দিওয়ানেগি পর্ব-২২+২৩+২৪

0
457

#দিওয়ানেগি #পর্ব_২২+২৩+২৪
#M_Sonali

“এই দেখো এই বক্স টা দিয়েছে ওই জোঁকারটা। আর বলেছে বাসায় নিয়ে খুলতে। এরমধ্যে নাকি আমার জন্য চমৎকার একটি গিফট আর চকলেট আছে। কিন্তু জ্বর হয়েছিল বলে তখন খুলে দেখতে পারিনি। এখন তোমাদের সকলের সামনে খুলবো দাড়াও।”

কথাগুলো বলেই বক্সটা খোলার জন্য হাত বাড়ালো মেহের। সাথে সাথে ওর হাতটা ধরে ফেলল মেহরিমা। তারপর উচ্চ কন্ঠে বলে উঠলো,

“খবরদার মেহের এই বক্স টা খুলবি না। কে না কে দিয়েছে আল্লাহ জানেন। এর মধ্যে কি আছে তাও জানি না। যে ভুল আমি একবার করেছিলাম সে ভুল তোকে করতে দিব না। এটা যত দ্রুত সম্ভব এ বাসা থেকে দূরে ফেলে দিতে হবে।”

কথাটি বলেই বক্সটা হাতে তুলে নিল মেহরিমা। তখনই ওকে থামিয়ে দিয়ে আলমির বলে উঠলো,

“দাঁড়াও মেহু। এটা আমার কাছে দাও। আমি দেখতে চাই এর মাঝে কি আছে। ভয় পেয়োনা কিছু হবে না আমার।”

কথাটি বলেই মেহরিমার হাত থেকে বক্সটা হাতে নিল আলমির। তারপর সেটা নিয়ে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখলো। একটু দূরে গিয়ে সোফার উপর রাখলো। তারপর মেহরিমার দিকে তাকিয়ে চাপা গলায় বলল,

“তোমরা ওখানেই থাকো কেউ এদিকে আসবে না। আমি এখনি আসছি।”

কথাটি বলে দ্রুত নিজের রুমে চলে গেল সে। একটু পর হাতে একটি যন্ত্র নিয়ে ফিরে এল রুম থেকে। তারপর সেটা নিয়ে এসে বক্স টার উপর চারিপাশে ভালোভাবে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে কিছু একটা বোঝার চেষ্টা করল। একটু পর ছোট্ট করে নিশ্বাস নিয়ে বলল,

“ভয়ের কিছু নেই। এর মধ্যে বিস্ফোরক জাতীয় কিছুই নেই। বা ক্ষতি করার মতো কিছু নেই। এটা সম্পূর্ণ সুরক্ষিত।”

মেহরিমা ওর পাশে এগিয়ে আসলো। বক্সটা হাতে নিয়ে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,

“এর মধ্যে ক্ষতিকারক কিছু নেই সেটা আপনি কি করে জানলেন?”

আলমির মৃদু হাসল। হাতে থাকা যন্ত্রটা দেখিয়ে বললো,

“এটা দেখতে পাচ্ছ? এটা যখন তোমার গুলি লেগেছিল তখন কিনেছিলাম। এটা এমন একটা ডিভাইস যেটার সাহায্যে বিস্ফোরক জাতীয় বা ক্ষতিকারক যেকোনো কিছু থাকলে তা বুঝতে পারা যায়। এবং এর মধ্যে যদি মানুষের জন্য ক্ষতিকারক কিছু থাকত তাহলে অবশ্যই এই ডিভাইস সেটা জানান দিত। কিন্তু দেখো এটা তেমন কিছুই করছে না। তারমানে বক্সটা সম্পূর্ণ সুরক্ষিত। এবার নির্ভয়ে এটা খুলে দেখতে পারো।”

ওর কথার উত্তরে মেহরিমা কিছু বলার আগেই মেহের দৌড়ে এসে ওর হাত থেকে বক্সটা নিয়ে নিল। তারপর বেশ রাগী গলায় বললো,

“আপু তুমি না সব সময় শুধু শুধু নিজেও ভয় পাও আর সবাইকে ভয় দেখাও। স্কুল থেকে আসার সময় কত আশা নিয়ে ছিলাম এটা সবাই মিলে খুলে দেখব। কিন্তু তুমি আমার মনটাই নষ্ট করে দিলে। যাও তোমাদের আর দেখতে হবে না। আমি একা একাই খুলবো আর একাই খাবো। তোমাকে একটুও দিবো না হুহ।”

কথাটি বলেই সোফার উপর বসে পড়ে বক্স টা খুলতে শুরু করলো মেহের। ওর কথার উত্তরে কিছু বলল না মেহরিমা। শুধু একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তাকিয়ে রইল ওর দিকে। দিলরুবা বেগম গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে এসে মেহেরের পাশে বসে পড়লেন। এতক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে সকলের কথা শুনছিলেন তিনি। আলমির হাতে থাকা ডিভাইসটা একটি টেবিলের উপর রেখে মেহেরের পাশে গিয়ে বসল। মেহের কিছুক্ষণ সময় এর মধ্যে পুরা বক্স টা খুলে ফেললো। বক্স থেকে বেরিয়ে আসলো অনেকগুলো ক্যাটবেরি চকলেট। আর সুন্দর একটি লাল রঙের রিমোট কন্ট্রোল গাড়ি। সেই সাথে আরো একটি ছোট বক্স। তারওপর ইংরেজিতে কিছু লেখা।

মেহের দেরি না করে চকলেট গুলো নিয়ে খেতে শুরু করলো। আর গাড়িটা নিয়ে খুশীতে লাফাতে লাগলো। ছোট বক্সটার দিকে আর নজর পরলো না তার। দিলরুবা বেগম বক্স টা হাতে তুলে নিলেন। দেখলেন তাতে ইংরেজিতে লেখা আছে, “The box is for Mehrima only.”

লিখাটি দেখে ভ্রু কুঁচকালো দিলরুবা বেগম। মেহরিমার দিকে তাকিয়ে বললো,

“কী আশ্চর্য ব্যাপার। জোঁকারটাকে মেহের চেনে না বলছে। অথচ সে এত সুন্দর একটি গিফ্ট বক্স দিয়েছে। সেই সাথে এর মধ্যে ছোট্ট একটা গিফট বক্সও দিয়েছে। যেটা শুধুমাত্র মেহরিমার জন্য। দেখো তো দিদিভাই এরমধ্যে তোমার জন্য কি আছে? আমার তো মনে হচ্ছে তোমাদের পরিচিত কেউ হবে জোঁকারটা।”

উনার কথার উত্তরে মেহরিমা কিছু বলল না। সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকাল দিলরুবা বেগম এর হাতে থাকা ছোট্ট বক্সটার দিকে। তারপর সেটা হাতে নিয়ে উল্টেপাল্টে ভাল করে দেখল। উপরের লেখাটা পড়ে নিজেও বেশ অবাক হল। তারপর বক্স টা নিয়ে খুলতে শুরু করলো। খুলতেই তার মধ্য থেকে বেরিয়ে আসলো ছোট্ট একটি চিরকুট। আর একটি স্বর্ণের মাঝে হিরা বসানো আংটি। আংটি টা অনেক সুন্দর এবং অনেক দামিও বটে। সেটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে।

আলমির এগিয়ে এসে আংটি টা মেহরিমার হাত থেকে নিয়ে, সেটা উল্টেপাল্টে দেখে চাপা গলায় জিজ্ঞেস করল,

“এটাতো অনেক দামি একটি আংটি। একজন জোঁকার কিভাবে এত দামি আংটি গিফট করতে পারে? আর তোমাকে এত দামি আংটি কেনোই বা গিফট করবে সে?”

কথাগুলো বলে সন্দেহের দৃষ্টিতে মেহরিমার দিকে তাকাল আলমির। মেহরিমা ও বেশ অবাক হয়েছে। সে আংটিটা আবারো নিজের হাতে নিয়ে উল্টেপাল্টে দেখল। তারপর হাতে থাকা চিরকুটের কথা মনে পড়তেই সেটি খুলে দেখল সে। তাতে স্পষ্ট ভাষায় বাংলায় লেখা আছে,

“তুমি যে বাড়িতে থাকছো। সে বাড়ির সকলের উপর অনেক বড় বিপদ ঘনিয়ে আসছে। প্রতিটা মুহূর্তে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে সবাইকে। নিজেও সাবধানে থাকো। এবং নিজের মালিক এবং মালিকের দিদুনকেও সাবধানে রাখো। একটু অসাবধান হলেই সকলের মৃত্যু অনিবার্য। কাউকে বিশ্বাস করো না। মনে রেখো লোভ সব বন্ধুকে শত্রুতে পরিণত করতে পারে। এমন কোনো কাজ করো না যার ফলে কারো সাথে শত্রুতা তৈরী হয়। কারণ তোমারদের চারিপাশে অজানা শত্রুর অভাব নেই। আর হ্যা আংটি টা শুধুমাত্র তোমার জন্যে মেহরিমা।

ইতি
তোমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী”

লেখাগুলো পড়ে বেশ অবাক হল মেহরিমা। সে ভাবতে লাগল “এটা তাকে কে লিখতে পারে? আর সে ওদের সম্পর্কে এত কিছু জানলোই বা কি করে?” ওকে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ওর হাতে থাকা চিরকুটটা নিজে হাতে নিল আলমির। সেও সবটুকু পড়ে বেশ অবাক হলো। সে বুঝতে পারছে না কে এই অজানা মানুষ। যে কিনা এভাবে আড়ালে থেকে ওদের সতর্ক করছে? আর এই আংটিটা’ই বা কেন দিয়েছে মেহরিমাকে?

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

#দিওয়ানেগি #পর্ব_২৩
#M_Sonali

সোফার উপর বসে হাতে থাকা আংটিটা এদিক-ওদিক ঘুরিয়ে তীক্ষ্ণ চোখে দেখছে আলমির। সে কিছুতেই ভেবে পাচ্ছেনা এত মূল্যবান একটি আংটি মেহরিমাকে কে গিফট করতে পারে। আলমির খোঁজ করে দেখেছে এই আংটির দাম কম হলেও ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা হবে। এটা ভিষন expensive একটি আংটি। একটা সামান্য জোঁকার এত দামের আংটি কিভাবে গিফট করতে পারে। আর ঐ চিরকুটে থাকা সতর্কবাণীই বা কেনো দিলো সে।

কথাগুলো হাজার ভেবেও যেন কোন কূল কিনারা পাচ্ছে না সে। হঠাৎ দরজার সামনে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে সে দিকে ফিরে তাকায় সে। দেখে মেহরিমা দাঁড়িয়ে আছে তার দিকেই তাকিয়ে। মেহরিমা সোজা হেঁটে ওর পাশে এসে বসে। কোনরকম অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন মনে করে না। ওকে এভাবে পাশে এসে বাসতে দেখে ওর দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকায় আলমির। মেহরিমা সেদিকে পাত্তা না দিয়ে বলে ওঠে,

“আপনার মত আমিও এই আংটি টা কে নিয়ে অনেক বেশি চিন্তায় আছি স্যার। আপনি যেমন কোনভাবে বুঝতে পারছেন না এটা আমাকে কে দিতে পারে। তেমনি আমিও অবাক হয়েছি এটা গিফট পেয়ে। কেননা আমার আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে এমন কেউ নেই যে এত দামি একটি আংটি আমাকে উপহার হিসাবে দিতে পারে।”

“হ্যাঁ এটাই তো আমার প্রশ্ন। তাহলে কে দেবে তোমায় এত দামী একটি আংটি? আর কেনই বা দেবে? আমি একবার ভেবেছিলাম হয়তো সরণ তোমাকে এটা গিফট করেছে। কারণ ও সেই সামর্থ্য রাখে। কিন্তু ওর যদি এটা গিফট করার প্রয়োজন’ই হতো, তাহলে এভাবে নাটক করে গিফট করার কোন মানে হয় না। সে সোজাসোজি এসে তোমাকে দিতে পারত। আর তাছাড়া ওই চিরকুট! ঐ চিরকুটের কথাগুলোই বা সরণ কেনো লিখবে। আমি কিছুতেই বুঝতে পারছি না এই কাজটা কে করতে পারে!”

কথাগুলো চাপা গলায় বলে মেহরিমার দিকে দৃষ্টি রাখল আলমির। মেহরিমা ওর পাশ থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সামনে দুপা হেঁটে গিয়ে বলল,

“আমার তো মনে হচ্ছে এই কাজটা আপনার কাছের কেউ করেছে স্যার। হয়তো সে আপনাকে চেনে। আর যখন সে দেখেছে যে আমি আপনাকে একবার বাঁচিয়েছিলাম। তখন হয়তো আমার মাধ্যমে আপনাকে সে কোন নিউজ দিতে চেয়েছে। এটা ছাড়া তো আর কোন কারণ দেখতে পারছিনা।”

ওর কথা শুনে কিছুক্ষন চুপ করে বসে রইল আলমির। কোন রকম উত্তর দিল না সে। তারপর কিছু একটা ভেবে উঠে দাঁড়িয়ে ওর সামনে গিয়ে দাঁড়াল। তীক্ষ্ণ নজরে ওর দিকে তাকিয়ে চাপা গলায় বলল,

“সে যে’ই হয়ে থাকুক না কেন। এই আংটিটা তুমি হাতে পড়বে না। বুঝতে পেরেছ? আর এটা আমার কাছেই থাকবে। যে পর্যন্ত না এই আংটির রহস্য বের করতে পারছি, সে পর্যন্ত শান্তি নেই। আমি চাই না অন্য কারো দেওয়া আংটি তুমি হাতে পরো। তুমি এখন নিজের রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। এখানে আর দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না। রাত অনেক হয়েছে।”

ওর এমন কথা শুনে মেহরিমা বাঁকা চোখে তাকিয়ে রইল ওর দিকে। মনে মনে কিছু ভেবে মৃদু হাসলো সে। তারপর আচমকাই প্রশ্ন করে উঠল,

“কেন পড়বো না এই আংটি? কেউ আমাকে ভালোবেসে এটা গিফট করেছে। তাহলে এটা আপনি রেখে দিবেন কেন? আমার আংটি আমাকে দিন। আমি এটা হাতে পরতে চাই।”

ওর কথা শুনে আলমির বেশ ভালভাবেই বুঝতে পারল যে ওকে জ্বালানোর জন্যই মেহরিমা এ কথাটি বলেছে। তাই সে আংটি টা হাতে নিয়ে হাত মুঠ করে ওর সামনে ধরে বললো,

“যদি আমার হাতের মুঠো খুলে আংটি টা নিতে পারো তাহলে এটা তোমার। আর যদি না পারো তাহলে এটা আমার। এবার দেখি কেমন তোমার শক্তি।”

আলমিরের এমন কথায় অবাক হলো মেহরিমা। ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে রাগী গলায় বলল,

“বাহ রে, আমার গিফট এ পাওয়া আংটি আমাকেই ফিরিয়ে দিতে এমন শর্ত? এটা আবার কেমন কথা। ঠিক আছে আপনার এটা ভালো লাগবে রেখে দিতে পারেন। লাগবে না আমার।”

কথাটি বলেই রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য উদ্যত হল সে। তখনই তার হাতটা ধরে ফেলল আলমির। নিজের দিকে ঘুরিয়ে আদুরে গলায় বলল,

“আগামীকাল তোমাকে এর চাইতেও দামী আংটি এনে দেবো। সেটা সারাক্ষণ হাতে দিয়ে ঘুরো। কিন্তু অন্য কারো দেওয়া আংটি তোমার হাতে সহ্য করতে পারবো না আমি। বুঝেছো?”

“কিন্তু কেন? কেন অন্যের দেওয়া আংটি আমার হাতে সহ্য করতে পারবেন না। কে হই আমি আপনার?”

ওর কথার উত্তরে আলমির মায়াময় চোখে তাকিয়ে রইল ওর দিকে। কোন রকম উত্তর দিল না। ওর চাহনিতেই যেন বোঝা যাচ্ছে ও মেহরিমা কে কতটা ভালোবাসে। কতটা চায় সে। কিন্তু মেহরিমা ওর মুখ থেকে শুনতে চায়। সেই ভালবাসার কথা যেটা আলমির বারবার ওর থেকে লুকিয়ে রাখছে। মেহরিমা একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। তারপর ওর থেকে হাতটা ছাড়িয়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়।
,
,
,
সকাল ১০:৩৫ মিনিট
মেহরিমা নিজের রুমের টুকিটাকি কাজগুলো করছে। এ কয়েকদিন রুম গোছানোর মত তেমন একটা সময় পায়নি সে। তাই সবকিছু এলোমেলো করে আবার গুছিয়ে গুছিয়ে তুলে রাখছে। আলমির কিছুক্ষণ আগে মেহেরকে নিয়ে তার স্কুলে গিয়েছে। সেই জোঁকার সম্বন্ধে কোন ইনফরমেশন থাকলে তা জানার জন্য। যাওয়ার আগে বারবার বলে গেছে মেহরিমা বা দিদুন, কেউ যেন বাসা থেকে বাইরে বের না হয়। বাসার চারপাশে অনেক গার্ডদের রেখে গেছে সে।

“দিদি ভাই কি করছো এইসব সকাল-সকাল? এভাবে রুমটা এলোমেলো করেছ কেন?”

পিছন থেকে দিলরুবা বেগমের কন্ঠ শুনে কাজ ফেলে সে দিকে ফিরে তাকায় মেহরিমা। মৃদু হেসে উত্তর দেয়,

“এই কয়েকদিন না না কাজে ব্যাস্ত থাকায় রুমটা গোছানোর মতো সময় পাইনি। তাই এখন রুম টাকে একটু গুছিয়ে নিচ্ছি। আপনি আসুন ভিতরে এসে বসুন দিদুন।”

দিলরুবা বেগম কোন উত্তর দেন না। গুটি গুটি পায়ে হেঁটে এসে বিছানার ওপর বসেন। তারপর মেহরিমা কেও ইশারা করে নিজের পাশে বসতে বলেন। মেহরিমা বাদ্ধ মেয়ের মত কাজ ফেলে এসে তার পাশে বসে। তার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে জিজ্ঞেস করে,

“আমায় কিছু বলবেন দিদুন?”

“কিছু বলবো বলেই তো এখানে এসেছি। গতকাল ওই আংটি এবং চিরকুটটা দেখেছি থেকে আমি এক মিনিটের জন্যও স্বস্তিতে থাকতে পারিনি। ওটার সম্পর্কেই তোমার সাথে কথা বলতে চাই।”

ওনার কথার উত্তরে মেহরিমা কিঞ্চিৎ ভ্রু কুঁচকায়। চাপা গলায় জিগ্যেস করে,

“কি কথা দিদুন? আর আপনি স্যার থাকতে কিছু বললেন না কেনো?”

ওর কথার উত্তরে দিলরুবা বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। তারপর বলতে শুরু করলেন,

“আমার বারবার মনে হচ্ছে ওই আংটি এবং চিরকুট একজন মানুষই দিতে পারে। তাছাড়া অন্য কাউকে খুঁজে পাচ্ছিনা আমি। কিন্তু এই কথাটা আলমিরের সাথে শেয়ার করতে পারবো না। আমি চাই কথাগুলো তোমার সাথে শেয়ার করতে। তবে তার আগে তোমার কথা দিতে হবে, আমি যা বলবো তার কোনো কিছুই তুমি আলমিরকে বলবে না।”

ওনার এমন অদ্ভুত কথাবার্তা শুনে মেহেরিমা যেন বেশ দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে গেল। সে কিছুক্ষণ চুপ থেকে গম্ভির গলায় বলল,

“আপনি ঠিক কি বলতে চাইছেন দিদুন আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। আর এমন কি কথা যা আপনি স্যারের থেকে লুকিয়ে আমার সাথে শেয়ার করতে চাইছেন? আচ্ছা ঠিক আছে আপনি বলুন। আমি কথা দিচ্ছি, স্যারকে কিছুই বলবো না।”

মেহরিমার আশ্বাস পেয়ে যেন বেশ শান্তি পেলেন দিলরুবা বেগম। তিনি ওর হাতটা নিজের হাতে নিয়ে বলতে শুরু করলেন,

“তোমাকে যে কথাগুলো বলতে যাচ্ছি, তা আজ অব্দি কারো সাথে শেয়ার করি নি আমি। তোমাকে অনেক বিশ্বাস করি মেহরিমা। ভালবাসি ঠিক আমার আলমিরের মত। আমি জানি তুমি আমার বিশ্বাসের অমর্যাদা করবে না।”

এতটুকু বলে একটু চুপ থেকে আবারও বলতে শুরু করলেন,

“আজ থেকে প্রায় ১৫ বছর আগের কথা। আলমির তখন সবে মাত্র ক্লাস ৮ এ পড়ে। আর ওর ছোট ভাই আমার আরেকজন কলিজার টুকরা আরহাম তখন মাত্র ৬ মাস বয়সের।”

এতোটুকু বলতেই ওনাকে থামিয়ে দিয়ে মেহরিমা বলে উঠল,

“আলমির স্যারের আরেকটা ভাইও ছিল? সে কোথায় এখন? তার কথা তো এখন অব্দি কখনো শুনি নাই দিদুন।”

” সে এই পৃথিবীতে নাই। দু’বছর আগে আমার ছেলে আলমিরের বাবার সাথে কার অ্যাক্সিডেন্টে মারা গেছে আরহামও।”

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

#দিওয়ানেগি #পর্ব_২৪
#M_Sonali

আরহাম এর মৃত্যুর কথা শুনে ভীষণ খারাপ লাগলো মেহরিমার। সে কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবারো প্রশ্ন করল,

“ওনাদের কিভাবে কার অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছিল দিদুন? যে ওনারা এভাবে একদম মারাই গেলেন।”

দিলরুবা বেগম একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার বলতে শুরু করলেন,

“আমাদের পুরো পরিবারটা অনেক সুখী পরিবার ছিল। আমাদের পরিবারে ভালোবাসা সুখ শান্তি কোন কিছুর অভাব ছিলোনা। আলমিরের মা মানে আমার ছেলের বউ শেফালি। সে সম্পর্কে আমার ছেলের বউ হলেও তাকে আমি মেয়ের চাইতেও বেশি ভালবাসতাম। এমন নয় যে সে আমাকে ভালোবাসতো না। বরং সেও আমাকে ঠিক নিজের মায়ের মতোই ভালোবাসতো। বউ হিসেবে কোন রকম কমতি ছিল না তার মাঝে।”

এতোটুকু বলে একটু দম নিলেন দিলরুবা বেগম। তারপর আবার বলতে শুরু করলেন,

“আব্রাহাম (আলমিরের বাবা) ও শেফালি দুজন দুজনকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিল। ওদের ভালোবাসায় কোন রকম আপত্তি ছিলনা আমার। আমি সবসময় চাইতাম আমার একমাত্র ছেলে যাকে ভালবাসবে তাকেই বিয়ে করবে। শেফালি একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের অনাথ মেয়ে ছিলো। ও ওর চাচা চাচির কাছে মানুষ হয়েছে। শেফালি এ বাড়িতে বিয়ে হয়ে আসার পর অল্প সময়ের মাঝে আমাদের সাথে মিশে গিয়েছিল। ওর আচার-আচরণ ভালোবাসা দিয়ে মন জয় করে নিয়েছিল সবার। আলমির যখন পৃথিবীতে আসে তখন যেন আমাদের পরিবারে কারো খুশির সীমা ছিল না। সবাই অনেক খুশি ছিলাম। আলমির ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। আলমির সবচাইতে ভালোবাসতো তার মা শেফালিকে। মায়ের প্রতি ভালবাসায় যেন অন্ধ ছিল সে। কোন বাচ্চা যে মায়ের এতটা ভক্ত হতে পারে সেটা আলমিরকে না দেখলে হয়তো বোঝা যেত না।”

এতোটুকু বলে থামলেন দিলরুবা বেগম। ওনা কে থামতে দেখে মেহরিমা উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করে উঠল,

“উনি যদি এতটাই মায়ের ভক্ত হয়ে থাকতেন। তাহলে এখন নিজের মাকে এতটা ঘৃণা করেন কেনো? কি এমন হয়েছিল দিদুন, যে কারণে আজ সে তার মাকে এতোটা ঘৃণা করে? আমি যতদূর জানি সে তো কোন মেয়েকেই পছন্দ করে না। সব মেয়ের প্রতি ঘৃণা কাজ করে তার। কিন্তু এর কারণটা কি?”

“বলবো দিদিভাই। আজ তোমার কাছে সব কথাই বলবো আমি। একটু ধৈর্য ধরে আমার কথাগুলো শুনো। আরহাম জন্ম নিয়ে তার যখন ছয় মাস বয়স। তখন থেকে হঠাৎ করেই শেফালির আচার-আচরণ চেঞ্জ হতে থাকে। সে কারো সাথে ভালোভাবে কথা বলতো না। সব সময় গভির চিন্তায় মগ্ন থাকতো। বাচ্চাদের প্রতি যত্নশীলও ছিল না আগের মত। বেশিরভাগ সময় আব্রাহামের সাথে ঝগড়া লেগে থাকত তার। ওর আচরণে এতটাই পরিবর্তন এসেছিল যে ভীষণ রকম টেনশনে পড়ে গিয়েছিলাম ওকে নিয়ে। চোখের সামনে গড়ে ওঠা আমাদের সুন্দর পরিবারটা যেন ধীরে ধীরে ভেঙে যেতে থাকে।

আমি একদিন শেফালিকে আলাদা করে জিজ্ঞাসা করেছিলাম কি হয়েছে তার। কেন এমন আচরন করছে সবার সাথে? কিন্তু সে সেদিন আমাকে কিছুই বলেনি। শুধু এক নজরে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। মায়া ভরা দৃষ্টিতে। ওর চোখ বলে দিচ্ছিলো ও কিছু লুকাচ্ছে আমাদের থেকে। অনেক বড় কিছু লুকিয়ে যাচ্ছে। যদিও সেদিন সে আমাকে কিছুই বলেনি। সেদিন যদি সে সবকিছু খুলে বলতো, তাহলে হয়তো আজকে এই পরিস্থিতি আসতো না।”

এত টুকু বলেই থামলেন দিলরুবা বেগম। তার চোখে জল যেন টলমল করছে। চোখের জলটা মুছে নিয়ে আবারো বলতে শুরু করলেন,

“তার কয়েকদিন পর আলমিরের হঠাৎ করে অনেক জ্বর আসে। ভীষণরকম অসুস্থ হয়ে যায় সে। আর তাকে অসুস্থ অবস্থায় ফেলে শেফালি চলে যায় তার চাচাতো ভাইয়ের সাথে। যে চাচার বাড়িতে সে বড় হয়েছে, তারই ছেলের সাথে। যাওয়ার আগে একটি চিঠি লিখে যায়। যেটাতে লেখা ছিল সে তার চাচাতো ভাইকে অনেক আগে থেকেই পছন্দ করত। কিন্তু টাকার লোভে বিয়ে করেছিল আব্রাহামকে। আর সে এখন যথেষ্ট টাকা পেয়ে গেছে। তাই সে আবারও তার চাচাতো ভাইয়ের কাছে ফিরে গেছে।”

এতোটুকু বলে থেমে যান দিলরুবা বেগম। দুচোখ বেয়ে অঝোর ধারায় জল গড়িয়ে পড়ছে তার। কথা বলতে যেন গলার মধ্যে আটকে যাচ্ছে। ওনার কথা শুনে মেহরিমার চোখেও পানি চলে আসে। সে কাঁদো কাঁদো গলায় জিজ্ঞেস করে,

“কিন্তু উনি এমনটা কেন করলেন দিদুন? আমিতো যতটুকু আপনার কাছে শুনে বুঝলাম উনি অনেক ভালো একজন মানুষ ছিলেন। তাহলে এমন করার কারণ কি?”

“এর কারণটা আমিও জানিনা। কিন্তু কেন জানিনা আমার মন এখন পর্যন্ত বলে, শেফালি কোনো নির্মম পরিস্থিতির শিকার। নইলে ওর মত মেয়ে এমনটা কখনো করতে পারে না। সেদিনের পর থেকে আলমির তার মাকে অসম্ভব ঘৃনা করতে শুরু করে। মায়ের প্রতি এতটা ঘৃণা তার যে, সে তার মায়ের নামও শুনতে চাইত না। আরহাম তখন অনেক ছোট। ওইটুকু দুধের শিশুকে নিয়ে বড় মুশকিলে পড়ে যাই আমি। তিন চারটা কাজের মেয়ে রাখা হয় তাকে দেখা শোনার জন্য। ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে সে। আমার আব্রাহাম অনেকটাই ভেঙে পড়ে সেই ধাক্কায়। নিজের বিজনেসেও অনেক লস হতে থাকে তার। এভাবে কেটে যায় তিনটি বছর। আব্রাহাম নিজেকে সামলে নেয়। কিন্তু আর বিয়ে করেনি সে। মেয়েদের প্রতি আলমিরের মত তারও ঘৃনা চলে আসে। সে মনে মনে স্থির করে সে বাংলাদেশের টপ বিজনেসম্যান হয়ে দেখাবে। তাই দিন রাত এক করে বিজনেসের কাজে বিজি থাকতো সে। এভাবেই কেটে যায় বেশ কয়েকটি বছর। আলমির তখন কলেজের গণ্ডি শেষ করে বিজনেসের জীবনে পা বাড়ায়। তখন তার জীবনে আসে আয়িশা। আয়িশা আর কেউ নয়, ফিরোজ আহমাদের মেয়ে, সরণ এর ছোট বোন। আলমির হয়তো পছন্দ করতে শুরু করে আয়িশাকে। কিন্তু একটা সময় আয়িশাও ওকে ধোঁকা দিয়ে চলে যায় বিদেশে। নিজের কেরিয়ার গড়তে। তারপর থেকে আলমির কোন মেয়েকে বিশ্বাস করেনি। কোনো মেয়েকে নিজের কাছে আসতে দেওয়া তো দূরের কথা। মেয়েদের থেকে সবসময় ১০০ গজ দূরে থাকতো সে। মেয়েদের প্রতি তার ঘৃণা ছাড়া আর কোন কিছু কাজ করতো না।

(একটু দম নিয়ে আবারো বলতে শুরু করলেন।)

দু’বছর আগের কথা। সেদিন ছিল আরহামের জন্মদিন। ওর জন্মদিন উপলক্ষে অনেক বড় পার্টির আয়োজন করেছিল আব্রাহাম। সেই পার্টিতে অনেক লোককে দাওয়াত করেছিল সে। পার্টিতে আরহাম বায়না ধরেছিল সে বাইরে ঘুরতে যাবে। তাই ওর বায়না পুরন করতে ওকে নিয়ে আব্রাহাম গাড়িতে করে ঘুরতে বের হয়। গাড়িতে শুধু আব্রাহাম, ড্রাইভার আর আরহাম’ই ছিলো। হঠাৎ মাঝপথে একটি ট্রাকের সাথে ধাক্কা লেগে গাড়িটা উল্টে পড়ে যায় খাদে। সেই সাথে গাড়িটা ব্লাস্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ওদের।”

এতোটুকু বলেই হুহু করে কেঁদে দিলেন দিলরুবা বেগম। উনার সাথে সাথে মেহরিমা ও কান্না করে যাচ্ছে। দুজনে বেশ কিছুক্ষণ কান্না করে নিয়ে দিলরুবা বেগম নিজের চোখ মুছে নিয়ে আবার বলতে শুরু করলেন,

“কিন্তু জানো মেহরিমা। আমি এখনো বিশ্বাস করি সেদিন আমার আব্রাহামের অ্যাক্সিডেন্ট হয়নি। আমার মন বলে তাদেরকে খুন করা হয়েছে। কেউ খুব ভালো পরিকল্পনা করে খুন করেছে ওদের। এটা এতদিন আমার মনের সন্দেহ হলেও সেদিন আলমিরের পার্টিতে যখন তোমার গুলি লাগলো তখন আমি শিওর হয়ে যাই। আমাদের এমন কোনো শত্রু আছে যে কিনা আমার ছেলেকে মেরে ফেলেও শান্ত হয়নি। এখন আমার আলমির কে মারার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।

আর আমার বিশ্বাস সেই শত্রুর সম্পর্কে শেফালি সবকিছুই জানতো। আর তোমাকে এই আংটি ও চিঠিটা সেই পাঠিয়েছে। এটা আমার মনের দৃঢ় বিশ্বাস। যদিও এই কথাগুলো আমি আলমিরের সামনে বলিনি। কেননা ও কখনই এটা বিশ্বাস করবে না। তবে আমার মন বলে এই আংটি তোমাকে শুধুমাত্র শেফালিই দিতে পারে। অন্য কেউ নয়।”

দিলরুবা বেগম এর কথায় এবার নড়েচড়ে বসল মেহরিমা। ভ্রু কুঁচকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকাল ওনার দিকে। উত্তেজিত কণ্ঠে বলল,

“উনি কেনো আমায় এত দামি আংটি দিতে যাবে? ধরে নিলাম যে সে হয়তো জানে আপনাদের শত্রুর ব্যাপারে। কিন্তু সেটার সাথে আমাকে আংটি দেওয়ার সম্পর্ক কি? আর তাছাড়া উনি আপনাদের না দিয়ে আমাকে কেন এসব দিবে? আপনি হয়তো কিছু ভুল ভাবছেন দিদুন।”

“ভুল ভাবছি কিনা জানিনা। তবে আমার মন এমনটাই বলে। আমার মনের কথাই আমি তোমার সাথে শেয়ার করলাম। সেদিন চিঠি লিখে চলে যাওয়ার পর শেফালিকে আর কখনো কোথাও দেখিনি। ওর কোন খোজ খবরও পাওয়া যায়নি। এমন ভাবে হাওয়া হয়ে গিয়েছে যেন বাংলাদেশে ওর কোন চিহ্নই নেই। কিন্তু তবুও আমার কেন যেন সব সময় মনে হতো সে আমাদের আশেপাশে আছে। আংটি এবং চিরকুটটা পাওয়ার পর আমার মনের সন্দেহটা আরো দিঢ় হয়ে গেল। মনটা বারবার বলছে এগুলো শুধুমাত্র শেফালিই পাঠাতে পারে। আর তোমাকে পাঠানোর কারণ হলো তুমি তার ছেলেকে প্রথমবার নিজের জীবনের বাজি রেখে বাঁচিয়েছিলে। তাই হয়তো তোমাকে সতর্ক করে আমাদেরকেও বোঝাচ্ছে সে।”

মেহরিমা চুপ করে রইলো। আর কোন উত্তর দিল না সে। তার মাথা যেন ভনভন করে ঘুরতে শুরু করেছে। এত রকম প্যাঁচ এর মধ্যে নিজেকে ভীষণ অসহায় লাগছে তার। সে কোনোভাবেই কোনো যোগসূত্র মেলাতে পারছে না। ওকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে দিলরুবা বেগম মাথায় হাত বুলালেন। তারপর শান্ত গলায় বললেন,

“আজ মনের কথাগুলো তোমার সাথে শেয়ার করে বড্ড ভালো লাগছে দিদিভাই। আশা করি এই কথাগুলো তুমি কাউকে বলবে না। আর আমার সন্দেহ যদি ঠিক হয়, তাহলে আমার মন বলে শেফালি তোমার সাথে অবশ্যই যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে। সে যদি সত্যই এগুলো পাঠিয়ে থাকে, সে তোমার সাথে যোগাযোগ করবেই। তুমি তাকে কখনো সামনে পেলে ভুল বুঝো না। তার সাথে কথা বলিও। তার কথা বোঝার চেষ্টা করিও। সে আমাদের এভাবে ধোঁকা দিয়ে চলে গেলেও আমি আজ অব্দি তাকে অবিশ্বাস করতে পারিনি। এখনো আগের মতই বিশ্বাস করি এবং ভালবাসি তাকে। আমার মন বলে সে নিশ্পাপ।”

কথাগুলো বলেই ওর পাশ থেকে উঠে চলে গেলেন দিলরুবা বেগম। মেহরিমা সেখানে বসেই ওনার কথাগুলো মেলাতে লাগল। ওর মাথায় কোন ভাবেই কথাগুলো ঢুকছে না। সে যত বেশি কথাগুলোর যোগসূত্র মেলানোর চেষ্টা করতে লাগল, ততই যেনো এলোমেলো পাকিয়ে যেতে লাগলো সব কিছু। মেহরিমার মাথা ধরে গেছে। সে টেবিলের ওপর থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে ফেলল।

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,