#তোমার_চোখের_অনন্ত_মায়ায়
#গল্পছোঁয়া (Jannatul Ferdous Mahi)
#পর্ব_০১
❝নদীর জল মিষ্টি…
কারণ সে সবসময় জল দেয়
সমুদ্রের জল লবনাক্ত…
কারণ সে নেয়
নালার জল দুর্গন্ধ ছড়ায়…
কারণ সে থেমে থাকে
জীবনটাও এমনই,দিতে থাকলে তুমি সবার কাছে মিষ্টি।
শুধু নিতে থাকলে তুমি তিক্ত
আর থেমে থাকলে তুমি বেকার❞
~বাহ্,ভালো বললেতো তুমি ইন্তিহাজ ভাইয়া (বললো বহ্নি)
–এই পৃথিবীতে বেকারের কোনো মূল্য নেই রে,ছেলেদের পকেট শূন্য থাকলে পরিবার,আত্মীয়স্বজন,বাবা-মা,কাছের মানুষ কেউই মূল্য দিবেনা,এটাই বাস্তবতা।মন দিয়ে পড়াশোনা কর,মেডিকেল বা ঢাবিতে চান্স হওয়া চাই
~কথায় কথায় এতো লজিক কোথা থেকে পায় আল্লাহ মালুম (বিরবির করে বললো ইয়ানা)
~ভাইয়া,তুমি এবার কতদিনের ছুটিতে এসেছো? (তৃষা)
~ছুটিতো ১০দিনের পেয়েছি,ঈদের দু’দিন পরেই ফিরে যাব,অনেক পড়ার প্রেশার বুঝলি।
–এ্যাহ্,আসছে আমার পড়ুয়া স্টুডেন্ট,পড়াশোনা যেন শুধু উনিই করেন,ইহজগৎ এর আর কেউ মনে হয় পড়াশোনা করেনা,ঢং যতসব (ইয়ানা বিরবির করে)
–কিরে ইন্তিহাজ,দু’টো দিন বেশি থেকে গেলে কি এমন প্রবলেম হবে শুনি,ওই দুটো দিনে কিছু হবেনা (ইয়ানার বাবা আয়ুব জামান)
–ছোট আব্বু,আজ নয়তো কাল ফিরতে তো হবেই বলো,দু’টো দিন থেকেই বা কি হবে,ফিরে যাওয়াই বেটার
–তোকে নিয়ে সত্যিই পারিনা,বাড়ি থেকে ১ঘন্টার রাস্তা,তবুও তুই বাড়িতে না থেকে হোস্টেলে থাকিস,এটা কোনো কথা
–বাসায় থাকলে এই শাঁকচুন্নি দের জ্বালায়,স্পেশালি বদের হাড্ডি এই ইয়ানা’র জন্য পড়াশোনা কিছুই হবেনা,নিজেও পড়েনা আমাকেও পড়তে দিবেনা,ফাজিল মেয়ে একটা (ইয়ানার দিকে তাকিয়ে)
ইন্তিহাজ এর কথায় হাতে থাকা বাংলা ১ম পত্র বইটা ঠাস করে টেবিলের ওপর রেখে উঠে দাঁড়ালো ইয়ানা,উত্তেজিত কণ্ঠে বললো,
–ইন্তিহাজ ভাইয়া,একদম উল্টাপাল্টা কথা বলবেনা,আমি কবে জ্বালাইছি তোমাকে,কে কাকে জ্বালায় জাতী জানে।
আমি যথেষ্ট ভালো মেয়ে,এখনও বই পড়ছি,তোমাদের গল্পগুজবের ঠ্যালায় আমার পড়ার ক্ষতি হচ্ছে সেটা কি বুঝতে পারছোনা,আবার বক্তৃতা দিচ্ছো
–এ্যাহ,আসছেরে আমাদের পড়ুয়া মেয়ে।
ড্রয়িং রুমে টিভির সামনে বসে কে পড়ে রে,পড়ার ইচ্ছে থাকলে রুমে গিয়ে স্টাডি টেবিলে বসে পড়,লোক দেখানো পড়ে কি হবে,জাতী সবই বুঝে
–একদম বাজে কথা বলবেনা,সবসময় আমার সাথে পায়ে পা বাঁধিয়ে ঝগড়া না করলে কি তোমার পেটের ভাত হজম হয়না ইন্তিহাজ ভাইয়া?
অলওয়েজ আমার পেছনে লাগো তুমি
–থাম,দু’জনেই থাম,দু’টোতে একজায়গায় হলেই ঝগড়া করিস,পা/গলের দল।
ইন্তিহাজ,তুইতো বড় হয়েছিস,বাচ্চা মেয়েটার সাথে এমন করিস কেন বলতো (আয়ুব জামান)
–বড় না ছাই,সবার সাথেই ভালো শুধু আমার সাথেই এমন করে,আমিকি মানুষনা নাকি
–তুই মানুষ?লাইক সিরিয়াসলি ইয়ানা?তুইতো বটগাছের পেত্নী রে
–ধুরর,আমি থাকবোইনা এখানে
ইয়ানা রেগে গটগট করে চলে যেতেই ইন্তিহাজ হেসে দিয়ে বললল,
–তোমার মেয়ের সঙ্গে দুষ্টামি করতে ভালো লাগে ছোট আব্বু,মাইন্ড করোনা,জাস্ট ফান করি আমি
–বড়তো নয়,দিনদিন ছোট হচ্ছিস তোরা,কয়দিন পর ডক্টর হয়ে বেড়িয়ে আসবি,এখনও ছেলেমানুষী গেলোনা তোর
–সবেতে মেডিকেলে চান্স পেলাম,ডাক্তার হয়ে বেড়িয়ে আসতে দেরি আছে বড় আব্বু (মুচকি হেসে)
আয়ুব জামান ইন্তিহাজের পিঠ চাপড়ে চলে গেলেন,তৃষা খুশিতে আপ্লুত হয়ে বললো,
–তারপর তোমার বিয়ে হবে,লাল টুকটুকে ভাবি আসবে বাড়িতে তাইনা ভাইয়া
–পাকা বুড়ি একটা,তোদের ভাবি তো তোদের চোখের সামনেই আছে,খুঁজে নিস
–মানে,তুমি কি রিলেশনশিপে আছো নাকি (বললো বহ্নি)
–দু’লাইন বেশি বুঝা বন্ধ কর বহ্নি,এসব রিলেশনশিপের প্যারায় আমি ইন্তিহাজ জামান নেই ওকে,তবে আছে কেউ আমার কল্পনার রাজ্যে,যার চোখের মায়ায় ডুবেছি সেই শুরুতেই,একদিন তাকে নিজের মুখে বলবো #ডুবেছি_আমি_তোমার_চোখের_অনন্ত_মায়ায়
★
পড়ার টেবিলে বসে কলম দিয়ে টেবিলে আঘাত করছে ইয়ানা,রাগে ফসফস করছে সে,অতিরিক্ত রাগের কারণে তার নেত্রপল্লবে পানি এসে জমেছে,
–দুনিয়ায় কি আমি ছাড়া আর কোনো মেয়ে নেই ঝগড়া করার জন্য,অলওয়েজ আমার সঙ্গেই ইচ্ছে করে ঝগড়া করবে,ইনসাল্ট করবে,আমাকে পেয়েছে টা কি হ্যাঁ,বিয়াদপ ছেলে একটা,মনটা চায় লাথি দিয়ে উগাণ্ডায় পাঠিয়ে দুই,বদ/জাত কোথাকার।এতদিন পর বাড়ি আসলো,সবার জন্য শপিং করে এনেছে আর আমার বেলায় নাকি ওনার ভারে মা ভবানি,টাকা নেই,ঢং যতসব।আবার বলে কিনা আমার জন্য নাকি ওনার পড়াশোনা হয়না,কেন রে আমি কি তোর কোলে গিয়ে বসে থাকি নাকি চুল ধরে টানাটানি করি যে পড়া হয়না। নাইজেরিয়ান উল্লুক,হতচ্ছাড়া,শয়/তান
–আর কিছু বাকি থাকলে সেগুলোও বলতে পারিস,আমি কিছু মনে করবোনা,কিন্তু মাঝখান থেকে লোকসান তোরই হবে,লাভ’তো আমার
ইন্তিহাজের কণ্ঠস্বর পেয়ে ইয়ানা কলম রেখে পেছনে ঘুরে দেখে ইন্তিহাজ দরজার পাল্লার সঙ্গে হ্যালান দিয়ে বুকে হাত গুজে দাড়িয়ে আছে,ঠোঁটের কোণে লেগে আছে শয়তানি বাঁকা হাসি।ইন্তিহাজ কে এমনভাবে হাসতে দেখে রাগ যেন আরও কয়েকগুণ বেড়ে গেলো ইয়ানার,উঠে দাঁড়িয়ে ক্ষিপ্ত স্বরে বললো,
–আমার রুমে তোমার কি হ্যাঁ,বের হও এখুনি,আমি পড়তে বসেছি,আমার পড়ার ডিস্টার্ব হচ্ছে,পড়ার সময় কারোর উপস্থিতি আমি এলাও করবোনা,অনেক পড়তে হবে
–এ্যাহ্,অনেক পড়তে হবে,দেখছিতো কেমন পড়ছিস।
শুনলাম আবিরের সঙ্গে প্রেম করছিস,তো কতদিন হলো কিরে?
ইন্তিহাজের মুখ থেকে এই কথা শুনে যেন গা পিত্তি জ্বলে উঠলো ইয়ানার,তেড়ে গিয়ে বললো,
–হ্যাঁ প্রেম করছি রিলেশনস করছি তাতে তোমার কি?আমি তোমার মতো নিরামিষ,গবেট নই যে ব্যাচেলর লাইফ লিড করবো,আরে লাইফে চিল করারও দরকার আছে,আমিতো জাস্ট চিল কর….
ইয়ানা পুরো কথা শেষ করার আগেই ইন্তিহাজ ওর কান টেনে ধরলো,
–চিল করছিস তাইনা,ছোট আব্বু কি জানে তার মেয়ে বড় হয়ে গেছে,প্রেম করতেও শিখে গেছে।এতবড় অপরাধ করা সত্ত্বেও তার কাছে সব নরমাল মনে হচ্ছে,ছোট আব্বুরও জানা উচিত তার মেয়ে বাইরে কি করে বেড়ায়
–আহ্ লাগছে,ছাড়ো,কানটা ছিড়ে ফেলবে নাকি,ইশ
–লাগুক,লাগার জন্যেই ধরেছি।
তোর সাহস এতো বেড়ে গেছে যে রাস্তাঘাটে হাত ধরে ঘুরে বেড়াস,কলেজে গিয়ে ক্লাস মিস দিয়ে ক্যাম্পাসে বসে আড্ডা দিস,তোকে কি এসব করার জন্য কলেজে পাঠানো হয়?বিয়াদপ,অসভ্য মেয়ে কোথাকার,আবার মুখেমুখে তর্ক করিস
–আমার ব্যাপারে নাক গলাবে না ইন্তিহাজ ভাইয়া,তোমার অধিকার নেই আমাকে টাচ করার,আমাকে আঘাত করার
–থাপ্পড় দিয়ে গাল লাল করে দিব দেখিস,আমি তোর সিনিয়র,তোর বড় ভাই লাগি আমি,অধিকার নেই তাইনা।
–অ্যাহ্,আসছে আমার বড় ভাই।সারাবছর খোঁজ থাকে না,এখন বড়ভাই এর অধিকার ফলাতে আসছে,আমি মানিনা তোমাকে বড় ভাই হিসেবে বুঝেছো,বেড়িয়ে যাও আমার ঘর থেকে
–এখন মানতে হবে না,পরে মানিস।
এখন কাজের কাজটা কর,তোর ফোনটা দেতো
–কিইহ্,আমার ফোন আমি তোমাকে কেন দিব।এটা আমার পারসোনাল জিনিস
–খুব বড় হয়ে গেছিস নারে?
দু’দিন আগেও আমার কোলে বসে ললিপপ খেতি আর এখন বড়বড় ডায়লগ শিখে গেছিস
–তো?বয়স কি থেমে থাকবে নাকি,বড়তো হয়েছিই,সঠিক বয়সে বিয়ে হলে বাচ্চার মা হয়ে যেতাম
–মুখেমুখে তর্ক করা বন্ধ করে ফোনটা দে (ধমক দিয়ে)
–দিব না,কি করবে হুম
–কানের নিচে কষে লাগিয়ে দিব
–এই ডায়লগ শুনতে শুনতে বুড়ি হয়ে গেলাম (হাই তুলতে তুলতে বললো ইয়ানা)
–শোন ইয়ানা,ফোনটা আমার জন্য পেয়েছিস ভুলে যাসনা,আমার সঙ্গে ত্যাড়ামি করলে ফোনটা কেড়ে নিতে আমার এক সেকেন্ডও লাগবে না।ভালোয় ভালোয় বলছি ফোনটা দে
–ঢং যতসব,এ্যাহ ফোন নাকি ওনার জন্য পেয়েছি,ফোন আমার বাপের টাকায় কেনা,এমন ভাব করছে যেন ফোনটা উনি কিনে দিছেন।নে নে,ফোন ধুয়ে পানি খা,এমন লক দিয়েছিনা,তুমি কেন দশ-টা তুমি এলেও লক খুলতে পারবেনা (বিড়বিড় করে বললো ইয়ানা)
–কিরে,ফোনটা দিবি নাকি আমি অন্য ব্যবস্থা নিব
–দিচ্ছি,দাঁড়াও (মুখ ভেংচি দিয়ে)
ইয়ানা চার্জিং থেকে ফোনটা খুলে ইন্তিহাজের হাতে দিয়ে বললো,
–নাও,এবার দয়া করে এসো।
আমার অনেক পড়া আছে বুঝলে,তোমার জন্য কতোটা টাইমওয়েস্ট হলো দেখলেতো।এখন আমাকে এক্সট্রা টাইম পড়তে হবে,ধুরর ভাললাগেনা
ইন্তিহাজ ইয়ানা’কে চোখ রাঙানি দিয়ে বেড়িয়ে যাওয়ার পর ইয়ানা বিরবির করতে করতে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিলো।
এই ছেলে বাড়িতে আসলে ওর জীবনের সব শান্তি অশান্তি তে পরিণত হয়,মা তো ইন্তিহাজের পড়াশোনা করার ধরণ,ওর চলাফেরা,স্টাইল,খাওয়াদাওয়া,আচার-আচরণ সবকিছু নিয়েই ইয়ানা’কে খোঁটা দিতেই থাকে,এক মূহুর্ত যেন বিরাম নেই।
দরজা লাগিয়ে দিয়ে ইয়ানা টান হয়ে বিছানায় শুয়ে ঘুরন্ত ফ্যানের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো,
–আচ্ছা,এই হত/চ্ছাড়া কে আবিরের কথা কে বললো,আমিতো ওর সঙ্গে রিলেশনে আছি সেটা আমার ফ্রেন্ড সার্কেলের বাইরে তো কেউ জানেনা।
আমি বুঝিনা বাপু,আমি লুকিয়ে-চুরিয়ে যা-ই করিনা কেন,এই ইন্তিহাজ ভাইয়া সব জেনে যায়।আচ্ছা ভাইয়ার কি দিব্যদৃষ্টি টৃষ্টি কিছু আছে নাকি,দেখতে তো কেমন কোরিয়ান চকোলেট বয়ের মতো লাগে,জাতীয় ক্রাশ হাহ্
ইয়ানা’র ভাবনার মাঝেই দরজায় কড়া নাড়া শুরু হলো,বিরক্তিতে ইয়ানা চেচিয়ে বললো,
–পড়তে বসেছি,শান্তিতে পড়তেও দিবেনা নাকি।আজবতো,এটা বাড়ি নাকি মাছের বাজার,সবসময় চেচামেচি লেগেই আছে
ইয়ানা’র চেচামেচির তোয়াক্কা করলোনা দরজার ওপাশে থাকা মানুষ,এবার আর সইতে না পেরে ইয়ানা গিয়ে দরজা খুলে দিলো,ক্ষিপ্ত হয়ে কিছু বলবে তখনই দেখে নাহিদ (ইয়ানা’র ছোট ভাই,২য় শ্রেণিতে পড়ে) দাঁড়িয়ে আছে।নাহিদ’কে দেখে একগাল হাসি দিলো ইয়ানা,
–কি হয়েছে ভাইয়ু,এভাবে দরজায় কেউ শব্দ করে নাকি,আপুই পড়াশোনা করছিলো তো
–আপু,ইন্তিহাজ ভাইয়া তোমাকে ডাকছে
–যম/রাজ আবার আমাকে যমা/লয়ে ডাকে কেন,আবার কি হলো।
ওই য;মের ঘরে যাওয়া মানেই বিপদ (বিরবির করে বললো ইয়ানা)
–আপু,ভাইয়া রেগে আছে,তাড়াতাড়ি যাও
–ভাইয়াকে গিয়ে বলো আমি ব্যস্ত আছি যেতে পারবোনা
–ভাইয়া বলেছে কোনো অজুহাত চলবেনা,তোমার আপু ভালোয়ভালোয় না আসলে ভাইয়া আঙুল বাঁকাতে বাধ্য হবে।এটাও বলেছে ভাইয়ার কথা না শোনার পরিণাম তোমাকে মনে করিয়ে দিতে
নাহিদের কথা শুনে ইয়ানা’র মনে পরে গেলো গতমাসের কথা,ইন্তিহাজ বাথরুমের গিজার অন করতে বলেছিলো ইয়ানা’কে,সেলফি তুলতে ব্যস্ত থাকা ইয়ানা বেমালুম ভুলে গিয়েছিলো সেটা।এই ভুলের খেসারত তাকে খুব ভালোভাবেই দিতে হয়েছিলো,পুরো আধঘন্টা শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছিলে,শীতের সকালে ঠান্ডা পানির নিচে আধঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকা মুখের কথা নয়।
অতীত মনে পরতেই ভয় পেয়ে ইয়ানা দৌড়ে চলে আসলো ইন্তিহাজের রুমে।
ল্যাপটপ নিয়ে বসে থাকা ইন্তিহাজ ইয়ানা’র উদ্দেশ্যে বললো,
–৫মিনিট লেট,উইথআউট পারমিশন রুমে প্রবেশ করার অপরাধে ১০মিনিট একপায়ে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাক,কথা বললে টাইম লিমিটস আরও বেড়ে যাবে…..
To be continue……