প্রিয়া তুমি পর্ব-১২

0
103

#প্রিয়া_তুমি
#পর্বঃ১২
#লেখিকা_লক্ষী_দেব

রাফসান হতা’শার শ্বা’স ফেলল। থপ করে গিয়ে বিছানায় বসে পড়ল। ভুল, ভুল। আবারো সে একই ভুল করছে। সেই সাথে তানিয়ার থেকে পেয়েছে একরাশ ঘৃ’না, ঘৃ’না আর ঘৃ’না। ভালোবাসার মানুষের চোখে ঘৃ’ণা দেখার চেয়ে কষ্ট’দায়ক ব্যাপার আদৌ দুইটা আছে? উহু। বোধহয় নেই। রাফসান ও সেই ক’ষ্টের আগুনে দ’গ্ধ হচ্ছে। বুকটা দাউদাউ করে জ্ব’লছে। রাফসান তানিয়ার দিকে তাকিয়ে আ’ক্ষেপের স্বরে বলল,
“ভুল হয়ে গেছে তানিয়া। আমি আবারো ভুল করে ফেলেছি। প্লিজ ক্ষ’মা করে দাও।

তানিয়ার কোনো ভাবান্তর হলো না। সে তার মতোই কঠোর হয়ে রইল। তাচ্ছি’ল্যের স্বরে বলল,
“আপনি আদৌ ক্ষমার যোগ্য তো?

রাফসান আ’হত দৃষ্টিতে তাকাল। নিজের ভুলের কারণে সে নিজেও অনু’তপ্ত। তানিয়া আবারো বলে উঠল,
“আপনি আমায় বিশ্বাস না করেন, একবার জিজ্ঞেস তো করতে পারতেন। জাস্ট একটা ছবি দেখে আপনি আমায় চরিত্র’হীন বলে দিলেন? এতো সহজে? ফুল নিয়েছি তো? তাতেই আমি চরিত্র’হীন হয়ে গেলাম?

রাফসান চুপ করে রইল। কি বলবে সে? বলার মতো মুখ আছে নাকি তার? ভুল তো সত্যিই করেছে। তানিয়া রাফসানের নীরবতা দেখে বলতে শুরু করল,
“আপনার ভাইকে আমার ভালো লাগতো। ভালোলাগাটা কেবল ভালোলাগাতেই সীমাবদ্ধ ছিল। ভালোলাগা ভালোবাসা হতে পারেনি। ভালোবাসার বদলে ঘৃ’না হয়েছিল। হ্যাঁ, আমি আপনার ভাইকে ও ঘৃ’না করি।

রাফসান তানিয়ার দিকে তাকাল। দুচোখে কৌতুহল স্প’ষ্ট দেখা যাচ্ছে। রাফসান অবাক স্ব’রে বলল,
“ঘৃ’ণা করো? কেন ঘৃ’ণা করো? কি করেছে রনিত?

তানিয়া চোখ বন্ধ করলো। সেই দিন, সেদিনের কথা মনে করলো। যেদিন প্রথম রনিতের সাথে দেখা হয়েছিল। তানিয়া চোখ খুলে বলতে শুরু করল,
“সেদিন ভার্সিটি থেকে বের হতেই আমার সামনে একটা ছেলে এসে দাঁড়াল। একটা গোলাপ ফুল এগিয়ে দিয়ে বলল,
“আপু ফুলটা নিন প্লিজ।

আমি হত’ভম্ব হয়ে তাকালাম। অবাক হয়ে বললাম,
“ফুল নিবো? কেন ফুল নিবো? আপনি কে হ্যাঁ? আপনার থেকে আমি কেন ফুল নিতে যাব?

ছেলেটা আমার কথায় হাসল। মুচকি হেসে বলল,
“আমার থেকে ফুল নিতে সমস্যা কোথায়? ফুলই তো নিতে বলেছি। প্রেম করতে তো বলিনি।

“প্রেম করতে না বললে ফুল কেন দিচ্ছেন? প্রেম করার হলে ফুল দিবেন। প্রেম’হীন ফুল দেওয়া অন্যা’য়। অন্যা’য় মানে ঘোর অন্যা’য়। আপনি সেই অন্যা’য় করে অপরাধ করেছেন।

ছেলেটা আমায় কথায় আবারো হাসলো। আমার দিকে বাড়িয়ে দেওয়া ফুলটার থেকে ঘ্রান নিয়ে বলল,
“আমি তো এই অন্যা’য়ের কথা জানতাম না। আজ না হয় প্রেম’হীন ফুল নিন। অন্য দিন প্রেমময় ফুল দিয়ে অন্যা’য়ের প্রায়’শ্চিত্ত করে নেব।

আমি হেসে ফুলটা নিলাম। গোলাপটাকে আঙুল দিয়ে ছুঁইয়ে বললাম,
“ধন্যবাদ। তবে আমার প্রেমময় ফুল লাগবে না। যাকে ভালোবাসবেন, যার প্রতি হৃদয়ে প্রেম জাগবে তাকে না হয় প্রেমময় ফুল দিয়েন।

ছেলেটা আমার কথায় হাসল। কোনো জবাব না দিয়ে চলে গেল। আমিও চলে গেলাম। পরের দিন আবারো ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে ছেলেটার মুখোমুখি হলাম। অবাক ক’ন্ঠে শুধালাম,
“আপনি এখানে?

ছেলেটা আমার কথায় হেসে বলল,
“এই যে ফুল দিতে এলাম। প্রেম’হীন ফুল। যতদিন না কারো প্রতি হৃদয়ে প্রেম জাগবে ততদিন না হয় আপনি এই প্রেম’হীন ফুল নিন।

আমি ছেলেটার হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলাম গতকালের মতোই তরতাজা একটা লাল গোলাপ। ছেলেটা আমার দিকে গোলাপটা এগিয়ে দিল। আমি গোলাপটা নিয়ে হাতে নিয়ে বললাম,
“এটা ঠিক না। আপনি আমাকে আর ফুল দিবেন না। পরে দেখা যাবে এই ফুল অভ্যা’সে পরিণত হবে। আপনার যদি কারো প্রতি প্রেম জন্মায় তাহলে আমি আর ফুল পাব না। তাই বলছি আপনি আর ফুল দিবেন না।

ছেলেটা আমার কথা শুনলো না। আমার বারণ অমা’ন্য করে প্রতিদিন ফুল নিয়ে আসতো। আমি মুখে ফুল আনতে না করলেও আমার ভালো লাগতো। আসতে আসতে ভালো লাগতে শুরু করেছিল কি-না।

তখন থেকে পরিচয় শুরু। পরিচয় বলতে শুধু নামই জানতাম। আর কিছু না। দুজনের দেখা হতো ভার্সিটি শেষে। প্রতিদিন দেখা হওয়া ফুল নেওয়া অভ্যা’সে পরিণত হয়ে গেল। একদিন ভার্সিটি শেষে উনাকে পেলাম না। ছুটি হওয়ার পর পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করলাম। এদিক ওদিক তাকিয়ে খুঁজতে লাগলাম। তখনই পেছন থেকে শুনতে পেলাম,
“আমায় খুঁজছো বুঝি?

ততদিনে সম্পর্কটা আপনি থেকে তুমিতে পৌঁছেছিল। তুমি অবশ্য উনিই বলতেন। আমি উনার কথায় মাথা নাড়িয়ে বললাম,
“প্রতিদিন অপেক্ষা করেন তো তাই খুঁজছিলাম।

উনি মুচকি হাসলেন। আমি উনার হাতের দিকে তাকিয়ে অবাক হলাম। রোজ যেই হাতে গোলাপ থাকে হাতটা সেদিন শূন্য। আমি হাতের দিকে তাকিয়েই প্রশ্ন করলাম,
“আজকে ফুল আনেননি?

“আজকে তো ফুল আনতে ভুলে গেছি।

উনার কথায় মনটা খারাপ হয়ে গেল। মুখটা মলিন করে ছোট্ট করে বলেছিলাম,
“ওহ আচ্ছা।

আমার মলিন মুখের দিকে তাকিয়ে উনি উচ্চ’স্বরে হেসে উঠলেন। উনার হাসির কারণ বুঝতে না পেরে অবাক চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করলাম,
“হাসছেন কেন আপনি? এখানে হাসার কি হলো?

উনি হাসি থামালেন। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
“বলছি দাঁড়াও।

উনি আমাকে দাঁড় করিয়ে চলে গেলেন। মিনিট দুয়েকের মাঝেই গোলাপ ফুল হাতে ফিরে এলেন। ফুলটা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে চোখের ইশারায় নিতে বললেন। আমি ফুলটা নেওয়ার পর বললেন,
“ইচ্ছে করেই ফুলটা আনি নি। দেখতে চেয়েছিলাম তোমার প্রতিক্রিয়া কেমন হয়।

আমি মুখ ভেং’চি দিয়ে বললাম,
“আপনি খুবই খারাপ।

আমার কথায় উনি হেসে উঠলেন। এই পর্যন্তই উনার সাথে আমার ভালোমতো কথা হয়েছিল। এরপর থেকে কেবল তি’ক্ততা। সেদিন বাসায় গিয়ে শুনি আমার বিয়ে। সবাইকে এতবার বারণ করেও বিয়ে দেওয়া থেকে বিরত রাখতে পারিনি। সেই দিন উনি কোনো কারণে বিয়েতে যেতে পারেনি। বিয়ের পর যখন আপনাদের বাসায় আসলাম তখনও উনার সাথে দেখা নেই। কিন্তু আমি যখন এই রুম থেকে নিচে নামতে যাব তখন চেনা কন্ঠ’স্বর শুনে থমকে দাঁড়ালাম।

আধভেজা দরজার দিকে এগিয়ে শুনতে পেলাম উনি কাউকে বলছে,
“আরে আমি তানিয়াকে ভালোবাসি না। প্রতিদিন ওর জন্য ফুল নিয়ে যাই, একটু ভালো করে কথা বলি ও যেন আমার প্রতি দুর্বল হয় সেজন্য। একবার যদি টোপ গিলে তাহলেই কেল্লা ফতে। আমি বাজী জিতে যাবো।

আমি উনার কথায় কেঁপে উঠেছিলাম। উনি ইচ্ছে করে আমার ইমোশন নিয়ে খেলছিলেন। শুধুমাত্র বাজী ধরে আমার ইমোশন নিয়ে খেলছিলেন। মানুষ কতটা নি’কৃষ্ট হলে এমন করতে পারে? উনার প্রতি আমার ভালোলাগাটা সেই দিনই মরে গেছিল। ভালো লাগার বদলে ঘৃ’না জন্মেছিল।

তানিয়া কথা শেষ করে চুপ হয়ে গেল। জোরে জোরে শ্বা’স ফেলতে লাগল। রাফসানের চোখ মুখ শ’ক্ত। তবে নিজের করা ভুলগুলোর কথা মনে পড়তেই মুখটা মলিন হয়ে গেল। তানিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমাকে ক্ষমা করা যায় না?

তানিয়া রাফসানের দিকে তাকাল। রাফসানের মলিন মুখের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছি’ল্য করে হেসে বলল,
“আপাতত পারছি না। আপনার কথাগুলো আমার হৃদয়ে তীরের মতো বিঁধেছে। হৃদয়টা ক্ষ’ত-বি’ক্ষত করে দিয়েছে। সেই ক্ষ’ত স্থানে প্রলেপ লাগানো এতো সহজ না।

তানিয়া কথাটা বলে চলে গেল। আর দাঁড়াল না। জীবনের সবকিছু ফিকে মনে হচ্ছে। সে তো এমন সংসার চায়নি। এমন স্বামীও আশা করেনি। তবুও জীবন তাকে ঘুরেফিরে এই জায়গায় এনে দাঁড় করিয়েছে। যেখানে সুখ, শান্তির বদলে আছে ঘৃ’না, তি’ক্ততা। এভাবে কি সংসার হয়? এভাবে কি ভালো থাকা যায় নাকি অপর পাশের মানুষটিকে ভালো রাখা যায়?

তানিয়া চলে যেতেই রাফসান বিমূঢ় হয়ে বসে রইল। তার ভুলের কী মাফ করা যায় না? তানিয়া কি মাফ করবে না? ইশ, ভেতরটা পুড়ছে। বুকটা দ’গ্ধ হচ্ছে। তানিয়া যদি ভেতরের ক্ষত’টা দেখতো, তাহলে কি এতোটা কঠোর হতে পারতো? এভাবে একটা মানুষকে ক’ষ্ট পেতে দিত? রাফসান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“ভালোবাসার য’ন্ত্রণা পৃথিবীর কাউকে স্প’র্শ না করুক।

#চলবে