দিওয়ানেগি পর্ব-২৫+২৬+২৭

0
479

#দিওয়ানেগি #পর্ব_২৫+২৬+২৭
#M_Sonali

বেলা দুইটায় মেহেরকে নিয়ে স্কুল থেকে ফিরল আলমির। ওর মুখটা একদম শুকিয়ে গেছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে ভীষন টেনশনে আছে। সে বাসায় পৌঁছেই সোজা এসে সোফার ওপর বসে পরলো। ওকে দেখে দিলরুবা বেগম এবং মেহরিমা দ্রুত এগিয়ে এল। মেহরিমা ওর পাশে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল,

“কোন ইনফরমেশন পেলেন ঐ জোঁকার সম্পর্কে? কে ছিলো সে? আপনাদের পরিচিত কেউ?”

ওর কথার উত্তরে আলমির মাথা তুলে ওর দিকে তাকাল। তারপর আবার দিদুনের দিকে দৃষ্টি রেখে বলল,

“দিদুন তোমার কি মনে হয়, এটা কি আমাদের পরিচিত কেউ হতে পারে? আমার কেনো জানি না অনেক সন্দেহ হচ্ছে। যে সে আমাদের অনেক পরিচিত কেউই হবে। কিন্তু সে কে হতে পারে এটাই বুঝতে পারছিনা!”

এতটুকু বলে থামলো আলমির। দিদুনের দিকে জিগ্যেসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সে। দিলরুবা বেগম কি উত্তর দিবেন বুঝে পাচ্ছেন না। তাই চুপ চাপ সোফার ওপর বসে রইলেন তিনি। ওনাকে চুপ থাকতে দেখে আলমির আবার বলতে শুরু করলো,

“আমি পুরো স্কুলের সকলের থেকে খবর নিয়েছি। কেউ ওই জোঁকারটা সম্পর্কে কিছু বলতে পারল না। সকলের মুখে একই কথা, জোঁকারটা কালকে বাচ্চাদের সবাইকে আনন্দ দিতে এসেছিল। স্কুলের টিচারদের কে অনুরোধ করায় তারা বাধা দেয় নি জোঁকারটাকে। অথচ তার মুখটাও কেউ দেখেনি। ভীষণ রাগ হয়েছিল আমার টিচারদের উপর। তারা কিভাবে একটা অপরিচিত মানুষকে এইভাবে স্কুলের মধ্যে ঢুকতে দিলো। আর সবার সাথে খেলা করতে দিল।যত্তসব স্টুপিট টিচারের দল।”

ওর কথা শুনে দিলরুবা বেগম কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে শান্ত গলায় বললেন,

“এতটা রাগ করোনা দাদুভাই। সে যে’ই হয়ে থাকুক না কেন অবশ্যই সে আমাদের ভালই চায়। আমাদের বন্ধু কেউই হবে। যে কিনা দূর থেকে আমাদের সতর্ক করতে চাইছে। তাই ওনাকে নিয়ে চিন্তা না করে নিজেদের সর্তকতা বাড়াও। আমি বলি কি তুমি আরও কিছু গার্ড রাখ। সারাক্ষণ বাসায় এবং তোমার সাথে থাকার জন্য। জোঁকারটা যখন চিঠিটা লিখেছে। তার মানে সে অবশ্যই জানে আমাদের চারিপাশে কোন বিপদ উতপেতে আছে। ভুলে গেছো পার্টিতে হওয়া সেই ঘটনাটা।”

“কিছুই ভুলিনি দিদুন। কিন্তু ব্যাপারটা যদি শুধু চিঠি নিয়ে হত তাহলে এতটা টেনশন করতাম না। আমার সবচাইতে বেশি টেনশন হচ্ছে ঐ আংটিটা নিয়ে। এত দামি একটি এক্সপেন্সিভ আংটি মেহরিমা কে কেউ কেন গিফট করবে?”

“আপনি ঠিক বলেছেন স্যার। এই বিষয়টা নিয়ে আমিও অনেক টেনশনে আছি। আমার জানামতে আমার আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে এমন কেউ নেই যে এত এক্সপেন্সিভ কোন কিছু আমাকে গিফট করতে পারে। সে যাই হোক আপনি চারিদিকে গার্ড বাড়িয়ে দিন। সতর্ক থাকা ভালো।”

পাশ থেকে কথাগুলো এক নিশ্বাসে বলে উঠলো মেহরিমা। ওর কথা শুনে আলমির কিছুক্ষণ ওর দিকে তাঁকিয়ে রইলো। তারপর শান্ত গলায় বললো,

“আচ্ছা ঠিক আছে সে পরে দেখা যাবে। দিদুন আমার খাবারের ব্যবস্থা কর। প্রচুর খুধা লেগেছে। আমাকে অফিসে যেতে হবে। সকাল থেকে এখন অব্দি অফিসে যাইনি অনেক কাজ পরে আছে। আর মেহু তুমিও রেডি হয়ে থাকো। তোমাকে সাথে নিয়ে যাব।”

কথাটি বলে উঠে দাড়ালো আলমির। ফ্রেশ হতে নিজের রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো সে। তখনই মেহরিমা বলে উঠলো,

“স্যার আজকে আমি অফিসে যাব না। আজকে কেন জানিনা কোথাও যেতে ইচ্ছে করছে না। আজকের মত আমাকে ছুটি দিন প্লিজ।”

ওর কথার উত্তরে কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে থেকে রুমের দিকে পা বাড়ালো আলমির। আর যেতে যেতে বলে গেল,

“আচ্ছা ঠিক আছে আজকের মত তোমাকে ছুটি দিলাম। কিন্তু কাল সকাল থেকে আর কোনো ফাঁকিবাজি চলবে না।”

কথাটি বলেই দ্রুত নিজের রুমে চলে গেল সে। মেহরিমা মুচকি হাসলো। দিদুনের দিকে তাকিয়ে বললো,

“দিদুন আপনি তো স্যারকে বলতে পারতেন। আমাকে যে কথাগুলো বলেছেন। মানে ওই আংটিটা উনার মা দিতে পারে, আর উনিই হয়তো আমাদের সতর্ক করছেন।আমার মনে হয় স্যারকে এটা বলা উচিৎ।”

মেহরিমার কথার উত্তরে মুখটা গম্ভীর হয়ে গেল দিলরুবা বেগমের। সে গম্ভীর গলায় উত্তর দিলেন,

“তোমাকে আমি আগেই বলেছি মেহরিমা, দাদুভাই কে এ বিষয়ে কোন কিছুই বলা যাবে না। কারণ আমি জানি এটা যদি সত্যিই ওর মা পাঠিয়ে থাকে। তাহলে নিজেকে সতর্ক করা তো দূর, আরো বেশি অসতর্কতায় চলবে আলমির। সে তার মাকে এতটাই ঘৃনা করে যে, সে যা বলবে তার উল্টোটা আলমির করবে। তাই ভুলেও এই কথা আলমিরের সামনে বলতে যেও না।”

উনার কথার উত্তরে মেহরিমা মাথা নিচু করে শান্ত গলায় বললো,

“আচ্ছা ঠিক আছে দিদুন। আর কখনোই এই কথা বলবো না।”
,
,
,
বিকেল ৫:২৫ মিনিট
সোফার ওপরে পাশাপাশি বসে আছে দিলরুবা বেগম, মেহরিমা ও মেহের। আলমির দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর অফিসে চলে গেছে। তাই তারা বসে থেকে একে অপরের সাথে না না বিষয়ে গল্প করছে। তখন’ই দরজা দিয়ে বাসার মধ্যে প্রবেশ করেন ফিরোজ আহমাদ এবং তার স্ত্রী আর সরণ। সরনের হাতে অনেকগুলো মিষ্টি এবং ফলমূলের প্যাকেট।

প্যাকেটগুলো নিয়ে এসে দিলরুবা বেগম এর সামনে টেবিলের উপর রাখে সরণ। ওর পেছন থেকে ফিরোজ আহমাদ এবং তার স্ত্রী দিলরুবা বেগম কে সালাম দিয়ে তার সামনে এসে দাড়ায়। এতে দিলরুবা বেগম সহ মেহরিমা এবং মেহের তিনজনেই বেশ অবাক হয়। দিলরুবা বেগম ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ফিরোজ আহমাদ এর দিকে তাকায়। ফিরোজ আহমাদ মৃদু হাসেন। স্ত্রীকে নিয়ে ওনার পাশে এসে সোফার উপর বসেন। তারপর দিলরুবা বেগম এর দিকে তাকিয়ে খুশি খুশি গলায় বলেন,

“আন্টি আমরা সরণ এবং মেহরিমার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছি। মিষ্টি না নিয়ে আসলে কি চলে। তাই এই মিষ্টির আয়োজন।”

উনার কথার উত্তরে দিলরুবা বেগম ভীষণরকম চমকে ওঠেন। চমকে উঠে ফিরে তাকান মেহমার দিকে। তাকেও বেশ চমকানো অবস্থাতেই দেখা যাচ্ছে। এদিকে মেহের রাগী চোখে তাকিয়ে আছে সরনের দিকে। সরনের চোখ তখন মেহরিমার দিকে আবদ্ধ। মেহরিমা সরনের দিকে একবার ফিরে তাকিয়ে রাগি লুক নিয়ে মেহেরের হাত ধরে সেখান থেকে নিজের রুমে চলে যায়। ওকে চলে যেতে দেখে ফিরোজ আহমাদ এর স্ত্রী মুচকি হেসে বলে ওঠেন,

“দেখো মেহরিমা লজ্জা পেয়েছে। আসলে বিয়ের কথা শুনলে সব মেয়েই লজ্জা পেয়ে যায়। কিভাবে লজ্জা পেয়ে চলে গেল দেখো মেয়েটা।”

উনার কথার উত্তরে দিলরুবা বেগম কোন কিছু বললেন না। মনে মনে ভীষণ রাগ হচ্ছে তার। কিন্তু এই মুহূর্তে রাগ দেখানো উচিত হবে না। তাই উনি চুপ করে বসে রইলেন। মিষ্টির প্যাকেট গুলোর দিকে তাকিয়ে। ওনাকে চুপ করে থাকতে দেখে সরনের মা বলতে শুরু করলেন,

“আন্টি আমরা এভাবে খবর না দিয়ে আসার জন্য দুঃখিত। আসলে আপনাদের সাথে আমাদের সম্পর্কটা অনেক আগের। যাকে বলে আত্মার সম্পর্ক। তাই কোনো দিধাবোধ না করে চলে এসেছি। আসলে আপনি তো জানেন আমাদের সরণ কতটা জেদি। আর সে যে মেহরিমা মাকে পছন্দ করে সেটাও তো আপনার অজানা নয়। তাই কোন দ্বিধা বোধ না করে সরণ এর সাথে মেহরিমার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে চলে আসলাম। আমি জানি আপনি কোন অমত করবেন না। আর আপনি যদি মেহরিমা মাকে বলেন সেও নিশ্চয়ই অমত করবে না। আমরা চাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শুভ কাজটা সেরে ফেলতে।”

এতোটুকু বলে দিলরুবা বেগম এর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন ফিরোজ আহমাদ এবং তার স্ত্রী। সরণও ব্যাকুল হয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। সে যেন ব্যাকুল হয়ে আছে বিয়ের কথাটায় হ্যা শোনার জন্য। দিলরুবা বেগম কিছুক্ষণ চুপ থেকে ভাবতে লাগলেন তার এখন কি বলা উচিত। তিনি সরাসরি না করতে পারবে না। আবার হ্যা বলাও সম্ভব নয়। ভীষণ বিপদে পড়ে গেলেন তিনি। ওনাকে চুপ করে থাকতে দেখে সরণ উত্তেজিত কণ্ঠে বলে উঠলো,

“কি হলো দিদুন তুমি কিছু বলছ না কেন? বল তুমি মেহরিমাকে বিয়েতে রাজি করাবে।”

ওর কথার উত্তরে গম্ভীর দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালেন দিলরুবা বেগম। তারপর গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলেন,

“দেখো সরণ দাদুভাই, মেহরিমা আমার রক্তের সম্পর্কের কেউ নয়। ওকে আমি নিজের দেখাশোনার জন্য রেখেছিলাম। এখন মেয়েটি অসহায় বলে এখানে এসে থাকছে। ওকে আমি সব ভাবে সাহায্য করতে পারি। ভালবাসি তাই। কিন্তু ওর বিয়ের ব্যাপারে কোনো ডিসিশন নেওয়ার অধিকার আমার নেই। সেটা শুধুমাত্র ওর উপরে ডিপেন্ড করে। তাই এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারছি না। তোমরা বরং ওর সাথে কথা বল। ও যদি বিয়েতে রাজি থাকে তাহলে বিয়ে হবে। নইলে আমার কিছুই করার নেই।”

ওনার এমন উত্তরে মনঃক্ষুণ্ণ হলেন ফিরোজ আহমাদ, তার স্ত্রী এবং সরণ। সরণ কে দেখে বোঝা যাচ্ছে তার ভীষণ রাগ হয়েছে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে ফিরোজ আহমাদ বলে উঠলো,

“আপনার কথায় যুক্তি আছে আন্টি। তাই আপনাকে আমরা জোর করবো না। আপনি একটি উপকার করুন। মেহরিমা মাকে একটু ডাকুন। আমরা বরং ওর সাথে কথা বলি।”

উনার কথার উত্তরে দিলরুবা বেগম কিছু বলার আগেই মেহরিমা সেখানে এগিয়ে আসলো। ফিরোজ আহমাদ কে সালাম দিয়ে বলল,

“দুঃখিত আঙ্কেল এভাবে এখানে আসার জন্য। আমাকে ক্ষমা করবেন কারণ আমি দূর থেকে আপনাদের সব কথাই শুনেছি। এ ব্যাপারে আমি সরণ স্যার এর সাথে একটু আলাদা কথা বলতে চাই। যদি আপনারা কিছু মনে না করেন।”

ওর এমন কথায় উনারা কিছু বলার আগেই আনন্দে গদগদ হয়ে লাফিয়ে উঠল সরণ। মেহরিমার পাশে এগিয়ে গিয়ে বললো,

“চলো, কি বলবে আমায়। আমি তোমার সব কথা শুনতে চাই। এই দিনের জন্য কত অপেক্ষা করে আছি আমি।”

ওর এমন কথায় যেন বোকা বনে গেলো মেহরিমা। ভীষণ লজ্জা পেতে লাগল ও। মনে মনে সরণ কে গালি দিয়ে বলতে লাগলো,

“এমন বেহায়া লোক আমি কখনো দেখিনি। কেমন বেহায়ার মতো সবার সামনে এসে এভাবে কথা বলছে। আল্লাহ এই আপদের হাত থেকে আমাকে বাঁচাও।”

কথাগুলো মনে মনে বলেই সেখানে আর দেরি না করে একটি খালি রুমের দিকে হাটা শুরু করল মেহরিমা। ওর পিছু পিছু খুশিতে উচ্ছাসিত হয়ে সরণও হাটতে লাগলো।

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

#দিওয়ানেগি #পর্ব_২৬
#M_Sonali

মেহরিমা আর সরনকে খালি রুমে যেতে দেখে ফিরোজ আহমাদের স্ত্রী বলে উঠলেন,

“দেখেছেন আন্টি, মেহরিমা কিভাবে আমাদের সরণকে একা কথা বলার জন্য নিয়ে গেলো? আমার তো মনে হচ্ছে মেহরিমা বিয়েতে রাজি। আর রাজি হবেই না বা কেনো। আমার সরণের মত সোনার টুকরো ছেলে সে আর একটাও পাবে? চলুন আন্টি আমরা বরং মিষ্টিমুখ করতে শুরু করি। বিয়ে তো পাকাই ধরে নিন।”

ওনার কথার উত্তরে দিলরুবা বেগম এর মুখটা শুকিয়ে গেল। সে মনে মনে ভয়ে ভীতু হতে লাগল। সত্যিই যদি মেহরিমা এ বিয়েতে রাজি হয়ে যায়? তাহলে আমি কি করবে সে? আলমির তো সবকিছু শেষ করে দেবে। সরণদের সাথে শত্রুতা শুরু হয়ে যাবে। এই দুই পরিবারের মাঝে ফাটল ধরবে। এমনিতেই তো আলমিরের শত্রুর অভাব নেই। কি হবে এখন?

এসব ভেবে দিলরুবা বেগম ঘামতে শুরু করেছেন। তার হার্টবিট প্রচুর পরিমানে বেড়ে যেতে লাগল। পেশারও হাই হয়ে যেতে লাগল। তিনি নিজেকে ভীষণ অসুস্থ মনে করতে লাগলেন। কাঁপা গলায় বললেন,

“আমি এখন মিষ্টি খাব না। তোমরা খাও। আমার শরীরটা বেশ খারাপ লাগছে।”

উনার কথার উত্তরে ফিরোজ আহমাদ নিজের সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। উনার পাশে এসে বললেন,

“কী হয়েছে আন্টি আপনাকে এমন লাগছে কেন? দেখিতো!”

কথাটি বলেই উনি দিলরুবা বেগমের হাত ধরে তার পালস্ চেক করলেন। তারপর উত্তেজিত হয়ে বললেন,

“আমার তো মনে হচ্ছে আপনার প্রেশার অনেক বেড়ে গেছে। আপনি রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ুল। এ অবস্থায় আপনার বসে থাকা ঠিক নয়। আমি কাজের মেয়েকে বলছি আপনার মাথায় পানি ঢালতে হবে।”

কথাটি বলেই উঠে যেতে লাগলেন তিনি। তখনই দিলরুবা বেগম ওনার হাত ধরে থামিয়ে দিলেন। তারপর হাফাতে হাফাতে বললেন,

“কারো দরকার নেই ফিরোজ। তুমি শুধু মেহরিমা কে আমার কাছে এনে দাও। ও আমার কাছে থাকলে আমি সুস্থ হয়ে যাব। ওকে ডাকো আমার কাছে। ডাকো ওকে।”

কথাটি বলতে বলতেই কেমন যেন জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে লাগলেন দিলরুবা বেগম। ওনার অবস্থা বেগতিক হয়ে যেতে লাগল। ওনার এমন অবস্থা দেখে ফিরোজ আহমাদ মেহরিমাকে ডাকতে গেলে ওনার স্ত্রী এসে ওনার হাত ধরেন। তারপর গম্ভির গলায় বলেন,

“মেহরিমা কে ডাকতে হবে না। ওরা আলাদা কথা বলছে বলুক। আমি আছি আন্টির পাশে।”

উনার কথার উত্তরে ফিরোজ আহমাদ আর কিছু বললেন না। সেখানেই থেমে গেলেন। দিলরুবা বেগমের চিকিৎসার জন্য কাজ শুরু করলেন তিনি।
,
,
,
সরণ কে নিয়ে আলাদা রুমে যাওয়ার পরে’ই সে মেহরিমার একদম কাছে চলে যায়। ওর হাত ধরতে গেলে মেহরিমা দু পা পিছিয়ে গিয়ে ঝাঁঝালো গলায় বলে,

“আমি আপনাকে এখানে কিছু কথা বলার জন্য ডেকেছি সরণ। অন্যকিছু ভেবে ভুল করবেন না। চুপ করে দাঁড়ান এবং আমার কথা শুনুন।”

সরন আর সামনে এগোয় না। সেখানেই দাঁড়িয়ে যায়। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মেহরিমার দিকে। মেহরিমা একটি ছোট করে নিশ্বাস নিয়ে বলতে শুরু করে,

“দেখুন আমি আপনাকে আগেই কয়েকবার বলেছি যে আমি এখন বিয়ে করতে চাই না। আসলে বিয়ের প্রতি কোন আগ্রহ নেই আমার। আর তাছাড়া আমার বোন মেহেরের আমি ছাড়া পৃথিবীতে আর কেউ নেই। ওকে ছেড়ে আমি অন্য কারো ঘরে যেতে পারব না। এই মুহূর্তে বিয়ে করাটা অসম্ভব আমার জন্য। আপনি আমার কথাটা বোঝার চেষ্টা করুন। আঙ্কেল-আন্টির সামনে এই কথাগুলো বলে তাদের অপমান করতে চাই না। তাই আপনাকে আলাদা এখানে ডেকে নিয়ে আসা। আপনি প্লিজ আঙ্কেল আন্টি কে বুঝিয়ে এখান থেকে চলে যান। আমি এ মুহূর্তে বিয়ে করতে পারবোনা।”

ওর কথার উত্তরে কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে সরণ। তারপর মৃদু হেসে এক পা সামনে এগিয়ে আসে। আদুরে গলায় বলে,

“পাগলি মেয়ে, তুমি মেহের কে নিয়ে কেন টেনশন করছো। আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি। তুমি যদি একবার বিয়েতে রাজি হয়ে যাও মেহের কে আমি নিজের বোনের মত ভালবাসব। ওকে কোন কিছুতে অভাব দিব না। ওর সব রকমের দায়িত্ব আমি নেব। তুমি শুধু একবার আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যাও। তোমাকে আমি রাজরানী করে রাখবো।”

ওর কথাগুলো শুনে এবার যেন মনে মনে ভীষণ রাগ হচ্ছে মেহরিমার। এত ছ্যাঁচড়া লোক এর আগে কখনো দেখেনি সে। কিন্তু মুখের উপর কিছু বলতেও পারছে না। তাই নিজেকে যতটা সম্ভব কন্ট্রোল করে গম্ভীর গলায় বলল,

“আপনি হয়তো আমার কথাগুলো বুঝতে পারেননি সরণ। আচ্ছা ঠিক আছে আমি আপনাকে সোজাসাপ্টা একটা কথা বলে দিচ্ছি। আমি এই মুহূর্তে বিয়ে করতে পারব না। আপনি কেন, পৃথিবীর সবচাইতে সুন্দর রাজকুমারও যদি আমাকে বিয়ে করতে আসে, আমি এখন তাকেও বিয়ে করবো না। মানে করব না। আপনি এখন আঙ্কেল আন্টি কে নিয়ে চলে যেতে পারেন।”

কথাগুলো বেশ কড়া গলায় বলে উঠল মেহরিমা। কিন্তু ওর কথা শুনে সরণ এর মাঝে যেন কোন রকম রিয়েকশন হলো না। সে আবারো বলে উঠল,

“আচ্ছা ঠিক আছে বিয়ে না করতে পারো, অন্তত আমাদের কাবিন টা তো করে রাখি। আর এনগেজমেন্ট সেরে রাখি দুজন। এটা অন্তত মানা করো না। তুমি যেদিন বলবে সেদিনই বিয়ে করবো আমরা। এখন শুধু কাবিন আর এনগেজমেন্টটা করে রাখি চলো।”

এবার যেন মেহরিমার ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে গেল। সে তার রাগকে কন্ট্রোল করে রাখতে পারলো না। চিল্লিয়ে বলে উঠল,

“সমস্যা কি আপনার? আপনি আমার কথা কানে শুনতে পারছেন না? আর কতবার বলতে হবে আমি আপনাকে বিয়ে করবো না। শুনুন আমি অন্য একজনকে ভালোবাসি। আর বিয়ে যদি করতেই হয় তাহলে তাকেই বিয়ে করব। অন্য কাউকে নয়। আপনি আমার আশা ছেড়ে দিন। অন্য কোনো ভালো মেয়ে দেখে তাকে বিয়ে করে নিন। এমন ছ্যাঁচড়ার মতো আমার পিছনে পড়ে থাকবে না দয়া করে।”

কথাগুলো বলেই রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো মেহরিমা। সাথে সাথে ওর হাতটা শক্ত করে টেনে ধরল সরণ। রাগে যেন কপালের রগগুলো দাঁড়িয়ে গেছে তার। চোখটা একদম লাল টকটকে হয়ে গেছে। সে দাঁত কিড়মিড় করে বলে উঠলো,

“তুই কি মনে করেছিস এতক্ষণ ভালোভাবে কথা বলছি দেখে তোর সবকিছু সহ্য করে নিব? তুই শুধু আমার। অন্য কারো কথা তোর মুখে আনলেও জিভ টেনে ছিড়ে ফেলবো। ভালোবেসে অনেক চেষ্টা করলাম তোকে বিয়ে করার জন্য। কিন্তু তুই ভালোবাসা পেয়ে রাজি হওয়ার মেয়ে নয়। এবার তোকে জোর করে বিয়ে করবো আমি। আর বিয়ে যদি না করতে চাস তাহলে কিভাবে তোকে বিয়ে করতে রাজি করাতে হয় সেটা আমার জানা আছে। প্রবাদে আছে না সোজা আঙ্গুলে ঘি না উঠলে আঙ্গুল বাঁকাতে হয়। এবার সেটাই করবো আমি। আমার মত হাসিখুশি চনচল একটি ছেলের বুকে ভয়ঙ্কর ভালোবাসা জন্ম দিয়েছিস তুই। কি ভেবেছিস এত তাড়াতাড়ি এত সহজেই তোকে আমি ছেড়ে দেবো? কখনোই না। ভালো যখন বেসেছি জীবনের শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত তোকে আঁকড়ে ধরে রাখবো। প্রয়োজনে খুন করে ফেলবো তবু অন্য কারো হতে দেখতে পারবো না।”

কথাগুলো বলে মেহরিমার হাতটা জোরে ঝাড়ি মেরে ছেড়ে দিলো সরণ। তারপর রাগে ফোসফোস করতে করতে রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেল সে। মেহরিমা যেনো ভয়ে কুঁকড়ে উঠলো। তার হাতে সরণ যেখানে ধরে ছিলো সেখানে কালচে দাগ হয়ে গেছে। কাঁদতে কাঁদতে ফ্লোরে বসে পরলো সে। কি করবে কিছুই যেনো বুঝতে পারছে না সে।
,
,
ওদিকে দিলরুবা বেগম বেশ অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। ওনার মাথায় পানি ঢালা হয়েছে। সাথে মেডিসিন খাইয়ে দিয়েছেন ফিরোজ আহমাদ। তাই এখন বেশ সুস্থ বোধ করছেন তিনি। সবেমাত্র দিলরুবা বেগম উঠে বসেছেন। তখনই সরণ রাগি ভাবে সেখানে এসে দাঁড়ায়। ফিরোজ আহমাদ এবং তার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে রাগি গলায় বলে,

“সামনের ৫ তারিখ শুক্রবার মেহরিমার সাথে আমার বিয়ে। তোমরা বিয়ের প্রস্তুতি শুরু করো। দিদুন তুমি।”

কথাটা বলেই হনহন করে সেখান থেকে বেরিয়ে চলে যায় সে। সবাই যেন হতভম্বের মত তাকিয়ে থাকে তার চলে যাওয়ার দিকে।

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

#দিওয়ানেগি #পর্ব_২৭
#M_Sonali

অফিসে আসার পর কেন জানে না কিছুতে কাজে মন বসছে না আলমিরের। বারবার মনে হচ্ছে কিছু একটা হতে চলেছে। সে কোনভাবেই নিজের কাজে মনযোগ দিতে পারছে না। শেষমেষ বিরক্ত হয়ে মোবাইলটা হাতে তুলে নিল সে। মেহরিমার নাম্বারটা বের করে কল দিল। অনেকক্ষণ কলটা বেজে বেজে কেটে গেল। এভাবে আরো বেশ কয়েকবার ট্রাই করলো সে। কিন্তু একবারও ফোনটা রিসিভ হলো না। এবার যেন মনের অস্থিরতা আরো দ্বিগুন ভাবে বেড়ে গেল আলমিরের। এখন সে কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা। তাই এবার দিদুনের নাম্বারে কল করলো সে। কিন্তু সেই কলটাও রিসিভ হলো না। শেষে অস্থির হয়ে বাসায় থাকা একজন কাজের লোকের নাম্বারে কল দিলো। কয়েকবার বাজতেই রিসিভ হলো কলটা।

“হ্যালো”

অকারণেই যেন ভীষণ রেগে গেল আলমির। চিৎকার করে বলল,

“কোথায় থাকো সব। ফোন ধরতে এত সময় লাগে? কখন থেকে ফোন করছি আমি। বাসায় কি হয়েছে মেহরিমা বা দিদুন ফোন ধরছেনা কেন?”

ওর চিৎকারে বেশ ঘাবড়ে গেল কাজের লোকটি। সে কাঁপা গলায় বলে উঠলো,

“আসলে স্যার, মেহরিমা ম্যাডামের বিয়ের কথা বলার জন্য সরণ স্যার আর ওনার পরিবার এসেছিলেন। তাদের সাথে এতক্ষণ কথা বলছিলেন ওনারা। তাই হয়তো ফোন ধরনি। এইমাত্র সরণ স্যারেরা ৫ তারিখে বিয়ে ফাইনাল করে চলে গেছেন।”

কথাগুলো শুনতেই মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল আলমিরের। রাগে শরীরের প্রতিটি লোম দাঁড়িয়ে গেল তার। কপালের রগগুলো ফুটে উঠল। চোখ রক্তবর্ণ ধারণ করল। দাঁত কিড়মিড় করে ফোনটাকে একটা আছাড় মেরে ফেলে দিলো সে। তারপর কাজ ফেলে দ্রুত উঠে অফিস থেকে বেরিয়ে গেল। গার্ডদের সাথে নিয়ে গাড়িতে করে দ্রুত ছুটল বাসার উদ্দেশ্যে।

বাসায় পৌছে দেখলো দিলরুবা বেগম সোফার উপর মনমরা হয়ে বসে আছেন। মেহরিমা আশেপাশে কোথাও নেই। আলমির ওনার সামনে এসে চিৎকার করে বলে উঠলো,

“দিদুন, মেহরিমা কোথায়?”

ওর চিৎকারে কেঁপে উঠলেন দিলরুবা বেগম। তিনি কিছু বলবেন তার আগেই আলমির হনহন করে চলে গেল মেহরিমা রুমের দিকে। রুমের দরজা খুলতেই দেখলো মেহরিমা খাটের উপর কাচুমাচু হয়ে চুপচাপ বসে আছে। এক দৃষ্টিতে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে। আলমির সোজা গিয়ে তার সামনে দাঁড়াল। চিৎকার করে বলে উঠলো,

“এই মেয়ে, তোমার সাহস হয় কি করে সরণকে বিয়ে করতে রাজি হওয়ার? কোন সাহসে ৫ তারিখে বিয়ের কথা ফাইনাল হতে দিলে তুমি। ঐ সরণকে তো আ,,,,!”

এতোটুকু বলতেই ওকে থামিয়ে দিয়ে চিৎকার করে উঠে দাঁড়ালো মেহরিমা। কাঁদতে কাঁদতে চিৎকার করে বলল,

“তাতে আপনার কি? ৫ তারিখে কেন আমি যদি আজকেও সরণকে বিয়ে করি তাতে আপনার কি? আপনি কোন অধিকারে আমার সাথে এভাবে কথা বলছেন? কে হই আমি আপনার? যে আপনি আমার সব ব্যাপারে নাক গলাবেন। আমি যাকে খুশি তাকে বিয়ে করবো। যা ইচ্ছা তাই বলবো। তাতে আপনার কি? আপনি বলার কে?”

ওর এমন কথায় যেন মাথায় রক্ত উঠে গেল আলমিরের। দাঁত কিড়মিড়িয়ে মেহরিমার দুবাহু চেপে ধরে চিৎকার করে বলল,

“তোমার সব কিছুতে আমার অধিকার আছে। তোমার সাথে সবকিছু করার অধিকার রাখি আমি। কারণ আমি তোমাকে ভালবাসি। হ্যা হ্যা আমি তোমাকে ভালোবাসি। আর তুমি আমি ছাড়া অন্য কারো হতে পারো না। ওই সরণকে তো আমি খুন করে ফেলবো। ও যদি তোমাকে বিয়ে করা তো দূর এমন চিন্তাও করে। তুমি কোন সাহসে রাজি হলে বিয়েতে বল? তুমি শুধু আমার অন্য কারো না।”

কথাগুলো বলেই রাগে ফোসফোস করতে লাগল আলমির। মেহরিমা ওর থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে দুপা পিছিয়ে গেল। তারপর শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে ঠাস করে থাপ্পর মেরে দিল আলমিরের গালে। ঘটনার আকস্মিকতায় আলমির যেন হতভম্ব হয়ে গেল। সে গালে হাত দিয়ে মেহরিমার দিকে তাকাতেই মেহরিমা তার কলার চেপে ধরে। ঝাঁকিয়ে রাগি গলায় বললো,

“সব দোষ আপনার। হ্যাঁ হ্যাঁ এই সবকিছুর জন্য দায়ী আপনি। ভালো যদি বাসেন, তাহলে এমন কাপুরুষের মতো দূরে দূরে থাকেন কেন? কেনো মুখ ফুটে কখনো বলেন নি। এই কথাটি যদি আপনি আগেই বলে দিতেন তাহলে আজকের এই দিনটা দেখতে হতো না। আপনি জানেন আপনার মুখ থেকে এই ছোট্ট কথাটি শোনার জন্য কত অপেক্ষা করেছি আমি? আপনি কথাটা ঠিকই বললেন, কিন্তু অনেক দেরিতে। এখন আর কোন কিছুই সম্ভব না। সরণ এর সাথে আমার বিয়ে হবে ৫ তারিখে।”

কথাগুলো বলে ঝাড়ি মেরে কলার ছেড়ে দিয়ে খাটের উপর বসে পড়ে অঝোরে কাঁদতে লাগল মেহরিমা। ওর মুখের কথাগুলো শুনে কিছুক্ষণ চুপ থেকে কিছু একটা ভাবলো আলমির। তারপর ওর হাত টেনে ধরে ওকে নিয়ে হনহনিয়ে বেরিয়ে এল রুম থেকে। টানতে টানতে নিয়ে গিয়ে দিদুনের সামনে সোফার উপরে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো। তারপর চিৎকার করে বলল,

“এখানে চুপচাপ বসে থাকবে। এক পা ও এখান থেকে নড়বেনা।”

কথাটি বলে দ্রুত হেঁটে বাসা থেকে বেরিয়ে গেল আলমির। মেহরিমা এবং দিলরুবা বেগম যেন কিছুই বুঝতে পারলেন না। দিলরুবা বেগম মেহরিমার সাথে কোন কারনে কথা বলছেন না। সরণ রা চলে যাওয়ার পর থেকেই।

প্রায় এক থেকে দেড় ঘণ্টা পর একজন পাঞ্জাবী পাজামা ও টুপি পড়া দাড়িওয়ালা লোক কে নিয়ে ফিরে এলো আলমির। সাথে বেশ কিছু শপিং ব্যাগ হাতে। শপিং ব্যাগ গুলো মেহরিমার হাতে দিয়ে বলল,

“যাও এগুলো পড়ে রেডি হয়ে আসো। এই মুহূর্তে বিয়ে হবে আমাদের।”

ওর কথায় যেন অবাক এর শীর্ষে পৌঁছে গেল মেহরিমা। একবার শপিং ব্যাগের দিকে আর একবার ওর মুখের দিকে তাকিয়ে হা করে রইল। দিলরুবা বেগম কিছুই বলছেন না। তিনি শুধু চুপচাপ সবকিছু দেখছেন। মেহরিমাকে চুপ করে বসে থাকতে দেখে আলমির ধমক দিয়ে বলে উঠল,

“এই মেয়ে কানে কি কম শুনতে পাও নাকি তুমি? আমি কি বলেছি শুনতে পাওনি? তাড়াতাড়ি যাও ১০ মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে এখানে সামনে দেখতে চাই তোমায় আমি।”

ভয়ে মেহরিমা আর কোন প্রকার কথা বললো না। শপিং ব্যাগ গুলো হাতে নিয়ে নিজের রুমে চলে গেল চুপচাপ। ওর পিছু পিছু আলমিরও সেই রুমে গেল। তারপর ওকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে শান্ত গলায় বললো,

“দেখো মেহু, আমি তোমাকে ভালবাসি। আমার বিশ্বাস এটা তুমি আগে থেকেই জানো। আর তুমিও আমাকে ভালোবাসো। তাই কোন রকম প্রশ্ন বা কোনো রকম সিনক্রিয়েট না করে দ্রুত রেডি হয়ে নাও। এই মুহুর্তে তোমায় বিয়ে করবো আমি।”

কথাটি বলেই আচমকা মেহরিমার কপালে একটি চুমু একে দিল আলমির। তারপর রুম থেকে বেরিয়ে নিজে রেডি হওয়ার জন্য চলে গেল। মেহরিমা চুপ করে সেখানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে তাকিয়ে রইল দরজার দিকে। কিছু একটা ভেবে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো সে। তারপর শপিং ব্যাগ গুলো খুলে তার ভিতরে থাকা জিনিসগুলো পরে রেডি হতে শুরু করল সে।
,
,
মেহেরি স্কুল থেকে বাসায় পৌছেই বাসার মধ্যে সবার অবস্থা দেখে বেশ অবাক হলো। সে কি হয়েছে তা জানার জন্য সোজা মেহরিমার রুমে চলে গেলো। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই দেখলো মেহরিমা আয়নার সামনে অনেকটা বউয়ের মত সেজে বসে আছে। ওকে এমন সাজে দেখে বেশ অবাক হল মেহের। হাতে থাকা ব্যাগটা পাশে রেখে এগিয়ে গিয়ে বললো,

” আপু তুমি হঠাৎ এভাবে সেজেছ কেন? দেখে মনে হচ্ছে আজ তোমার বিয়ে? আর বাইরে এত মানুষ, কি হয়েছে বলোতো?”

ওর কথার উত্তরে মেহরিমা কিছু বলার আগেই পিছন থেকে আলমির বলে উঠল,

“কারন আজ তোমার আপুর বিয়ে। তোমার এই দুলাভাইয়ের সাথে। এখন যাও তুমিও রেডি হয়ে নাও। এই নাও এতে তোমার জন্য নতুন জামাকাপড় ও কিছু কসমেটিক আছে। এগুলো পড়ে রেডি হয়ে নাও।”

কথাটি বলেই একটি শপিং ব্যাগ এগিয়ে দিলো মেহেরের দিকে। অবাক হয়ে শপিং ব্যাগ হাতে নিল সে। ভ্রু কুঁচকে বললো,

“আপু আর তোমার বিয়ে? কিন্তু আমিতো কিছুই জানিনা।”

“তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম। তাই আগে থেকে কিছু বলিনি। এবার যাও তো তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও। নইলে তোমাকে রেখেই কিন্তু তোমার আপুকে বিয়ে করে ফেলবো।”

ওর কথায় খুশি হয়ে গেল মেহের। শপিং ব্যাগ টা হাতে নিয়ে নাচতে নাচতে রেডি হতে চলে গেল সে। আলমির এসে আয়নার সামনে মেহরিমার পিছনে দাঁড়াল। আয়নাতে মেহরিমার দিকে তাকিয়ে যেন চোখ সরাতে পারছে না সে। মেহরিমা কোনরকম সাজগোজ করে নি। শুধু ওর নিয়ে আসা লাল রঙের লেহেঙ্গা পড়েছে সে। সাথে হাতে চুড়ি, গলার নেকলেস, কানে দুল পড়েছে। মুখে কোন রকম মেকআপ লিপস্টিক বা কোনো কিছুই নেই। ত মুখটা একদম ফ্যাকাসে হয়ে আছে মেয়েটার। তবুও যেন অপরূপ সুন্দর লাগছে ওকে আলমির এর কাছে। সে কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে থেকে ওর হাত ধরে বলে ওঠে,

“পারফেক্ট। আর কিছুই করতে হবে না। এমনিতেই আমায় ঘায়েল করার জন্য যথেষ্ট। এবার চলো আমার সাথে বিয়েটা সেরে ফেলি।”

মেহরিমা কোন কথা বলল না। চুপচাপ উঠে দাঁড়াল। এক নজর ওর দিকে তাকাল সে। দেখল আলমির গোল্ডেন কালার এর একটি শেরওয়ানি পড়েছে। বেশ কারুকাজ করা। খোঁচা খোঁচা দাড়ি তে বেশ মানিয়েছে তাকে। অনেক সুন্দর লাগছে দেখতে। কিন্তু এখন কেন জানেনা তার এই সৌন্দর্য চোখে লাখছে না মেহরিমার। তার মনটা কেন জানে না ভীষণ অস্থির লাগছে। মনে হচ্ছে অনেক বড় কিছু হতে যাচ্ছে।

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,