তুমিময় নেশা পর্ব-০২

0
159

#তুমিময়_নেশা (২)

শুভ’র দম উঠানামা করছে। ফোনের এপাশে থাকা অদ্রি চুপ। ছেলেটা বড়ো অধৈর্য হয়ে বলল,”অদ্রি, শুনছেন?”

মেজাজ চটে যাচ্ছে অদ্রি’র। এই লোক ফোন নাম্বার পেল কোথায় থেকে?

“অদ্রি, আপনি শুনছেন?”

“কেন কল করেছেন?”

শুভ যেন এই কথার ই অপেক্ষা করছিল। ও বিলম্ব না করেই বলল,”আপনার প্রপোজ আমি এক্সসেপ্ট করে নিয়েছি।”

অদ্রির মনে হলো শুভ’র মাথাটা ফাটিয়ে দিবে। আবার মনে হলো নিজের মাথাটা আগে ফাটানো উচিত।

“অদ্রি,আপনাকে আমার পছন্দ হয়েছে। আমি বাসায় বলেছি। সবাই মেনে নিয়েছে।”

“আপনার কী মাথা খারাপ শুভ?”

“সরি?”

“আপনি এটা বুঝেন নি আমি বিয়েটা করতে চাই না সেজন্য ঐ কাজটা করেছি।”

শুভ হাসল। অদ্রি যেন বোকাই বনে গেল। এই ঝামেলাটা না জানি কতকাল পোহাতে হয়।

“অদ্রি, আপনার সমস্ত কথাই বুঝেছি আমি। তবে অনুভূতি’র কোনো সময় হয় না। আপনি ওভাবে বলার পর আমার আকাশ থেমে গিয়েছিল। বড়ো ভাইয়ের জন্য বউ দেখতে এসে এমন পরিস্থিতিতে পড়ব তার ই সাথে সেই মেয়েকেই পছন্দ করে ফেলব সবটা আমার জন্য কঠিন ছিল। বাট আমি সামলে নিয়েছি। আপনার হাত ধরে আজীবন থাকতে চাই আমি।”

শুভ’র এত গুলো কথা শুনে অদ্রির মনে হলো ম রে যাওয়াই বুঝি ভালো। সে আবার ও বলল বিয়েটা ভা ঙা র জন্যেই ওমনটা বলেছে। তবে শুভ সে কথার ধার ধারছে না। সে বরং বিষয়টা বিনয় স্বরূপ গ্রহণের চেষ্টা করছে। একই সাথে অদ্রির হাত চাইছে। আজীবনের জন্য।

অদ্রির সমস্ত রাত না ঘুমিয়েই পার হলো। ও বড়ো বিষণ্ণ অনুভব করছে। শেষ রাতে একটু চোখ লেগেছিল তবে কুকুরের আওয়াজে সেই ঘুমটা ও ভে ঙে গেল। দেখা গেল পুরো বাড়ির লোক উঠে পড়েছে। অদ্রি তড়িঘড়ি করে বাইরে এল। এসে দেখল বাবা চেচামেচি করছেন।

“সামান্য মুরগিটা ও সহ্য হয় না। মুরগি পালন ও যাবে না। চোর বাটপার গুলো সব নিয়ে যাচ্ছে।”

কথায় কথায় জানা গেল অদ্রিদের দুটো মুরগি নিয়ে পালিয়েছে কেউ। সেই জন্যেই কুকুরটা চেচামেচি করেছিল। তবে দরজা খুলে বের হতে হতে চোর পালিয়েছে। এদিকের অদ্রির মা লুবনা কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছেন। ওনার এই স্বভাবটা বড়ো চোখে লাগে। কিছু হলেই দু চোখ মেলে পানি ঝরাতে থাকেন।

মৃদুমন্দ হাওয়ায় চুল গুলো উড়ে যাচ্ছিল। সে সময়েই সেতু এসে পাশে বসল। অদ্রি স্বভাবের কারণে গোসলের পর রোদে এসে বসে। নতুবা তার শরীর কাঁপতে থাকে। সেতু মিটিমিটি হাসছে। বোনের আচরণ স্বাভাবিক না দেখে অদ্রি শুধাল,”কী সমস্যা?”

“সমস্যা তো তোর।”

“আমার?”

“হুম।”

অদ্রি কেমন করে তাকাল যেন। সেতু কিছুটা গা ছাড়া ভাব দেখাচ্ছে।

“সেতু, তুই হাসছিস কেন?”

“কারণ তোর দিওয়ানা নিচে বসে আছেন।”

অদ্রির চোখ বড়ো হয়ে গেল। দিওয়ানা বলতে কার কথা বলছে সেতু?

ছাদ থেকে নেমে অদ্রি’র মনে হলো বাসা থেকে বের হয়ে যেতে পারলে বুঝি শান্তি মিলত। সোফায় আরাম করে বসে আছে শুভ। তার সমাদর চলছে। লুবনা যেন শুভকে মেয়ের জামাই ধরেই নিয়েছেন। অদ্রিকে দেখে মৃদু হাসল শুভ। ছেলেটার চোখে মুখে ভালো লাগা। অদ্রি চোখ ঘুরিয়ে নিজের রুমে এসে বসে রইল। খানিক বাদেই সেতু এসে বলল,”আপু মা তোকে ডাকছে।”

“কেন?”

“তোর দিওয়ানার সাথে কথা বলার জন্য।”

“আশ্চর্য!”

“আমি জানি না। তুই আয় নতুবা মা আসবে।”

অদ্রি গেল না। কপট রাগ দেখিয়ে রুমের দরজা বন্ধ করে বসে রইল। লুবনা এলেন কিছু সময় পর ই।

“অদ্রি, দরজা খোল।”

“আমার মাথা ব্যথা করছে মা। পরে এসো।”

“এখন তোর মাথা ব্যথা শুরু হলো? বাদরামির জায়গা পাস না?”

“উফ মা।”

দরজা খুলতেই ঘরে প্রবেশ করলেন লুবনা। কণ্ঠ নামিয়ে বললেন,”এখনো চুল গুলো ঠিক করিস নি? পাগল তুই। ছেলেটা বসে আছে সেই কখন থেকে।”

কথার মাঝেই তিনি মেয়ের চুল গোছাতে লাগলেন। অদ্রি হাবুলের মতন বসে আছে। চুল গোছানো শেষ হলে লুবনা বললেন,”যা, আর কোনো বাদরামি করবি না।”

“মা, তুমি কি পেয়েছ বলো তো।”

“অদ্রি, মা আজ না হয় কাল বিয়ে তো করতেই হবে তাই না। শুভ কতটা ভালো ছেলে সেটা তো দেখছিস ই। বিদেশে বড়ো চাকরি ও করে। পারিবারিক অবস্থা ও ভালো। আর কি চাই বল তো মা।”

অদ্রি কিছু একটা বলতে নিয়েও থেমে গেল। তার ভালো লাগছে না। এই ঝামেলা কি কখনোই যাবে না?

পুকুর পাড়ে এসে বসেছে অদ্রি আর শুভ। শুভ দেখতে সুন্দর। চেহারাটায় মায়া ও রয়েছে। তবে অদ্রি’র হৃদয়ে কোনো অনুভূতি নেই। ওর মন মস্তিষ্ক নিজের ক্যারিয়ারে দিকে চলছে। কত স্বপ্ন কত আশা। অনেকটা সময় পর শুভ বলল,”অদ্রি, আপনি আপসেট?”

“হুম।”

সোজাসাপ্টা বলায় হাসল শুভ। অদ্রি সেই হাসি দেখে বরং বিরক্তই হলো।

“আপনি বিষয়টা মজার ছলে নিচ্ছেন কেন শুভ? আমি চাই না বিয়ে করতে।”

“কাউকে পছন্দ করেন?”

অদ্রি সরু চোখে তাকাল। সত্যি বলতে তার পছন্দের কেউ নেই। যদি শুভকে থামাতে পছন্দ আছে কথাটি বলে তবে মা আজই বিয়ে দিয়ে দিবেন। তাই প্রশ্নটা এড়িয়ে গেল অদ্রি। শুভ কিন্তু নাছোড়বান্দা। সে বলল,”যাক এই দিক তাহলে ক্লিয়ার ই আছে। আমি জানি আপনি চান না বিয়ে করতে। কারণ আপনার মনে সংশয় বিয়ে হলে আপনি ক্যারিয়ারে বাধাগ্রস্ত হবেন।”

কথাটা ঠিক ই বলেছে শুভ। তবে অদ্রি কিছু বলছে না। শুভ একটু সাহস সঞ্চয় করে মেয়েটির আরেকটু নিকটে এসে বসল। অদ্রি কিছুটা ভয় পেয়ে বলল,”শুভ, দূরে সরে বসুন।”

শুভ মৃদু হাসল। মেয়েটির এই স্বভাব তার বড়ো ভালো লেগেছে। যেই মেয়ে নিজেকে শুদ্ধ করে রাখতে চায় সে নিশ্চয়ই স্ত্রী রূপে সেরা।

“ভয় পাবেন না। এমন কিছু করব না যাতে কলঙ্ক হবে। তবে জেনে রাখবেন, এই হাত ছোঁয়ার অধিকার শুভ নিয়েই ছাড়বে। অদ্রি আপনি শুধু আমার। শুধুই আমার।”

দোটানায় কাটল দুটো দিন। অদ্রি’র মন মস্তিষ্কে শুভ’র বলা কথা গুলো প্রভাব বিস্তার করল। ছেলেটা এমন করে কথা কেন বলল? অদ্রি নিজেকে সামলে নিল কিছুদিনের মধ্যেই। শুভ নামক মানুষটাকে সে মনেও করল না। এদিকে কিন্তু সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। এডমিশন টেস্ট ঘনিয়ে আসছে। নানান চিন্তায় বুদ হয়ে আছে অদ্রি। তার পড়াশোনা একেবারেই হচ্ছে না। পড়তে গেলেই মনে হচ্ছে সব নতুন। এই নিয়ে দুদিন কান্নাকাটিও করল। লুবনা আর মুজাহিদ মেয়ের অবস্থাটা বুঝতে পারলেন। এদিকে শুভ ও সব স্বাধীনতা দিতে চায় অদ্রিকে। তাই লুবনা ও দ্বিমত করলেন না। মেয়ের পড়াশোনার ব্যপারে ওনারা সিধান্ত নিলেন মুজাহিদের বন্ধু রউফ গাজীর বাসায় পাঠাবেন। ভদ্রলোক মুজাহিদের ভাই স্বরূপ। ছোট বেলায় এক সাথে ঘুমিয়েছে কত। সব মিলিয়ে একটু হলেও শান্তি পেল অদ্রি। তার পড়াশোনাটা হবে তবে। এখন টার্গেট নিজের স্বপ্নের ভার্সিটি।

চলবে….
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি