দিওয়ানেগি পর্ব-০৩+০৪

0
638

#দিওয়ানেগি #পর্ব_৩+৪
#M_Sonali

দোকান থেকে একগাদা নিউজপেপার নিয়ে সেগুলো উল্টেপাল্টে দেখছে মেহরিমা। যেভাবেই হোক তাকে একটা চাকরির ব্যবস্থা করতেই হবে। বাড়িতে যতোটুকু চাল ডাল আছে তা দিয়ে খুব জোর সাত দিন চলবে। কিন্তু তারপর, তারপর তো না খেয়ে থাকতে হবে। তাছাড়া মেহেরের পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্যও টাকার দরকার। তাই যেভাবেই হোক মেহরিমাকে একটা চাকরি জোগাড় করতেই হবে। সে অনেকক্ষণ হলো নিউজপেপার উল্টেপাল্টে দেখেও কোনরকম চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি খুঁজে পেল না। যেটা তার জন্য উপযোগী হবে। শেষে বিরক্ত হয়ে পেপারগুলো ছুড়ে ফেলল। কি করবে এখন সে। মাথা যেনো কাজ করছে না তার। এভাবে কেটে গেলো কিছুটা সময়। না তাকে হার মেনে নিলে চলবে না। যেভাবেই হোক একটা চাকরির জোগাড় করতেই হবে। বাবা সবসময় বলতেন কখনো ধৈর্য হারা না হতে। যেকোনো কাজ ধৈর্যের সাথে করলে অবশ্যই সেটাতে সফল হওয়া যায়।

মেহরিমা নিউজ পেপার গুলো একটা একটা করে গুছিয়ে সামনে নিল। এবার খুব মনোযোগ দিয়ে একটা একটা করে নিউজপেপার দেখতে লাগল সে। হঠাৎ তার চোখ পরলো টেবিলের নিচে। সেখানে একটা পেপার পড়ে আছে। যেটা ও এখনো দেখেনি। কখন হয়তো ভুলবশত হাত থেকে পড়ে গেছে। সে আর সময় বিলম্ব না করে দ্রুত নিউজ পেপার টা টেবিলের নিচ থেকে তুলে নিল। তারপর সেটা সামনে নিয়ে দুই একবার চোখ বুলাতেই একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে চোখ আটকে গেল তার। ভালোভাবে পড়ে ভীষণ রকম পছন্দ হল কাজটা। কিন্তু ইন্টারভিউয়ের সময় দেখে মেহরিমার মাথা ঘুরে গেল। কারণ এখন বাজে বেলা বারোটা। দশটার সময় ইন্টারভিউ শুরু হয়ে গেছে।মেহেরিমা আর দেরী করলো না। দ্রুত উঠে কোনরকম হাতমুখ ধুয়ে রেডি হয়ে নিল। তারপর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। মেহের স্কুলে গেছে। বাসায় আসতে আসতে বিকেল হবে। তাই ওকে বলে যেতে পারলো না।
,
,
,
সকাল থেকে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ জন মেয়ের ইন্টারভিউ নিয়েছে দিলরুবা বেগম। কিন্তু মনের মত একজন কে ও খুঁজে পায়নি সে। যাকে তার নাতির জন্য সিলেক্ট করতে পারে। তাই ভীষণ রকম বিরক্ত বোধ করছেন তিনি। সকাল দশটা থেকে শুরু করে এখন বেলা সাড়ে বারোটা বাজতে চলল। অথচ এখন পর্যন্ত এমন কাউকেই পেল না। যাকে তার মনে ধরবে। তিনি একজন গার্ডকে ডাক দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন আর কয়জন মেয়ে বাকি আছে ইন্টার্ভিউ এর জন্যে? গার্ড বলল, আজকের মত আর কেউই বাকি নেই। এবার আরও বেশী বিরক্ত হলেন দিলরুবা বেগম। মনে মনে ভাবলেন তবে কি তার নাতির জন্যে সে কাউকেই পাবে না। কথাটা ভাবতেই মনটা ছোট হয়ে গেল তার। সে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, আগামি কালকে আবারও নতুন মেয়েদের ইন্টারভিউ এর ব্যবস্থা করতে।

মনে মনে ঠিক করলেন যতদিন না সে তার নাতির জন্যে পছন্দ অনুযায়ী মেয়ে পাবে। ততদিন সে এভাবেই ইন্টারভিউ নিয়ে যাবে। কথাগুলো ভেবে নিজের রুমে যাওয়ার জন্য সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালেন দিলরুবা বেগম। কয়েক পা সামনে এগিয়ে যেতেই পেছন থেকে একজন গার্ড ডেকে বলল,

“ম্যাডাম, আর একজন মেয়ে এসেছে। বলছে সে ইন্টার্ভিউ দিতে চায়। আমি তাকে বলেছি কালকে আসতে। কিন্তু সে জোর করছে। আপনার সাথে দেখা করতে চায়।”

গার্ডের কথার উত্তরে কিছুক্ষণ চুপ থাকলেন দিলরুবা বেগম। মনে মনে কিছু একটা ভেবে আবারো এসে সোফায় বসলেন। তারপর গার্ডকে ইশারা করে মেয়েটিকে পাঠিয়ে দিতে বললেন।

সোফায় বসে চোখের চশমাটা খুলে সেটা হাল্কা ভাবে মুচ্ছেন দিলরুবা বেগম। তখন’ই কেউ মিষ্টি কন্ঠে বলে উঠলো,

“আসসালামু আলাইকুম ম্যাম। আমি কি ভিতরে আসতে পারি?”

সালামের উত্তর নিয়ে চোখে চশমাটা পড়ে নিলেন দিলরুবা বেগম। তারপর সামনে ফিরে তাকাতেই চোখটা যেন চিকচিক করে উঠলো তার। কালো রঙের সালোয়ার-কামিজ ও মাথায় ওড়না দিয়ে হিজাব বাধা অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে একটি মেয়ে। মেয়েটা লম্বায় ৫ ফিট ৫ হবে। গায়ের রং ফর্সা। মিডিয়াম স্বাস্থ্য। চোখ গুলো ভিষন মায়াবি। বেশ গোলগাল মিষ্টি চেহারা। এককথায় বেশ সুন্দরী দেখতে। ঠিক যেমনটা দিলরুবা বেগম চেয়ে ছিলেন। মেয়েটিকে দেখেই যেন মুখে হাসি ফুটে উঠল দিলরুবা বেগমের। তিনি মুচকি হেসে ভিতরে আসার অনুমতি দিলেন মেয়েটিকে। তারপর বসার জন্য ইশারা করে সোফা দেখালেন। মেয়েটি তার পাশে এসে বসল। দেখেই বোঝা যাচ্ছে মেয়েটা ভীষণ রকম নার্ভাস ফিল করছে।

“নাম কি তোমার”

“জ্বি আমার নাম মেহরিমা। এখানে আমার বায়োডাটা আছে।(হাতে থাকা কাগজপত্র গুলো সামনে এগিয়ে দিতে দিতে বললো)”

দিলরুবা বেগম কাগজপত্রগুলো হাতে নিয়ে সেগুলো ভালো করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলেন। ততক্ষণে মেহরিমা দিলরুবা বেগমের পা থেকে মাথা পর্যন্ত তিক্ষ্ম দৃষ্টিতে দেখতে লাগল। এর আগে এমন বয়স্কা এত সুন্দরী নারী হয়তো কখনোই দেখেনি সে। অনেক বয়স হওয়া সত্বেও তার সৌন্দর্যের যেনো কমতি নেই। গায়ের রঙ যেন একদম ফুরফুরে সাদা। চেহারায় যেন রুপ ঢেলে পরছে এখনো। দেখে মনে হয় আগেকার দিনের কোনো রাজ মাতা তার সামনে বসে আছে। সত্যিই দিলরুবা নামটা তার সাথে যায়।

মেহরিমা এসব কথা ভাবতে ভাবতেই দিলরুবা বেগম বলে উঠলেন,

“তোমার বাসায় কে কে আছেন?”

“আমার বাসায় আমার ছোট বোন ছাড়া আর কেউ নেই।”

“কেন, তোমার বাবা-মা কোথায় থাকেন?”

মেহরিমা মাথা নিচু করে ফেলল। মুখটা যেনো হঠাৎ করে মেঘে ঢেকে গেলো তার। সে ধির গলায় বলে উঠল,

“আমার বাবা-মা এ পৃথিবীতে নেই। তারা আল্লাহর কাছে চলে গেছেন। বাড়িতে আমরা দুবোন একাই থাকি।”

মেহরিমার কথা শুনে কিছুক্ষণ চুপ থাকলেন দিলরুবা বেগম। তারপর ছোট করে একটি নিশ্বাস নিয়ে আদুরে গলায় বললেন,

“মন খারাপ করো না। দুদিন আগে পরে পৃথিবীর সকলকেই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে।”

এভাবে আরো প্রয়োজনীয় কিছু কথা জেনে নিলেন দিলরুবা বেগম মেহরিমার থেকে। তারপর প্রশ্ন করলেন,

” আমি যেসব বলবো সবকিছু মেনে চলতে পারবে তো মেহরিমা?”

“জ্বি ম্যাম আমি মন দিয়ে আপনার দেখাশোনা করবো।”

“তোমার চাকরিটা আমি কনফার্ম করে দিলাম। তুমি কাল সকাল থেকেই এখানে চলে আসবে। কিন্তু তোমার কাছে আগেই সব কিছু ক্লিয়ার করে নিতে চাই। আমি তোমাকে যা বলব সব কাজই করতে হবে। তবে ভয় পেওনা, এমন কোন কাজ করতে বলবো না। যেটা তুমি করতে পারবে না। সব সময় আমার সাথে সাথে থাকতে হবে। আমার আদেশ নিষেধ মেনে চলতে হবে। আর সব চাইতে জরুরী যেটা। এখানে আসার আগে প্রতিদিন সুন্দর করে সাজগোজ করে আসতে হবে। এমন সাদামাটা থাকা আমার একদম পছন্দ নয়। কি পারবে তো?”

চাকরি কনফার্ম শুনে আনন্দে চোখ চিকচিক করে উঠলো মেহরিমার। সে মুচকি হেসে বলে উঠলো,

“জ্বি ম্যাম, আপনি যা বলবেন আমি সবকিছুই করব। আমার এই চাকরিটার ভীষণরকম প্রয়োজন ছিল। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ম্যাম, আমাকে চাকরিটা দেওয়ার জন্য।”

“এই মেয়ে শোনো, সবার আগে তুমি আমাকে এই ম্যাম বলে ডাকা বন্ধ করো। তুমি আমাকে দিদুন বলে ডাকবে। আমাকে নিজের বান্ধবীও ভাবতে পারো। আমার বয়স কিন্তু খুব একটা বেশি নয়। এই ১৬ বা ১৭ হবে।”

কথাটি বলেই হেসে দিল দিলরুবা বেগম। ওনার কথা শুনে মেহরিমা ও হালকা হাসলো। সত্যিই মেহরিমার ভীষণ ভালো লেগেছে দিলরুবা বেগম কে। তিনি দেখতে যতটা সুন্দর, তার আচরণ ব্যবহার ও ঠিক ততটাই সুন্দর। মেহরিমা যেন এই অল্প কিছু সময়ের মাঝেই তার ভক্ত হয়ে গেল। তারপর আরও কিছুক্ষণ কথা বলে বাসায় যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালো মেহরিমা। তখনই দিলরুবা বেগম ওকে থামিয়ে দিয়ে বললেন,

“মেহরিমা তুমি এখানে একটু বসো। আমি আসছি।”

কথাটি বলেই তিনি উঠে চলে গেলেন। কিছুক্ষণ পর হাতে কিছু টাকা নিয়ে ফিরে আসলেন তিনি। মেহরিমার দিকে টাকাগুলো এগিয়ে দিয়ে বললেন,

“এখানে ২৫ হাজার টাকা আছে। তোমার প্রথম মাসের এডভান্স। কাল সকাল সকাল চলে এসো কিন্তু। আমি তোমার অপেক্ষায় থাকবো।”

উনার কথা শুনে মেহরিমা ভীষণ অবাক হয়ে গেলো। সে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে চনচল গলায় বলল,

“কিন্তু দিদুন, আমি তো নিউজপেপারে পড়েছিলাম বেতন ১৫ হাজার টাকা?”

” হ্যা তুমি ঠিকই পড়েছিলে। কিন্তু তোমাকে আমার ভালো লেগেছে। তাই ১০ হাজার টাকা বাড়িয়ে দিলাম। তোমার কাজ ভালো লাগলে সামনে আরো বাড়াবো।”

মেহরিমা টাকাগুলো হাতে নিয়ে সেগুলো উল্টেপাল্টে দেখলো। তারপর দিলরুবা বেগম এর দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলল,

“আমি যদি এই টাকাগুলো নিয়ে পালিয়ে যাই। কাল থেকে যদি আপনার কাজে না আসি তাহলে।”

দিলরুবা বেগম মুচকি হাসলেন। আদুরে গলায় বললেন,

“আমি জানি তুমি কোথাও পালাবে না। আর নিজের কাজ নিষ্ঠার সাথে করবে। তোমাকে চেনার জন্য, এতটুকু সময়’ই যথেষ্ট ছিলো আমার কাছে। চুল তো আর এমনি এমনি পাকেনি আমার!”

মেহরিমার মনটা যেন আনন্দে ভরে গেল। খুশিতে চোখে পানি চলে আসলো তার। দিলরুবা বেগমের কথায় সে হেসে দিয়ে বললো,

“কাল সকাল থেকেই আমি চলে আসবো দিদুন। আর আমার কাজ দিয়ে আপনার মন জয় করে নিবো। কখনো কোনো অভিযোগ করতে দিবো না।”

কথাগুলো বলে দিলরুবা বেগম এর থেকে বিদায় নিয়ে বাসার পথে রওনা দিলো মেহরিমা।ও চলে যেতেই দিলরুবা বেগম রহস্যময় হাসি দিলেন। মনে মনে বললেন,

“আমার মন তো তুমি অলরেডি জয় করে নিয়েছো মেহরিমা। এবার শুধু আমার নাতির পাথর হয়ে যাওয়া মনে, তোমার ভালবাসার ফুল ফুটানোর পালা। আমি জানি সেটা তুমি অবশ্যই পারবে। আর এই কাজে আমি তোমাকে সাহায্য করবো। তোমাকে আমার ভীষণ ভালো লেগেছে। আমার আলমিরের বউ হওয়ার জন্য তুমি’ই পারফেক্ট।”


বাসায় ফেরার পথে মিষ্টি, ফলমূল ও মেহেরের জন্য একটি ফোন কিনে নিয়ে আসলো মেহরিমা। ওকে সারপ্রাইজ দিবে বলে। রাতে দুবোন মিলে অনেক মজা করলো। মেহেরের পছন্দমত রান্না করে দুজন পেট ভরে খেলো। আর মেহের কে বলে দিল ফোনটা সব সময় সাথে রাখতে।
,
,
,
সকাল বেলা তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে বাসার সব কাজ শেষ করল মেহরিমা। মেহেরকে টেনে তুলে খাইয়ে ওকে স্কুলের জন্য রেডি করে দিল। তারপর নিজেও হালকা করে সাজলো। চোখে কাজল, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক, কানে ছোট একজোড়া ঝুমকা। ওড়না দিয়ে সুন্দর করে হিজাব পরে নিলো। তারপর মেহেরকে সাথে নিয়ে একসাথে বেরিয়ে পড়ল। ওকে স্কুলে রেখে নিজে দিলরুবা বেগমের বাসায় যাবে বলে।

মেহের কে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে, ও সোজা দিলরুবা বেগমের বাড়িতে চলে এলো। বাসার মধ্যে ঢোকার আগে দরজার সামনে একটি কালো রঙের গাড়ি দেখতে পেল সে। গাড়ির জানালার কাচ টা যেন আয়নার মতো সচ্ছ। স্পষ্ট মুখ দেখা যায় তাতে। মেহরিমা আয়নার সামনে দাঁড়ায়ে নিজেকে একবার ভালো করে দেখে নিলো। সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা। দিদুন কালকে বারবার বলে দিয়েছে পরিপাটি হয়ে সেজে আসতে।
,
,
আলমির গতকাল সারারাত বাসায় ফিরতে পারেনি। অফিসে ভীষণ রকম কাজের চাপ থাকায় এইমাত্র অফিস থেকে বাসায় ফিরলো সে। আজ নিজেই ড্রাইভ করে এসেছে। গার্ডদের ছুটি দিয়েছে। বাসায় পৌছে যখনি সে গাড়ি থেকে নামতে যাবে। তখন’ই একটি মেয়েকে দেখে চোখ আটকে যায় তার। মেয়েটি আর কেউ নয় মেহরিমা। গাড়ির জানালার কাচ লাগানো থাকায় আলমির মেহরিমা কে দেখতে পেলেও, মেহরিমা ওকে দেখতে পায়নি। তাই সে গাড়ির জানালার কাচের মধ্যে নিজেকে দেখে পরিপাটি করতে থাকে। এদিকে আলমির গাড়ির মধ্যে থেকে এক নজরে তাকিয়ে আছে তার দিকে। যেন পলক ফেলার উপায় নেই তার। হৃদস্পন্দন যেন কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে। এমনভাবে তাকিয়ে আছে যেন কত জনমের পরিচিত তার মেহরিমা।

মেহরিমা বাসার মধ্যে ঢুকে যেতেই ধ্যান ভাঙ্গে আলমিরের। সে ওই দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিচের দিকে তাকায়। মনে মনে ভাবে কি হয়েছিল তার এতক্ষণ। এভাবে একটি মেয়ের দিকে কেন তাকিয়ে ছিল সে? কথাটা ভেবেই নিজের প্রতি রাগ হয় তার। পরক্ষনেই মনের ভুল ভাবে ঘটনাটাকে। আলমির ভাবে এতক্ষণ সে স্বপ্ন দেখছিলো। সারারাত জেগে থাকার কারণে হয়ত হ্যালুসিনেশন হয়েছে তার। নিজেকে নিজেই উপহাস করে গাড়ি থেকে নেমে আসে আলমির। তারপর বাসার ভেতর যাওয়ার জন্যে পা বাড়ায়।

মেহরিমা বাসার মধ্যে ঢুকেই দেখে দিলরুবা বেগম সামনেই সোফার উপর বসে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে। ওকে দেখে মুখে হাসি ফুটে ওঠে দিলরুবা বেগমের। তিনি উঠে দাঁড়িয়ে বলেন,

“তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম মেহরিমা। ঠিক সময় এসেছো তুমি। এখন হাতের ব্যাগটা রেখে জলদি একটা কাজ করো তো আমার জন্যে।”

মেহেরিমা কিছুই বুঝতে পারেনা। সে হাতের ব্যাগটা পাশে সোফার উপর রাখে। কিছু বলার জন্য মুখ খুলবে তার আগেই দিলরুবা বেগম আবার বলে ওঠেন,

“এখন এক দৌড়ে বাইরে বাগানে যাবে। আমার জন্য বাগান থেকে একটি বড় দেখে গোলাপ ফুল তুলে নিয়ে আসবে। ৫ মিনিটের মধ্যে এই কাজটা করতে হবে তোমায়। যাও তাড়াতাড়ি।”

মেহরিমা যেন বেকুব বনে যায়। দিলরুবা বেগম এর কথাবার্তা মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে তার। কিন্তু ওনার হুকুমও ফেলে দিতে পারবে না। তাই কোন দিকে না তাকিয়ে দ্রুত হাতের ব্যাগটা রেখে বাইরের দিকে দৌড় দেয়। দৌড় দিয়ে দু একপা সামনে যেতেই কিছু একটার সাথে খুব জোরে ধাক্কা খায় সে। তাল সামলাতে না পেরে তাকে নিয়েই পড়ে যায় ফ্লোরে। হাতে বেশ ব্যথাও পায় সে। ভয়ে চোখ বন্ধ করে রেখে বির বির করে বলে ওঠে,

“ও মাগো মাঝ রাস্তায় খাম্বা এলো কোথা থেকে? আমার হাতটা বুঝি গেল গো! ”

কথাটা বলেই চোখ মেলে তাকায় মেহরিমা। সামনে তাকাতেই চোখ বড় বড় হয়ে যায় তার। কারণ সে একজন পুরুষের বুকের ওপর শুয়ে আছে। যে তাকে আঁকড়ে ধরে আছে অজান্তে। আর ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে তার’ই দিকে।
,
,
,
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

#দিওয়ানেগি #পর্ব_৪
#M_Sonali

“ও মাগো মাঝ রাস্তায় খাম্বা এলো কোথা থেকে? আমার হাতটা বুঝি গেল গো! ”

কথাটা বলেই চোখ মেলে তাকায় মেহরিমা। সামনে তাকাতেই চোখ বড় বড় হয়ে যায় তার। কারণ সে একজন পুরুষের বুকের ওপর শুয়ে আছে। যে তাকে আঁকড়ে ধরে আছে অজান্তে। আর ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে তার’ই দিকে। মুহূর্তেই ভীষণরকম অস্বস্তি শুরু হয় তার। সেই সাথে রাগটাও যেন মাথায় চেপে বসে। দ্রুত তার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে উঠে দাঁড়ায় মেহরিমা। তারপর রাগী গলায় বলে,

“এই খাম্বা কে আপনি? আপনার সাহস তো কম না। আমাকে এভেবে ধরে ছিলেন কোন সাহসে?”

ওর কথার উত্তরে আরও তিনগুণ বেশি রেগে যায় আলমির। সে উঠে দাঁড়িয়ে দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলে,

“ইউ স্টুপিট গার্ল, তোমার সাহস হয় কি করে আমার বাড়িতে দাঁড়িয়ে আমার সাথে এভাবে কথা বলার? আর এভাবে ছাগল ছানার মত দৌড়ে এসে আমার ওপর পরার মানে কি? চোখে কি দেখতে পাও না নাকি? ননসেন্স কোথাকার।”

এতক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে ওদের সিন দেখছিলেন দিলরুবা বেগম। অবস্থা বেগতিক বুঝতে পেরে ওদের কাছে এগিয়ে আসেন তিনি। আলমিরকে থামিয়ে দিয়ে বলেন,

“আলমির এটা কেমন আচরণ করছো তুমি ওর সাথে? ওর কোন দোষ নেই। আমি’ই ওকে বলেছিলাম বাগান থেকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে ফুল তুলে আনতে। তাই তাড়াতাড়ি যেতে গিয়ে তোমার সাথে ধাক্কা খেয়েছে। তাই বলে তুমি এই বাচ্চা মেয়েটার সাথে এভাবে কথা বলতে পারোনা।”

ওনার কথায় ভ্রু কুচকায় আলমির। মেহরিমার দিকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার দেখে নেয় সে। তারপর উপহাসের কন্ঠে বলে,

” তো বাচ্চা মেয়েই যখন, তাহলে বাসায় গিয়ে ফিডার খেতে বল না। এখানে দাঁড়িয়ে কি করছে। আর তাছাড়া এই মেয়েটি কে দিদুন? যার হয়ে তুমি এত কথা বলছো? একে তো আগে কখনো এই বাসায় দেখিনি?”

কথাগুলো বলেই মেহরিমার দিকে সন্দেহের নজরে তাকিয়ে থাকে আলমির। মেহরিমা চুপচাপ দাঁড়িয়ে রাগে ফোঁসফোঁস করছে। দিদুন ওর অবস্থা বুঝতে পেরে আলমিরকে ধমক দেয়। তারপর মেহরিমার হাত ধরে বলে,

” তুমি যেমন আমার নাতি। ধরে নাও ও তেমনি আমার এক নাতনী। ওকে আমি পছন্দ করে আজকে থেকে আমার দেখা শোনার জন্য রেখেছি। সারাক্ষণ আমার সাথে থাকার জন্য। আমাকে সময় দেওয়ার জন্য। তুমি তো নিজের কাজ করে আমায় সময় দিতে পারো না। তাই ওকে রেখেছি আমি। এতে তোমার যদি কোন রকম অসুবিধা হয় তো বলো আমায়।”

দিলরুবা বেগমের কথার উত্তরে কিছুক্ষণ চুপ থাকে আলমির। গম্ভীর নজরে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে মেহরিমার দিকে। তারপর কিছু একটা ভেবে দিদুনের দিকে তাকিয়ে চাপা গলায় বলে,

“তোমার যেটা ভালো মনে হয় সেটাই করো। কিন্তু তোমার এই নাতনি টাকে বলে দিও, সে যেন এভাবে যেখানে সেখানে ছাগল ছানার মত দৌড়াদৌড়ি না করে। এই ময়দার বস্তা আমার গায়ের উপর দ্বিতীয় বার পড়লে কিন্তু খবর আছে বলে দিলাম।”

কথাগুলো বলেই দ্রুত হেঁটে উপরতলায় চলে যায় আলমির। মেহরিমা রাগে ফোসফোস করে তাকিয়ে থাকে সেদিকে। কত বড় স্পর্ধা এই লোকের। ওকে কিনা ছাগলছানা আবার ময়দার বস্তা বলে গেল? ইচ্ছে তো করছে ওনার চুল টেনে ছিড়ে দিতে। ভিষন রকম অপমান বোধ হচ্ছে মনে মনে। ইচ্ছে করছে এখনি রিজাইন করে বাসায় ফিরে যেতে। কিন্তু মেহরিমা সেটা করবে না। কারণ কোনো ভাবেই চাকরিটা হারাতে চায় না সে।

হঠাৎ মাথায় কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে ধ্যান ভাঙ্গে মেহরিমার। সেদিকে ফিরে তাকিয়ে দেখে দিদুন তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। তিনি ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলেন,

“রাগ করোনা মেহরিমা। আমার নাতি একটু রাগি হলেও মনের দিক থেকে অনেক ভালো। আলমির দাদুভাই ছাড়া পৃথিবীতে আমার আর কেউ নেই। তাই ওর কথায় রাগ করে আমাকে কষ্ট দিও না।”

উনার কথা শুনে উনার দুই হাত জড়িয়ে ধরে মেহরিমা। তারপর আবেগি গলায় বলে,

“এভাবে বলবেন না দিদুন। আমি রাগ করিনি। আসলে ভুলটা আমারই ছিল। আমার খেয়াল রেখে দৌড় দেওয়া উচিত ছিল। বুঝতে পারিনি এভাবে ওনার সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যাব। আপনি ভাববেন না। আমি ওনার থেকে ক্ষমা চেয়ে নিব।”

ওর কথার উত্তরে দিলরুবা বেগম আর কিছু বলেন না। ওর মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে দেন। হাত ধরে নিয়ে গিয়ে সোফায় নিজের পাশে বসান। তারপর মৃদু হেসে বলেন,

“তা দিদিভাই,সকালে নাস্তা করে এসেছো? নাকি না খেয়েই চলে এসেছো এখানে?”

“জ্বি দিদুন আমি সকালে নাস্তা করেই এসেছি। আপনি নাস্তা করেছেন?”

“হ্যা করেছি। কিন্তু আলমির এখনো কিছুই খায়নি। তুমি এক কাজ করো তো দিদিভাই, আলমিরের জন্য একটু চিকেন স্যুপ বানিয়ে ওর রুমে নিয়ে যাও। ও চিকেন স্যুপ খুব পছন্দ করে। আর হ্যাঁ ঝাল টা একটু কম করে দিও। আলমির বেশি ঝাল খেতে পারে না। কি পারবে তো রান্না করতে?”

ওনার কথা শুনে তোতলাতে থাকে মেহরিমা। অসহায় ভাবে তাকিয়ে চাপা গলায় বলে,

“ও ওনার জ জন্যে আমি সুপ বানিয়ে নিয়ে যাব দিদুন?”

“হ্যাঁ তুমি”ই নিয়ে যাবে। ভুলে যেও না আজকে তোমার চাকরির প্রথম দিন। প্রথমেই সকালে এসে একটি ভুল করে বসে আছো। এখন পর্যন্ত আমাকে গোলাপ তুলে এনে দাও নি। সেটা না হয় বাদ দিলাম। এখন আর আমার গোলাপ চাই না। কিন্তু আমার নাতিকে তাড়াতাড়ি গিয়ে সুপ বানিয়ে দিয়ে আসো।”

বেশ ঝাঁঝালো কন্ঠে কথাগুলো বললেন দিলরুবা বেগম। ওনার এমন ঝাঝালো কন্ঠ শুনে বেশ ঘাবড়ে গেল মেহরিমা। সে দিদুনকে যতটা সহজ ভেবেছিল। ততটা সহজ তিনি নন। বরং ভীষণ রাগী। এটা বেশ ভালো করে বুঝতে পারল মেহরিমা। সে আর কোন রকম প্রশ্ন না করে দ্রুত উঠে রান্না ঘরের দিকে চলে গেল।
মেহরিমা চলে যেতেই মুচকি হাসলেন দিলরুবা বেগম। মনে মনে বললেন,

“স্যরি মেহরিমা দিদিভাই। তোমার সাথে এভাবে কথা বলতে চাইনি আমি। কিন্তু আমি চাই তুমি আর আলমির খুব তাড়াতাড়ি দুজন দুজনের কাছে চলে আসো। আমি আর কতদিনই বা বাঁচব। মৃত্যুর আগে তোমাদের সংসারটা দেখে যেতে চাই। আমার নাতির জীবনটা যেন তোমার ভালবাসায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। তাইতো এত বাহানা করছি তোমার সাথে। আমি আলমিরের চোখে তোমার প্রতি ভালো লাগা দেখেছি। এই প্রথম আমার দাদুভাই কোনো মেয়ের দিকে এভাবে তাকিয়ে ছিলো। এই প্রথম সে কোনো মেয়েকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছিলো।”

কথাগুলো ভেবে মুচকি হাসলেন দিলরুবা বেগম। মেহরিমা ভয়ে আতঙ্কে কি থেকে কি বানালো সে নিজেও জানেনা। কাঁপা হাতে সুপের ট্রে নিয়ে উপরতলায় যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো সে। যাওয়ার আগে দিদুনের থেকে জেনে নিলো আলমিরের রুম কোনটি। দিলরুবা বেগম পিছন থেকে তার অবস্থা দেখে মৃদু হাসলেন। মনে মনে বললেন,

“এবার হবে আসল মজা। উপরে তোমার জন্য নতুন সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে দিদিভাই। যাও দ্বিতীয় বারের মত দুজন ঝগড়া করো। কারণ ঝগড়া না করলে ভালবাসা মাখো মাখো হয় না।”

কথাগুলো ভেবে নিজে নিজেই হেসে দিলেন দিলরুবা বেগম। আর অপেক্ষা করতে লাগলেন আলমিরের চিৎকারের।
,
,
মেয়েদের এমনিতেই সহ্য করতে পারেনা আলমির। তার ওপর একটি মেয়েকে প্রথম দেখেই এমন রিঅ্যাক্ট করায় নিজের উপর ভীষণ রাগ হচ্ছে তার। সে বুঝতে পারছে না কেন মেয়েটির দিকে এভাবে তাকিয়ে ছিল সে। তাই মাথা ঠান্ডা করার জন্য রুমে ঢুকে কাপড় চোপড় খুলে শাওয়ার নিতে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে সে।

ফ্রেশ হয়ে ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে তাওয়াল পড়ে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় আলমির। নিজের ভেজা চুলগুলো হাত দিয়ে ঝাড়ি দিতে থাকে। তখনই আয়নায় কারো প্রতিচ্ছবি দেখতে পেরে পিছন দিকে ফিরে তাকায়। দেখে মেহরিমা চোখ খিচে বন্ধ করে ট্রে হাতে দাঁড়িয়ে কাঁপছে। আলমির ভ্রু কুচকায়। হঠাৎ তার কি যেনো হয়, সে ধীরে ধীরে ওর কাছে এগিয়ে আসে। হালকা নিচু হয়ে ওর চোখের দিকে তাকায়। মুচকি হেসে আলতো ভাবে ওর চোখের ওপর ফু দেয়। সাথে সাথে কেঁপে ওঠে মেহরিমা। দ্রুত চোখ খুলে সামনে তাকায় সে। দেখে আলমির একদম কাছে এসে দাঁড়িয়ে আছে তার। আলমিরের দৃষ্টি যেনো তার দিকেই স্থির। আচমকা এভাবে ওকে সামনাসামনি দেখায়, হাত থেকে সুপের বাটি সহ ট্রে টা নিচে পড়ে যায়। সেইসাথে বেশ কিছুটা গরম সুপ ঢেলে পরে আলমিরের পায়ের উপরে।

সাথে সাথে আলমির আউচ বলে শব্দ করে দু পা পিছিয়ে যায়। রাগি চোখে তাকায় মেহরিমার দিকে। দাঁত কিড়মিড় করে বলে,

“এই ময়দার বস্তা, সমস্যা কি তোমার? এখানে কেন এসেছো? এভাবে গরম সুপ পায়ে ফেলার মানে কি?”

ওর মুখে ময়দার বস্তা নামটা শুনে শরীর যেন রাগে জ্বলে ওঠে মেহরিমার। সে আর চুপ থাকতে পারেনা। সরি বলার বদলে, রাগী গলায় বলে ওঠে,

“দেখুন আমার একটা নাম আছে, মেহরিমা। আর আমি ইচ্ছে করে আপনার পায়ের উপর সুপটা ফেলিনি। আপনাকে কে বলেছিল খাম্বার মত আমার সামনে এসে ওভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে। আচমকা’ আপনাকে দেখায় আমার হাত থেকে সুপের বাটি পড়ে গেছে। আমি মোটেও ইচ্ছা করে ফেলিনি এটা।”

ওর এমন মুখের উপর জবাব দেওয়া দেখে রাগে মাথায় আগুন ধরে যায় আলমিরের। সে দ্রুত কয়েক পা সামনে এগিয়ে এসে মেহরিমার একদম কাছাকাছি দাঁড়ায়। দাঁত কিড়মিড় করে বলে,

“এই মেয়ে তোমার সাহস তো কম না। আলমিরের মুখে মুখে তর্ক করো? কোন সাহসে তুমি আমাকে খাম্বা বলে ডাকছো। তুমি জানো এর জন্য আমি তোমার কি অবস্থা করতে পারি।”

এবার বেশ ভয় পেয়ে যায় মেহরিমা। সে দ্রুত চোখ নিচে নামিয়ে নেয়। দু কদম পিছিয়ে যেতে নিলেই আলমির ওর দু বাহু শক্ত করে ধরে ফেলে। তারপর ঝাঁঝালো গলায় বলে,

“সেকেন্ড টাইম তোমাকে আমার রুমের আশেপাশে দেখলেও একদম খুন করে ফেলবো। তুমি জানো না আমি কে। তোমাকে এখানে দিদুনের জন্য রাখা হয়েছে। আমার কোন কাজ তোমাকে করতে হবে না। so get out you stupid.”

কথাগুলো বলেই ঝাড়ি মেরে মেহরিমার হাত ছেড়ে দেয় আলমির। তারপর অন্যদিকে ঘুরে দাঁড়ায় সে। মেহরিমার কষ্টে অপমানে চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে যায়। সে রুম থেকে বেড়িয়ে চোখের জল মুছতে মুছতে দৌড়ে নিচে চলে যায়। মেহরিমা কে কান্না করে আসতে দেখে বেশ ঘাবড়ে যান দিলরুবা বেগম। মেহরিমা দৌড়ে এসে সামনে দাঁড়ায় তার। কান্না করতে করতে বলে,

“আমাকে ক্ষমা করবেন দিদুন। আমি আর এখানে কাজ করতে পারবোনা। আপনার দেওয়া ২৫ হাজার টাকা আমি যেভাবেই পারি এসে দিয়ে যাব। কিন্তু এভাবে অপমানিত হয়ে আমি কোথাও চাকরি করতে চাই না। আমার বাবা কখনোই আমাকে মাথা নিচু করে বাঁচতে শেখায় নি। এই চাকরিটা করা আমার পক্ষে আর সম্ভব নয়।”

কথাগুলো বলে ওনাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই কাঁদতে কাঁদতে বাসা থেকে বাইরে বেরিয়ে যায় মেহরিমা। দিলরুবা বেগম বেশ কয়েকবার পিছুডাকে তাকে। কিন্তু মেহরিমা আর ফিরে আসে না। সে বাসা থেকে বেরিয়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে চলে যায়। এতে দিলরুবা বেগম ভীষণ রকম কষ্ট পান। অসুস্থ হয়ে পড়েন। সোফার উপর ঠাস করে বসে পড়ে হাঁপাতে থাকেন। তার অবস্থা দেখে পাশে থাকা একজন কাজের মেয়ে চিৎকার করে আলমির কে ডাকতে থাকে। মেয়েটির ডাক শুনে বেশ বিরক্ত হয়ে রুম থেকে বাইরে বেরিয়ে আসে আলমির। নিচের দিকে তাকিয়ে দিদুনের অবস্থা দেখে দৌড়ে নীচে নেমে আসে সে। ততক্ষণে দিদুন অজ্ঞান হয়ে যায়। আলমির দ্রুত দিদুনকে শুইয়ে দিয়ে ডাক্তার ফিরোজ আহমাদকে ফোন দেয়।
,
,
,
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,