প্রিয় হতে প্রিয়তর পর্ব-১৫+১৬

0
430

#প্রিয়_হতে_প্রিয়তর
#পর্বঃ১৫
#লেখিকাঃতাসনিম

রাতে ফারাহর পরিবার ডিনার করে চলে গেলেন,যাওয়ার সময় বলে গেলেন সোমবারে তারা ফাহিমের জন্য মেয়ে দেখতে যাবেন শরীফা বেগম যেন ওদের সবাইকে নিয়ে চলে আসে দুই পরিবার একসাথে যাবে,ওনারা চলে গেলে যে যার রুমে ঘুমাতে চলে গেল। ফারাহ শাড়িটা চেঞ্জ করে জামা পড়ে নিল,তারপর রুমে এসে দেখলো জাবির বারান্দায় বসে আছে,সে তার কাছে গেল,ফারাহ এসেছে বুঝতে পেরে জাবির ওর দিকে একবার তাকালো,ফারাহ ওর পাশে বসে বললো

“চাঁদটা অনেক সুন্দর তাই না”

“হুমম”

“কি হয়েছে বলবা তো”

“ছাদে গিয়েছিলে তুমি আজকে”

“হুমম সন্ধ্যায় না বললাম তোমাকে জাহরা আমাকে অনেকগুলো ছবি তুলে দিয়েছে, চলো তোমাকে দেখায়”

জাবির ফারাহর জামার ওড়না টা দিয়ে বড় কে ঘোমটা দিয়ে বললো

“এরপর থেকে যখন ছাদে যাবে এভাবে যাবে”

“এতবড় ঘোমটা দিলে তো আমি কিছু দেখবোই না সামনে কি আছে”

“এভাবে ঘোমটা দিলে কেউ তোমাকে দেখবে না”

“ওমা কেউ আমাকে দেখলে কি হবে”

“তোমাকে শুধু আমি দেখবো আর কেউ না বুঝলে”

“হুমম বুঝলাম,তা আজকে কে দেখেছিল আমাকে”

“দেখেছিল আমার এক বন্ধু”

“আচ্ছা নেক্সট টাইম থেকে এভাবেই যাবো”

“গুড গার্ল”

“এজন্য এতক্ষণ মুখভার করে বসেছিলে বুঝি”

“কই মুখভার করে বসেছিলাম”

“হাহ আমি দেখেছি”

“ভালো হয়েছে চলো ঘুমাবো,কাল অফিস আছে”

ভোরবেলা ৫ টার দিকে শরীফা বেগম জাবিরের রুমে নক করলেন,জাবির উঠে গিয়ে দরজা খুলতে দেখেই মার চোখে পানি,তার বুকের ভেতর গিয়ে ধুক করে ওঠে।

“কি হয়েছে আম্মু”

“তোর আব্বু…..”

“কি হয়েছে আব্বুর”

“কি হয়েছে আব্বুর আম্মু”

“ওযু করতে গিয়ে নাকি বাথরুমে সেন্সলেস হয়ে পড়েছিলেন এতক্ষণ, একটু আগে রেশমির বাবা আজ মসজিদে যায়নি দেখে বাসায় দেখতে এসে দেখে উনি এভাবে পড়ে আছেন,সাথে সাথে আমাকে ফোন করে জানালো,এত সকালে এখন ডাক্তার কোথায় পাবে,আমি এখন কি করবো তোর বাবাকে বলি আমাদের সাথে এখানে থাকো,না ওখানেই পরে থাকবে নিজের খেয়াল তো ঠিক মতো রাখতে পারে না আবার ওই বাসার খেয়াল রাখবে সে”

“আম্মু তুমি চিন্তা করো না,জাবির আমাদের এখনি যাওয়া উচিত আর তুমি আম্মু যার কথা বললো তাকে ফোন করো”

“হ্যা আমি ফোন করতেসি তুমি আম্মুকে সামলাও”

“আম্মু এখানে আসো বসো,কিছু হবে না আব্বুর মাঝেমধ্যে এরকম মাথা সবারই ঘুরে যেতে পারে অনেকের দুর্বলতার কারণে এরকম হয়,তুমি চিন্তা করো না”

জাবির ফোনে কথা বলে এসে মাকে বললেন,

“চিন্তা করো না জসিম আংকেল ডাক্তার নিয়ে এসেছেন ডাক্তার দেখে গেছে এখন ঠিক আছে,সকাল হলে আমরা মেহেরপুরের উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়বো,এখন একটু শান্ত হও আম্মু”

ফারাহ শরীফা বেগমকে উনার রুমে দিয়ে আসলেন,তারপর নিজের রুমে এসে দেখলেন জাবির দেয়ালের সাথে মাথা ঠেকিয়ে চুল টানছে,জাবিরের পাশে দাঁড়িয়ে বললো

“কি হয়েছিল আব্বুর”

“ছোট একটা স্ট্রোক করেছে বলে ডাক্তার মনে করছে,আমাদের গিয়ে ভালো ডাক্তার দেখাতে হবে”

“হুমম,ব্যাগ গুছিয়ে নেয় আমি”

সকাল হতেই জাবিররা বেরিয়ে পড়বে তখনই জাবিরের ফোনে কল এলো অফিস থেকে। সে কল টা ধরে একটু দূরে গেল কথা বলার জন্য।

“হ্যালো,মি.জাবির”

“জি স্যার বলুন”

“শুনন আজকে একটা ইম্পরট্যান্ট মিটিং আছে যেটাতে আপানকে উপস্থিত থাকতেই হবে,সো আজকে একটু আগে আসবেন”

“সরি স্যার আমি আজকে আসতে পারবো না আমার আব্বু অনেক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন হঠাৎ করে, তার কাছে যেতে হবে আমাকে এখন”

“হোয়াট ননসেন্স মি.জাবির,গত মাসেও আপনি অনেক ছুটি কাটিয়েছেন আপনার বিয়ে ছিল বলে,তখনও অনেক ইম্পরট্যান্ট মিটিং ছিল কিন্তু আপনি সেগুলোতেও ছিলেন না এখন আবার আপনি আসতে পারবেন না বলছে,এভাবে কাজ করা যায় না, বুঝতে পারছেন আপনি”

“কিন্তু স্যার আজকে আমাকে যেতেই হবে”

“আজকে যদি আপনি না আসেন তাহলে আর আপনাকে আসতে হবে না কখনো,আপনার বাসায় সযত্নে আমরা ইস্তফা পত্র পাঠিয়ে দিবো”

কথাটা বলে উনি কলটা কেটে দিলেন।জাবির আসছে না দেখে ফারাহ গাড়ি থেকে নেমে ওর কাছে গেল,ওর কথা শুনে বুঝতে পারল অফিস থেকে ছুটি দিচ্ছে না ওকে।ফারাহ জাবিরের কাঁধে হাত রেখে বললো

“তুমি অফিসে যাও আমি আম্মু আর জাহরাকে নিয়ে যাচ্ছি, আমি সব সামলাতে পারবো তুমি যদি অফিসের কাজ শেষ করে ছুটি পাও তাহলে এসো না হয় আসার দরকার নেই, আমি তোমাকে টাইমে টাইমে সব খবর দিবো”

“তুমি পারবে একলা সব সামালাতে”

“হুমম,মি.জাবির আপনি এখন আমাদের বিদায় দিয়ে অফিসে যান”

“হুমম”

জাবির ফারাহকে গাড়ি তে উঠিয়ে মা আর জাহরাকে দেখে রাখতে বললো,কোনো দরকার হলে ওকে যেন ফোন করে, বাবার সব খবর ওকে দিতে বললো,তারপর গাড়ি ছেড়ে দিল, জাবির গাড়িটা যতদূর পর্যন্ত দেখা যায় তাকিয়ে রইলো,তার বাবা অসুস্থ কিন্তু সে যেতে পারলো না,তারপর অফিসের উদ্দেশ্য রওনা হলো, অফিসে তাকে দেখে বস ভিষণ খুশি হলেন।

ফারাহদের পৌঁছাতে পৌঁছাতে দুপুর ৩ টা বেজে গেল,বাবা তখন উঠোনে বসে ছিলেন,জসিম আংকেল তার পাশে বসেছিল,জাহরা গিয়ে দৌড়ে তার বাবাকে জরিয়ে ধরলো।

“আরে মা আমি ঠিক আছি,কান্না করছিস কেন,আর তোদের ঢাকা থেকে তাড়াহুড়ো করে কে আসতে বললো হ্যা”

“চুপ করো তুমি এখানে আর থাকবে না তুমি আমাদের সাথে ঢাকায় ফিরে যাবে,আমি কোনো কথা শুনবো না তোমার”

“কি যে বলো তুমি জাবিরের মা,এ গ্রাম এ ঘর এ মাটি হাওয়া পানি ছাড়া যে এখন আর আমার ভালো লাগে না ঢাকার ওই কংক্রিটের দালান ধুলাবালি”

“আব্বু আপনাকে কোথাও যেতে হবে না,আপনি এখানেও থাকবেন আবার কিছুদিন ঢাকায় গিয়ে আমাদের সাথেও থাকবেন,কিন্তু তার আগে আপনাকে ভালো ডাক্তার দেখাতে হবে, এখন সুস্থ থাকতে হলে ঔষধ নিয়মিত খেতে হয়”

“জিজ্ঞেস করে দেখো ফারাহ কখনো কোনো ঔষধ ঠিকমতো খেয়েছে কিনা,ঔষধ খেলে আমাকে জ্বালাবে কিভাবে তাই খায় না”

“আচ্ছা আচ্ছা এখন থেকে খাবো তাও আমাকে ঢাকা যেতে বলো না”

“আচ্ছা বউমা,ভাবি জাহরা মা চলো বাসায় চলো,হাতমুখ ধুয়ে মুখে কিছু দিবে”

“জাবির কোথায় ও আসেনি”

“না আসলে আব্বু জাবির আসতো কিন্তু ওর অফিসে একটা ইম্পরট্যান্ট কাজ পরে গেছে তাই আসতে পারেনি”

“ওহহ আচ্ছা, যাও তোমরা ভিতরে যাও রাইমা ভাবি রান্না করে রেখেছেন,খেয়ে নেও”

সবাই বাসার ভিতরে গিয়ে যে যার রুমে গেল,ফারাহ্ জাবিরের রুমটাতে গেল,আগের বার যখন এসেছিল তখন জাবির সাথে ছিল,কিন্তু এবার সে নেই তাকে ছাড়া রুমটাকে কেমন যেন লাগছে।জাবিরের কথা ভাবতে ভাবতেই ওর কল চলে আসলো।

“হ্যালো পৌঁছেছো”

“হুমম মাত্রই আসলাম”

“আব্বু কেমন আছে এখন”

“এখন আগেরথেকে ভালো আছে,সন্ধ্যায় ডাক্তারের কাছে গিয়ে যাবো”

“ডাক্তার কি বলে সাথে সাথে জানাবে আমাকে”

“হুমম জানাবো,খেয়েছো তুমি”

“নাহ খাবো এখন কাজের চাপ অনেক বেশি”

“শোনো রাতে বাসায় গিয়ে কিন্তু রান্না করতে যেও না বাইরে থেকেও খেয়ে যাবে না,আম্মু ফোন করে বলেছে ওখানেই খেতে”

“এসবের কি দরকার ছিল”

“দরকার ছিল তাই তো বলছি,আচ্ছা শুনো”

“হুমম বলো”

“মিস ইউ জাবির,তোমার রুমটা একদম খালি খালি লাগছে তোমাকে ছাড়া”

“আমিও তোমাকে মিস করবো বাসায় গিয়ে কারণ এখানে শ্বাস নেয়ার সময়ও নেই, আচ্ছা এখন রাখি কেমন খেয়ে রেস্ট নেও”

“ঠিক আছে ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করো”

“ওকে”

জাবির কলটা কেটে দিল, ফারাহ ব্যাগ থেকে থ্রি পিস বের করে ওয়াশরুমে চলে গেল।ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলো একজন মধ্যবয়স্ক মহিলা খাবার হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছেন।

“আপনি এভাবে দাড়িয়ে আছেন কেন বসুন না”

“না নাহ মা ঠিক আছে আমি মাত্রই এসেছি, তুমি খাবার টা খেয়ে নেও আমি আসছি”

“আচ্ছা”

মহিলাটি চলে গেলে ফারাহ খাবারের প্লেট নিয়ে বসে পড়লো,খাওয়া শেষ করে প্লেট টা নিয়ে রান্নাঘরের দিকে গেল, সেখানে শরীফা বেগম আর ওই মহিলাটি ছিলেন ফারাহকে দেখে বললেন,

“তুমি কষ্ট করে আসতে গেলে কেন আমাকে ডাক দিতে আমি গিয়ে নিয়ে আসতাম”

“না আপনি কেন কষ্ট করবেন,তাই আমিই নিয়ে এসেছি”

“ফারাহ ইনি হলেন রেশমির মা তোমার আর একজন শাশুড়ী, তোমার বাবার রান্না উনিই করে দেন,আজকে ওনারা না থাকলে কি যে হতো”

“হুমম আব্বু কোথায় এখন”

“ঘুমোচ্ছে, তুমিও গিয়ে একটু রেস্ট নেও সেই ভোরবেলা উঠেছো”

ফারাহ মাথা নাড়িয়ে চলে গেল৷ নিজের রুমে, বিছানায় শুয়ে বালিশে মাথা রাখতেই কোথা থেকে রাজ্যের ঘুম এসে তার চোখে নেমে গেল।

#চলবে

#প্রিয়_হতে_প্রিয়তর
#পর্বঃ১৬
#লেখিকাঃতাসনিম

সন্ধ্যায় ফারাহ আর জুবায়ের সাহেব ডাক্তারের কাছে গেলেন,ডাক্তার জুবায়ের সাহেব কে চেক-আপ করে কিছু ঔষধ দিয়ে দিলেন,আর সবসময় খেয়াল রাখতে বললেন,আর টাইম মতো ঔষধ খেতে বললেন,কোনো প্রকার টেনশন যেন উনি না করে সে ব্যাপারে বিশেষ খেয়াল রাখতে বললেন।তারপর ফারাহ আর জুবায়ের সাহেব বাসার উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়লো,রাস্তায় থাকতেই জাবিরের কল এলো।ফারাহ কল টা রিসিভ করতেই জাবির আগে বললো,

“তোমাকে না বলেছিলাম সাথে সাথে আমাকে জানাবে আব্বুর কি হয়েছে, ডাক্তার কি বলেছেন”

“এখন রাস্তায় আছি,বাসায় গিয়ে বলি”

“নাহ এখনি বলো সংক্ষেপে”

“ঔষধ দিয়েছে আর সবসময় খেয়াল রাখতে বলেছেন,একবার যখন স্ট্রোক হয়েছে আবারও হতে পারে তাই টেনশন করতে বারণ করেছেন”

“ঠিক আছে,সাবধানে বাসায় যাও পরে আমাকে কল করো”

“হুমম”

বাসায় আসতেই জাহরা ছুটে এসে বললো

“ভাবি জানো আমাদের পাশের বাসার মেয়ে নাকি বিয়ে করবে না বলে সুইসাইড করেছে,মানে জোর করে বিয়ে দিচ্ছিল মেয়েটার পরিবার,এখন এই মেয়ের আত্মা যদি আমাদের বাসায় এসে আমাদের ভয় দেখায়”

“কিসব উল্টা পাল্টা কথা বলছো জাহরা,কিছু হবে না,আম্মু কোথায়”

“রান্নাঘরে,আজকে আম্মু দেশি মুরগীর ঝোল,করলা ভাজি,ইলিশ মাছ ভাজা আর আমের ডাল রান্না করতেসে, আহ খাবারের নাম নিতেই মুখে পানি চলে আসলো ভাবি”

“আচ্ছা তাহলে আমি রুমে যায়,আব্বু কে জিজ্ঞেস করো কিছু লাগবে কিনা”

“তুমি কিছু খাবা”

“এক কাপ চা দিও”

“ঠিক আছে, তুমি যাও আমি দুমিনিটে আসছি”

ফারাহ রুমে এসে ব্যাগটা সাইডে রেখে শুনতে পেল বাইরে কান্নাকাটির শব্দ আসছে,তাই সে বারান্দায় গেল সেখানেই সেই মেয়েটার লাশ রাখা হয়েছে পুলিশ না আসা পর্যন্ত কেউ কিছু করতে পারবে না,তখনই চা নিয়ে শরীফা বেগম রুমে আসলেন।ফারাহ ডাক দিতেই সে রুমে চলে আসলো।

“বারান্দায় যেও না এখন দরজা জানালা বন্ধ করে রাখো,না জানি মেয়েটা নিজে মরেছে নাকি ইচ্ছে করে মেরে এখন বলছে সুইসাইড”

“কেন আম্মু,ইচ্ছে করে মারবে কেন”

“আমার যখন নতুন বিয়ে হয় আমি এ বাসায় নতুন বউ হয়ে আসি তখন থেকেই দেখি এ বাসায় মেয়ে সন্তানদের তারা পছন্দ করতেন না যারই মেয়ে হতো কোনো না কোনো ভাবে মারা যেত,জাহিলি যুগের মতো নিষ্ঠুরলোক এরা,লোকমুখে শোনা যায় এরা ইচ্ছে করেই মেরে ফেলতো,কিন্তু তারা বলতো অসুখে, অন্য কোনো কারণে মারা গেছে,শুধু এই মেয়েটাই এতোদিন বেঁচে ছিল আজ সেও চলে গেল,যাই হোক দরজা খুলে বারান্দায় যেও না রুমেই থাকো,রান্না আর একটু বাকি খেয়ে তারপর ঘুমিয়ে পড়ো,আর জাবিরের সাথে কথা হয়েছে”

“হ্যা আম্মু, আসার পথে জাবির কল করেছিল”

“আচ্ছা আমি যায় চুলায় তরকারি বসিয়ে এসেছি”

চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে ফারাহ একবার বারান্দার দিকে তাকালো, দরজা লাগিয়ে দেয়ার পরও কান্নার শব্দ আসছে,তার বারান্দার নিচেই মেয়েটির লাশ,ইচ্ছে করে একটা জীবিত মানুষকে কি মেরে ফেলা সম্ভব,ভাবতেই তার ভয় হতে শুরু করলো।তারপর জাবিরকে কল করলো, ওকে ঘটনাটা বলার পর সে হাসতে হাসতে বললো,

“আরে ভয় পেয়ো না তুমি এসব কোনো কথা না,আচ্ছা বলো এখন ডিনার করেছো”

“নাহ,আমার সত্যিই ভয় লাগছে,কান্নার শব্দ যেন বেড়েই চলছে,মনে হচ্ছে তোমার বারান্দায় তারা এসে তারা কান্না করছে”

দুপুরের মহিলাটা এসে দরজা নক করলো,বেশ জোরেই নক করেছিল কান্নার শব্দে যদি ফারাহ শুনতে না পায় তা ভেবে,নক করার শব্দে ফারাহ ভয় পেয়ে ফোন টা দূরে ফেলে দিল,তার মনে হলো বারান্দায় নক করছে দরজা খোলার জন্য, সেও তো একটা মেয়ে তাকেও কি মেরে ফেলবে,আবারও দরজায়,নক করলে ফারাহ রুমের দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে সেখানে নক করছে,তারপর সে কাঁপাকাপাঁ হাতে গিয়ে দরজাটা খুলে দেয়,মহিলাটিকে দেখে ও আবারও ভয় পেয়ে যায় পান খাওয়ার কারণে পুরো ঠোঁট লাল হয়ে আছে,আর মহিলার গায়ের রঙও কালো অন্ধকারে অন্যরকম দেখা যাচ্ছিল।

“বউমা আসো আমার সাথে এখানে থাকলে ভয় পাইতে পারো”

ফারাহ এখনো চুপ করে তাকে দেখছে,ওর থেকে কোনো জবাব না পেয়ে মহিলাটি ওর হাতে ধরতেই কারেন্ট চলে গেল, ফারাহ জোরে চিৎকার করে উঠলো, শরীফা বেগম মোমবাতি নিয়ে দৌড়ে এলেন,ফারাহ তাকে দেখে ওনাকে জরিয়ে ধরলেন আর কান্না করতে লাগল।শরীফা বেগম মোমবাতিটা মহিলাটির হাতে দিয়ে ফারাহর মাথায় হাত রেখে বললেন,

“কি হয়েছে মা,ভয় পাচ্ছো কেন কিছু হয়নি,আসো আমার সাথে থাকবে তুমি তাহলে আর ভয় করবে না”

ফারাহ রুমের দিকে তাকিয়ে বললো,

“আম্মু আমার ফোন টা রুমে জাবির কলে ছিল”

“দেখেছো মেয়ের কান্ড এতো ভয় পেতে হয়,আচ্ছা দারাও রাইমা একটু ফোনটা নিয়ে আসো তো”

মহিলাটি গিয়ে ফোনটা এনে ফারাহর হাতে দিলেন,জাবির তখনও লাইনে ছিল ফারাহকেই ডাকছিল,ফারাহ কলটা কেটে দিয়ে জাহরার সাথে গিয়ে বসলো,ওকে দেখে জাহরা হাসতে হাসতে শেষ হয়ে যাচ্ছিল।

“কিগো ভাবি তুমি একটু আগে বললা আমি উল্টা পাল্টা কথা বলতেসি তুমি এখন ভয়ে এমন কাচুমাচু খাচ্ছো কেন”

“আম্মু কি বলে আসলো এগুলো আর ওনাদের কান্না শুনে আমার ভয় করছিল আর কারেন্ট ও চলে গেল তাই”

“আচ্ছা ভাইয়া কল করলো তাও আবার আমার ফোনে স্বপ্ন দেখি নাকি আমি”

“স্বপ্ন না সত্যি এখন কলটা ধরে বলবে ভাবি অনেক ভয় পেয়ে গেছে, মুখ দিয়ে কোনো শব্দ করছে না চোখ দিয়ে শুধু পানি পড়ছে তারপর তোমার ভাই কি বলে তা বলবে আমাকে না বলার কি দরকার স্পিকারে রাখো তাহলেই হয়”

“আচ্ছা, তুমি কিন্তু আমার থেকে দুষ্টু বেশি ভাবি”

“হয়েছে ধরো এখন”

“হ্যালো ভাইয়া”

“কোথায় থাকিস, কখন থেকে কল করছি”

“আরে ভাবি তো কথা বলছে না শুধু চোখ দিয়ে পানি আসছে তার আমাদের তো ভয় করছে কি করবো এখন বোবায় ধরলো নাকি ভাবি কে বুঝতেসি না”

“কিহহ,ফারাহ কথা বলছে না সেন্স আছে ওর”

“হ্যা সেন্স না থাকলে চোখ দিয়ে পানি পড়ে কিভাবে”

“ওকে দে ফোনটা”

“কথা বলে না তো”

“দিতে বলেছি”

ফারাহ ইশারা করে না বলছে ওকে ফোন না দিতে,জাহরা ফারাহর হাতে ফোন দিয়ে দূরে গিয়ে বসে পড়লো।

“ফারাহ,তুমি কি সত্যিই কথা বলছো না,দেখো মজা করো না আমার সাথে চিন্তা হচ্ছে আমার”

“হয়েছে আর চিন্তা করতে হবে না কিছু হয়নি আমার,একটু ভয় পেয়েছিলাম জাস্ট আর কিছু না”

“দুষ্টামি করলা কেন,আমাকে টেনশন দিতে অনেক ভাল্লাগে তাই না,যাও তোমার সাথে আমি আর কথায় বলবো না”

“হেই জাবির,হ্যালো হ্যালো”

ফারাহ জাহরার দিকে তাকাতে সে এসে আবার ফারাহর পাশে বসলো ফোনটা ফারাহর হাত থেকে নিয়ে বললো

“তোমার বরের এই দু চার মিনিটের রাগ একটু পরেই চলে যাবে,এখন আমরা গিয়ে খেয়ে আসি চলো,ততক্ষণে কারেন্ট আসলে তো ভালো আর না আসলে আরো ভালো”

“না আসলে ভালো কিভাবে”

“না আসলে ভূতের গল্প করতে করতে ঘুমানো যাবে মোমবাতির আলোতে”

“একটা মাইর দিবো,ভূতের গল্প বলবে সে আর কোনো কাজ নেই”

খাওয়া দাওয়া শেষ করে জাহরা আর ফারাহ একরুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো।সকালে ঘুম থেকে উঠে জানতে পারলো সে মেয়েটাকে নাকি দাফন করা হয়ে গেছে এখন পরিবেশ ঠান্ডা। নাস্তা শেষ করে শরীফা বেগম বললেন

“ফারাহ মা তুমি আর জাহরা বরং ঢাকায় ফিরে যাও,আমি এখানেই থাকি এতোদিন ছেলেমেয়ে দুটো একলা ছিল তাই আমি ওদের সাথে ছিলাম এখন তো তুমি আছো আমার সংসার এখন তুমিই দেখবে তাই আমি তোমার বাবার সাথেই থাকি আর তুমি জাহরা নিয়ে চলে যাও জাবিরের ও একলা সেখানে কি খায় না খায় তুমি গেলে ওর খেয়াল রাখতে পারবে”

“হ্যা ভাবি আমারও তো কিছুদিন পর পরীক্ষা শুরু হয়ে যাবে এখন ঢাকায় থাকা দরকার আমার”

“ঠিক আছে আজ তবে আমরা চলে যাবো কিন্তু আম্মু তুমি আর আমাদের সাথে আসবে না”

শরীফা বেগম মুখে হাসি ফুটিয়ে বললেন,

“আসবো তবে আর পার্মানেন্ট হয়ে নয় এখন থেকে অতিথি হয়ে আসবো,ছেলের বাসায় এতোদিন আমি সামলেছি এই পাগল দুটোকে এখন তুমি সামলাবে বুঝলে”

“আমি কি পারবো আম্মু”

“পারবে পারবে আমিও কি শুরুতেই পেরেছি, ধীরে ধীরে পারবে”

কিছুক্ষণ পরই গাড়ি চলে আসলে জাহরা আর ফারাহ ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা হয়ে যায়,জাবিরকে সারপ্রাইজ দিবে বলে কিছু জানায়নি তারা।

#চলবে