রইলো,,

ইথান—-এই লাবুপাখি উঠো প্লিজ।তোমাকে নিয়ে আজকে শপিং করতে যাবো ফারিহা আর ইহানের রিসিপশনের জন্য।তোমার ফেভেরিট চকলেট ফ্লেভারের আইসক্রিম ও খাওয়াবো।উঠো তাতারি।

ঘুমের মধ্যে চকলেট আইসক্রিমের কথা শুনে লাফ দিয়ে উঠলো লাবিবা।চোখটা কচলে নিয়ে ইথানের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলে উঠলো,,

লাবিবা—-আপনি আমাকে সত্যি চকলেট আইসক্রিম কিনে দিবেন?আপনার শরীর ঠিক আছে তো?

লাবিবার এমন কাজে ইথান হালকা হাসলো।তারপর শান্ত কণ্ঠে বলে উঠলো,,

ইথান—-আমি ঠিক আছি।এখন বেশি পকপক না করে রেডি হয়ে নে যা।শপিং করতে যাবো।

ইথানের কথা শুনে লাবিবা নাচতে নাচতে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।লাবিবার নাচ দেখে ইথান হাসতে রইলো।ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে এসে তাতারি করে রেডি হয়ে নিচে চলে আসলো লাবিবা।ইথানকে সোফার উপর বসে ফোন চালাতে দেখে ওর সামনে গিয়ে দাড়িয়ে বলে উঠলো,,

লাবিবা—-আমি রেডি ইথান ভাইয়া তাতারি চলো।

ইথান একনজর লাবিবার দিকে তাকিয়ে সোফা থেকে উঠে ওর হাতটা ধরে বাহিরে চলে আসলো।বাড়িতে আগেই বলে রেখেছিলো সে তাই কেউ কিছু জিজ্ঞেস ও করেনি।

ইথান গাড়ি ড্রাইভ করছে আর লাবিবা পাশের সিটে বসে আছে।লাবিবার দৃষ্টি বাহিরের দিকে।গাড়ির জানালা দিয়ে সে শেষ বিকালের প্রকৃতি দেখতে ব্যাস্ত।সন্ধ্যার ঠিক আগ মুহূর্ত।সূর্য পশ্চিমে ঢলে পরেছে।আকাশ লাল বর্ণ ধারন করেছে।গোধূলী লগ্নের এই সৌন্দর্য দেখতে ভালোয় লাগছে লাবিবার।ইথান গাড়ি ড্রাইভ করছে আর থেকে থেকে লাবিবাকে দেখছে।

আধা ঘন্টার মতন ড্রাইভ করে চলে আসলো তারা শপিং মলে।গাড়ি পার্ক করে রেখে লাবিবার হাতটা ধরে নিয়ে শপিং মলের ভিতরে ঢুকলো ইথান।

সেই ১ঘন্টা যাবত লাবিবা একটার পর একটা লাহেঙ্গা দেখেই যাচ্ছে কিন্তু একটাও পছন্দ হচ্ছে না তার।শেষে কোনো উপায় না পেয়ে ইথান নিজেই ব্লু আর পিংক কালারের দুইটা লাহেঙ্গা চুজ করলো লাবিবার জন্য।লাবিবাও খুশি হয়ে সেটাই নিয়ে নিলো।ইথান সস্তির একটা নিশ্বাস ফেলে বিরবির করে বলে উঠলো,,

ইথান—-এইজন্যই মেয়েদের নিয়ে শপিং করতে আসতে হয় না।চয়েজ করতেই সারাদিন লাগিয়ে দিবে।

ইথানকে বিরবির করতে দেখে লাবিবা ভ্রু কুচকে বলে উঠলো,,

লাবিবা—-কি বিরবির করছেন আপনি??

হঠাৎ লাবিবার এমন কথায় থতমত খেয়ে যায় ইথান।নিজেকে সামলে নিয়ে বলে উঠে,,

ইথান—-কই কিছু না তো।আচ্ছা ভাই আপনি প্রাইজটা রেখে দিন।

শপিং করতে করতে বেশ রাত হয়ে গেলো তাদের।ফলে ইথান ভাবলো আইসক্রিম খাবে না এখন আর।এমনিই অনেক রাত হয়ে গেছে।কিন্তু লাবিবা তো নাছোড়বান্দা।সে আইসক্রিম না খেয়ে কিছুতেই যাবে না।অবশেষে আর কোনো উপায় না পেয়ে ইথান লাবিবাকে নিয়ে একটা আইসক্রিম পার্লারে ঢুকে দুইটা চকলেট ফ্লেভারের আইসক্রিম অর্ডার করলো।

লাবিবা তো আইসক্রিম পেয়ে মহা খুশি।ইথানের দিকে একবার তাকিয়ে একটা তৃপ্তির হাসি দিয়ে আইসক্রিম খেতে শুরু করলো।বাচ্চাদের মতন সাড়া মুখে লাগিয়ে আইসক্রিম খাচ্ছে লাবিবা।ইথান টেবিলের অপর পাশের চেয়ারে বসে বসে লাবিবার আইসক্রিম খাওয়া দেখছে।এমন অবস্থায় লাবিবাকে দেখতে বেশ কিউট লাগছে তার কাছে।মন চাচ্ছে এভাবেই সে তার প্রিয়তমাকে দেখে সারারাত পার করে দিবে।

লাবিবার মুখে লেগে থাকা আইসক্রিমগুলো আলতো করে টিসু দিয়ে মুছে দেয় সে।আইসক্রিম খাওয়া শেষ হলে পেমেন্ট করে সেখান থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরে তারা।

লাবিবা আজকে খুব খুশি।এই প্রথম ইথানের সাথে সে এতোটা টাইম স্পেন্ড করলো।নাহলে ইথান যা বিজি থাকে।তারঅপর আইসক্রিম তো একটুও খেতে দেয় না সে।আজকের গোধূলী সন্ধ্যাটা তার কাছে সবথেকে বেস্ট টাইম।তার প্রিয় মানুষটার সাথে কাটানো এই মুহূর্তগুলো কখনো ভুলবে না সে।লাবিবা মুচকি মুচকি হাসছে তা দেখে ইথান বললো,,

ইথান—-অনেক খুশি নাকি?

লাবিবা—-হুম।

ইথান—-তা এই অধম কি খুশির কারনটা জানতে পারে?

লাবিবা—-হুম।আপনার মতন কিপ্টার টাকায় আইসক্রিম+শপিং করতে পেরে অনেক খুশি লাগতেছে।

বলেই হোহো করে হাসতে রইলো লাবিবা।এইদিকে ইথান জানো স্তব্দ হয়ে গেছে লাবিবার এমন কথায়।সাড়া রাস্তা দুজনে মজা করতে করতে বাড়িতে চলে আসলো।প্রচুর আকাড়ে শপিং করাই দুজনেই টায়ার্ড অনেক।তাই যে যার রুমে চলে গেলো।

ফারিহা ইথান আর লাবিবাকে একসাথে খুশি থাকতে দেখে নিজেও অনেক খুশি হলো।মনে মনে ভাবলো সব ঠিক হয়ে গেছে।অন্যদিকে ইথান আর লাবিবাকে একসাথে দেখে কারোর খুব রাগ হচ্ছে।ইথানকে খুশিতে দেখতে তার গা জানো জ্বলতে লাগলো।

লাবিবা রুমে এসে শপিং ব্যাগগুলো বিছানার উপর রেখেই গা এলিয়ে দিলো।হুট করেই তার শরীরটা খুব দূর্বল লাগছে।মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করছে তার।গলা বেয়ে কিছু বেড়িয়ে আসবে এমন মনে হচ্ছে।মনে মনে ভাবলো আইসক্রিম হয়তো বেশিই খেয়ে ফেলছে।চোখে মুখে পানি দিবে ভেবে ওয়াশরুমে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বিছানা থেকে উঠে বসতেই তার মাথার মধ্যে চক্কর দিয়ে উঠলো।নাক আর গলা দুটো দিয়েই এবার একসাথে গলগল করে রক্ত বেরোতে শুরু করলো,,

#চলবে??