নীল কণ্ঠ পর্ব-০২

0
422

#নীল_কণ্ঠ💜
#পর্ব-০২
#সাদিয়া

–কি হচ্ছে এখানে?

–দেখো কণ্ঠ এখানে তোমার কোনো কাজ নেই। তুমি যাও এখান থেকে।

–অবশ্যই যাবো তাবে এই ব’দ’লকে সাথে করে নিয়ে যাবো।

নীল বেশ বুঝতে পেরেছিলো কণ্ঠ নামের তেজি মেয়েটা তাকেই বদ’ল বলে সম্মোধন করেছে। এতে নীল যেন কিছুটা অপমানিত হলো।

–দেখো কণ্ঠ এটা আমাদের ব্যপার তুমি যাও।

–আচ্ছা। ওই ব’লদ চলো।
নীলকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বললো কণ্ঠ।

–ও কেন যাবে? ওর কাজ আছে এখানে।

–আচ্ছা তা কি কাজ আছে ওপর শুনি।

–আমাদের ব্যপারে তুমি সবসময় নাক কেন গলাতে আসো?

–আমার স্কুলে আমার চোখের সামনে যখন কেউ অনৈ’তিক কাজ করে কাউকে বিরক্ত করে তাহলে আমি কিভাবে চুপ থাকি বলো তো সামি ভাইয়া? জানো তো আমি আবার একটু মাদার তেরেসা টাইপ মানুষ।
বলেই ডান চোখে একটা টিপ্পনী কাটলো কণ্ঠ।
–শুনো সামি ভাইয়া তোমাকে আমি শেষ বারের মতো বলছি ভালো হয়ে যাও। নয়তো আমি যেটা করবো সেটা তোমার একদম ভালো লাগবে না। তাই আবারো বলছি ভালো হয়ে যাও। ভালো হতে পয়সা লাগে না। বুঝলে?
এবার নীলের দিকে তাকিয়ে বললো,
–এই ব’লদ আসো আমার সাথে।

নীল কোনো কথা না বলে কণ্ঠের সাথে চললো। এখানে দাঁড়িয়ে থাকা তার জন্য সুখকর নয় তা সে বুঝে গেছে। আগে আগে হাঁটছে কণ্ঠ আর তাকে ভদ্র ছেলের মতো অনুসরণ করছে নীল।

–নাম কি?
কণ্ঠের আচমকা প্রশ্নে ঘাবড়ে যায় নীল। সে ঘামছে। কণ্ঠ শত বিরক্তি নিয়ে নীলের দিকে তাকিয়ে আছে। এমন ছেলে তার মোটেও পছন্দ নয়। ছেলে হয়ে জন্মেছিস ভয় কেন পাবি? ভয় পাওয়া কি তোদের মানাায় নাকি? আজব!

–আমি শুধু নাম বলতে বলেছি কাউকে খু’ন করতে বলি নি যে তুমি এমন ঘাবড়ে যাচ্ছো। বি ইজি ম্যান।
নীল স্বাভাবিক হতে পারলো না। কণ্ঠ এবার নরম স্বরে জিজ্ঞেস করলো,
–নাম কি তোমার চান্দু?

–নীল।

–নীল? হলুদ কেন নয়?
কথাটা বলে কণ্ঠ পা থেকে মাথা অবধি একবার নীলকে স্ক্যান করলো। কণ্ঠের এমন দৃষ্টিতে নীল আরো ঘাবড়ে গেলো।
–উুম তোমার নাম নীল না হয়ে লাল হলে ভালো হতো। দেখো তোমার মুখটা কেমন লাল টমেটোর মতো হয়ে গেছে।

নীল কিছু বললো না। সে অবলা ছেলের মতো দাঁড়িয়ে রইলো।
–আচ্ছা বাদ দাও। কোন ক্লাস তুমি?

–ক্লাস এইট।

–আরে আমিও তো সেম ক্লাস। আমি তোকে তুমি করে বলছি। ওফ আমিও না কতো ফর্মালিটি করি। শোন চান্দু আজ থেকে তুই আবার ফ্রেন্ড। যেনতেন ফ্রেন্ড নয়। আজ থেকে তুই আমার বেস্টফ্রেন্ড। বুঝেছিস?

–আমি আপনার বেস্টফ্রেন্ড কেন হতে যাবো? আমি তো আপনাকে তিনিও না।

কণ্ঠ মুখ বাঁকালো।
–ওই আপনি আপনি কি করছিস? আমি কি তোর খালাম্মা লাগি নাকি। তুই করে বলবি। তুই ছাড়া অন্য কিছু বললেই মা’ইর। একেবারে কঠিন মা’ইর। মনে থাকবে? আর চিনিস না তো কি হয়েছে। আস্তে আস্তে চিনে যাবি। নো প্যা’রা। আর শোন একদম আপনি আপনি করবি না বলে দিলাম।
নীল ভয় পেলো। সে মাথাটা হালকা উপর নিচ করে বুঝালো তার মনে থাকবে। সে এখন থেকে কণ্ঠকে তুই করেই সম্মোধন করবে।

সেদিন থেকেই কণ্ঠ আছে নীলের জীবনে। একসাথে স্কুল, কলেজ অতঃপর ভার্সিটি। ভার্সিটি নিয়ে আবার আরেক ঝামেলা হয়েছিলো। নীল পড়ালেখায় ভালো ছিলো। অন্যদিকে কণ্ঠ তার ছন্নছাড়া স্বভাবের জন্য সবসময় টেনেটুনে পাশ করতো। স্বাভাবিকভাবেই নীলের পাবলিক ভার্সিটিতে হয়ে গেলো। কিন্তু কণ্ঠের হয় নি। তাকে বেসরকারিতে ভর্তি হতে হয়েছিলো। এখন কথা হলো তার নীলকে ছাড়া চলবে কি করে? সে তো ম্যানেজ করে নিবে। কিন্তু নীল? ও তো মানুষের সাথে মিশতে পারে না। তাহলে? আকাশ কুসুম চিন্তা করে কণ্ঠ নীলকে এক প্রকার বাধ্য করলো বেসরকারি ভার্সিটিতে ভর্তি হতে। ইতিহাসে নীল-ই মনে হয় একমাত্র ছাত্র যে কি না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েও বেসরকারি ভার্সিটিতে পড়াশোনা করেছে।

সোফার সামনে থাকা টি-টেবিলের সাথে বারি খেয়ে নীল অতীত থেকে বেরিয়ে আসলো। সে একবার কণ্ঠের দিকে তাকালো। নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে মেয়েটা। ঘুমের মধ্যে কতো শান্ত লাগছে দেখতে। এখন ওকে দেখে কেউ বলতে পারবে না জেগে থাকলে সে কতো ভয়া’নক হতে পারে। নীল কণ্ঠের দিকে তাকে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সোফায় গুটিশুটি মে’রে শুয়ে পড়লো। শুয়ার সাথে সাথেই ঘুমেরা এসে হা’মলা করলো। সারাদিনে তো তার উপর দিয়েও কম ধকল যায় নি।

🍁
দূর থেকে ভেসে আসা ফজরের আজানের মধুর শব্দে ঘুম হালকা হয়ে এলো কণ্ঠের। আড়মোড়া ভে’ঙে উঠে বসলো সে। বার দুয়েক চোখ কচলে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখতে পেলো সোফায় গুটিশুটি মে’রে শুয়ে থাকা নীলকে। নীলকে দেখতে অনেকটা বাচ্চার মতো লাগছে। নীলের স্বাভাবিক চরিত্রও অনেকটা বাচ্চার মতোই। ও অনেক ইমোশনাল একটা ছেলে। ও জীবনটা তেমন একটা প্র্যাকটিক্যালি চিন্তা করতে পারে না। ওর কাছে নিজের পরিবার আর পরিবারের ইমোশনটাই আগে। ও নিজের পরিবারকে অনেক ভালোবাসে। তাইতো মায়ের এক কথায় নিরাকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যায়। আর নিরা পালিয়ে যাওয়ায় বাবার কথায় শত অনিচ্ছা সত্ত্বেও কণ্ঠকে সে বিয়ে করে। কণ্ঠ নীলের দিকে কিয়ৎক্ষণ তাকিয়ে থেকে ওয়াশরুমে যায়। ফ্রেশ হয়ে ওজু করে এসে কণ্ঠ নীলকে ডাক দেয়।
–সোয়ামী! ওগো সোমায়ী ওঠুন। ফজরের আজান দিয়ে দিয়েছে ওঠুন এবার। নামাজ পড়তে হবে তো নাকি? উঠুন উঠুন।

কারো এমন আহ্লাদী ডাকে নীল ঘুমের ঘোরেরই ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো। নীলকে ঘুমের মধ্যে হাসতে দেখে ভ্রু কুঞ্চিত হলো কণ্ঠের।
–ওই ব’লদ না হেসে উঠ। তোর জন্য নামাজের সময় বসে নেই। উঠ বলছি।

কণ্ঠর ধমকে ধরফর করে উঠে বসে নীল। চোখের সামনে কণঠকে দেখতে পেয়ে ঘাবড়ে যায় সে।
–ত..তুই আমার রুমে কি করছিস?

লে! ছেলে বলে কি।

–আরে গা’ধা বিয়ে তোর সাথে হয়েছে তো তোর রুমেই থাকবো বাকি তোর ভাইয়ের রুমে থাকার কথা ইডি’য়েট।
নীল কিছুক্ষণ থম মে’রে বসে রইলো। আস্তে আস্তে তার কালকের সব ঘটনা মনে পড়লো। যখন মনে পড়লো এখন কণ্ঠ তার বউ তখনই যেন তার আবার কান্না পেয়ে গেলো।

–একদম কাঁদবি না বলে দিলাম আমি। এই তুই কি ছেলে বলতো? কথায় কথায় কোন ছেলে এত কান্না করে। এ নাকি আমার জামাই। ছিঃ আমি মানুষের সামনে মুখ দেখাবো কি করে। মান সম্মান কিচ্ছু থাকলো না আমার।

নীল হাবলার মতন তাকিয়ে আছে কণ্ঠের দিকে। নীলকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে কণ্ঠ নীলের পেশিবহুল বাহুতে জোরে একটা চিম’টি কাটলো।
–আউচ! কি করলি এটা?

–চিম’টি কাটলাম তোকে।

নীল হাত ঘসতে ঘসতে বললো,
–কিন্তু কেন?

–আজান কখন দিয়েছে আর তুই এখনো বসে আছিস। সময় কি তোর নানা হয় যে তোর জন্য বসে থাকবে। তারাতাড়ি ওজু করে আয়। আমি জায়নামাজ বিছিয়ে রাখছি।

নীল কোনো কথা না বলে ওয়াশরুমে চলে গেলো। ওজু করে বেরিয়ে এসে নীল অবাক হলো। কারণ খাটের উপর তার জন্য সাদা পাঞ্জাবি আর টুপি সুন্দর করে গুছিয়ে রাখা আছে। নীল বুঝলো এটা কণ্ঠের কাজ। কিন্তু ও কোথায়? রুমে তো নেই। কোথায় গেলো। নীলের ভাবনার মাঝেই বারান্দা থেকে কণ্ঠ রুমে আসলো। তারা দুজনে এক সাথে নামাজ আদায় করে নিলো। নামাজ পড়ে নীল ধপ করে খাটে শুয়ে পড়লো। কালকে রাতে সোফায় শুয়েছিলো সে। ঘুম বলতে হয় নি। সোফায় কি ঘুমানো যায় নাকি?
কণ্ঠ নীলকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওর ফোনটা বেজে উঠে। কণ্ঠ ফোনের দিকে তাকিয়ে নম্বরটা দেখে একবার নীলের দিকে তাকালো। অতঃপর ফোনটা রিসিভ করে বারান্দায় চলে এলো।

–হুম বলো।

–ম্যাম ওর জ্ঞান ফিরেছে।

–গুড। আমি দশটার দিকে আসছি। ওকে নজরে রেখো। আর শুনো আমি না আসা পর্যন্ত ওকে এক গ্লাস পানিও দিবা না।

–ওকে ম্যাম।

ফোনটা কেটে দিয়ে ঘুমন্ত নীলের দিকে তাকালো কণ্ঠ। তার ঠোঁটের কোনে বিরাজ করছে বাঁকা হাসি। সেই সাথে আছে তৃপ্তি। কিন্তু কিসের তৃপ্তি? নিজের খুব কাছের কিছু পাওয়ার তৃপ্তির হাসি কি এটা? হতে পারে!

#চলবে….ইনশাআল্লাহ
(কেমন লাগলো জানাবেন🖤)