#প্রিয়_হতে_প্রিয়তর
#পর্বঃ১৩
#লেখিকাঃতাসনিম
শুক্রবার সকালে সবাই নাস্তা করার পর জাবির বললো
“বিকেলে আজ ঘুরতে যাবো আমরা,রেডি থাকিস সবাই”
“ভাইয়া কই যাবো আমরা”
“দেখি কই যাওয়া যায়”
ফারাহ জাবিরের মার সাথে দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করছিলেন, লিজাও তাদের সাথেই ছিল।
“আম্মু আজকে রান্না আমি করি”
“তুমি করবে,না থাক এমনি সেদিন হাতটা পুড়ে গেল এখনো তো ভালো করে ঠিক হয়নি, তুমি আরেকদিন রান্না করো”
“হ্যা তুমি রান্না করলে কি আমরা খেতে পারবো,লন্ডনে কখনো রান্না করেছো বলে তো মনে হয় না”
“ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন আমি হয়তো খুব ভালো রান্না করি না কিন্তু এতোটা খারাপ রান্নাও করি না যে তোমরা খেতে পারবে না,আর লিজা আমি প্রথমদিন থেকে দেখছি তুমি আমার পিছনে লেগেই থাকো আমি কিছু বললে সেটাতে তোমার কথা বলতে হবে, আমার হাতে ইচ্ছে করে চা ফেলে দিলে, আমি কিছু করতে গেলে সেটাতে তোমার না করা লাগবে,তোমাকে এই অধিকার কে দিয়েছে হ্যা জাবির তোমার ভাই হয় সেই হিসেবে আমি তোমার ভাবি,কখনো ভাবি বলতে শুনলামই না,বরং সবসময় কিভাবে আমাকে ভুল প্রমাণিত করা যায় তা নিয়ে ব্যস্ত থাকো”
“আম্মু তুমি শুনলে ও কি বললো,আমি নাকি ওর পিছনে লেগে থাকি,আরে আমার কি কেনো কাজকর্ম নেই আমি তোমার পিছনে লেগে থাকবো,জাবির এই জাবির”
লিজা কান্না করতে লাগল, ড্রইয়িংরুমের দিকে গেল জাবিরের কাছে সে গিয়ে আরো জোরে কান্না করতে লাগল। জাবির বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো আর বললো
“এই কি হয়েছে তোমার কান্না করছো কেন”
“আমি থাকবো না এখানে, আর কখনো আসবো না এখানে তোমার বউয়ের আমাকে ভালো লাগে না আমি প্রথমদিনই বুঝেছিলাম আজ সে নিজেই বলে দিল,আমি চলে যাবো”
“কি বলছো তুমি ফারাহ তোমাকে বলেছে ওর তোমাকে পছন্দ না”
“হ্যা তো আমি কি মিথ্যা বলছি,আসো আম্মু কে জিজ্ঞেস করবে আসো”
জাবিরের হাত ধরে টানতে টানতে রান্নাঘরে নিয়ে আসলো লিজা।শরীফা বেগম ফারাহকে বুঝাচ্ছিলেন লিজা একটু অন্যরকম ওকে ভুল না বোঝার জন্য।
“ফারাহ তুমি লিজাকে কি বলেছো”
“বলেছি যেন আমার কথার মাঝে যেন কথা না বলে আমি কোনো কিছু করতে গেলে আমাকে যেন আটকাতে না আসে,আর আমাকে সম্মান দিয়ে যেন কথা বলে,আর এটাও বলেছি আপনি শুধু ওর ভাই আর কিছু না”
“তো তুমি কি মনে করো ও আমাকে কি ভাবে,আমাদের মধ্যে ভাইবোনের সম্পর্ক ছাড়া অন্য কোনো সম্পর্ক আছে বলে তুমি মনে করো”
“আপনি না ভাবলেও লিজা ভাবে”
“ফারাহহ,চুপ করো তুমি তোমাকে আমি বলেছিলাম সব,ও কতটা ছেলেমানুষ ওকে নিয়ে তুমি এমন ভাবো কিভাবে,তোমার মাথায় এরকম একটা কথা আসলো কিভাবে,ভাইবোনের মতো একটা পবিত্র সম্পর্ককে তুমি এভাবে অপমান করলে,তাহলে তো দেখা নেক্সট টাইম আমার কোনো কাজিনের সাথে আমি হেসে কথা বললে তুমি বলবে তার সাথেও আমার অন্য সম্পর্ক আছে”
“কেন আমি বলবো,তারা আপনার আপন মানুষ,আর লিজার সাথে আপনার কোনো রক্তের সম্পর্ক নেই,আর লিজা আপনাকে ভাই ভাবে সেটা আমি হাজার বার বলবো কারণ এটা সত্যি, বুঝতে পেরেছেন লিজা আপনাকে ভাই ভাবে না”
“হ্যা লিজার সাথে রক্তের সম্পর্ক নেয় আমার কিন্তু আত্মার সম্পর্ক আছে,তোমার সাথেও তো আমার রক্তের সম্পর্ক নেই,লিজা আমার অনেক দিনের পরিচিত, কিন্তু তুমি সে তুলনায় কিছুই না একটা অচেনা মানুষ তুমি,তাও আমি তোমাকে বিশ্বাস করি,আজ যদি তোমার এমন কোনো ভাই থাকতো আমি কখনোই এ কথা বলতাম না আমার মাথায় কখনো এসব চিন্তা আসতোও না,তুমি তোমার এ ব্যবহার দেখিয়ে তুমি বুঝিয়ে দিলে হাউ চিপ ইউ আর”
“জাবির চুপ কর বাবা কি বলছিস এগুলা তুই, ওরা দুজনেই ছোটমানুষ ফারাহকে আমি বুঝাচ্ছিলাম,তুই কেন ওদের মাঝে আসতে গেলি,লিজা এদিকে এসে বল আজ থেকে আমি তোমাকে ভাবি বলে ডাকবো, আর ফারাহ তুমিও সরি বলে দেও লিজাকে”
লিজা জাবিরের পাশ থেকে সরে শরীফা বেগমের কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন,কিন্তু ফারাহ কিছু বললো না, নিজের রুমের দিকে চলে গেল।
“দেখলে আম্মু কিভাবে চলে গেল,অনেক অহংকার আমাকে সরি বলতে হবে বলে চলে গেল, জাবির থাক তুমি আর রাগ করো না আমি কিছু মনে করেনি যদিও কথা গুলো আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে তাও তুমি আর কিছু বলো না”
জাবির রুমের দিকে গিয়ে দেখলো ফারাহ নিজের ব্যাগ গুছিয়ে বাইরে আসছে, জাবির ওর হাত ধরে আটকালো। ফারাহ হাতটা সরিয়ে সামনের দিকে চলে গেল, জাহরা ফারাহর সামনে দাড়িয়ে বললো
“ভাবি তুমি কোথায় যাচ্ছো,তুমি প্লিজ যেও না”
“যে বাসায় আমার কোনো সম্মান নেই সেখানে আমি থাকতে পারবো না জাহরা,আমি অচেনা হলেও আমি তোমার ভাইয়ের বৈধ স্ত্রী ছিলাম,একজন পাতানো বোনের চেয়ে স্ত্রীর অধিকার বেশি থাকে বলেই আমি মনে করি,কিন্তু যেখানে আমাকে একজন বাইরের মানুষের জন্য চিপ বলা হবে সেখানে আমি থাকবো এটা হতে পারে না, ভালো থেকো,তুমি আর আম্মু আমার অনেক খেয়াল রেখেছো এতোদিন”
“ফারাহ দারাও,কোথাও যাবে না তুমি”
ফারাহ কারো কথায় কান না দিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে আসলো।সামনে গেইটটা তার নিজের বাসা হলেও তার যেতে ইচ্ছে করলো না, তাই নিজের মতো হাঁটা শুরু করলো।
ফারাহ বেরিয়ে যাবার পর শরীফা বেগম চিল্লাচিল্লি শুরু করলেন জাবিরের সাথে, সে কেন ওকে আটকাল না
“কতদিন হয়েছে তোদের বিয়ে হয়েছে এখনি বউ রাগ করে বাসা থেকে চলে গেল,খুব ভালো হলো এটা তাই না জাবির,তোর বাবাকে কি বলবো আমি ছেলের সাথে রাগ করে বউ চলে গেছে,সে জানলে কি করবে তুই একবার ভেবে দেখেছিস”
“আম্মু তুমি জাবিরকে এভাবে কেন বলছো,ওর কি দোষ যে অপরাধ করেছে সে বাসা থেকে চলে গেছে ভালোই তো হলো”
“চুপপপ আর একটা কথা বলবি না তোর জন্য আমার বাসার মানুষ বাসা থেকে চলে গেছে, তুই আবার কথা বলছিস,আর জাবির তুই কি বললি ফারাহ অনেক নিচু মনের মানুষ ওর চিন্তা ভাবনা খারাপ, তুই ওকে ওর কোনো ভাইয়ের সাথে এরকম ব্যবহার কিছু মনে করতি না আমাকে বল কোন মেয়ে সহ্য করবে সারাদিন হাসপাতালে রোগী দেখে এসে তার বর তার সাথে সময় না কাটিয়ে অন্য মেয়ের সাথে হাসি তামাশা করবে,বিয়ের আগে লিজার সাথে মেলামেশা আমি কিছু বলিনি কিন্তু এখন বিয়ে করছো এখন তো আগের মতো রাত জেগে ওর সাথে কথা বলা হাসাহাসি করা তোমার মেনে নিবে এটাই স্বাভাবিক, শুনে রাখো জাবির রাতের মধ্যে যদি ফারাহকে বাসায় না নিয়ে আসতে পারো তাহলে তুমিও আর বাসায় আসবে না”
শরীফা বেগম নিজের রুমে চলে গেলেন।লিজা সেখানে দাঁড়িয়ে জাবিরের দিকে তাকিয়ে রইল, জাবির বাসা থেকে বেরিয়ে গেল, সে ভাবলো হাতে যেহেতু ব্যাগ ছিল নিজের বাসায় গেছে নিশ্চয়ই তাই সে সেখানেই গেল।
ফারাহর বাসার দরজার সামনে দাড়িয়ে কিছুক্ষণ চিন্তা করলো নক করবে কিনা,পরে ভাবলো না করতে হবে আমি আজকে একটু বেশি বলে ফেলেছি ক্ষমা চাইতে হবে আমার।কলিংবেল দিতেই মিনারা বেগম এসে দরজা খুললেন জামাইকে দেখে তিনি ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।জাবিরকে ভিতরে বসিয়ে উনি ওর জন্য নাস্তা আনতে গেলেন,ফাহিম এসে ওর পাশে বসলো
“হুমম আজকে কি ভুল গেইটে চলে আসছো নাকি জামাইবাবু”
“নাহ মানে আসলে”
“কথা পরে হবে আগে খেয়ে নেও”
“আম্মু মানে এখনি নাস্তা করেছি তো”
“কোনো কথা না চুপচাপ খাও,পাশের বাসায় থেকেও তো আমার মেয়ে টা কে একদিন ও নিয়ে আসো না”
“হ্যা ফারাহ কোথায় জাবির”
জাবির নিচের দিকে থেকে বললো
“বা বাসায় রান্না করছে আজকে ও”
“তাই আমাদের দাওয়াত করতে এসেছো তুমি ঠিক আছে ভাই আমরা যাবো কি নলো আম্মু”
জাবির ফাহিমের দিকে তাকিয়ে রইল, মিনারা বেগম বললেন
“আমার মেয়ে আজকে রান্না করছে,আচ্ছা ঠিক আছে বাবা আমরা যাবো তুমি নিজে এসেছো না গেলে কি হয়”
জাবির মাথা চুলকিয়ে ভোলাভালা একটা হাসি দিয়ে বেরিয়ে আসলো,ফারাহ কে খুজতে গিয়ে আরেক বিপদ বানিয়ে এসেছে, এখন ওকে খুঁজে না পেলে রান্না করবে কে,ভাবতে ভাবতে জাবির মেইন রোডের দিকে গেল,তারা যেদিন বৃষ্টি ভিজে আসছিল সেদিন ফারাহ বলেছিল বাসার কাছের পার্কটা ওর ছোট থেকেই অনেক পছন্দ সময় পেলেই ও সেখানে গিয়ে বসে থাকতো,তাই জাবির সেদিকেই গেল।
ফারাহ পার্কের দোলনায় বসেছিল, বাতাসে তার চুলগুলো উড়ছিল, জাবিরের বলা কথাগুলো তার কানে বাজছিল বার বার,জীবনে দ্বিতীয়বার কোনো ছেলে আবার তার সাথে এমন করে কথা বললো।তার সাথেই কেন এমন হয় যাকেই সে নিজের করে পেতে চায় সেই ওকে ভুল ভাবে খারাপ ভাবে,কেন কেন ভাবে এমন
#চলবে
#প্রিয়_হতে_প্রিয়তর
#পর্বঃ১৪
#লেখিকাঃতাসনিম
জাবির পার্কে এসে দেখলো ফারাহ দোলনায় বসে দোল খাচ্ছে, সে ফারাহর সামনে এসে হাটুঁ গেড়ে বসে পড়লো কান ধরে, ফারাহর সেদিকে খেয়াল ছিল না,জাবিরের কথায় তার হুঁশ এলো, সামনে তাকিয়ে জাবিরকে কান ধরে থাকতে দেখে ফারাহ বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।
“আমি কি কান ধরেই থাকবো,ভুল হয়ে গেছে আমার ক্ষমা করে দেও প্লিজ মেরি জান”
“উঠুন, আমি কান ধরতে বলিনি”
“তাহলে কি করবো বলুন মেডাম”
“উঠে দাড়ান”
জাবির উঠে দাঁড়াতেই ফারাহ তাকে জরিয়ে ধরে কান্না করতে লাগল, জাবির কিছুটা ভয় পেয়ে গেল প্রথমে পরে ফারাহকে শান্ত হতে বললো।
“কেন আপনারা আমার সাথে এমন করেন বলুন তো,যখনই আমি কাউকে ভালোবাসবো ভাবি একসাথে সারাজীবন থাকবো ভাবি তখনই কেন আপনারা আমার সাথে এমন করেন, আমি কি এতটায় খারাপ আমি নিচু মনের মানুষ আপনি এটা বলেছিলেন না তখন,কিন্তু আপনিও শুনে রাখুন একবার একজনও ছেড়ে দিয়েছে বলে যে বার বার একই কাজ করবো তা কিন্তু নয়,আপনাকে আমি কখনোই ছাড়বো আপনি যাই বলুন না কেন আমাকে,আমি আপনার সাথেই থাকবো, আর কারো সাথে আপনাকে আমি ভাগ করে নিবো না,আপনি শুধু আমার”
জাবির পুরোই শকড্ হয়ে গেল ফারাহর কথায়,মানে ফারাহ আমাকে ভালোবেসে ফেলেছে, আমি এতোদিন ভাবতাম আমার মনে হয় মনের ভুল এটা জাস্ট ভালোলাগা ওর প্রতি আমার কিন্তু আজ ও নিজেও বলে ফেললো ওর মনের কথা।জাবির ফারাহর মাথায় হাত রেখে বললো
“কারো সাথে কেন ভাগ করতে হবে তোমাকে আমি তো শুধু তোমারি,আর ছেড়ে যেতে চাইলেও তো দিবো না আমি যেতে,আজও কেমন তোমাকে খুঁজে বের করে ফেলেছি দেখছো না,কখনো চোখের আড়ালই হতে দিবো না আমি তোমাকে।কিন্তু এখন কথা হলো তোমাকে তারাতাড়ি বাসায় গিয়ে রান্না করতে হবে”
“কেন আমি না রান্না করলে আজকে কারো খাওয়া হবে না নাকি,আম্মু তো নিশ্চয়ই রান্না করে ফেলেছে এতক্ষণে ”
“নাহ আম্মু তো রুমে দরজা বন্ধ করে বসে আছে,কিন্তু এটাও কথা না কথা হলো তোমাকে তোমার বাসায় খুজতে গিয়ে আমি আম্মু আব্বু ফাহিম ভাইকে দাওয়াত দিয়ে এসেছি”
“আপনি আমাকে ওখানে কেন খুজতে গেলেন,তাদের বলে দিয়েছেন আমি রাগ করে বাসা থেকে বেরিয়ে গেছি”
“না না,কথা ঘোরানোর জন্যই তো দাওয়াতের কথা বলতে হয়েছে, এখন চল না বাসায় রান্না করতে হবে,বাই দ্য ওয়ে তুমি কি রান্না করতে পারো”
“না রান্না শুধু আপনার লিজাই পারে”
“দেখো ওর কথা তুলো না আবার ঝগড়া হয়ে যাবে,আমাদের মাঝে ওকে নিয়ে কথা বলার দরকার নেই ”
“ওকেই তাহলে বলে দিবেন ও যেন আমার কাজে বাঁধা না সৃষ্টি করে,আর আমাকে ভাবি বলে ডাকে”
“আচ্ছা আচ্ছা চলো এখন”
জাবির আর ফারাহ বাসায় চলে এলো,জাহরা এসে দরজা খুললো, ফারাহকে দেখে খুশিতে জরিয়ে ধরলো তাকে,তারপর মা মা করে শরীফা বেগম কে ডাকতে লাগলেন, শরীফা বেগম ও খুশি হলেন ফারাহ ফিরে এসেছে দেখে,জাহরার থেকে জানতে পারলো লিজা নাকি হোস্টেলে চলে গেছে। লিজা যাওয়ার খবর শুনে ফারাহও খুশিতে আটখানা হয়ে গেল।তারপর শরীফা বেগম আর ফারাহ রান্না করতে লাগলেন।
দুপুরে ফারাহর বাসার সবার আসার কথা থাকলেও লতিফ চৌধুরী কাজে ব্যস্ত থাকায় রাতে আসবে বলেছে।রান্না শেষ করে রুমে গিয়ে ফারাহ বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো, জাবির নামাজ পড়ে এসে ওকে এভাবে শুয়ে থাকতে দেখে বললো,
“কি হলো এমন চিৎপটাং হয়ে শুয়ে আছো কেন”
“এমনি,শুনন আলমারি থেকে আপনার পছন্দের একটা শাড়ি বের করুন আজ আমি ওটাই পড়বো”
“আমার পছন্দের, বাহ ভালোই বললা,আচ্ছা দেখি কোনটা পছন্দ হয় আমার”
জাবির আলমারি খুলে শাড়ি দেখতে গিয়ে আরেক বিপদে পড়লো,এতো শাড়ির মধ্যে কোনটা পছন্দ করবে বুঝেই পাচ্ছিল না।
“এতো শাড়ি কবে কিনেছো তুমি”
“কিনেছি অল্প কয়টা সব গিফট, যেই নতুন বউ দেখতে আসে শাড়ি দিয়ে যায়,আর ফুপ্পিরাও তো অনেক শাড়ি দিয়ে দিয়েছে আম্মুও দিয়েছে তাই এতে গুলো”
“তাহলে প্রতিদিন শাড়ি পড়লেই পারো,তাহলে তো শাড়িগুলো কাজে লাগে”
“আপনার শাড়ি ভালো লাগে”
“ভালো লাগলেই কি আমি তো পড়তে পারবো না”
“আমি কি আপনাকে পড়তে বলেছি”
“আসলে নারীকে শাড়িতে অন্যরকম সুন্দর লাগে,তাই আমার মনে হয় তাদের সবসময় শাড়িই পড়া উচিত, বাকিটা যার যার পছন্দ ইচ্ছা কমফোর্ট কারণ অনেকে শাড়ি পড়ে কমর্ফোটেবল ফিল করে না”
“হুমম পছন্দ করা হলো আপনার”
“হ্যা এটা পড়ো”
জাবির সবুজ রঙের জামদানী শাড়ি দিল সবুজের মধ্যে হলুদাভ রয়েছে শাড়িতে।
“সবুজ কি আপনার প্রিয় রঙ”
“হুমম অন্য সব রঙের থেকে আমার সবুজটাই বেশি লাগে কারণ এটাতে প্রকৃতির ছোয়া থাকে বলে আমার মনে হয়”
ফারাহ একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে শাড়িটা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল।একঘন্টা পরে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে দেখলো জাবির ফোনে গেম খেলায় ব্যস্ত।ড্রেসিংটেবিলের আয়নায় চুল মুছছিল ফারাহ,জাবির ফোনে চোখ রেখেই বললো
“তুমি ঘুমিয়ে পড়েছিলে”
“কিহ,ওয়াশরুমে কি কেউ ঘুমায় নাকি আমি ঘুমাবো কেন”
“তাহলে এতক্ষণ কি করলে,আমি তো না খেয়ে থাকতে পারলাম না তাই খেয়েই নিলাম,তাও আম্মু তোমার হাতের রান্না দিল না বললো রাতে নাকি পাবো”
“হুমম,দেখুন শাড়িটা আসলেই সুন্দর”
“তুমি সুন্দর,তাই শাড়িটা সুন্দর লাগছে”
“একবার তাকিয়ে দেখুন তো”
“তাকালে যে আমি ঠিক থাকতে পারবো না বউ”
জাবিরের কথায় ফারাহ লজ্জা পেয়ে গেল আর রুম থেকে বেরিয়ে জাহরা রুমে গেল,সে বসে মুভি দেখছিল।
ফারাহকে দেখে বললো
“ওয়াও ভাবি ইউ লুকিং মাশাল্লাহ, হাই নাজার না লাগে কিসিকা”
“বাংলাও কিছু বলো”
“অপরূপা লাগছে গো ভাবি তোমাকে”
ফারাহ হাসতে হাসতে জাহরার পাশে বসলো আর বললো
“চুল গুলো শুকিয়ে গেলে আর রোদ টা পড়ে গেলে আমরা ছাদে যাবো কেমন,ছবি তুলে দিবে আমাকে”
“ওকে ভাবি ডান,তবে চলো আম্মুর কাছে”
“কেন আম্মুর কাছে কেন,এই আম্মুকে বলবে না আমি আমি ছবি তুলতে বলেছি তোমাকে প্লিজ”
“আহা ভাবি আম্মুর কাছে অনেক সুন্দর একটা নেকলেস আছে যেটা তোমার শাড়িটার সাথে মানাবে,সেটাই আনতে যাচ্ছি”
“ওহ আচ্ছা চলো”
জাহরা আর ফারাহ রুমে এসে দেখলো,শরীফা বেগম ঘুমিয়ে আছেন।তাই ফারাহ বললো,
“চলো চলে যায় আম্মু তো ঘুমাচ্ছে”
“কিন্তু নেকলেস”
“পরে নেয়া যাবে,এখন চলো”
“ঠিক আছে”
বিকেলে শরীফা বেগম থেকে নেকলেস টা নিয়ে ফারাহ রেডি হয়ে নিল,তখন জাবির বাসায় ছিল,বন্ধু দের সাথে দেখা করতে গিয়েছিল, জাহরা আর ফারাহ ছাদে গিয়ে ছবি তুলতে লাগলো।ছবি তুলতে তুলতে সন্ধ্যা হয়ে গেল।বাসায় এসে দেখলো জাবির চলে এসেছে মুখটা গম্ভীর করে ড্রইয়িংরুমে বসে আছে, জাহরা তার রুমে চলে গেলে ফারাহ জাবিরের পাশে বসে বললো
“কি হয়েছে তোমার,মুখটাকে এমন করে রেখেছো কেন”
ফারাহর মুখে তুমি ডাক শুনে জাবির একবার ওর দিকে তাকিয়ে আবার অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিল।ফারাহ তার মাথা জাবিরের কাঁধে রেখে বললো
“বলো না কি হয়েছে, আচ্ছা শুনো না আজকে আমাকে জাহরা অনেক গুলো ছবি তুলে দিয়েছে, ঘুমানোর দেখাবো তোমাকে”
তখনই কলিংবেলটা বেজে উঠল, ফারাহ গিয়ে দরজা খুলতেই দেখলো তার বাবা মা ভাই দাড়িয়ে আছেন, ফারাহ তাদের জরিয়ে ধরলেন।জাবিরও উঠে দাঁড়ালো ওনাদের বসতে বললেন।শরীফা বেগম এসে কথা বলতে লাগলেন তাদের সাথে, ফারাহ নাস্তা সাজিয়ে দিল সবার সামনে, সবাই গল্পে মেতে ছিল,আর জাবির বার বার আড়চোখে ফারাহকে দেখছিল,ফারাহ বিষয় টা বুঝতে পেরে মুচকি মুচকি হাসছিল।
#চলবে