ধোঁয়াশা পর্ব-০১

0
393

‘ধোঁয়াশা’ ১.

~ তাবিনা মাহনূর

_________________

আড়ালের গল্প…..

দুজন মানুষের দুটো ছবি। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক সুদর্শন তরুণ এবং অন্যজন অনিন্দ্য রূপবতী তরুণী। দুটো ছবি হাতে অপেক্ষারত এক মানব ধৈর্য ধরে আশেকের কাজ দেখছে। না কোনো কথোপকথন, না কোনো আওয়াজ। আশেক ব্যস্ত নতুন মামলার সরঞ্জাম তৈরি করতে। একটা পুতুলের অবয়ব দেয়া শেষ, বাকি আছে আরো একটা। আশেক অবশিষ্ট পুতুলটা সেলাই করতে করতে নীরবতা ভাঙলো, ‘দুইডারেই বান মারবেন?’

সামনে বসে থাকা মানুষটা উপর নিচ মাথা দুলিয়ে তার উত্তর জানালো। আশেকের দ্বিতীয় প্রশ্ন, ‘ম্যালা ট্যাকার কাম, মাইরা ফেলতে চাইতেছেন। অহন অর্ধেক দেওন লাগবো, বাকিডা কাজ হওনের পর। আনছেন কিছু?’

মানুষটা ধীর হাতে বিশ হাজার টাকা বের করে আশেকের পাশে রাখলো। আশেক তা দেখে বাঁকা হাসলো, ‘পঞ্চাশের কাম। তয় ঠিকাছে, পরে তিরিশ দিয়েন।’

পুতুল বানানো শেষ। আশেক হাত বাড়ালে মানুষটা ছবি দুটো দিলো। আশেক প্রথমে পুরুষের ছবিতে সুঁই গেঁথে পুতুলের সাথে আটকে দিলো। তারপর নারীর ছবিটা হাতে নিয়ে বললো, ‘ম্যালা মানুষ আহে আমার কাছে। এইডা নতুন কিছু না। কিন্তু, আপনারে দেইখা কেউ কইবার পারবো না আপনে কি করতে যাইতেছেন…’

মানুষটা উঠে দাঁড়ালো। আশেক বুঝতে পারলো এ কথা তার খদ্দেরের পছন্দ হয়নি। সে দ্রুত নারীর ছবিটা দ্বিতীয় পুতুলের গায়ে বিঁধে দিয়ে বললো, ‘যান। কুনো চিন্তা কইরেন না। আমার কাম কেউ টের পাইবো না। কাম হইতে বেশি দেরি নাই। তয় আপনের একটু সমস্যা হইতে পারে। কামডা শ্যাষ হইলে আপনের সমস্যাও মিইটা যাইবো।’

আশেকের কথা শেষ। মানুষটা আর কোনো কথা না বলে আশেকের নোংরা অন্ধকার ঘর ছেড়ে চলে গেল। রেখে গেল বিশ হাজার টাকা, দুটো মানুষের ছবি আর, অজস্র পাপের সাক্ষী।

____________________

সূত্রপাত……

সকালের মিষ্টি আলোয় রুহিয়ার মুখশ্রীতে কোমলতা ছেয়ে আছে। নিশীথ প্রিয়তমার মসৃন কপোলে হাত রেখে বললো, ‘ঘুম ভালো হয়েছে?’

রুহিয়া তার স্ফীত পেটের উপর হাত রেখে বললো, ‘আমি ঘুমিয়েছি। তোমার দুষ্টু মনে হয় ঘুমায়নি। মাঝে মাঝেই লাফিয়ে উঠছিল।’

হেসে উঠলো নিশীথ। আগত সন্তানের দুষ্টুমির কথা শুনলে বাবাদের বুকের ভার যেন আরো কমে যায়। নিশীথ তার স্ত্রীর পেটের উপর হাত রেখে বললো, ‘আমার বেলায় দুষ্টু, আর মায়ের বেলায়?’

– মিষ্টু!

নিশীথ হেসে উঠলো, ‘ওঠো, তোমার জন্য নাস্তা তৈরি করে রেখেছি। মুখ ধুয়ে নাও আমি খাবার আনছি। কফি খাবে?’

– দাঁড়াও বাবুকে জিজ্ঞেস করি।

স্ত্রীর এমন কথায় আবার হাসলো নিশীথ। তার ভাবতেই অবাক লাগে, এমন এক সুখকর দিন তার জীবনে এসেছে। অথচ সে যে কত অন্যায় করেছে রুহিয়ার সাথে! সে কখনোই ভাবতে পারেনি রুহিয়া তাকে এমন উপহার এনে দিবে। হঠাৎ চোখ ঘোলা হয়ে এলো। ইদানিং তার সুখের সময়গুলো নিয়ে ভাবলে চোখে অশ্রু জমে।

রুহিয়া ব্যথায় কুঁকড়ে উঠে বললো, ‘আহ! ,দেখেছো কীভাবে লাফায় বাবুটা? সে নিশ্চয়ই কফি খেতে প্রস্তুত!’

নিশীথ হাসতে হাসতে কফি বানাতে চলে গেল। রুহিয়ার ব্যথা বাড়ছে। গর্ভে বাবুর ছয় মাস বয়স। এখন এমন ব্যথা ওঠার কথা নয়। তাই রুহিয়া ঠোঁট চেপে চোখ দুটো বন্ধ করে ব্যাথা সহ্য করার চেষ্টা করছে। ধীরে ধীরে সে বাথরুমে গেল। প্রাকৃতিক কাজ শেষে হঠাৎ ব্যথা যেন অসীমে পৌঁছে গেল। তার মুখ থেকে ধীর স্বরে আর্তনাদ বেরিয়ে এলো। রুহিয়া বেসিনে হাত রেখে অন্য হাত দিয়ে পেট চেপে ধরে ব্যথা সয়ে নেয়ার চেষ্টা করলো। কিন্তু ব্যথার পরিমান তীব্রতর হওয়ায় সে বাথরুমের দরজার হাতলে হাত রেখে ডাকলো, ‘নিশীথ!’

আওয়াজ পৌঁছায়নি। রুহিয়া কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে বসে পড়লো। রক্তে তার হাত ভিজে গেছে। মেঝের পানি আর রক্ত মিশে কেমন আবির মাখা রং ছড়িয়ে আছে, রুহিয়ার মুখ জুড়ে আতংক। সে চিৎকার করে উঠলো, ‘নিশীথ! আমার বাচ্চা!’ জ্ঞান হারালো রুহিয়া।

নিশীথের কানে রুহিয়ার চিৎকার পৌঁছায়নি। কফিমেকারের ঝি ঝি শব্দ আর টিভিতে চলতে থাকা বিদেশি পপ গানের আওয়াজ তার প্রিয়তমার আর্তনাদকে ঢেকে দিয়েছে। নিশীথ কফির কাপ দুটো ট্রেতে নিয়ে দুটো রুটি আর সবজির তরকারি নিয়ে ঘরে গেল। রান্নাঘর থেকে তাদের ঘরটা একটু দূরেই হয়। রান্নাঘর পেরিয়ে ডাইনিং রুম। তারপর ড্রইং রুম আর দুটো গেস্ট রুম আছে। এরপর একদম কোণায় একটু নিরিবিলি জায়গায় তাদের ঘর যেন লোকজন এলে সহজেই ঘরটা চোখে না পড়ে।

ঘরে ঢুকে রুহিয়াকে পেলো না নিশীথ। ভ্রু কুঁচকে সে বারান্দায় যেতে যেতে ডাকলো, ‘রুহি? তুমি স্থির হয়ে বসে থাকতে পারো না কেন?’

রুহিয়া নেই। নিশীথ আবার ঘরে ফিরে বাথরুমের দিকে এগিয়ে গেল, ‘তুমি কি বাথরুমে আছো?’

কোনো সাড়া নেই। নিশীথ বাথরুমের দরজা খোলা দেখে তাতে হালকা ধাক্কা দিয়ে বললো, ‘রুহি, আমি কিন্তু আসছি?’

আর কোনো কথা বলতে হলো না নিশীথের। গলার স্বর যেন কেউ আটকে রেখেছে। অস্ফুটে সে বলে উঠলো, ‘রুহি!’

হাসপাতালের পরিবেশটা কেমন মনমরা ধরণের। সবদিক সফেদ, ঝকঝকে পরিষ্কার। রোগী আসে, রোগীর আপনজন আসে। ডাক্তার আসে। কেউ খুশি হয়, কেউ দুঃখী হয়। খুশির সংখ্যা অবশ্য কমই। গুনিতক আকারে দুঃখীর পরিমাণ বেড়েই চলছে, এর মাঝে রয়েছে নিশীথ। স্ত্রীর প্রায় রক্তশূন্য হাতটা ধরে সে নিষ্পলক তাকিয়ে আছে। ঘুমন্ত রুহিয়া যখন জেগে জানবে তার কন্যা শিশুর শরীরে কত ভয়ানক বিষক্রিয়া ঘটেছিল, তখন রুহিয়াকে কীভাবে সামলাবে সে? কাঁধে কারো স্পর্শ টের পেয়ে হাত ছাড়লো নিশীথ। ইনবিহাজ এসেছেন। নিশীথ তার দিকে তাকালে ইনবিহাজ অশ্রু চোখে মৃদু কণ্ঠে বললেন, ‘বাচ্চা?’

নিশীথ দুই দিকে মাথা নেড়ে উঠে দাঁড়ালো। ইনবিহাজ মুখে হাত দিয়ে কান্না দমনের চেষ্টা করে চেয়ারে বসলেন। নিজের বড় কন্যার এমন হাল দেখে চোখের জলের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। তার দুই কন্যার মাঝে একমাত্র রুহিয়াই ছিল তার স্বপ্নের বীজ। ছোট কন্যা তাহিয়া জন্মগতভাবে মানসিক ভারসাম্যহীন। কিশোরী বয়সে তাহিয়ার মস্তিষ্কে টিউমার ধরা পড়লো এবং ধীরে ধীরে সে পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগিতে পরিণত হলো। এখন তাহিয়া বিছানাগত এবং চলাফেরায় অক্ষম। স্বামীহীন ইনবিহাজের সময় কাটে ছোট মেয়ের দেখভাল করে। বড় মেয়ের কাছে একটা দিন সময় দিতে পারেন না ছোট মেয়ের জন্য। যদিও একজন কাজের মহিলা আছেন, তারপরও তার নিজের হাতে যত্ন না নিলে তাহিয়ার অবস্থা আরও অবনতির দিকে যেতে থাকে।

নিশীথ কেবিনের বাইরে চেয়ারে বসে দু হাত দিয়ে মাথার চুল আঁকড়ে ধরলো। কত আনন্দ, পরিকল্পনা! সব এক মুহূর্তে নিঃশেষ হয়ে গেল। যেন তারা কোনো এক ইন্দ্রজালের মায়ায় হারিয়ে গিয়েছিল কল্পনার বিলাসিতায়, হঠাৎ ধোঁয়াশায় তারা বাস্তবে ফিরে এসেছে। নিশীথ অলৌকিকতায় বিশ্বাস করে না। সে প্রভু, ধর্ম, জিন কিংবা এ জাতীয় বিষয়বস্তুকে আষাঢ়ে গল্প বলে মনে করে। তার চিন্তাধারার সঙ্গী হলো রুহিয়া। নয় বছর বয়সে মৃত বাবা, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বোন এবং দুর্বল মাকে দেখে রুহিয়ার মনে সৃষ্টিকর্তার প্রতি কোনো আগ্রহ নেই।

– আপনি নিশীথ হায়দার?

মাথা তুলে তাকালো নিশীথ। একজন নার্স তাকে প্রশ্ন করেছে। সে মাথা উপর নিচ দুলিয়ে বললো, ‘হুম।’

– ডাক্তার লিপি ডাকছেন আপনাকে।

নিস্তেজ কণ্ঠে বললো নিশীথ, ‘আমার যাওয়ার শক্তি নেই। আপনিই বলুন কি হয়েছে।’
নার্সের যান্ত্রিক উত্তর, ‘দুঃখিত স্যার। আপনাকেই যেতে হবে। ম্যামের জরুরি কথা আছে।’

নিশীথ ব্যাধিগ্রস্থ মানুষের মতো টলতে টলতে ডাক্তারের চেম্বারে পৌঁছে গেল। একজন ভেতরে গিয়ে তার আসার খবর বললে নিশীথকে ভেতরে ঢোকার অনুমতি দেয়া হলো। ডাক্তার লিপি তাকে দেখেই বললেন, ‘বসুন নিশীথ। কিছু কথা জানাতে হবে আপনাকে।’

নিশীথ চেয়ারে বসে বললো, ‘আমার আর কিছু শোনার ক্ষমতা নেই।’

লিপি নরম সুরে বললেন, ‘দেখুন, এমন পরিস্থিতি অস্বাভাবিক নয়। অনেক দম্পতির জীবনে এর চেয়েও ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে। তবে আপনাদের উচিত হবে পুলিশকে জানানো। আপনার স্ত্রীকে বেশ প্রতিক্রিয়া সম্পন্ন ঔষধ খাওয়ানো হয়েছে যেটা আপনার স্ত্রীর গর্ভে থাকা শিশুর জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ছিল। আমার ধারণা, এটা কেউ ইচ্ছেকৃতভাবে করেছে। কারণ এরকম কোন ঔষধ আমরা তাকে দেইনি। এছাড়াও একটা সমস্যা দেখা গিয়েছে।’

– কি সমস্যা?

লিপি দুঃখিত ভঙ্গিতে বললেন, ‘এটা মর্মান্তিক, তবু আপনাকে জানাতেই হবে। আপনার স্ত্রী মা হওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে।’

চুপ করে বসে আছে নিশীথ। সে এই কথা বিশ্বাস করতে চায় না। তাদের বহু দিনের স্বপ্ন, তারা এক কন্যা ও এক পুত্রের বাবা-মা হবে। দুই সন্তান নিয়ে তাদের হবে সুখের সংসার। সে চোখ দুটো বন্ধ করে ফিসফিসিয়ে বললো, ‘অসম্ভব। এটা দুঃস্বপ্ন, দুঃস্বপ্ন!’

– নিশীথ? আপনি শান্ত হন। আপনার স্ত্রীকে কে সামলাবে বলুন তো?

এবার নিশীথ বলে উঠলো, ‘আর আমাকে কে সামলাবে? আমিও যে মানুষ, আমার মনেও পিতৃত্ব আছে।’

অশ্রু চোখে নিশীথকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করলেন ডাক্তার, ‘এমন দম্পতি আমি অনেক দেখেছি। এটা মেনে নেয়া সত্যিই কষ্টের। কিন্তু এর মানে এই নয় যে জীবন থেমে গিয়েছে। আপনারা নতুন করে জীবনের অর্থ খুঁজে বের করুন। কত শিশুদের মা বাবা নেই। তাদেরও ইচ্ছে করে মায়ের আদর পেতে, বাবার পিঠে চড়তে। আমি দুআ করবো যেন আপনারাও ইয়াতিম বাচ্চাদের মাঝেই নিজেদের সুখ খুঁজে পান।’

_______________________

ইনবিহাজ আদরের কন্যার চুল আঁচড়ে দিয়ে বললেন, ‘এবার একটু বিশ্রাম নে মা। শরীরে রক্ত কমে গিয়েছে। ক্লান্ত শরীরটার বিশ্রাম প্রয়োজন।’

অনুভূতিহীন পুতুলের মতো নিষ্পলক তাকিয়ে আছে রুহিয়া। মায়ের কথাগুলো যেন তার কানে প্রবেশ করছে না। সে চুপচাপ শুয়ে পড়লো। চোখ দুটো বন্ধ তার। কিন্তু ঘুম নেই। ইনবিহাজ তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন কিছুক্ষণ। কপালে চুমু খেয়ে ঘরের বাইরে এলেন। নিশীথ ড্রইং রুমে বসে আছে। এক সপ্তাহ প হাসপাতাল থেকে রুহিয়াকে বাসায় আনা হয়েছে আজ। ইনবিহাজ আজই চলে যাবেন। শত ইচ্ছে থাকলেও মেয়েটার কাছে থাকা সম্ভব নয় এখন। তাহিয়া নাকি বমি করেছে, তার অবস্থা আশংকাজনক। বাসায় গিয়েই তাহিয়াকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। এগুলো ইনবিহাজকে একা একা সামলে রাখতে হয়। তবু প্ৰশান্তি এই যে, কাজের মহিলা মিনারা অনেক সাহায্য করেন।

ইনবিহাজকে আসতে দেখে নিশীথ উঠে দাঁড়ালো। ইনবিহাজ ধীর স্বরে বললেন, ‘রুহি কি জানে তার মাতৃত্ব হারানোর কথা?’

মুখ নিচু করে বললো নিশীথ, ‘না মা।’

কেঁদে ফেললেন ইনবিহাজ। কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘কটা দিন মেয়ের কাছে থাকতেও পারলাম না। কি কপাল নিয়ে এসেছি আমি!’

– এভাবে বলবেন না মা। এক সপ্তাহ ধরে আছেন, তাহিয়ার আপনাকে প্রয়োজন। কত দিক সামলাবেন? গিয়ে একটু বিশ্রামও পাবেন না।
– আমার আর বিশ্রাম! তাহিয়াকে এখানে নিয়ে আসবো সেই উপায় নেই। আর রুহিয়ার অবস্থাও করুণ। এখন ওর কাছে তোমাকে থাকতে হবে। তোমার অফিস কবে থেকে?
– তিন দিনের ছুটি নিয়েছি মা।
– এরপর কি হবে? রুহিয়ার কাছে কে থাকবে?

চুপ করে আছে নিশীথ। ইনবিহাজ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, ‘আমার মেয়েও আমার মতোই কপাল পেয়েছে। শশুর শাশুড়ি থেকেও নেই। তোমার আত্মীয় স্বজন নেই?’

নিশীথের বড় ভাই ইউএসএ থাকে। তার মা বাবাও তাই সেখানেই থাকেন। কিন্তু আত্মীয় স্বজন নিশীথকে খুব একটা পছন্দ করে না তার মুক্তমনা চিন্তাভাবনার কারণে। বাসায় বেড়াতে এলেও রুহিয়ার কাছে থাকার মতো কেউ নেই। তবু ইনবিহাজের কড়া কন্ঠ থেকে রেহাই পেতে সে বললো, ‘আছে তো। আমার স্বপ্না ফুপি। আমি উনাকে আসতে বলবো।’

– ঠিকাছে। আমি না পারলেও মিনারাকে পাঠিয়ে দিতাম। কিন্তু বাড়ি গিয়ে আগে দেখতে হবে তাহিয়ার কি অবস্থা। আল্লাহ চাইলে, তাহিয়া সুস্থ হয়ে গেলে আমি মিনারাকে এখানে পাঠিয়ে দিব।
– ঠিকাছে মা, আপনি চাপ নিবেন না।

ইনবিহাজ নিশীথের মাথায় হাত বুলিয়ে আরো একবার কাঁদলেন। রুহিয়ার ঘরে গিয়ে মেয়েকে আদর করে বেরিয়ে পড়লেন গাজীপুরের উদ্দেশ্যে।

ইনবিহাজকে বিদায় দিয়ে নিশীথ ঘরে গেল। রুহিয়াকে ডাক্তার রিল্যাক্সের ঔষধ দিয়েছে। তাই ঘুমের পাশাপাশি ক্লান্তি ভাবটা যায়নি তার। নিশীথ ছোট এক শ্বাস ফেলে ফোন হাতে নিলো। স্বপ্না ফুপিকে একটু হাতে পায়ে ধরে হলেও বাসায় রাখতে হবে। একমাত্র এই ফুপিই তাকে আদরের চোখে দেখেন। এছাড়াও ফুপি বিধবা এবং সন্তানদের কাছে রানীর হালে থাকেন। সুতরাং ফুপির মতো পিছুটান ছাড়া মানুষই রুহিয়াকে সঙ্গ দিতে পারবে।

তবে ফোন করার জন্য মোবাইল হাতে তুলে নিয়েও বিরক্ত বোধ করলো নিশীথ একজনের ম্যাসেজ দেখে। কম করেও দশটা নাম্বার সে ব্লক করেছে এই উটকো ঝামেলার। তবু এই ঝামেলা পিছু ছাড়ছে না। আজ শেষ করতেই হবে তাকে। নিশীথ পাশের বাসায় গেল। ভাবি ফাইজাকে এক ঘন্টার জন্য রুহিয়ার কাছে থাকতে বলে সে দ্রুত বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।

পৌনে এক ঘন্টার মাঝে কাজ শেষ করে ঘরে ফিরলো নিশীথ। কলিং বেল বাজালে দরজা খুলে দিলো রুহিয়া। সে কিছুটা বিস্মিত হয়ে বললো, ‘রুহি? তুমি কখন জেগেছো?’

রুহিয়া উত্তর না দিয়ে ডাইনিং টেবিল থেকে পানি খেয়ে ঘরে চলে গেল। নিশীথ চুপচাপ ঘরে ঢুকে বাথরুমে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে এলে সে দেখলো, তার স্ত্রী তার ফোন হাতে গম্ভীর হয়ে বসে আছে। তাকে আসতে দেখে রুহিয়া বলে উঠলো, ‘তোরা আমার বাচ্চাকে মেরেছিস। তাই না?’

নিশীথ বুঝতে পারলো রুহিয়া কোনোভাবে তার আর জয়ার ম্যাসেজিং দেখে ফেলেছে। সে নরম কণ্ঠে বললো, ‘তুমি আমাকে বলার সুযোগ দাও সোনা।’

ফোন ছুঁড়ে মারলো রুহিয়া। চিৎকার করে বললো, ‘চুপ থাক তুই! পারবি আমার মেয়েকে এনে দিতে?’

_____________________

চলবে ইন শা আল্লাহ…..