দিওয়ানেগি পর্ব-০৫+০৬

0
602

#দিওয়ানেগি #পর্ব_৫+৬
#M_Sonali

“তোমার কাছ থেকে আমি এমনটা মোটেও আশা করিনি আলমির। তোমাকে বারবার বলে গিয়েছিলাম যে তোমার দিদুনকে কোনরকম টেনশন না দিতে। সে যেটাতে হাসিখুশি থাকে সে কাজটা করতে। কিন্তু তুমি এমন কি করেছো যে তার এই অবস্থা। তুমি জানো এটা তার শরীরের জন্য কতটা ক্ষতিকর হতে পারে। তার ব্লাড পেশার এতটা বাড়লো কিভাবে?”

দিলরুবা বেগমকে চেকআপ করে বেশ রাগি গলায় কথাগুলো বললেন ফিরোজ আহমাদ। তার কথার উত্তরে মাথা নিচু করে ফেলল আলমির। অসহায় কন্ঠে বলল,

“বিশ্বাস করুন আংকেল আমি সত্যিই জানি না দিদুনের কি হয়েছে। তিনি হঠাৎ এমন অসুস্থ হলেন কিভাবে। একটু আগেও তো তিনি একদম সুস্থ ছিলেন। বলুন না আংকেল আমার দিদুন সুস্থ হয়ে যাবেন তো?”

“হ্যাঁ আমি তাকে ঔষধ দিয়ে দিয়েছি। সে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে। চিন্তা করো না। কিন্তু তোমাকে আমি আবারো সতর্ক করছি আলমির। এভাবে চলতে থাকলে তোমার দিদুনের কোন কিছু হয়ে গেলে তখন আফসোস করে আর লাভ হবে না। তাই তোমার দিদুন যেটা চায় সেটাই করো। নিজের রাগ কে একটু কন্ট্রোল করতে শেখো। কিছুক্ষণের মাঝেই তোমার দিদুনের হুশ ফিরে আসবে। তার সাথে কথা বলে তার মন ভালো করার চেষ্টা করো। সে যেটা চায় সেটাই তাকে দাও। আমি এখন আসি। প্রয়োজন পরলে কল করো।”

আলমিরের কাঁধে হাত রেখে কথাগুলো বললেন ডাক্তার ফিরোজ আহমাদ। তারপর চলে গেলেন তিনি। তিনি চলে যাওয়ার কিছুক্ষণের মাঝেই জ্ঞান ফিরে এল দিলরুবা বেগমের। সে জ্ঞান ফিরে আলমিরের দিকে না তাকিয়ে অন্যদিকে ঘুরে রইলো। দেখে বোঝা যাচ্ছে ভীষণ অভিমান করে আছেন তিনি। আলমির ওনার কাছে এসে পাশে বসলো। উনার হাত ধরতে চাইলে তিনি ঝাড়ি মেরে ছাড়িয়ে নিলেন। তারপর পাশে থাকা কাজের মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

“আমি একা থাকতে চাই। কাউকে দরকার নেই আমার। এখান থেকে সবাইকে চলে যেতে বল।”

ওনার কথায় আলমির বুঝতে পারল তার দিদুন কোন কারনে রাগ করেছে। তাই সে শান্তকণ্ঠে বলে উঠলো,

“কি হয়েছে দিদুন, তুমি কি কোনো কারণে আমার ওপর রাগ করেছো? আমার দ্বারা কি কোনো ভুল হয়েছে? যে জন্য তুমি কষ্ট পেয়ে অসুস্থ হয়ে গেছো?”

আলমিরের কথার উত্তরে শোয়া থেকে উঠে বসলেন দিলরুবা বেগম। ওর দিকে তাকিয়ে বেশ রাগী গলায় বলে উঠলেন,

” আমার সুস্থ-অসুস্থ রাগ অভিমান দিয়ে তোমার কি যায় আসে আলমির? তুমি তো এখন বড় হয়ে গেছ। নিজের ভাল মন্দ বুঝতে শিখেছো। আমার ভালো-মন্দ দিয়ে তোমার কি যায় আসে। আমি আজ আছি কাল নেই। যখন তখন মারা যাব। তারপর আরামে থেকো তুমি। কেউ আর তোমাকে বিরক্ত করবে না।”

এতোটুকু বলতেই দিদুনের মুখে হাত দিয়ে তাকে থামিয়ে দিল আলমির। উত্তেজিত হয়ে বললো,

“এসব কি বলছ তুমি দিদুন? প্লিজ চুপ করো। আমি সত্যিই বুঝতে পারছি না তোমার এই রাগের কারন। আমি কোন ভুল করে থাকলে আমাকে বল। আমি সেটা শুধরে নিব। তুমি ছাড়া পৃথিবীতে আর কে’ই বা আছে আমার। তুমি যা বলবে আমি তাই করবো।”

এবার দিদুন বেশ শান্ত হলো। শান্ত চোখে ফিরে তাকাল আলমিরের দিকে। মনে মনে কিছু একটা ভেবে বলল,

“ঠিক আছে আমি আর তোমার উপর রাগ করবো না। কিন্তু তোমাকেও আমার কথা মানতে হবে। আমি যা বলব তাই শুনতে হবে।”

“একবার বলেই দেখো, আমি তোমার কথা শুনবো। তোমার খুশির জন্য আমি সব করতে পারি দিদুন।”

“ঠিক আছে তাহলে এখনই তুমি মেহরিমা দের বাড়িতে যাও। ওকে যেভাবেই পারো মানিয়ে নিয়ে আসো আমার কাছে। ওই মেয়েটিও তোমার মতই এতিম। পৃথিবীতে একটি ছোট বোন ছাড়া আর কেউ নেই ওর। ওকে আমার ভীষণ ভালো লেগেছে। ওকে পেয়ে যেন আমি তোমার শূন্যতা ভুলে গিয়েছিলাম। তাই ওকে আমার চাই।”

ওনার কথা শুনে বসা থেকে উঠে দাঁড়াল আলমির। রাগি কন্ঠে বলে উঠল,

“ওই স্টুপিট মেয়েটার জন্য তুমি অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলে দিদুন? মেয়েটিকে তো আমি,,,”

“তারমানে এখনো তুমি তোমার জেদের ওপর অটল আছো? আমার ভালো থাকা মন্দ থাকা দিয়ে তোমার কোন কিছু যায় আসে না? ঠিক আছে তুমি চলে যাও। আমি মরে গেলেও তোমার মুখ দেখতে চাই না। চলে যাও এখান থেকে।”

কথাগুলো বলেই বিছানায় শুয়ে পরলো দিলরুবা বেগম। তারপর অন্য দিকে ঘুরে চোখ বন্ধ করে রইল। আলমিরের রাগে যেন শরীর পুড়ে যাচ্ছে। সে চোখ বন্ধ করে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলো। তারপর মনে মনে কিছু একটা ভেবে দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে নিচে নেমে এলো।
,
,
,
মাথা দুহাতে চেপে ধরে বসে আছে মেহরিমা। ভীষণরকম টেনশনে আছে সে। রাগের মাথায় তো চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে চলে এল। কিন্তু এখন কী করবে সে? তাকে তো সংসারটা চালাতে হবে। মেহেরের স্কুলের ফিস সবকিছু ঠিকঠাক মতন দিতে হবে। তার ওপর দিদুনের দেওয়া ২৫ হাজার টাকার মাঝে অলরেডি ১৫ হাজার টাকা খরচা করে ফেলেছে সে। সেই টাকা টাই বা কিভাবে শোধ করবে? নিজের উপরে যেন ভীষণ রকম রাগ হচ্ছে মেহরিমার। কি দরকার ছিল এত রাগ দেখিয়ে চাকরিটা ছেড়ে চলে আসার? এখন এমন চাকরি আর কোথায় পাবে সে? টেনশনে যেন মাথা কাজ করছে না তার। তখনই দরজায় বেল বাজার শব্দ শুনে ধ্যান ভাঙ্গে তার। সে একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উঠে যায় দরজা খুলে দেওয়ার জন্য। দরজা খুলে দেখে মেহের স্কুল থেকে চলে এসেছে। ওকে দেখে ভ্রু কুঁচকায় মেহরিমা। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,

“কিরে মেহের এত তাড়াতাড়ি স্কুল থেকে চলে এলি যে? তোর না বিকেলে আসার কথা?”

“আজ আমাদের সারা ম্যামের মেয়ের বিয়ে। তাই সব টিচারেরা সেই বিয়েতে যাবে বলে তাড়াতাড়ি ছুটি দিয়ে দিয়েছে। ভালোই হলো তুমি বাসায় আছো। কিন্তু তুমি এত তাড়াতাড়ি বাসায় এলে কিভাবে? আমি তো ভেবেছিলাম বাসায় এসে তোমাকে পাবোই না।”

ওর কথার উত্তরে মেহরিমা কিছু বলে না। ওর কাছ থেকে স্কুলের ব্যাগটা নিয়ে ওকে ফ্রেশ হতে যেতে বলে। মেহেরও আর কোনো রকম প্রশ্ন করেনা। ফ্রেশ হওয়ার জন্য নিজের রুমে চলে যায়। ব্যাগটা সোফার উপর রেখে আবারও মাথায় হাত দিয়ে বসে পরে মেহরিমা। তার মাথা যেন এখনো কাজ করছেনা। যেভাবেই হোক কিছু একটা করতে হবে। একবার মনে মনে ভাবে দিলরুবা বেগম এর কাছে ফিরে যাবে। ওনার থেকে ক্ষমা চেয়ে আবারও চাকরিতে জয়েন করবে। কিন্তু পরক্ষণেই ওর বাবার বলা কথাগুলো মনে পড়ে যায়। তিনি সবসময় বলতেন, কখনোই নিজেকে ছোট করে অপমানিত হয়ে কোন কাজ না করতে। সব সময় নিজের সম্মান বজায় রেখে চলতে। যেখানে সম্মান নেই সেখানে না যেতে। তাই মেহরিমা নিজেকে ছোট করে এই চাকরি করতে পারবে না। কিন্তু কি করবে এখন সে। ভাবতেই যেন কান্না করতে ইচ্ছে করছে তার।

মেহের ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে রেডি হয়ে নেয়। তারপর মেহরিমাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

” আপু আমি একটু শাপলাদের (মেহেরের ক্লাসমেট) বাড়িতে যাচ্ছি। একটু পরেই চলে আসবো। আসলে ও আমার নোটবুকটা রেখে দিয়েছে। যেটা আজকে আমার লাগবে। যাব আর আসব তুমি দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে যাও।”

কথাটা বলে ওর উত্তরের আশা না করে দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে যায় মেহের। মেহরিমা কিছু বলে না। তার মনটা এমনিতেই ভীষণ খারাপ। তাই কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। সে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়ে এসে আবারও একই জায়গায় বসে। ভাবতে থাকে কি করা যায়।

বাসা থেকে বাইরে বেরিয়ে গেটের কাছে আসতেই সামনে কাউকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে থমকে যায় মেহের। ভ্রু কুঁচকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত তিক্ষ্ম দৃষ্টিতে দেখতে থাকে লোকটিকে। লম্বায় ৬ ফুটের মত। টকটকে ফর্সা গায়ের রঙ। মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। ভিষন হ্যানসাম একটি লোক দাঁড়িয়ে তার সামনে। লোকটির পরোনে থাকা কালো রঙের সুটপ্যান্ট ও চোখের সানগ্লাস টা যেনো তার সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। কালো রঙের একটি গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে লোকটি। লোকটির নজর ওদের বাড়ির দিকেই আবদ্ধ। মেহের কিছু একটা ভাবে। তারপর কোমরে হাত দিয়ে এগিয়ে যায় লোকটির সামনে। তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে ওঠে,

“এই যে কে আপনি? আর এখানে দাঁড়িয়ে এমন চোরের মত আমাদের বাড়ির দিকে তাকিয়ে আছেন কেন? দেখেতো ভদ্রলোকই মনে হচ্ছে। কিন্তু যে ভাবে তাকিয়ে আছেন মনে হচ্ছে বাড়ির ভেতর থেকে কিছু চুরি করতে এসেছেন।”

১২ থেকে ১৩ বছর বয়সি একটি মেয়ের মুখে এমন কথা শুনে যেনো আকাশ থেকে পরে আলমির। সে চোখের সানগ্লাসটা খুলে পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার দেখে নেয় মেয়েটাকে। বেশ মিষ্টি চেহারার একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে। তার মুখটা ভীষণ মায়াবী। তবে মেয়েটির চেহারার সাথে অনেকটা মিল আছে মেহরিমার। অল্প কিছু সময়ের মাঝেই যেন সেটা বুঝে যায় আলমির। মনে মনে আন্দাজ করে নেয় যে, এটাই মেহরিমার ছোট বোন। যার কথা সে তার দিদুনের মুখে শুনেছে। মেয়েটির কথার ঝাঁঝটাও একদম মেহরিমার মত।

“এই পিচ্চি কি বলো তুমি এসব? আমাকে দেখে কি তোমার চোর বলে মনে হচ্ছে?”

“তা নয় তো কি? আপনি আমাদের বাসার সামনে যেভাবে দাঁড়িয়ে থেকে উঁকিঝুঁকি মারছেন। তাতে আপনাকে চোর ছাড়া কোন রাজপুত্র তো আর ভাববো না?”

মেয়েটির কথা শুনে মনে মনে বেশ হাসি পেল আলমিরের। তার মধ্যে ওর বলা পাকা পাকা কথায় যেন ভীষণ আনন্দ বোধ করছে সে। তাই মেয়েটিকে আর একটু রাগিয়ে দেওয়ার জন্য আলমির বলে উঠলো,

“এই পিচ্চি তুমি জানো তুমি কার সাথে কথা বলছো। বেশি বকবক করলে তুলে একদম আছাড় মারবো বলে দিলাম।”

ওর এমন ধমকে যেন কিছুই হলোনা মেহেরের। সে আরো দু পা সামনে এগিয়ে এসে কোমরে হাত দিয়ে রাগী গলায় বলল,

“ওই মিয়া আপনার সাহস তো কম না। আমার এলাকায় এসে আমাকেই আছাড় মারার ভয় দেখান। বেশি যদি বোঝেন তাহলে এখনই কিন্তু আপনার গাড়িতে কাদা মাখিয়ে দেবো। বলেন এখানে কোন ধান্দায় দাঁড়িয়ে আছেন। নিশ্চয় আমাদের বাড়ি থেকে চুরি করার ধান্দা, তাইনা। দাঁড়ান আমি এখনই চিৎকার করে আশেপাশের লোক ডেকে আপনাকে গণধোলাই খাওয়াবো।”

কথাটি বলেই চিৎকার করতে নিল মেহের। সাথে সাথে ওকে থামিয়ে দিয়ে আলমির বলে উঠলো,

” এই পিচ্চি চুপ চপ। প্লিজ এভাবে চিৎকার করো না। দেখো আমি আসলে এখানে একজনকে খুঁজতে এসেছি। এটা মেহরিমার বাড়ি তাইনা? আসলে আমি মেহরিমাকে খুঁজতে এসেছি। আমি কোন চোর নই। প্লিজ চিৎকার করে কোন সিনক্রিয়েট করো না।”

মেহরিমার নাম শুনে থেমে গেল মেহের। গালে হাত দিয়ে আলমিরের দিকে আবারও তীক্ষ্ণ নজরে দেখে নিল সে। তারপর সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

“আপনি আমার আপুকে খুঁজছেন কেন? এর আগে তো আপনাকে কখনো দেখি নি। এই আপনি আমার দুলাভাই নয়তো? সত্যি করে বলেন আপনি আপুকে ভালোবাসেন তাই না? আগে বলবেন তো আপনি আমার দুলাভাই। তাহলে কি আপনাকে এত প্যারা দেই? আপনি দাঁড়ান আমি এক্ষুনি আপুকে ডেকে আনছি।”

কথাটি বলেই দৌড়াতে দৌড়াতে বাসার মধ্যে ঢুকে গেল মেহের। আর চিৎকার করে বললো, “আপু দেখো দুলাভাই আসছে।” ওর কথায় এবং কান্ডে আলমির যেন বোকা বনে গেলো। সে বোকার মতো দাঁড়িয়ে থেকে তাকিয়ে রইল ওদের বাসার দিকে।

একটু পরেই খোলা চুলে বাসার মধ্য থেকে বেরিয়ে আসে মেহরিমা। ওর দিকে চোখ পড়তেই যেন থমকে যায় আলমির। সে হা করে তাকিয়ে থাকে তার দিকে। খোলা চুলে তাকে যেন অপ্সরী লাগছে। আলমির কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রাগে গজগজ করতে করতে ওর সামনে এসে দাঁড়ায় মেহরিমা। তারপর রাগি গলায় বলে,

“এই খাম্বা সমস্যা কি আপনার হ্যা? আপনি এখানে কেনো এসেছেন? আর কোন সাহসে মেহেরের কাছে নিজেকে ওর দুলাভাই বলে পরিচয় দিয়েছেন শুনি?”

মেহরিমার কথায় ধ্যান ভাঙে আলমিরের। সে নিজেকে সামলে নিয়ে বলে ওঠে,

“দেখো মিস মেহরিমা। আমি তোমার বোনকে এমন কিছুই বলিনি। সে নিজের মনে যা খুশি বানিয়ে তোমাকে গিয়ে বলেছে। আর এখানে তোমার সাথে তর্ক করতেও আসিনি আমি। তোমাকে নিতে এসেছি। দেরী না করে আমার সাথে চলো। দিদুন তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।”

” আপনার কি মনে হয়, আপনি বললেন আর আমি আপনার সাথে নাচতে নাচতে চলে গেলাম? এত বড় অপমান করার পরেও কিভাবে ভাবলেন আপনি, যে আমি আপনার কথায় আবারও ওই বাসায় ফিরে যাব। যেখানে প্রথম দিনেই আমাকে অপমান করে বের করে দেয়া হয়েছে। আপনি চলে যান আমি আর আপনাদের চাকরিটা করব না।”

ওর কথার উত্তরে রাগ হলেও নিজেকে সংযত করে আলমির। তারপর ঠাণ্ডা স্বরে বলে ওঠে,

” দেখো মেহরিমা আমি তোমার কাছে সরি বলছি। আজ পর্যন্ত আলমির কখনোই কারো কাছে ক্ষমা চায়নি। কিন্তু আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি। আমার ভুল হয়ে গেছে। তোমার সাথে ঐরকম আচরন করা ঠিক হয়নি আমার। প্লিজ আমার সাথে আমার বাসায় চলো। তুমি চলে আসার পর দিদুন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তার অবস্থা খুবই ক্রিটিক্যাল। ডাক্তার বলেছে সে যেটা চায় তাকে সেটাই দিতে। আর দিদুন তোমাকে চায়। তুমি চলে আসায় আমার সাথে রাগ করে কথা বলছে না সে। তাই রাগ না করে আমার সাথে চলো প্লিজ। আমি কথা দিচ্ছি আর কখনো তোমার সাথে বাজে ব্যবহার করব না। তোমাকে অপমান করবো না।”
,
,
,
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

#দিওয়ানেগি #পর্ব_৬
#M_Sonali

“দেখো মেহরিমা আমি তোমার কাছে সরি বলছি। আজ পর্যন্ত আলমির কখনোই কারো কাছে ক্ষমা চায়নি। কিন্তু আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি। আমার ভুল হয়ে গেছে। তোমার সাথে ঐরকম আচরন করা ঠিক হয়নি আমার। প্লিজ আমার সাথে আমার বাসায় চলো। তুমি চলে আসার পর দিদুন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তার অবস্থা খুবই ক্রিটিক্যাল। ডাক্তার বলেছে সে যেটা চায় তাকে সেটাই দিতে। আর দিদুন তোমাকে চায়। তুমি চলে আসায় আমার সাথে রাগ করে কথা বলছে না সে। তাই রাগ না করে আমার সাথে চলো প্লিজ। আমি কথা দিচ্ছি আর কখনো তোমার সাথে বাজে ব্যবহার করব না। তোমাকে অপমান করবো না।”

দিলরুবা বেগমের অসুস্থতার কথা শুনে চুপ করে যায় মেহরিমা। মনে মনে কিছু একটা ভেবে শান্ত হয়ে বলে,

“ঠিক আছে আপনি অপেক্ষা করুন আমি রেডি হয়ে আসছি।”

কথাটি বলেই সে চলে যায় রেডি হতে। ও বাসার ভেতর চলে যেতেই আলমির মনে মনে বলে,

“কি ভেবেছ কি তুমি মেহরিমা? এত তাড়াতাড়ি আমার থেকে জয়ী হয়ে যাবে? আজ পর্যন্ত আমার জেদের কাছে কখনোই কেউ জয়ী হয়নি। সেখানে তোমার মত একটা সিম্পল স্টুপিট মেয়ের কাছে হেরে যাব? সেটা কখনোই নয়। শুধুমাত্র দিদুনের জন্য এই নাটকটা করতে হলো আমার। আগে আমার সাথে বাসায় চলো। তোমার জীবনটা জাহান্নাম বানিয়ে দেবো আমি। একসময় তুমি নিজে থেকেই আমার কাছে ক্ষমা চাইবে। চাকরিটা ছেড়ে চলে আসতে বাদ্ধ হবে।”

কথাগুলো ভেবে বাঁকা হেসে সানগ্লাসটা চোখে পড়ে নেয় আলমির। তারপর গাড়িতে উঠে বসে অপেক্ষা করতে থাকে মেহরিমার জন্য। কিছুক্ষণ পর রেডি হয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে আসে মেহরিমা। ওর পিছু পিছু মেহেরও চলে আসে। ওকে যেতে দেখে সে বলে ওঠে,

“আপু আমাকে একা বাসায় রেখে যেও না। তোমার সাথে নিয়ে যাও। আমিও দুলাভাইয়ের বাসায় যাব।”

ওর মুখে দুলাভাই শব্দটা শুনে রাগান্বিত চোখে ওর দিকে তাকায় মেহরিমা। তারপর ঝাঁঝালো গলায় বলে ওঠে,

“তোকে আমি কতবার বলবো মেহের। এটা তোর দুলাভাই টুলাভাই নয়। কেন বারবার এই কথাটি বলে আমাকে বিরক্ত করছিস। উনি আমার স্যার। ওনার দিদুনকে দেখাশোনার জন্যেই আমাকে রাখা হয়েছে। এখন চুপচাপ বাসায় থাক। আমার সাথে যেতে হবে না তোকে। আমি কাজ শেষ হলেই ফিরে আসব।”

ওর কথা শুনে মন খারাপ করে ফেলে মেহের। মাথা নিচু করে বাসার মধ্যে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। তখন’ই পিছন থেকে ডেকে ওঠে আলমির,

“এই পিচ্চি শোনো। এদিকে আসো চলো তোমাকে আমাদের সাথে নিয়ে যাব। দিদুন তোমাকে দেখলে খুশি হবে।”

আলমিরের কথায় খুশীতে লাফাতে শুরু করে মেহের। সে আর দেরি না করে দ্রুত চলে যায় রেডি হতে। তারপর রেডি হয়ে বাসায় তালা দিয়ে বেরিয়ে আসে। মেহরিমার রাগ হলেও কিছু বলেনা। দুজন মিলে গাড়িতে উঠে বসে।
,
,
দিলরুবা বেগম এর পাশে বসে আছে মেহের এবং মেহরিমা। তিনি ওদের পেয়ে যেনো সুস্থ হয়ে গেছেন। মেহের আসার পর থেকে বাচালের মত কথা বলতে শুরু করেছে। তার আর কোনো থামাথামি নেই। কি বলছে না বলছে তার কোন হোদিশ নেই। ওর কথা শুনতে অবশ্য দিদুনের ভীষণ ভালো লাগছে। সে মনোযোগ দিয়ে ওর কথা শুনছে আর বাচ্চাদের মত খলখলিয়ে হাসছে। দুজনকে দেখে মনে হচ্ছে যেন কত জনমের পরিচিত তারা। মেহরিমা ওদের সিন দেখে মিটি মিটি হাসছে। তার ভীষণ ভালো লাগছে এতদিন পর তার ছোট বোনটিকে এভাবে হাসতে দেখে।

“দিদুন তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে!”

হঠাৎ আলমিরের কথা শুনে ধ্যান ভাঙ্গে সবার। সবাই মনোযোগ দিয়ে তাকায় তার দিকে। এতে বেশ বিরক্ত হয় সে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে কর্কশ গলায় বলে উঠে,

“আমি তোমার সাথে একটু একা কথা বলতে চাই দিদুন।”

এবার মেহরিমা বুঝতে পেরে দ্রুত মেহেরের হাত ধরে সেখান থেকে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে যায়। ওরা বেরিয়ে যেতেই আলমির তার দিদুনের পাশে এসে বসে। দিদুন মুচকি হেসে তার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,

“কি হয়েছে দাদুভাই, হঠাৎ এভাবে আগমন? কি এমন কথা বলবে যে ওদের এখান থেকে বের করে দিলে?”

“তোমার কথা মতো আমি ওই স্টুপিট মেয়েটাকে এখানে নিয়ে এসেছি। শুধু তাই নয় তার কাছে ক্ষমাও চেয়েছি। জীবনের প্রথম এই আলমির কারো কাছে ক্ষমা চেয়েছে। সেটাও শুধুমাত্র তোমার জন্য দিদুন। কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে। যেটা তোমাকে মানতেই হবে দিদুন।”

ওর কথায় দিলরুবা বেগম ভ্রু কুঁচকায়। চাপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,
” কি শর্ত আলমির?”

“আমি জানি দিদুন তুমি ওই মেয়েটির বেতন ১৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা করে দিয়েছো। এতে আমার কোন সমস্যা নেই। তোমার ইচ্ছা তুমি সেটা করতেই পারো। কিন্তু আমি চাই এখন থেকে আমার যাবতীয় কাজ ওই মেয়েটি করবে। কারণ এত টাকা বেতন দিয়ে তাকে শুধু শুয়ে-বসে থেকে খাবার জন্য আমি রাখতে দেবো না। আমার কাজও তাকেই করতে হবে। তোমার সাথে সাথে আমার হুকুমও তাকে মানতে হবে। আর এটা তাকে বোঝানোর দায়িত্ব তোমার।”

আলমিরের কথায় কিছুটা বিস্মিত হয়ে যায় দিলরুবা বেগম। সে কল্পনাও করতে পারেনি আলমির এমন কিছু চাইবে। কেননা এর আগে কখনোই কোন মেয়ে কাজের লোককে নিজের আশেপাশেও সহ্য করত না সে। মেয়েদেরকে ঘৃণা করত সে। কিন্তু সেই আলমির কিনা আজ নিজ থেকে একটি মেয়েকে তার কাজের জন্য রাখতে বলছে। ব্যাপারটা মনে মনে ভীষণ আনন্দ দেয় দিলরুবা বেগম কে। কারণ সেও তো এটাই চায়। সে এক কথায় রাজি হয়ে গিয়ে বলে ওঠে,

“ও এই কথা! কোন সমস্যা নাই দাদুভাই। আমি মেহরিমা কে বলে দেবো। সে তোমার টুকিটাকি সব কাজই করে দেবে।”

মনে মনে কিছু ভেবে আলমির বাঁকা হাসে। তারপর হাতে থাকা একটি পেপার দিদুনের কাছে এগিয়ে দিয়ে বলে,

“এই পেপারটা রাখ। এখানে ওই মেয়েটির সিগনেচার নেবে। সে যদি জিজ্ঞেস করে এটা কিসের, তাহলে বলবে সে যেন তোমায় ছেড়ে না যেতে পারে সেজন্য এক বছরের এগ্রিমেন্ট এর কাগজ। দরকার পড়লে তাকে এক বছরের বেতন অগ্রিম দেওয়া হবে। যেভাবেই হোক তার সিগনেচার এখানে চাই’ই চাই।”

কথাগুলো বলেই দিদুন কে আর কিছু বলার সুযোগ দেয় না আলমির। কাগজটা তার হাতে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায় সে। সামনে এগিয়ে যেতেই মেহরিমা কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। সাথে সাথে তার দিকে তাকিয়ে চোখ মেরে বাকা হাসে সে। এতে মেহরিমা যেন আকাশ থেকে পরে।

বিস্মিতা চোখে হা করে তাকিয়ে থাকে আলমিরের দিকে। আলমির সেটা দেখেও না দেখার ভান করে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো। এতক্ষণ সোফায় বসে বিস্কিট খাচ্ছিল মেহের। হঠাৎ মেহরিমার দিকে চোখ পরতেই তাকে হা করে আলমিরের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সে। সাথে সাথে সামনে এসে দাঁড়িয়ে ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে,

” এই আপু তুমি না তখন বলছিলে উনি আমার দুলাভাই নয়। তাহলে এভাবে ড্যাবড্যাব করে উনার দিকে তাকিয়ে আছ কেন? বুঝতে পেরেছি আমার থেকে লুকাচ্ছো তাই না। আসলে তুমিও ওনাকে ভালবাসো। ওইটাই আমার ভবিষ্যৎ দুলাভাই।”

মেহেরের এমন কথায় ধ্যান ভাঙ্গে মেহরিমার। সে দ্রুত সেদিক থেকে চোখ সরিয়ে ওর দিকে রাগি চোখে তাকায়। এতে মেহেরের কিছু যায় আসে না। সে আবারও কোমরে হাত দিয়ে মাথা দুলিয়ে বলে ওঠে,

” হয়েছে হয়েছে আর চোখ রাঙিয়ে লাভ নেই। আমি যা বুঝার বুঝে গেছি। তবে আপু দুলাভাই কিন্তু অনেক কিউট আর হ্যানসাম। একদম সিনেমার হিরোর মতো।”

কথাটি বলেই হাসতে হাসতে দৌড়ে পালায় দিদুনের রুমে। মেহরিমাও রাগে আগুন হয়ে ছুটে যায় তার পিছু পিছু। তবে দিদুনের সামনে গিয়ে আর মেহেরকে কিছু বলা হয় না তার। সে ভালো মেয়ের মত দিদুনের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,

“দিদুন আমার কি কিছু করতে হবে? বলুন আমি করে দিচ্ছি। এখানে এসেছি থেকে তো কোনো কাজই দিলেন না আমাকে। শুধু শুধু বসে আছি।”

ওর কথায় যেন সুযোগ পেলো দিদুন। সে মৃদু হেসে পাশে বসালো মেহরিমা কে। তারপর আদুরে গলায় বলল,

“তোমাকে তো এখানে আমি আমার কাজ করার জন্য রাখিনি দিদিভাই। তুমি বিশ্বাস করো দিদিভাই। তোমাকে পেয়ে যেন আমি নিজের একজন অনেক আপন কাউকে পেয়েছি। তুমি আমার কাছে থাকলেই হবে। কোন কাজ করতে হবে না। কাজের লোকের কি অভাব আছে নাকি বাড়িতে।”

” কিন্তু তাই বলে এভাবে চুপচাপ বসে থাকব? এভাবে বসে বসে মাস শেষে টাকা নিতে অস্বস্তি ফিল হবে আমার।”

ওর কথায় মুচকি হাসলেন দিদুন। কোন উত্তর দিলেন না। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন,

“আচ্ছা শোনো তো দিদিভাই, তোমাকে একটা কাজ করতে হবে। এই যে পেপারটা দেখছো, এখানে একটা সিগনেচার করতে হবে।”

পেপার দেখে মেহরিমা ভ্রু কুচকালো। পেপার টা হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখে বলল,

” এটা কিসের পেপার দিদুন? আর এখানে আমি সিগনেচার করব কেন?”

দিদুন মুচকি হাসে। তারপর বলে,
” ভয় পেয়োনা দিদি ভাই। এটা এমন কোন পেপার নয় যেটাতে সিগনেচার করলে তোমার কোন সমস্যা হবে। আসলে তুমি তো রাগ করে আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলে। তাই আমি ভীষণভাবে ভয় পেয়ে গিয়েছি। তুমি জানোনা তুমি চলে যাওয়ার পর আমি আমার নাতির সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। এমন কি ওর মুখ দেখতেও চাইনি। তাই তুমি যেন আমাকে ছেড়ে চলে যেতে না পারো সে জন্য এটা এক বছরের এগ্রিমেন্ট পেপার। এক বছরের মধ্যে তুমি এই চাকরিটা ছাড়তে পারবে না।”

“এটার কি দরকার আছে দিদুন। আমি এমনিতেই আপনাকে কথা দিচ্ছি, যা কিছু হয়ে যাক না কেন। আমি আর এই চাকরিটা কখনোই ছাড়বো না।”

কথাটি বলেই এগ্রিমেন্ট পেপার টা ওনাকে ফিরিয়ে দেয় মেহরিমা। দিদুন কিছু বলেনা। পেপার টা পাশে রেখে মেহরিমার হাতটা শক্ত করে ধরে। শীতল কন্ঠে বলে,

“ঠিক আছে দিদিভাই আমি তোমার কথা মেনে নিলাম। আমি তোমায় বিশ্বাস করি। এই অল্প সময়ের মাঝে তোমাকে যতটা আপন করে নিয়েছি। তাতে আমি জানি তুমি আমায় কষ্ট দিবে না। এখন যাও তো দিদিভাই এক কাপ কফি বানিয়ে নিয়ে আমার নাতিকে দিয়ে আসো। বেচারা আমার হাতের কফি ছাড়া খেতে পারে না। আর কাজের লোকের হাতে কফি সে খাবেও না। কিন্তু আমি অসুস্থ তাই তুমি বানিয়ে দিয়ে আসো।”

এতক্ষণ পাশে চুপচাপ বসে থেকে ওদের কথা শুনছিল মেহের। এইবার যেন সে আর চুপ থাকতে পারলো না। খুশিতে উৎফুল্ল হয়ে বলে উঠলো,

“হ্যা হ্যা আপু কফি বানিয়ে নিয়ে যাও। দুলাভাই এর জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে যাও। তোমার হাতের কফি অবশ্যই খাবে দুলাভাই।”

কথাগুলো বলতেই ওর দিকে রাগি দৃষ্টিতে ফিরে তাকায় মেহরিমা। সাথে সাথে চুপ করে যায় মেহের। মেহরিমা আর দেরি না করে উঠে চলে যায় কফি বানাতে। সে আর এখানে বসে মেহেরের কথা শুনতে পারবে না। ও চলে যেতেই দিদুন সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকায় মেহেরের দিকে। তারপর জিজ্ঞেস করে,

“কি বললে তুমি মেহের? দুলাভাইয়ের জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে যাবে মানে? কে তোমার দুলাভাই?”

দিদুনের কথা শুনে খলখলিয়ে হেসে দেয় মেহের। তারপর দিদুনের এর কাছে এগিয়ে বসে ফিসফিস করে বলে,

“তোমাকে একটা সিক্রেট কথা বলি। কাউকে বলো না কিন্তু। তোমার ঐ কিউট নাতি আছে না। ওই যে হ্যান্ডসাম দেখতে রাগি লোকটা। উনি না আমার আপুকে ভালবাসে। আর আমার আপুও তাকে ভালবাসে। আমি দেখেছি ওরা একে অপরের দিকে কেমন প্রেম প্রেম নজরে তাকিয়ে থাকে। হি হি।”

কথাগুলো বলেই মুখ টিপে হাসে মেহের। পিচ্চি মেয়েটার মুখে এমন পাকা পাকা কথা শুনে ভীষণ মজা পায় দিদুন। সে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,

“তাহলে তো ভালোই হলো। এসো আমরা দুজন মিলে একটা প্ল্যান করি। তোমার মিষ্টি আপু আর আমার রাগি নাতিকে একসাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা এক হয়ে কাজ করবো। মানে ওদের দুজনকে এক করার জন্যে। বলো রাজি?”

উনার কথার উত্তরে মেহের মিষ্টি করে হেসে দিয়ে বলে ওঠে,

” রাজি মানে একশ বার রাজি। চলো দুজন হাত মেলাই।”

বলেই দিদুনের সাথে হাত মিলায় সে। তারপর দুজনে প্ল্যান করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ওদিকে মেহরিমা সুন্দর করে এককাপ কফি বানিয়ে নিয়ে আলমির এর রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। দরজায় টোকা দিয়ে স্যার বলে ডাক দেয়। আলমির রুমে বসে ল্যাপটপে কাজ করছিল। ওকে দেখেই ল্যাপটপ বন্ধ করে টেবিলে রেখে দেয় সে। বাঁকা হেসে ওকে ভিতরে যাওয়ার জন্য বলে। মেহরিমা ভিতরে গিয়ে টেবিলের উপরে ট্রে টা রাখে। তারপর কফি মগটা তুলে দেয় আলমিরের সামনে।
,
,
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,