গোধূলীতে তুমি প্রিয় পর্ব-১০

0
462

#গোধূলীতে_তুমি_প্রিয়
#পর্ব_১০
#লেখিকা_রুবাইতা_রিয়া

লাবিবা রুমের দরজা বন্ধ করে রেখেছে।খুব কষ্ট হচ্ছে তার।নিজের প্রিয়জনের থেকে এতোবড় ধাক্কাটা সে নিতে পারছেনা।অন্তত ইথান তো তাকে বলতে পারতো সবটা।তার প্রতি একটুও ভরসা করতে পারলো না ইথান।লাবিবা একরাশ অভিমান নিয়ে নিশব্দে চোখের অশ্রু বিসর্জন দিতে লাগলো।

ইথান দরজার কাছে এসে ধাক্কা দিতে লাগলো আর লাবিবাকে ডাকতে লাগলো।মায়াভরা কণ্ঠে বলে উঠলো,,

ইথান—-এই জান দরজাটা খোলো প্লিজ।আমি জানি তুমি আমার উপর খুব অভিমান করেছো।কিন্তু এই অধমকে কি একটিবার তোমার অভিমান ভাঙানোর সুযোগ দেওয়া যায় না?

ইথানের এমন মায়াভরা কণ্ঠ শুনে লাবিবার বুকের মধ্যে একটা শিহরণ বয়ে গেলো।ইথানের এমন কথার প্রতি যে লাবিবা বরাবরই দূর্বল।না চায়তেও শত অভিমান নিয়ে সে দরজাটা খুলে দিলো।দরজা খোলার সাথে সাথেই ইথান ঝটপট করে রুমের মধ্যে দু প্লেট খাবার নিয়ে ঢুকে পরলো।ইথানের এমন কাজে লাবিবা ভ্রু কুচকে তার দিকে তাকিয়ে রইলো।ইথান লাবিবার দিকে তাকিয়ে একটা মেকি হাসি দিয়ে বলে উঠলো,

ইথান—-তুমি যদি আবার দরজাটা বন্ধ করে দিতে তাই এইভাবে তাতারি ঢুকে পরলাম।আসলে মেয়েদের মনতো সেকেন্ডে সেকেন্ডে পাল্টি খায় তাই আরকি ভরসা নাই।ডোন্ট মাইন্ড বেবি।

ইথানের কথা শুনে লাবিবা চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে রইলো।এইভাবে হুটহাট জান,বেবি ডাকগুলো জানো তার ঠিক হজম হচ্ছে না।লাবিবাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইথান দাঁত কেলিয়ে বলে উঠলো,

ইথান—-আই নো আমি অনেক হেন্ডসাম।কলেজের সব মেয়েরা আমার জন্য পাগল😎।বাট তাই বলে এইভাবে আমাকে চোখ দিয়ে গিলে খাওয়া কিন্তু একদম ঠিক না সুইটহার্ট।কিছু জিনিস তো বাকি রাখো বিয়ের পর দেখার জন্য🙈।

ইথানের কথায় লাবিবার মনে হলো এখন সে হার্ট অ্যাটাক করবে।মাথার মধ্যে চক্কর দিতে লাগলো তার।এখন আবার সুইটহার্ট ও বলতেছে🥴।লাবিবা বিছানার পাশে টি টেবিলের উপর থাকা এক গ্লাস পানি ঢকঢক করে খেয়ে নিলো।লাবিবার এমন কাজে ইথান মুখ টিপে হাসতে রইলো।কিছুক্ষণ পর নিজেকে সামলে নিয়ে লাবিবা ইথানের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকালো।বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলো,,

লাবিবা—-কি চায় এখানে?যা বলার তাতারি বলুন।আমার এতো সময় নেই আপনার ওইসব নেকা মার্কা বেবি,সুইটহার্ট শোনার।

লাবিবার কথা শুনে ইথান এবার একটু সিরিয়াস ভাব করলো।তারপর লাবিবার কাছে এসে ওর সামনে বাচ্চাদের মতন ফেস করে ঠোঁট উল্টে বলে উঠলো,,

ইথান—-খাবারগুলো খেয়ে নেও প্লিজ আমার লাবুপাখি,সোনাপাখিটা,সুইটহার্ট,মিষ্টি বেবিটা,জানপাখি,,

আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই লাবিবা কানে হাত দিয়ে জোড়ে বলে উঠলো,,

লাবিবা—–হয়েছে হয়েছে আর ঢং করতে হবে না।আমার এবার বমি পাচ্ছে আপনার এমন আবাল মার্কা কথা শুনে🤢।চুপ করুন প্লিজ।আমি খেয়ে নিচ্ছি।খাবারটা দিন।

লাবিবা জানে যে ইথান নিজের কার্যসিদ্ধি না হওয়া পর্যন্ত যাবে না তাই কথা না বাড়িয়ে খাবার খেতে রাজি হয়ে গেলো।লাবিবার এমন কথায় ইথান কাদো কাদো ফেস করে বলে উঠলো,,

ইথান—-তুমি এইভাবে আমার ভালোবাসাকে ঢং বলে অপমান করতে পারো না জান🥺।

ইথানের এমন ফেস দেখে লাবিবার এবার সত্যি খুব হাসি পেলো তাই খিলখিল করে হেসে দিলো।লাবিবাকে এতেক্ষনে হাসতে দেখে ইথান জানো নিজের প্রাণটা ফিরে পেলো।ইথান নিজের বুকের বাম পাশে হাত রেখে মিনমিন করে বলে উঠলো,,

ইথান—-ওইভাবে হেসো না প্লিজ জান।আমার যে নিজেকে কন্ট্রোল করতে খুব কষ্ট হয়।

ইথানকে বিরবির করতে দেখে লাবিবা হাসি থামিয়ে দিয়ে ভ্রু কুচকে সন্দেহের দৃষ্টিতে বলে উঠলো,,

লাবিবা—-কি বিরবির করছেন আপনি?

লাবিবার এমন প্রশ্নে ইথান কিছু না বলে ওর হাতটা ধরে সোজা বিছানার উপর বসিয়ে দিলো।তারপর একটা খাবারের প্লেট ওর হাতে দিয়ে মুচকি হেসে বলে উঠলো,,

ইথান—-খেয়ে নাও প্লিজ।এই কয়েকদিনে চেহারার কি হাল করেছো একবারও কি দেখেছো তুমি আয়নায়?এরপর তো আমার বাচ্চারা তার মাকে চিনতেই পারবে না।

ইথানের এমন কথায় লাবিবা বেশ অবাক হলো।অবাক কণ্ঠে বলে উঠলো,,

লাবিবা—-বাচ্চার মা মানে?আমাকে তো আপনিই বিয়েই করবেন না কারন আপনি কখনো বাবা হতে পারবেন না।তাই জন্যই তো সবার সামনে এতো বড় একটা নাটক করলেন।তাহলে এখন এগুলোর মানে কি?

লানিবার এমন কথায় ইথান কিছু বলতে গিয়েও বললো না।কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে উঠলো,,

ইথান—-বাবা হতে পারবো না সেইটা তো কেবল একটা রিপোর্টে আসছে।হতেও তো পারে সেই রিপোর্টটা ভুল ছিলো বা কেউ ইচ্ছা করে ভুল বানিয়েছিলো।

ইথানের কথা লাবিবার ছোট মাথায় কিছুতেই ঢুকছে না।হাবলার মতন ইথানের দিকে তাকিয়ে আছে সে।সব জানো তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।ইথান লাবিবার এমন ফেস দেখে ওর নাকটা টেনে দিতে দিতে বলে উঠলো,,

ইথান—-তোমার এতো কিছু না ভাবলেও চলবে।সময় হলে সবটা জানতে পারবি।এখন খাবারটা খেয়ে নে আর আমাকেও খায়িয়ে দে।

ইথানের এমন কথায় লাবিবা ভ্রু কুচকে বলে উঠলো,,

লাবিবা—-কেনো আপনার হাতটা কি ফারিহা তার শাড়ীর আচল দিয়ে বেধে রেখেছে যে নিজের হাতে খেতে পারবেন না?

লাবিবার এমন কথায় ইথানের হেচকি উঠে গেলো।একটা মেকি হাসি দিয়ে বলে উঠলো,,

ইথান—-কেনো বলো তো?তোমার কি ফারিহাকে নিয়ে জেলাস ফিল হচ্ছে?

ইথানের কথায় লাবিবা মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে বলে উঠলো,,

লাবিবা—-যদি আপনি চোখের সামনে আপনার প্রিয় মানুষটাকে অন্যকারো হয়ে যেতে দেখতেন না তাহলে বুঝতেন যে জেলাস কাকে বলে!কষ্ট কাকে বল,আঘাত কাকে বলে!

লাবিবার এমন কথায় ইথান চুপ হয়ে গেলো।লাবিবা ইথানের দিকে তাকিয়ে ছলছল চোখে বলে উঠলো,,

লাবিবা—-আমাকে একবার তো বলতে পারতেন আপনার সমস্যার কথাটা।তেমন সমস্যা হলে আমরা বাচ্চা এডাপ্ট করে নিতাম।তবুও যেই কষ্ট আমি এই দুদিন পেয়েছি সেটা তো আর সয্য করতে হতো না।জানের খুব ঘৃণা হতো নিজের উপর যখন নিজেরই প্রিয় মানুষটাকে নিজেরই বেস্ট ফ্রেন্ডের সাথে দেখতাম।মনে হতো কেউ আমার হৃদয় টাকে ছুরি দিয়ে বারবার আঘাত করছে।

লাবিবা কিছুক্ষণ থেমে আবারো বলে উঠলো,

লাবিবা—-যেদিন আপনাকে ছেড়ে দূর ওই গোধূলী আকাশে অনেক দূরে চলে যাবো সেদিন বুঝতে পারবেন যে প্রিয় মানুষটাকে হারানোর জ্বালা ঠিক কতটা হয়।

লাবিবার এমন কথা শুনে ইথানের বুকের মধ্যে ধক করে উঠলো।হুট করেই তাকে বুকের সাথে চেপে ধরলো ইথান।কেনো জানি তার খুব ভয় হচ্ছে এবার।লাবিবাকে উদ্দেশ্য করে রাগী কণ্ঠে বলে উঠলো,,

ইথান—-একদম চুপ।অনেক বড় হয়ে গেছিস তাই না?আবার এমন কথা বললে চড় মেরে গালটা লাল করে দিবো।

ইথানের এমন কথায় লাবিবা চুপ করে কাদতে রইলো।ইথানের সার্টটা একদম ভিজে গিছে লাবিবার চোখের জলে।ইথান লাবিবাকে আরো জোরে চেপে ধরলো বুকের সাথে।

অন্যদিকে কেউ একজন খুব রেগে আছে।মাথায় জানো আগুন জ্বলছে তার।রাগের চোটে টেবিলের উপর থাকা গ্লাসটা আছাড় মেরে ভেঙে ফেললো সে।রেগে বলে উঠলো সে,,

—-ইথান যদি জেনে যায় যে ওর বাবা হতে সক্ষম তাহলে তো সব শেষ।ও লাবিবাকে বিয়ে করে নিবে।যে করেই হক তার আগে লাবিবাকে মেরে ফেলতে হবে আমাকে নাহলে সব শেষ হয়ে যাবে।এই লাবিবার তো এতোদিনে মরে যাওয়ার কথা তাও যে কি করে বেঁচে আছে?কৈ মাছের প্রাণ যাকে বলে।যে করেই হক ওকে তিনদিনের মধ্যে আমাকে নেক্সট ব্লাডের ইনজেকশনটা দিতেই হবে।আমার প্রোপার্টি আর ইথানকে কষ্ট দেওয়া থেকে কেউ আটকাতে পারবে না আমায়,,

#চলবে?

(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।হ্যাপি রিডিং🥰)