প্রিয়া তুমি পর্ব-১৩+১৪

0
101

#প্রিয়া_তুমি
#পর্বঃ১৩
#লেখিকা_লক্ষী_দেব

তানিয়া সোফায় বসে রুমের যাওয়ার জন্য হাঁসফাঁস করছে। কিন্তু কিছুতেই রুমে যেতে পারছে না। রিতা সেই কখন থেকে হাবিজাবি কীসব বলে যাচ্ছে। এদিকে সারাদিন কাজ করে শরীরটা ক্লা’ন্ত লাগছে। একটু বিশ্রাম চাচ্ছে। তানিয়া রিতার কথা থামিয়ে ক্লা’ন্ত স্বরে বলল,
“রিতা আজকে উঠি। কাল নাহয় তোমার কথা শুনবো।

রিতা মুখটা মলিন করে তানিয়ার দিকে তাকাল। অনেকক্ষণ যাবত তানিয়াকে আটকে রাখছে। এভাবে আর কতক্ষণ? রিতা মোবাইলের দিকে তাকিয়ে হতা’শার শ্বা’স ফেলল। বিরস গলায় বলল,
“এমন কেন করো ভাবী? আরেকটু বসো না। আমি চলে গেলে তো আর বলবো না।

তানিয়া রিতার কথায় ত’প্ত শ্বা’স ফেলল। রিতার কথার পরিবর্তে আর রুমে যাওয়ার কথা মুখে আনতে পারল না। রিতার গালে হাত রেখে বলল,
“এভাবে বলছো কেন? আমি তোমায় ক’ষ্ট দিয়ে বলতে চাইনি।

তানিয়া এখন আর যাওয়ার কথা বলবে না বলে রিতার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটলো। হাসি হাসি মুখে প্রফুল্ল ক’ন্ঠে বলল,
“আমি ক’ষ্ট পাইনি ভাবী।

তানিয়া ফিলচে হাসলো। রিতা আবারো কথা বলতে লাগলো। কথা বলতে বলতে বারবার মোবাইলের দিকে তাকাতে থাকলো। ঘুম তো তারও পেয়েছে। কিন্তু উঠতে পারছে না। হঠাৎ করে রিতার মোবাইলটা জ্ব’লে উঠল। রিতা মোবাইলের দিকে তাকিয়ে মেসেজটা পড়ে তানিয়াকে বলল,
“যাও ভাবী। তোমার বোধহয় ঘুম পেয়েছে তুমি রুমে চলে যাও।

রিতার কথায় তানিয়া অবাক চোখে তাকাল। এতক্ষণ ধরে বসিয়ে রেখে এখন অর্ধেক কথা বলে বলছে রুমে চলে যেতে? তানিয়ার মনে খটকা লাগলো। ভ্রুঁ জোড়া কুঁচকে বলল,
“তুমি কথা শেষ না করেই হঠাৎ চলে যেতে বলছো যে?

রিতা তানিয়ার কথায় ভড়কে গেল। ইত’স্তত বোধ করে স্বাভাবিক গলায় বলল,
“আরে আমারো ঘুম পেয়েছে। তাই বলছি আরকি।

তানিয়া কথা বাড়ালো না। রিতার থেকে ছাড়া পেয়ে রুমে যেতে পা বাড়াল। রুমের ভেতর গিয়ে বুঝতে পারল সবটা রুম অন্ধ’কারে ডুবে আছে। বাতি নেই কোনো আলো নেই। তানিয়ার ভ্রুঁ আপনা-আপনি কুঁচকে এলো। মনটা বলে উঠল,
“সন্ধ্যায় তো আলো জ্বা’লিয়ে গেলাম। তাহলে এখন নিভলো কীভাবে?

তানিয়া প্রশ্নের উত্তর পেল না। মস্তি’ষ্ক এই প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম হচ্ছে না। তানিয়া আঁধার হাতড়ে লাইটের সুইচ অন করে ঘরটাকে আলোকিত করল। বিছানার দিকে তাকাতেই স্ত’ব্ধ হয়ে গেল। বি’স্মিত নয়নে বিছানার দিকে তাকালো।

বিছানার ঠিক মাঝবরাবর রাফসান বসে আছে। হাতের মধ্যে একটা বড় কাগজে বড় বড় অক্ষরে লিখে রেখেছে “I’m sorry”। তাছাড়া বিছানায় অনেকগুলো বেলুন রাখা আছে। প্রতিটা বেলুনের গায়ে “I’m sorry” লেখা। তানিয়া চোখ বড়বড় করে তাকাল। মানুষটা কী তার জন্য এসব করেছে? শুধুমাত্র তার রাগ ভাঙানোর জন্য? তানিয়া উত্তর পেল না।

রাফসান ঘাটের মাঝখানে অসহায় মুখ করে বসে আছে। তানিয়ার প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য উ’ন্মুখ হয়ে চেয়ে আছে। কিন্তু তানিয়ার থেকে আশাতীত রেসপন্স না পেয়ে মুখটা চুপসে গেল। তানিয়া তখনও একই জায়গায় ঠাই দাঁড়িয়ে আছে।

তানিয়া নিজের মুখ থেকে চমকানো, থমকানো বিষয়টা উড়িয়ে দিল। মুখে কা’ঠিন্যতা ফুটিয়ে তুলে বলল,
“এসব কি করেছেন?

রাফসান তানিয়ার কথায় হতা’শার শ্বা’স ফেলল। মেয়েটা এমন কেন? বুঝেও বুঝতে না পারার ভান করছে কেন? রাফসান গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,
“I’m sorry ।

তানিয়া চুপ করে রইল। কোনো উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করল না। ধীর পায়ে বিছানার দিকে এগিয়ে গেল। রাফসান খাটের মাঝখান থেকে সরে বসল। তানিয়া বিছানায় পরে থাকা বেলুন গুলো আসতে আসতে করে সরিয়ে ফেলল। রাফসানের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
“সরি কী সব ঠিক করে দেয়?

রাফসান এবার ক্রু’দ্ধ হলো। মেয়েটা এবার একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করছে না? রাফসান নিজের রাগটা সামলানোর চেষ্টা করল। রেগে গেলে হবে না। রেগে গেলে কোনো কিছুই ভালো হয় না। নিজেকে ধা’তস্থ করে শান্ত হলো। তানিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে শীতল স্ব’রে বলল,
“সবকিছু ঠিক না করতে পারে কিন্তু অনু’তপ্ত হওয়া ব্যক্তিকে সুযোগ তো দিতে পারে।

তানিয়া চুপ রইল। রাফসান কথাটা খুব একটা ভুল বলেনি। সেই মোতাবেক রাফসানের কথার পরিপ্রেক্ষিতে কোনো কিছু বলতে পারল না। তানিয়ার চুপ করে থাকাটা রাফসানের পছন্দ হলো না। কিছুতেই স’হ্য হচ্ছে না। তানিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“আমাকে কি একটা সুযোগ দেওয়া যায় না?

“আমি তো মনের উর্ধ্বে যেতে পারছি না। মন যেখানে মানছে না সেখানে আমার কি করার আছে? মনের বিরুদ্ধে গিয়ে কাউকে মেনে নেওয়া যায়? ভালোবাসা যায়?

রাফসান দুচোখ বন্ধ করে শ্বা’স নিল। মেয়েটা ভালো কথার মানুষ না। যতই ভালো ব্যবহার করছে ভালোভাবে বুঝতে চাচ্ছে ততই যেন মাথায় উঠছে। রাফসান হাতে থাকা কাগজটা নিয়ে যথা স্থানে রেখে দিল। রুমের লাইটটা নিভিয়ে বিছানায় আসলো। বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিয়ে তানিয়াকে শ’ক্ত গলায় বলল,
“এদিকে এসো।

রাফসানের কথার ধরণ মিনিটের মাঝে পাল্টে যেতেই তানিয়া অবাক হলো। এইতো মানুষটা ঠিক ভাবে কথা বলল। হুট করে এমন পরিবর্তনের হেতু কি? তানিয়া চুপ করে বসে থাকতেই রাফসান আবারো বলে উঠল,
“কি হলো? বললাম তো এদিকে আসতে। কথা কানে যায়নি?

তানিয়া কপাল কুঁচকে তাকাল। ‘এদিকে এসো’ মানে কোন দিকে যাওয়ার কথা বলছে? তানিয়া অবাক ক’ন্ঠে বলল,
“কোথায় যাব আমি?

রাফসান প্রশ্নটা শোনা মাত্র হেঁচকা টান দিয়ে তানিয়া নিজের দিকে আনলো। তানিয়া আচমকা টাল সামলাতে না পেরে রাফসানের বুকের উপর গিয়ে পড়ল। মস্তি’ষ্ক ব্যাপারটা ধরতে পারতেই ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করতে লাগলো। তা দেখে রাফসান আগের মতোই শ’ক্ত গলায় বলল,
“একদম ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা করবে না। বেশি ছটফট করেছো তো ধা’ক্কা দিয়ে খাট থেকে ফেলে দিবো।

রাফসান আচমকা এমন কথায় আহা’ম্মক বনে গেল তানিয়া। কি বললো মানুষটা? খাট থেকে ফেলে দিবে? তানিয়া অবাক চোখে তাকিয়ে রাফসানের পরিবর্তন দেখছে। রাফসানের সু’ক্ষ্ম ধ’মকে ছটফটানি কমলেও তেজ কমলো না এক ফোঁটাও। রাফসানের দিকে তাকিয়ে তেজী স্ব’রে বলল,
“আপনি হাতটা ছেড়ে দিন। আমার হাত ধরার সাহস পেলেন কীভাবে?

“তুমি কি পরনারী নাকি অন্য কারো বিয়ে করা বউ? আমার বিয়ে করা বউয়ের হাত আমি ধরবো এতে সাহসের কি আছে?

তানিয়া চোখ মুখ শক্ত করে তাকাল। তাতে রাফসানের কোনো পরিবর্তন দেখা গেল না। তানিয়ার রাগী ভাবটা সে পাত্তাই দিল না। তোয়া’ক্কা করল না কোনো কিছু। তানিয়া রাফসানের উদ্দেশ্যে কিছু বলতে গেলে রাফসান থামিয়ে দিল। তানিয়াকে বেশ ভারী স্ব’রে ধ’মকে বলল,
“চুপচাপ আমার পাশে শুয়ে পড়। আগে আমার কথা শুনবে তারপর যা বলার বলবে।

রাফসানের আচমকা ধ’মকে দমে গেল তানিয়া। কঠিন কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারল না। রাফসান তার হাতটা এখনো শক্ত করে ধরে আছে। তানিয়া আর হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করল না। রাফসানের পাশে সোজা হয়ে শুয়ে পড়ল। রাফসান তানিয়ার হাতটা বুকে চেপে ধরে বলল,
“জানো, যেদিন রিতাকে নিয়ে ভার্সিটিতে গিয়েছিলাম সেদিনই তোমাকে দেখে মু’গ্ধ হয়েছিলাম। তবে সেই মু’গ্ধতা প্রকাশ করতে পারিনি। সম্পূর্ণ ভুল, বয়কট, ভ্রা’ন্ত ধারণা থেকে মু’গ্ধতার বদলে প্রকাশ করে ফেললাম রাগ, ক্ষো’ভ।

রাফসান কথাটা বলে তাচ্ছি’ল্য করে হাসল। তানিয়া রাফসানের কথা শোনার জন্য উ’ন্মুখ হয়ে চেয়ে আছে। রাফসান একটু থেমে আবারো বলতে শুরু করল,
“সেদিন ভার্সিটি থেকে ফিরে এসেছিলাম। স’ন্ধ্যের সময় যখন ফেসবুকে ছিলাম তখন আচমকা যেন অলৌকিক ভাবে তানিয়া আক্তার নামে আইডিটা সামনে চলে এলো। আমি আইডিতে ঢুকে মেয়েটাকে দেখতে লাগলাম। আমি যখন প্রোফাইলে দেওয়া মেয়েটার ছবির দিকে এক ধ্যানে চেয়ে আছি তখনই কৌতুহল বশত রিতা উঁকি দিয়ে মোবাইলে থাকা মেয়েটাকে দেখল। আমাকে হালকা ধা’ক্কা দিয়ে বলল,
“মেয়েটা কে ভাইয়া? আমার ভাবী নাকি? যেভাবে তাকিয়ে আছো মনে হচ্ছে তাকিয়ে থাকলেই সব পাওয়া হয়ে যাবে।

আমি রিতার কথায় অবাক হলাম। বি’স্মিত নয়নে চেয়ে অবাক কন্ঠে শুধালাম,
“তুই এই মেয়েটাকে চিনিস না? এই মেয়েটাই তো তোকে রেগিং দিল।

রিতা আমার কথায় চোখ বড়বড় করে তাকাল। আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে বললো,
“এটা তো সেই মেয়েটা না।

#চলবে

#প্রিয়া_তুমি
#পর্বঃ১৪
#লেখিকা_লক্ষী_দেব

রিতার কথায় আমি চমকে গেলাম। মস্তি’ষ্কটা ফাঁকা লাগলো। কি বললো রিতা? এই মেয়েটা সেই মেয়েটা না? আমি আবারো জিঙ্গেস করলাম,
“এই মেয়েটা তোকে রেগিং দেয় নি?

রিতা আমাকে ভুল প্রমা’ণিত করে আগের বারের মতোই মাথা নাড়ালো। মুখে বলল ,
“এই মেয়েটা না ভাইয়া। এই মেয়েটা দেখতে কতো সুন্দর, কি মিষ্টি লাগছে। তবে ওই মেয়েটাকে দেখতেই গু’ন্ডি গু’ন্ডি লাগে।

আমি থমকে গেলাম। রিতার কথায় দুনিয়াটা ঘুরে গেল। আমি কী তাহলে ভুল করে ফেললাম? রিতাকে আবারো প্রশ্ন করলাম,
“তুই তো বলেছিলি ফাইনাল ইয়ারের বাংলা বিভাগের ছাত্রী নাম তানিয়া। এই মেয়েটাই তো ফাইনাল ইয়ারের বাংলা বিভাগের ছাত্রী। এর নামই তানিয়া।

রিতা চুপ হয়ে গেল। মনে মনে বোধহয় কিছু ভাবলো। কয়েক সেকেন্ড পরই বলে উঠল,
“একই বিভাগের একই নামের দুইজন থাকতে পারে না? হয়তো তানিয়া নামের দুজন ছিল।

আমি দুচোখ ব’ন্ধ করে ফেললাম। আমার দ্বারা এতবড় ভুল হয়ে গেল? নিজেকে কেমন ছোট ছোট লাগছে। এতো এতো মানুষের মাঝে নি’র্দোষ একটা মেয়েকে নিরপরাধে এতো সব কথা বলে ফেললাম। তাও বিনা নোটিশে। এতো এতো সব জ’ঘন্য কথা মেয়েটাকে খুব ক’ষ্ট দিয়েছে? সোফায় মাথাটা এলিয়ে দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। অনেক বড় একটা ভুল হয়ে গেছে।

মেয়েটার কাছে ভুল স্বীকার করার জন্য মনটা আনচান আনচান করে উঠলো। বুকের ভেতরটা অনু’তপ্তের আগুনে দ’গ্ধ হলো। পরেরদিনই ভার্সিটিতে গেলাম। কিন্তু পরের দিন ভার্সিটিতে গিয়ে মেয়েটার খুঁজ পেলাম না। মেয়েটা নাকি ভার্সিটিতে যায় নি। আমি পরের দিন আবারো ভার্সিটিতে গেলাম। মেয়েটার আগেই গিয়েছিলাম। সৌভাগ্যক্রমে মেয়েটাকে পেয়েও গেলাম। তার পরের ঘটনা তো তোমার জানা।

রাফসান তানিয়ার দিকে তাকাল। তানিয়া সম্মতি দিয়ে বলল,
“হুম জানি।

সেদিন তানিয়া ভার্সিটিতে গিয়েই গেইটের সামনে সেদিনের ছেলেটাকে দেখতে পেল। ছেলেটাকে দেখা মাত্রই রাগে শরীর জ্ব’লতে থাকল। ইচ্ছে হলো ছেলেটাকে গিয়ে ইচ্ছে মতো দুচারটে তি’ক্ত কথা শুনিয়ে আসতে। কিন্তু পরক্ষনেই ইচ্ছেটাকে দমন করে দেয়। কী হবে বলে? সেদিনের করা অপমানটা মুছে যাবে? তানিয়া যে কোনো অপরাধ করেনি তা তো তানিয়া জানে। ভার্সিটির কদাচিৎ কেউ জানলেও সবাই তো জানে না। সকলের মন থেকে তো সেদিনের করা অপমানটা মুছে যাবে না। তার চেয়ে বড় কথা নিজের মন থেকেই তো উঠবে না। তাহলে? কি লাভ তি’ক্ত কথা শুনিয়ে? তার চেয়ে ভালো দেখেও না দেখার মতো করে পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়া।

তানিয়া তাই-ই করতে চাইল। ভার্সিটির গেইট গিয়ে রাফসানকে দেখেও না দেখার মতো করেই চলে যেতে চাইল। কিন্তু পারল না। তার আগেই রাফসান বলে উঠল,
“এই মেয়ে দাঁড়ান।

তানিয়া থেমে গেল। রাফসানের দিকে ভ্রুঁ কুঁচকে তাকাল। কেন ডাকলো ছেলেটা? আবারো উল্টা-পাল্টা কিছু বলবে? আবারো চরি’ত্রে কালি লাগাতে আসবে? তানিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলল। রাফসানের দিকে এগিয়ে গিয়ে শ’ক্ত ক’ন্ঠে বলল,
“কি চাই আপনার? আমাকে কেন ডাকছেন? আবারো কারণ ছাড়াই অপমান করতে? দেখুন আপনাকে আমি স’হ্য করতে পারছি না। আমার শরীরটা জ্ব’লছে। আপনি আর কক্ষ’নো আমার সামনে আসবেন না।

তানিয়া রাফসানকে অবাক করে দিয়ে এতগুলো কথা বলে দিয়ে চলে গেল। রাফসান দীর্ঘশ্বাস ফেলল। মেয়েটা তাকে ঘৃ’ণা করে? এতো ঘৃ’ণা করে যে সামনে আসতে নি’ষেধ করছে। রাফসানের ভেতরটা পু’ড়তে লাগলো। শুধুমাত্র একটা ভুলের জন্য সে কারোর ঘৃ’ণার পাত্র হয়ে গেছে। মেয়েটা তাকে ঘৃ’ণা করছে।

রাফসান স’হ্য করতে পারল না। কেউ তাকে ঘৃ’ণা করছে ব্যাপারটা অ’সহ্য লাগলো। বুকের জ’খম সৃষ্টি হলো। সেই সাথে তানিয়াকে ভাবতে ভাবতে, তানিয়ার মুখটা মনে পড়তেই তানিয়ার প্রতি দু’র্বল হতে লাগলো। রাফসান প্রেমে পড়ে গেল। তানিয়া নামক মেয়েটাকে নিয়ে ভাবতে লাগলো। দুয়েক বার তানিয়াকে দেখার জন্য তানিয়ার আড়ালে ভার্সিটিতে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো।

পরিচিত একজনকে দিয়ে তানিয়ার বাসা, বাড়ি সবকিছুর খবর নিয়ে নিল। তারপর, দেখল বিদেশ যাওয়ার সময় শিঘ্রই ঘনিয়ে আসছে। আর মাত্র কয়েকটা দিন। রাফসান ছটফট করতে লাগলো। সে তো চলে যাবে। আসতে কয়েকবছর সময় লাগবে। ততদিনে তানিয়ার অন্য কোথাও বিয়ে হয়ে যাবে না? কিংবা তানিয়া অন্য কাউকে ভালোবেসে ফেলবে না?

রাফসান এবার একটা অ’দ্ভুত কাহিনী ঘটিয়ে ফেলল। যার কোনো ভিত্তি নেই। কোনো আশা নেই, কোনো আকা’ঙ্ক্ষা নেই। মায়ের কাছে গিয়ে বলে বসল তার একটা মেয়েকে পছন্দ। সে বিয়ে করতে চায়। বিদেশ যাওয়ার আগেই বিয়ে করতে চায়।

রাফসানের এমন কথায় আমেনা বেগম অবাক হলেন। প্রথমে দ্বি’মত পোষন করে শেষমেষ রাফসানের কথায় রাজি হলেন। তানিয়াকে দেখতে যেতে চাইলেন। তবে তার আগে তানিয়ার পরিবারের সাথে দেখা করতে চাইলো রাফসান। একদিন আমেনা বেগমকে নিয়ে তানিয়ার বাড়িতে গেল।

রাফসান তানিয়ার বাড়িতে গেল। তানিয়ার মা, বাবা আর বোন তামান্নার সামনে সেদিনের ঘটে যাওয়া সম্পূর্ণ ঘটনা বলল। নিজের ভুলটা স্বী’কার করল। সেই সাথে তানিয়াকে বিয়ে করার প্রস্তাব রাখলো। তানিয়ার পরিবার রাফসানদের তৎক্ষণাৎ কিছু বলল না। পরে জানাবে বললো।

রাফসান আমেনা বেগমকে নিয়ে ফিরে এলো। তানিয়াকে বিয়ে করতে পারবে কি পারবে না সেই নিয়ে দুশ্চি’ন্তা হতে লাগলো। তার চেয়ে বড় কথা মেয়েটা তাকে ঘৃ’ণা করে। মেয়েটা কি রাজি হবে? রাফসান প্রশ্নের উত্তর পেল না। হয়তো রাজি হবে না। কিন্তু সে তো চেষ্টা করেছে। তানিয়ার পরিবারের কাছে ভুলটা স্বীকার করেছে। বিয়ের পর না হয় তানিয়ার কাছে ও ভুল স্বীকার করে নেবে।

রাফসানের কথায়, ব্যবহারে তানিয়ার পরিবারের সবার রাফসানকে পছন্দ হলো। কিন্তু ভয় ছিল তানিয়াকে নিয়ে। তানিয়া যেমন মেয়ে রাফসানকে কখনো বিয়ে করতে চাইবে না।

তাই সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নিল তানিয়াকে ছেলেটার কথা জানাবে না। নিলুফা বেগম রাফসানদের পরিবার, রাফসান সম্পর্কে খুঁজ নিলেন। যখন দেখলেন পরিবার ভালো ছেলে ভালো তখনই মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি হলেন। রাফসানকে ফোন দিয়ে পরিবার নিয়ে আসতে বলল।

তানিয়া ভার্সিটি থেকে এসে শুনলো তার বিয়ে। আজকেই বিয়ে। তানিয়া এতো দ্রুত বিয়ে করতে চাইল না। বাবাকে ভয় পায় বিধায় বারবার মা, বোনকে অনুরোধ করতে লাগলো বিয়ে ভেঙে দেওয়ার। কিন্তু মা বোন শুনলো না। তানিয়াকে বুঝাতে লাগলো ছেলেটা ভালো। মা বোনের থেকে নি’রাশ হয়ে তানিয়া বাবার কাছে গেল। বাবাকে গিয়ে জানালো সে বিয়ে করতে রাজি না। এই মুহূর্তে বিয়ে করতে চায় না। তাকে যেন একটু সময় দেওয়া হয়।

তানিয়াকে সময় দেওয়া হলো না। তাকে শেষমেষ বিয়ের জন্য রাজি হতে হলো। বউ সেজে কবুল বলে অচেনা একটা ছেলের বউ হয়ে গেল। পরিবারের প্রতি রাগ, জেদ, ক্ষো’ভ, অভিমান নিয়ে একটিবার ও স্বামী নামক মানুষটাকে দেখতে চাইল না। স্বামী নামক মানুষটার পেশা কি, বাসা কোথায়, পরিবারের কে কে আছে সেই সম্পর্কে মনে কোনো প্রশ্ন জাগলো না, কৌতুহল জন্মালো না। চোখের জল বিস’র্জন দিয়ে চলে এলো শ্বশুর বাড়ি।

রাফসান তানিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
“দুনিয়াতে ক্ষ’মা শব্দটা কেন এসেছে জানো তো? কেউ কোনো ভুল করে অনু’তপ্ত হলে তাকে যেন সেই ভুলের দায় থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।

রাফসান কথাটা বলে থেমে গেল। তানিয়ার ভাবগতি কোনো কিছুই বুঝতে পারলো না। মেয়েটার মনে ঠিক কি চলছে? রাফসান আবারো বলল,
“আমি আমার ভুলটা স্বী’কার করছি। ক্ষ’মা করে দিবে না আমায়?

তানিয়ার মায়া হলো। রাফসানের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
“ঠিক আছে ক্ষ’মা করে দিলাম। তবে এই ভুলগুলো না করার চেষ্টা করবেন।

রাফসানের চোখ, মুখে খুশি যেন উপচে পড়ছে। মনের মাঝে খুশির জোয়ার বইছে। তানিয়া তবে তাকে মেনে নিল? রাফসান তানিয়াকে দুহাতে জড়িয়ে ধরল। তানিয়া রাফসানের কাজে হত’ভম্ব হয়ে রুঢ় স্বরে বলল,
“ক্ষ’মা করে দিয়েছি বলেছি। ভালোবেসে ফেলিনি। ছাড়ুন আমায়।

রাফসান ছাড়লো না। তানিয়াকে আরেকটু শক্ত করে ধরে বলল,
“বউকে জড়িয়ে ধরলে ছাড়াছাড়ির নাম নিতে নেই। ছেড়ে দিলেই বউ দূরে চলে যায়। আমি জেনেশুনে আমার বউকে দূরে ঢেলে দিতে চাই না।

#চলবে