চিলেকোঠার প্রেম পর্ব-০৫

0
539

#চিলেকোঠার_প্রেম

#Ishita_Rahman_Sanjida(Simran)

#পর্ব_৫

নিশুতি রাত, কোথাও কারো সাড়া শব্দ নেই।সবাই ঘুমে বিভোর। থেকে থেকে কুকুরের ডাক শোনা যাচ্ছে। সায়েনের ঘনঘন নিশ্বাস এর শব্দ শুনতে পারছে আরাদ। খুব কাছে থেকে দুজন দুজনের শ্বাস প্রশ্বাস শুনতে পারছে। আরাদের বুকের একদম কাছে দাঁড়িয়ে আছে সায়েন। তার ঘনঘন নিশ্বাস আরাদের বুকে গিয়ে আঘাত হানছে। আরাদের একহাত সায়েনের কোমড়ে আরেকহাতে সায়েনের হাত ধরে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে রেখেছে। সায়েনের দৃষ্টি আরাদের চোখের উপর। ড্রিম লাইটের আলোয় আরাদের চোখদুটো জ্বলজ্বল করছে। অদ্ভুত মায়া ছড়াচ্ছে চোখ দুটো। এভাবে তাকিয়ে থাকলে সে মায়ায় ফেসে যাবে সায়েন। কিন্তু সে তার দৃষ্টি নামাতে পারছে না। বেহায়া হয়ে গেছে চোখ দুটো তার। সায়েনের সমস্ত শরীরের শক্তির চেয়ে চোখের শক্তি যেন হাজার গুণ বেশি। চোখ সে ফেরাতে পারছে না। সায়েন এভাবে তাকিয়ে থাকলেও আরাদ তাকাচ্ছে না। তার দৃষ্টি দরজার ওপাশে। এদিক ওদিক তাকাচ্ছে আরাদ। একটু আগেই সায়েনের মুখ চেপে ধরে রেখেছিল। সায়েনকে ছেড়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয় সে। কিন্তু ততক্ষণে সায়েন পানি খেতে গিয়েছিল। আরাদ ও বের হয়। দরজার কাছে আসতেই আবার সায়েনের সাথে দেখা। কিন্তু কিছু বলার আগেই সায়েনের মা লাইট জ্বালিয়ে দিল। ঝড়ের গতিতে সায়েনকে নিয়ে দরজার ওপাশে লুকিয়ে পড়ে আরাদ। একটুর জন্য সায়েনের মা দেখে ফেলেনি ওদের। জয়নব বেগম পানি খেয়ে লাইট অফ করে চলে গেলেন। আরাদ এবার চোখ তুলে তাকালো সায়েনের দিকে। সায়েন এখনো আগের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আরাদের দিকে। আরাদ সায়েনের হাত ছাড়লেও কোমড় ছাড়লো না। সায়েন আরাদের চাহনি দেখে চোখ নামিয়ে নিয়েছে। কিন্তু তখনই একটা সুঘ্রাণ নাকে এলো সায়েনের। সে আরাদের শার্ট টেনে ঘ্রাণ শুঁকে বলল,’এটা কিসের ঘ্রান??’

এরকম পরিস্থিতিতে সায়েন যে এরকম একটা প্রশ্ন করে বসবে তা আরাদ ভাবেনি। শার্ট পাল্টে ফেললেও পারফিউমের ঘ্রানটা ওর গায়ের সাথে লেগে আছে। আরাদ কথা ঘোরানোর জন্য বলল,’তোমার মা চলে গেছে। এবার আমি যাই। তা না হলে তোমার মা আবার চলে আসবে।’
সায়েনের কোমড় থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে আরাদ দ্রুত পায়ে ছাদে চলে গেল। সায়েন থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শ্বাস প্রশ্বাস জোরে জোরে উঠানামা করছে। অদ্ভুত শিহরণে রোমাঞ্চিত হয়ে গেছে সায়েন।শরীর কাঁপছে তার। আরাদ এতো কাছে আসার জন্য কি এসব হয়েছে??এমন তো ওর কখনোই হয়নি। চুল খামচে ধরে খাটের উপর বসে পড়ল সায়েন। এইসব কি হচ্ছে ওর সাথে?? এরকম অনুভুতি ওর কখনোই হয়নি। সায়েনের প্রতিটা অনুভূতি ছিল বইকে ঘিরে। বই ছাড়া সে কিছুই বোঝে না। পড়াশোনাই ওর কাছে সব। ঠিক যেভাবে জয়নব বেগম ওদের দুই ভাইবোনকে চালাচ্ছে ওরা ঠিক সেভাবেই চলছে। সায়েন শুকনো ঢোক গিলল।গলাটা আবার শুকিয়ে এসেছে তার।

_____________

গাছগুলোতে পানি দিচ্ছে সায়েন। সকাল থেকে চিলেকোঠার ঘরে যায়নি সে। শুধু একবার গিয়েছিল, খাবার দিতে। তখন সায়েন আরাদের চোখে চোখ রাখেনি। তাড়াতাড়ি চলে আসে। কাল থেকে কেমন যেন লাগছে সায়েনের। আরাদের কাছে গেলেই হার্টবিট বেড়ে যায়। সবকিছু ভুলে যায় সে। সূর্যমামা সবে উঁকি দিয়েছে। গাছে পানি দেওয়া শেষ করেই পিছনে ঘুরলো সায়েন। সাথে সাথে আরাদের বুকের সাথে জোরে ধাক্কা খেলো সে। সায়েন হকচকিয়ে ওঠে। আরাদকে দেখে আশেপাশে চোখ বুলায় সে। তারপর বলে,’আপনি এখানে?? তাড়াতাড়ি চলে যান। আশেপাশের ছাদগুলোতে কেউ চলে আসবে তো??’

আরাদ ফোঁস করে নিশ্বাস ছাড়লো। যখনই সে সায়েনের চোখের দিকে তাকায় তখনই ভয় দেখতে পায়। কবে যে ওই চোখে সে ভালোবাসা দেখতে পাবে কে জানে??আরাদ বলল,’এতো ভয় পাও কেন তুমি??’

‘সেটা যদি জানতেন তাহলে তো হয়েই যেতো।’

আরাদ সায়েনের কথাটা বুঝলো না। সায়েন চলে যাচ্ছে আরাদ পিছন থেকে বলে ওঠে,’তাহলে কি হতো??’

সায়েন পিছনে ফিরে তাকালো বলল,’অনেক কিছু হতো।’

‘কি হতো বলে গেলে ভালো হতো।’

আরাদের কথায় ঠোঁট চেপে হাসলো সায়েন। কিছু বলার আগেই জয়নব বেগমের ডাক পড়লো। সায়েন ভো দৌড় দিল। সায়েনকে এভাবে দৌড়ে যেতে দেখে হাসলো আরাদ তারপর চিলেকোঠার ঘরে চলে গেল। আরাদ তোশকের ওপর টান হয়ে শুয়ে পড়লো। নিজে নিজে বলতে লাগলো,’তোমার মনের চিলেকোঠায় পৌঁছাতে হলে আমাকে যদি এরকম নোংরা চিলেকোঠায় যুগ যুগ ধরে থাকতে হয় তাতেই আমি রাজি। তবে তোমার মনের চিলেকোঠায় শুধু আমি থাকবো। হয় তোমার মনে চিলেকোঠায় আমি থাকব নয়তো তোমার মনে কোন চিলেকোঠা থাকবেই না। তোমাকে আমার হতেই হবে সায়েন। আমার কাছে আসতে একটাই পথ তোমার খোলা। বাকি পথগুলো সব আমি বন্ধ করে দেব।’

ফোন হাতে নিয়ে সায়েন জোনায়েদকে কল করলো।

স্কুটারে বসে হেলমেট পরছে সায়েন। হঠাৎ ওর চোখ গেল আরাদের দিকে। চিলেকোঠার জানালা খুলে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। সায়েন বাড়ির দিকে উঁকি দিয়ে দেখলো কেউ আসছে কি না?? তারপর আরাদকে ইশারা করে বললো চলে যেতে। কিন্তু আরাদ যাচ্ছে না দেখে হাত নাড়িয়ে যেতে বলছে বারবার। তখনই শাফিন বলে উঠলো,’হাত নেড়ে নেড়ে কি করছিস তুই??’

সায়েন হাত নামিয়ে ফেললো। চোখও অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিয়েছে। সে আমতা আমতা করে বলল,’ক কিছু না। ম মশা,মশা ছিল।’

শাফিন ভালো করে আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো কোথাও মশা আছে কি না??সে বলল,’কোথায় মশা??আমি তো কোন মশা দেখতে পাচ্ছি না। কি ব্যাপার বলতো?? ক’দিন ধরে দেখছি তুই কিছু একটা নিয়ে ভয় পাচ্ছিস??কেন বলতো??’

শাফিন সন্দেহ করছে। সায়েন কথা ঘুরিয়ে বলল,’বাজে বকবক বন্ধ কর। আজকে তাড়াতাড়ি চলে আসবি। মা বাবা লিলি খালার বাসায় যাবে। লিমা আপুকে দেখতে আসবে। হয়তো বিয়ে ঠিক হয়েও যেতে পারে।’

শাফিন বুকে হাত দিয়ে জোরে শ্বাস ফেললো। খুশিতে তার চোখদুটো চকচক করছে। সায়েন ভ্রু কুঁচকে বলল,’লিমা আপু তোর পিছনে লাটিমের মতো ঘুরতো তাই না??’

‘হুম!!! ওর জন্য রুহির সাথে কতবার ঝগড়া হয়েছে!! গায়ে পড়া স্বভাবের মেয়েটা। ভালো হয়েছে বিয়ে হবে। ওর বিয়েতে হ্যাব্বি নাচব আমরা ঠিক আছে।’

সায়েন মাথা দুলিয়ে বলল,’ওকে ডান।’

‘আমাকে ভার্সিটি নামিয়ে দিয়ে তারপর কলেজ যাবি।’ শাফিন স্কুটিতে চড়ে বসতে বসতে বলল,’আজকে দুপুরের পর চলে আসব আমি। রেডি থাকিস তোর জন্য সারপ্রাইজ আছে।’

সায়েন স্কুটি স্টার্ট দিলো। শাফিনকে ভার্সিটি নামিয়ে দিয়ে কলেজে যায় সায়েন। আজকে তাড়াতাড়ি বাড়িতে চলে আসে সে। কারণ বাড়িতে কেউ নেই। মা বাবা সকালেই চলে গিয়েছে। চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে আসতেই সায়েন অবাক হয়ে গেল। কারণ আরাদ সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে বসে বিস্কিট খাচ্ছে আর টিভি দেখছে। সায়েন দরজা বন্ধ করে দৌড়ে আরাদের সামনে এসে দাড়িয়ে বললো,’আপনি এখানে কেন??কখন এলেন??’
আরাদ টিভি দেখায় ব্যস্ত। সায়েন আবারো একই প্রশ্ন করতেই আরাদ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে বলল,’আগে ফ্রেশ হয়ে নাও তারপর কথা হবে।’

সায়েন কিছুক্ষণ আরাদের দিকে তাকিয়ে থেকে চলে গেল। লম্বা শাওয়ার নিয়ে বের হয় সায়েন। দেখলো আরাদ টেবিলে খাবার সাজিয়ে গালে হাত দিয়ে বসে আছে। মাথায় তোয়ালে পেঁচিয়ে চেয়ারে ধপ করে বসে পড়ে সায়েন। বিরিয়ানীর গন্ধে ম ম করছে চারিদিকে। সায়েন অবাক চোখে আরাদের দিকে তাকিয়ে বলল,’এসব কি??আর বিরিয়ানী কোথা থেকে আসলো??’

আরাদ ঠোঁট প্রসারিত করে হাসলো। বলল,’আমি রান্না করেছি??’ ডাহা মিথ্যা কথা। বাইরে থেকে এনেছে আরাদ। তাও জোনায়েদ কে দিয়ে। আরাদের কথায় আরেকদফা অবাক হলো সায়েন। আরাদ রান্না করেছে মানে!!সায়েন অবাক দৃষ্টিতে বিরিয়ানীর প্লেটের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ তুলে তাকালো আরাদের দিকে তারপর বলে,’আপনি রান্না করলেন কিভাবে?? আপনাকে দেখলে তো মনে হয় বড় ঘরের ছেলে। এসব রান্নাবান্না কার থেকে শিখলেন??’

আরাদ মাথা চুলকে ভাবলো কিছুক্ষণ তারপর বলল,’বিরিয়ানী কিভাবে রান্না করে সেটা মনে আছে কিন্তু কে শিখিয়েছিল সেটা মনে নেই। তবে আস্তে আস্তে মনে পড়ে যাবে সব।’

সায়েনের ভ্রু যুগল আপনাআপনি কুঁচকে এলো। এরকম মেমোরি লস হয় তা ওর আগে জানা ছিল না। আরাদ বলল,’তাহলে শুরু করা যাক??’

সায়েন মাথা নেড়ে খেতে লাগল। একটু মুখে দিয়ে কি যেন ভাবতে লাগলো সায়েন। আরাদ সায়েনকে পরখ করে দেখে বলল,’ভালো হয়নি বুঝি??’

সায়েন খাওয়া রেখে আরাদের দিকে তাকিয়ে বলল,’ভালো হয়েছে!! কিন্তু এই বিরিয়ানী টা মাজিদ কাকার দোকানের বিরিয়ানীর মতো খেতে। কেন বলুন তো?? স্মৃতি হারানোর আগে কি আপনি মাজিদ কাকার দোকানের কর্মচারী ছিলেন??’

সায়েনের অদ্ভুত প্রশ্নে চমকে গেল আরাদ। এই মাজিদ কাকা টা আবার কে??এর দোকান থেকেই বোধহয় খাবার এনেছে জোনায়েদ। কিন্তু কথা তো সেটা না। কথা হলো আরাদ ওই দোকানের কর্মচারী ছিলো মানে??যে ছেলে জীবনে এক গ্লাস পানি ঢেলে খায়নি সেই ছেলে দোকানের কর্মচারী হবে??আরাদ হতাশ হয়ে বলল,’কি জানি??মনে তো পড়ছে না কিছুই।’

সায়েন একটু ভেবে আবার জিজ্ঞেস করল,’রান্নাঘরে কোথায় কি থাকে তা তো আমি নিজেই জানি না আপনি কিভাবে জানলেন??’

আরাদ পড়েছে এবার বিপদে। সে তো রান্নাঘরের কিছুই চেনে না। কিন্তু সায়েন যেভাবে প্রশ্ন করছে মনে হচ্ছে ধরা পড়েই যাবে। আরাদ সায়েনের দিকে হালকা ঝুঁকে বলল,’বিরিয়ানী পছন্দ হয়নি তোমার??’

‘হুম হয়েছে।’

‘তাহলে এতো কিছু না বলে চুপচাপ খাও। খাওয়ার সময় কথা বলতে হয় না।’

সায়েন বাধ্য মেয়ের মত মাথা নাড়িয়ে খেতে লাগল। খাওয়া শেষে সে প্লেট ধুতে চলে যায়। আরাদ সোফায় আয়েশ করে বসেছে। প্লেট ধুয়ে এসে সায়েনও বসলো। তখনই কলিং বেলের শব্দ এলো। সায়েন চট করে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,’ভাইয়া চলে এসেছে বোধহয়। আপনি তাড়াতাড়ি চলে যান।’

আরাদ উঠে দাঁড়ালো। ভেবেছিল একটু গল্প করবে সায়েনের সাথে। কিন্তু তা আর হলো কই??আরাদ ছাদের সিঁড়ি বেয়ে চলে গেল। সায়েন হাসি মুখে দরজা খুলে দিল। শাফিনের হাতে বড় একটা ব্যাগ। সেখান থেকে আরেকটা ব্যাগ বের করে সায়েনের হাতে দিয়ে সে নিজের রুমে চলে গেল। সায়েন ব্যাগটা ওলটপালট করে দেখতে দেখতে নিজের রুমে চলে আসে। ব্যাগ খুলে সে অবাক। আসমানী রঙের একটা মশৃন শাড়ি। খোঁপায় দেওয়ার জন্য গাজরা ও এনেছে। সাথে দুমুঠো চুড়ি। সায়েন ভিশন অবাক হয়। এগুলো শাফিন কি ওকে দিলো??নাকি রুহির জন্য এনেছে?? কিছুক্ষণ বসে থেকে সায়েন শাফিনের রুমে গেল। শাফিন শাওয়ার শেষ করে গলায় তোয়ালে ঝুলিয়ে খাটে বসে ক্যামেরা ঠিক করছে। সায়েন অবাক হয়ে শাফিনের পাশে বসে বলল,’ভাইয়া তুই কি করছিস??ক্যামেরা এনেছিস কেন??’

শাফিনের চোখজোড়া ক্যামেরাতে আবদ্ধ। সে বলল,’মা বাড়িতে নেই আজকে ফটোশুট করব তাও তোর। শাড়ি পরে রেডি হয়ে নিস।’

সায়েন অবাক হলো না। কারণ এর আগেও অনেক বার শাফিন ওর ছবি তুলেছে। শাফিনের একটা পেইজ আছে। যেখানে সে ছবি তুলে পোস্ট করে। ফলোয়ার ও অনেক। তবে এসবই জয়নব বেগমের চোখের আড়ালে হচ্ছে। সায়েনের ফেস হাইড করে অনেক ছবি আপলোড দিয়েছে শাফিন। সায়েন তাই রেডি হতে চলে গেল। আসমানী রঙের শাড়ি জড়িয়ে সুন্দর করে সাজলো সে। খোপা করে তাতে গাজরা পড়লো। দুহাত ভর্তি চুড়ি পরে রেডি হলো সে। সায়েন জানে শাফিন এখন খাবে না। ফটোশুটের চিন্তা ঘাড়ে চাপলে খাওয়া দাওয়া সব ভুলে যায় শাফিন।

শাফিন আর সায়েন দু’জনেই ছাদে গেল। সায়েন চিলেকোঠার ঘরে উঁকি দিলো। নাহ দরজা বন্ধ আছে। অনেক বছর পর এই প্রথম শাফিন ছাদে এসেছে। সায়েনকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ছবি তুলছে শাফিন। সায়েনের মাথা ভনভন করছে। এতো ছবি মানুষ তোলে??সায়েন হাঁপিয়ে গেলেও শাফিন থামলো না। সায়েন শাড়ির আঁচলে বাতাস করতে করতে বলল,’ভাইয়া অনেক হয়েছে আর পারছি না। পরে আবার তুলিস।’

শাফিন মুখ দিয়ে বিরক্তিসূচক শব্দ বের করে বলল,’এরকম করছিস কেন??ঠিকমতো দাঁড়া।’
ঝটপট কয়েকটা ছবি তুলল শাফিন। সায়েন বলল,’ফটোশুট করতে তোর খুব ভালো লাগে তাইনা ভাইয়া??কষ্ট হয়না তোর??’

‘কি আর করার আছে??মা তো চায়না আমি ফটোশুট করি। বাদ দে চল,,,’

শাফিন চলে যায়। সায়েন এখনও ওখানে দাঁড়িয়ে আছে। সায়েন ও তো চায় ফ্যাশন ডিজাইনার হতে কিন্তু তা তো সম্ভব নয়। মায়ের কথা ছাড়া সে এক পাও চলতে পারে না। সায়েন চলে আসতে নিলে তার আঁচলে টান খায়। পেছন ফিরে দেখে আরাদ ওর শাড়ির আঁচল ধরে আছে। সায়েন তাকাতেই আরাদ ওর শাড়ির আঁচলটা ছেড়ে দিল। মাথা নিচু করে সায়েনের দিকে এগিয়ে এসে বলল,’শাড়িতে তোমাকে সুন্দর লাগছে।’
কথাটা শুনে সায়েনের বুকটা ধক করে উঠল।আরাদের প্রতিটা কথা সায়েনের কাছে রোমান্ঞ্চকর লাগে। মনে হয় এভাবে অন্য কারো মুখে সায়েনের সৌন্দর্য কথা মানায় না। সায়েনের সৌন্দর্যের বর্ণনা শুধুমাত্র আরাদই দেবে আর সায়েন তা মুগ্ধ হয়ে শুনবে। সায়েন ছোট্ট করে বলল,’থ্যাঙ্কস।’

বলেই সায়েন চলে আসতে নিলে আরাদ পেছন থেকে বলে উঠলো,’আরেকটু থেকে যাও না??’
সায়েন থমকে দাঁড়ায়। আরাদের কন্ঠে একরাশ আকুলতা। যা উপেক্ষা করার ক্ষমতা সায়েনের নেই। সায়েনের পা আটকে গেছে। না পারছে চলে যেতে না পারছে আরাদের দিকে ঘুরতে। কথাটাও মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না। অস্বস্তিতে ঘামছে সায়েন। আরাদ মুচকি হেসে সেদিকে এগিয়ে যায়। কিন্তু সায়েনের পাশ কাটিয়ে চিলেকোঠার ঘরে চলে যায় সে। সায়েন অবাক হলো। হয়তো আরাদ সায়েনের অস্থিরতা বুঝতে পেরেছে যার জন্য সে চলে গেছে। সায়েন আর দাঁড়াল না। দৌড়ে নিজের রুমে চলে। তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করে নিল সে।
সন্ধ্যায় সায়েনের বাবা মা চলে এলো। মায়ের থেকে সায়েন জানতে পারল যে লিমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। একসপ্তাহ পর বিয়ে। সায়েন খুশিতে এক দৌড়ে শাফিনের রুমে চলে গেছে। শাফিন রুহির সাথে কথা বলছিল। সায়েন দৌড়ে গিয়ে বলল,’ভাইয়া লিমা আপুর বিয়ে কনফার্ম,একসপ্তাহ পর। দে হাই ফাইভ।’

সায়েন তার হাত দুটো উঁচু করে হাই ফাইভ দিলো শাফিনের সাথে। সায়েন বলল,’তুই আর আমি গায়ে হলুদে ম্যাচিং ড্রেস পরব কিন্তু?? কালকে শপিং এ নিয়ে যাবি নইলে খবর আছে।’

বলতে বলতে সায়েন চলে গেছে। শাফিন হাসলো। সায়েন কখন যে কি করে বসে তা শাফিন আজ পর্যন্ত বুঝতে পারে না। এটাই হয়তো ভাই বোনের ভালোবাসা। যতোই ঝগড়া হোক না কেন দিন শেষে দু’জনে আবার এক হয়ে যায়। একে অপরের সাথে যতোই মারামারি করুক তাতে কিছু হবে না। যদি অন্য কেউ এসে ওর ভাইয়ার গায়ে হাত দেয় তো তার খবর আছে।

আজকে খুশি মনে কলেজে এসেছে সায়েন। ক্লাস শেষে দুজনে একসাথে বাড়িতে ফিরছে। দিশা জিজ্ঞেস করল,’তোর লুঙ্গিওয়ালার কি খবর??’
সায়েন চোখ কুঁচকে জবাব দেয়,’এটা কোন ধরনের ভাষা?? ভালোভাবে কথা বল।’

‘আমি আবার কি বললাম??এতো লাগছে কেন তোর??কিছুমিছু চলছে নাকি??’

‘মারব তোকে ওসব কিছু না।’

‘এখন তো বলবিই কিছু না। পরে দেখা যাবে অনেক কিছু।’

সায়েন কিছু বলার আগেই দুটো কালো রঙের গাড়ি এসে ওদের পথ রোধ করে। সায়েন দ্রুত স্কুটি থামিয়ে দিল। অবাক হলো দু’জনেই। কারা ওদের পথ আটকালো??

#চলবে,,,,,,,,,,,,