চিলেকোঠার প্রেম পর্ব-০৪

0
540

#চিলেকোঠার_প্রেম

#Ishita_Rahman_Sanjida(Simran)

#পর্ব_৪

সায়েন কোনমতে নিজেকে সামলিয়ে খাচ্ছে।জয়নব বেগম খাওয়া বাদ দিয়ে শফিকুল ইসলামের দিকে তাকিয়ে আছেন। তিনি অনেকটা বিরক্ত হয়েই বলে,’তো কি হয়েছে?? কোথাও হয়তো রেখেছো!!পরে পেয়ে যাবে। এখন কি অন্য লুঙ্গি পরা যায় না??’

‘হ্যা যায়তো কিন্তু ওইটা আমার প্রিয় লুঙ্গি। পরেও শান্তি পাই।’

‘একদিন অশান্তিতে থাকলে কিছু হবে না।’

শফিক সাহেব বিড়বিড় করে বলল,’যে অশান্তি আমার ঘাড়ে চেপেছে তার কাছে লুঙ্গি তো সামান্য।’
বলতে বলতে তিনি রুমে চলে গেল। খাওয়া শেষে সায়েন রেডি হতে চলে গেছে। কলেজে যাবে সে। শাফিন আর শফিকুল ইসলাম গেইট পেরিয়ে রাস্তায় আসতেই পিছনে থেকে সায়েন বলে ওঠে,’আব্বু দাঁড়াও।’
দু’জনেই পিছনে ঘুরে তাকালো। সায়েন কাছে এগিয়ে এসে বলল,’আব্বু আমার টাকা লাগবে।’

‘ওহ দিচ্ছি।’ শফিকুল ইসলাম একশ টাকা বের করতেই সায়েন বলল,’উহু এক হাজার টাকা লাগবে।’
শাফিন এতে তেতে উঠল বলল,’তুই কালকে আমার থেকে টাকা নিলি আবার আজকে আব্বুর কাছে এসেছিস???’

সায়েন ধমকে উঠে বলে,’তুই চুপ থাক নাহলে তোকে জরিমানা করা হবে।’
শাফিন হতাশার নিঃশ্বাস ছাড়লো। শফিকুল ইসলাম গম্ভীর কণ্ঠে বলল,’ভাইয়ার সাথে এভাবে কথা বলছো কেন??শাফিন যদি তোমাকে টাকা দিয়েই থাকে তাহলে এখন এতো টাকা দিয়ে তুমি কি করবে??’

সায়েন ছোট ছোট চোখে তাকিয়ে বলল,’তুমিও কৈফিয়ত চাইছো হুম!!টংয়ের দোকানে বসে সিগারেট খাওয়ার ছবিটা কি মা’কে দেখাব?? তাহলে তোমাদের ডিভোর্স কনফার্ম।’
সায়েন ব্ল্যাকমেইল করছে। শফিকুল সাহেব নিরুপায় হয়ে টাকা দিয়ে দিলো। চকচকে নোটে চুমু খেয়ে সায়েন দৌড়ে চলে গেল। শাফিন আর ওর বাবা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতেছে। শাফিন বলল,’মেয়ে হয়ে বাবা মায়ের ডিভোর্সের জন্য লাফালাফি শুরু করে দিয়েছে।’

চিলেকোঠার জানালা দিয়ে আরাদ সবটাই দেখলো। কিন্তু ওদের কথাগুলো শুনতে পায়নি। তবে সে বুঝতে পেরেছে যে ওদের কথা কাটাকাটি হচ্ছে। আরাদ হেসে জানালা বন্ধ করে দিল।
শাফিন ভার্সিটি চলে গেছে আর সায়েন কলেজে। পরীক্ষার বেশি সময় নেই পাঁচমাস আছে। কলেজে যেতেই দিশার সাথে দেখা। সায়েন ওকে দেখেই বলে উঠলো,’ওরে দিশা আমি যে দিশাহারা!!একটা বুদ্ধি দে রে বইন।’

দিশার ভ্রু কুঁচকে এলো। সায়েন প্রায়ই এই ডায়লোগ দিবে ওকে দেখে। দিশা বলে উঠলো,’কি হয়েছে??কি বুদ্ধি নিবি।’
সায়েন দিশাকে টেনে নিয়ে ক্যান্টিনে ঢুকলো। দুজনে কফি অর্ডার করলো। তারপর সায়েন একে একে সব ঘটনা খুলে বলে। দিশার হাত আপনাআপনি গালে চলে গেছে। মুখটা হা হয়ে গেছে। সায়েন অসহায় ফেসে তাকিয়ে বলে,’কিছু একটা উপায় দে রে??আমি যে আর পারছি না।’

দিশা জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে বলল,’এসব কি সত্যি সায়ু?? আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। তোর মায়ের চোখে এতবড় সত্যি লুকালি কিভাবে??যেখানে তোর মা আমাকে তোদের বাড়িতে এলাও করে না সেখানে একটা অজানা অচেনা ছেলেকে লুকিয়ে রেখেছিস কিভাবে??তোর মা তো সিআইডির অফিসার।এতো কিছু তার চোখে লুকাচ্ছিস কিভাবে?? আমার তো ভাবতেই হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে।’

সায়েন কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,’তাহলে ভাব আমি এতদিন কিভাবে সব সামাল দিয়েছি। আর এই ছেলেটার কিছু মনেই পড়ছে না। কিভাবে এর স্মৃতি ফেরাব??’

‘আমার মনে হয় ডক্টরের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত।’

‘টাকা পাব কই?? আমার বাপের কি কারি কারি টাকা আছে নাকি?? তাছাড়া আরাদ বলেছে ও সুস্থ হলেই চলে যাবে।’

‘তাহলে চাপ নিস না কটা দিনই তো মাত্র। কোনরকমে চালিয়ে দে।’

সায়েন গালে হাত দিয়ে বলল,’সেটাই তো প্রবলেম!! কটা দিন চালাব কিভাবে?? মায়ের কাছে তো ধরা পরেই যাব। এজন্যই তো বুদ্ধি চাইছি। দে বুদ্ধি??’

দিশা মাথা নাড়িয়ে বলল,’তোর মায়ের কাছে আমি স্যালেন্ডার। আমার কাছে বুদ্ধি চাস না। তুই নিজেই বুদ্ধি খুঁজে নে। আমার মনে হয় তুই পারবি। আর অল দা বেস্ট।’

দুজনে কিছুক্ষণ কথা বলে ক্লাসে চলে গেল। ক্লাস শেষ করে প্রাইভেট পড়ে বাড়িতে ফিরতে ফিরতে বিকেল হয়ে এলো। আসার পথে আরাদের জন্য টিশার্ট আর দুটো টাউজার কিনে এনেছে। ব্যাগ নিয়ে রুমে রাখতেই ওর বাবার আর্তনাদ শোনা গেল। সায়েন দৌড়ে গেল বাবা মায়ের রুমে। ওর বাবা উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। মা কোমড়ে আইসব্যাগ চেপে ধরে আছে। সায়েন কাছে গিয়ে বলল,’কি হয়েছে আব্বু??ব্যথা পেয়েছো কিভাবে??’

শফিকুল সাহেব হাত উঁচিয়ে বলল,’আমর লুঙ্গি!!!’
সায়েনের চোখদুটো বড়বড় হয়ে এলো। ওর বাবার হাতে লুঙ্গির ছেঁড়া অংশ। এটা তো আরাদকে পরতে দিয়েছিল তাহলে ওর বাবার হাতে কিভাবে এলো??তার মানে আরাদকে দেখে ফেলেছে?? বাবার চিন্তা রেখে এখন আরাদের চিন্তা হচ্ছে। এখন কি হবে??জয়নব বেগম ধমক দিয়ে বললেন,’চুপ থাকতে পারো না?? তখন থেকে বাড়াবাড়ি করেই যাচ্ছো।’

‘আমি নিশ্চিত চিলেকোঠার ঘরে আমার লুঙ্গি আছে।’
জয়নব বেগম বিরক্ত সূচক শব্দ বের করে বলল,’আরেকবার লুঙ্গি লুঙ্গি করলে জীবনেও লুঙ্গি পরতে দেব না বলে দিলাম কিন্তু। সায়েন যাও রুমে।’

সায়েন মাথা নাড়িয়ে চলে এলো কিন্তু রুমে গেলো না দৌড়ে ছাদে চলে গেল। চিলেকোঠার ঘরের দরজা টান দিলো কিন্তু খুলল না। সায়েন দরজা টানাটানি করতে করতে বলল,’আরাদ দরজা খুলুন। আমি সায়েন।’

সায়েনের গলার আওয়াজ শুনে আরাদ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল,’দরজা খোলা যাবে না আমার অবস্থা খারাপ। তোমার বাবা আমার লুঙ্গি ছিঁড়ে নিয়ে গেছে।’

সায়েন অবাক হয়ে বলে,’কিন্তু কিভাবে??আব্বু আপনাকে দেখেনি তো??’

‘না দেখেনি। তুমি আগে পরার জন্য কিছু দাও এভাবে কতক্ষন থাকব??’

‘আচ্ছা আমি আসছি।’ সায়েন দ্রুত রুম থেকে টাউজার এনে দিলো আরাদকে। টাউজার পরে আরাদ দরজা খুলে দিল। সায়েন দ্রুত ভেতরে ঢুকে বলল,’কি হয়েছে বলুন এবার।’

‘দরজা খোলাই ছিল। এখানে তেমন বাতাস না আসায় আমি দরজা খোলা রেখেছিলাম। হঠাৎ দেখি তোমার বাবা আসছে। তাড়াহুড়ো করে দরজা আটকাতে গিয়ে লুঙ্গির এক কোণা দরজার বাইরে রয়ে যায়। ব্যাস তোমার বাবা দেখে ফেলে। আমার লুঙ্গি আমার লুঙ্গি বলে টানতে লাগলো। আমিও টানলাম, শেষে ছিড়েই নিয়ে গেল। আর ধড়াস করে পড়ে গেল।’

আরাদের কথার ভঙ্গিমা দেখে সায়েন হাসতে লাগলো। হাসতে হাসতে এক প্রকার গড়াগড়ি খাচ্ছে সায়েন। সায়েনের হাসিতে মুগ্ধ আরাদ। মেয়েটা এতো চন্ঞ্চল কেন??আরাদ তা ভেবে পায় না। খুব করে ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করে ওর। পাছে সায়েন কিছু বলে যদি এই ভয়ে ছোঁয় না। না ছুঁলে কি ভালোবাসা হয় না?? অবশ্যই হয়। আর সেভাবেই সায়েনকে সে ভালোবাসবে। আরাদ বলল,’হাসি থামাও তোমার মা বাবা নিশ্চয়ই এখানে আসবে দেখতে। তখন কি হবে??’

সায়েনের মুখের হাসি গায়েব হয়ে গেল। সত্যি তো!!এটা তো সায়েন ভেবে দেখেনি। সে বলল,’এখন কি হবে??’
সায়েনের ভিতু চোখ দেখে আরাদ আবার হাসলো বলল,’চিন্তা করো না। আমি সামলে নেব। তুমি এখন যাও।’

‘কিভাবে সামলাবেন??’

আরাদ কলার টেনে ঠিক করে বলল,’তখনই বুঝতে পারবে। এখন তাড়াতাড়ি যাও।’

আরাদের কথায় সায়েন রুমে চলে আসলো। গরম লাগছে প্রচুর। শীত পড়তে শুরু করে দিয়েছে আর সায়েনের গরম লাগছে। ভয়ের কারণে ঘাম ছুটে গেছিলো সায়েনের তাই গোসল করে ঠান্ডা হলো সে। সন্ধ্যা নেমে এসেছে ততক্ষণে। চুল ঝেড়ে টেবিলে বসে খাচ্ছে সায়েন। তখনই দেখলো জয়নব বেগম ধীর পায়ে ছাদে যাচ্ছেন। খাওয়া বাদ দিয়ে টেবিলে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে দিল সায়েন। ওর মা যাচ্ছে তারমানে আজকে সে ধরা পড়ে যাবে। খাওয়া আর হলো না সায়েনের। কিছুক্ষণ বাদে জয়নব বেগম ফিরে এলেন। সায়েন নিচের দিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু ওর দৃষ্টি জয়নব বেগমের দিকে। আড়চোখে সে মা’কে দেখছে। কিন্তু জয়নব বেগম সোজা রুমে চলে গেলেন। সায়েন চমকে উঠে। তারমানে সে আরাদকে দেখেনি?? গপাগপ করে খেয়ে নিল সায়েন তারপর দৌড়ে ছাদে চলে গেল। জয়নব বেগম আর বের হবেন না সায়েনের বাবাকে রেখে। তাই সায়েন চিলেকোঠার ঘরে গেল। আরাদ তোশকের উপর টান হয়ে শুয়ে আছে। সায়েন আরাদের পাশে বসে বলল,’আমার মা না এসেছিল?? আপনাকে দেখেছিল কি??’

আরাদ উঠে বসে সেই মন কাড়া হাসি দিয়ে বলল,’হ্যা এসেছিল। আমি বলেছি আন্টি আমার কিছু মনে পড়ছে না তাই আপনার মেয়ে আমাকে এখানে থাকতে দিয়েছে। ব্যাস উনি গলে গেলেন। তারপর বললেন তুমি এখানে থাকতে পারো কোন সমস্যা নেই।’

সায়েন চমকে বড়বড় চোখে তাকিয়ে বলল,’মা সত্যি এসব বলেছে??আই ক্যান্ট বিলিভ ইট।’

সায়েনের কথা শুনে আরাদ হাসলো বলল,’ধূর বোকা!! তোমার মা এসে আমাকে দেখেনি।’

‘তাহলে কোথায় ছিলেন আপনি??’

আরাদ উপরের দিকে ইশারা করে বললো,’এই ঘরের চালে ছিলাম। খুব কষ্ট করে উঠতে হয়েছে।’
সায়েন মন খারাপ করে বললো,’আমার জন্য আপনার কষ্ট করতে হয়েছে তাই না??’

‘নাহ বরং আমার জন্য তোমার কষ্ট হচ্ছে।’

‘আচ্ছা আপনার কি কিছু মনে পড়ছে না??’

আরাদ ঠোঁট উল্টে জবাব দিলো,’নাহ কিছু মনে পরছে না।’

সায়েন স্বর নিচু করে বলল,’ওহ।’

‘আজকেও কি তোমার ভাইয়ার টাউজার দিয়েছো আমাকে??’

‘নাহ এগুলো কিনে এনেছি। বাজারের মোড়ের ফুটপাতে অনেক পাওয়া যায়। তিনটা টিশার্ট তিনশ টাকা আর দুটো টাউজার পাঁচশত টাকা।’
আরাদের এবার হার্ট অ্যাটাক হওয়ার উপক্রম। টাউজারটা টেনে দেখলো সে। যেখানে ওর একেকটা টিশার্টের দাম দুই হাজার থেকে পঁচিশশ টাকা। বাকিগুলো নাহয় বাদই দিলো। সেখানে সে আড়াইশ টাকার টাউজার পরেছে!!এসব যদি আরাদের মা দেখতো তাহলে অজ্ঞান হয়ে যেত। আরাদ তবুও নিজেকে সামলিয়ে বলল,’অনেক টাকা খরচ করে ফেললাম তোমার তাই না??’

‘ওসব কিছু না। ভাইয়া আব্বুর কাছ থেকে টাকা নেওয়া কোন ব্যাপার না।’

‘কি বলে নাও টাকা??মানে কোন রিজন তো দেখাতে হবে??’

সায়েন হাসলো বললো,’ভাইয়া একবার তার গার্লফ্রেন্ডের সাথে ফুচকা খাচ্ছিল। দেখেই কয়েকটা ছবি তুললাম। তারপর আর কি?? শুরু হলো ব্ল্যাকমেইল। টাকা না দিয়ে যাবে কোথায়??আর আব্বুর সিগারেট খাওয়ার ছবি তুলে রেখেছি। দুজনকেই ব্ল্যাকমেইল করি।’

বলেই সায়েন হাসতে লাগলো। আরাদ সায়েনের এই পাগলামি গুলো উপভোগ করতে লাগল। বেশিক্ষণ থাকলো না সায়েন চলে গেল রুমে। চুপিসারে খাবার দিয়েও গেলো আরাদকে। তবে আজকে আরাদ খেয়ে নিলো। তারপর ফোন হাতে নিয়ে জোনায়েদ কে কল করে বলল সে যেন আরাদকে পিক করতে আসে। পাইপ বেয়ে নেমে এলো আরাদ। জোনায়েদ গাড়ি নিয়ে হাজির। আজকে প্রজেক্ট নিয়ে বড় একটা মিটিং হবে। কয়েকজন ফরেনার এসেছে আরাদের সাথে মিটিং করতে। রাত ছাড়া সে এখান থেকে বের হতে পারবে না বলে মিটিং টা রাতেই করবে সে। আরাদ গাড়িতে উঠে বলল,’আগে আমার ফ্ল্যাটে চল। রেডি হয়ে তারপর যাব। বাই দা ওয়ে মা’কে কি বলেছিস??’

জোনায়েদ ড্রাইভিংয়ে মন দিয়ে বলল,’বলেছি নতুন প্রজেক্ট টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই তোকে কয়েকদিন ব্যস্ত থাকতে হবে। এজন্য তুই বাড়িতে ফিরতে পারছিস না। তারপর আন্টি কিছু বলেনি।’

‘হুম। আর সায়েন!!!’

‘ভাবির পিছনে লোক লাগিয়ে দিয়েছি। সবসময় তারা ভাবির উপর নজর রাখছে।’

আরাদ মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল,’গুড।’

সাতাশ তলা ভবনের দশতম তলায় আরাদের নিজস্ব ফ্ল্যাট। সেখানে আরাদের যাবতীয় জিনিস পত্র আছে। দামি পোশাক,হাতে ব্রান্ডের ঘড়ি,পায়ে নিউ সু পড়ে তৈরি হয় আরাদ। এখন যদি এইরকম অবস্থায় সায়েন ওকে দেখতো তাহলে নিশ্চয়ই হ্যাবলার মতো তাকিয়ে থাকতো। এটা ভেবেই হাসলো আরাদ। কড়া পারফিউম লাগিয়ে জোনায়েদের সাথে বের হলো আরাদ। মিটিং এ সবাই এসে পড়েছে। আরাদ গিয়ে নিজের আসনে বসলো। ফরেনারদের মধ্যে একজন মেয়ে আছে। বয়স তাঁর ত্রিশের কোঠায়। অথচ তাকে দেখলে আঠারো বছরের যুবতী মনে হবে। মেয়েটা অদ্ভুত দৃষ্টিতে আরাদকে দেখছে আর হাতের কলম নাড়াচ্ছে। আরাদ তা দেখে হাসলো। এরকম কত মেয়েই ওকে এভাবে দেখেছে তার হিসাব নেই। তবে এই দৃষ্টি আরাদ উপেক্ষা করলো না। সে ঝুকে কলমটা নিয়ে নিলো। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কলমটা দেখে বলল,’দা পেন ইজ ভেরি বিউটিফুল। আই লাইক ইট। ক্যান আই হ্যাভ ইট??’

মুহূর্তেই মেয়েটার মুখে ভয়ের ছাপ দেখা দিলো। আরাদ তা দেখে ঘাড় কাত করে হাসলো। এবং সাথে সাথে কলমটা ভেঙে দুটুকরো করে ফেলল। কলমের ভেতর থেকে ছোট ক্যামেরাটা বের করে গুড়িয়ে দিলো। তারপর মেয়েটার দিকে ক্রোধ নিয়ে তাকিয়ে বলল,’ইউ প্রোবাবলি ডোন্ট নো মি!!বাট ফাহিম নোওস মি!!ইউর প্ল্যান হ্যাজ নট বিন সাবমিটেড।’

বলেই আরাদ হাসলো। মেয়েটা ঝট করে দাঁড়িয়ে পড়লো। কোমড়ে হাত দেওয়ার আগেই সাতটা রিভালবার মেয়েটার চারিদিকে ঘিরে ধরলো। আরাদের ঠোঁটের কোণে সূক্ষ্ম হাসি বিদ্যমান। মেয়েটা ভাবতেও পারেনি যে ওর প্ল্যান ধরে ফেলবে আরাদ। কার মনে কি চলছে সেটা সহজেই ধরে ফেলে!!কি ধাতুর তৈরি ছেলেটা??আরাদ মেয়েটার ব্যবস্থা করতে বলে জোনায়েদ কে। মিটিং ক্যান্সেল করে সে চলে আসে। প্রয়োজনে কালকে আবার মিটিং করবে সে।

আগের পোশাক পরে সে সায়েনের চিলেকোঠার ঘরে হাজির হয়। তবে এখন সায়েনকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে। ঘর থেকে বের হয়ে ছাদে এসে দেখলো ছাদের দরজা খোলা। দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেল আরাদের মাথায়। আস্তে আস্তে সে সায়েনের রুমে চলে এলো। দরজা খোলাই ছিল। গায়ে কাথা জড়িয়ে সায়েন ঘুমাচ্ছে। ঘুমের প্রখরতা অনেক সায়েনের। আরাদ হাঁটু গেড়ে বসলো সায়েনের সামনে। ড্রিম লাইটের আলোয় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সায়েনের মায়াবী চেহারা। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পরেই হুট করে চোখ খুলে তাকালো সায়েন। চিৎকার দেওয়ার আগেই আরাদ মুখ চেপে ধরে আস্তে করে বলল,’আমি আরাদ!!চুপ থাকো প্লিজ।’

সায়েন ছোটাছুটি বন্ধ করে বলল,’আপনি এতো রাতে এখানে কি করছেন??’

আরাদ ভেবাচেকা খেয়ে গেল। কি বলবে এখন??একটু ভেবে সে বলল,’ওয়াশরুমে যেতে এসেছি।’

#চলবে,,,,,,,,,,