চিলেকোঠার প্রেম পর্ব-০৩

0
571

#চিলেকোঠার_প্রেম

#Ishita_Rahman_Sanjida(Simran)

#পর্ব_৩

কাঠগোলাপের চারা হাতে নিয়ে ঠকঠক করে কাঁপছে সায়েন। জয়নব বেগম ক্রোধ নিয়ে তাকিয়ে আছে সায়েনের দিকে। যেন কাঁচা গিলে খাবে। জয়নব বেগম কঠোর কন্ঠে বললেন,’এগুলো কি সায়ু???’

সায়েন আর চুপ করে থাকলো না ঝটপট উত্তর দিলো,’মা আমাদের মনোবিজ্ঞান স্যার বলেছেন গাছ লাগানো ভালো। প্রতিদিন গাছের যত্ন করলে নাকি মনটাও ভালো হয়। যখন গাছে গাছে রং বেরঙের ফুল ফোটে তখন সেই সৌন্দর্য উপভোগ করলে মনটা নাকি আরো ভালো হয়ে যায়। জীবনে চলার পথে তো মনটাই সব। মন ভালো তো সব ভালো। তাইতো টাকা জমিয়ে গাছগুলো কিনে আনলাম।’

স্যারের কথা শুনে জয়নব বেগম কিছু বললেন না। তিনি বললেন,’কোথায় লাগাবি এইসব গাছ??’

সায়েন আমতা আমতা করে বলল,’ইয়ে মানে ছাদে। ছাদের টবগুলো তো সেইরকমই পড়ে আছে। গাছগুলো সেখানে লাগাই মা??’

‘ছাদে লাগাবি মানে??ছাদে যাওয়া মানা তুই জানিস না??’ মায়ের গম্ভীর কন্ঠে ভয় পেলেও সায়েন দমলো না। সে বলল,’কিন্তু মা এখন তো আমি আর ছোট নেই। যে ছাদে গেলে পড়ে যাব। তাছাড়া আমি তো শুধু সকাল বিকাল গাছে পানি দেব। এছাড়া আর ছাদে যাব না প্রমিস।’

জয়নব বেগম একপ্রকার জোর করেই রাজি হলেন। তিনি গটগট করে রুমে চলে গেলেন। গাছগুলো রেখে রুমে এসে উরাধুরা নাচতে লাগলো সে। তার মা যে এতো তাড়াতাড়ি রাজি হয়ে যাবে এটা ভাবতেই পারেনি সায়েন। গোসল সেরে খাওয়া দাওয়া সেরে রেডি হয়ে নিলো সে। বিকেল হতেই ভদ্র মেয়ের মতো মায়ের থেকে ছাদের চাবি নিলো। এক এক করে সব চারাগুলো ছাদে নিয়ে আসে। সাথে এক বালতি পানি।
সায়েন ছাদের দরজা আটকিয়ে আস্তে করে চিলেকোঠার ঘরের দরজা খুলল। আরাদ নিশ্চিন্ত মনে ঘুমাচ্ছে। সায়েন না তাকিয়ে থাকতে পারলো না।
‘ঘুমন্ত অবস্থায় এই ছেলেটাকে এতো মায়াবী লাগছে কেন?? ইচ্ছে করছে চিবিয়ে খেয়ে ফেলি। উফফফ বুকের ভেতর ধকধক করছে।নাহ বাবা এখন যাই।’
কথাগুলো বিড়বিড় করে বলতে বলতে বেরিয়ে আসলো সায়েন। তারপর ছাদের রেলিং ঘেঁষে গাছগুলো মাটির টবে পুঁতে দিলো। গাছে পানি দিয়ে যাওয়ার জন্য পিছনে ঘুরতেই চমকালো সায়েন। আরাদ দাঁড়িয়ে আছে। সায়েন তাড়াতাড়ি আরাদের হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল চিলেকোঠার ঘরে। তারপর আস্তে করে বলল,’ছাদে গেলেন কেন?? আশেপাশের সব বিল্ডিং গুলোতে এখন ছেলেমেয়েরা আসবে। আপনাকে এই ছাদে দেখে নিলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।’

‘আমি তো তোমাকে দেখেই গেলাম। বাই দা ওয়ে তুমি হঠাৎ ছাদে এই সময়ে??’

সায়েন হেসে বলে,’অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে আপনার জন্য। গাছ লাগানোর কথা বলে ছাদে আসার পারমিশন এনেছি মায়ের কাছে থেকে।’

আরাদ টাউজারের পকেটে হাত ঢুকিয়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলে,’আমার জন্য এতকিছু!!একটা অজানা অচেনা ছেলেকে এভাবে বিশ্বাস করাটা কি ঠিক??তুমি তো আমাকে বের করে দিতেই পারো??’

সায়েন চোখ কুঁচকে তাকায় তারপর বলে, ‘দেখুন আপনাকে দেখে ভালো লোক বলেই মনে হচ্ছে। আর আপনার মেমোরি লস হয়েছে। এজন্য আপনার জন্য খারাপ লাগছে আমার তাই আপনাকে সাহায্য করছি। আপনার জায়গায় অন্য কেউ হলেও আমি সাহায্য করতাম।’

আরাদ মুখ ঘুরিয়ে বিড়বিড় করে বলল, ‘ভাগ্যিস আমি এসেছি।’

‘কিছু বললেন??’
আরাদ সায়েনের দিকে তাকিয়ে বলে,’নাহ কিছু না। দু’দিন ধরে গোসল করছি না। যদি গোসলের ব্যবস্থা করে দিতে তো ভালো হতো।’

সায়েন মাথা নাড়িয়ে বলে উঠলো,’ঠিক!!তবে আজ গোসল করতে হবে না আপনার জ্বর আছে। কালকে গোসল করবেন। এমনিতেই আপনার শার্ট প্যান্ট শুকায়নি। ভাইয়া তার গেঞ্জি টাউজার খুজতেছে। আমাকে সন্দেহ ও করেছে অনেকবার।’

আরাদ হাসলো সায়েনের কথায়। সায়েন ওর জন্য এতো পজেটিভ যে মিথ্যা বলা চুরি করা সব করছে। আরাদ বলল,’ওকে। তবে আমার ভালো লাগছে না। গোসল করলে ভালো হতো।’

‘আচ্ছা ঠিক আছে। সন্ধ্যা নামুক তারপর গোসল করিয়ে দেব। সন্ধ্যায় মা পাশের বাসায় যাবে। তখনই গোসল করিয়েন। এখন যাই।’

সায়েন দ্রুত চলে যায়। আরাদ বুকে হাত গুজে জোরে শ্বাস ফেলে বলে,’উফফ বুকটা এরকম করছে কেন??কন্ট্রোল করতে পারছি না কেন??সায়েন নামক রোগে আক্রান্ত হয়ে গেছি আমি।’
আরাদ টান হয়ে শুয়ে পড়ে। এখানে শুয়ে থাকতে ভালো না লাগলেও কিছু করার নেই। এখানে থাকতে সে বাধ্য।
রাতে এক বালতি পানি নিয়ে ধীরে ধীরে ছাদে উঠে এলো সায়েন। জয়নব বেগমের পাশের বাসায় যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু সে যায়নি। লিলির সাথে গল্পে মেতেছেন তিনি। এই গল্প ঘন্টা দুয়েক এর মধ্যেও শেষ হবে না। এর সুযোগ নিয়ে সায়েন ছাদে গেল। হাতে তার গামছা লুঙ্গি আর আরাদের শার্ট। শার্ট শুকালেও প্যান্ট শুকায়নি। রৌদ্রে শুকাতে না দিলে কি শুকায়??
সায়েন চিলেকোঠার ঘরে টোকা দিয়ে বলল,’এই যে শুনছেন বেরিয়ে আসুন।’

আরাদ বেরিয়ে এসে দেখে সায়েন বালতির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আরাদকে দেখে সায়েন বলে উঠলো,’আপনার গোসল করার পানি।’

আরাদ চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে বলল,’এভাবে গোসলের করব আমি!!এই খোলা জায়গায়??’

সায়েন অবাক হয়ে বলে,’হ্যা!!কেন বলুন তো??’
আরাদ মাথা নাড়িয়ে বলল,’আমি তো জীবনেও এভাবে গোসল করিনি।’
আরাদের কথা শুনে সায়েন মৃদু চিৎকার দিয়ে বলল,’তার মানে আপনার মনে পড়ে গেছে আপনি কিভাবে গোসল করতেন??’
আরাদ বোকা বনে গেলো। এইভাবে সায়েন তাকে ফাসিয়ে দিলো??সব মনে আছে এটা জানলে তো সায়েন ওকে বাড়ি থেকে বের করে দেবে। কিন্তু আরাদ তো যাবে না। সে আমতা আমতা করে বলল,’না মানে শুধু গোসলের কথা মনে পড়লো আরকি। আস্তে আস্তে সব মনে পড়ে যাবে।’

সায়েন নিজের কপালে হাত রেখে বলল,’হায় আল্লাহ!! কোথায় বাবা মা ঠিকানার কথা মনে করবে তা না করে গোসলের কথা মনে করছে।’
সায়েনের মুখের ভঙ্গি দেখে আরাদ না হেসে পারল না। পুরো বাচ্চা বাচ্চা লাগছে সায়েনকে।

‘আচ্ছা এসব কথা না বলে গোসল করি হ্যা।’
সায়েন মাথা দোলায় বলে,’আমি ওপাশ ফিরে দাঁড়াই আপনি গোসল করুন।’

গোসল করে মাথার ব্যান্ডেজ ভিজিয়ে ফেলেছে আরাদ। সায়েন শার্ট আর লুঙ্গি আরাদের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,’আপনি চেঞ্জ করুন আমি এইড বক্স নিয়ে আসি।’

লুঙ্গি দেখে আরাদ তাজ্জব বনে গেল। অবাক দৃষ্টিতে সায়েনের দিকে তাকিয়ে বলে,’লুঙ্গি!! কিন্তু আমি তো লুঙ্গি পরতে পারি না। কোনদিন পরেছি কি না মনেও পরছে না।’

সায়েন বলল,’আচ্ছা ঝামেলা তো!!! আপনি দেখছি কিছুই পারেন না। আমার পিন আছে।সেটা দিয়ে কোনমতে আটকাইয়েন। আমি আপনার জন্য জামাকাপড় কিনে আনব। আপাতত এটা পরে কাজ চালান।’

সায়েন নিচে চলে আসে। কয়েকটা পিন মশার কয়েল আর এইড বক্স নিয়ে আসে। আরাদ কোনরকমে লুঙ্গি ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আরাদকে এই অবস্থায় দেখে সায়েন হাসি চেপে রাখতে পারলো না। খিলখিল করে হেসে উঠলো। আরাদ গোমড়া মুখে বলে,’বেশি বেশি করে মজা নাও। আমার অবস্থা বেহাল আর তুমি মজা নিচ্ছো??’

সায়েন হাসি থামিয়ে বললো,’আপনাকে অদ্ভুত লাগছে তাই হাসি পাচ্ছে। এই নিন পিন দিয়ে আটকে নিন। তাহলে ধরে রাখতে হবে না।’
বলেই পিনগুলো আরাদের দিকে এগিয়ে দিল। আরাদ পিন হাতে নিয়ে উলটপালট করে দেখে বলে,’কিভাবে লাগায় এটা??’

‘উফফফ সত্যি আপনি কিছু পারেন না।’ সায়েন পিন নিয়ে ভালো করে লুঙ্গিটা আটকিয়ে দিলো। আরাদ ঘুরে ফিরে নিজেকে দেখে বলল,’ভেরি ব্যাড। খারাপ লাগছে দেখতে। লুঙ্গি কার এটা??’

‘আমার বাবার। আচ্ছা আমি এখন যাই। টাটা, আবার দেখা হবে।’

সায়েন বালতি আর শাফিনের জামাকাপড় নিয়ে চলে যায়। শাফিন এখনও ফেরেনি। ওর ভেজা জামাকাপড় খাটের তলায় রেখে সায়েন নিজের রুমে চলে আসে। জয়নব বেগম এখনও লিলি খালার সাথে কথা বলছে। এই ফাঁকে সায়েন রান্নাঘর থেকে খাবার বেড়ে নিলো।রুই মাছ রান্না হয়েছে আজকে। বড় এক পিস মাছ নিয়ে দৌড়ে সে চিলেকোঠার ঘরে গেল। কারণ এই সুযোগ আরাদকে খেতে দেওয়ার। আরাদ আবার সায়েনকে দেখে অবাক হয়ে বলল,’আরেহ আবার এলে যে??’

সায়েন হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,’আপনার জন্য খাবার নিয়ে এসেছি। পরে আর সুযোগ পাব না।’

খাবার দিয়ে এক মুহুর্ত দেরি করলো না সায়েন। দৌড়ে গিয়ে পড়ার টেবিলে বসলো। কারণ কথা শেষ করে ওর মা আসবে দেখতে।
আজকে সায়েনের খুশি খুশি লাগছে। আরাদের কিছুটা হলেও মনে পড়েছে। আস্তে আস্তে সব মনে পড়ে যাবে। পড়ায় মন দিলো সায়েন।

…………………..

গোডাউনে পাঁচজন কে বেঁধে রাখা হয়েছে। সবার মুখ কালো কাপড় দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। পাশে দশ বারো জন গার্ড দাঁড়িয়ে আছে। জোনায়েদ হকিস্টিক দিয়ে অনেক মেরেছে ওদের। ক্লান্ত হয়ে সে চেয়ারে বসে পড়লো। হঠাৎ দরজা দিয়ে আরাদকে ঢুকতে
দেখে তব্দা খেয়ে যায় জোনায়েদ। সাথে গার্ডগুলো অবাক হয়ে যায়। আরাদ একহাতে লুঙ্গি সামলিয়ে আসছে। জোনায়েদ হাত দিয়ে চোখ ডলে আবার তাকালো। বড়বড় চোখে তাকিয়ে আছে সে। আরাদ কাছে আসতেই সে বলল,’এটা আমি কি দেখছি??এটা আরাদ তো??’
আরাদ জোনায়েদের গালে হালকা চাপড় মেরে চেয়ারে বসে বলল,’এটা আমিই!! ঠিকই দেখছিস তুই!!!’

‘কি রে ভাই?? লুঙ্গি তো জীবনেও পরিস না। তাহলে আজকে কি হলো???’

আরাদ পায়ের উপর পা তুলে বলল,’সময়ের সাথে মানিয়ে নিতে শিখেছি। এখন বল ওরা কোথায়??’
জোনায়েদ সামনের দিকে ইশারা করে বললো,’ওরা সব ফাহিমের লোক।’

‘জানি আর এও জানি ওরা আমার প্রজেক্ট চুরি করার জন্য আমার পিছু নিয়েছিল। কিন্তু পারেনি।’

‘তুই সব জানতি যায়?? জোনায়েদ আরাদকে জিজ্ঞেস করেও কোন উত্তর পেল না। তাড়াতাড়ি বিরিয়ানীর ব্যবস্থা করলো সে। বেচারা গুলো এতো মার খেয়েছে যে বিরিয়ানী গলা দিয়ে নামছে না। কিন্তু আরাদকে ওরা ভালো করেই চেনে।না খেলে ওদের খেয়ে ফেলবে আরাদ।

বিরিয়ানী খাওয়া শেষে দুই বোতল ওয়াইন নিয়ে বসেছে জোনায়েদ আর আরাদ। লুঙ্গি গুটিয়ে পা ভাঁজ করে বসেছে আরাদ। জোনায়েদ বোতলে চুমুক দিয়ে বলল,’এবার সবটা খুলে বল। আমার তর সইছে না। কোথায় আছিস তুই এখন??’

‘চিলেকোঠার ঘরে।’ আরাদের উওরে ভ্রু জোড়া কুঁচকে এলো জোনায়েদের। সে ভনিতা না করেই বলল,’দেখ ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বলবি না। সোজা ভাবে বল। সেদিন মিটিং এ প্রেজেন্টেশন তৈরির কাজ বুঝিয়ে নতুন প্রজেক্ট নিয়ে তুই বাড়িতে ফিরিসনি। কোথায় গিয়েছিলি???সব বল।’

আরাদ বড় একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলতে লাগলো,’আমার পেনড্রাইভে পুরো প্রজেক্টের মুল কপি ছিল। একাই বের হয়েছিলাম। কিন্তু পথে একটা গাড়ি আমাকে ফলো করে। আমি ওদের চোখে ধুলো দেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু লাভ হলো না। কারণ বৃষ্টির কারণে পুরো রাস্তা ফাঁকা ছিল। হঠাৎ গাড়ি দুটো আমার গাড়ির সামনে চলে আসে। গাড়ি থেকে নেমে আমি ওদের সামনাসামনি হই। আমার সাথে হাতাহাতি মারামারি হয়। মাথায় আঘাত পাই আমি। কোনরকমে ওদের থেকে পালিয়ে আসি। আর তারপর,,,,,,’

জোনায়েদ উৎফুল্ল হয়ে বলল,’তারপর কি হলো??’

আরা সটান হয়ে শুয়ে পড়লো। খোলা আকাশের নিচে ওরা। আকাশে হালকা মেঘ। বিকালে একটু বৃষ্টি হয়েছিল। আরাদ আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,’জানিস এই নভেম্বরের বৃষ্টি আমার একদম পছন্দ নয়। কিন্তু এই বৃষ্টি যে আমার মনে অনুভূতি জাগিয়ে দেবে তা ভাবতেও পারিনি। সায়েন!!মেয়েটা এমন কেন??প্রথম দেখাতেই আমার সমস্ত অনুভূতি গুলো নিজের দখলে নিয়ে নিয়েছে।’

আরাদ কাত হয়ে জোনায়েদের দিকে তাকিয়ে বলল,’তুই ঘুমন্ত অবস্থায় কোন মেয়েকে দেখেছিস কখনো??’
জোনায়েদ তাচ্ছিল্য করে হেসে বলে,’আমি কেন তুইও কোনদিন দেখিসনি?? আবার জিজ্ঞেস করছিস কেন??’

আরাদ আবার আকাশের দিকে তাকালো বলল,’ঘুম থেকে উঠে দেখি ঘরময় আলোকিত হয়েছে মোমবাতির আলোয়। সেই আলোতে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম যে একটা মেয়ে আমার পায়ের কাছে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে। ওর মুখটা তখন এতো মায়াবী লাগছিল যে নিজেকে কন্ট্রোল করতে কষ্ট হচ্ছিল। অবাধ্য মনেটা বারবার ওই ঘুমন্ত মুখটা ছুঁয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছিল। ওভাবে কতক্ষন তাকিয়ে ছিলাম নিজেও বুঝতে পারিনি। হঠাৎ করে আমি আমার মধ্যে থেকে হারিয়ে গেছি। মনে হচ্ছে এই মেয়েটার কাছে যেকোন উপায়ে আমার থাকতে হবে। ছেড়ে দিলে চলবে না। তাই থেকে গেলাম। তবে চিলেকোঠার ঘরে। এই মুহূর্তে আমার কাছে ওর কাছাকাছি থাকাটা জরুরি খুব।’

জোনায়েদ হা হয়ে আরাদের কথা শুনছিল। আরাদের কথা শেষ হতেই সে বলল,’থাকছিস কিভাবে তুই??এসি ছাড়া, নোংরা একটা ঘরে??’
আরাদ হাসলো, আকাশের দিকে চোখ রেখে বলল,’আমার যে হাত পা বাঁধা। ওখানে থাকতেই হবে আমাকে।’

জোনায়েদ বুঝলো একে কিছুই বোঝানো যাবে না। ঘাড়ত্যাড়ার বড় ঘাড়ত্যারা আরাদ।আরাদ চট করে উঠে দাড়ালো বলল,’আমাকে যেতে হবে চল পৌঁছে দিবি আমাকে??’
বলেই আরাদ গাড়ির দিকে হাঁটা দিল। জোনায়েদ পিছু পিছু গেল। সায়েনের বাড়ির সামনে এসে থামলো গাড়ি। জোনায়েদের থেকে নিজের ফোনটা নিলো। এতক্ষণ চার্জে ছিল ওর ফোন। আরাদ গাড়ি থেকে নেমে বলল,’যখন ফোন করে এখানে আসতে বলব তখনই চলে আসবি। আর সায়েনের উপর নজর রাখবি যাতে কোন ছেলে ডিস্টার্ব করতে না পারে।’

জোনায়েদ মাথা দুলিয়ে বলে,’ওকে!! খুব শিগগিরই ভাবি নিয়ে ফিরতে হবে কিন্তু।আরেকটা কথা,লুঙ্গিতে বেশ মানিয়েছে তোকে। ফার্সটাইম দেখলাম,তোর পরিবার দেখলে তো হার্ট অ্যাটাক করতো।’

‘হুম!! এখন এই লুঙ্গি পরে আমাকে ছাদে উঠতে হবে তাও পাইপ বেয়ে। যা এখান থেকে।’
জোনায়েদ হাসতে হাসতে চলে গেল। নামার সময় অনেক কষ্টে নেমেছে সে। এখন ওঠার পালা। খুব সাবধানে ছাদে উঠে গেল আরাদ। চিলেকোঠার ঘরে গিয়ে দেখলো কালো কুচকুচে বেড়ালটা আরামে ঘুমাচ্ছে। সায়েন যে খাবার দিয়ে গিয়েছিল তা সব সাবাড় করে ফেলছে সে। অবশ্য ভালোই হয়েছে। আরাদ খেয়েই এসেছে। তাই সে বিড়ালের পাশ ঘেঁষে শুয়ে পড়লো।

সকাল বেলা শফিক সাহেব ঘরময় ঘুরছে আর কিছু খুজতেছে। কিন্তু পাচ্ছে না। সায়েন টেবিলে বসে খাচ্ছিল সাথে শাফিন ও আছে। শাফিন তার সল্টুকে খাওয়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু সল্টু কিছুতেই খেতে চাইছে না। খাবে কিভাবে??পেটে জায়গা থাকলে তো??শাফিন তবুও জোর করছে। জয়নব বেগম টেবিলে এসে খেতে বসতেই শফিকুল ইসলাম এসে বললেন,’জয়ু, আমার লুঙ্গি টা দেখেছো??’

সায়েনের গলায় খাবার আটকে গেল। সে জোরে জোরে কাঁশতে লাগলো। হাত এগিয়ে পানি নিয়ে খেয়ে শান্ত হলো। জয়নব বেগম বিরক্ত হয়ে সায়েনের দিকে এক পলক তাকিয়ে বলল,’কোন লুঙ্গি??’

‘ওই যে সাদার মধ্যে ছাই রঙের ওইটা!! কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না রুমেই তো রেখেছিলাম কোথায় গেল??’

শাফিন সাথে সাথে বলে উঠলো,’বাবা আমি ও আমার ব্রাউন রঙের গেঞ্জি আর টাউজারটা পাচ্ছি না। অদ্ভুত তোমার লুঙ্গি হাওয়া সাথে আমার ও।’

সায়েন নিজের আঙ্গুল কামড়াচ্ছে। এখন কি হবে??

#চলবে,,,,,,,,,,,