চিরকুট প্রেম পর্ব-০৩

0
211

#চিরকুট_প্রেম
#পর্বঃ৩
#লেখিকা_লক্ষী_দেব

প্রিয়া চিরকুট হাতে বিছানায় বসে পড়ল। চিরকুট পড়েই বুকের মাঝে অদ্ভু’ত অনু’ভূতি হয়। এমন অদ্ভু’ত অনু’ভূতির সাথে পরিচিত ছিল না প্রিয়া। চিরকুট পড়ে একরাশ ভালোলাগা মনে বিরাজ করে। ইশশশ! এই চিরকুট এতো ভালো’লাগার কেন? এই চিরকুট এতো সুন্দ’র অনু’ভূতি তৈরি করে কেন? ভাবতেই প্রিয়া মন জুড়িয়ে যায়।

প্রিয়া চিরকুটের দিকে তাকালো। চিরকুটের ভাঁজে লেখা শব্দ গুলো অতি চমৎকার। যেই মানুষের হাতের লেখা এত সুন্দ’র, চিরকুটের ভাঁজে লেখা মনের কথা গুলো এতো মোহনীয়, সেই মানুষটা না জানি কত আকর্ষণীয়। এই মানুষটাকে দেখার ইচ্ছে যে ক্র’মে ক্র’মে বেড়েই চলেছে।

আচ্ছা। মানুষটা এতো বোকা কেন? এভাবে কেউ চিরকুট দেয়? চিরকুটটা যদি অন্য কারো হাতে পড়তো তাহলে? কি’ন্তু অদ্ভু’ত ভাবে চিরকুটটা অন্য কারো হাতে পড়ে নি‌। নির্দিষ্ট মানুষের হাতেই পড়েছে।

চিরকুট লিখে নির্দিষ্ট মানুষের কাছে পৌঁছে দিলেই হয়? নির্দিষ্ট মানুষের ফিরতি চিরকুট পেতে ইচ্ছে হয় না? নিজের মনের কথা জানালেই হবে? অপর পক্ষের মানুষের উত্তর জানার জন্য মন ছটফট করে না?

প্রিয়া কথাগুলো ভেবে একটা দীর্ঘ’শ্বাস ফেলল। তার যে খুব ইচ্ছে করছে নিজের অনু’ভূতি চিরকুটের মাধ্যমে প্রকাশ করার। কি’ন্তু চিরকুট লিখে কাকে দেবে সে? কার কাছে চাইবে তার চিরকুট দাতার খুঁজ?

প্রিয়ার বুকের ভিতরটা ছট’ফট করতে লাগলো। এই ছটফটানি নিয়ে কি করে ঘুমাবে সে? উ’ফ! চিরকুট দাতা এমন কেন? এত এত প্রশ্নের উত্তর কে দেবে? কোথায় মিলবে চিরকুট দাতার দেখা?

প্রিয়া বারান্দায় গেল। পূর্নি’মার আলোয় আলো’কিত আকাশ পানে চাইলো। আকাশে বড়ো থালার মতো চাঁদ উঠেছে। অষ্টাদশীর হৃদ’য় জুড়িয়ে গেল চাঁদের দিকে তাকিয়ে। সেই চাঁদের আলোয় আলো’কিত হয়ে উঠেছে পুরো শহর। চাঁদের আলোর ক্ষানি’কটা আভা বর্ষি’ত হলো প্রিয়ার মুখ’মণ্ডলে। গোলগাল চেহারার সৌন্দর্য চাঁদের আলোতে আরও বেড়ে গেল।

প্রিয়া আকাশের দিকে তাকাতেই বারান্দায় আবারও একটা চিরকুটের কাগজ পড়ল। চিরকুট পড়ার শব্দে প্রিয়া চিরকুটের দিকে তাকালো। সাথে সাথেই প্রিয়া রাস্তার দিকে তাকালো। কিন্তু রাস্তায় কাউকে দেখতে পেল না।

প্রিয়া রাস্তার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ’শ্বাস ফেলল। চিঠি দাতা যে তাকে ভীষণ পী’ড়া দিচ্ছে। কখনো ভালোবাসা মিশ্রিত চিঠি দিয়ে মোহি’ত করছে। কখনো আবার চিরকুট দাতার খুঁজ না দিয়ে বিচলিত করছে। প্রিয়া ঠোঁট উল্টে নিজে নিজে বলল,

“নিজের খোঁজ যখন দিবেন না, তখন এভাবে চিরকুট দিয়ে মনটাকে আকৃ’ষ্ট করার কি দরকার?

প্রিয়া দুচোখ ব’ন্ধ করে জোরে শ্বা’স ফেলল। মেঝেতে পড়ে থাকা চিরকুট টা হাতে নিল। আজকে চিঠি দাতা নীল রঙের কাগজে চিরকুট লিখেছে। প্রিয়া চিরকুট টা বুকে চেপে ধরল।

প্রিয়া চিরকুট হাতে রুমে গেল। টেবিলের উপর বসে চিরকুটের ভাঁজ খুলল। চিরকুটের ভাঁজে ফুটে উঠল কয়েক লাইন শব্দ গুচ্ছ। যেই চিরকুট পড়ে প্রিয়া চিরকুট দাতার প্রতি গভীর ভাবে আকৃষ্ট হবে। প্রিয়া চিরকুটটা পড়তে শুরু করল,

“এই মেয়ে শুনো,
আজকে আকাশে চাঁদ দেখেছো তো? তুমি ওই চাঁদের মতো উ’জ্জ্বল। অপ’রূপ সুন্দর তোমার মুখশ্রী। আচ্ছা তুমি এতো সুন্দর কেন বলতো? এত স্নিগ্ধ কেন তোমার মুখ’মন্ডল? জানো তো? তোমায় দেখলে বুকের ভিতরটা কেমন যেন আন’চান করে। খুব করে ইচ্ছে করে তোমায় বুকের মাঝে জড়িয়ে রাখতে। তোমাকে আমি খুব শ্রীঘ্রই আমার করে নেব।

আচ্ছা তোমার কি আমাকে দেখতে ইচ্ছে করে? তোমার মনের কথা গুলো জানাতে ইচ্ছে করে? তোমাদের বাসা থেকে ঠিক দক্ষিণ দিকে একটা নদী আছে না? সেই নদীর পাড়ে একটা বাচ্চা দাঁড়িয়ে থাকবে।

তুমি কালকে সকালে বাচ্চা টাকে একটা চিরকুট দিয়ে আসবে। তার পরের দিন তুমি আবার নদীর পাড়ে গিয়ে চিরকুট নিয়ে আসবে। প্রতিদিন সকাল ৮ টায় নদীর পাড়ে যাবে।

এই মেয়ে শুনো,
আমি তোমায় ভালোবাসি। তোমার মনের মাঝে বসবাস করতে চাই। তোমার অনেক ভালোবাসা পেতে চাই। আমায় দেবে কি তোমার হৃদয় মাঝে স্থান? দেবে কি তোমার ভালোবাসা?

প্রিয়া চিরকুট পড়ে মুচকি হাসল। এভাবে কেউ ভালোবাসা চায়? ইশশশ! এখন যে প্রচুর ল’জ্জা লাগছে। প্রিয়া ল’জ্জা নিবারণের জন্য দুহাত দিয়ে মুখ চেপে ধরল।

বেশ কিছুক্ষণ পর ব্যাগ থেকে একটা লাল কাগজ বের করল। আজকে প্রিয়া প্রথম চিরকুট লিখবে । অচেনা, অজানা একটা মানুষের জন্য কাগজের পাতায় নিজের অনুভূতি তুলে ধরবে।

প্রিয়া কলম হাতে নিল। কাগজের পাতায় তুলে ধরল কিছু শব্দ গুচ্ছ। লিখা শেষ করে মনে হলো চিরকুট দাতার যদি চিরকুট টা পছন্দ না হয়। তাহলে তো চিরকুট লিখাই বৃ’থা।

প্রিয়া চিরকুটের কাগজটা মুড়িয়ে মেঝেতে ফেলে দিল। আবারও চিরকুট লিখল, চিরকুট মন মতো না হওয়ায় আবারও মুড়িয়ে ফেলে দিল। এ কেমন যন্ত্র’না? চিরকুট দাতা এত ধৈর্য্য কিভাবে চিরকুট লিখে?

প্রিয়া এমন করে পাঁচটা চিরকুট মুড়িয়ে মেঝেতে ফেলে দিল। উ’ফ! চিরকুট লেখা এত কঠিন ব্যাপার? প্রিয়া চিরকুট দাতার চিরকুট টা বের করে আবারও পড়ল।

কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে বসে থাকল। আবারও নতুন উদ্য’মে চিরকুট লেখা শুরু করল। এই বার আর চিরকুট টাকে মুড়িয়ে ফেলে দিবে না। চিরকুট দাতার চিরকুট টা পছন্দ হোক আর না হোক । এই চিরকুট টাই সে দিবে। প্রিয়া চিরকুটে লিখল,

“জানেন,
এটা ছয়বার চিঠি লিখছি। বারবার চিঠি লিখে মনে হচ্ছে আপনার পছন্দ হবে না। এখন আবারও লিখছি।
শুনছেন, আমার না একটা ইচ্ছে ছিল। আমি এমন কারো সাথে প্রেম করবো যাকে আমি চিনি না এবং সেও আমাকে চিনে না। কিন্তু আপনি আমাকে চিনেন। যাইহোক আমি তো আপনাকে চিনি না।

শুনেন, আমাদের একটা প্রেম হবে। চিরকুটের মাধ্যমে আমাদের অনুভূতির আদান-প্রদান হবে না। আমাদের এই প্রেমের নাম কি হবে জানেন? আমাদের প্রেমের নাম হবে চিরকুট প্রেম।

প্রিয়া চিরকুট লিখে ভাঁজ করে রেখে দিল। মোবাইলে তাকিয়ে দেখল রাত ১২ টা বেজে ৫ মিনিট। এত রাত হয়ে গেল। প্রিয়া বিছানা গুছিয়ে শুয়ে পড়ল। এমন সময় প্রিয়ার ফোনে একটা কল আসল।

প্রিয়া মোবাইলের স্ক্রি’নে তাকিয়ে দেখল রাহাতের নাম্বার। সাথে সাথেই কলটা রিসিভ করে কানে দিল। রাহাত ওপাশ থেকে ধম’ক দিয়ে বলল,

“এত রাতে না ঘুমিয়ে মোবাইল নিয়ে কি করছিস?

প্রিয়া একটু সাহস নিয়ে বলল,

“আপনি কেন না ঘুমিয়ে আমাকে কল দিয়েছেন?

রাহাত আবারও ধম’ক দিয়ে বলল,

“তোর কি মনে হয়, আমি ইচ্ছে করে তোকে কল দিয়েছি? ভুল করে তোর নাম্বারে কল চলে গিয়েছে। আমি কল কাটার আগেই তুই কল রিসিভ করে নিয়েছিস। আমার কোনো ইচ্ছে নেই তোর সাথে কথা বলার।

রাহাত প্রিয়াকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে কল কেটে দিল।

#চলবে