ধোঁয়াশা পর্ব-০২

0
143

‘ধোঁয়াশা’ ২.

~ তাবিনা মাহনূর
____________________

বিশ্ববিদ্যালয় পড়াকালীন সময় থেকে বিয়ের পূর্ব পর্যন্ত দুই বছরের প্রণয় আর তিন বছরের পরিণয় জীবনে রুহিয়া ও নিশীথের রসায়ন ছিল পাঁচমিশালী। রুহিয়ার সাথে প্রেমের পূর্বে জয়া ছিল নিশীথের প্রেমিকা। প্রেমিকা থেকে প্রাক্তন রূপ পাওয়ার কয়েক মাস পর রুহিয়াকে পেয়ে নিশীথের একমাত্র ধ্যান জ্ঞান হয়ে গেল সে। কিন্তু বিপত্তি বাঁধলো বিয়ের দেড় বছর পর।

রুহিয়ার চাকরি সূত্রে তাকে দুই মাসের জন্য মালয়েশিয়া যেতে হলো। নিশীথ থাকলো একাকী। এই সময়ে সুযোগ সন্ধানী জয়া এলো নিশীথের জীবনে। বোকা নিশীথের একাকীত্ব কাটাতে জয়ার তীর নিশানা করলো তার বুকে। পরকীয়া শব্দটা ঠিক নোংরা যেন! তাই নিশীথ এটাকে ‘ডিপ্রেশনের সঙ্গী’ নামক সম্পর্ক ভেবেই এগিয়ে গেল। রুহিয়া ফিরে এলে অর্ধাঙ্গের কুকর্ম সম্পর্কে জেনে উন্মাদ প্রায় হয়ে গেল। রুহিয়ার মুখশ্রী দেখে নিশীথের মনে পড়ে গেল সে বিবাহিত, তার প্রিয়তমা আছে। দুজনের মনোমালিন্য, বোঝাপড়া, অতঃপর রুহিয়ার ক্ষমা লাভ করলো নিশীথ। সেই সাথে রুহিয়া চাকরি ছেড়ে দিলো। ভুলে গেল সবকিছু। শুরু করলো নতুন জীবন। এই জীবনে শুভেচ্ছা বার্তা হিসেবে রুহিয়ার গর্ভে আগমন ঘটেছিল নিশীথের অংশ। কিন্তু!

আজ আবারো নিশীথের সামনে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি। সবকিছুর মূলে রয়েছে জয়া। রুহিয়ার অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার খবর শুনেই সে নিশীথকে দ্বিতীয়বারের মতো বিরক্ত করার চেষ্টা করলো। এইবার ভুল করেনি নিশীথ। তাকে বিভিন্নভাবে এড়িয়ে গেলেও জয়া থামেনি। তাই জয়াকে চিরতরে থামাতেই নিশীথ আজ গিয়েছিল তার সাথে শেষ সাক্ষাৎ করতে। রুহিয়া হয়তো অন্যকিছু ভেবে বসেছে।

নিশীথ নিজেকে শান্ত রাখলো। অনেক ধকল গিয়েছে তার উপর। তবে স্ত্রীর তুলনায় তার কষ্ট কিছুই না। এটা তো ঠিক, একদিন সে ভুল করেছিল যার ফল তাকে এখন ভোগ করতে হচ্ছে। সে আদুরে সুরে বললো, ‘চিৎকার করো না রুহি। তোমার শরীর খারাপ।’

রুহিয়া থামলো না, ‘আবার ঢং করছিস!’

– রুহি, তুই তুই করবে না।
– একশবার করবো। ‘তুই’ এর নিচে যদি কিছু থাকে তো সেটা তোর সাথেই মানায়। শয়তান!

ক্রোধ জমছে নিশীথের। সে সেটা দমিয়ে বললো, ‘রুহি, এবার কিন্তু বেশি বেশি হচ্ছে। আমার সন্তানকে আমি কেন মারবো?’

– তোর পথের কাটা ছিল যে সে। আমার বাচ্চা! কত কষ্ট পেয়েছিল! আমার বাচ্চা আমার পেটে অনেক ব্যথা পেয়েছে। কত কষ্ট!

বলতে বলতে অশ্রু ঝরালো রুহিয়া। নিশীথের মন গলেছে তাতে। সে বললো, ‘তুমি কেন বেরিয়েছিল সেদিন? কেন গিয়েছিলে জয়ার কাছে? তাহলে তো এমন হতো না!’

– নিজের দোষ আমার উপর দিবি না। আমি গিয়েছিলাম ওকে থামাতে। আমি দেখেছি তোর অভিনয়। তুই ওর কাছে যেতে চাস না এসব ম্যাসেজ পড়ে আমি ভুলে গিয়েছিলাম তুই আসলে কে! জয়াকে থামাতেই তো গিয়েছিলাম। কিন্তু আমি কি জানতাম ওই শয়তান আমার এত বড় সর্বনাশ করবে? সব তোদের চাল।

বেবি মিসক্যারেজের আগের দিন বিকেলে জয়ার সাথে দেখা করেছিল রুহিয়া। জয়াকে কিছু কড়া কথা শোনানোর মাঝেই হঠাৎ তার মোবাইলে অচেনা নম্বর থেকে ফোন আসে। সে কথা বললেই লোকটা বলে উঠে, ‘আপনি আপন কফি হাউজে আছেন?’

চমকে উঠে রুহিয়া আশেপাশে তাকায়। লোকটা হেসে বলে উঠে, ‘বাইরে না এলে দেখতে পাবেন না।’ তার কথা শুনে কৌতূহলী রুহিয়া বাইরে বের হলে জয়া তার কফির সাথে ঔষধ মিশিয়ে দেয় যার প্রতিক্রিয়া পরেরদিন সকালে উপলব্ধি করতে পেরেছে সে। এই সব জয়ার সাজানো নাটক। তার চক্রের এক লোককে শেখানো কাজগুলো রুহিয়ার সাথে ঘটেছে। জয়া খুব ভালো করেই জানে নিশীথ অত্যন্ত বোকা স্বভাবের ছেলে। তাকে নিজের হাতের মুঠোয় রাখলে চোখে ধুলো দিয়ে অনেক অর্থ উপার্জন করা সম্ভব।

নিশীথ জানতো রুহিয়া জয়ার সাথে দেখা করেছে। কিন্তু সে এই সম্পর্কে কিছুই বলেনি। সে রুহিয়ার হাসিমুখ দেখে ভেবেছিল জয়ার কাহিনীর সমাপ্তি ঘটেছে। কিন্তু এই কাহিনীর নতুন শুরু হবে তা কেউই ভাবতে পারেনি। নিশীথ আর যাই হোক, নিজের সন্তানকে খুন করার মতো জঘন্য কাজ করতে পারবে না। এবং সেই অপবাদ মেনেও নিবে না। তাই বিরক্ত হলো নিশীথ, ‘ওহ রুহি! কি শুরু করেছো? জানোই তো আমি ওকে এড়িয়ে চলেছি, ওর কাছে যাইনি। তারপরও কি বলছো!’

– ভুল কি বলেছি বল? তোর মতো বিশ্বাসঘাতকের সাথে আমি থাকবো না। ডিভোর্স দিব তোকে।

ক্রোধ সংবরণ করা সম্ভব হলো না নিশীথের। শীতল কণ্ঠে সে বললো, ‘আরেকবার বলো তো কথাটা।’

– আরেকবার কি বলবো হ্যাঁ? হাজারবার বলবো। তুই ডিভোর্স না দিলে আমি দিব।
– রুহি, বেশি বেশি করছো না তুমি?
– তুই কি বুঝবি? তুই তো নতুন পেয়েছিস। আমি যে হারিয়েছি!

রাগ সামলানো গেল না। বলে ফেললো নিশীথ, ‘ডিভোর্স দিয়ে কোথায় যাবে তুমি? মা হতে পারবে না তুমি। কোন পুরুষ তোমাকে নিবে বলো? আগাছা তুমি! স্রেফ আগাছা!’

ভূমিকম্পের পর বিধ্বস্ত শহর যেমন নিস্তব্ধ রূপ নেয়, রুহিয়া ঠিক তেমন করেই স্তব্ধ চিত্তে দাঁড়িয়ে থাকলো। এক মুহূর্তের জন্য যেন তার সকল তেজ, শক্তি কেড়ে নিয়েছে কেউ। অস্ফুট স্বরে সে বললো, ‘কি?’

সম্বিৎ ফিরে পেলো নিশীথ। ভুল করে ফেলেছে সে। প্রথমত রুহিয়া এখন নাজুক অবস্থায়, দ্বিতীয়ত রুহিয়ার মানসিক চাপের উপর আরো বড় চাপ দেয়া অনুচিত হয়েছে। সে এবার কোমল সুরে বললো, ‘কিছু না।’

রুহিয়া উদ্ভ্রান্তের মতো পেটে হাত রেখে বললো, ‘কি বলেছো তুমি? আমার এখানে কেউ নেই!’

– রুহিয়া, আমাদের সুন্দর দিন আসবে। তুমি এমন করো না।

রুহিয়া বারবার বলছে, ‘এখানে কেউ নেই? কেউ না! আমার এখানে কেউ নেই? আমি একা নিশীথ? আমার মেয়েটা কই? ও আমার সব নিয়ে গেল কেন?’

নিশীথ এগিয়ে আসলে রুহিয়া চিৎকার করে থামিয়ে দিলো তাকে। বিড়বিড় করতে করতে দ্রুত হেটে চলে গেল সে। অন্য ঘরে গিয়ে দরজা আটকে উন্মাদের মতো বলতে থাকলো, ‘কি হয়েছে আমার? আমার কেউ নেই কেন! এখানে কেউ নেই!’

দরজা ধাক্কাচ্ছে নিশীথ, ‘রুহি, শান্ত হও। আমাদের সুন্দর দিন আসবে।’

রুহিয়া চিৎকার করে কাঁদছে। দরজার এপাশে কাঁদছে নিশীথ। তাদের নিজেদের করা কৃতকর্মের স্বাদ তাদেরকেই পেতে হচ্ছে। আফসোস! যদি তারা জানতো আজকের এই ফলাফল পরকালে কত গুন বেশি রূপে প্রকাশ পাবে।

________________

ঘড়িতে রাত বারোটা বাজার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। পুরোনো দিনের ঘড়িগুলোর মতো এই ঘড়িটা দিনে দুবার ঘন্টা বাজায়। রুহিয়া এন্টিকের দোকান থেকে ঘড়িটা এনেছে শখ করে। আশ্চর্যের বিষয়, ঘড়ির ব্যাটারি এখনো সচল। নিশ্চুপ ঘরে আওয়াজটা একটু বেশিই প্রতিধ্বনি করলো। দরজার ধার ঘেঁষে বসে পড়া নিশীথের ঘুম ছুটে গেল আওয়াজে।

দরজা খুলেছে রুহিয়া। নিশীথ দরজায় হেলান দিয়ে বসে থাকায় ভার সামলাতে না পেরে পরে গেল। রুহিয়ার সেদিকে ভ্রূক্ষেপ নেই। নিশীথের উপর দিয়ে পা চালিয়ে সে নিজের ঘরে চলে গেল। নিশীথ দ্রুত উঠে ঘরে গিয়ে দেখলো, রুহিয়া বিছানায় উল্টো মুখ হয়ে শুয়ে আছে। সে সবকিছু স্বাভাবিক করতে বলে উঠলো, ‘রুহিয়া, মা ভাত রান্না করে রেখে গেছেন। তুমি না খেয়ে ঘুমাবে না।’

রুহিয়ার কোনো উত্তর নেই। নিশীথ আর কিছু বলার সাহস পেলো না। এমনিতেই বিশ্রী একটা কান্ড ঘটে গিয়েছে, সেটা আর বাড়ানোর দরকার নেই। রুহিয়াকে মনোবিজ্ঞানীর কাছে নিয়ে যেতে হবে। এতো রাতে বন্ধু রেহানকে ফোন করাটা সমীচীন মনে হলো না নিশীথের। রেহান অল্প বয়সেই মনোবিজ্ঞানের উপর ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। নিশীথ কাল রুহিয়াকে যেভাবেই হোক নিয়ে যাবে।

পরেরদিন সকালে নিশীথ নিজ হাতে নাস্তা তৈরি করলো। রুহিয়াকে ডেকে বললো, ‘মুখ ধুয়ে নাও। নাস্তা খেতে হবে।’

রুহিয়ার সামনে নাস্তার ট্রে রেখে নিশীথ ফোন নিয়ে ড্রইং রুমে গেল। প্রথমেই সে বন্ধু রেহানকে ফোন করলো। দুই একবার রিং হতেই ফোনটা ধরলো রেহান।

– আসসালামু আলাইকুম।
– দোস্ত রেহান? আমি নিশীথ বলছি। কেমন আছিস?

সালামের উত্তর দেয়া ওয়াজিব। অথচ নিশীথের সেই খেয়াল নেই। তবে রেহান খুব সুন্দর করে বললো, ‘আরে দোস্ত! কি অবস্থা? আমি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।’

– আমি ভালো নেই রে।

বন্ধুর কাছে নিজের পরিস্থিতি ব্যক্ত করতে গিয়ে নিঃশব্দে অশ্রু ঝরালো নিশীথ। রেহান চিন্তিত ভঙ্গিতে বললো, ‘তোর ভাগ্য ভালো যে আমি আজকেই জাপান থেকে ফিরেছি। আজ তো দেখা করতে পারবো না রে। কাল আসিস ইন শা আল্লাহ। আর বাসায় আত্মীয় স্বজন এনে রাখ। ভাবীকে সবসময় ব্যস্ত রাখবি যেন মনটা অন্যদিকে মনোযোগী হয়। কাল বিকাল চারটার দিকে আসিস।’

– কিন্তু সমস্যা হলো রুহিয়া যদি রাজি না হয়?
– ভাবীকে কি আমার চেম্বারে আনবি নাকি? আমি তো বাসায় আসতে বলছি। আগামী এক সপ্তাহ আমার চেম্বারে যাওয়া হবে না। আর তুই আমার বন্ধু মানুষ। বাসায় না এসে চেম্বারে যাবি কেন? ভাবীকে নিয়ে আমার বাসায় বেড়াতে আসবি।
– আচ্ছা দোস্ত, অনেক অনেক ধন্যবাদ।
– ঠিকাছে, ভাবীর কাছে যা। খেয়াল রাখিস কিন্তু। এ সময় আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যায়।

কথোপকথন শেষে রুহিয়ার কাছে গেল নিশীথ। নাস্তা খেয়ে বাটি বিছানার এক পাশে রেখে শুয়ে আছে রুহিয়া। নিশীথ তার কাছে গিয়ে বললো, ‘ওষুধ খেতে হবে যে, একটু উঠে বসো রুহি।’

ওষুধ খেয়ে রুহিয়া আবার শুয়ে পড়লে নিশীথ তার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো, ‘শরীর খারাপ লাগছে?’

নিশীথের হাত ছুঁড়ে তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো রুহিয়া। গায়ে কাঁথা জড়িয়ে শুয়ে পড়লো সে। নিশীথ হতভম্ব হয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলো। সে বুঝতে পেরেছে, রুহিয়া তার সঙ্গ নিতে চায় না। রুহিয়ার মানসিক অবস্থা বুঝে সে কিছু না বলে স্বপ্না ফুপিকে ফোন করলো। অনুনয় বিনয় আর অনুরোধ করে ফুপিকে আজকেই আসতে বললো সে। স্বপ্না অবশ্য অমায়িক মানুষ। নিশীথের সাথে অন্যদের সম্পর্ক ভালো না হলেও তিনি স্নেহ করেন। অন্যদের সাথে তাল মিলিয়ে চলেন না।

দুপুর হলে রুহিয়া নিজের মতো খাবার খেয়ে আবার শুয়ে পড়লো। নিশীথ বুঝতে পারলো রুহিয়ার ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে ঘুম গাঢ় হচ্ছে। তবে সকালে নিশীথকে ধাক্কা দেয়ার পর থেকে সে রুহিয়ার সাথে ভাব জমানোর চেষ্টায় জড়াচ্ছে না। অন্তত ফুপি না আসা পর্যন্ত তাকে কোনো ঝামেলা ছাড়া চলতে হবে।

স্বপ্না ফুপি এলেন বিকেল বেলায়। এ সময় ড্রইং রুমে সোফায় বসে একটু ঘুমিয়ে পড়েছিল নিশীথ। কলিং বেলের আওয়াজে সে উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলো। ফুপিকে জড়িয়ে ধরে বললো, ‘একা এসেছো নাকি? আমিই গিয়ে আনতাম কিন্তু তোমার বৌমার অবস্থা ভালো না বলে….’

– আরে না! আবির পৌঁছে দিয়ে গেল।
– তাহলে আবির উপরে এলো না কেন? নিচ থেকেই চলে গিয়েছে?

বিষয়টা শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো চাপা দিতেই স্বপ্না বললেন, ‘ওর আসার সময় নেই রে বাবা। ও জানে যে তুই ওকে উপরে আসতে বলবি, খেতে বলবি। এজন্যই আসেনি। এদিক দিয়ে আবার কি যেন কাজ আছে ওর। ওহ, এসব কথা রাখ। বৌমা কোথায়?’

বলতে বলতে নিশীথের ঘরের দিকে এগিয়ে গেলেন স্বপ্না। নিশীথ খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছে আবির ইচ্ছে করে আসেনি। নিশীথ তেমন ছেলেই না যে মেহমান আপ্যায়নে ব্যস্ত হয়ে পড়বে। আবির আসলে বড়জোর পানি আর বিস্কিট সাধতো সে। কিন্তু আবির যে তাকে বিশেষ কারণে পছন্দ করে না সেটা সে জানে। বিশেষ কারণটা তার স্বপ্না ফুপি। এই ফুপিকে নিশীথ খুব ভালোবাসে যেটা অন্য কারো ক্ষেত্রে তার নেই। তাই যেকোনো ঝামেলায় ফুপির শরণাপন্ন হতে দ্বিধা বোধ করে না সে। এটাই ফুপির তিন ছেলে মেয়ের অপছন্দের বিষয়।

স্বপ্না রুহিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে মায়া মাখা কণ্ঠে বললেন, ‘ইশ রে! মেয়েটার শরীরের কি অবস্থা হয়েছে। তুই এই সপ্তাহটা ওকে কি যত্ন করলি রে নিশু? মেয়েটার হাড় দেখা যাচ্ছে।’

রুহিয়া জেগে গিয়েছে। স্বপ্নাকে দেখে সে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলো। যেন সে বুঝতেই পারছে না সে কোথায় আছে। স্বপ্না বেশ চিন্তিত হলেন, ‘নাহ! এভাবে কি জীবন চলে? এই যে মা, তুমি যা কষ্ট পেয়েছো সেটা আমি কেন? নিশুও উপলব্ধি করতে পারবে না। কিন্তু মা, এমন করে চললে বেঁচে থাকার কোনো অর্থ আছে বলো? মানুষ প্রতিনিয়ত ভাঙে, প্রতিনিয়ত গড়ে নিজেকে। তোমাকেও গড়তে হবে।’

রুহিয়া আবার চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকলো। স্বপ্না বুঝলেন রুহিয়া তার কথাগুলো শুনতে আগ্রহী না। স্বপ্না উঠে দাঁড়িয়ে নিশীথকে নিয়ে ড্রইং রুমে গেলেন। মনোবিজ্ঞানীর কাছে যাওয়া, কোথাও ঘুরতে যাওয়া, এসব নিয়ে আলোচনায় বসে গেলেন। রুহিয়ার যা অবস্থা, তাতে সে ধুকে ধুকে মারা যাবে।

স্বপ্না বা নিশীথ, কেউই খেয়াল করলো না। রুহিয়া ইতিমধ্যে রান্নাঘরে গিয়ে গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।

________________

চলবে ইন শা আল্লাহ….