নিয়তি পর্ব-৭+৮

0
274

#নিয়তি
লেখনীতে-বর্ষা ইসলাম

৭.

ঘড়িতে ১.১৫
বর্ষনমুখর রাত। আষাঢ়ের চোখ অন্ধকার করা বৃষ্টি। কানের কাছে ঝুম বৃষ্টির সুরের আনাগোনা। বৃষ্টির ঝাপটায় ভিজে উঠেছে জানালার কার্নিশ,শিরশিরানি বাতাসে হুরহুর করে উড়ছে সাদা রঙ্গের পর্দা।

দুহাত আড়াআড়ি করে বুকে চেপে অচেতন হয়ে গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে শেহরীন। বর্ষার ঠান্ডা হাওয়ায় শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে বারবার। জ্বরে শরীর নাস্তানাবুদ। পায়ের দু আঙুলের সাহায্যে কাঁথা টা গায়ের উপর টেনে নিতে গিয়েও নিতে পারলোনা। জ্বরের কাছে শরীরের শক্তি হার মেনে গেছে।কয়েকদফা নিজের সাথে যুদ্ধ করেও ব্যর্থ হলো সে। মুহুর্তেই নিজের শরীরে উষ্ণতা অনুভব করে শেহরীন।কাঁথা টেনে হাত দুটো তখন শেহরীনের গলার কাছে থেমেছে।নিমিষেই হাত দুটো কে নিজের আয়ত্তে নিয়ে নেয়। জ্বরের ঘোরে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠে,

-একটু বসবেন আমার পাশে? শরীরের তাপমাত্রা বেড়েছে। চুল গুলোতে একটু বিলি কেটে দিবেন?

-শেহরীনের এমন কথায় আবেশ মোটেও বিরক্ত কিংবা অবাক হলো না। স্বাভাবিক হয়েই বসলো শেহরীনের পাশে। শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,

-এমন জ্বর বাঁধালে কি করে? একা একা কাতরাচ্ছো! কাউকে বলেছো?

-শেহরীন কোনো জবাব দিলোনা আবেশের কথার। ঢুলুঢুলু চোখে চেয়ে রইলো কিছুক্ষণ। আবেশ শেহরীনের থেকে হাত টা ছাড়িয়ে নেয়। ড্রয়ার থেকে কিছু প্যাকেট বের করে বলে

-‘এখানে কিছু জিনিস রাখা আছে তোমার জন্য। দেখে নিও।সকালে সময় পায়নি তাই শুধু মেহরুবার জন্য এনেছিলাম।এখন তোমার জন্য আনলাম। এগুলো দিতে এসেই দেখলাম জ্বরে পড়ে আছো।এভাবে কিভাবে হবে শেহরীন? নিজের যত্ন নিতে হবে না?

-‘শেহরীন তখনো চুপ।শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়েই রইলো।আবেশ আবারো গিয়ে বসে শেহরীনের শিঁথানে। ডান হাত টা শেহরীনের চুলে গুজে দিয়ে বিলি কাটতে কাটতে বলে উঠে,

-‘জানো শেহরীন! তোমাকে বিয়ে করার পেছনে আমার এতোটুকু মত ছিলো না।

শেহরীন এবার অবাক হয়। নড়েচড়ে উঠে। উৎসুক দুটি চোখ নিয়ে জিজ্ঞেস করে তাহলে
কেনো করলেন বিয়ে? বিয়ের আগে তো আমার সাথে বেশ কয়েকবার কথ বলেছেন। দেখা করেছেন। তখন কেনো বলেন নি? আমার কি দোষ ছিলো?

আবেশ খেয়াল করে শেহরীন উত্তেজিত হয়ে গেছে। জ্বরের তাপে থরথর করে কাঁপছে। আবেশ নিজেকে তটস্থ করে। দু হাতে শেহরীন কে ধরে পেছনে বালিশ চাপা দিয়ে শান্ত হয়ে বিছানায় বসায়। টেবিল থেকে পানির গ্লাস টা নিয়ে নিজ হাতে পানি পান করায়। এবার নিজে গিয়ে বসে শেহরীনের সামনে।শেহরীনের এক হাত নিজের দু হাতের মধ্যে মুষ্টি বদ্ধ করে শান্ত গলায় বলতে থাকে,

-‘একটু শান্ত হয় শেহরীন। আমি জানি তুমি অনেক বুদ্ধিমতি।তোমাকে বুঝালে তুমি ঠিকই বুঝবে। একটু শান্ত হয়ে আমার কথা গুলো শুনো। একটু সময় দেও আমাকে।

আবেশের এমন আবদারে মন গলে যায় শেহরীনের। সব রাগ যেনো ভেসে গেলো আষাঢ়ের মুখরিত বর্ষনে।মায়াভরা দুটো চোখ নিয়ে তাকায় আবেশের দিকে।চোখ দিয়ে আশস্ত করে অনুমতি দেয় তাকে কথা বলার।আবেশ মৃদু হাসে।সোজা হয়ে শুয়ে পড়ে শেহরীনের কোলে।রচনা করে এক সুনির্দিষ্ট গল্পকাহিনী।

-‘তখনও বর্ষাকাল।রাতভর শ্রাবনের চোখ ধাঁধানো বৃষ্টি।টকটকে লাল রংয়ের গাড়িটা থেকে দুজন মাতাল মিলে পাঁজা কোলে করে নামিয়ে নেয় এক অচেতন টলটলে যুবক কে।মাথার উপর এক আকাশ বৃষ্টি। পুরো শরীর চোখের পলকেই ভিজে চুবুচুবু হয়ে গেলো।এক প্রকার টেনে হিঁচড়ে সেই অচেতন যুবক কে ভেতরে প্রবেশ করা হয়।বিশাল আকৃতির বাড়ি।খোপ খোপ ঘর।প্রতিটা ঘরের দরজায় দাড়ানো পরিপাটি সুন্দরী নারী।তারা যেনো ইচ্ছে করেই নিজেদের এতো পরিপাটি করে রেখেছে।

সদর দরজার পাশেই বড়সড় একটা আলিশান সোফা।সেই সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে বসে পান চিবোচ্ছে এক দানবীয় আকৃতির নারী।মোটা সোটা বিশাল দেহের ফর্সা নারীটির কপালে লাল রংয়ের লম্বা তীলক।পড়নে কালো রংয়ের গ্রাউন।চোখে মুখে কি বিদঘুটে হাসি।

-‘নাম কি ওর?

-‘আজ্ঞে মেডাম জি,ওর নাম আবেশ!
(মাতালদের একজন বলে উঠে।)

-‘বহুত সুন্দর নাম।

-‘হ্যাঁ জি।বহুত পয়সাওয়ালাও বটে।একে কোথায় রাখবো মেডাম জি?

মুখ থেকে পানের পিচকিরি পাত্রে ফেলে সোফা থেকে উঠে আসে মহুয়া দেবী।যাকে সবাই মেডাম জি বলেই সম্বোধন করে।লম্বা লম্বা পায়ে এসে দাড়ায় অবচেতন আবেশের সামনে।এক পলক মুখ টা ভালো করে দেখে নেয়।চোখের ইশারায় বুঝিয়ে দেয় দু তলার শেষের ঘরটায় নিয়ে যেতে।

মহুয়া দেবীর ইশারায় কালু আর হাবিল মাতাল দুজন মিলে আবেশ কে রেখে আসে দুতলার ঘরে।

রাতের দ্বিতীয় প্রহর।তখনো রাতের আকাশে ঝুম বৃষ্টি।পৃথিবী জুড়ে রাশি রাশি জলের খেলা।বিছানায় অবচেতন যুবক।জানালার পাশে দাঁড়িয়ে একবার বিছানায়, একবার ঘড়ির দিকে, আরেকবার বিছানায় পড়ে থাকা আবেশ কে পরপর দেখে যাচ্ছে ছিপছিপে গড়নের শ্যামবর্ণা ষোড়শী মায়াবী এক রমনী।রাতের অন্ধকারে নিজের অভিশপ্ত জীবন নিয়ে ভাবতে ভাবতেই অপেক্ষার অবসান হলো।আবেশের জ্ঞান ফিরলো।

মাথা টা ভীষণ ভার হয়ে আছে।ঝিমঝিম করছে।অনেক চেষ্টা করেও কোনো কিছুই মনে আনতে পারছেনা আবেশ।কোথায় আছে সেটাও তার অজানা।সব কিছু কেমন এলোমেলো লাগছে।দু হাতে মাথা চেপে উঠে বসে বিছানায়।ক্লান্ত ভরা চোখ দুটো মেলে ধরতেই নজরে আসে সামনে থাকা রমনীটির অবয়ব।আবেশ ভুত দেখার মতো চমকে উঠে।ষষ্ঠ ইন্দ্রীয় জাগ্রত করে বুঝতে চেষ্টা করে সে কোথায় আছে!কিন্তুু কোনো কিছুই সে বুঝতে পারেনা।ভাবনার চড়াই উৎরাই পেরিয়ে অস্ফুট স্বরে জিজ্ঞেস করেই ফেলে,

-‘কে আপনি?

আবেশের কথায় মৃদু হাসে রমনী।হাসি হাসি মুখ নিয়েই বলে উঠে,

-‘আমি মেহরুবা।

এমন কোনো নাম আবেশ এর আগে শুনেছে কিনা তার মনে আসছেনা।আকাশসম বিস্ময় নিয়ে আবারো জিজ্ঞেস করে

-‘আমি এখানে কেনো?এটা কি আপনার বাসা?

মেহরুবা এবার যারপর নাই অবাক হয়ে যায়।জানালার কাছ থেকে সরে এসে বসে আবেশের পাশে।মুখে উপহাসের হাসি নিয়ে বলে,

-‘ন্যাকা!!এখানে মানুষ কেনো আসে জানেন না বুঝি?আপনারা পুরুষ মানুষ রা আর কত ঢং করতে পারেন বলেন তো?

মেহরুবার এমন তীর ছোড়া কথায় আবেশের মেজাজ বিগড়ে যায়।রাগের পারদ ধাই ধাই করে বাড়তে থাকে।গগন বিদারি এক চিৎকার দিয়ে বলে উঠে,

-‘ইউ জাস্ট স্যাটাপ!!টেল মি নাও হোয়্যার আই এম?

আবেশের এমন চিৎকারে হতভম্ব হয়ে যায় মেহরুবা।ভয়ে বুক কেঁপে উঠে।শরীর থরথর করে কাঁপছে। কোনো মতে নিজেকে সামলে নিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠে,

-‘এটা নিষিদ্ধ পল্লী।পতিতালয় -‘

চলবে,,,,,,

#নিয়তি
লেখনীতে-বর্ষা ইসলাম

৮.

-দেখে তো বেশ ভালো ঘরের মেয়েই মনে হচ্ছে। এই পেশায় এলে কেনো?

-আমার নিয়তি’

ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাড়িয়ে শার্টের কলার টা ঠিক করে নিয়ে মেহরুবার কথায় পেছন ফিরে তাকায় আবেশ। হাতের ঘড়িটা নাড়াচাড়া করতে করতে গিয়ে বসে বিছানায়। তার একটু দুরেই বসে আছে মেহরুবা। আবেশ খেয়াল করে এতোক্ষণের হাস্যজ্বল মুখটা কেমন শুকিয়ে গেছে। মলিনতা বিরাজ করছে। আবেশ একটু নড়েচড়ে বসে। কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করে,

-তা এমন নিয়তি কি করে হলো?

মেহরুবা নিষ্পাপ দুটি চোখ নিয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকায় আবেশের দিকে। চোখে মুখে আকাশসম বিষন্নতা। চোখে জল টলমল করে উঠে। কোনো কিছু বলার আগেই ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে মেহরুবা।

আবেশ হতভম্ব হয়ে যায়।কি বলবে বুঝে উঠতে পারে না। তবুও নিজেকে ইতস্থ করে খুব রয়েসয়ে বলে উঠে,

-‘দেখো আমি খুব সম্মানি ঘরের ছেলে। এডুকেটেড ফ্যামিলি।আমি তোমাকে ভুলেও স্পর্শ করতে যাবো না। কালু আর হাবিল মিলে এমনটা করেছে। ড্রিংকস এ স্লিপিং পিল মিশিয়ে দিয়ে অচেতন করে আমাকে এখানে এনেছে। সব ই বুঝতে পারছি এখন।আর এটাও বুঝতে পারছি তাদের উদ্দেশ্য আমার থেকে মোটা অংকের টাকা খসানো। আর তারা করবেও তাই।

তোমার জন্য আমার মায়া হচ্ছে। এতোটুকু একটা মেয়ে এই পাপ পূরীতে জায়গা করে নিয়েছো। কেনো? আমার জানতে ইচ্ছে করছে।রাত শেষ হতে এখনো অনকে সময় বাকী। তুমি নির্দ্বিধায় সব বলতে পারো আমাকে।যদি প্রয়োজন মনে করো!

-‘আবেশের কথায় মেহরুবা শান্ত হয়। কি যেনো ভেবে চোখ মুখ মুছে নেয়। দু হাঁটু বিছানায় ফেলে গুটি শুটি হয়ে বসে পড়ে আবেশের সামনে।শান্ত গলায় আস্তে আস্তে বলতে থাকে,

-‘আমি মেহরুবা। পুরো নাম মুনতাহিনা নুর মেহরুবা। মাধবপুরে অজোপাড়া গায়ে আমার বাস। মা মারা যাওয়ার সুবাদে ঘরে সৎ মা। সৎ মায়ের এক মেয়ে দুই ছেলে।ভাই বোনদের মধ্যে আমিই বড় সবার। আমার যখন মারা যায় আমার বয়স তখন তিন বছর।সেই তিন বছর বয়স থেকে আমি দেখেছি নিষ্ঠুরতা কাকে বলে।নির্মম নিয়তি কাকে বলে।

-‘সারাদিন ঘরের কাজ কর্ম খাটিয়ে দু বেলা ভাত আমার মুখে পড়তোনা। রাতে সবাই খেয়ে খাবার বেশী হলে খেতাম নয়তো পেট ভর্তি পানি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়তাম। সকালে আবার কাজে লেগে যেতাম।

-তোমার বাবা কিছু বলতেন না?

-‘আর বাবা! লোকে বলে না যে মা মরলে বাপ হয় তালোই।আমার বেলাতেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। বাবা সব সময় আমার অন্যান্য ভাইবোন দের নিয়ে পড়ে থাকে।তারা যা বলে তাই শোনে।তাদের কথায় আমাকে মারধর করে।তখন থেকে আমি ধরেই নিয়েছি আমার এ পৃথিবীতে কেউ নেই।মাঝে মাঝে রাতে উঠে বাইরে বসে কান্না করতাম।আর মা মা বলে ডাকতাম।

-‘রাত বিরাতে বাইরে যাওয়াটা চোখ এড়ায় না আমার সৎ মায়ের।তিনি তখন আমার বাবার কানে ঢুকিয়ে দেয় আমি কোনো ছেলের সাথে নষ্টামি করতেই মাঝরাতে বাইরে যাই।আমার বাবাও তাই বিশ্বাস করে নেয়।

-‘সেদিন রাতে বাবা আমাকে প্রচুর মারে।আমি কিছু বলতে পারিনি।শুধু হাউমাউ করে কান্না করেছি।তার ঠিক দুই দিন পর হুটহাট আমার বিয়ে ঠিক হয়ে যায়।আমার সৎ মা ই বিয়ের বন্দোবস্ত করেন।এতো কিছুর পরও আমি অন্তত ভেবেছিলাম বাবা বিয়ের মতো এমন একটা সিদ্ধান্ত তিনি খুব রয়েসয়ে নিবেন।খুঁজে দেখবেন।কিন্তুু আমার বাবা তা করলেন না।মা যা করলেন তার সিদ্ধান্তেই মত দিয়ে দিলেন।

-‘চলে গেলো কিছুদিন।বিয়ের দিন ঘনিয়ে এলো।এর মাঝে কানাঘোষায় আমি জানতে পারলাম যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করা হয়েছে সে খুব উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলে।দেশে বিদেশে তাদের বিজনেস।দেখতেও খুব সুন্দর।শহরে থাকে।

-‘এতো কিছু দেখে আমার মনে অশান্তির ঝড় শুরু হলো।এতো ভালো পরিবারের ছেলে আমার মতো অশিক্ষিত একটা মেয়েকে বিয়ে করতে এই অজোপাড়া গাঁয়ে আসবে!পাড়া প্রতিবেশীদের মুখে তখন একটাই কথা

-‘মুকতার ভাইয়ের বড় মেয়ের রাজ কপাল।নয়তো এমন বর আর ঘর কি কেউ পায়!!তাদের মুখে এমন কথা শুনে তখন নিজেকে শান্ত্বনা দিতে লাগলাম।ভাবলাম হয়তো আল্লাহ এই নরক থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্যই এমন ভালো ঘর নিয়ে সম্মন্ধ পাঠিয়েছেন।আল্লাহ তো উত্তম পরিকল্পনা কারী।

-‘বিয়ে হয়ে গেলো।বিদায় নেওয়ার সময় গিয়ে দাঁড়ালাম বাবার সামনে।বাবা তখনো ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে।শুনেছিলাম মেয়ের বিয়ে হয়ে গেলে বাবাদের বুকে কলিজা ছিঁড়ে যাওয়ার যন্ত্রণা হয়।তাদের আত্মার কাঁপন সৃষ্টি হয়।বুক ভেঙে কান্না আসে।কিন্তুু আমার বাবার চোখে মুখে এমন কোনো ছাপ আমি পাইনি।নিজেকে আর সামলাতে পারিনি।বাবাকে জড়িয়ে হাউমাউ করে কেঁদে উঠেছিলাম।মন বলছিলো এবার বাবা হতো আমার মাথায় হাত রেখে বলবে,

-‘মেহরুবা!মা আমার কাঁদিস না।দু দিন পরই তোকে গিয়ে নিয়ে আসবো আবার।অনেক সুখী হবি।দোয়া রইলো আমার।

কিন্তুু আমার পোড়া কপাল বাবা একটু নড়েচড়েও উঠলো না।আমি যেনো পাথর হতে লাগলাম।কিছুক্ষণ পর খেয়াল করলাম কেউ একজন আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে গাড়িতে তুলছে।অনুভূতি জাগ্রত করে এতোটুকু বুঝতে পেরেছিলাম উনি আর কেউ নয়।আমার সদ্য বিবাহিত স্বামী।

‘-রাত তখন ১১ টা।শো শো করে বাতাসের সাথে ছুটে চলছে সাদা রঙের সুন্দর সাজানো গাড়িটি।ঘন্টা দুয়েক পর গন্তব্যে পৌঁছালো।বিশাল বড় বহু তলা বিশিষ্ট বাড়ি।আমি জানালা দিয়ে একবার উঁকি দিলাম বাইরের দিকে।কাউকে দেখতে পেলাম না।বাড়িটি দেখে কোনো সাধারণ কিছুই মনে হচ্ছে।বিয়ের কোনো আমেজ, আহ্লাদ আমি দেখতে পারলাম না।পুরো বাড়ি অন্ধকার।আমার তথাকথিত স্বামী আমাকে স্বাভাবিক ভাবেই গাড়ি থেকে নামালেন।দরজা খোলায় ছিলো।উনার ইশারায় আমি তার পেছন পেছন ভেতরে প্রবেশ করলাম।ড্রয়িংরুমে আলো জ্বলে উঠলো।অথচ চারপাশ নিরব।কোথাও কেউ নেই।আমি পেছন ফিরে সদর দরজার দিকে তাকাতেই আরো ঘাবড়ে যাই।গাড়ি তে যে দুজন মহিলা সহ আরো কিছু লোক ছিলো তারা কেউ নেই।গাড়িটাও নেই।

-‘কিছু বোঝে উঠার আগেই আমার স্বামী বলে উঠলেন সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে যা।

আমি অবাক হলাম।এই প্রথম উনি আমার সাথে কথা বললেন।তাও এমন ভাবে।আমি সাহস নিয়ে চোখ তুলে তাকালাম।সুস্থ সবল একটা সুন্দর মানুষ আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।মুখ ভর্তি চাপ দাঁড়ি।গা ধবধবে ফর্সা।কালো রংয়ের সেরোয়ানি তে কি অদ্ভুত সুন্দর লাগছে দেখতে!

আমার জানতে ইচ্ছে হলো।জিজ্ঞেস করতে মন চাইলো এ বাড়িতে কি আর কেউ থাকেনা!কিন্তুু তার রাগী চেহারার দিকে তাকিয়ে সে সাহস আমার হলোনা।আমি মাথা নিচু করে থমথমে পায়ে তার দেখানো রুমটায় চলে গেলাম।বিছানায় গিয়ে বসতেই মাথা টা কেমন ঝিমঝিম করতে লাগলো।এতোটা পথ জার্নি করেছি তাই হয়তো।আর কিছু না ভেবে বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিতেই ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেলাম।

যখন আমার ঘুম ভাঙলো তখন আমি অন্য এক নগরীতে।আমার হাত পা বাঁধা।চারিদিকে রংচং করা পরিপাটি নারী।পিটপিট করে চোখ মেলতেই চোখে পড়ে মহুয়া দেবীর দানবীয় মুখশ্রী। আমি আৎকে উঠি।থরথর করে কাঁপতে থাকি।কাঁপা কাঁপা গলায় অস্ফুট স্বরে বেরিয়ে আসে

-‘আমি কোথায়?

আমার কথায় মহুয়া দেবী হো হো করে হেসে উঠে।কি বিশ্রী বিদঘুটে হাসি।উচ্চশব্দে হাসতে হাসতেই বলে উঠে,

-‘দিন পার হোক।রাত আসুক।তোর শরীরের নেশায় যখন পুরুষ মানুষ ডুবে মরবে তখন বুঝবি তুই কোথায়!!

কথা টা বলে আরো জোরে জোরে হাসতে লাগলো সে।হাসতে লাগলো তার আশপাশে দাঁড়িয়ে থাকা গোটা কয়েক নারীরুপী মানবী।আমি ছটফট করছি অন্তর যন্ত্রনায়।নিদারুন ভাবে শুধু অসহায়ের মতো দেখে যাচ্ছি

-‘এমনও নারী জাতি আছে দুনিয়াতে!

চলবে,,,,,