#গোধূলীতে_তুমি_প্রিয়
#পর্ব_৭
#লেখিকা_রুবাইতা_রিয়া
ইথান দরজার সামনে আসতেই পেছন থেকে ইহান এসে ওর হাত ধরে হেচকা টান দিয়ে লাবিবার রুমের থেকে কিছুটা দূরে সরিয়ে নিয়ে এলো।হুট করে এমনটা হওয়াই বেশ চমকে উঠলো ইথান।পেছনে ফিরে ইহানকে দেখতে পেয়ে ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো,,
ইথান—-এইভাবে হাত ধরে টান দিলি কেনো?
ইহান—-তুমি এই অসময়ে লাবিবার ঘরে উকি দিচ্ছিলিস কেনো?যদি কেউ দেখে ফেলতো তাহলে খারাপ কিছু ভাবতো সবাই।
ইথান—-আসলে লাবিবাকে একটু দেখতে ইচ্ছা করছিলো।তাই আরকি।
ইহান—-তুমি লাবিবাকে দেখা নিয়ে পরে আছো আর ওইদিকে দিদুন রেগে বোম হয়ে আছে।না জানি কি করবে এবার তোমার সাথে।তাতারি গিয়ে দিদুনকে সামলাও প্লিজ ভাইয়া।
ইহানের কথায় ইথান শান্ত ভাবে বলে উঠলো,,
ইথান—-আমি দিদুনকে সামলে নিবো।তোর বেশি ভাবতে হবে না।
ইহান—-না ভেবে কি আর উপায় আছে।এই দিদুনই তো যতসব উদ্ভট নিয়ম বানিয়ে রেখেছে বাড়িতে যার জন্য আজকে আমাদের সবার এই অবস্হা।
ইহানের এমন কথায় ইথান বলে উঠলো,,
ইথান—-তুই যখন জানতিই নিয়মগুলোর কথা তাহলে বিয়েটা তো কিছুদিন পরও করতে পারতি।অন্তত আমাকে আর ফারিহাকে এই বিয়ের নাটক টাতো করতে হতো না যার জন্য আজকে লাবিবা সবথেকে বেশি কষ্ট পাচ্ছে।আচ্ছা ইহান আমাকে একটা কথা বলতো?
ইথানের কথায় ইহান বেশ অপ্রস্তুত হয়ে উত্তর দিলো,,
ইহান—-জি ভাইয়া বলো কি বলবে?
ইথান—-তুই আর ফারিহা ঠিক আমার বিয়ের দিনটাই কেনো বিয়ে করলি?অন্য কোনো দিন ওতো করতে পারতি।আর তাছাড়া তুই ফারিহাকে এতো তারাতারি বা কেনো বিয়ে করলি?আরো পরেও তো করতে পারতিস বিয়েটা দিদুনের দেওয়া সব নিয়মগুলো মেনে।
হুট করে ইথানের এমন প্রশ্নে বেশ থতমত খেয়ে গেলো ইহান।সে বুঝতে পারছেনা ইথান হঠাৎ এমন প্রশ্ন কেনো করছে তাকে।আমতা আমতা করে উত্তর দিলো সে,,
ইহান—-ভাইয়া আমি ফারিহাকে ভালোবাসি।ওকে ছাড়া একমুহূর্ত থাকা আমার জন্য খুব কষ্টের।তাই তো ওকে বিয়ে করে ফেলি।আর বিয়ের সময়তো আমি জানতামই না যে আমাদের বাড়িতে ছেলেদের বিয়ে করার জন্য কিছু শর্ত দেওয়া আছে।যদি আগে থেকে জানতাম তাহলে এই বিয়েটা আমি করতাম না।আমি তো বিয়ের পর তোমার মুখ থেকেই শুনেছি যখন তুমি আমাকে আর ফারিহাকে ম্যারেজ রেজিষ্ট্রি অফিস থেকে আনতে গেছিলে।আর তোমার বিয়ে উপলক্ষে বাড়িতে অনেক গেস্ট এসেছিলো আমাদের।আমি সেদিন ভেবেছিলাম এতো গেস্টের মাঝে যদি আমি ফারিহাকে বিয়ে করে নিয়ে যায় তাহলে পরিবারের সবাই মান-সম্মানের ভয়ে আমাদের বিয়েটা ইজিলি মেনে নিবে।আর সবাই জেনেও যাবে যে ফারিহা আমার বউ।তাই তোমার বিয়ের দিনই বিয়েটা করেছি আমি।কিন্তু তুমি এই কথাগুলো কেনো জিজ্ঞেস করছো আমাকে??
ইহানের কথাগুলো এতোক্ষণ মন দিয়ে শুনছিলো ইথান।কিছুক্ষণ চুপ থেকে শান্ত কণ্ঠে বলে উঠলো,,
ইথান—-ওহ আচ্ছা বুঝলাম।আসলে এই প্রশ্নগুলো অনেকদিন ধরে আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলো তো তাই জিজ্ঞেস করলাম।আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
কথাটা বলেই ইথান সেখান থেকে নিজের রুমে চলে যেতে যাবে ঠিক তখনই ইহান পেছন থেকে জিজ্ঞেস করে উঠলো,,
ইহান—-আচ্ছা ভাইয়া তোমার টেস্টের ফাইনাল রিপোর্টটা কবে দিবে কিছু বলেছে??
ইহানের কথায় ইথান দাঁড়িয়ে পরলো।ইহানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বলে উঠলো,,
ইথান—-ধরে নে সেটা আমি পেয়ে গেছি।এইটুকু বলেই ইথান সেখান থেকে গটগট করে নিজের রুমে চলে গেলো।
এইদিকে ইথানের বলা শেষের কথাটা কিছুতেই ইহানের মাথায় আসছেনা।ইথান রিপোর্ট পেয়ে গেছে মানে?আর পেলে সবাইকে বলছে না কেনো?আর রিপোর্ট পেলো কিভাবে ইথান?
ইথান রুমে এসে কাউকে ফোন করলো।ফোন রিসিভ হতেই তেজি কণ্ঠে বলে উঠলো,,
ইথান—-আমি একটুপরই আসছি।আপনি সবকিছু রেডি করে রাখুন।এসেই আপনার সাথে কথা বলছি।ওপাশ থেকে কাউকে কিছু বলতে না দিয়েই ফোনটা কেটে দিলো ইথান।তার মুখে আছে এক দুশ্চিন্তার ছাপ।ইথান ওয়াশরুমে চলে গেলো শাওয়ার নিতে।
এইদিকে লাবিবার গলা দিয়ে এখনো রক্ত পরে চলেছে।কিছু না ভেবেই মুখটা চেপে ধরে ওয়াশরুমে বেসিনের সামনে গিয়ে কুলি করতে লাগলো আর চোখে মুখে পানি দিতে থাকলো।অনেকক্ষণ যাবত এমনটা করার পর রক্ত পরাটা কমে গেলো।ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে ধপ করে বিছানার উপর বসে পরলো লাবিবা।এবার তার ভয় হচ্ছে।এমন হুটহাট করে গলা নাক দিয়ে রক্ত পরছে কেনো তার।ড্রেসিংটেবিলের সামনে এখনো রক্ত লেগে আছে যা লাবিবার খেয়াল নেই।প্রচুর ক্লান্ত লাগছে তার তাই বিছানার উপর শুতেই ঘুমের রাজ্যে পারি জমালো সে।
অন্যদিকে ইথান শাওয়ার নিয়ে একেবারে রেডি হয়ে নিচে নেমেছে বাহিরে যাওয়ার জন্য।ফারিহা নিচে টেবিলে সবার জন্য খাবার সাজাচ্ছে।ইথান কে বেরিয়ে যেতে দেখেই পেছন থেকে বলে উঠলো,,
ফারিহা—-কোথায় যাচ্ছেন আপনি না খেয়ে?না মানে সকালেও তো কিছু খেয়ে জাননি।
ফারিহার কথায় ইথান স্বাভাবিক ভাবেই জবাব দিলো,,
ইথান—-একটা বন্ধুর সাথে দেখা করতে যাচ্ছি।তার বাবু হয়েছে তাই।আমি এসে খাবো।
ফারিহাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে ইথান সেখান থেকে চলে গেলো।অন্যদিকে সিড়ির উপর দাড়িয়ে দাড়িয়ে ইথানের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে ইহান।কেনো জানি তার ইথানের বলা কথাগুলো বিশ্বাস হচ্ছে না।ইথানের এমন কোনো বন্ধুর কথা তো তার মনে পরছে না যার কিনা বেবি হওয়ার কথা ছিলো।ইহানের চিন্তার মাঝেই ফারিহা বলে উঠলো,,
ফারিহা—-আপনি ওখানে কি করছেন?নিচে আসুন খেয়ে নিবেন।
ফারিহার কথায় ইহান প্রথমে চমকে উঠলেও পরে নিজেকে সামলে নিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে ফারিহার কানের কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে উঠে,,
ইহান—-আমার বউটা যখন ডেকেছে খেতে তো হবেই।তা বলো আমার জন্য আমার বউটা কি রান্না করেছে?
রান্না করার কথা শুনেই ফারিহার মনটা হুট করে খারাপ হয়ে গেলো।সকালে এই রান্না নিয়েই তো তাকে কত কথা শুনতে হলো।মুখটাকে মলিন করে উত্তর দিলো,,
ফারিহা—-আসলে আমি রান্না করিনি।মা আর কাকিয়ারা মিলে রান্নাগুলো করেছে।সার্ভেন্টরা হেল্প করেছে।আমার শরীরটা ভালো লাগছিলো না তাই আরকি।(ইহানের কাছ থেকে সত্যিটা লুকালো ফারিহা)
ফারিহার কথায় ইহান বেশ উত্তেজিত হয়ে উত্তর
দিলো,,
ইহান—-কি হয়েছে তোমার?কোথায় কষ্ট হচ্ছে বলো আমাকে?
ফারিহা—-আরে তেমন কিছু না।এমনি মাথাটা একটু ধরেছিলো।আপনি অনেক চিন্তা করেন তাইনা আমাকে নিয়ে?
ইহান—-চিন্তা করাটাই স্বাভাবিক।নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে কেউই কষ্টে দেখতে পারে না।সবসময় তার প্রিয় মানুষটাকে আগলে রাখার চেষ্টা করে।
ফারিহা—-ইথান ভাইয়া ওতো লাবিবাকে কত ভালোবাসে।ওনি তাহলে লাবিবাকে কষ্টে দেখে না জানি নিজে কত কষ্টে পাচ্ছে।
ফারিহার কথায় ইহান কিছু বলল না।কথা এড়ানোর জন্য বলে উঠলো,,
ইহান—-এখন এসব কথা বলো না।কেউ শুনে ফেলবে।আমি রুমে যাচ্ছি।তোমার আর আমার খাবারটা আমাদের রুমেই নিয়ে এসো।আর কেউ জানো না দেখে কেমন।কথাটা বলেই ইহান নিজের রুমে চলে গেলো যা দেখে ফারিহা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
রুমে কিছু পরার আওয়াজে লাবিবার ঘুমটা ভেঙে গেলো।আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকালো সে।কোনোভাবে উঠে বসতেই একজন সার্ভেন্ট বেশ নিচু স্বরে বলে উঠলো,
—-সরি মেম।আসলে আমি রুমটাকে পরিষ্কার করতে এসেছিলাম।আপনার ড্রেসিং টেবিলের সামনে রক্ত লেগে থাকতে দেখে সেটা মুছছিলাম।ঠিক তখনই হাতে ধাক্কা লেগে আপনার ফুলদানিটা পরে গিয়ে ভেঙে যায়।আই এম রিয়েলি সরি।
সার্ভেন্টের কথা শুনে লাবিবা ফুলদানিটার দিকে তাকাতেই তার বুকটা মুচড়ে উঠলো।এই ফুলদানিটা তাকে ইথান কিনে দিয়েছিলো।অন্যসব জিনিসের থেকে এই ফুলদানিটা তার কাছে একটু বেশিই প্রিয় ছিলো যার জন্য।এটাকে এভাবে ভেঙে যেতে দেখে বেশ কষ্ট পেলো সে।বিছানা থেকে উঠে গিয়ে ফুলদানির ভাঙা টুকরোগুলো হাতে নিতেই চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরলো তার।ভাঙা টুকরে তার হাতটা একটু কেটেও গেলো।পাশে থাকা সার্ভেন্টটা হকচকিয়ে বলে উঠলো,,
—-কি করছেন মেম হাত কেটে গেলো তো।
সার্ভেন্টের কথায় লাবিবা মলিন হাসি দিয়ে বলে উঠলো,,
—-প্রিয় মানুষটার দেওয়া আঘাতে যখন আমার হৃদয়টা ক্ষত-বিক্ষত হয়ে হয়ে গিয়েছিলো তখন তো সেইটা সহ্য করে নিয়েছিলাম।তাহলে আজ তার দেওয়া ফুলদানিটার ভাঙা টুকরে ফের আঘাত পেলেও সেইটা ঠিক সহ্য করে নিতে পারবো।ওই ব্যাথার কাছে যে এইসব ব্যাথা নিতান্তই তুচ্ছ।
লাবিবার কথায় সার্ভেন্টটা কোনো তোয়াক্কা করলো না।চিন্তিত কণ্ঠে বলে উঠলো,,
—-মেম আপনার হাত অনেকটাই কেটে গিছে।অনেক রক্ত পরছেও।প্লিজ মলম লাগিয়ে নিন।দাড়ান আমি ফাস্ট-এইড বক্স নিয়ে আসছি এখুনি।
সার্ভেন্টের কথা শুনে লাবিবা বলে উঠলো,,
—-তোমার যাওয়ার দরকার নেই।আমি নিজেই যাচ্ছি।তুমি বরং এইগুলো পরিষ্কার করো নয়তো অন্যকারোরও হাত কেটে যেতে পারে।
লাবিবার কথায় সার্ভেন্টটা মাথা নারালো যার অর্থ ঠিক আছে।লাবিবা রুম থেকে বেড়িয়ে ইথামের মায়ের রুমে গেলো কারন ফাস্টএইড বক্সটা ওনার রুমেই আছে।লাস্টবার ওনার হাত কেটে যাওয়ায় এই রুমে নিয়ে আসা হয়েছিলো যে আর ফেরত নেওয়া হয়নি।রুমে কেউ নেই সবাই নিচে আছে।পুরো রুমে কোথাও ফাস্টএইড বক্সটা না পেয়ে ভাবলো হয়তো আলমাড়িতে তুলে রেখেছে।আলমাড়ির দরজাটা খুলতেই ফাস্টএইড বক্সটা পেয়ে গেলো সে।ওটা নেয়ার সময় লাবিবার হাতে ধাক্কা খেয়ে কোনো একটা ফাইল পরে যাই।লাবিবা ফাস্টএইড বক্সটা নিয়ে পাশের টেবিলের উপর রাখে।ফাইলটা নিচে পরে যাওয়ায় ওর মধ্যে থাকা পেপারগুলো এলোমেলো হয়ে যায়।ফাইলটা উঠিয়ে গুছিয়ে রাখার সময় তার চোখ যায় সেখানে থাকা একটা পেপারের উপর যেটা দেখে লাবিবা থমকে যায়।অবাকের সপ্তম পর্যায়ে চলে যায় সে।বিস্ময়ে জানো তার মুখ এবার হা হয়ে গেলো।
#চলবে??
(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।হ্যাপি রিডিং🥰)