প্রণয়লীলা পর্ব-০৩

0
320

#প্রণয়লীলা–[৩]
#মুনিয়া_মিরাতুল_নিহা

_______________________________

-‘ কি হলো পূর্নিমা? উত্তর দিচ্ছো না কেনো? ফোন করেছে কে তানভীর নিশ্চয়ই! তুমি তাকে বলোনি তুমি এখন নিবিড় মাহমুদের স্ত্রী।’

-‘ বিয়েটা তো এতো তাড়াহুড়ায় করলেন যে কাক পক্ষিও টের পায় নি সেখানে তানবীর জানবে কি করে?’

-‘ হু সে বেশ তাড়াতাড়িই করেছি একটুখানি বলতে পারো। কিন্তু তোমাকে যে আমার বড্ড প্রয়োজন সেজন্য। পরে না হয় ধুমধাম করে আমাদের বিয়ের অনুষ্ঠান হবে কেমন? আপাততো নিচে চলো।’

নিবিড়ের কথার পৃষ্ঠে কোনো প্রতিত্তোর না করে পূর্নিমা নিচে রান্নাঘরের দিকে চললো। নিচে কাজের বুয়া রিনু তাকে দেখতে পেয়েই তড়িঘড়ি করে তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।

-‘ আরে নতুন মেমসাহেব যে আপনি নিচে পাকের ঘরের দিকে আসছেন কেন? আমি তো আছি নাকি।’

বুয়ার কথায় বেশ ইতস্তত বোধ করলাম। মেমসাহেব? এই কথাটি বড্ড কেমন জানি লাগলো। নিজের বাসায় থাকতে তো সব ধরনের কাজই করেছি। আমি না মানলেই বা কি আমি যে এই পরিবারের বউ এটা তো চিরন্তন সত্যি!

-‘ দেখো খালাম্মা আমি তোমার মেয়ের মতন তাই আমাকে এসব মেমসাহেব বলবে না বুঝেছো? আমি এসব ডাকে অভ্যস্ত না। আর তুমি তো দেখছি ব্রেকফাস্ট রেডি করেই ফেলেছো রান্না করছো বোধহয় তাই না?’

-‘ এই বাড়ির লোকেগো মতন তোমার মনটাও খুব ভালা। তয় তুমি নতুন মানুষ এতো বড়ো বাড়ির বউ মেমসাহেব না কইলে যদি রা’গ করো? তাই কইছি আরকি। জানোতো ভাবিও আমার লগে খুব সুন্দর ব্যবহার করে। মনটা একেবারে জুড়ায় যায়। আইচ্ছা হুনো তো তুমি অহন সকালের নাস্তা তো আমি তৈরী করছি এখন শুধু রান্না করা বাকি ওই নিবিড় তাড়াহুড়ো করে বিয়া করছে না? তাইতো কোনো লোকজন আসবার পারে নাই তাই ভাবিজান ছোট্ট খাট্টো ভাবে মেহমান দাওয়াত দিছে বুঝলা তো? আমার এহন এগুলা নিয়াই মেলা কাজ আছে।’

-‘ আচ্ছা আচ্ছা আমি তোমাকে একটুখানি সাহায্য করে দিই কি বলো?’

-‘ পা’গ’ল না-কি মা’থা খারাপ হ্যাঁ? তুমি আমারে সাহায্য করবার আইছো আর ওই খবর যদি নিবিড়ের কানে যায় তো না জানি কি হইবো। তুমি বরং ওব বাদ দিয়ে তোমার শাশুড়ি মা’র লগে গল্প করো।’

রিনু খালার কথা শুনে আমি হাঁটছিলাম ড্রয়িং রুমের দিকে তখুনি আমার শাশুড়ি মাকে বসা দেখতে পাই। তিনি আমার সঙ্গে বেশ টুকটাক কথা বার্তা বলে এই বাড়িটা পুরো ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাতে লাগলেন কোথায় কি আছেন কোনটা কার রুম। উনিও বেশ ভালোই। মনেই হচ্ছে না কোনো অপরিচিতো মহিলার সঙ্গে কথা বলছি। উনি আমাকে সবার সম্পর্কে টুকটাক বলে চলেছে। এসব নানান আলোচনা শেষ হতে আমি নাস্তা করে রুমে যাই। রুমে গিয়ে কোথাও নিবিড়কে দেখতে না পেয়ে মনে বেশ খটকা লাগলো! এই লোকটা গেলো কোথায়? ঘরের আশেপাশে তো কোথাও দেখতে পাচ্ছি না, অফিসে তো আজকে যাবার কথা ছিলো না তাহলে গেলো কোথায়? রুম থেকে বের হতেও দেখিনি। তাহলে কি বারান্দায় আছে? একবার গিয়ে দেখি তো।

পূর্নিমা যেই না বারান্দার দিকে অগ্রসর হবে ঠিক তখুনি সেই মুহুর্তে পূর্নিমার কাঁধে কারো স্পর্শ পেতেই শিওরে ওঠে পিছন ফিরে তাকায়! অস্ফুট স্বরে বলে ওঠে,

-‘ আপনি!’

নিবিড়র পূর্নিমার চমকায়িত মুখশ্রী দেখে কিছুক্ষণ হেসে দেয়।

-‘ হু আমিই তো। তুমি তো আমাকেই খুঁজছিলে তাই না বলো?’

পূর্নিমা আমতা আমতা স্বরে বলে ওঠলো,

-‘ একদমই নাহ্! আমি হঠাৎ আপনাকে খুঁজতে যাবো কেনো বলুন তো?’

-‘ তাহলে বারান্দায় এসে এভাবে তোমার দু চোখ দ্বাড়া কি খুঁজছিলে?’

-‘ ওহ্ সে তো এই বারান্দা টা দেখছিলাম আর কিচ্ছু নাহ্।’

নিবিড়ের ঠোঁটে বাঁকা হাসি। পূর্নিমা নিবিড়ের দিকেে চেয়ে আছে সে বুঝতে পারছে না নিবিড় ঠিক কি করবে। নিবিড় পূর্নিমাকে এক ঝ’ট’কায় তার কাছে নিয়ে এসে পূর্নিমার কো’মড় জড়িয়ে ধরে নিজের হাত দিয়ে। পূর্নিমা নিবিড়ের এতোই কাছে এসে পড়েছে যে নিবিড়ের নিঃশ্বাসের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে। নিবিড় এখনো পূর্নিমার কো’মড় জড়িয়ে ধরে পূর্নিমার দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। কো’মড় থেকে এক হাত ওঠিয়ে পূর্নিমার ঠোঁটে স্পর্শ করলো! পূর্নিমা যেনো মূর্তির ন্যায় রূপ ধারন করলো। কিছু বলার নেই যেনো তার। নিবিড় পূর্বের ন্যায় তার হাত দিয়ে পূর্নিমার ঠোঁটে স্পর্শ করছে। পূর্নিমার সারা শরীর জুড়ে অদ্ভুত অনুভুতি হচ্ছে, লোকটা এমন কেনো? হুটহাট কাছে আসার বাহানা শুধু উনার! এবার পূর্নিমা মা’থা নিচু করে ফেললো। অস্ফুট স্বরে বলে ওঠলো,

-‘ ছাড়ুন আমাকে।’

নিবিড় পূর্নিমার করুন কন্ঠের আওয়াজ শুনে ছেড়ে দিলো। মুখে রয়েছে এখনো সেই বাঁকা হাসি।

-‘ এইটুকুইতেই ছাড়াছাড়ি করছো? যখন একেবারের জন্য তোমাকে আমার নিজের কাছে নিয়ে আসবো তখন কি করবে পূর্নিমা?’

নিবিড়ের লজ্জা জনক কথা শুনে পূর্নিমা আর এক মুহুর্তও অপেক্ষা না করে চলে গেলো বারান্দা থেকে। পূর্নিমা যেনো এখনো ঘোরের মধ্যে আছে। কাল অব্দি যেই লোকটাকে নিজের বস মানতো সে আজকে তার স্বামী! কি অদ্ভুত সবকিছু। দুপুরে অতিথিদের জন্য রেডি হতে লাগলো! পরিবারের কিছু লোকজনই আসবে। পূর্নিমার বাপের বাড়ির লোকদেরও আমন্ত্রণ করা হয়েছে। হিসেব মতন পূর্নিমা আজকে তার বাপের বাড়িতেও যাবে। সে অনুযায়ী সবকিছু ঠিকঠাক করা আছে। পূর্নিমা শাড়ি পড়ে বের হতে না হতেই রুমে কিছু পার্লারের মেয়েরা ঢুকে পড়লো তাকে সাজিয়ে দিতে। পূর্নিমার সিম্পলই ভালো লাগে বরাবার। কিন্তু সে এখন মাহমুদ পরিবারের বউ সে জন্য উনাদের মতন করেই পূর্নিমাকে সাজতে হবে। বেশ গর্জিয়াস লুকে সাজানো হলো পূর্নিমাকে। সাজানো শেষ হতেই না হতে রুমে নিবিড় ঢুকলো। নিবিড়কে দেখে পূর্নিমার ভ্রুযুগল কুঁচকে এলো! এই লোকটা কি শুধু তা পিছু পিছুই পগে থাকে না-কি? যখনই সুযোগ পায় তখুনি চলে এসে।

-‘ ইশশশ পূর্নিমা তোমাকে তো পূর্নিমার চাঁদের মতন সুন্দর লাগছে। দেখতে হবে তো কার বউ তুমি, সেজন্যই এতো সুন্দর লাগছে তোমাকে।’

শুরুতে নিবিড়ের প্রসংশা শুনে মনে মনে বেশ ভালো লাগলেও নিবিড়ের শেষোক্ত কথাটি মো’টেও পছন্দ হলো না পূর্নিমার! কিন্তু সে কোনো কথা বাড়াতে চায় না বিধায় চুপচাপ মৌনতা পালন করছে।

-‘ শোনো এসব লজ্জা পাওয়া চলবে না আমার সামনে কিসের লজ্জা? তোমাকে লজ্জাহীন হতে হবে ঠিক আমার মতন করে।’

-‘ হু হু তাাই বলুন। অফিসে কতো কি দেখতাম! আর এখন খালি সুযোগ পেলেই এসব কথা বার্তা আর কাছে আসতে চান খালি।’

-‘ তখন কি তুমি আমার বউ ছিলে নাকি? এখন আমার বউ তাই দেখবে এখন কতো কি করি!’

-‘ মুখটা বন্ধ রাখুন তো।’

-‘ আচ্ছা চলো যাওয়া যাক নিচে?’

নিবিড় পূর্নিমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো নিচে যাবার জন্য। পূর্নিমা কোনো ইতস্তত বোধ না করেই সে হাতদুটো আকড়ে ধরে নিচে গেলো। যতো সময় যাচ্ছে ততো যেনো সে মানুষটাকে নতুন করে চিনছে। অফিসে থাকতে বরাবরই গম্ভীর থাকতেন এখন বিয়ের পর খালি উনা ছটফটে স্বভাব দেখে যাচ্ছে পূর্নিমা! নিচে যেতেই পূর্নিমাকে বসানো হলো। নিবিড়দের আত্নীয় স্বজনরা এসে পূর্নিমাকে দেখে যেতে লাগলো। পূর্নিমার পাশের জায়গায় নিবিড়ের থাকার কথা হলেও সে নেই! অফিসের কলিগদের সঙ্গে খোশ গল্পে মেতে ওঠেছে তিনি। গল্পটা হয়তো এটাই হবে যে নিবিড় হঠাৎ করে পূর্নিমাকে কি করে বিয়ে হলো? ওদের কাছে না গেলেও মূল প্রশ্ন যে এটাই সোটা পূর্নিমার দূরে থেকেও বুঝতে কোনোরূপ অসুবিধা হচ্ছে না!

এর মধ্যে দিয়ে হঠাৎ করে কোনো একটা মেয়ে এসে নিবিড়েন গ’লা জড়িয়ে ধরলো! পূর্নিমা এবার বেশ অবাক হলো! এই মেয়েটিকে তো সে কখনো দেখেই নি! আর সবচেয়ে বড়ো কথা হলো এই মেয়ে নিবিড়ের গ’লা জড়িয়ে এভাবে ধরেছে কেনো? এর কি কোনো লজ্জা শরম নেই?

প্রথম দেখায় কোনো পরিচয় না হয়েও মেয়েটির নিবিড়ের প্রতি এসব ব্যবহার দেখে পূর্নিমার বেশ বিরক্তিকর তালিকায় চলে গেলো আগন্তুক মেয়েটি!

-‘ এসব কি নিবিড়! তুমি আমাকে না জানিয়ে কি করে বিয়ে করলে বেবি?’

পূর্নিমা এবার বেশ বিক্ষুব্ধ হলো! এবার তার নিবিড়ের কাছে যাওয়া প্রয়োজন বলে মনে হলো। নইলে আর সামলানো যাবে না।

#চলবে?