তুমিময় নেশা পর্ব-০৩

0
136

#তুমিময়_নেশা (৩)

বাস ড্রাইভারের অশ্রাব্য ভাষার গালিতে ঘুম ভা ঙ ল অদ্রিতার। মেয়েটা ইষৎ ভয় পেয়ে গেছে। চোখ পিটপিট করে চাইতেই মনে হলো কি এক নিদারুণ কষ্ট লুকিয়ে ওর মাঝে। এদিকে বাস ড্রাইভার অন্য এক ড্রাইভারের সাথে গালিগালাজ জুড়ে দিয়েছে। ওর পাশে থাকা নারীটি বোধহয় কিছুটা বুঝতে পেরেছে। তাই ভরসার কণ্ঠে বলল,”ভয় পাবেন না। শহরে নতুন?”

দু দিকে মাথা কাত করিয়ে হ্যাঁ বোঝাল অদ্রি। সে এমনিতে সাহসী তবে কেমন যেন একটা ভয় কাজ করছে।

“ঠিক হয়ে যাবে। শহরে আছেন তো, কত কিছু দেখবেন এমন।”

অদ্রি আর কিছু বলল না। ঘাড় ঘুরিয়ে চাইল ইট পাথরে আবৃত শহরের পানে। গুমোট বাতাস, অট্রালিকা আর মানুষের গাদাগাদি। এক মুহুর্তের জন্য অদ্রির মনে হলো দম বন্ধ হয়ে আসছে। সে মা রা যাবে।

একটি নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌছাল অদ্রি। তার মাথা ব্যথা করছে। শহরে আসাটা তার জন্য একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। বাবা অবশ্য আসতেন তবে একটা কাজ পড়ে যাওয়ায় আসা হয়ে উঠে নি। এদিকে অদ্রি’র ভার্সিটি এডমিশন টেস্ট কাছে থাকায় একাই আসতে হলো তাকে। সে বেশ বড়ো মুখ করে বলে এসেছে একাই যেতে পারবে। পথে মা কতবার কল করেছেন সেই হিসেব নেই। যাক অবশেষে পৌছাল অদ্রি। সে কিছুটা ভীত হয়ে ছিল। একেবারে অজপাড়া গায়ের মেয়ে সে নয়। তবে ঐ যে গণ্ডিটা পেরিয়ে আসা হয় নি। তাই এত ভয়। একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে বাড়িটার দিকে এগোল অদ্রি। ভীষণ সুন্দর বাসাটা। অদ্রির ভালো লাগল। সে ধীর পায়ে এগিয়ে যেতেই দারোয়ান বললেন,”কী চাই?”

“মামা এটা,রউফ আঙ্কেলের বাসা?”

“জি।”

“আমি ওনার কাছেই এসেছি। আমার বাবা ওনার বন্ধু।”

দারোয়ান একবার ভালো করে অদ্রিকে দেখলেন। তারপর কল করলেন কাউকে একটা। অদ্রি ততক্ষণ ওভাবেই দাঁড়িয়ে রইল। কথা শেষ করে তবেই বাড়ির ভেতরে যাওয়ার অনুমতি পেল অদ্রি। পুরো ব্যাপারটা অদ্রির কাছে শ্বাসরুদ্ধকর ছিল।

অদ্রি কিছুটা মন খারাপ করেই বাড়ির ভেতর প্রবেশ করল। আশেপাশে মানুষ নেই। একদম নীরব পরিবেশ। সেই জন্যেই কী না ওর ভয় বেশি। এর মধ্যেই হুট করেই ফোনটা বেজে ওঠল। চট করে রিসিভ করল অদ্রি।

“অদ্রি, আমি শুভ বলছি। আপনি পৌছে গেছেন?”

অদ্রি ভেবেছিল মা ফোন করেছেন। তাই চট করেই রিসিভ করেছে। ওপাশে থাকা শুভ পুনরায় বলল,”অদ্রি শুনছেন?”

“জি পৌছে গেছি।”

কথাটি শেষ করেই কল রাখতে যাচ্ছিল ও। তবে এতে শুভকে অপমান করা হয়। তাই ও পুনরায় ফোনটি তুলল। ওপাশ থেকে শুভ হেসে বলল,”ভেবেছিলাম, আপনি বুঝি কল রেখে দিবেন।”

অদ্রি কিছু বলল না। শুভই বলল,”ঠিক আছে। সাবধানে থাকবেন। পরে কল করব।”

শেষ বাক্যটিতে অদ্রির মনে হলো বড়ো জোর গলায় বলতে আর কল করবেন না। আমার ভালো লাগে না। তবে বলা হলো না। অদ্রি ব্যাগ দুটো হাতে তুলে নিয়ে বাড়ির সদর দরজা দিয়ে প্রবেশ করল। চারপাশের সাজসজ্জা দেখে আনমনেই হা হয়ে গেল ও। এই ধরনের বাড়ি সাধারণত সিনেমাতে দেখানো হয়। রউফ আঙ্কেল’রা ধনী। তবে এত ধনী এটা আশা করে নি ও।

ধন সম্পদ মানুষকে অহংকারী করে তুললেও রউফ এর পরিবার এই দিক থেকে আলাদা। তারা ভীষণ মিশুক প্রকৃতির। বিশেষ করে রউফের স্ত্রী রোকেয়া। তিনি তো অদ্রিকে কন্যার মতন ট্রিট করছেন। অদ্রি ভীষণ অবাক হচ্ছে সব কিছুতে। খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ করে অদ্রিকে ঘর দেখিয়ে দেওয়া হলো। আলিশান বাড়ির আলিশান কক্ষ। অদ্রির এবার ভালো লাগছে। এই পরিবেশটা তার পছন্দ হলো। মায়ের সাথে কথা বলে সে গোসল সেড়ে নিল। জার্নি করায় ক্লান্ত ছিল। তাই তুলতুলে বেডে গা ছোঁয়াতে ঘুম এসে দু চোখ ভরিয়ে দিল।

সন্ধ্যায় ঘুম ভা ঙ ল অদ্রির। এবার শরীর চাঙ্গা লাগছে। হাত মুখ ধুঁয়ে সে এল ড্রয়িং রুমে। রউফ আর রোকেয়া বসে আছেন। হাতে চা।

“ঘুম ভে ঙে ছে মা?”

“জি আন্টি। টায়ার্ড ছিলাম তো তাই অনেকটা সময় ঘুমিয়ে ছিলাম।”

“ভালো করেছ। এখন বলো চা খাবে নাকি কফি?”

“চা খাব আন্টি।”

“আচ্ছা, আসো তাহলে।”

কথাটি বলেই উঠতে নিয়েছিলেন রোকেয়া। অদ্রি বাঁধা দিয়ে বলল,”কিচেন থেকেই তো। আমি নিতে পারব।”

রোকেয়া যেন কিছুটা খুশি হলেন। মেয়েটার স্বাভাবিক ভাব তাকে স্বস্তিও দিচ্ছে।

কেটলি থেকে গরম গরম চা নিল অদ্রি। চা ওর সব সময় প্রিয়। যে কোনো সময়েই চা পানে অভ্যস্ত সে। কেটলিটা রাখার সময় নজরে পড়ল বৃহৎ জানালা দিয়ে বাগান দেখা যাচ্ছে। সেখানে আবার ফোয়ারা ও রয়েছে। রাতের আঁধারে বড়ো সুন্দর দেখাচ্ছে। আকাশসম আগ্রহ নিয়ে ফোয়ারার দিকে এল অদ্রি। চেয়ে রইল। দারুণ সুন্দর এটি। তাই ছুঁয়ে দেখার লোভ সামলাতে পারে নি। যেই না ছুঁতে যাবে ওমনি একটি কণ্ঠ ভেসে এল।

“এখানে কে?”

পুরুষ কণ্ঠ! অদ্রি সামান্য ভয় পেয়ে গেছে। তাই পেছনে না ঘুরেই বলল,”জি আমি।”

“আমি কে?”

“আমি মানে..

বাক্যটি পুরো করার আগেই পুরুষটি পুনরায় বলল,”এখানে কী?”

এবার অদ্রি আসলেই ভয় পেল। সে ঘুরে তাকানোর সাহস পাচ্ছে না। কণ্ঠটা একটু বেশিই ভয়াল যেন।

চওড়া দেহের পুরুষটি সামনে এসে দাঁড়াল। অদ্রি শুকনো ঢোক গিলছে। ছেলেটা বেশ মেজাজ নিয়ে বলল,”নাম কী?”

“অদ্রিতা শেখ।”

“ক্লাস?”

“এইচ এস সি দিয়েছি।”

“এখানে কেন?”

এ প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়েই যেন বিব্রত হচ্ছে অদ্রি। ও সরু চোখে তাকাল। দেখল পুরুষটি গম্ভীর ভাবে তাকিয়ে আছে। ওর কেন যেন কান্না পাচ্ছে। নিজের সত্ত্বা হারিয়ে ফেলেছে যেন।

“রাগীব, ওকে ভয় দেখাচ্ছ কেন?”

কণ্ঠটি রোকেয়ার। ধরে প্রাণ ফিরে পেল অদ্রি। তাকাল অসহায় দৃষ্টিতে। রাগীব একটু জোরেই হেসে ফেলল। রোকেয়া ছেলের নিকটে এসে বললেন,”তুমি কবে ঠিক হবে বলো তো।”

“কখনোই ঠিক হবো না আম্মু। বাট ও যে এত ভীতু তা জানতাম না।”

ভীতু শব্দটি বলায় অদ্রির মুখশ্রী ফ্যাকাশে হয়ে এল। সে ভীতু? সত্যিই কী তাই? বিপরীতে কোনো জবাব এল না। রোকেয়া অদ্রির মাথায় হাত রাখলেন।

“ভয় পেও না। ও আমার ছেলে রাগীব। বড়ো দুষ্টু।”

“উফ আম্মু।”

“বড়ো দুষ্টু হয়েছ তুমি। বয়স হলো তবে বুদ্ধিটা হচ্ছে না। অদ্রি কে সরি বলো রাগীব।”

বাক্যটি বলেই রোকেয়া অদ্রির দিকে তাকালেন। অদ্রি বলল,”ঠিক আছে আন্টি। সরি বলতে হবে না।”

এ কথা বললেও রাগীব কিন্তু সরি বলতে ভুলল না। সেই সাথে রোকেয়া যেন না শুনতে পান তাই ফিসফিস করে বলল,”ভীতু মেয়ে।”

ভীতু মেয়ে! অদ্রিতা শেখ আর ভীতু শব্দটি একেবারেই বেমানান। নেহাতই সে ভদ্র। নতুবা রাগীব নামের ছেলেটির গাল লাল করে দিত। নিজ কক্ষে বসে এসব ই ভাবছিল সে। ওমন সময় কলটা বেজে ওঠল। বড়ো বিরক্ত হলো অদ্রি। রিসিভ করল না। তবে ওপাশের ব্যক্তিটিও থেমে নেই। লাগাতার কল করে চলেছে। এবার অদ্রি কল রিসিভ করল। তবে টু শব্দটিও করল না। ওপাশ থেকে কণ্ঠটি বলল,”অদ্রি, আমি শুভ বলছি।”

“শুভ, আপনি কখনোই আমার জন্য শুভ নন। সর্বদা অশুভ হয়েই কেন আসেন বলেন তো?”

চলবে….
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি