নীল কণ্ঠ পর্ব-০৪

0
289

#নীল_কণ্ঠ💜
#পর্ব-৪
#সাদিয়া

মাত্রাতিরিক্ত ঠান্ডা পানির ঝাপটা জ্ঞানহীন রমণীর উপর পড়তেই রমণী ধরফর করে উঠে বসে। সে ঘন ঘন শ্বাস টানছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে তার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। সে ছটফট করছে। মেয়েটির ছটফটানি দেখে কণ্ঠের ঠোঁটের কোনে তৃপ্তির হাসি। সে যেন পৈশাচিক আনন্দ পাচ্ছে।
কিয়ৎক্ষণ ছটফটিয়ে মেয়েটি কিছুটা শান্ত হলো। সামনে তাকিয়ে কণ্ঠকে দেখেই তার মুখে হাসির ঝিলিক দেখা দিলো। সে যেন মরুভূমিতে পানির সন্ধান পেলো।

–কণ্ঠ আপু!

কণ্ঠ চমৎকার হাসলো। মেয়েটি আবারো বললো,
–দেখ না কণ্ঠ আপু ওরা আমাকে এখানে বন্দী করে রেখেছে। এত করে জিজ্ঞেস করছি আমি কি করেছি কেউ কিছু বলছেও না। বললাম আমার বিয়ে তবুও শুনলো না।
কণ্ঠ মুখে অমাবস্যা নামিয়ে বললো,
–তাই নাকি?

–হ্যাঁ আপু। ওরা খুব বাজে। কালকে থেকে আমাকে কিছু খেতে দেয় নি।

–খিদে পেয়েছে তোমার?

মেয়েটি মুখ গোমড়া করে উপর নিচে মাথা দুলালো। কণ্ঠ তার পাশে থাকা ছেলেটিকে কিছু ইশারা করলো। ছেলেটি কণ্ঠের ইশারা বুঝতে পেরে মাথা নাড়িয়ে রুমের বাইরে গেলো। মিনিট দুয়েক বাদে সে ফিরে এলো। তার দুই হাত ভর্তি খাবার। সে খাবার গুলো টেবিলে রাখলো।

–যাও খাও গিয়ে।
কণ্ঠ কথাটা বলার সাথে সাথেই মেয়েটি দৌড়ে খাবারের কাছে গেলো। উচ্ছ্বাসিত হয়ে খাবারে উপর থেকে ঢাকনা সরাতেই তার মুখে নেমে এলো অমাবস্যা।
–এগুলো কি কণ্ঠ আপু?

–কেন দেখতে পাচ্ছো না? এগুলো তোমার ব্রেকফাস্ট। খাও খাও। তোমার না খিদে পেয়েছে।

–এগুলো কিভাবে খাবো?

–কেন ভালো লাগেনি এগুলো?

–এটাকে কি রুটি বলে? এটা তো পাথরের মতন শক্ত। আর রুটির সাথে কি আছে এগুলো?

–খেজুরের রসের গুড়।
বললো শৈবাল।

–আমি এগুলো খাই না।

–শৈবাল নীরা ম্যাডাম এগুলো খান না। এগুলো নিয়ে যাও। ম্যাডাম না খেয়ে থাকবেন।

–আমি কখন বললাম আমি না খেয়ে থাকবো?

–বলোনি বুঝি?

নীরা জেদ ধরলো সে এগুলো খাবে না। তাকে ডাবল ডিমের অমলেট দিতে হবে। নীরার কথায় কণ্ঠ ভীষণ বিরক্ত হচ্ছে। অপরদিকে রিশা অনেক কষ্টে নিজের হাসি চেপে রেখেছে। যে কিড’ন্যাপ করলো তাকেই ডাবল ডিমের অমলেট দিতে বলছে!
–শোনো মেয়ে যদি খেতে চাও তাহলে এগুলোই খেতে হবে। এগুলো খেতে না চাইলে উপবাস থাকো। একেকজন জ্বালিয়ে খেলো আমায় একেবারে।

কণ্ঠের ধমকে নীরা কেঁপে উঠলো। তার চোখ ভরে উঠলো তপ্ত অশ্রুতে। কণ্ঠ আরেক দফা বিরক্ত হলো।
–কান্না কি এখন নতুন ট্রেন্ড হিসেবে চালু হয়েছে নাকি? যাকে দেখি সে-ই কান্না করে। এদের সমস্যা কি ভাই? চোখের পানি এত কাছে কেন এদের? কান্নায় কি আছে আমি বুঝি না।

নীরা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে।
–আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলো কণ্ঠ আপু। আমি এখানে থাকবো না।

–শৈবাল আমাদের নিরা ম্যাডাম তো এখানে থাকতো চাচ্ছে না। কি করা যায় বলো তো?

–ওকে একটু যুক্তরাষ্ট্র ঘুরিয়ে আনি। কি বলুন ম্যাডাম?

–হ্যাঁ। ইট’স বেটার। আর আমাদের নীরা রাণীর তো যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার অনেক দিনের শখ।
নীরার কান্না ততক্ষণে থেমে গেছে। সে অদ্ভুত ভাবে কণ্ঠের দিকে তাকিয়ে আছে। কণ্ঠ সেদিকে পাত্তা না দিয়ে চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে আরাম করে বসলো। নীরা একবার শৈবাল আর রিশার দিকে তাকালো। সে রিশাকে মা’রাত্ম’ক ভয় পায়। কালকে পার্লারে রিশা তাকে যে দুইটা থাপ্প’ড় দিয়েছে তা সে জীবনেও ভুলবে না। গালটা এখনও টনটন করছে। রিশার দিকে এক পলক তাকিয়ে নীরা কণ্ঠকে উদ্দেশ্য করে বললো,
–কণ্ঠ আপু চলো এখান থেকে। ওরা অনেক ভ’য়ংক’র মানুষ।
নীরার কথায় শৈবাল শব্দ করে হেঁসে উঠলো। কণ্ঠ ঘাড় ঘুরিয়ে শৈবালের দিকে তাকাতেই শৈবাল মুখে আঙ্গুল দিলো। শৈবালকে হাসতে দেখে নীরা বোার মতো প্রশ্ন করলো,
–উনি হাসছেন কেন?

এবার কণ্ঠও আলতো হাসলো।
–এই বুদ্ধি নিয়ে তুমি আমার কলিজার দিকে হাত বাড়িয়ে ছিলে? আমার সাথে টক্কর নিতে এসেছিলো। তারিফ করতে হয়।
নীরা কণ্ঠের কথার আগা মাথা কিছুই বুঝলো না।
–তুমি এগুলো কি বলছো কণ্ঠ আপু?

–বুঝতে পারছো না?
নীরা মাথা দুলালো।

–আচ্ছা নীরা বলো তো তুমি এখানে কেন? আর আমি এখানে কেন?

–আমি এখানে কারণ ওই মেয়েটা ঠাস ঠাস দুটো থাপ্প’ড় আর ওই ছেলেটা আমাকে ইনজেকশন দিয়ে এখানে নিয়ে এসেছে।

–রিশা তুমি দুটো থাপ্প’ড় দিয়েছো?

–আরো কয়েকটা দেওয়ার ইচ্ছে ছিলো। কিন্তু তার আগেই জ্ঞান হারালো।

–কণ্ঠ আপু আমাকে এখান থেকে বের করো।

–কি তখন থেকে নিয়ে যাও বের করো করছো? এত কষ্ট করে তোমাকে কিডন্যাপ করলাম কি এত সহজে ছেড়ে দিতে?

–মানে? আমাকে তুমি কিড’ন্যাপ করিয়েছো?

–আমি ছাড়া আর কার ঠ্যাকা পড়েছে তোমার মতন উটকো ঝামেলা কে কি’ডন্যাপ করাতে যাবে। মইটা তো তুমি আমার পাকা ধানে-ই দিয়েছো মেয়ে।

–তুমি আমায় কিডন্যাপ কেন করালে? কি করেছি আমি?

–রিয়েলি? কি করেছো তুমি? আমার কলিজা ধরে নাচানাচি করে এখন বলছো কি করেছো? কি ভেবেছিলে তোমাদের প্ল্যান সাকসেসফুল হবে? ভাবলে কি করে আমি তা হতে দেবো।

নীরা কিছুটা ঘাবড়ে গেলো।
–প…প্ল্যান? কিসের প্ল্যানের কথা বলছো তুমি?

–নীরা আপার স্মৃতিশক্তি লোপ পেয়েছে ম্যাম।

–তাই তো দেখছি। তবে কোনো ব্যপার না। আই ক্যান হেল্প হার ইফ শি ওয়ান্ড।

–কি নীরা আপা লাগবে হেল্প?

–এই আপা কাকে বলছেন? বেয়া’দব ছেলে মানুষ একটা। হুটহাট ইন’জেকশন পুশ করে দেয় আবার আমাকে আপা বলছে।

–আহা নীরা চটছো কেন? রিল্যাক্স বেব। আর শৈবাল এটা কোন ধরনের অস’ভ্যতা? তুমি নীরা রাণীকে হুটহাট ইন’জেকশন কেন পুশ কর? নেক্সট টাইম এমন করবে না। নাও হুয়াট এভার! শৈবাল ম্যাডামকে ভিডিও ক্লিপটা দেখাও।

কণ্ঠের কথায় শৈবাল নিজের হাতে থাকা ট্যাবলেটে একটা ভিটিও চালু করলো। ভিডিও তে দেখা যাচ্ছে নীরা কারো সাথে ফোনে কথা বলছে আর তার ঠোঁটের কোনে ঝুলছে শয়’তা’নি হাসি। নীরা ফোনে যা যা বলেছে তা এই ভিডিওতে স্পষ্ট। নীরা একবার কণ্ঠের দিকে তাকালো। তার ঠোঁটেও বাঁকা হাসি। কিন্তু চোখ দুটো অস্বাভাবিক লাল হয়ে আছে৷ কণ্ঠের চোখের দিকে তাকাতেই আঁতকে উঠল নীরা। সে বারবার ঢোক গিলছে।

–তো নীরা ম্যাডাম কিছু মনে পড়লো?

–আ..আমায় ক্ষমা করে দাও। আমি আর এমন করবো না।

–তোমাকে আর এমন কিছু করার সুযোগ দিলে তো তুমি এমন করবে। সেই সুযোগটাই তো তুমি পাবে না।

–আ..আমার ভুল হয়ে গেছে। প্লিজ লিভ মি।

–আমার কলিজা ধরে নাচানাচি করার সময় মনে হয়নি এটা ভুল। এটা অন্যায়?
নীরা কিছু না বলে মাথা নিচু করে আছে। কণ্ঠ দ্বিগুন রেগে বললো,
–তোমার সাহস দেখে আমি জাস্ট অবাক। তুমি তোমার এমন খাটিয়া শখের জন্য আমার নীলকে চুজ করেছো!

নীরা ভয়ে ভয়ে আবারো বললো,
–আ..আমাকে ছেড়ে দাও আপু প্লিজ।

–ছেড়ে দেবো? এত সহজে? হ্যাভ ইউ এ্যানি আইডিয়া তোদের এই জ’ঘন্য কাজের জন্য নীল কতটা কষ্ট পেতো? নীলের পরিবারের কতটা অসম্মান হতো? তোর তো ভাগ্য ভালো নীলের বিরুদ্ধে এত বড় ষড়’যন্ত্র করার পরেও তুই আমার সামনে দুই পায়ে দাঁড়িয়ে আছিস।
কণ্ঠ একটু দম নিলো।
–তোর এই কাজের জন্য তো তুই অবশ্যই শাস্তি পাবি। তা কি শাস্তি পেতে চাস বল। তাড়াতাড়ি বল। আমার আবার এত সময় নেই। জানিস তো আজ আমার বৌভাত!
কথাটা বলে বা চোখে একটা টিপ্পনি কা’টলো কণ্ঠ। নীরা এখনো মাথা নিচু করে আছে।

–আচ্ছা ভেবে শাস্তি ডিসাইড করবি? ঠিক আছে তুই ভাবতে থাক। আর শৈবাল, আমাদের নীরা ম্যাডামের সো কলড প্রেমিকের কোনো খবর পেলে?

কণ্ঠের মুখে নিজের প্রেমিকের কথা শুনে নীরা যেন চার হাজার ভোল্টের শখ খেলো। নীরা বিস্তারিত নয়নে তাকালো কণ্ঠের দিকে। কণ্ঠ নীরার চাহনি দেখে বাঁকা হাসলো।
–কি ভেবেছিলে নীল একটা মেয়েকে বিয়ে করবে আর আমি তার কোনো খবর নেবো না। আরে তোমার সম্পর্কে তো সে দিন-ই সব ইনফরমেশন জোগাড় করেছি যখন তোমাদের বিয়ের কথা বার্তা চলছিলো। আমাকে এত কাঁচা খেলোয়াড় ভেবে না সোনা। আমি সব দিক সামলে তবেই মাঠে নামি। আচ্ছা তোমার ওই প্রেমিকের নাম কি গো?

–রাফাত শিকদার ম্যাম।

–খুব সুন্দর নাম। যেমন সুন্দর নাম ঠিক তেমনই কুৎসি’ত কাজ।

#চলবে….ইনশাআল্লাহ