প্রিয়া তুমি পর্ব-১০+১১

0
110

#প্রিয়া_তুমি
#পর্বঃ১০
#লেখিকা_লক্ষী_দেব

তানিয়া গালে হাত দিয়ে অবাক চোখে সামনে দাঁড়ানো পুরুষটির দিকে তাকাল। অচেনা পুরুষটির মুখে নিজের সম্পর্কে এমন অমা’র্জিত কথাগুলো শুনে রাগে শরীরটা জ্ব’লে গেল। পর পর দুইটা থা’প্পড় দেওয়ায় কারণে ভার্সিটির অনেকেই তাদের দিকে তাকালো। সকলের চোখে উপচে পড়া কৌতুহল। তানিয়া একবার চোখ ঘুরিয়ে আশেপাশে তাকিয়ে রাফসানের দিকে তাকাল। ক’ন্ঠে রাগ নিয়ে বলল,
“আপনি কি পাগল? কে আপনি? কি বলছেন কি আপনি? চেনা, নেই জানা নেই হুট করে এসে থা’প্পড় মেরে যা ইচ্ছে তাই বলে যাবেন? এতো সাহস?

তানিয়ার রাগ মিশ্রিত কথাগুলো শুনে রাফসানের রাগটা আরো বেড়ে গেল। রাগের মাথায় হিতাহিত জ্ঞান’শূন্য হয়ে তানিয়ার গালে আরেকটা থা’প্পড় মেরে বলল,
“সাহসের কি দেখেছেন? আপনার ল’জ্জা করে না রেগিংয়ের নামে এসব অ’শ্লীল কাজ করাতে। আপনি জানেন আমার বোনটি কতো আশা নিয়ে ভার্সিটিতে এসেছিল। অথচ আপনি কি করলেন? রেগিংয়ের নাম করে একটা ছেলেকে কিস করতে বললেন। আপনি নির্ল’জ্জ বলে অন্য কারো ল’জ্জা, আত্মসম্মান নেই। চরিত্র’হীন মেয়ে কোথাকার।

তানিয়ার কান্না পেল। নিজ সম্পর্কে এমন ঘৃ’ন্য কথাগুলো স’হ্য করতে না পেরে চোখ থেকে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগলো। ল’জ্জায়, অপমানে মুখটা থমথমে হয়ে গেল। রাফসান নিজের রাগটাকে সংবরন করল। তানিয়ার দিকে ঘৃ’না পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভার্সিটির বাহিরে চলে যেতে লাগলো। তানিয়া ছল’ছল দৃষ্টিতে অচেনা পুরুষটার যাওয়ার দিকে তাকাল। জীবনের সবচেয়ে ঘৃ’ণ্য মানুষের তালিকায় ফেলে দিল এই অচেনা অজানা অপরিচিত পুরষটাকে।
____________
রাফসান চোখ খুলে তানিয়ার দিকে তাকিয়ে দিকে তাকিয়ে অনু’তপ্তের স্ব’রে বলল,
“ভুলটা আমার ছিল। রিতাকে সেদিন যেই মেয়েটা রেগিং করেছিল সেই মেয়েটার নামও তানিয়া ছিল। আমি তোমাকে সেই তানিয়া ভেবে…।

রাফসান চুপ করে গেল। তানিয়া তাদের ক্লাসের সেই তানিয়ার মুখটার কথা মনে করল। মনে করেই রাফসানকে বলল,
“যদি একটু যাচাই করে নিতেন। তাহলে হয়তো আমার চোখে আপনি এতোটা ঘৃ’ন্য ব্যক্তি হতেন না।

“সেই দিনের জন্য কি ক্ষমা করে দেওয়া যায় না? ভুল তো মানুষ মাত্রই হয়। ভালো না বাসো অন্তত ঘৃ’না করো না। তোমার চোখে ঘৃ’ণা দেখলে বুকটা বড্ড জ্ব’লে।

তানিয়া তা’চ্ছিল্য করে বলল,
“ঘৃ’না করবো না? সেদিন আমার কি রকম অবস্থা হয়েছিল ভেবে দেখেছেন। ভরা মাঠে এতো এতো মানুষের মাঝে আমাকে থা’প্পড় মেরে চরিত্র’হীন, নির্ল’জ্জ বলেছিলেন। একটা মেয়ের কাছে চরিত্র’হীন, নির্ল’জ্জ উপাধি পাওয়ার চেয়ে অপমানের কি আছে? আপনি বলছেন ঘৃ’না না করতে।

রাফসান চুপ করে রইল। তানিয়ার কথার পরিবর্তে কি বলা উচিত বুঝতে পারল না। তানিয়া চুপ করে থেকে আবারো বলল,
“আমার সংসার করার ইচ্ছাটা আপনার জন্যই মরে গেল।

তানিয়ার কথাটা রাফসানের বুকে গিয়ে বিঁধলো। কোনো একটা কথা মনে পড়তেই মেজাজ তী’ক্ষ্ণ হলো। গলার স্বর পাল্টে টগবগে মেজাজে বলল,
“কেন? আমি রনিতের মতো নই বলে?

রাফসানের কথায় তানিয়া আহা’ম্মক বনে গেল। কোন কথার সাথে কোন কথা বলল লোকটা? এখানে রনিতের কথা এলো কোথা থেকে? তানিয়া ভ্রুঁ কুঁচকে শক্ত ক’ন্ঠে বলল,
“রনিতের মতো না মানে? কি বলতে চাইছেন আপনি?

রাফসান উত্তর দিল না। চুপ করে বসে রইল। তানিয়া উত্তরের আশায় রাফসানের দিকে চেয়ে রইল। যখন কয়েকমিনিট অতিবাহিত হয়ে গেল তখন আবারো বলল,
“আপনাকে কিছু জিঙ্গেস করলাম তো। আপনি রনিতের কথা বলে ঠিক কি বুঝাতে চাইছেন?

রাফসান এবারো চুপ। বিছানা থেকে নেমে গিয়ে রুমের লাইটটা নিভিয়ে এলো। তানিয়া তখনও খাটের এক কোনায় বসে আছে। রাফসান বিছানায় এসে তানিয়ার দিকে পিঠ দিয়ে শুয়ে পড়ে বলল,
“বুঝতে পেরেও যদি না বোঝার ভান করো তাহলে আমার কিছু করার নেই।

তানিয়া রাফসানের কথার আগাগোড়া কিছুই বুঝতে পারলো না। এখন প্রচ’ন্ড রাগ লাগছে। এমন ভনিতা করার মানে কি? তানিয়া শক্ত গলায় বলল,
“কিছু বলতে হলে স্প’ষ্ট করে বলবেন। না বললে এমন ভনিতা করার কোনো দরকার নেই।

রাফসান তানিয়ার কথাটা শুনলো। তানিয়ার অগোচরে নিঃশব্দে তাচ্ছি’ল্য করে হাসল। তবে কোনো কিছু বলল না। তানিয়া রাফসান কিছু বলবে মনে করে তাকিয়ে রইল। কিন্তু যখন দেখল বিপরীতে দিকের মানুষটা নির্বি’কার, নি’শ্চুপ তখন বিছানায় শুয়ে পড়ল।
____________

“জানো ভাবী। তোমার স্বামীকে কিন্তু আমার ভালোলাগে। তবে বিয়ে করেছে বলে আমি চুপ ছিলাম। কিন্তু এখন দেখছি তোমাদের মধ্যে কেমন দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। বলি কোনো সমস্যা হলে তোমার দরকার নেই। ভাইয়ার জন্য আমি আছি।

রিমার কথায় তানিয়া চমকে উঠলো। সকলের নাস্তা জন্য রুটি বানাতে গিয়েছিল। রিমার কথা শুনে হাত দুটো থেমে গেল। তাহলে এই কারণে রিমা তাকে দেখতে পারে না। তানিয়া চমকানো দৃষ্টিতে রিমার দিকে তাকালো। রিমার চোখে মুখে খুশির ঝিলিক। তানিয়াকে কথাটা বলতে পেরেছে বলে আ’ত্মিক শান্তি পাচ্ছে।

রিমার রাফসানকে ভালোলাগে শুনে তানিয়ার খুব একটা ভাবান্তর হলো না। বুকের ভেতরটায় চিনচিনে ব্য’থা ও অনুভব করলো না। তবুও রিমার কথার পরিপ্রেক্ষিতে শক্ত গলায় বলল,
“আপনার যাকে ভালোলাগে সেই ব্যক্তির আপনাকে ভালোলাগে তো? এক পাক্ষিক ভালোবাসা হলে আবার সমস্যা।

তানিয়ার কথায় রিমা কিছুটা বিচলিত হলো। তবে সেটা তানিয়াকে বুঝতে দিল না। ঠোঁটের কোণে হাসি রেখে তানিয়ার দিকে খানিকটা এগিয়ে এসে বলল,
“ভালোবাসাটা এক পাক্ষিক নয় বলেই তো তোমার কাছে বলার সাহস পেলাম।

তানিয়া আরো চমকে উঠল। রিমার কথাটা কানে যাওয়া মাত্রই অবি’শ্বাস্য চোখে চাইল। রিমা সেদিকে পাত্তা না দিয়ে রান্নাঘর ছেড়ে চলে গেল। তানিয়া বি’স্মিত নয়নে তাকিয়ে রইল। রিমার কথাটা বিশ্বাস হচ্ছে না। তবে কি এই কারণেই উনি এমন আচরণ করছে?
_______________

আজকে রাফসান গত দিনগুলোর আজকে বাহিরে গেল না। বাসার মধ্যেই রইল। তানিয়া টেবিলে সকালের নাস্তার জন্য খাবার এনে রাখছে। ড্রয়িং রুমের সোফায় রাফসান, রনিত, রিমা, রিতা বসে আছে। রিমা, রিতা, রাফসান কোনো একটা বিষয় নিয়ে কথা বলছে। তবে রনিত ওদের থেকে আলাদা। ওদের থেকে কিছুটা দূরে বসে তানিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।

রাফসানের আচমকা রনিতের দিকে চোখ গেল। রনিতকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে দৃষ্টি অনুসরণ করে রাফসানও সেই দিকে তাকাল। তৎক্ষণাৎ রাফসানের চোখ, মুখ শক্ত হয়ে গেল। মেয়েটা কি ইচ্ছে করে এসব করছে?

তানিয়া জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢালছে। ঠিক তখনই শাড়ির আঁচলের খানিকটা অংশ সরে গিয়ে উদরের একটু অংশ উন্মু’ক্ত হয়ে গেছে। তানিয়ার উন্মু’ক্ত উদরের দিকে লোভা’তুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রনিত। রাফসান আর স’হ্য করতে পারল না। সারা শরীর রাগে কাঁপছে।

রনিতের দিকে একবার অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে রিমা, রিতার কথা থামিয়ে দিয়ে উঠে দাঁড়াল। তানিয়ার সামনে গিয়ে চোখ মুখ শক্ত করে কড়া গলায় ধ’মকের স্ব’রে বলল,
“এক্ষুনি রুমে আসো।

হঠাৎ করে রাফসানের এমন ধ’মকে উজবুকের মতো তাকাল তানিয়া। রাফসানের চোখ, মুখের কাঠি’ণ্যতা দেখে চমকে উঠল। মানুষটা কী রেগে আছে? কিন্তু কেন রেগে আছে? তানিয়া অবাক কন্ঠে বলল,
“রুমে কেন যাব?

এমনিতেই রাগে শরীর দাউদাউ করে জ্ব’লছে। তার উপর কথা না শুনে পাল্টা প্রশ্ন করায় রাফসানের রাগের পরিমাণ আরেক ধাপ বেড়ে গেল। রাফসান ডাইনিং টেবিলে জোরে হাতটা বারি মেরে উচ্চ’স্বরে চেঁচিয়ে বলল,
“আমি যেতে বলেছি যাবে। এতো প্রশ্ন করছো কেন?

ডাইনিং টেবিলে জোরে বারি মারার ফলে ডাইনিং টেবিলে থাকা প্লেট, গ্লাস গুলো নড়েচড়ে উঠে ঝনঝন শব্দ হলো। সেই সাথে রাফসানের এমন চেঁচিয়ে উঠার ফলে তানিয়া ভয় পেয়ে গেল। রিমা, রিতা অবাক চোখে চেয়ে রইল। তবে রনিতের মুখে হাসি। রাফসানের রাগের কারণটা তার কাছে স্প’ষ্ট।

রাফসানের এহেন রাগ দেখে তানিয়া কথা বাড়ালো না। বিনা বাক্য রুমের দিকে পা বাড়ালো। তানিয়ার পিছু পিছু রাফসান রুমে গেল। রুমের দরজা আটকে তানিয়ার দুই বাহুতে হাত রেখে দাঁতে দাঁত চেপে ক্ষি’প্ত স্বরে বলল,
“সমস্যা কি তোমার? আমার বউ হয়ে আমার চোখের সামনে আমার ভাইয়ের সাথে রঙ লীলা করবে আর আমি বসে বসে দেখবো? তোমার কি মনে হয় আমাকে? আমি খুব ভালো? চুপচাপ সবকিছু স’হ্য করছি বলে ভেবো না আমি কিছু করতে পারবো না। স’হ্যের সীমা অতিক্রম করলে কতটা ভয়’ঙ্কর হবো ভাবতেও পারবে না।

রাফসানের কথার মানে খুবই কঠিন মনে হলো। এমন কথার মানে বুঝতে পারল না তানিয়া। কি করেছে সে? এসব বলার মানে কি? রাফসানের বলা ‘ আমার বউ হয়ে আমার চোখের সামনে আমার ভাইয়ের সাথে রঙ লীলা করবে আর আমি বসে বসে দেখবো?’ কথাটা কানে বাজতেই তানিয়া বললো,
“আপনার ভাইয়ের সাথে রঙ লীলা করছি মানে? কি বুঝাতে চাচ্ছেন আপনি?

তানিয়ার এমন অবুঝ ভ’ঙ্গি রাফসানের একদম স’হ্য হচ্ছে না। মেয়েটা এতোটা নাটক করতে পারে? এতোটা? শ’ক্ত ক’ন্ঠে আবারো বলল,
“কি ভেবেছো, আমি কিছু জানি না? আমাকে স্বামী হিসেবে না মেনে কিসের কারণে তিনটা বছর এখানে আছো জানি না আমি? তোমার এখানে থাকার কারণ তো রনিত। তাই না?

#চলবে

#প্রিয়া_তুমি
#পর্বঃ১১
#লেখিকা_লক্ষী_দেব

তানিয়া অবাক চোখে চেয়ে রইল। রাফসানের কথাগুলো তীরের মতো গিয়ে বুকে বিঁধলো। রাফসান কথাটা বলে জোরে জোরে শ্বা’স নিচ্ছে। নিজের রাগটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে। নিজেকে ধা’তস্থ করে তানিয়ার দিকে শীতল চোখে তাকালো। চোখ দুটোতে গভীর প্রেম নিয়ে, মুগ্ধতা নিয়ে কন্ঠে অসহা’য়ত্ব নিয়ে বলল,
“ভালোবাসি তো তোমায়। প্লিজ আমার সাথে এমনটা করো না। ক’ষ্ট হয়, বুকটা তোমার শুন্য’তায় খাঁ খাঁ করে।

তানিয়া বিমূঢ় হয়ে কথাগুলো শুনলো। রাফসানের এই কথাগুলো তার হৃদয় স্প’র্শ করতে পারেনি। রাফসান একটু থেমে আবারো বলল,
“তিনটা বছর কি যন্ত্র’ণায় কেটেছে একটু যদি টের পেতে। একটু যদি বুঝতে পারতে তোমার অবহেলা আমায় কতোটা আঘাত করেছে। কিন্তু তার থেকে বেশি আঘাত আমি এখন পাচ্ছি। আমার হৃদয়টা ক্ষ’ত-বি’ক্ষত হয়ে যাচ্ছে। আমি মানতে পারছি না। আমি কিছুতেই মানতে পারছি না তুমি রনিতকে ভালোবাসো।

তানিয়া শুকনো ঢোক গিলল। রাফসানের চোখের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছি’ল্য করে হাসল। ঘৃ’নিত দৃষ্টি তাকিয়ে শীতল স্ব’রে বলল,
“আপনি জানেন, ঠিক তিন বছর আগে আমি আপনাকে যতটা ঘৃ’না করতাম তার চেয়ে দ্বিগুণ ঘৃ’ণা এখন করছি। সেদিন কোনো পুরুষের নাম উল্লেখ ছাড়া আমার চরিত্রে কল’ঙ্ক লেপেছিলেন। কিন্তু আজকে? আজকে আপনি আপনার ভাইয়ের সাথে জড়িয়ে প্রকাশ্যে আমায় চরিত্র’হীন বানিয়ে দিলেন। তাও বিনা দো’ষে।

রাফসান চমকে উঠল। চমকানো দৃষ্টিতে তানিয়ার দিকে তাকাল। তানিয়ার চোখে একরাশ ঘৃ’ণা দেখে বুকের ভেতরটা ছ’লাৎ করে উঠলো। যেই চোখে প্রেম দেখতে চায়, ভালোবাসা দেখাতে চায় সেই চোখে ঘৃ’ণা মানা যায়? হৃদয়টা কেঁপে উঠে। রাফসান অবাক ক’ন্ঠে বলল,
“বিনা দো’ষে মানে? তুমি রনিতকে ভালোবাসো না?

তানিয়া দুদিকে মাথা নাড়িয়ে “না” বুঝালো। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“হয়তো কোনো এক সময় ভালোলাগা ছিল কিন্তু ভালোবাসা হয়নি।

রাফসান তানিয়ার কথায় আরো অবাক হলো। সেই সাথে মনের মাঝে ক্ষানি’কটা আশার আলো জ্ব’লে উঠলো। তানিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
“তবে রনিত যে বললো। তুমি রনিতের জন্য এতো দিন এখানে আছো।

তানিয়া রাফসানের কথায় মাথা নাড়ালো। যার অর্থ না। রাফসানের সাথে সাথে ঘৃ’নার পাল্লাটা রনিতের দিকে ও ভারী হলো। শান্ত স্বরে বলল,
“উনি কি বলেছিল আপনাকে?

রাফসান চোখ বন্ধ করে শ্বাস বন্ধ ফেলল। তারপর স্বাভাবিক কন্ঠে বলতে লাগলো,
“সেদিন রনিত আমাকে মেসেজ দিয়ে বলে একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে দেখা করতে। আমার সাথে নাকি জরুরী কথা আছে। তবে কথাগুলো বাড়িতে বলা যাবে না। আলাদা ভাবে বলতে হবে।

আমি রনিতের কথা রাখলাম। বাড়ি থেকে বেরিয়ে রেস্টুরেন্টে গিয়ে দেখা করলাম। আমাকে দেখে রনিতের মুখে কুটিল হাসি ফুটে উঠল। হাসি মুখে বলল,
“বসে পড়। কখন থেকে অপেক্ষা করছি।

আমি ভ্রুঁ কুঁচকে তাকালাম। চেয়ার টেনে বসে রনিতের এতো জরুরি তলব করার কারণ জানতে চাইলাম। রনিত তখন হেসে বলল,
“আগে কিছু অর্ডার দে। কে জানে কথাগুলো শুনার পর হয়তো কিছু খেতে পারবি না। তার চেয়ে আগে খেয়ে নে।

রনিতের কথায় আমি আ’শ্চর্য হলাম। সেই সাথে কৌতুহল বাড়তে লাগলো। কি এমন কথা বলবে যে আমি শুনে কিছু খেতে পারবো না? খাবারের চিন্তা বাদ দিয়ে কথাটা শুনতে বললাম,
“কি বলবি বল। এতো বাহানা করার কি আছে? যা বলবি সোজাসাপ্টা বলে দে।

রনিত টেবিলের মধ্যে দুই কনুই রেখে রাফসানের দিকে একটু ঝুঁকে এসে বলল,
“সাবধান করে দিলাম তাও যদি শুনতে চাস আমি বলছি। তবে কথাটা শুনে যদি মনে ক’ষ্ট হয়, হৃদয়টা ভেঙে যায়। তাহলে কিন্তু আমি দায়ী না।

আমি তখন বি’রক্ত হলাম। রনিতের কথার ধরনে বি’রক্ত হয়ে অনীহা প্রকাশ করে বললাম,
“তুই কি কথাটা বলবি নাকি আমি চলে যাব? এভাবে কথা না প্যাঁচিয়ে আসল কথাটা বল।

রনিত আবারো হেসে উঠল। কুৎ’সিত হাসি। আমি রনিতের দিকে কড়া দৃষ্টিতে তাকাতেই হাসি থামিয়ে দিয়ে বলল,
“বলছি বলছি।

রনিত শা’ন্ত হলো। আমি যেই কথাটা শোনার জন্য এতক্ষণ ধরে কৌতুহল নিয়ে বসে ছিলাম, ঘুনাক্ষরেও বুঝতে পারিনি সেই কথাটা আমার হৃদয়টাকে এফোড়ওফোড় করে দিবে। রনিত আমার চোখে চোখ রেখে বলল,
“তুই জানিস, তানিয়া যে আমায় ভালোবাসে?

বিশ্বাস করো, এই কথার চেয়ে কষ্ট’দায়ক, বেদনা’দায়ক কথা আমার জীবনে আমি দুটো শুনিনি। রনিতের কথায় বুকটা কেঁপে উঠলেও অস’ম্ভব রাগে চোখ দুটো লাল হয়ে গেল। দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,
“আমার বউকে নিয়ে আরেকটা উল্টা পাল্টা কথা বললে একদম খু’ন করে ফেলবো রনিত।

রনিত আমার কথায় হেসে উঠল। তাতে আমার রাগটা আরো বেড়ে গেল। রনিত সেই দিকে পাত্তা না দিয়ে বলে উঠল,
“তোর মনে হয় আমি উল্টা-পাল্টা কথা বলছি? উল্টা-পাল্টা কথা বলে আমার লাভ কী? তুই জানিস তানিয়া তোকে স্বামী হিসেবে মানে না। তারপরও তানিয়া এই বাড়িতে আছে। কেন আছে প্রশ্ন জাগে নি? একবার ও মনে হয়নি তানিয়া চলে যেতে পারে? চলে যেতে পারলে কেন গেল না?

আমার রাগত মস্তি’ষ্ক খানিকটা ঠান্ডা হলো। রনিতের কথাগুলো মাথায় ঢুকল। আসলেই তো। তানিয়া যেখানে আমায় মানে না সেখানে আমার বাড়িতে কেন আছে? কিসের টানে? আমার মনের প্রশ্ন গুলো আমার মাঝে থাকতেই রনিত আবারো বলে উঠল,
“তানিয়া আমার জন্য এখানে আছে। আমায় ভালোবাসে বলে।

রনিতের কথাটা শোনা মাত্র দ্বিতীয় দফায় বুকটা জ্ব’লে উঠল। রাগে শরীরটা রী রী করে উঠলো। রনিতকে কেটে কুঁচি কুঁচি ফেলতে ইচ্ছে হলো। রাগী স্বরে বলে উঠলাম,
“তুই যা বলবি তাই বিশ্বাস করে ফেলবো? যদি কথাগুলো মি’থ্যে হয় তাহলে তোর কি অবস্থা হবে তুই ভাবতে ও পারছিস না?

রনিত আবারো হাসলো। মোবাইলটা বের করে চোখের সামনে একটা ছবি তুলে ধরল । যাতে স্প’ষ্ট দেখা যাচ্ছে রনিতের হাত থেকে তুমি ফুল নিচ্ছো। দুজনের মুখেই হাসি হাসি ভাব। আমার যেন দুনিয়াটা উল্টে গেল। মুখ ফোটে কোন কথা বলার শক্তি পেলাম না।

রনিত মোবাইলটা পকেটে গুঁজে আবারো বলল,
“ছবিটা তিন বছর আগের। তানিয়ার আর আমার সম্পর্কটা তিন বছরের। তবে হঠাৎ করে একদিনের মধ্যে তোদের বিয়ে হয়ে যাওয়ায় কিছু করার সুযোগ হয়নি।

আমি আর শুনলাম না। রনিতের বলা কথাগুলো এক কান দিয়ে ঢুকে আরেক কান দিয়ে বের হয়ে যেতে লাগল। আমার মাথায়, মনে কেবল একটাই ভয়। তুমি রনিতকে ভালোবাসো। সেই সাথে তোমার প্রতি ঘৃ’না জন্মালো। ইচ্ছে করেই তোমাকে এড়িয়ে চললাম। রাত করে বাসায় ফিরে তোমার মুখোমুখি হতে চাইলাম না। কিন্তু আমার একই বাড়িতে থেকে মুখোমুখি না হওয়া হয়তো অস’ম্ভব ব্যাপার। তাই আমাদের দেখা হয়ে গেল।

তানিয়া রাফসানের কথাগুলো শুনলো। রাফসানের কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত একটা শব্দও উচ্চারণ করল না। রাফসানের কথাগুলো শেষ হতেই বুঝতে পারল সবটা দো’ষ রনিতের। রনিত রাফসানকে উল্টো পাল্টা বুঝিয়েছে বলে রাফসান সেই প্রসঙ্গে এমন করেছে। তবে রাফসানের ও যে ভুল নেই তা নয়। তানিয়া রাফসানের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আপনি না আমায় ভালোবাসেন? তাহলে বিশ্বাস কেন করলেন না? যেখানে বিশ্বাস নেই সেখানে কি আদৌ ভালোবাসা আছে?

রাফসান আহত দৃষ্টিতে তানিয়ার দিকে তাকাল। তারপর ক্ষানি’কটা হেসে বলল,
“তোমার সাথে আমার বিশ্বাসের সম্পর্ক নেই তানিয়া। তোমার সাথে আমার সম্পর্কটা একপাক্ষিক ভালোবাসার মতো। যেখানে শুধু আমি ভালোবেসে গেছি। কিন্তু তুমি ছিলে নি’র্লিপ্ত। সেখানে যদি কেউ এসে আমায় প্রমাণ দেখিয়ে বলে তুমি তাকে ভালোবাসো তাহলে আমি সেটা বিশ্বাস করবো না? এখানে কি অবিশ্বা’সের কিছু আছে?

তানিয়া চুপ হয়ে গেল। রাফসানের কথার পরিবর্তে বলার মতো কোনো শব্দ খুঁজে পেল না। রাফসান প্রশ্ন করল,
“তুমি রনিতের হাত থেকে ফুল নিয়েছিলে?

তানিয়া রাফসানের দিকে তাকাল না। মাথা নিচু করে আলতো স্বরে বলল,
“হ্যাঁ, নিয়েছিলাম।

#চলবে