গোধূলীতে তুমি প্রিয় পর্ব-০৬

0
604

#গোধূলীতে_তুমি_প্রিয়
#পর্ব_৬
#লেখিকা_রুবাইতা_রিয়া

ইথান ধাক্কাটা জোড়েই দিয়েছিলো যার জন্য রাহিক ছিটকে কিছুটা দূরে সরে যায়।ইথান রেগে চিৎকার করে বলে উঠে,,

ইথান—-তোর সাহস কি করে হলো লাবিবার হাত টাচ করার।তুই জানিস এই মেডিকেল কলেজের কোনো ছেলে অব্দি ওর দিকে চোখ তুলে তাকায় না।সেখানে তুই ওর হাত ধরলি কোন সাহসে?অনেক হিরো হতে এসেছিস তাই না?আজকেই এই হস্পিটালে তোর লাস্ট দিন হবে।এটা এই ইথান এহসান আদিলের প্রমিজ।কথাটা বলেই ওখানে আর একমুহূর্ত না দাড়িয়ে লাবিবার জাত ধরে টানতে টানতে নিজের কেবিনে নিয়ে চলে আসলো ইথান।এদিকে রাহিক এখনো স্তব্দ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।কোথা থেকে কি হয়ে গেলো কিছুই বুজতে পারছে না সে।কিন্তু ইথানের রিয়াকশনে এইটুকু বুজে গেছে সে যে লাবিবাকে ইথান খুব ভালোবাসে।বাট তার এখন চিন্তা হচ্ছে যদি সত্যি জবটা চলে যায়?তূর তো এই জবটা খুব দরকার।

এদিকে ইথানের কেবিনে ঢুকতেই লাবিবা নিজের হাতটা ঝটকা মেরে ছাড়িয়ে নিলো।রাগে তার সারা শরীর কাঁপছে।চিৎকার করে বলে উঠলো লাবিবা,,

লাবিবা—-সমস্যা কি আপনার?ওইভাবে স্যারের সাথে মিসবিহেভ করলেন কেনো?আর আমার যেই টাচ করুক না কেনো তাতে আপনার কি?আপনি প্লিজ আপনার মতন থাকুন আর আমাকে প্লিজ আমার মতন থাকতে দিন।

লাবিবার কথা শুনে ইথান তার টেবিলেি উপর রাখা কাঁচের গ্লাসটা এক আছারে ভেঙে ফেললো।লাবিবার দু বাহু চেপে ধরে দাতে-দাত চেপে বলে উঠলো,,

ইথান—-স্যারকে ধাক্কা দিয়েছি বলে তোর খুব গায়ে লেগেছে তাই না?ওনার হাত ধরতে খুব ভালো লাগে তোর তাইনা?কিন্তু আমি তো এমনটা হতে দিবো না।তোর এইসব ঢলাঢলি অন্য কোথাও গিয়ে করবি।আমাদের হস্পিটালে একদম এইসব টলারেট করবো না আমি।

লাবিবার ইথানের কথা শুনে ঘৃণা হতে লাগলো।একটা মানুষের চিন্তাধারা কতটা নিচে নামতে পারে!লাবিবার হাতে এবার ব্যাথা করছে।চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরছে।লাবিবার চোখে পানি দেখে ইথান ওর হাতটা ছেড়ে দিলো।ইথানের এবার নিজেরই খারাপ লাগছে।নিজের হাত ভেজা অনুভব করতেই তাতারি হাতের দিকে তাকালো সে।হাতে রক্ত দেখতেই চমকে উঠলো ইথান।লাবিবার হাতের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো পর হাত থেকেই রক্তটা পরছে।কলিজাটা কেঁপে উঠলো তার।ইথান দ্রুত গিয়ে লাবিবার হাতটা ধরে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিলো।ড্রয়ার থেকে ফাস্ট-এইডের বক্সটা এনে দ্রুতো সেখান থেকে একটু তুলোয় সেভলন লাগিয়ে নিলো।লাবিবার হাতটা নিজের এক হাতের উপর রেখে যেই না রক্তটা পরিষ্কার করতে যাবে ঠিক তখনই লাবিবা হাতটা সড়িয়ে নিলো।ইথানের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইথানের চোখের দিকে তাকিয়ে থমকে যায় সে।অসম্ভব লাল হয়ে আছে তার চোখ দুটো।লাবিবা আর কিছু না বলে আবার তার হাতটা ইথানের হাতের উপর রেখে দিলো ভয়ে।লাবিবার এমন কান্ড দেখে ইথানের এবার একটু হাসি পেলো তবুও মুখটাকে গম্ভীর করে রেখে রক্ত পরিষ্কার করতে লাগলো।লাবিবা একমনে ইথানের দিকে তাকিয়ে আছে।সত্যি মানুষটা বড্ড অদ্ভুত।

ইথান ভেবেছিলো লাবিবার হাতটা হয়তো কেটে গিছে সেইজন্য সেখানে পরিষ্কার করে মলম লাগিয়ে দিবে।কিন্তু লাবিবার হাতে তো কোনো ক্ষতের চিহ্নয় নেই।তাহলে রক্ত কোথা থেকে আসলো?ইথান ভালো করে লক্ষ করে দেখলো হাতে সত্যি কোনো ক্ষত নেই শুধু ছোট্ট একটা ছিদ্র আছে।দেখে মনে হচ্ছে কেউ হয়তো এখানে ইনজেকশন ফুটিয়ে দিয়েছে।ইথান লাবিবাকে শান্ত কণ্ঠে বলে উঠলো,,

ইথান—-হাতে কি হয়েছে তোর?

এতোক্ষণ বাদে ইথানের এমন কথায় নেশ অবাক হলো লাবিবা।মনে মনে ভাবলো এতোক্ষণ কি তাহলে ওনি কিছুই দেখিনি?অবশ্য তা দেখবে কেনো?ওনি তো শুধু দেখবে যে আমি কোন ছেলের হাত ধরে আছি।হুহহ!

লাবিবা—-জানিনা।আসলে কাকাই কিছু ফাইল দিয়েছিলো স্যারকে দেয়ার জন্য।আমি সেগুলোই নিয়ে যাচ্ছিলাম।স্যারের কেবিনে যখন ঢুকতে যাবো ঠিক তখনই কেউ এসে হাতে কিছু ফুটিয়ে দেয়।আর আমি চিৎকার করে উঠি।তারপরই তো স্যার বেরিয়ে এসে আমার হাতে রক্ত দেখে হাতটা চেপে ধরে যাতে আর ব্লাড না বের হয়।কিন্তু আপনি তো উল্টা বুঝে কত বড় সিনক্রিয়েট করলেন।

লাবিবার কথা শুনে ইথানের মাথায় এবার আকাশ ভেঙে পরলো।না জেনে কি না কি বলে ফেলছে সে।এবার তার নিজের চুল ছিরতে ইচ্ছা করছে।কিন্তু লাবিবার হাতেই বা কে ইনজেকশন ফুটালো?ইথান কিছুটা অবাক হয়ে বলে উঠলো,,

ইথান—-তোর হাতে আবার কে ইনজেকশন ফুটালো??

লাবিবা—-সেটাও জানিনা।আমি তো তার মুখই দেখতে পায়নি।আমার মনে হয় ভুল বসো তো ধাক্কা লেগে হাতে ফুটে গিছে।(কিছুটা বিরক্তি নিয়ে)

ইথান লাবিবার কথার কোনো উত্তর দিলো না।তার মাথায় একটা বিষয় কিছুতেই ঢুকছেনা।সামান্য ইনজেকশন ফুটানোর জন্য এতো রক্ত তো বেরই না।তাহলে লাবিবার হাতে এতো রক্ত এলো কোথা থেকে?ইথানের চিন্তার মাঝেই লাবিবা শান্ত কণ্ঠে বলপ উঠলো,,

লাবিবা—-আমার হাতটা ছাড়ুন প্লিজ।ক্লাসে লেট হয়ে যাচ্ছে।লাবিবার কথায় ইথানের হুস ফিরে।ওর হাতটা ছেড়ে দিতেই লাবিবা সেখান থেকে বেড়িয়ে যেতে গিয়েও থেমে গেলো।ইথানের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,,

লাবিবা—-স্যারের কোনো দোষ নেই।শুধু শুধু ওনার চাকরীটা খাবেন না।এফটার অল সবার তো আর আপনার বাবার মতন এতো টাকা নেই যে কাজ না করলেও দিব্বি লাইফটাকে ইনজয় করতে পারবে।

লাবিবার কথা শুনে ইথান চুপ করে রইলো।আসলেই সে তার ভুলটা বুজতে পেরেছে।ইথানের থেকে কোনো জবাব না পেয়ে লাবিবা এবার বলে উঠলো,,

লাবিবা—-আসলে কি বলুন তো।এই হাতের আঘাতটার থেকেও বেশি আঘাত তো আমি সেদিন পেয়েছিলাম যেদিন আপনি আমার সামনে অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করে এনেছিলেন।সেই আঘাতের তুলনায় এটা নিতান্তই তুচ্ছ।তাই এটাকে নিয়ে এতো হাইপার না হলেও চলবে।কথাটা বলেই লাবিবা চলে যাবে ঠিক তখনই ইথান বলে উঠলো,,

ইথান—-কখনো কখনো আমাদের চোখের সামনে আমরা যেটা দেখি সেটা সত্যি হয়না।তার আড়ালেও বড় কোনো সত্যি লুকিয়ে থাকে যেটা খুবই কষ্টদায়ক হয়।

ইথানের কথার মানে লাবিবা কিছুই বুজলো না আর বুজতেও চাইলো না।কেনো জানি তার মাথাটা বেশ ঝিমঝিম করছে।তাই সেখানে আর না থেকে দ্রুতো ক্লাসের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে আসলো।

অন্যদিকে অন্ধকার রুমে সোফায় বসে আছে কোনো এক সুদর্শন যুবক।প্রচুর রেগে আছে সে।তার সামনেই একটা লোক মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে।সে খুব ভয় পেয়ে আছে।হঠাৎ করেই সেই যুবকটি চেঁচিয়ে বলে উঠলো,,

—-তোমাদের দারা একটা কাজও ঠিক মতন হবে না।সামান্য একটা ইনজেকশন পুশ করতেও পারলে না ঠিক মতন।জাস্ট অসহ্য।

—-স্যার বিশ্বাস করুন আমি ওর হাতে ইনজেকশন পুশ করেছিলাম।কিন্তু পুরো ব্লাডটা ওর হাতে পুশ করার আগেই মেয়েটা চিৎকার করে উঠে।আমি ভয় পেয়ে যাই স্যার।হাজার হক ওই কলেজটা মেয়েটার কাকুর।ওর চিৎকার শুনে লোক তো আসতোই ওকে বাঁচাতে।

—-জাস্ট সাট আপ।ওই কলেজটা আর ওদের থাকবে না।খুব তাতারি ওইটা আমার হয়ে যাবে।তুমি তো নিজের কাজটা করতে পারোনি।এখন এখানে দাড়িয়ে থেকে আমার মাথাটা খেয়োনাতো।নেক্সট টাইম লাবিবাকে ইনজেকশনের ডোজটা আমি নিজে গিয়ে দিবো।এখন তুমি যাও এখান থেকে।

যুবকটার কথা শেষ হতেই লোকটা সেকেন্ডের মধ্যে সেখান থেকে চলে গেলো।লোকটা চলে যেতেই সে কাউকে ফোন করলো।ফোন রিসিভ হতেই সে সয়তানি একটা হাসি দিলো সে।

কলেজে লাবিবার আড়ালে যে তাকে নিয়ে অনেক সমালোচনা করা হচ্ছে তা বেশ বুঝতে পারছে লাবিবা।তার আর ইথানের বিয়ে ভাঙা নিয়েই তাদের যত কথা।যদিও ওর সামনে এসে তারা কিছু বলছে না।কেনো জানি এখানে এসেও ওর শান্তি লাগছে না।বাড়িতে হয়তো ফারিহার বউ ভাতের জন্য সবাই এতোক্ষণে রেডি হতে শুরু করে দিয়েছে।লাবিবার শরীরটাও ভালো লাগছে না।কেমন জানো ক্লান্ত ক্লান্ত লাগছে।তাই সবগুলো ক্লাস না করেই বাড়ি চলে এসেছে সে।

বাড়িতে আসতেই লাবিবা অবাক হয়ে যায়।সকালে যাওয়ার সময়ও বাড়িতে বউ ভাতের আয়োজন চলছিলো কিন্তু এখন দেখে মনেই হচ্ছে না যে এটা কোনো বিয়ে বাড়ি।কোনো ডেকোরেশন নেই বাড়িতে।তেমন কোনো মেহমান ও নেই আর।লাবিবাকে এতো তাতারি আসতে দেখে ওর মা একটু অবাক হয়ে যায়।দ্রুত লাবিবার কাছে এসে প্রশ্ন করে,,

—-কিরে আজ এতো তাতারি চলে এলি?শরীর খারাপ লাগছে নাকি মা?

—না আম্মু।ওই একটু ক্লান্ত লাগছিলো তাই চলে এসেছি।

—-সে তো লাগবেই।এই কয়েকদিন কি কম ধকল গেলো নাকি তোর উপর দিয়ে।লাবিবার মা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কথাটা বললো।লাবিবা সেদিক কোনো পাত্তা না দিয়ে মায়ের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,,

—-আচ্ছা আম্মু বাড়িটা এতো ফাকা ফাকা লাগছে কেনো?কিছু হয়েছে কি?

—-অনেক কিছু হয়েছে।বাড়িতে কোনো রিসিপশনের আয়োজন করতে বারন করেছে ইথান।যেসব আত্মীয়রা ছিলো তাদের মধ্যে অনেকেই চলে গিছে নানারকম কথা শুনিয়ে।তাই নিয়ে তোর দিদুন খুব রেগে আছে।এদিকে ইথানের কথার নড়চড় করার ও তো কারোর সাহস নেই।

মায়ের কথা শুনে লাবিবা বেশ অবাক হলো।আশ্চর্য বিয়ে যখন করেছে তখন এইটা করতে সমস্যা কোথায়।যত্তসব ঢং।লাবিবা এসব নিয়ে বেশি মাথা না ঘামিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।রুমে গিয়ে শাওয়ার নিয়ে নিলো সে।ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে এসে ভেজা চুলগুলো মোছার সময় হুট করেই লাবিবার কাশি শুরু হয়ে যায়।কাশতে কাশতে একটা সময় গলা দিয়ে রক্ত বেড়িয়ে আসে যা দেখে লাবিবা চমকে উঠে।

ইথান সবেমাত্র হস্পিটাল থেকে এসেছে।বাড়িতে আসতেই তার উদ্দেশ্যে কেউ কিছু বলতে যাবে তার আগেই সে বলে উঠলো,,

—-আমি এখন খুবই টায়ার্ড।তোমরা প্লিজ বিরক্ত করো না।সবার সাথে পরে কথা বলছি।কথাগুলো বলেই গটগট করে উপরে চলে গেলো ইথান কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে।

নিজের রুমের ধারে আসতেই লাবিবার রুমের দরজা খোলা দেখে ভ্রু কুচকালো সে।সাধারণত ওর রুমের দরজা সবসময় ভিজিয়ে দেয়া থাকে।ইথান মনে মনে ভাবলো লাবিবাকে একটি নজর দেখে আসবে।তার এই মনটা যে শুধু লাবিবার কাছেই পরে আছে।ভালোই হয়েছে দরজা খোলা আছে।কিছু না ভেবেই সে লাবিবার রুমের দিকে এগিয়ে গেলো।দরজার সামনে আসতেই,,,,,

#চলবে??

(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।হ্যাপি রিডিং🥰)