প্রণয়লীলা পর্ব-০৪

0
300

#প্রণয়লীলা –[৪]
#মুনিয়া_মিরাতুল_নিহা
___________________________

-‘ হু একদম ঠিক বলেছেন আপু। উনার বিয়ে হয়ে গেছে আর আমাকেই বিয়ে করেছেন। শুধু তা-ইই নয় উনি তো কত্তো ভালোবাসেন আমাকে।’

পূর্নিমা লিলির উদ্দেশ্য কথাগুলো বললো বসা থেকে ওঠে এসে। নিবিড়ের হাত থেকে লিলির হাতটি ছুঁটিয়ে দিয়ে নিবিড়কে নিজের পাশে এসে বসতে বললো। নিবিড় এখনো চুপচাপ ভাবে বসে আছে। লিলির কান্ডে যে পূর্নিমা এরকম করবে সে নিবিড় কল্পনাও করেনি। লিলি রে’গে মে’গে পূর্নিমার কাছে গেলো। পূর্নিমা মুখে আলতো হাসি ঝুলিয়ে রেখেছে।

-‘ হু তুমি যেরকম নিবিড়ের স্ত্রী তেমনি আমিও নিবিড়ের মামাতো বোন বুঝলে?’

-‘ এইতো এই কথাটা বলে দিলেই হতো যে আপনি নিবিড়ের মামাতো বোন। বোনই তো ভাইয়ের বিয়েতে সবচেয়ে বেশি আনন্দ করবে তাই নয় কি বলুন? দেখি আপু নাচা গানা শুরু করে দিন। পরিবেশটা কেমন চুপচাপ আপনি এসেছেন এবার একটু গ’র’ম করে দিন তো নেচে গেয়ে যেহেতু ভাইয়ের বিয়ে বলে কথা।’

-‘ নিবিড় আমার মামাতো ভাই বলেছি নিজের ভাই হয় বলিনি।’

উপরোক্ত কথাটি বলে লিলি সেই জায়গা থেকে প্রস্থান নিলো। নিবিড় চুপচাপ নিরব দর্শক হয়ে বসে আছে সেখানে। তবে সে এটা বেশ বুঝতে পারছে এই দু’দিনে সে একটু একটু করে পূর্নিমার মনে জায়গা করে নিতে পেরেছে।

-‘ কি পূর্নিমা নিজে তো আমাকে দূরে সরিয়ে রাখো সবসময় এখন লিলি একটু কাছে এসেছিলো ওকেও দূরে সরিয়ে দিলে?’

-‘ আপনি কি বলুনতো? আপনার সঙ্গে কথা বলাই বৃথা! আমাকে আর রা’গাবে’ন না বলে দিচ্ছি।’

-‘ আরে আরে রা’গবার মতন কি বললাম! আচ্ছা তুমি রে’গে যাচ্ছো তো ওই দেখো তোমার আব্বু এসেছে যাও উনাদের কাছে যাও।’

নিবিড়ের বলতে দেরি হলো না ওমনি সঙ্গে সঙ্গে পূর্নিমা নিজের বাবার কাছে চলে গেলো! বাবাকে দেখে আপনা আপনিই মুখে হাসি ফুটো গেলো পূর্নিমার। বাবাও তার মেয়েকে দেখতে পেয়ে পরম যত্নে সা’থায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে!

-‘ কেমন আছিস মা? ভালো আছিস তো? আমি জানি তুই ভালো থাকবি সেজন্যই তো নিবিড়ের সঙ্গে তোর বিয়েটা দিয়েছি।’

বাবার কথা শুনে মায়ের কথা মনে পড়ে গেলো। সা সেদিন বলেছিলো আমাকে পাত্র নাকি আব্বুর পছন্দসই। এবার বুঝতে পারছি কেনো মা এই কথাটি বলেছিলো। নিবিড় আমাকে প্রায়শই রাত্রে বাড়িতে পৌঁছে দিতো। যখন কাজ করতে করতে একটু রাত হয়ে যেতো তখুনি পৌঁছে দিতো। আর সেরকমই দু একদিন আমাদের বাড়িতে এসে বসেছিলেন। আর তারপর থেকেই বাবার শুধু নিবিড়ের প্রসংশা শুনতাম। আর কালকে যখন নিবিড় বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে তখন আর বাবা মানা করতে পারেনি হাজার হোক নিবিড়কে বাবার বেশ পছন্দ শুরু থেকেই।

-‘ হুম ভালোই আছি । তুমি ভালো আছো তো? আচ্ছা এখানে এসে বসো তো একটু।’

বাবাকে বসিয়ে দিলাম। আমাদের বাড়ি থেকে কেউই আসেনি তেমন শুধু আমার আব্বু, ভাই আর দু’জন কাকা এসেছে মাত্র যেহেতু অনুষ্ঠান হয়নি সেই ক্ষেত্রে মানুষজনও কম। বাবার সঙ্গে টুকটাক কথা বললাম। এরপরই এলো কাঙ্ক্ষিত সময় যার জন্য আমি অপেক্ষা করছিলাম। অবশেষে আমাকে আর নিবিড়কে আমাদের বাড়িতে যাবার জন্য বলছে। আব্বুরা সবাই খাওয়া দাওয়া সেড়ে গাড়িতে বসে আছে। এই পুরো সময়টাতে আশেপাশে কোথাও লিলি নামের মেয়েটাকে দেখতে পেলাম না। এর হাবভাব আমার মো’টেও সুবিধের লাগছে না এর উপর নিবিড়ের যা গায়ে পড়া স্বভাব দেখছি আজকে দু’দিন যাবত। এখন থেকে উনাকে একটু চোখে চোখে রাখতে হবে।
—————————-

গাড়ির জানলা ভেদ করে বাইরের দিকে হাত বের করে তাকিয়ে আছি। স্নিগ্ধ সতেজ বাতাসে মনটাও সতেজ হয়ে ওঠেছে! নিবিড় ফোনে অফিসের একটা কথা বলছে আমি সেই ফাঁকেই বাইরে তাকিয়ে আছি হাত বের করে আশেপাশে দিয়ে গাগি চলে যাচ্ছে সাই সাই করে। যাবার সময় আবার চোখে মুখে ধুলো মাখিয়ে দিয়ে যাচ্ছে তবুও আমি বাইরে তাকিয়ে আছি। গাড়ি থামায় ধ্যান ভাঙলো। অবশেষে গন্তব্য স্থলে এসে পৌঁছালাম। বাবারা সবাই আগেই নেমে গেছে আমিও নেমে যেয়ে হাঁটতে যাচ্ছিলাম ঠিক তখুনি আমার হাত কেউ টা’ন মে’রে ধরলো! পিছন ফিরে তাকাতেই দেখি সেই মানুষটি নিবিড়!

-‘ একি এরকম করে লাফিয়ে লাফিয়ে চলে যাচ্ছো যে? সঙ্গে যে আমি আছি সে কথা কি ভূলে গেছো নাকি হ্যাঁ?’

-‘ আপনি কি ভূলে গেছেন নাকি যে আপনি এখানে আগেও এসেছেন সুতরাং রাস্তাঘাট সবকিছুই তো আপনার চেনা। এরকম বাচ্চাদের মতন করছেন কেনো? যেনো আপনি হারিয়ে যাবেন!’

-‘ উফফ কথা বাড়িও না বলছি। এখন তো আমি এই বাড়ির জামাই তখন কি সেটা ছিলাম? তাহলে এখন চলো?’

আর কোনো কথা না বাড়িয়ে চুপ করলাম। নিবিড়ের সঙ্গে কথা বলে জেতা দায় একেবারে। বাড়িতে ঢুকে মা চাচীদের সঙ্গে টুকটাক কথা বলে রুমে আসলাম। রুমে ঢুকেই ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়েছি। এই বারান্দায় দাঁড়ালে আশেপাশের দৃশ্য দেখে মন খারাপ থাকলেও ভালো হয়ে যায়! এর মধ্যে সতেজ বাতাস তো আছেই। নিবিড়ের ডাক পড়লো এর ভেতর। রুমে আসতে না আসতেই আমার হাত আঁকড়ে ধরেছেন!

-‘ আবার শুরু হয়ে গেছে আপনার? এসব ধরাধরি!’

-‘ তো অন্য মেয়েকে ধরবো না-কি বলো?’

-‘ আমি এটা বললাম কখন?’

-‘ তাহলে তো তোমাকে ধরতে দিচ্ছো না এটা কি?’

-‘ আপনার সঙ্গে কথা বলা দায়। কি জন্য ডেকেছেন সোজাসুজি সেটা বলুন বলছি।’

-‘ হু এখনো কিছু সময় আছে সন্ধ্যা হতে চলো না একটু ঘুরে আসি। তারপর যখন সন্ধ্যা হয়ে যাবে তারপর একটু ঘুরাঘুরি করে ফিরে আসবো?’

নিবিড়ের করুন কন্ঠের আবদার ফেরাতে পারলাম না। সায় দিলাম উনার সঙ্গে যাবো বলে। বেরিয়ে পড়েছি রাস্তায়। উনার বক্তব্য এখন এই সুন্দর সময়টাতে আমরা কিছুক্ষণ হাঁটবো তারপর রিক্সা চড়ে একটু ঘুরবো!
————————

নিবিড় আর পূর্নিমা পাশাপাশি হাঁটছে। নিবিড়ের হাতে পূর্নিমার এক হাত। দু’জনে পাশাপাশি হাটছে। পূর্নিমার কালো চুলগুলো বাতাসের কারনে এসে নিবিড়ের চোখে মুখে আছড়ে পড়ছে! পূর্নিমার বিরক্তি লাগলেও নিবিড়ের সেরকম কোনো বিরক্ত লাগছে না বরং ভালো লাগা কাজ করছে। এভাবেই হাঁটতে হাঁটতে কিছুক্ষণ পর গিয়ে থামলো একটা নদীর কিনারার কাছে গিয়ে! নিবিড় পূর্নিমাকে কিছু বলতে যাচ্ছিলো ঠিক তখুনি সেখানে তানভীরের আগমন!

-‘ তাহলে ঘটনা যেটা রটে তার কিছুটা সত্যিই দেখছি অবশ্য কিছুটা না এতো দেখছি পুরোটাই সত্যি।’

তানভীরের গলার আওয়াজ শুনে আমি চুপ করে রইলাম। নিবিড়কে তাড়া দিতে লাগলাম এখান থেকে চলে যাবার জন্য নয়তো এই নিবিড় আর তানভীড়ের মধ্যে গন্ডগোল লেগে যেতে পারে!

-‘ উফফ পূর্নিমা এভাবে চলুন চলুন করবে না তো। ও কি বলছে শুনে নিই। হু তুমি বলো দেখি কি ঘটনা?’

-‘ এই যে আগে শুনতাম পূর্নিমা তার অফিসের বসের সঙ্গে সম্পর্কে আছে সেজন্যই তো রাত বিরাতে অফিস থেকে ওকে নামিয়ে দিয়ে যেতো। এখন তো দেখছি এটাই সত্যি। খোলাখুলি ভাবে এসব করছো বিন্দুমাত্র ও কি লজ্জা নেই তোমার পূর্নিমা? একবারো আমার কথা ভাবলে না তুমি আমার কি হবে? এরকম বে’হায়া হলে কি করে? না-কি অফিসে পাওয়ার আর বড়োলোক বাড়ির বউ হবার জন্য এসব করলে তুমি?’

-‘ চুপ করো! এই চ’ ড়টা না মে’রে পারলাম না তোমাকে! কার সম্পর্কে কি সব আজেবাজে কথা বলছো তুমি? উনার আর আমার সম্পর্কটা কি? না জেনে এসব বলছো কেনো? তোমার কাছে আমি বিভিন্ন ভাবে ঋনী সেজন্য বলতে পারো না। আর মোট কথা আমি তোমাকে কখনো বলেছি যে আমি তোমাকে ভালোবাসি? বলিনি তো তাহলে? বরং তুমি লোকজনকে বলেছো এসব। বন্ধুত্বের খাতিরে আমি তোমাকে কিচ্ছু বলিনি। আর এখন তুমি এসব বলছো?’

পূর্নিমা বেশ রে’গে গেছে যার দরুন তানভীরকে চ’ড় মা’র’তেও দ্বিধা বোধ করলো নাহ্। নিবিড় দেখছে সবটা তারও ভূল ভা’ঙ’ছে মন থেকে। এখন মনে হচ্ছে যে কারনের জন্য সে এসব করলো সে কারনটাই তো বৃথা! তাহলে সে এবার কি করে পূর্নিমাকে ফেস করবে? তাদের সম্পর্কটা কি শুরু হবার আগেই ভে’ঙে যাবে?

#চলবে?