চিরকুট প্রেম পর্ব-০৪

0
179

#চিরকুট_প্রেম
#পর্বঃ৪
#লেখিকা_লক্ষী_দেব

এক মনোমুগ্ধ’কর সকাল। সূর্যের আলো জানালা ভেদ করে অষ্টাদশী কন্যার চোখ মুখে ছড়িয়ে পড়ছে। অষ্টাদশী ভ্রুঁ জোড়া কিঞ্চি’ত কুঁচকালো। চোখের উপর হাতটা রেখে আবারও ঘুমে বিভোর হলো। কখন সকাল হবে? কখন অষ্টাদশী চিরকুট দেবে? অষ্টাদশীর চিরকুট পড়ে চিরকুট দাতা কি ভাববে? এইসব চিন্তা করেই রাতের ঘুম হারা’ম করে শেষ রাতে ঘুমের তলিয়ে গেছে প্রিয়া।

যখন সকাল হলো, চিরকুট দেওয়ার সময় ঘনিয়ে এলো তখনই ঘুমে ম’ত্ত হলো অষ্টাদশী। ঘুমের ঘোরে হঠাৎ করেই মনে হলো চিরকুটের কথা। গভীর ঘুম হঠাৎ করেই হালকা হতে শুরু করল। প্রিয়া তড়ি’গড়ি করে উঠে বসল। বালিশের পাশ থেকে মোবাইলটা বের করে সময় দেখল। হায় হায়! ৭ টা বেজে ৪০ মিনিট।

বাসা থেকে নদীপাড় হেঁটে যেতে কম’পক্ষে ১৫ মিনিট লাগবে। প্রিয়া তাড়াতাড়ি করে ফ্রেশ হতে চলে গেল। ফ্রেশ হয়ে এসে রেডি হয়ে টেবিল থেকে চিরকুটের কাগজটা হাতে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ল।

প্রিয়া রিকশার জন্য না দাঁড়িয়ে নদীর পাড়ের দিকে হাঁটা ধরল। অনেকখানি পথ যাওয়ার পর মনে মাঝে একটা ভয় শুরু হলো। প্রিয়া রাস্তা দাঁড়িয়ে দেখল কোনো রিকশা আসছে কি না। কিন্তু আজকে কোনো খালি রিকশা চোখে পড়ছে না।

প্রিয়া দাঁড়িয়ে না থেকে আবারও হাঁটা ধরল। কিছুক্ষণ হাঁটতেই মনের ভয়টা বাড়তে শুরু করল। সামনেই রাহাতের বাসা। রাহাতের আম্মু প্রিয়াকে দেখলেই বাসায় নিয়ে যাবে।

প্রিয়া দ্রু’ত হাঁটতে শুরু করল। রাহাতদের বাসা পেরুতেই স্বস্তি’র নিঃশ্বা’স ফেলল। কিন্তু এই স্ব’স্তিটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। সামনের দিকে তাকাতেই দেখল নিলয় হাসি হাসি মুখে এগিয়ে আসছে।

নিলয়কে দেখে প্রিয়ার মুখটা চুপসে গেল। এখন যদি বাসায় নিয়ে যায় তাহলে কি হবে? নিলয় প্রিয়ার সামনে এসে বলল,

” আরে প্রিয়া কোথায় যাচ্ছ তুমি?

প্রিয়া মিছি’মিছি হেসে বলল,

“একটু নদীর পাড়ে যাচ্ছি।

“কোনো কাজ আছে?

প্রিয়া এবার পড়ল মহাবিপদে। কি বলবে এখন? যদি জিজ্ঞেস করে কি কাজ? কি উত্তর দিবে প্রিয়া। প্রিয়া এদিক-সেদিক তাকিয়ে বলল,

“আমার একটা ফ্রেন্ড আসবে তো তাই দেখা করতে যাচ্ছি।

নিলয় কিছু বলতে যেতেই প্রিয়ার হাতের দিকে চোখ পড়ল। প্রিয়ার হাতে রঙিন কাগজ দেখতে পেল। প্রিয়া নিলয়ের দৃষ্টি অনুসরণ করে দেখল নিলয় প্রিয়ার হাতের দিকে তাকিয়ে আছে। সাথে সাথেই হাতটা পেছনে নিয়ে গেল। তা দেখে নিলয় মুচকি হাসল। কিছু বলল না।

প্রিয়া নিলয়ের হাসি দেখে স্ব’স্তি পেল। যাক নিলয় তাহলে চিরকুট নিয়ে কিছু বলবে না। নিলয় এবার বলল,

“বাসা থেকে নাস্তা করে বেরিয়েছো?

নিলয় প্রশ্ন করতেই প্রিয়ার মনে পড়ল নাস্তা না করেই রাস্তায় সে রাস্তায় বেরিয়েছে। কিন্তু নিলয়কে এই কথা বললেই নিলয় বাসায় নিয়ে যাবে। তাই প্রিয়া বলল,

“হ্যাঁ। নাস্তা করেই বেরিয়েছি।

“আমার কেন জানি মনে হচ্ছে তুমি মিথ্যা কথা বলছো। আমি আন্টিকে ফোন করে জেনে নেই।

প্রিয়া সাথে সাথে বাঁধা দিয়ে বলল,

“না না। আম্মুকে ফোন করার দরকার নেই। আমার ফ্রেন্ড অপেক্ষা করছে। তাই নাস্তা না করেই বেরিয়েছি। আমি বরং এখন যাই।

“এখান থেকে নদীর পাড়ে যেতে সময় লাগবে ৫ মিনিট। তোমার নাস্তা করতে লাগবে ৫ মিনিট। তুমি বরং নাস্তা করেই যাও। তোমার ফ্রেন্ডকে ১০ মিনিট অপেক্ষা করতে বল।

“আমি ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করে সাথে সাথেই ফিরে আসবো।‌ এখানে আসতে জাস্ট ১০ মিনিট সময় লাগবে।

নিলয় দুই হাত বুকে ভাঁজ করে দাঁড়াল। মুখে ক্ষানি’কটা গম্ভীর’তা ফুটিয়ে তুলে বলল,

“আমি কিছু শুনতে চাই না প্রিয়া। তুমি এখনি আমার সাথে বাসায় গিয়ে নাস্তা করে তারপর যাবে।

প্রিয়ার এবার কান্না আসার উপ’ক্রম। চিরকুট টা যদি দিতে না পারে। প্রিয়া সঠিক টাইমে না যাওয়ার যদি বাচ্চাটা চলে যায়। তাহলে কি হবে?

নিলয় প্রিয়ার বাম হাতটা ধরে বাসায় নিয়ে গেল। রাহাতের আম্মু নিলয় প্রিয়ার হাতটা ধরে রেখেছে দেখে বলল,

“আরে নিলয়, প্রিয়াকে কোথা থেকে ধরে নিয়ে এলি?

রাহাত হাতটা ছেড়ে দিয়ে বলল,

“চাচী, প্রিয়া বাসার সামনে দিয়ে নাস্তা না করেই ওর ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে যাচ্ছিল। তাই নাস্তা করার জন্য নিয়ে আসলাম।

“ঠিক করেছিস। নাস্তা না করে কেউ বের হয়? আমি তোদের নাস্তা এনে দিচ্ছি।

রাহাতের আম্মু নাস্তা আনতেই প্রিয়া তাড়াহুড়ো করে খেতে শুরু করল। কেননা না খাইয়ে প্রিয়াকে ছাড়বে না। যদি দেরি হবে চিরকুট পৌঁছাতে না পারার ভয় তত বেড়ে যাবে।

প্রিয়া নাস্তা করার মাঝে রাহাত বাহির থেকে বাসায় ফিরল। প্রিয়াকে নাস্তার টেবিলে দেখেই বলল,

“তোর কি কোনো কাজ নেই? সকাল সকাল আমাদের বাসায় চলে এসেছিস।

প্রিয়াকে কথাটা বলে সাথে সাথেই রাহাত বাসা থেকে বেরিয়ে গেল। রাহাতের কথা প্রিয়া বিশেষ গায়ে মাখল না। প্রিয়ার মাথায় কেবল চিরকুট দেওয়ার ভাবনা ঘুরপাক খাচ্ছে।

প্রিয়া খেয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গেল। মোবাইলে তাকিয়ে দেখল ৮ টা ১০ বাজে। প্রিয়া দ্রুত হেঁটে নদীর পাড়ে গেল। নদীর কাছাকাছি এসেই হাঁপাতে লাগলো।

প্রিয়া নদীর পাড়ে আসার পর একটা নয় কি দশ বছরের বাচ্চা এগিয়ে এলো। প্রিয়ার সামনে এসে হাত বাড়িয়ে বলল,

“কাগজ দাও।

বাচ্চাটার একহাত পেছনে আরেক হাত প্রিয়ার দিকে বাড়ানো। প্রিয়া ভ্রুঁ কুঁচকে বলল,

“তোমায় কিসের কাগজ দিবো?

“ভাইয়া বলেছে তুমি একটা কাগজ দিবে।

প্রিয়া বুঝতে পারল চিরকুট দাতা বাচ্চাটাকে পাঠিয়েছে। প্রিয়া হাতে থাকা রঙিন কাগজটা বাচ্চাটার হাতে দিল। বাচ্চাটা পেছন থেকে হাতটা বের করে প্রিয়া দিয়ে বলল,

“ভাইয়া বলেছে দিতে।

কথাটা বলেই বাচ্চাটা দৌড়ে চলে গেল।

#চলবে