প্রিয়তমা পর্ব-০২

0
631

#গল্পঃপ্রিয়তমা
#লেখিকাঃজিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা
#পর্ব_০২

“আমিতো এই ঘর থেকে কিছুতেই যাবোনা”বলে জেদ ধরে রইলো প্রীতি।
রুবি রূপকের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,আমার মনে হয় সবকিছু ওকে বলে দেওয়া উচিত।
রূপক প্রীতির দিকে একপলক তাকিয়ে রুবিকে যেতে বলল।রুবি চলে যেতেই প্রীতি তেড়ে এসে বলল,আপনারা সব কিছুকে খেলা মনে করেছেন?ঘরে একবউ রেখে আবার বিয়ে করেন লজ্জা করেনা?আবার বাল্যবিবাহ নিয়ে আমাকে বড় বড় কথা শোনান।বিয়ে করে আবার আমাকে অন্যঘরে পাঠাচ্ছেন আগের বউ নিয়ে এই ঘরে থাকবেন বলে?তাহলে আমাকে বিয়ে করেছেন কেনো?

রূপক প্রীতিকে ধমকে উঠে বলল,স্টপ!রুবি আমার স্ত্রী না।তুমিই আমার স্ত্রী।
প্রীতি থমকে গেলো রূপকের কথায়।পরোক্ষণে তাচ্ছিল্য হেসে বলল,এখন আমার কাছে ভালো সাজার জন্য নতুন নাটক শুরু করলেন তাইনা?একদম কোনো নাটক করবেননা।আপনারা একেকটা চালবাজ সেটা এই কয়েক ঘন্টায় আমার জানা হয়ে গেছে।
অবস্থা বেগতিক।প্রীতি উচ্চস্বরে কথা বলছে।বাইরে কারো কানে কথা গেলে আরো ঝামেলার সৃষ্টি হবে তাই রূপক নিজেকে শান্ত রেখে বলল,তুমি এখানে বসো আমি বলছি সবকিছু।প্রীতি ভ্রু উঁচিয়ে বলল,আচ্ছা?আপনি এখন আমাকে বোঝাবেন ওই মেয়ে আপনার বউ না।এটা সেটা বলে বুঝ দিবেন তাইতো?আর আমিও বিশ্বাস করে নেবো।বউ নাহলে আশেপাশের মানুষ জানে কিভাবে?
রূপক মুখ গোল করে নিশ্বাস ফেলে এগিয়ে গেলো প্রীতির দিকে।তুমি আগে চুপ করে আমার কথা শোনো নয়ত পরে তোমার একটা প্রশ্নেরও উত্তর পাবেনা।
প্রীতি ত্যাড়ামি করতেই রূপক ওকে জোর করে খাটে বসিয়ে দিয়ে বলল,চুপচাপ বসে থেকে আমার কথা শোনো তারপর তোমার কথা শুনবো আমি।
প্রীতি কিছু একটা ভেবে চুপ করে গেলো।

রূপক প্রীতির সামনাসামনি ফ্লোরে বসে পড়ে।
শান্ত চোখে তাকায় প্রীতির দিকে।আঙ্গুলের ডগা দিয়ে নাক ঘষে বলা শুরু করে,”রুবি আমার বন্ধুর বউ।এ বাসাতেই থাকে।
প্রীতি কটাক্ষ করে বলে ফেললো,আজকাল বন্ধুর বউকেও বুঝি নিজের বউ বলে স্বীকৃতি দিয়ে নিজেরই বাড়িতে রাখা হয়?
রূপক কপাল চাপড়ে বলল,চুপ থাকতে পারোনা?আমার সম্পুর্ন কথা এখনো শেষ হয়নি।আমার কথা শেষ হলে তোমার মনে যদি কোনো প্রশ্ন জাগে তখন তুমি আমাকে প্রশ্ন করবে।
আমার বন্ধু তরুণের স্ত্রী রুবি।তরুণ আর ও নাকি পালিয়ে বিয়ে করেছিলো।একটা কেসের অপারেশনে গিয়ে তরুণ গুরুতর ভাবে আঘাত পায়।এখন কোমায় আছে তরুণ।এদিকে রুবিকে ওর পরিবার অন্য জায়গায় বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।তাই কিভাবে ও আমার খোঁজ নিয়েছে জানিনা।আমার কাছে সাহায্য চেয়েছিলো যাতে কয়েকদিন আমাদের বাসায় ওকে আশ্রয় দিই।
তরুণের গার্লফ্রেন্ড ছিলো কিন্তু বিয়ে করেছে বলে আমি জানতাম না।রুবি নানাভাবে আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে ও তরুণের স্ত্রী।রেজিস্ট্রি পেপারও দেখিয়েছে।এখন যদি ওকে না বাঁচাই তাহলে ওর আত্মহত্যা ছাড়া উপায় থাকবেনা।বাড়িতে যেহেতু মা আর ভাবি একাই থাকে তাই ওকে বাসায় নিয়ে এসে সবাইকে সবটা জানালাম।দুদিনপরই রুবির বাবা দলবল নিয়ে এসে ওকে নিয়ে যেতে এসেছিলো।আমি বাঁধা দেওয়াতে আমার উপর হামলা করেন।রুবি চট করে বলে ফেললো ও যাবেনা আমি ওর হাজবেন্ড।যেহুতু দুজনেই এডাল্ট সেহেতু উনাদের কিছু করার ছিলোনা।চলে গেলেন রুবির বাবা।
রুবির বাবা যেতেই আমি যখন রুবিকে জিজ্ঞেস করলাম মিথ্যে কেনো বললো?তখন সে আমার কাছে ক্ষমা চেয়ে বলল,এছাড়া নাকি কোনো উপায় ছিলোনা।যদি বলতো বিয়ে হয়নি তাহলে ওকেও নিয়ে যেতো সাথে আমিসহ আমার পরিবার ফেসে যেতাম।
সেদিন থেকেই মা রুবির উপর চরম বিরক্ত।বিয়ের কথাটা আমাদের বাসায় হলেও এককান দুকান করে এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।সবাইকে ধরে ধরে বুঝাতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে।সবার বিভিন্ন কিচ্ছা রটিয়ে দিতে সময় লাগতোনা।তখন থেকেই সবাই ভেবে বসে আছে রুবি আমার স্ত্রী।এখন থেকে যতদিননা তরুণ সুস্থ হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত রুবি এই বাসায় থাকবে।তরুণের চিকিৎসা চলছে।

প্রীতি তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে।রূপক প্রীতির তাকানো লক্ষ্য করে বলল,এভাবে তাকাচ্ছো কেনো?আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না?
প্রীতি অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,আমি আপনার কথায় কেনো বিশ্বাস করবো?তাছাড়া উনি যদি আপনার বন্ধুর বউ হয়ে থাকে তাহলে বন্ধুর বাড়িতে না গিয়ে আপনার কাছে কেনো সাহায্য চাইলো?উনার বাবা কি জানতেননা উনার কার সাথে বিয়ে হয়েছে?তাহলে হুট করে আপনার সাথে বিয়ে হয়েছে বলাতে এত সুন্দরভাবে কিভাবে মেনে গেলো?

রূপক বলল,তরুণের সাথে বিয়ে হয়েছে এই কথাটা রুবির বাবা জানতেন না।তাই আমার সাথে বিয়ে হয়েছে বলাতে সবকিছু মেনে নিলেন।আর বাকি রইলো আমার মুখের কথায় বিশ্বাস হচ্ছে না তোমার তাইতো?তাহলে কালকের দিনের অপেক্ষা করো।সবার মুখ থেকে সাথে রুবির মুখ থেকেও শুনে নিও সবটা।
প্রীতি ভাব ধরে বলল,সেতো আমি সবার মুখ থেকেই শুনবো।কিন্তু আমার আরেকটা প্রশ্ন এখনো বাকি আছে?
রূপক ভ্রু উঁচিয়ে বলল,কি?
মানলাম রুবি আপনার বউ না,তাহলে আমাকে অন্যঘরে কেনো পাঠাতে চেয়েছিলেন?এই ঘরে রুবিকে নিয়ে থাকতে?
রূপক দুহাতে নিজের চুল খামছে ধরে শ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করলো।মেয়েটা কি ধারণা করে বসে আছে?
জিভ দিয়ে শুষ্ক ঠোঁটজোড়া ভিজিয়ে রূপক বলল,তোমার বয়স কত?
প্রীতি বিরক্ত হয়ে বলল,এক প্রশ্ন বারবার কেনো করছেন?আমার বয়স ১৮।
রূপক সরু চোখে তাকাতেই প্রীতি আমতা আমতা করে বলল,১৬ বছর।

রূপক বসা থেকে দাঁড়িয়ে বলল,আমার সাথে একঘরে থাকতে হলে তোমার বয়স ১৮ বছর হতে হবে।এখন দুইরুম পরে যে রুম আছে সেখানে রুবি আছে ওর সাথে গিয়ে ঘুমাও।দিনের বেলায় এ ঘরেই থাকবে।
প্রীতি ত্যাড়া হয়ে বসে থেকে বলল,আমিতো কিছুতেই যাবোনা।আপনাকে এখনো আমার পুরোপুরি বিশ্বাস হয়নি।আমি এই ঘরেই থাকবো।নয়তো এ বাড়িতে আসার পর কি কি হয়েছে সব আমি বাবা আর ভাইয়াকে জানিয়ে দেবো।বলবো আপনার আরেকটা বউ আছে।
রূপক রেগে গিয়ে বলল,তোমার বাবা ভাই কি করেছে সেটা জানা নেই তোমার?কাল আসুক এ বাসায় একটা হেস্তনেস্ত করে ছাড়বো আমি।এখন যাও রুবির সাথে ঘুমাও।প্রীতি চট করে শুয়ে পড়েছে।কাঁথা দিয়ে নিজেকে মুড়িয়ে শক্ত হয়ে শুয়ে পড়ে বলল,আমি যাবোনা এ ঘর থেকে।যদি আপনি জোর করে আমাকে ঐ ঘরে পাঠান তাহলে আমি ভাববো আপনি এতক্ষণ একটা কথাও সত্যি বলেননি আমাকে।রূপক আলমারি খুলে একটা কাগজ বের করে প্রীতিকে দেখিয়ে বলল,এই দেখো তরুণ আর রুবির বিয়ের রেজিষ্ট্রি পেপার।এবার হ্যাপি থাকো।প্রীতি মাথা বের করে পেপারটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে নিলো।তারপর রূপকের হাতে দিয়ে আবারো শুয়ে পড়ে বলল,মানলাম উনি আপনার বউনা কিন্তু আমি আমার স্বামীর ঘর থেকে যাবোনা।
রূপক হাল ছেড়ে দিয়ে ল্যাপটপ নিয়ে সোজা বারান্দায় চলে গেলো।বিন ব্যাগে বসে ল্যাপটপ কোলে নিয়ে কাজ করছে।নতুন কেসের কিছু কাজ বাকি আছে।আপাতত সেগুলো এগিয়ে রাখা যাক।
কাজ শেষ করে রূপক রুমে আসতেই নিচে চোখ গেলো।রুবি মাথায় ওড়না জড়িয়ে চোরের মতো এদিক সেদিক তাকিয়ে বাগানের দিকে হেঁটে যাচ্ছে।একজন হুডি পড়া লোক দেয়াল টপকে ভিতরে প্রবেশ করলো।রুবি তার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে হুডি পড়া লোকটাকে জড়িয়ে ধরে বিদায় জানালো।
রূপক বাঁকা হেসে বলল,ভালোই চাল চেলেছেন মিস রুবি!আপনি কি ভেবেছেন আপনি আমার বাড়িতে কোন উদ্দেশ্য নিয়ে ঢুকেছেন কিছু না জেনেই আমি আপনাকে আমার বাড়িতে জায়গা দিয়েছি?ক্যারি অন।
রুপক ঘরে এসে প্রীতির গায়ের কাঁথা ঠিক করে দিয়ে নিজেও পাশে শুয়ে পড়লো।
—————————————★
ভোরে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে প্রীতি রুম থেকে বের হলো।কাউকেই দেখা যাচ্ছে না।মনে হয় এখনো কেউ উঠেনি।তাই করিডোর দিয়ে হেঁটে হেঁটে বাড়িটা দেখছে।অনেকক্ষণ পর কলিংবেল বেজে ওঠাতে প্রীতি দরজার দিকে ফিরে তাকালো।ফারিহা সিঁড়ি বেয়ে দ্রুত নেমে দরজা খুলে দিলো।প্রীতি দরজার বাহিরে রূপককে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকালো।উনিতো ঘুমিয়ে ছিলেন তাহলে বাইরে গেলেন কখন?প্রীতি দেখলো রূপক ফারিহাকে জড়িয়ে ধরেছে।প্রীতি কোনো কিছু না ভেবেই চিৎকার দিয়ে বলল,আম্মাগোওওওওওওও!দেখে যান আপনার ছেলে মনে হয় আরেকটা বিয়ে করেছে।প্রীতির চিৎকার শুনে ফারিহা সিটকে সরে যায়।হাজেরা বেগম রুম থেকে বেরিয়ে আসেন।রূপকসহ প্রায় সবাই উঠে বাইরে আসে।প্রীতি চোখের সামনে দুইটা রূপক দেখে একবার সিঁড়ির দিকের রূপককে দেখছে আরেকবার দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা রূপককে।
হাজেরা বেগম ব্যাপারটা বুঝতে পেরে হেসে দিলেন।হাসতে হাসতেই বললেন,রূপক,রাহাত দুজনেই জমজ।তোমার দাদা শশুররা দুইভাই জমজ ছিলেন,তোমার শশুররা দুইভাই জমজ,এখন তোমার স্বামী আর দেবর জমজ।
প্রীতি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।মুখ হা করে বলল,এত্তগুলা জমজ??
ফারিহা মুচকি হেসে বলল,তোমার মতো এই ভুল আমিও করেছি।হাজেরা বেগম প্রীতিকে ঘরে যেতে বলে যে যার ঘরে চলে গেলেন।প্রীতি হ্যাবলার মতো মাথা নেড়ে হাঁটতে হাঁটতে রুমে এসে বসেছে।রূপক আগেই এসে আবার ঘুম দিয়েছে।
এদিকে রুবি সাত সকালেই কাউকে ফোনে ট্রাই করে চলেছে।
#চলবে……