প্রিয় হতে প্রিয়তর পর্ব-১১+১২

0
421

#প্রিয়_হতে_প্রিয়তর
#পর্বঃ১১
#লেখিকাঃতাসনিম

এক সপ্তাহ হয় ফারাহ হসপিটাল জয়েন করেছে,এখন নিয়মিত রোগী দেখা হয়,সকালে জাবির পৌঁছে দিয়ে যায় রাতে আবার যাওয়ার পথে ফারাহকে সাথে করে নিয়ে যায়।বিয়ে টা হঠাৎ করে হলেও জাবিরের ব্যবহারে মনে হয় সে সত্যিই ফারাহকে অনেক দিন ধরে ভালোবাসে,সবসময় চোখে চোখে রাখে।

জাবির অফিস থেকে ফারাহর হসপিটালে আসার পর রিসিপশনের মেয়েটা ফারাহর কাছে কল করে।

“হ্যালো ম্যাম,স্যার চলে এসেছেন”

“একটু ওয়েট করতে বলুন আমি আসছি”

“ওকে ম্যাম”

মেয়েটা কলটা কেটে জাবিরকে একটু অপেক্ষা করতে বললো।কিছুক্ষণের মধ্যেই ফারাহ চলে এলো।

“সরি সরি আজকে একটু দেরি হয়ে গেল,একজন পেশেন্ট ছিল তো তাই”

“ইট’স ওকে,এতো সরি টরি বলা লাগবে না”

“আচ্ছা আসুন আইসক্রিম খাবো”

“এখন আইসক্রিম খাবে,এমনি তো আজকে বৃষ্টি হয়েছে আবহাওয়া ঠান্ডা”

“বৃষ্টির দিনে আইসক্রিম খাওয়ার মজাই আলাদা, আপনি বুঝবেন না আসুন আমি খাবো”

ফারাহ একটা বাটার স্কচ আইসক্রিম কিনলো,খেতে বললো

“গাড়িটা পাঠিয়ে দিন,এখান থেকে বাসা বেশি দূরে না হেঁটেই যায়”

“আজকে তোমার এমন আজব আজব ইচ্ছা হচ্ছে কেন,আমি হেঁটে যেতে পারবো না”

“আপনি পারবেন টা কি,আইসক্রিম ও খেলেন না এখন একটু হাঁটতে বলছি তাও পারবেন না”

“না চলো গাড়িতে উঠবে”

তখনই ঝুম বৃষ্টি নেমে গেল।জাবির ফারাহর হাত ধরে গাড়িতে উঠতে বলছে,কিন্তু ফারাহর কান দিয়ে কিছু যাচ্ছে না, কিছুক্ষণের দুজনে ভিজে একাকার হয়ে গেল।

“ভিজেই তো গেছেন এখন চলুন বৃষ্টি দিয়ে ভিজতে ভিজতে বাসায় যায়”

“ভিজলাম তো তোমার জন্য,যদি জ্বর আসে ফারাহ তোমার একদিন কি আমার একদিন মনে রেখো তুমি”

“সে পড়ে দেখা যাবে এখন চলুন”

দুজন বৃষ্টির মধ্যে দিয়ে হাঁটা ধরলো, বৃষ্টি কমে আসলো বাসায় পৌছানোর আগেই।বাসার গেইটের সামনে গিয়ে ফাহিমের সাথে দেখা হলো,ওদের এমন ভিজে ভিজে আসতে দেখে সে জিজ্ঞেস করল

“ওমা জাবির তুমি আমার বোনটা রে বৃষ্টি তে ভিজিয়ে কেন আনলে,জ্বর আসবে তো দুজনেরই”

“ভাইয়া জাবির কেন আমাকে ভিজিয়ে আনবে সে কি কিছু বোঝে নাকি এসব ব্যাপারে সে শুধু বোঝে বাসা টু অফিস/অফিস টু বাসা,বাসায় এসেও শুধু ফোনে গেম খেলা ছাড়া আর কিছুই বোঝে না এককথায় একটা রসকষহীন মানুষ বলা যায়”

“ভাই আপনিই বলেন এই যে বৃষ্টি ভিজলো এখন আসবে জ্বর এতে কি ভালো হবে”

“হ্যা আমিও তো তাই বলছি ফারাহ তুই আর বড় হলি না,ছোট থেকেই ওর এমন আবদারের ঝুড়ি, ও যেই পরিস্থিতিতে থাকুক না কেন আবদার করা ছাড়বে না,আচ্ছা যাও তোমরা ভিজে তো একেবারে শেষ হয়ে গেছো,বাসায় গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে নেও,আমি”

“ভাইয়া বাসায় আসিস”

“হ্যা আসবো”

ফাহিম চলে গেল নিজের কাজে,আর জাবির আর ফারাহ ফ্ল্যাটের ভিতর প্রবেশ করলো।দরজা নক করতেই এক নতুন মুখ দেখতে পেল ফারাহ।জাবিরের দিকে তাকাতেই দেখলো মেয়েটা ঠাস করে জাবিরকে জরিয়ে ধরেছে,জাবিরও তাকে জরিয়ে ধরলো। ফারাহ চোখ ছোট করে তাদের দিকে তাকিয়ে রইল, বউ সামনে রেখে অন্য মেয়েকে এভাবে জরিয়ে ধরার মানে কি,আর মেয়েটাও এমন নির্লজ্জ কেন অন্যের হাসবেন্ড কে এভাবে জরিয়ে ধরবে কেন।জাহরা আসলো দেখতে কে এসেছে।

“আরে লিজা,ভাইয়া ভাবি কে ভিতরে আসতে তো দিবি”

লিজা জাবির কে ছেড়ে সাইড দিল,ফারাহ আগে ভিতরে ঢুকে জাহরার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।জাবির এসে জিজ্ঞেস করল লিজাকে।

“কখন এসেছো তুমি”

“দুপুরে এসেছি, কখন থেকে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি,এতোক্ষণে আসার সময় হলো বুঝি”

“ওলে ওলে আ’ম সলি আমি তো জানতাম না তুমি আসবে আজকে”

ফারাহর মাথাটায় খারাপ হয়ে গেল এদের কথা বলা দেখে,এই মেয়ে জিজ্ঞেস করবে ভেবেছিল কিন্তু মাথা গরম হয়ে যাওয়ায় কিছু না জিজ্ঞেস করেই রুমের দিকে চলে আসলো,আসার সময় শুনলো

“তুমি এভাবে ভিজলে কিভাবে,আল্লাহ জ্বর আসবে তো দারাও আমি তোয়ালে নিয়ে আসছি মাথাটা মুছিয়ে দেয় নাহয় ঠাণ্ডা লেগে যাবে”

“না না লিজা আমি যাচ্ছি ড্রেস চেঞ্জ করে আসছি,তুমি বসো একটু”

“আচ্ছা”

লিজা আর জাহরা বসে গল্প করতে লাগলো,জাবির রুমের দিকে গেল। রুমে গিয়ে দেখলো ফারাহ পুরো রুমে চড়কির মতো ঘুরছে।

“ড্রেস চেঞ্জ না করে এমন ঘুরছো কেন”

ফারাহ কিছু বললো না, আলমারি থেকে জামা বের করে ওয়াশরুমের দরজাটা এতো জোরে লাগালো মনে হলো এতক্ষণের বোমাটা দরজার উপরে বিস্ফোরণ করেছে।জাবির বোকার মতো ওর কাজকর্ম দেখলো,তারপর নিজের জামা নিয়ে অন্য ওয়াশরুমে চলে গেল।

ফারাহ ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে শাশুড়ী মার রুমের দিকে যাচ্ছিল তখন ড্রইয়িংরুম থেকে জোরে হাসাহাসির শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল।

“আম্মু আসবো”

“হ্যা মা আসো,কখন আসছো তোমরা”

“একটু আগেই,আম্মু এই মেয়েটা কে”

শরীফা বেগম হাসতে লাগলেন,তার হাসি দেখে ফারাহ পুরো বোকা হয়ে গেল,উনি হাসছে কেন কে এই মেয়ে, জাবিরের এক্স না তো,না না এক্স হবে কি করে সে তো রেণু ছিল আর এর নাম তো লিজা।

“সে অনেক বড় কাহিনি মা,এতটুকু জেনে রাখো জাবিরের পাতানো বোন লিজা”

এতটুকু বলে শরীফা বেগম আবার হাসতে লাগলেন,ফারাহ কিছুই বুঝলো না,পাতানো বোন মানে এ আবার কেমন বোন।

“আচ্ছা আসো খাবার খাবে,রাত তো বেড়েই চলছে,এদের গল্প আজ রাতে আর শেষ হবে না খাবার খাইয়ে দেয় পরে রাত জাগুক না যা ইচ্ছা করুক আমার দেখতে হবে না,ও তুমি আজকে আমার সাথেই থেকো কেমন”

“কেন আম্মু এই পাতানো বোন কি জাবিরের সাথে থাকবে”

শরীফা বেগম আবার হেসে দিলেন ফারাহর কথা শুনে,বিছানা থেকে উঠে বললেন

“ওরা আজ সারারাত ঘুমাবে না তাই বললাম আমার সাথে এসে ঘুমিয়েও একা তো ভয় লাগতে পারে, আর এরা যা ভয়ংকর হাসি দেয় তাতে ভয় পাওয়াই স্বাভাবিক, খেতে আসো”

শরীফা বেগম কে ফারাহ খাবার সাজাতে হেল্প করলেন, তারপর শরীফা বেগম গিয়ে জাবির লিজা,জাহরা কে ডেকে আনলেন খাওয়ার জন্য। জাবির আর লিজা পাশাপাশি বসে পড়লো কথা বলতে বলতে। ফারাহকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জাহরা বললো

“ভাবি তুমি আমার কাছে আসো,এখানে বসো”

“লিজা ভাবির সাথে পরিচিত হয়েছিস,এতোদিন আমার এক ছেলে এক মেয়ে ছিল এখন দুই মেয়ে হয়েছে বুঝলি”

“ওমা তাহলে তো জাবির আর কি যেন নাম তোমার তোমরা দুজন ভাইবোন হলে”

“আরে পাগলি তুইও না”

ফারাহ চুপচাপ সব দেখছে।জাহরা বললো

“ভাবির নাম ফারাহ মনে রাখবি আগেও তো বলেছি মনে থাকে না কেন”

“আচ্ছা আচ্ছা ওই ফারা টারা যায় হোক জাবির খেয়ে বলো তো কেমন হয়েছে আমি আজ তোমার পছন্দের খাবার খিচুড়ি গরুর গোসত রান্না করেছি”

“সিরিয়াসলি, তাহলে অনেক মজা হয়েছে নিশ্চিত, এই আর কেউ কোনো কথা বলবে না চুপচাপ খেতে দাও আমাকে”

খাওয়া শেষে জাবির লিজার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে যাচ্ছে। রান্না আসলেই মজা হয়েছে কিন্তু ফারাহ ভালো লাগছে জাবিরের আর লিজার এতো গলাগলি ভাব,কিছুক্ষণ আগেও যে ছেলেটা ওর খেয়াল রাখছিল এখন সে একবারের জন্যও তার দিকে তাকাচ্ছেও না,জাবিরের মার কথার মতোই ওরা আড্ডা দিতে চলে গেল।ফারাহ নিজের রুমেই গেল,কিন্তু আসলেই এদের শব্দে তার ঘুম আসছিল না,তাই সে ড্রইয়িংরুের দিকে গেল।

#চলবে

#প্রিয়_হতে_প্রিয়তর
#পর্বঃ১২
#লেখিকাঃতাসনিম

ফারাহ ড্রইয়িংরুমে এসে দেখলো জাহরাও ঘুমাতে চলে গেছে, শুধু ওরা দুজনই গল্প করছে।জাবিরের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

“ঘুমাবে না,রাত তো অনেক হয়েছে”

“ক’টা বাজে”

“সাড়ে বারোটা বাজে,কাল তো অফিস আছে তোমার”

“হুমম আচ্ছা লিজা যাও তুমিও ঘুমাও আমরাও ঘুমাই”

“ঘুমাবে,আগে যখন আমি আসতাম তখন তো সারারাত আমরা কথা বলতাম, আর পরের দিন তুমি অফিসে যেতে না আমাকে আর জাহরাকে নিয়ে ঘুরতে যেতে”

“আসলে হয়েছে কি লিজা,আগে সে অবিবাহিত ছিল,আর এখন তার বাসায় বউ আছে,তাই সে আগের মতো চাইলেও থাকতে পারবে না”

“আচ্ছা আচ্ছা, তুমি থাকছো তো কিছুদিন শুক্রবারে আমরা ঘুরতে যাবো,কেমন”

“ঠিক আছে”

ফারাহ জাবিরের হাত ধরে টানতে লাগল যাওয়ার জন্য রুমে,জাবির উঠে দাড়ালো তারপর ওরা দুজন রুমে চলে গেল।লিজা কিছুক্ষণ বসে থেকে ঘুমানোর জন্য চলে গেল।

রুমে আসতেই ফারাহ জাবিরের হাত ছেড়ে দিল, আর নিজের জায়গায় গিয়ে শুয়ে পড়লো।

“কি হয়েছে তোমার,এখনি তো ভালো ছিলে আবার কি হলো”

“পাতানো বোন কি”

“ওহ লিজা,আরে সে এক ঘটনা,শুনবে”

ফারাহ শোয়া থেকে লাফ দিয়ে উঠে বসলো,আর মাথা নাড়ালো,জাবির বিছানায় বসে বলা শুরু করলো।

“যখন আমি কলেজে পড়তাম,আমার অনেক বড় ফ্রেন্ড সার্কেল ছিল আমরা কিছুদিন পর পরই ঘুরতে যেতাম,একবার আমরা নীলাচল গিয়েছিলাম।ভোরবেলা পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে পারলে নাকি মেঘ ছোঁয়া যায় তাই আমি ভোরবেলায় গিয়েছিলাম মেঘ ছুঁতে, তখন দেখি একটা মেয়ে পাহাড়ের চূড়ায় উঠে এমন করে দাড়িয়েছে যেন এখনি পড়ে যাবে,আমি তার কাছে গেলাম গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম এই যে আপনি তো পড়ে যাবেন এভাবে দাঁড়িয়েছেন কেন, তারপর মেয়েটি জবাব দিল তার বাবা মা নাকি একটা ভুরি মোটা লোকের সাথে তার বিয়ে দিয়ে দিচ্ছিল তাই সে পালিয়ে এসেছে, কিন্তু তার পরিবার আর সেই ভুরি মোটা লোক এখানেও নাকি চলে এসেছে তাই সে এমন পজিশনে দাঁড়িয়ে আছে যেন তারা মনে করে সে সুইসাইড করছে”

ভুরি মোটা লোক কথাটা শুনে ফারাহ হেসে ফেললো,জাবির আবার বলা শুরু করলো,

“তারপর আমি বললাম আপনি যেভাবে তারা মনে না করলেও আপনি পড়েই যাবেন এখান থেকে,নিজের জীবন দিয়ে দেয়ার থেকে বাবা মার কথা শুনে ভুরি মোটা লোককে বিয়ে করে ফেলা ভালো না,তারপর মেয়েটা বললো কখনো না আপনি করেন গিয়ে ওই লোককে বিয়ে আমি করবো না,আমি কিছু একটা ভেবে বললাম ঠিক আছে কিন্তু আপনি ওখান থেকে সরে আসুন আপনার বাবা মাকে আমি বুঝিয়ে বলবো আপনি ওনাকে বিয়ে করতে চান না,মেয়েটা আমার কথা শুনে সেখান থেকে সরে আসলো আমরা একটা চায়ের দোকান থেকে দুজন চা খেলাম,তারপর মেয়ে টাকে বললাম তার বাবা মার নাম্বার দিতে মেয়েটা প্রথমে দিতে চাইলো না পরে জোর করে নাম্বার টা নিলাম,মেয়েটার বাবাকে কল করে আরেক বিপদে পড়ে গেলাম,সে আমাকে বলে পেয়েছো যখন ওই মেয়েকে নিজের কাছে রেখে দেও ওকে আমরা আর ফেরত নিবো না আর আমরা নীলাচল ওকে ধরতে আসি নাই,যে ছেলের সাথে ওর বিয়ে ঠিক করেছিলাম তার হানিমুনের হোটেল ভাড়া করতে এসেছি,আমাদের সম্মান যে নষ্ট করে তাকে আমরা আমাদের ঘরে তুলবো না তুমি ভাবো এখন কি করবা ওকে এক কাজ করো যেখানে পেয়েছো সেখানে নিয়ে গিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে আসো কেউ জানবে না তুমি আমি ছাড়া।আমি আর মেয়েটার বাবার সাথে কথা বাড়ালাম না পুরো গা দিয়ে আমার ঘাম বের হয়ে গিয়েছিল ওনার কথা শুনে,কিন্তু এতো কথার মাঝে এটাই বুঝলাম না কেন ওই লোকের হানিমুনের হোটেল তারা ভাড়া করতে এসেছে, তারপর মেয়েটার কাছে গেলাম বললাম তার বাবা তাকে মুক্ত করে দিয়েছে সে যা ইচ্ছা করতে পারে।
মেয়েটা অঝোরে কান্না শুরু করলো আমার কথা শুনে আমি তো বেকুব বনে চলে গেলাম,চারপাশে লোকজন ভিড় করতে লাগলো,তারপর মেয়েটা চোখ মুছে বললো আমি কোথায় যাবো আমি কি কাউকে চিনি নাকি,আমি বললাম তাহলে পালালেন কেন,দেখুন যেখানে ইচ্ছা যান আমাকে যেতে দিন,মেয়েটা আমাকে ছাড়লো না হাত ধরে আমার সাথে যেতে লাগলো,পরে বাধ্য হয়ে তাকে ঢাকায় নিয়ে আসতে হয়,বাসায় এসে আব্বু আম্মু কে বলার পর তারা বলেন কিছুদিন আমাদের সাথে থাক তারপর আমার একজন খালামণির গার্লস হোস্টেল আছে সেখানে শিফট করে দিবে ওকে,আম্মু বলে মেয়েটাকে যখন দেখার মতো কেউ নেই বাবা মা নিতে চাচ্ছে না তাহলে ওর খরচ আমরাই চালাবো যতদিন ও নিজে কিছু করতে না পারে”

“তারপর থেকেই লিজা আপনার পাতানো বোন”

“হুমমম তাই,হঠাৎ করে ওকে পেয়েছি, যখন পাহাড়ের চূড়ায় দেখেছিলাম তখনও আমি ভাবি নি এতেদূর অবধি জল গরাবে”

“সেদিনের পর থেকে লিজা আর কখনো ওর বাবা মার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেনি,তারা তো রাগের মাথায় হয়তো আপনাকে না বলেছিল”

“সে আবার আরেক কাহিনি,যখন ওকে আমরা খালামণির হোস্টেলে পাঠিয়ে দেয় তখন ওর বাবা মা ওকে নিতে এসেছিল কিন্তু লিজা তাদের সাথে যায় নি তারপর ওর বাবা মা বলে ঠিক আছে এখানে থাকো কিন্তু ছুটিতে অন্তত আমাদের কাছে যেও আর আমাদের বলে গিয়েছিল আমরা যেন আর কষ্ট না করি তাদের মেয়ের খরচ তারাই চালাবে,তারপর থেকে লিজা ছুটি পেলে একবার আমাদের এখানে আসে আরেক বার নিজের বাসায় যায়”

“হাহ,বাবা মার সাথে চলে গেলে আপনার সাথে গলাগলি করতো কিভাবে”

“কিছু বললে ফারাহ শুনলাম না তো আমি”

“নাহ কিছু বলিনি চলুন ঘুমিয়ে পড়ি কাল আবার সকালে উঠতে হবে”

“দাঁড়াও তোমার সাথে আমার কথা আছে”

“কি কথা”

“তুমি তখন ফাহিম ভাইয়ের সামনে কি বললে,আমার মধ্যে রসকষ নেই, মানে তুমি বলতে চাও আমি আনরোমান্টিক”

“হুমম তা নয় তো কি এখন ঘুমান ঘুম আসছে আমার”

“নাহ ঘুমাবো কেন”

“তো কি করবেন”

জাবির ফারাহর দিকে এমন করে তাকালো ফারাহ অন্য দিকে ফিরে লাইট অফ করে শুয়ে পড়লো।

“হাহ এখন ঘুমাও কেন,আমি না আনরোমান্টিক”

ফারাহ কোনো শব্দ করলো না, জাবির ফারাহর পাশে শুয়ে পড়লো।সকালে ফারাহর আগে ঘুম ভাঙলো জাবিরের দিকে তাকিয়ে দেখলো ঘুমিয়ে থাকলে ছেলেটাকে এতো নিষ্পাপ মনে হয় দুনিয়াদারি কিছু বোঝে না,জাবিরের চুলগুলোতে আলতো করে হাত বুলিয়ে দিল ফারাহ,কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে উঠে গেল, কেমন যেন নেশা নেশা লাগে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলে।

ফারাহ রেডি হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে রান্না ঘরের দিকে গেল,জাবির তখনও ঘুমে।রান্নাঘরে গিয়ে দেখে জাবিরের মা বসে চা খাচ্ছেন আর লিজা নাস্তা বানাচ্ছে, ফারাহকে দেখে শরীফা বেগম বললো

“লিজা, ফারাহকেও এককাপ তোর হাতের স্পেশাল চা দে তো”

লিজার বিষয় টা না ভালো লাগলেও বাধ্য হয়ে চা বানিয়ে ফরাহর কাছে গেল, ফারাহ চায়ের কাপ টা ধরার আগেই লিজা কাপটা ছেড়ে দিল, আর গরম চা টা ফারাহর হাতে জামায় পড়ে গেল,ফারাহ চিৎকার করে উঠলে,শরীফা বেগম পাশে তাকিয়ে নিজেও ভয় পেয়ে যান সাথে সাথেই হাতে ফসকা পড়ে গেছে,জাহরা কলেজে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে ছিল ফারাহর চিৎকার শুনে এদিকে এসে সে ও চিৎকার করে উঠে ওর হাত দেখে।লিজা চুপ করে একসাইডে দাড়িয়ে রইলো,একটু ভয় হতে লাগলো এখন ওকে জিজ্ঞেস করলে ও কি বলবে,জাহরার চিৎকারে জাবিরের ঘুম ভেঙে গেল, সে রান্নাঘরে এসে দাঁড়াতেই দেখে তার মা আর বোন ফারাহর হাতে বরফ ঠান্ডা পানি দিচ্ছে

“হাত পুড়লো কিভাবে তোমার”

ফারাহর চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়েই যাচ্ছে,হাত তার জ্বলে উঠতেছে।জাবির জাহরা কে সরিয়ে নিজে ফারাহর পাশে বসলো আর জাহরা কে পোড়ার মলমটা নিয়ে আসতে বললো,

“কিভাবে হলো এমন আম্মু”

“আরে আমি লিজাকে বলেছিলাম ওকে এককাপ চা দিতে তারপর আমি এদিকে ঘুরে পেপার পড়ছিলাম,ফারাহর চিৎকার শুনে তাকিয়ে দেখি চা পড়ে হাতের এ অবস্থা”

জাবির লিজার দিকে তাকালো একবার,সে এমন করে দাড়িয়ে আছে যেন কিছু হয়নি, তারপর ফারাহর চোখ মুছিয়ে দিয়ে বললো,

“থাক কেঁদো না লিজা বুঝতে পারেনি,জাহরা মলম নিয়ে আসলে আমি লাগিয়ে দিবো ঠিক হয়ে যাবে”

“জাবির আমি ফালায়নি ফারাহ ধরতে পারিনি বলে পড়ে গেছে”

জাবির লিজার কথা কানেই নিল না সে ফারাহর হাত পর্যবেক্ষণে ব্যস্ত ছিল,জাহরা মলম নিয়ে আসলে জাবির ফারাহর হাতে লাগিয়ে দিতে শুরু করলো,মলম লাগানো শুরু করতেই ফারাহর চোখ দিয়ে আবার পানি পড়তে শুরু করলো,আর সে ছটফট করতে লাগলো।

“জ্বলছে,আর একমিনিট এখনি সব ঠিক হয়ে যাবে”

“ফারাহকে নিয়ে রুমে নাস্তা আমি রুমে পাঠিয়ে দিবো”

জাবির ফারাহকে ধরে রুমে নিয়ে গেল, লিজা চুপচাপ আবার নাস্তা বানাতে লাগলো।

“জাবির হাত অনেক জ্বলছে আমার”

“আচ্ছা তুমি একটু বসো আমি ফ্রেশ হয়ে আসি তারপর আমরা ডাক্তারের কাছে যাবো”

ফারাহকে বিছানায় বসিয়ে জাবির ওয়াশরুমের দিকে গেল।লিজা নাস্তা নিয়ে রুমে এসে দেখলো জাবির নেই ফারাহ একা বসে আছে,ওর দিকে তাকিয়ে বললো

“এই মেয়ে একটু চা ই তো পড়েছে হাতে তা নিয়ে এতো কাহিনি করতে হয় বুঝি বুঝি জাবিরের সামনে ভালো সাজো তাই না,ওকে নিজের কাছে রাখার জন্য এসব নাটক করো”

“ওর সামনে ভালো সাজার বা ওকে কাছে রাখার জন্য আমার কোনো কিছু করার দরকার নেই, কারণ সে আমার স্বামী সবসময় আমার কাছেই থাকবে,তুমি এখানে ঘুরতে এসেছো ঘুরো,আমার পিছনে লাগতে এসো না আমি কিন্তু বুঝেছি তুমি যে ইচ্ছে করে আমার হাতে চা টা ফেলেছো আমি চাইলে জাবিরকে এটা বলতেও পারি কিন্তু আমি বলবো না কারণ আমি তোমার ক্লাসের না আমার মন মানসিকতা তোমার চেয়ে অনেক ভালো”

“তোমাকে তো আমি”

তখনই জাবির ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে লিজা দাড়িয়ে থাকতে দেখে বলে

“নাস্তা করেছো”

“না তোমার সাথে করবো ভেবেছিলাম, কিন্তু”

“এখন সম্ভব না যাও নাস্তা করে নেও,হাতের জ্বালা কমেছে তোমার”

“কিছুটা,আমি খাবো কিভাবে”

“আমি আছি তো আমি খাইয়ে দিবো”

লিজা বড় বড় চোখ করে জাবিরের দিকে তাকালো, জাবির সেদিকে খেয়াল করলো না,নাস্তা করতে বসে পড়লো, ফারাহকেও খাইয়ে দিচ্ছে নিজেও খাচ্ছে, লিজা কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে চলে গেল।

#চলবে