দিওয়ানেগি পর্ব-১৯+২০+২১

0
486

#দিওয়ানেগি #পর্ব_১৯+২০+২১
#M_Sonali

সরণের চিৎকার শুনে আলমির এর কাছ থেকে দ্রুত কয়েক পা পিছনে সরে আসে মেহরিমা। তারপর যতটা সম্ভব নিজেকে সামলে নিয়ে বলে উঠে,

“স সরণ আপনি এখানে?”

ওর কথার উত্তর দেয় না সরণ। রাগে দাঁত কিড়মিড় করে ওর একদম সামনে এগিয়ে আসে। রাগী গলায় জিজ্ঞেস করে,

“তুমি আলমিরের এত কাছাকাছি দাঁড়িয়ে কি করছিলে মেহরিমা? আর তুমি এই ডেস্কে কি করছো?”

ওর কথার উত্তরে মেহরিমা কি বলবে তা যেন ভেবে পাচ্ছেনা। সে শুধু এদিক ওদিক তাকাচ্ছে আর কি বলবে সেটা চিন্তা করে যাচ্ছে। তখনই আলমির ওর সামনে এগিয়ে এসে বেশ ঝাঁঝালো গলায় বলে ওঠে,

“কি প্রবলেম কি তোমার সরণ? এভাবে অনুমতি ছাড়া এখানে ঢোকার মানে কি? তুমি জানো না কারো ডেস্কে ঢুকার আগে অনুমতি নিয়ে ঢুকতে হয়?”

ওর কথার উত্তরে সরণ ভ্রু কুঁচকায়। ওর দিকে ঘুরে তাকিয়ে গম্ভির গলায় জিজ্ঞেস করে,

“তোমার ডেস্কে ঢুকতে কখনো আমার অনুমতি লেগেছে আগে ব্রো? এর আগে তো যতবার এসেছি তুমি বলেছ তোমার ডেস্কে ঢুকতে আমার কোন অনুমতি লাগবে না। তাহলে আজ কেন হঠাৎ এই প্রশ্ন করছো? আর তোমরা দুজন এত কাছাকাছি দাঁড়িয়ে কি করছিলে এতক্ষণ?”

“ননসেন্স এর মতো কথা বলো না সরণ? এটা অফিস, আর অফিসে মানুষ কাজ ছাড়া আর কি করে? মেহরিমা কে এখানে কাজের জন্য আনা হয়েছে। আর ওর ডেস্কও আলাদা নয়। বরং এটাই ওর ডেস্ক। তাই একটি কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার জন্যই আমরা এত পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ছিলাম। আর তাছাড়া এসব প্রশ্ন করার তুমি কে? তুমি এখানে এসেছ ই বা কেন?”

কথাগুলো বেশ ঝাঁঝালো গলায় বলল আলমির। ওর কথায় যেন কোন রকম পরিবর্তন দেখা গেলোনা সরণ এর মাঝে। সে যেনো রাগে ফুঁসছে। সে আলমিরের কথার কোন উত্তর না দিয়ে মেহরিমার দিকে ঘুরে বললো,

“তোমার সাথে আমার কথা আছে। চলো আমার সাথে।”

মেহরিমা কি বলবে সেটা ভেবে পাওয়ার আগেই আলমির সরণের হাত ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল,

“আর ইউ ম্যাড সরণ? তুমি দেখতে পাচ্ছো না এখানে ও কাজ করছে? আর অফিস টাইমে কোন ঘোরাঘুরি নয়। কোন কথা থাকলে সেটা বাসায় গিয়ে বলবে। এখন তুমি আসতে পারো। আজ ওর অফিসের প্রথম দিন। আমি চাইনা প্রথম দিনেই কোন ভুল করে বসুক। আমি আমার পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট এর কোন ভুল কখনোই সহ্য করব না।”

ওর কথার উত্তরে সরণ কিছু বলবে তার আগেই মেহরিমা সরণ এর হাত ধরে ফেলল। তারপর দ্রুত বলে উঠলো,

“স্যার আপনি কিছু মনে করবেন না প্লিজ। আমি সরণ স্যারের সাথে একটু কথা বলতে চাই। প্লিজ আমাকে ৫ মিনিট সময় দিন।”

কথাটি বলেই আলমিরকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সরণের হাত ধরে নিয়ে ডেস্ক থেকে বাইরে বেরিয়ে গেল মেহরিমা।

ওকে এভাবে সরণের হাত ধরে নিয়ে বেরিয়ে যেতে দেখে রাগে যেন মাথায় আগুন ধরে গেল আলমিরের। তার ইচ্ছা করছে এ মুহূর্তে গিয়ে মেহরিমাকে দুইটা থাপ্পড় লাগিয়ে দিতে। ওর এত বড় সাহস হয় কিভাবে আলমিরের সামনে অন্য একটা ছেলের হাত ধরে। তাও যে কিনা ওকে বিয়ে করার জন্য পাগল। কিন্তু আলমির তেমন কিছুই করল না। রাগে গজগজ করতে করতে নিজের চেয়ারে গিয়ে বসলো। আর অপেক্ষা করতে লাগল মেহরিমার জন্য।

সরণের হাত ধরে নিয়ে ডেস্ক থেকে বাইরে বেরিয়ে একটি নিরিবিলি জায়গায় গিয়ে দাঁড়ালো মেহরিমা। তারপর ওর হাত ছেড়ে দিয়ে চাপা কন্ঠে বলল,

“সমস্যা কি আপনার সরণ? আপনি দেখতে পাচ্ছেন অফিসে আমি কাজের জন্য এসেছি। আপনি কি চান আপনার জন্য প্রথম দিনেই জবটা চলে যাক আমার?”

ওর কথার উত্তর না দিয়ে সরণ মুচকি হাসলো। মেহরিমা ওর হাত ধরায় যেন আনন্দে গদগদ সে। এই মুহূর্তে মেহরিমা কে কোলে নিয়ে নাচতে ইচ্ছা করছে তার। সে মুচকি হেসে বলল,

“হাতটা ছেড়ে দিলে কেনো মেহরিমা? হাতটা ধরেই কথা বলতে! আজ প্রথম তুমি আমার হাত ধরেছো। তুমি জানো আমার কতটা আনন্দ লাগছে। এতক্ষণ মনের মাঝে যে রাগ উঠেছিল সবকিছুই যেন এক নিমেষে পানি হয়ে গেছে। তোমার হাত ধরায় মনে হচ্ছে আমি তোমাকে পেয়ে গেছি।”

ওর মুখ থেকে এমন উত্তর শুনে ভীষণ রকম রাগ হলো মেহরিমার। সে মনে মনে বললো “এই লোকটা কি পাগল? আমি কি বলি আর সে কি উত্তর দিচ্ছে।” মেহরিমা ইচ্ছা করছে ওকে ইচ্ছামত বকে দিতে। কিন্তু এটা অফিস এখানে তেমন কিছুই করা যাবে না। তাই নিজেকে সামলে নিয়ে রাগী গলায় বলে উঠল,

“দেখুন এখানে এসব কথা বলার সময় নয়। আপনি বাসায় ফিরে যান। কোন প্রয়োজন থাকলে বাসায় কথা হবে। আমাকে কাজ করতে দিন। আজকে অফিসের প্রথম দিন। আমি কাজ ছেড়ে এখানে আপনার সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারি না।”

কথাগুলো বলেই সরণ কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সে দ্রুত হেঁটে আলমিরের ডেস্কে ঢুকে পড়ে। এতে সরণ এর রাগ হলেও মেহরিমা তার হাত ধরেছে ভেবে মনটা আনন্দে নেচে উঠে। মেহরিমা ওর হাতের যেখানে ধরেছিলো সেখানে চুমু খেলো ও। তারপর মুচকি হেসে বাসার দিকে রওনা হলো। রাতে মেহরিমার সাথে কথা বলবে সে বাসায় গিয়ে।
,
,
ডেস্কে ঢুকেই সোজা গিয়ে নিজের চেয়ারে বসে পড়ল মেহরিমা। এই মুহূর্তে আলমিরের দিকে তাকানোর সাহস নেই তার। সে বেশ ভালোভাবেই জানে আলমির এখন সিংহের মতো রেগে আছে। তার সামনে যাওয়া মানে নিজেকে হরিণ হিসেবে উৎসর্গ করা। সেটা মোটেও চায়না মেহরিমা। তাই চুপচাপ গিয়ে নিজের চেয়ারে বসে পরে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো।

ওকে দেখে দাঁত কিড়মিড় করে রাগে তাকিয়ে আছে আলমির। কত বড় সাহস এই মেয়ের, ওর সামনে দিয়ে অন্য একটি ছেলের হাত ধরে বাইরে গিয়ে এখন আবার চুপচাপ বসে আছে? একবার তার কাছে এসে সরি বলার প্রয়োজনও মনে করল না। কথাগুলো ভেবে রাগে ফুঁসে উঠলো আলমির। তারপর মনে মনে কিছু একটা ভেবে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। ডেস্ক থেকে সোজা বেরিয়ে কোথায় যেন চলে গেল সে। মেহরিমা তার দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো সে এভাবে বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার কারন কি। একবার ভাবল উঠে গিয়ে দেখবে আলমির কোথায় গেলো। কিন্তু আবার কিছু একটা ভেবে সে সেখানেই বসে রইল। এখন বাইরে গিয়ে তাকে খুঁজে বাড়ানো মানে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারা হবে। তাই চুপচাপ বসে থেকে অপেক্ষা করাই ভাল।

কিছুক্ষণ পরে আলমির হাতে অনেকগুলো ফাইল নিয়ে ডেস্কে ফিরে আসলো। তারপর সেগুলো মেহরিমার সামনে রেখে বলল,

“এই নাও, এই ফাইল গুলো ভালভাবে চেক করবে। কোথাও কোন ভুল থাকলে সেগুলো সংশোধন করে এক ঘণ্টার মধ্যে আমাকে দেখাবে। একঘন্টা থেকে যদি এক সেকেন্ডও বেশি সময় নিয়েছো তাহলে তোমার খবর আছে।”

কথাগুলো বলেই সেখান থেকে গিয়ে নিজের চেয়ারে বসে পড়ল আলমির। তারপর ল্যাপটপ অন করে সেটাতে কাজ করতে লাগলো। এতগুলো ফাইল দেখে মেহরিমা যেন আকাশ থেকে পড়লো। রাগে দুঃখে কান্না চলে আসলো তার। সে এখন কি করবে। এরকম কাজের কোনো এক্সপিরিয়েন্স নেই তার। এগুলো কিভাবে কি চেক করতে হবে আর কি সংশোধন করতে হবে তার কোনো কিছুই জানা নেই তার। কিন্তু কাজ তো করতেই হবে। আলমির কে যে কোন প্রশ্ন করবে সে সাহস ও এখন তার মাঝে অবশিষ্ট নেই। তাই কিছু না ভেবে একটি ফাইল খুলে সামনে ধরল। তার মাঝে ইংরেজিতে হিবিজিবি অনেক লেখা। লেখাগুলো বুঝলেও যেন মাথা ভনভন করে ঘুরতে শুরু করলো তার। এখানে বেশ কিছু প্রজেক্ট এর কাজ রয়েছে। যেগুলো সে কিছু কিছু বুঝতে পারলেও বেশিরভাগই বুঝতে পারছে না। সে কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা কিছুতেই। তাই আড়চোখে আলমিরের দিকে তাকাল। দেখল সে বারবার নিজের ঘড়িতে টাইম দেখছে আর ল্যাপটপে কাজ করছে। এটা দেখেই যেন গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল তার। সে শুকনো ঢোক গিলে মনে মনে বললো,

“মেহরিমা রে আজ তোর হয়েছে। তুই যে জেনেশুনে বাঘের লেজে পাড়া দিয়েছিস। এবার কি করবি? কি দরকার ছিল সরণের হাত ধরে এভাবে বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার। এখন বোঝ কেমন লাগে।”

কথাগুলো ভেবে নিজের কপাল চাপড়াতে লাগলো মেহরিমা। তখনই ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে থেকেই আলমির বলে উঠল,

“অলরেডি ১৫ মিনিট পার হয়ে গেছে। আর মাত্র ৪৫ মিনিট সময় বাকি।”

ওর কথায় মেহরিমা যেন কেঁপে উঠে ভয়ে। তারপর মনে মনে ভীষণ রাগ হয় তার। সে মনে মনে বলে,
“আমি কেন এত ভয় পাচ্ছি এই রাক্ষস টাকে দেখে? আমি না এখানে আসার আগে ভেবে এসেছি, যে সে যা বলবে আমি ঠিক তার উল্টো টা করবো। যেন সে আমাকে অফিস থেকে বের করে দেয়। তাহলে কেন তার কথায় এত ভয় পাচ্ছি। দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা। মেহরিমা কাউকে দেখে ভয় পায় না।”

কথাগুলো ভেবে দুষ্টু হাসলো মেহরিমা। তারপরে একটার পর একটা ফাইল নিয়ে তার মধ্যে কিছু করতে লাগলো। এভাবে প্রায় ১০ মিনিট সময়ের মাঝেই সবগুলো ফাইল রেডি করে নিলো সে। আলমিরের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে ফাইলগুলো টেবিলের উপর রেখে বলল,

“স্যার আমার কাজ শেষ। এই নিন আপনার ফাইল। দেখুন ১০ মিনিটের মধ্যে সব কাজ করে ফেলেছি আমি।”

ওর কথায় বাঁকা চোখে তাকালো আলমির। ভ্রু কুঁচকে বোঝার চেষ্টা করল, এত দ্রুত কাজ গুলো করা সম্ভব হলো কিভাবে? তারপর ফাইলগুলো সামনে নিয়ে প্রথম ফাইল টা খুলল সে। ফাইলে সবকিছু আগের মতোই আছে। শুধু নিচে ফাঁকা জায়গায় ছোট ছোট করে কিছু লেখা। লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়ার চেষ্টা করতেই দেখল, সেখানে লেখা আছে,

“হাট্টিমাটিম টিম,
তারা মাঠে পাড়ে ডিম।
স্যারের খাড়া দুটো শিং।
তারা আলমির স্যারের ডিম।”

লেখাটা পড়েই মেহরিমার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো আলমির। কিন্তু কিছু বললো না ওকে। তারপর ঐ ফাইলটা সরিয়ে রেখে আরেকটি ফাইল খুলল। সেটাতেও সেইম ভাবে লেখা,

“আতা গাছে তোতা পাখি
ডালিম গাছে মউ।
রাক্ষস স্যারের কপালে জুটবে,
রাক্ষসির মত বউ।”

এবারও আলমির কিছু বললো না। রাগে আগুন হয়ে আরেকটা ফাইল খুললো সে। সেখানেও একি ভাবে লেখা,

“আম পাতা জোড়া জোড়া,
স্যার একটা মুরগি চোরা।
ওরে স্যার তুই সরে দাড়া,
তোকে করবে পুলিশ তাড়া।
পুলিশ বাবু খেপেছে,
স্যারের ইয়েতে চাবুক ছুড়ে মেরেছে।”

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

#দিওয়ানেগি #পর্ব_২০
#M_Sonali

“আম পাতা জোড়া জোড়া,
স্যার একটা মুরগি চোরা।
ওরে স্যার তুই সরে দাড়া,
তোকে করবে পুলিশ তাড়া।
পুলিশ বাবু খেপেছে,
স্যারের ইয়েতে চাবুক ছুড়ে মেরেছে।”

লেখাগুলো পড়ে অগ্নিদৃষ্টিতে মেহরিমার দিকে তাকালো আলমির। রাগে দাঁত কিড়মিড় করে সামনে থাকা টেবিলে জোরে থাপ্পর মেরে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

“What the hell you nonsense. কি লিখেছ এখানে এসব? তোমার স্পর্ধা কিভাবে হয় আমার সম্পর্কে এসব লেখার?”

ওর ধমকে কেঁপে উঠল মেহরিমা। সে নিচের দিকে মাথা দিয়ে আমতা আমতা করে বলল,

“আমি কি এইসব লিখতাম নাকি! আপনি’ই তো আমাকে অল্প কিছু সময় দিয়েছেন ফাইল গুলো কমপ্লিট করার। কিন্তু কোনো কাজ আমাকে বুঝিয়ে দেন নি। আমি কি কখনো এসব করেছি নাকি, যে এসব বুঝব। তাই যা পেরেছি তা লিখে নিয়ে আপনার সামনে দিয়েছি। আর তাছাড়া আমি ততটাও খারাপ লিখিনি যতটা আপনি বকছেন।”

কথাগুলো বলেই কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে রইল মেহরিমা। ওর কথা শুনে আলমির চিৎকার করে বকা দিতে গিয়েও থেমে গেলো। মনে মনে কিছু একটা ভেবে শান্ত হলো সে। তারপর ফাইলগুলো টেবিলের উপর রেখে সেখান থেকে এসে মেহরিমার সামনে দাঁড়াল। মেহরিমা দুই পা পিছিয়ে যেতে চাইলেই তার হাত ধরে ফেলল। তারপর তাকে চেয়ারের উপর বসিয়ে চেয়ারের দুপাশে হাত রেখে বলল,

“তোমার মনে হয় তুমি বেশ ভালো কবিতা লিখতে পারো, তাই না? ঠিক আছে তোমার আর ফাইল গুলো দেখতে হবে না। তুমি এখন বসে বসে কবিতা’ই লিখতে থাকো। দেখি কতগুলো কবিতা লিখতে পারো। এখন থেকে তোমার সময় শুরু। আমাকে এক ঘণ্টার মধ্যে একশটা কবিতা লিখে জমা দিবে। একশ টার মাঝে যদি একটাও কম হয়েছে, তাহলে তোমার খবর আছে মিস মেহরিমা। your time start now.”

মেহরিমা যেনো নিজের ফাঁদে নিজেই ফেঁসে গেছে। সে এখন কি বলবে বুঝতে পারছে না। তাই সময় নষ্ট না করে দ্রুত গিয়ে নিজের চেয়ারে বসে পড়ল। টেবিলে থাকা একটি খাতা এবং কলম নিয়ে তাতে একের পর কিছু লিখতে শুরু করলো। আলমির নিজের কাজ করছে আর কিছুক্ষণ পরপর বাঁকা চোখে তাকিয়ে ওর সিন দেখছে। মিটিমিটি হেসে মনে মনে ভাবছে,

“তোমাকে যতটা কঠিন ভেবে ছিলাম। তুমি ততটাও কঠিন নও মেহু। কারণ তোমার কঠিন চরিত্রের আড়ালে একটি বাচ্চামো চরিত্রও লুকিয়ে আছে। আর যেটা আমার সামনে প্রকাশ পেয়েছে এখন। বিশ্বাস করো এই চরিত্রের প্রেমেও পড়ে গেছি। যদিও কবিতাগুলো পড়ে ভীষণ রাগ হয়েছিল। কিন্তু সেই সাথে হাসিও পেয়েছে বেশ। কেউ এতটাও দুষ্টুমি করে কবিতা লিখতে পারে ধারণা ছিল না। আবার যেনো নতুন করে প্রেমে পড়ে গেলাম তোমার। এবার এই প্রেমে পরা আলমিরকে উঠানোর দায়িত্বটাও তোমার। দেখি কতটা দুষ্টুমি করতে পারো তুমি।”

কথাটি মনে মনে বলেই মুচকি হাসল আলমির। তারপর ঘড়িতে টাইম দেখে মেহরিমার দিকে তাকিয়ে বলল,

“১৫ মিনিট পার হয়ে গেছে। আর লিখতে হবে না। যা লিখেছো তাই নিয়ে আসো। দেখি কয়টা লিখলে এইটুকু সময়ে।”

মেহরিমা যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। সে বড় করে নিশ্বাস নিয়ে দ্রুত চেয়ার ছেড়ে উঠে খাতাটি নিয়ে আসলো। আলমির খাতাটি হাতে নিয়ে প্রথম পৃষ্ঠায় চোখ রাখতেই দেখলো লেখা আছে,

“থপাত থপাত চলে রাক্ষস,
দেখতে যেনো আস্ত খাক্কস।
রাক্ষস ভয়ংকর ভাবে চায়,
রাক্ষস ভয়ংকর ভাবে চায়।
রাক্ষসের ছাগলের মত কান
আলমির সেই রাক্ষসের’ই নাম।”

দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় লেখা,

“লোটন লোটন পায়রা গুলো রাক্ষস খেয়েছে,
এবার রাক্ষসের আমার দিকে নজর পরেছে।
রাক্ষসের হাত থেকে বাঁচতে এখন কবিতা লিখে যাই।
একটু ভুল হইলে বুঝি বাঁচার উপায় নাই।
কি করিবো কি করিবো ভাবতে থাকি তাই।
ইচ্ছে করে রাক্ষসটারে আস্ত চিবিয়ে খাই।”

বাকি পৃষ্ঠাগুলো উল্টে দেখল একদমই ফাঁকা। গত ১৫ মিনিটে এই দুটো কবিতাই লিখতে পেরেছে মেহরিমা। আলমির ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকায়। তারপর খাতা ছেড়ে এগিয়ে এসে ওর সামনে দাঁড়িয়ে দুষ্টু হেসে বলে,

“এই নাও রাক্ষস তোমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। এবার যেভাবে খুশি খেতে পারো। এতে রাক্ষসের কোনো আপত্তি নাই।”

ওর এমন কথায় বেকুব বনে যায় মেহরিমা। সে কল্পনাও করেনি আলমির এতটা শান্তভাবে এসে তাকে এই কথাটা বলবে। বরং সে ভেবেছিলো এই কবিতা লেখার ফলে তাকে এবার চাকরি থেকে নির্ঘাত বের করে দেবে আলমির। এবার ভীষণ রকম রাগ হচ্ছে মেহরিমার। ইচ্ছে করছে সত্যি সত্যি ওর শরীরে একটি কামড় বসিয়ে দিতে। কিন্তু সেটা করবে না সে। সে এবার বেশ কঠিন স্বরে সে বলে উঠল,

“দেখুন স্যার এবার কিন্তু বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে। আমি চাকরিটা করতে চাচ্ছি না। আপনি কি বুঝতে পারছেন না সেটা? যে জন্য কখন থেকে আবোল তাবোল লিখে যাচ্ছি। যাতে আপনি আমায় রাগ করে রেজিগনেশন লেটার দিয়ে বের করে দেন। কিন্তু আপনি কেন সিরিয়াসলি নিচ্ছেন না এসব সেটাই বুঝতে পারছি না। প্লিজ আমাকে মুক্তি দিন। আমি বাড়ি ফিরে যেতে চাই। করতে চাই না আপনার চাকরি।”

এবার যেন মুহূর্তেই রেগে গেল আলমির। সে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে ওর দু’বাহু শক্ত করে ধরল। মেহরিমাকে ঝাকিয়ে রাগী গলায় বলল,

“কি ভেবেছ তুমি, এভাবে আমার থেকে দূরে পালাতে পারবে? কেন আমার থেকে দূরে পালাতে চাও? কি ক্ষতি করেছি আমি তোমার? তুমি কেন বুঝতে পারো না, আমি তোমাকে সারাক্ষণ আমার পাশে রাখতে চাই। এক মুহুর্তের জন্যেও চোখের আড়াল করতে চাইনা তোমায়। কারণ আমি তোমাকে ভা,,,!”

এতোটুকু বলেই থেমে গেল আলমির। মেহরিমার হাত ছেড়ে দিতেই সে ওর হাত শক্ত করে চেপে ধরল। কঠিন গলায় বলে উঠল,

“কি হলো থামলেন কেনো স্যার? বলুন আপনি আমাকে কি? প্লিজ বলুন স্যার কেনো আমাকে নিজের চোখের আড়াল করতে চান না। কেনো সারাক্ষণ নিজের পাশে রাখতে চান। কি হই আমি আপনার?”

আলমির কিছুক্ষণ ওর দিকে আবেগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। কোন উত্তর দিলো না। তারপর কিছুক্ষণ চুপ থেকে শান্ত গলায় বলল,

“নিজের চেয়ারে গিয়ে বসো। আজকে আর কোন কাজ করতে হবে না তোমাকে।”

কথাটি বলেই সে নিজের চেয়ারে গিয়ে বসে ল্যাপটপ খুলে সেটাতে কাজ করতে শুরু করলো। মেহরিমা যেন ভীষণ হতাশ হলো। সে শুনতে চাইছিল আলমিরের মনের কথা। যেটার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে সে। যে কথাগুলো সে কোমায় থাকা কালিন আলমিরের মুখে শুনেছিল। কিন্তু উত্তর দিতে পারেনি তখন। তার শরীর যে তখন অসাড় হয়ে পড়ে ছিলো। সব শুনতে ও বুঝতে পারলেও কিছু বলার মত শক্তি দিলো না। শুধু চুপচাপ শুনে গেছে সে।”

মেহরিমা একটি বড় দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিজের চেয়ারে গিয়ে বসে পড়ল। তারপর চেয়ারটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে চোখ বন্ধ করে হেলান দিয়ে রইল। আলমির একবার আড়চোখে তার দিকে তাকিয়ে আবার ল্যাপটপে নিজের কাজে মন দিলো। দুজনের মাঝেই নিরাবতা ছেয়ে গেলো। তাদের মনটা যেনো ভীষণ খারাপ সেটা বেশ ভালো ভাবেই বোঝা যাচ্ছে।
,
,
,
সন্ধ্যা ৭:৪৫ মিনিট,
মেহরিমা এবং আলমির একসাথে বাসায় ফিরলেও কারো সাথে কারো কথা নেই। যেনো অভিমানের পাল্লা চলছে দুজনের মাঝে। বাসার মধ্যে ঢুকতেই দেখে সরণ সামনে সোফার উপর বসে থেকে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে। ওকে দেখেই বেশ বিরক্তি নিয়ে সোজা নিজের রুমে গিয়ে দরজা চাপিয়ে দিল মেহরিমা। এতে সরণ বেশ রেগে গেলেও তার পিছু পিছু তার রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো। আলমির সরনের কান্ড দেখে ভীষণ রেগে গেলেও কোন কিছু বলল না। ছোট করে একটি নিশ্বাস নিয়ে নিজের রুমে চলে গেল সে। দিলরুবা বেগম দূরে দাঁড়িয়ে সব কিছুই লক্ষ করলেন। তিনিও যেনো দোটানায় ভুগছেন ওদের আচরণ দেখে।

সরণ কোন রকম আওয়াজ না করে সোজা গিয়ে মেহরিমার রুমের দরজা খুলে রুমে ঢুকে পড়ল। মেহরিমা সবেমাত্র বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে ফ্যানের দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ দরজায় শব্দ হওয়ায় সরণকে দেখে দ্রুত উঠে বসে নিজের ওড়না ঠিক করে সে। রাগি গলায় বলে উঠে,

“সরণ সমস্যা কি আপনার? এভাবে আমার রুমে ঢোকার মানে কি? আপনি জানেন না কারো রুমে ঢুকতে হলে অনুমতি নিয়ে ঢুকতে হয়? একটি মেয়ের রুমে তার অনুমতি ছাড়া ঢোকার সাহস পেলেন কিভাবে?”

সরণ ওর কথায় কোনো রকম রিয়েকশন দেখালো না। সোজা গিয়ে ওর সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

“এত দেরি হল কেন তোমাদের আসতে? তুমি জানো সেই কখন থেকে তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। অফিস থেকে আসার পর ছটফট করছিলাম আমি। এক মুহূর্তের জন্য শান্তি পাচ্ছিলাম না। আর কিছু শুনতে চাই না। আমি ডিসিশন নিয়েছি সামনের শুক্রবারে তোমাকে বিয়ে করব। বাবা-মার সাথে সব রকম কথা হয়ে গেছে আমার। দিদুনকেও বলে দিয়েছি। কারো কোনো আপত্তি নেই। শুধু তুমি রাজি হলেই সামনে শুক্রবার আমাদের বিয়ে। তোমাকে ছাড়া থাকতে পারছি না মেহরিমা। বড্ড বেশি চাই আমি তোমায়। আই লাভ ইউ, আই লাভ ইউ সো মাচ মেহরিমা।”

কথাটি বলেই মেহরিমা কে আচমকাই জড়িয়ে ধরতে গেল সরণ। সাথে সাথে সে কয়েক পা পিছিয়ে গিয়ে রাগী গলায় চিৎকার করে বলে উঠলো,

“আপনার কি মাথা খারাপ হয়েছে সরণ? পাগল হয়ে গিয়েছেন আপনি? কি করতে যাচ্ছিলেন আপনি এটা? সাহস পেলেন কিভাবে আমার সাথে এমন আচরন করতে যাওয়ার? বেরিয়ে যান আমার রুম থেকে। আপনাকে আর এক মুহূর্তের জন্য সহ্য করতে পারছি না আমি। আর আমার বিয়ে সবরকম ডিসিশন আমি নেব। সেখানে অন্য কারো কিছু বলার অধিকার নেই। আর আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই না। বের হন এখান থেকে। please leave me alone.”

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

#দিওয়ানেগি #পর্ব_২১
#M_Sonali

সরণের মুখটা যেন মুহূর্তেই মেঘে ঢেকে যায়। সে ভ্রু কুঁচকে গম্ভীর গলায় বলে,

“এসব কি বলছ তুমি মেহরিমা? তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাও না মানে? আমার মত তুমিও তো আমাকে ভালোবাসো, সেই প্রথম দিন থেকে। তাহলে আজ এমন বলছ কেন? আমি সবার সাথে কথা বলেছি। আমাদের বিয়ের কথা পাকা করে ফেলেছি। এখন তুমি এমন টা বলতে পারো না। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না। please try to understand.”

কথাগুলো বলেই মেহরিমার একদম কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়ায় সরণ। তারপর ওর হাত ধরতে গেলেই মেহরিমা আবারো দু পা পিছিয়ে গিয়ে চিৎকার করে বলে উঠে,

“ওখানেই দাঁড়ান, আর এক পাও আমার কাছে আসার চেষ্টা করবেন না। আপনি কেন বুঝতে পারছেন না আমি আপনাকে ঠান্ডা মাথায় সোজা কথায় বলছি যে আমি আপনাকে ভালোবাসি না। আর কখনও এমন কোন আচরণও করিনি যাতে আপনার এটা মনে হবে। আপনি কেন ফালতু বিষয় নিয়ে তখন থেকে আমার পিছু পরে আছেন। আপনাকে আমি সম্মান করি, আপনি আলমির স্যারের বন্ধু তাই। এর চেয়ে বেশি আর কিছু নয়। প্লিজ আপনি এখন চলে যান আমার রুম থেকে। আমার ভীষণ আনইজি ফিল হচ্ছে। একা ছেড়ে দিন আমায়।”

এভাবে কথা বলাতেও সরণের মাঝে কোন রকম পরিবর্তন দেখা যায় না। সে ছ্যাঁচড়ার মতো আবারো এগিয়ে যায় মেহরিমার কাছে। তার দুই বাহু ধরে ঝাকিয়ে রাগী গলায় বলে,

“তুমি এমনটা আমার সাথে করতে পারোনা মেহরিমা। এই বিয়ের সাথে আমার মান-সম্মান জড়িয়ে আছে। বাবা-মা দিদুন সবাইকে বলেছি তুমি আমাকে ভালোবাসো। আর আমরা আগামী শুক্রবার বিয়ে করবো। এখন তুমি যদি আমার সাথে এরকম আচরণ করো তাহলে কারো কাছে আমার মুখ থাকবে না। তোমাকে আমায় বিয়ে করতেই হবে। সেটা যদি খুশি খুশি না করো। তাহলে জোর করে বিয়ে করবো তোমায় আমি। কথাটা মাথায় গেঁথে রাখো।”

কথাগুলো বলেই মেহরিমার হাত ঝাড়ি মেরে ছেড়ে দিল সে। তারপর দ্রুত হেঁটে রুম থেকে বেরিয়ে সোজা বাইরে চলে গেল। ওকে এভাবে চলে যেতে দেখে দিলরুবা বেগম আতঙ্কিত হলেন। তিনি এতক্ষণ নিজের রুমেই ছিলেন তাই ওদের কথা কিছুই শুনতে পাননি। তিনি দ্রুত হেঁটে মেহরিমার রুমের কাছে চলে আসলেন। দেখলেন মেহরিমা ফ্লোরে বসে দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে কাঁদছে। ওকে কাঁদতে দেখে যেন কলিজা শুকিয়ে গেল দিলরুবা বেগমের। তিনি ওর কাছে ছুটে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

“কি হয়েছে দিদি ভাই? এভাবে কাঁদছো কেনো তুমি? আর সরণ এভবে রেগে এখান থেকে বেরিয়ে গেল কেন? ওকি কিছু করেছে তোমার সাথে? বল আমাকে কি করেছে ও। কেন কাঁদছো তুমি এভাবে?”

মেহরিমা কোন উত্তর দিল না। আচমকা দিলরুবা বেগম কে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করলো। দিলরুবা বেগম বুঝতে পারছেন না কি হয়েছে ওর। তিনি আরো বেশি চিন্তায় পরে গেলেন। সরণ যদি সত্যিই ওর সাথে কিছু করে থাকে তাহলে তো আলমির সরণকে খুনই করে ফেলবে। এসব কথা ভেবে যেনো আরো বেশি ঘাবড়ে যাচ্ছেন তিনি। তিনি মেহরিমাকে আবারও কিছু জিগ্যেস করবে তার আগেই মেহরিমা কান্না থামিয়ে বলে ওঠে,

“দিদুন আপনি প্লিজ সরন স্যারকে বোঝান। আমি তাকে পছন্দ করি না। তাকে বিয়ে করার কথা কখনো চিন্তাও করিনি। তবুও কেন সে আমার পিছনে পড়ে আছে। আমি জানিনা তার কেন এমন মনে হয়েছে যে আমি তাকে পছন্দ করি। ভালোবাসি। আমার মনে কখনোই এমন কোন চিন্তা আসেনি। প্লিজ দিদুন আপনি কিছু করুন। আমার অসহ্য লাগছে তার কথাগুলো ভেবে। সে এখন আমাকে থ্রেট দিয়ে গেছে সে জোর করে আমায় বিয়ে করতে চায়। কিন্তু আমি সেটা চাইনা।”

কথাগুলো বলেই কান্নায় ভেঙে পড়ল মেহরিমা। দিলরুবা বেগম এবার বেশ ঘাবড়ে গেলেন। তিনি দ্রুত দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলেন আলমির কোথাও আছে কিনা। কারণ তিনি ভালভাবেই জানেন আলমির যদি খুনাক্ষরেও এসব কথা জানে তাহলে সরণ এর সাথে তার শত্রুতা তৈরি হবে। যেটা সে কখনোই চায় না। তাই মেহরিমা কে চুপ করাতে তিনি দ্রুত বলে উঠলেন,

“কান্না করো না দিদিভাই। এমন কিছুই হবে না। আমি সরণ কে সব বুঝিয়ে বলবো। তুমি নিশ্চিন্তে থাকো। আর হ্যাঁ এই কথাগুলো আলমিরের সামনে বলোনা। সে যেন এ বিষয়ে কোন কিছুই জানতে না পারে। আমি সবকিছু ঠিক করে দেবো। তুমি একদম চিন্তা করো না।”

উনার কথার উত্তরে কিছুক্ষণ চুপ থেকে কিছু একটা ভাবল মেহরিমা। তারপর নিজেকে যতটা সম্ভব শান্ত করে নিয়ে, শান্ত গলায় স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিলো,

“ঠিক আছে দিদুন আপনি এখন যান। আমি একটু ফ্রেশ হব। আসার পরে ফ্রেশ হওয়ার সময় পাইনি। কিন্তু মেহের কোথায়? ওকে কোথাও দেখতে পাচ্ছি না যে?”

ওকে স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে দেখে দিলরুবা বেগম যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। তিনিও শান্ত গলায় উত্তর দেন,

“মেহের স্কুল থেকে আসার পর শরীরটা বেশ গরম ছিলো। জ্বর হয়েছে ওর। তাই একটু আগেই মেডিসিন খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো, তারপর ওর সাথে কথা বলবে।”

কথাটি বলেই মেহরিমার মাথায় হাত বুলিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যান তিনি। মেহরিমা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। তারপর সেখানে বসে থেকে দিলরুবা বেগম এর চলে যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে। মনে মনে ভাবে,

“সরণের সাথে এরকম আচরণ করাটা ঠিক হয়নি আমার। তাকে বুঝিয়ে বললে হয়তো কাজ হতো। কিন্তু এমন আচরণ করে আমি তাকে রাগিয়ে দিয়েছি। সে যদি উল্টোপাল্টা কিছু করে বসে? আলমির স্যারের সাথে এ ব্যাপারে কথা বলবো কিনা সেটাও বুঝতে পারছি না?”

কথাগুলো ভেবে একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে মেহরিমা। তারপর উঠে বাথরুমে চলে যায় ফ্রেশ হওয়ার জন্য।
,
,
,
রাতে খাবার টেবিলে বসে আছে সবাই। কারো মুখে কোন কথা নেই। সবাই যে যার মতো খাবার খাচ্ছে। মেডিসিন খেয়ে ঘুম থেকে ওঠার পর মেহের এখন অনেকটাই সুস্থ। সেও খাবার খাচ্ছে সবার সাথে। হঠাৎ নীরবতা ভেঙে আলমির মেহেরকে প্রশ্ন করে উঠল,

“মেহের, এখন কেমন আছো তুমি? তোমার নাকি জ্বর হয়েছিল?”

“জি ভাইয়া তবে এখন ভালো আছি। দিদুন মেডিসিন দিয়েছিল না, সেটা খাওয়ার পর এখন সুস্থ হয়ে গেছি।”

ওর কথার উত্তরে মেহরিমা পাশ থেকে গম্ভির গলায় বলে উঠলো,

“কিন্তু হঠাৎ তোর জ্বর এলো কি করে? নিশ্চয়ই বেশিক্ষণ পানিতে ভিজেছিস? নয়তো স্কুলে আইসক্রিম খেয়েছিস তাই না?”

ওর কথার উত্তরে খাবার ছেড়ে এবার ওর দিকে ফিরে তাকাল মেহের। তারপর উচ্ছ্বাসিত কণ্ঠে বলতে শুরু করল,

“না আপু আমি আজকে পানিতে ভিজিনি বেশিক্ষণ। আজ আমাদের স্কুলে কি হয়েছিল জানো? আমাদের স্কুলে আজ একটি জোঁকার এসেছিল। সে স্কুলের মধ্যে এসে আমাদের সবাইকে না না রকম অঙ্গভঙ্গি করে আনন্দ দিতে থাকে। স্যার ম্যাডামরা প্রথমে তাকে বের করে দিতে চাইলেও। পরে আর বের করে দেয়নি। তারাও আমাদের সাথে থেকে এনজয় করছিলো। কিন্তু লোকটা কেন জানিনা সবাইকে ছেড়ে আমাকে অনেক আদর করছিল। অনেকগুলো আইসক্রিমও খেতে দিয়েছিলো আমায়। আর মজার ব্যাপার কি জানো! জোঁকারটা না আমার নামও জানে। আপু ঐ জোঁকারটা না আমায় একটা জিনিস দিয়েছে। যা আর কাউকে দেয় নি।”

এতোটুকু বলে থামল মেহের। ওর কথা শুনে মেহরিমা ভ্রু কুচকালো। ওর দিকে গম্ভির দৃষ্টি রেখে বলল,

“তোকে না কতবার বলেছি, অচেনা কারো থেকে কিছু না নিতে। তারপরেও কেনো নিয়েছিস? আর সেই জোঁকার কি দিয়েছে তোকে? আমাকে এতক্ষণে বলছিস এসব গাধি কোথাকার! এখনো দেখাস নি কেন?”

“আচ্ছা খাবার টা শেষ করে নেই, তারপরে তোমাকে দেখাবো। অনেক সুন্দর একটা জিনিস। যদিও আমি এখনো দেখিনি। তুমি দেখে অনেক পছন্দ করবে।”

“শুধু নিজের বোনকেই দেখাবে আর আমাদের দেখাবে না দিদিভাই?আমরা কি অপরাধ করলাম?”

দিলরুবা বেগমের কথায় মিষ্টি হাসলো মেহের। তারপর মিষ্টি করে উত্তর দিয়ে বলল,

“অবশ্যই দেখাবো। তোমাদের সবাইকে দেখাবো। দাঁড়াও আমি এক্ষুনি নিয়ে আসছি।”

কথাটি বলে খাবার ছেড়ে দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেল মেহের। পিছন থেকে বেশ কয়েকবার ওকে ডাকল মেহরিমা। কিন্তু ও কারো কথাই শুনলো না। একটু পর হাতে একটি বক্স নিয়ে ফিরে আসলো সে। ততক্ষণে সবার খাওয়া হয়ে গেছে। সবাই আগ্রহী দৃষ্টিতে তাকাল ওর দিকে। বক্সটা নিয়ে এসে টেবিলের উপর রেখে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,

“এই দেখো এই বক্স টা দিয়েছে ওই জোঁকারটা। আর বলেছে বাসায় নিয়ে খুলতে। এরমধ্যে নাকি আমার জন্য চমৎকার একটি গিফট আর চকলেট আছে। কিন্তু জ্বর হয়েছিল বলে তখন খুলে দেখতে পারিনি। এখন তোমাদের সকলের সামনে খুলবো দাড়াও।”

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,