গোধূলীতে তুমি প্রিয় পর্ব-০৮

0
465

#গোধূলীতে_তুমি_প্রিয়
#পর্ব_৮
#লেখিকা_রুবাইতা_রিয়া

—-ইথান বাবা তোমার মেডিকেল রিপোর্ট একদম ঠিক আছে।তুমি বাবা হতে সক্ষম।তোমার মধ্যে কোনো সমস্যা নেই।কিন্তু তুমি হঠাৎ করে এই টেস্টগুলো কেনো করালে?(অবাকের স্বরে বললো ডক্টর সাহিল)

ডক্টর সাহিলের কথাগুলো শুনে ইথান জানো আকাশ থেকে পরলো এবার।চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে উত্তেজিত কণ্ঠে ডক্টর সাহিলকে বলে উঠলো সে,

ইথান—-স্যার আপনি ঠিক বলছেন তো?কোনো সমস্যা নেই রিপোর্টে?ভালোভাবে দেখে বলুন প্লিজ স্যার।

ইথানের কথায় ডক্টর সাহিল বেশ অবাক হলো।ওনি বেশ শান্ত ভাবেই উত্তর দিলো,,

ডক্টর সাহিল—-ইথান সত্যি কোনো সমস্যা নেই।তুমি তো নিজেই একজন ডক্টর।পারলে তুমি নিজেই রিপোর্টা দেখো।এখানে স্পষ্ট লেখা আছে সবকিছু।

ডক্টর সাহিলের কথা শুনে ইথান রিপোর্টটা খপ করে তার হাত থেকে নিয়ে নিজে পড়ে দেখলো।আসলেই তার কোনো সমস্যা নেই।তাহলে রিমান আঙ্কেলের রিপোর্টে কেনো লেখা আসলো যে আমি কোনোদিন বাবা হতে পারবো না?এখানে নিশ্চয় কোনো ঘাবলা আছে।মা ঠিকই বলেছিলো।ইশশ!আমি যদি আগে মায়ের বলা কথাগুলো একবার ভেবে দেখতাম।কথাগুলো মনে মনেই ভাবতে লাগলো ইথান।তার চিন্তার মাঝেই ডক্টর সাহিল আবারো বলে উঠলো,,

ডক্টর সাহিল—-কি এবার বিশ্বাস হয়েছে তো যে তোমার কোনো সমস্যা নেই।কিন্তু আমি এটা বুঝতে পারছিনা যে তুমি হঠাৎ করে এই বিষয় নিয়ে পরলে কেনো?

ডক্টর সাহিলের কথায় ইথান মনে মনে ভাবলো এই বিষয়টাই তো আমার জীবনে সব উলোটপালোট করে দিয়েছে।শুধুমাত্র একটা রিপোর্টের জন্য কত পস্তাতে হচ্ছে আমার পরিবারের লোকদের।আসলেই ডক্টরদের ছোট্ট একটা ভুলও সাধারণ মানুষের জীবনে অনেক বড় বিপদ ডেকে আনে।ইথান ডক্টর সাহিলের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বলে উঠলো,,

ইথান—-আসলে কিছুদিন ধরে শরীরটা দূর্বল লাগছিলো তাই ভাবলাম কোনো সমস্যা হলো কিনা।তাই মেডিকেল টেস্টটা করিয়ে নিলাম।আপনাকে অনেক ধন্যবাদ স্যার আমাকে আজকের মধ্যেই টেস্টের রিপোর্টটা দিয়ে দিলেন।আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

ইথানের কথায় ডক্টর সাহিল মুচকি হেসে বললো,,

ডক্টর সাহিল—-ইটস ওকে ইথান।তোমার বাবা এতো ভালো একজন ডক্টর।তার এতো ভালো একটা মেডিকেল কলেজ আছে।তুমি তার ছেলে হয়ে আমাদের হস্পিটালে এসেছো এটাই অনেক।

ডক্টর সাহিলের কথায় ইথান কিছু বললো না।মুচকি একটা হাসি দিয়ে ইথান সেখান থেকে বেড়িয়ে এলো।আসলে ইথান এসেছিলো একটা প্রাইভেট হস্পিটালে তার মায়ের কথা অনুযায়ী আবার টেস্ট করাতে।ইথানের ও কেনো জানি সন্দেহ হচ্ছিলো ডক্টর রিমানের উপর।কারন সে তার মধ্যে কোনোদিন কোনোরকম সমস্যা উপলব্ধি করেনি।আজকে এই রিপোর্ট পেয়ে সে জানো আকাশের চাঁদ হাতে পেয়ে গেছে।এবার আর অন্তত তার লাবুপাখিকে মিথ্যা কথা বলতে হবে না।সে ভাবলো তাকে গিয়ে সব সত্যি বলে দিবে।এমুহূর্তে তার মাথায় আর কিছুই খেলা করছে না।ইথান গাড়িতে বসে জোড়ে গাড়ি ড্রাইভ করতে থাকে বাড়ির উদ্দেশ্যে।

এইদিকে সোফার উপর বসে রাগে ফুলছে লাবিবা।প্রচুর পরিমানে ক্ষেপে আছে সে ইথানের উপর।এতো বড় সত্যি কেনো লুকালো ইথান তার থেকে তার উত্তর আজকে দিতেই হবে ইথানকে।অনেক কথা জমে আছে তার।অন্যদিকে সবাই লাবিবার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।হুট করে লাবিবা এভাবে চেচিয়ে সবাইকে ডেকে আনাতে সবাই বেশ অবাক হয়েছে।ইথানের মা,ফারিহা আর ইহান বেশ ভয়ে আছে লাবিবার হাতে থাকা ফাইলটা দেখে।এটা যে আর কিছুর না বরং ফারিহা আর ইহানের ম্যারিয়েজ ডকুমেন্টসের সেই ফাইলটা যেটা ইথানের মা তার আলমারিতে রেখে দিয়েছিলো।ভেবেছিলো পরে কোথাও লুকিয়ে রাখবে।কিন্তু তার আগেই লাবিবা সেই ফাইলটা পেয়ে গেলো কিভাবে?
ইহানের রাগে গা কাঁপছে।এই লাবিবার কাছে ফাইল গেলো কিভাবে তার মাথায় কিছুতেই সেটা ঢুকছেনা।

লাবিবার মা এবার অধৈর্য হয়ে বলে উঠলো,,

—-কি হয়েছে কি লাবিবা?এভাবে বাড়ি শুদ্ধ লোক ডেকে আনার মানেটা কি হুম?সবার অনেক কাজ আছে।

—-কি হয়েছে সেটা তোমরা একটু পরই জানতে পারবে।শুধু ইথান ভাইকে আসতে দেও।কারন তোমাদের প্রশ্নের উত্তর তো এখন ওনিই দিতে পারবেন।(দাতে দাত চেপে কথাটা বললো লাবিবা)

লাবিবার কথার মানে কিছুই বুঝতে পারলোনা তার মা।তাই চুপ করে রইলো সে।অবশেষে সবার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ইথান বাড়ি ফিরলো।তার মুখে রয়েছে এক ঝুড়ি মিষ্টি হাসি।আজকে যে সে অনেক খুশি।কিন্তু বাড়িতে এসে সবাইকে এভাবে একসাথে দেখে বেশ অবাক হলো সে।কারোর উদ্দেশ্যে কিছু বলতে যাবে তার আগেই লাবিবা উঠে গিয়ে ইথানের মুখের উপোর ফাইলের পেপারগুলো ছুড়ে ফেলে দিয়ে রাগী কণ্ঠে বলে উঠলো,,

—-ছিহ ইথান ভাই তুমি এতোটা নিচ।নিজের ছোট ভাইয়ের বউকে কিনা নিজের বউ বলে পরিচয় দেও।কেনো এমন করলে তুমি বলো?কেনো আমাকে এভাবে কষ্ট দিলে?আজকে আমার প্রশ্নের উত্তর দিতেই হবে।

লাবিবার কথায় সবাই জানো আকাশ থেকে পরলো।কি বলছে লাবিবা কিছুই বুঝতে পারছে না তারা।ইথানের বাবা ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করলো,,

ইথানের বাবা—-এইগুলো কি বলছিস তুই লাবিবা?আমরা কিছুই বুঝতে পারছিনা।

লাবিবা—-সব বুজতে পারবে কাকাই।ইথান ভাইয়া নিজে সবাইকে বুঝিয়ে বলবে এখন।কেনো সে ইহান ভাইয়ের বউকে এতোদিন নিজের বউ বললো সবার কাছে,কেনো সে বিয়ের দিন ফারিহার সাথে মিথ্যে বিয়ের নাটক করলো এইসব প্রশ্নের উত্তর আজ দিবে সে।

লাবিবার কথায় সবাই চমকে উঠলো।লাবিবার দিদুন অবাক হয়ে বলে উঠলো,,

দিদুন—-ইহানের বউ মানে?ইহান কবে বিয়ে করলো?কাকে বিয়ে করলো?

লাবিবা তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিয়ে বললো,

লাবিবা—–ইহান ভাইয়া আর কাউকে না বরং আমারই বেস্টফ্রেন্ড ফারিহাকে বিয়ে করেছে।আমার আর ইথান ভাইয়ের যেদিন বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো সেইদিনই তারা বিয়ে করেছে।আর এইযে পেপারগুলো দেখছো এইগুলো হচ্ছে ফারিহা আর ইহান ভাইয়ার বিয়ের রেজিস্ট্রি পেপার যেখানে স্পষ্ট ফারিহা আর ইহান ভাইয়ার সাইন দেয়া আছে।

লাবিবার কথা শুনে সবাই জানো অবাকের সপ্তম পর্যায়ে চলে গেলো।বিস্ময়ে সবার মুখ এবার হা হয়ে এলো।লাবিবার দিদুন এবার রাগী কণ্ঠে বলে উঠলো,,

দিদুন—-ইহান তুমি বিয়ে করেছো মানে?তুমিই কি জানো না যে এ বাড়িতে ছেলেদের বিয়ে করার জন্য কিছু শর্ত দেওয়া আছে?কোন অধিকারে তুমি সেসব শর্ত ভেঙে বিয়ে করেছো উত্তর দেও?তোমাকে এর শাস্তি পেতেই হবে।

দিদুনের কথা শুনে লাবিবা এবার বলে উঠলো,,

লাবিবা—-উত্তর তো আজ সবাইকে দিতে হবে।আর শাস্তিও পেতে হবে।কেনো মিথ্যা অভিনয় করলো তার জবাব দিতে হবে সবাইকে আজ।কি হলো ইথান ভাই উত্তর দিন(শেষের কথাটা চেচিয়ে বললো লাবিবা ইথানকে)

#চলবে??