প্রিয়া তুমি পর্ব-১৫+১৬

0
118

#প্রিয়া_তুমি
#পর্বঃ১৫
#লেখিকা_লক্ষী_দেব

শাড়ির ভাঁজে হঠাৎ কারো হাতের শীতল স্প’র্শ পেয়ে চমকে উঠল তানিয়া। চমকে গিয়ে পেছনে তাকিয়ে রনিতের মুখটা দেখল। তানিয়ার সর্বা’ঙ্গ ঘৃ’ণায় রী রী করে উঠলো। রনিতকে ধা’ক্কা দিয়ে সরিয়ে ফেলতে চাইল। কিন্তু রনিতে শ’ক্তির কাছে পরা’স্ত হয়ে একচুল পরিমাণ ও নড়াতে পারেনি। তানিয়ার ব্য’র্থতা দেখে রনিত কুটিল হেসে বলল,
“সুন্দরী দেখছি ক্ষে’পে যাচ্ছে। চাঁদের গায়েও কল’ঙ্ক আছে। তোমার গায়েও না হোক একটু আধটু কল’ঙ্ক লাগলো। এতে ক্ষ’তি কী?

তানিয়া রাগে জ্ব’লছে। রনিতকে থা’প্পড় মারার জন্য ডান হাতটা উঠালেই রনিত হাতটা ধরে ফেলল। তানিয়াকে ফিসফিসিয়ে বলল,
“তোমার স্বামী এখন বাসায় নেই। সুতরাং তোমাকে বাঁচানোর জন্য ও কেউ নেই। এখন কি হবে তোমার?

তানিয়া পিল চমকে উঠল। রাফসান বাসায় নেই। সত্যি বাসায় নেই। রাফসান, রিতা আর রিমা বেরিয়েছে। অনেকক্ষণ হলো বেরিয়েছে। এই সুযোগে লোকটা যদি কিছু করে ফেলে? তানিয়ার ভয় হলো। বুকটা কেঁপে উঠলো। হৃদ’যন্ত্রটা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি লাফাতে লাগলো। তবে তার ভেতরের ভী’ত ভাবটা রনিতের কাছে প্রকাশ করল না। নিজেকে যথে’ষ্ট পরিমাণ কঠোর, শ’ক্ত রেখে বলল,
“আপনি বুঝতে পারছেন না আপনি ঠিক কতটা ভুল করছেন। ভালোয় ভালোয় বলছি ছেড়ে দিন আমাকে। নাহলে খুব খারাপ হয়ে যাবে।

তানিয়া এই হুমকিতে রনিত ভয় পেল না। উল্টো হেসে উঠল। বি’শ্রী ভাবে হেসে বলল,
“কি খারাপ হবে শুনি।

রনিত তানিয়াকে চেপে ধরল। বদ নজরে তানিয়ার সর্বা’ঙ্গের দিকে চোখ বুলিয়ে নিল। অবশেষে তানিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
“তোমাকে আমি আমার করে নিব। তুমি আমার হবে তানিয়া।

রনিত কথাটা বলে হাসতে লাগলো। তানিয়া ছাড়া পেতে ছটফট করছে। রাগে, ক্ষো’ভে, ঘৃ’ণায় শরীরটা জ্ব’লে যাচ্ছে। রনিতকে এই মুহূর্তে খু’ন করে ফেলতে ইচ্ছে করছে। যদি একটা দা দিয়ে এক কোপে গলাটা নামিয়ে ফেলা যেত। তবে ভালো হতো না? বুকের ভেতর জ্ব’লতে থাকা আ’গুনটা নিভে যেত না? তানিয়ার মন শান্তি পেত না? তবে এর কিছুই হলো না। তানিয়া রাগে জ্ব’লতে থাকলেও রনিতের শ’ক্তির সাথে পেরে উঠার সা’ধ্য নেই। তারপরও বলল,
“ছেড়ে দিন আমায়। আপনাকে সাবধান করছি আমি।

রনিত তানিয়ার সাবধানে বানী মাঝে কোনো পরিবর্তন ঘটাতে পারল না। রনিত তানিয়ার সাথে আরেকটু ঘনি’ষ্ঠ হলো। ঠিক এই সময়টাতে তানিয়ার নিজেকে অস’হায় বলে বোধ করল। নিঃসঙ্গ বলে বুকটা কেঁপে উঠলো। তানিয়ার হুট করেই কান্না পেল। কান্নার দমকে আকাশ, বাতাস, পৃথিবীর সকলকে তার কল’ঙ্কিত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার অনুরোধ জানাতে চাইল। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো কি? তানিয়া কান্না করল। দুচোখ বেয়ে অশ্রুকণাগুলো গড়িয়ে পড়তে লাগল।

রনিত তানিয়ার অশ্রুভেজা চোখ দুটো দেখল। তানিয়া শেষ বারের মতো আকুতি করে বলল,
“প্লিজ ছেড়ে দিন আমায়।

রনিত তানিয়ার কথাটা শুনলো না। তানিয়াকে ছাড়ল না। নিজের ডানটা হাতটা তুলে তানিয়ার আঁচলের উপর রেখে দিল। তানিয়ার তখন স’ম্ভ্রম হারানোর ভয়। এই লোকটার কাছে নিজের স’ম্ভ্রম হারিয়ে ফেলবে সেই ভয়ে তট’স্থ হয়ে আছে। বুক ফেটে কান্না আসছে। শরীরটা অসাড় লাগছে। রনিতের ডানটা যখন তানিয়ার আঁচলটা ধরে টান দিবে ঠিক তখনই দরজা খুলে গেল। দরজা খুলার শব্দে রনিত তানিয়া দরজার দিকে তাকাল। দরজার বাহিরে রাফসানকে দেখে রনিতের মুখটা চুপসে গেল। তানিয়ার আঁচল থেকে হাতটা নামিয়ে নিল। তানিয়াকে ধরে রাখা হাতটা আলগা হলো। বুকটা ভয়ে কেঁপে উঠলো।

তানিয়ার রাফসানকে দেখা মাত্রই বুকে যেন বল এলো। স’ম্ভ্রম হারানোর ভয়টা পুরোপুরি কেটে গেল। তবে রনিতের করা আচরণটা বুকে জ’খম তৈরি করল। তানিয়া এক অপ্রত্যা’শিত কাজ করে বসল। একছুটে গিয়ে রাফসানকে জড়িয়ে ধরল। অশ্রুকণা বিস’র্জন দিয়ে কান্না’মিশ্রিত ক’ন্ঠে বলল,
“আপনি চলে যাওয়ার উনি আমার সাথে খারাপ কাজ করতে চেয়েছিল। দেখুন আমার শরীর কাঁপছে। উনি, উনি অনেক খারাপ।

তানিয়া কথাটা বলে কান্না করতে লাগলো। এই মুহূর্তে রাফসানকে তার সবচেয়ে আপন, সবচেয়ে কাছের মানুষ বলে মনে হচ্ছে। যে তাকে বাঁচাতে পারবে। তার সাথে অন্যা’য় করা মানুষটাকে শা’স্তি দিতে পারবে। (লক্ষী দেব -Luxmi deb) পেইজে পরবর্তী পর্ব দেওয়া হবে। তাকে রক্ষা করতে পারবে। তানিয়া রাফসানকে জড়িয়ে ধরে কান্নার দমকে আরো কেঁপে উঠছে।

রাফসান তানিয়ার কেঁপে কেঁপে উঠা শরীরটার দিকে তাকাল। মেয়েটা ভয়ে, কান্নায় কেঁপে উঠছে। তানিয়ার মাথায় আলতো করে হাত রাখলো। তারপর তানিয়াকে বুক থেকে তুলে তানিয়ার চোখের পানি গুলো মুছিয়ে দিতে দিতে বলল,
“ভয় নেই। আমি আছি তো। কিচ্ছু হবে না তোমার। আমি কিছু হতে দেব না।

রাফসানের কথার ধরনে, কথার ভ’ঙ্গিতে তানিয়া যেন ভরসা পেল, শান্ত হলো। ‘আমি আছি তো’ কথাটা বারবার কানে প্রতি’ধ্বনিত হতে লাগলো। রাফসান তানিয়াকে সামনে থেকে সরিয়ে রনিতের দিকে তাকাল। রনিতের ভেরতটায় ঝড়ের তা’ন্ডব শুরু হলেও উপরটা শা’ন্ত, স্থি’র।

রিমাকে রাফসানের সাথে পাঠানোর সময় বারবার বলে দিয়েছিল রাফসান যেন তাড়াতাড়ি বাসায় না আসে। কোনো না কোনো ভাবে রাফসানকে যেন আটকে রাখে। রিমা আ’শ্বাস দিয়েছিল বলেই তো সে তানিয়ার রুমে আসার সাহসটা দেখাল। কে জানত মেয়েটা এমন করবে। আগে থেকে জানলে কি এই রুমে আসার সাহস দেখাত? তানিয়ার শরীরে স্প’র্শ করার স্প’র্ধা হতো?

রাফসান রনিতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ধীর পায়ে রনিতের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। কোমরের বেল্টটা খুলে হাতে নিল। রনিতের বুকটা তখন ভয়ে তট’স্থ হয়ে আছে। রাফসান কি করবে? বেল্টটা দিয়ে কী করবে? মারবে? রাফসান শুকনো ঢোক করল। রাফসান হাতে থাকা বেল্টটার দিকে একপলক তাকিয়ে আবারো রনিতের দিকে তাকিয়ে বলল,
“তানিয়ার দিকে তাকাতেই মানা করেছিলাম। তুই সেই কথা অমা’ন্য করে সেই কথার উ’র্ধ্বে গিয়ে ওর শরীরের দিকে হাত বাড়িয়েছিস? এতো সাহস হয়ে গেছে।

রাফসান কথাটা বলে সাথে সাথে বেল্টটা দিয়ে রনিতের গায়ে বারি মারল। রাফসান পরপর অনেকগুলো বারি মারতে লাগলো। এক পর্যায়ে রাফসানের মারের কাছে টিকতে পারল না রনিত। হাত জোড় করে বলল,
“ভাই ক্ষ’মা করে দে। এমন ভুল আর হবে না। আমি কখনো কোনো মেয়ের সাথে এমন করবো না।

রনিত ক্ষ’মা চাওয়ার পরও রাফসান টললো না। আগের মতোই তেজ, রাগ, গম্ভীরটা নিয়ে রইল। কঠোর স্ব’রে বলল,
“ক্ষ’মা করে দিবো? তানিয়া তোকে বলেনি ছেড়ে দিতে? ছেড়ে দিয়েছিলি তুই? তুই যখন ছাড়িসনি তাহলে আমি কেন ক্ষ’মা করবো?

রাফসান আবারো রনিতের গায়ে বেল্ট দিয়ে প্রহার করতে লাগলো। উপরে চেঁচামেচির শব্দ পেয়ে আমেনা বেগম, সালমা বেগম ছুটে এলেন। রাফসান রনিতকে মারছে দেখে হতবাক, হত’ভম্ব হয়ে গেলেন। তানিয়াকে একপাশে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন। আমেনা বেগম ছুটে গিয়ে রাফসানকে আটকে রাখলেন। রাফসান ধরে বললেন,
“ছাড় রাফসান। রনিতকে মারছিস কেন। এভাবে কাউকে মারে?

সালমা বেগম রনিতের ফর্সা বাহুতে লাল দাগ দেখে চমকে উঠলেন। বুকটা জ্ব’লে যাচ্ছে। রনিতকে দিকে ধরে হায় হায় করে বলল,
“এটা কি করলি রাফসান আমার ছেলেটাকে এভাবে মারলি। তোর একটু মায়া হলো না। তুই এভাবে মারতে পারলি।

রাফসান রাগে গজগজ করতে করতে বলল,
“তোমার ছেলের জন্য মায়া হবে? ওকে তো একদম খু’ন করে ফেলা দরকার। তুমি জানো তোমার ছেলে কি করেছে? আমার বউয়ের দিকে কুদৃ’ষ্টিতে তাকিয়েছে। কুমত’লবে শরীরে হাত দিয়েছি। আর কিছু বলতে হবে ছোট আম্মু?

সালমা বেগম চমকে রনিতের দিকে তাকাল। রনিত এমনটা করতে পারে এটা অবি’শ্বাস্য কিছু নয়। সালমা বেগম আগে থেকেই জানেন রনিতের তানিয়ার প্রতি ঝোঁক আছে। তবে তিনি সেটা প্রকাশ করতে চাইলেন না। উল্টো ব্যাপারটা তানিয়ার দিকে ঘুরিয়ে বললেন,
“সব দোষ কি রনিতের একা? এক হাতে কখনো তালি বাজে না। তানিয়া আশকারা দিয়েছিল বলেই হয়তো রনিত এমনটা করেছে।

সালমা বেগমের কথায় রাফসান বি’স্মিত হয়ে গেল। তাচ্ছি’ল্য করে বলল,
“ছিঃ ছোট আম্মু। তুমি একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের পক্ষে না থেকে তোমার ছেলেকে বাঁচানোর জন্য এমনটা বলতে পারলে। তোমার একটু ও ল’জ্জা করছে না। তুমি এতোটা হীন’মানসিকতার পরিচয় দিতে পারলে।

সালমা বেগম রাফসানের কথাগুলো গায়ে মাখলেন না। এই মুহূর্তে রনিতকে বাঁচানো উনার কাছে মূখ্য হলো। রাফসানের কথার বিপরীতে বলে উঠলেন,
“তুই তো এখন বউ পাগল হয়ে গেছিস। বউয়ের কথাই তোর কাছে সব। তোর বউ তোকে যা বলছে আর তুই তাই শুনছিস। এখন বউয়ের জন্য ভাইকে মারতে ও দ্বিধা’বোধ করিস না।

রাফসান চোখ মুখ শ’ক্ত করে শুনল। সালমা বেগমকে কিছু বলার ভাষা খুঁজে পেল না। কি বলবে উনাকে। জেনে বুঝে যে এসব কথা বলে তাকে কিছু বলার আছে? সালমা বেগম রনিতকে নিয়ে রুম থেকে চলে গেল। আমেনা বেগম এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না রনিত এমনটা করতে পারে। তবুও ছেলেটা করল। আমেনা বেগম চলে গেলেন।

রাফসান তানিয়ার দিকে তাকাল। মেয়েটা এখনো জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তানিয়ার সামনে গিয়ে তানিয়ার মাথায় হাত রেখে বলল,
“ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তোমার সাথে এমনটা করার সাহস দ্বিতীয়বার আর দেখাবে না।

#চলবে

#প্রিয়া_তুমি
#পর্বঃ১৬
#লেখিকা_লক্ষী_দেব

ড্রয়িং রুমে সকলে বসে আছে। পিনপিন নীরবতায় পরিবেশটা থমথমে লাগছে। সকলে উৎসুক চোখে রাফসানের দিকে তাকিয়ে আছে। রাফসান কি বলবে তা শোনার জন্য উ’ন্মুখ হয়ে আছে। সকলের মাঝে উপ’স্থিত নেই কেবল আমেনা বেগম। আমেনা বেগম ঘামে ভেজা সি’ক্ত মুখে বেরিয়ে এলেন। রাফসানের সামনে দাঁড়িয়ে বললেন,
“হ্যাঁ রাফসান বল। কি বলার জন্য সবাইকে এক করেছিস।

রাফসান মুচকি হাসল। নিজের পাশে ক্ষানি’কটা জায়গা করে দিয়ে বলল,
“বসো আম্মু। একটু শান্ত হও তারপর বলছি।

আমেনা বেগম বসলেন। তানিয়া দাঁড়িয়ে আছে। রাফসান ঠিক কি বলতে চাইছে সেই ব্যাপারে বিন্দু মাত্র ধারণা নেই তার। রাফসান আমেনা বেগমের দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বলল,
“আমার মনে হয় এবার আলাদা হওয়া দরকার। এভাবে জয়েন্ট ফ্যামিলিতে থেকে সবসময় নারীর সম্মান হারানোর ভয়ে থাকার চেয়ে আলাদা হওয়া ভালো মনে হচ্ছে।

রাফসানের কথায় আমেনা বেগম অবাক চোখে তাকালেন। তানিয়া অবি’শ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। রাফসান তার কথা ভেবে এমনটা করবে এটা তার ভাবনাতীত ছিল। রাফসানের কথার পরিবর্তে সালমা বেগম বলে উঠলেন,
“একটা ছোট্ট ভুলের জন্য তুই এতো দিনের জোড়া পরিবারটা ভে’ঙ্গে দিতে চাইছিস?

রাফসান তাচ্ছি’ল্যমাখা হাসি দিল। সালমা বেগমের দিকে তাকিয়ে বলল,
“বিষয়টাকে তোমার ছোট্ট ভুল মনে হচ্ছে? এই একই ঘটনা যদি তোমার মেয়ের সাথে হতো তাহলে ঘটনাটিকে “ছোট্ট ভুল” বলতে পারতে তো ছোট আম্মু?

রাফসানের প্রশ্নে সালমা বেগম ‘থ’ বনে গেল। সত্যি তো যদি আজ নিজের মেয়ের সাথে এমনটা হতো, তাহলে কি করতেন তিনি? সালমা বেগম ভাবতে পারলেন না। রাফসান আবারো বলে উঠল,
“আজ আমি ছিলাম বলে তানিয়া এই যাত্রায় বেঁচে গেছে। কিন্তু পরবর্তীতে যে এই ঘটনা ঘটবে না তার গ্যারা’ন্টি কি? রনিত যে আবারো একই কাজ করবে না তার নিশ্চ’য়তা দিতে পারবে? পারবে না। তাহলে আমি কিসের ভিত্তিতে আমার স্ত্রীরকে এই পরিবেশে রাখতে পারি?

রিতা তানিয়ার কাঁধে হাত রাখল। তানিয়া রিতার দিকে তাকাতেই রিতা আলতো হেসে ফিসফিসিয়ে বলল,
“দেখেছো ভাইয়া তোমায় কতটা ভালবাসে। তোমার কথা চিন্তা করে আলাদা হতে চাইছে।

রিতার কথার প্রত্যুত্তরে তানিয়া হালকা হাসল। তবে বুকটা ঢিপঢিপ শব্দ করছে। এই আলাদা হওয়ার ব্যাপারটা কোথা থেকে কোথায় গড়ায় সেটাই দেখার পালা। আদৌ আলাদা থাকা হবে তো? নাকি এইটা নিয়ে বিরাট কোনো ঝামেলা হবে?

সালমা বেগম তেজ নিয়ে বলল,
“তিন বছর কি তানিয়া এখানে ছিল না? তিন বছর যেভাবে ছিল এখনও এভাবে থাকবে।

“তিন বছর আর এখনের মধ্যে পার্থক্য আছে ছোট আম্মু। তিন বছর রনিত এখানে ছিল না। আমি যাওয়ার পরপরই চট্টগ্রাম চলে গিয়েছে। এর মাঝে বাড়িতে এসেছে হয়তো দুই একদিনের জন্য। কিন্তু এখন থেকে রনিত এখানেই থাকবে। তখন যে আজকের মতো কাহিনী করবে না তার গ্যারা’ন্টি কি?

“আমি বলছি তো রনিত দ্বিতীয় বার আর এমন কাজ করবে না। যদি এমন করে তাহলে আলাদা থাকার কথা বলিস।

সালমা বেগমের কথায় রাফসান রেগে গেল। এতক্ষণ শা’ন্ত শী’তল স্বরে কথা বললেও এখন ক্রু’দ্ধ স্বরে বলল,
“তুমি কি আমার কথাটা বুঝতে পারছ না? ‘যদি এমন করে ‘ মানে কি? তানিয়ার স’ম্মান হারালে আমি আলাদা হওয়ার কথা বলবো? তখন হারানো সম্মা’নটা ফিরিয়ে দিতে পারবে?

সালমা বেগমের মুখটা চুপসে গেল। এতদিন একসাথে থাকার কারণে সংসারের খরচপাতি রাফসানের টাকায়ই হতো। এখন আলাদা হলে সেটা নিজে কাঁধে পড়বে। এর জন্যই তো একসাথে থাকার ইচ্ছেটা প্রবল। তবে রাফসানের কথার কাছে টিকতে না পেরে তিনি এবার চুপ করে রইলেন। আমেনা বেগম এতক্ষণ কেবল নীরব দর্শক ছিলেন। রাফসান আর সালমা বেগমের কথা চুপ করে শুনেছেন। রাফসানের কথাটা কতোটা যুক্তি’যুক্ত সেটা বিচার করেছেন। এবার তিনি মুখ খুলে বললেন,
“রাফসান যা বলছে আমি মনে করছি তাই করা উচিত। এবার আলাদা হওয়া দরকার।

আমেনা বেগমের কথায় রাফসান মুখে হাসি ফুটল। সালমা বেগম ভেবেছিলেন আমেনা বেগম হয়তো রাফসানের কথার বিপক্ষে থাকবে। কিন্তু আমেনা বেগম রাফসানের কথায় সায় দেওয়াতে তিনি হত’ভম্ব হয়ে বললেন,
“রাফসানের কথাটা আপনি মেনে নিলেন?

“মেনে না নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় দেখছি না। সকালে রনিতকে কিছু বলিনি বলে এই না আমি নীরবে রনিতের কাজটা সমর্থন করে গেছি। তানিয়াকে আমি এই বাড়ির বউ করে এনেছি। তানিয়ার বাবা-মায়ের সম্মতিতে তাদের মেয়েকে ভালো রাখবো বলে নিয়ে এসেছি। এই বাড়িতে এসে যদি তাদের মেয়ের সম্মান’হানি হয় তাহলে কি জবাব দেব তাদের? কি করে মুখ দেখাবো?

সালমা বেগম উত্তর দিতে পারলেন না। চোখ কটমট করে রনিতের দিকে তাকালেন। আজ একটা ভুলের কারণে এমনটা হলো। চোখ দিয়েই যেন রনিতকে ভ’স্ম করে দিবে এমন ভাব। রনিতের হঠাৎ করে সালমা বেগমের দিকে চোখ গেল। আচমকা মায়ের অ’গ্নি দৃষ্টি দেখে ভড়কে গেল। মা যে তার উপর বেজায় ক্ষে’পে আছে বুঝতে পেরে চোখটা নামিয়ে নিল।

রাফসান এবার সকলের উদ্দেশ্যে বলল,
“তাহলে এখন থেকে সব আলাদা। রনিতের রুমটা উপর থেকে দ্রুত নিচে শিফট করার ব্যবস্থা কর। দোতলায় তর ছায়া পড়ুক আমি এটাও চাইছি না। এখন থেকে আমরা দোতলায় থাকবো আর ছোট আম্মু তোমরা নিচ তলায় থাকবে।

রাফসানের কথাই হলো। সালমা বেগম আর কোনো কথা বলার সুযোগ পেলেন না। রাফসানের কথা মতোই কাজ করতে হলো।
_____________

রাত বারোটায় তানিয়া রুমে গেল। দোতলার এতদিনের বন্ধ রান্নাঘরটা পরিস্কার করে নিচতলা থেকে রান্নার জিনিসপত্র আনতে আনতে এতোটা সময় লেগেছে। রাফসান তানিয়ার ঘামা’ক্ত মুখশ্রীর দিকে তাকাল। তানিয়ার বিছানার দিকে চোখ যেতেই রাফসানের চোখে চোখ পড়ল। রাফসানের মু’গ্ধতার ঘেরা দৃষ্টি দেখে হৃৎ’পিণ্ডটা তড়িৎ গতিতে লাফাতে লাগলো। তানিয়া চোখ নামিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল।

মিনিট পাঁচেক বাদে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে তানিয়া ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়াল। চিরুনিটা নিয়ে চুলগুলো আঁচরাতে লাগলো। রাফসান বিছানায় বসে তানিয়াকে পর্যবেক্ষণ করছে। তানিয়াকে চুল আঁচরাতে দেখে বিছানা থেকে নেমে গেল। ধীর পায়ে হেঁটে তানিয়ার ঠিক পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো।

আয়নার মধ্যে রাফসানের প্রতি’বিম্ব দেখে থমকে গেল তানিয়া। রাফসান নি’র্লিপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তানিয়া হাঁসফাঁস করে প্রশ্ন করল,
“আপনি এখানে কেন এসেছেন?

রাফসান তানিয়ার প্রশ্নের উত্তর দিল না। আয়নায় তানিয়ার প্রতি’বিম্বের দিকে তাকিয়ে বলল,
“চুল গুলো আমি বেঁধে দেই?

হুট করে রাফসানের এমন আবদারে অবাক হলো তানিয়া। রাফসানের কথার কি সায় দিবে নাকি নাকোচ করে ‘না’ বলে দিবে? তানিয়ার ভাবতে হলো না। রাফসান প্রশ্ন করলেও উত্তরের অপেক্ষা না করেই তানিয়ার হাত থেকে চিরুনিটা নিয়ে নিল। তানিয়া হতবাক হত’ভম্ব হয়ে তাকাল।

রাফসান চিরুনি দিয়ে তানিয়ার চুল গুলো আচঁরে বিনুনি গাঁথে দিতে লাগল। তানিয়া আয়নার রাফসানের মুখের দিকে তাকাল। রাফসানের চোখ জোড়া তানিয়ার চুলের দিকে। রাফসান বিনুনি গাঁথা শেষ করে বিনুনিটা তানিয়ার ডান দিক দিয়ে সামনে নিয়ে গেল। তানিয়া দেখল। মানুষটা কী আগে ও বিনুনি গাঁথতে পারত? কাউকে গেঁথে দিত?

তানিয়া কথাগুলো ভাবতে ভাবতে তার ঘাড়ে উ’ষ্ণ স্প’র্শ অনুভব করল। রাফসান তানিয়ার ঘাড়ে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়েছে। তানিয়া কেঁপে উঠলো। হাত জোড়া মুষ্টিবদ্ধ করে চোখ বন্ধ করে ফেলল। রাফসান আয়নায় তানিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। তানিয়ার কাঁধে চিবুক ঠেকিয়ে বলল,
“ছোট বেলায় আম্মুকে বেনুনি গাঁথতে দেখতাম। একদিন জোর করেই আম্মুর কাছ থেকে বিনুনি গাঁথা শিখে নিলাম। আজ তোমাকে চুল বাঁধতে দেখে বিনুনি গাঁথতে ইচ্ছে হলো।

তানিয়া নি’শ্চুপে কথাগুলো শুনলো। রাফসানের কথার প্রত্যুত্তরে কিছু বললো না। নিজেকে রাফসানের থেকে ছাড়িয়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ল। রাফসান দীর্ঘশ্বাস ফেলল। কী চাচ্ছে মেয়েটা? আজ অন্য দিনের মতো রিয়েক্ট করলো না কেন? তবে কি আসতে আসতে নিজেকে মানিয়ে নিতে চাচ্ছে?

রাফসান কথাটা ভাবতেই মনে খুশির জোয়ার বয়ে গেল। রুমের লাইটটা নিভিয়ে দিয়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ল। গত রাতের মতো তানিয়াকে এক টানে নিজের বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরল। রাফসানের কাজে তানিয়া বির’ক্ত হলো। বি’রক্তিকর ক’ন্ঠে বলল,
“সমস্যা কী? এভাবে জড়িয়ে ধরেন কেন?

রাফসান মুচকি হেসে বলল,
“বিয়ে করলে বউকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে হয়। তা নাহলে অবিবাহিত লাগে। বিবাহিত হয়ে আমি অবিবাহিতের মতো ঘুমাতে চাই না। আমার বিবাহিত বিবাহিত ফিলিংস লাগবে বউ।

তানিয়া রাফসানের কথায় ক্ষা’ন্ত হলো না। রাফসানের থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করতে লাগলো। তানিয়াকে ছটফট করতে দেখে রাফসান বলে উঠল,
“শুধু শুধু ছটফট করে লাভ নেই। নিজের শক্তি খরচ করে কি হবে? আমি না চাইলে আমার থেকে ছাড়া পেতে পারবে না।

#চলবে