প্রিয় হতে প্রিয়তর পর্ব-১৭+১৮

0
450

#প্রিয়_হতে_প্রিয়তর
#পর্বঃ১৭
#লেখিকাঃতাসনিম

বাসায় এসে ফারাহ আর জাহরা অনেকক্ষণ ধরে দরজা নক করছে কিন্তু দরজা খুলছে না কোনো সাড়াশব্দও নেই, দারোয়ান বলেছে জাবির আজকে অফিসে যায়নি তাহলে দরজা খুলছে না কেন,ফারাহ ফোন বের করে জাবিরকে কল করলো, কল ধরলো সে।

“হ্যালো দরজা খুলছো না কেন তুমি কি হয়েছে তোমার”

“দরজা খুলবো কেন”

“আমি আর জাহরা অনেকক্ষণ যাবত বাইরে দারিয়ে আছি”

“কিহহ,তোমরা কখন এসেছো আমাকে জানাওনি কেন”

“দরজা খোলো”

“হ্যা আসছি”

জাবির এসে দরজা খুললো,জাহরা নিজের রুমে চলে গেল, ফারাহ জাবিরের দিকে তাকিয়ে বললো

“তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন”

কথাটা বলেই জাবিরের কপালে হাত রাখলো ফারাহ।হাতটা সরিয়ে জাবির বললো

“আরে কিছু হয়নি,চলো ভিতরে যাবে”

“কিছু হয়নি মানে তোমার গায়ে জ্বর আছে”

“একটু জ্বর থাকলে কিছু হয়না”

“আজকে যদি আমরা না আসতাম তাহলে আমাকে জানাতেই না তুমি অসুস্থ”

“কোথায় অসুস্থ”

“তোমার সাথে কথা বলাই বেকার”

ফারাহ রাগ করে রুমে চলে গেল, জাবিরও তার পিছু পিছু আসলো,তারপর বিছানায় বসে ফারাহকে জিজ্ঞেস করল

“আম্মু আসবে না?”

“নাহ আম্মু নাকি আসবে তবে ঘুরতে কিছুদিনের জন্য ”

“তোমাকে তাহলে গিন্নি বানিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে এবার”

“হুমম”

“আচ্ছা কি খাবে বলো অর্ডার করে দেয়”

“জাহরা কে জিজ্ঞেস করো, ওর মনে হয় আম্মুর কথা মনে পড়ছে,কিছুদূর আসার পরেই একদম চুপ হয়ে গেছে আর কোনো কথা বলেনি,সুন্দর করে জিজ্ঞেস করো,ধমক দিবে না ওকে”

“কত কদর ওর জন্য”

ফারাহ কিছু বললো না, জামা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল।জাবির জাহরার রুমে গেল, গিয়ে দেখলো জাহরা ওদের ফ্যামিলি ফটো নিয়ে বসে আছে,জাবির গিয়ে ওর মাথায় হাত রাখলো,জাহরা পিছনে ঘুরে তাকালো আর ভাইকে জরিয়ে ধরে কেঁদেই দিল।

“ভাইয়া আম্মুকে ছাড়া থাকবো কিভাবে,এতোদিন আব্বু দূরে থাকতো আর এখন আম্মুও দূরে থাকবে,কেন তাদের ওখানে থাকতে হবে,আমাদের সাথে এখানে থাকলে হয় না”

“তোকে যখন বিয়ে দিয়ে দিব,তখন আমাদের ছাড়াই থাকতে হবে,এখন থেকেই অভ্যাস কর আর আমি আর তোর ভাবি তো আছি,এখন তোকে তো বুঝতে হবে আব্বু ওখানে একলা থাকে আম্মু থাকলে আব্বুর খেয়াল রাখতে পারবে তাই না”

জাহরা চোখ মুছে মাথা নাড়ালো,তারপর জাবির জিজ্ঞেস করলো কি খাবে সে।

“পিজ্জা খাবো”

“এখন পিজ্জা খাবি”

“হ্যা এখনি খাবো অর্ডারই তো করবি তাড়াতাড়ি কর”

“আচ্ছা ফ্রেশ হয়ে নে অর্ডার করছি”

জাবির পিজ্জার অর্ডার দিয়ে রুমে গেল।ফারাহ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছচ্ছিল, জাবির গিয়ে পিছনে দাড়ালো।ফারাহ জাবিরকে আয়নায় দেখে সামনে ঘুরে দাঁড়ালো তার দিকে,জাবির ফারাহর সসমনের চুলগুলো কানে গুঁজে দিল।আর একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ফারাহর দিকে ভেজা চুল থেকে পানি পড়ছে, চোখগুলো তাকে দেখছে গালগুলো লাল হয়ে আছে।

“কি দেখো এভাবে”

“তোমাকে”

“আজকে প্রথম দেখছো”

“প্রতিদিনই নতুনভাবে দেখি”

“তাই বুঝি,কখন দেখো তুমি আমাকে”

“যখন এই চোখ দুটো ঘুমে ব্যস্ত থাকে,মিষ্টি একটা চেহারায় যখন সকালের প্রথম আলোটা পড়ে তখন দেখি,অন্যরকম মায়া কাজ করে”

“লুকিয়ে লুকিয়ে কেন দেখো”

“লুকিয়ে দেখার মধ্যে অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করে,যেমন ধরো যখন আমি কোনো কাজে ব্যস্ত থাকি আর তুমি আমাকে আড়চোখে দেখো,আমি তোমার দিকে তাকালেই অন্যদিকে চোখ সরিয়ে নেও,তখন তোমার মনেও অন্য রকম ভালোলাগা কাজ করে, ভালোবাসার মানুষটিকে লুকিয়ে দেখতেই বেশি ভালো লাগে,পৃথিবীর সাত’শ কোটি মানুষের মধ্যে শুধু ভালোবাসার মানুষটিকে এক পলক দেখার জন্য তোমার চোখ তাকে খুজবে,বুঝলে”

“তুমি লক্ষ করো আমি কখন তোমাকে দেখি”

“হুমম,আমি না দেখলে আর কে দেখবে”

“আচ্ছা লুকিয়ে দেখার মধ্যে অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করে বুঝলাম,কিন্তু আজ যে তুমি আমাকে লুকিয়ে নয় বরং আমার সামনে আমাকে দেখলে আজ কেমন অনুভূতি হলো”

“আজ… ইচ্ছে করলো তোমার এই চোখের মায়ার গভীরতায় ডুবে যায়,এই চুলগুলোকে এলোমেলো করে দেয়,এই কোমল গালদুটোকে ছুয়ে দেয়”

ফারাহ নিচের দিকে তাকিয়ে রইল জাবিরের কথা শুনে জাবির নিচু হয়ে ফারাহর থুতনিতে হাত রেখে বললো

“এভাবে লজ্জায় লাল হয়ে গেলে আরো বেশি কিউট লাগে,মায়া যেন আরো বেড়ে যায়”

“ভাইয়া পিজ্জা চলে আসছে….ওপসসস সরি সরি আমি পরে আসছি না মানে তোরা আয় পিজ্জা চলে আসছে”

জাহরা রুম গোছালে চলে গেল ড্রইয়িংরুমের দিকে,ফারাহ চুলগুলো বেধে নিয়ে বললো

“মানে দরজাটা কি খুলে রাখার জন্য দেয়া হয়েছে, দরজা খুলে রেখে উনি রোমান্টিক হিরো সাজছে,জাহরা কি ভাবলো”

“ভাবলো ভাই ভাবির রোমান্সের সময় গিয়ে বাঁধাটা সৃষ্টি না করলেও পারতাম,মুডটাই খারাপ করে দিল”

“ভালো হয়েছে চলো এখন”

“তোমরা খাও,আমি লাঞ্চ করেছিলাম”

“কোথা থেকে লাঞ্চ করেছো”

“কেন অনলাইন”

“আচ্ছা”

ফারাহ ড্রইয়িংরুমে গিয়ে জাহরার পাশে বসলো,সে শুধু মিটিমিটি হাসছে,ফারাহ বললো

“হাসছো কেন জাহরা,তুমি যা ভাবছো এমন কিছুই না তোমার ভাই কথা বলছিল জাস্ট”

“হুমম,আমি কি কিছু বলেছি নাকি ভাবি,তা আমি যদি ফুপ্পি হয়ে যেতাম তাহলে মন্দ হতো না”

“জাহরা কি বলছো”

“উমমম ভাবি লজ্জা পাচ্ছো দেখি”

“হয়েছে চুপ করো তুমি খাও”

“হুমমম খাচ্ছি কিন্তু তুমি আমার কথাটা ভেবে দেখো”

“মাইর দিবো এখন”

খাওয়া শেষ করে ফারাহ রান্নাঘরে গেল,আম্মু সব বাজার মাসের শুরুতেই করে রাখে তাই কোনো কিছু আনাতে হবে না,রাতের জন্য রান্না সে নিজেই করবে বলে ভাবলো,তাই সে কাজে লেগে পড়লো,কিছুক্ষণ পর জাহরা এসে বললো

“ভাবি আমার না একটু এক বান্ধবীর বাসায় যেতে হবে নোট’স আনার জন্য, তুমি ভাইয়াকে বলো”

“ভাইয়াকে বলে যাও”

“ভাইয়া যেতে দিবে না,তুমি বলো একটু”

“দেখো জাহরা তোমার ফ্রেন্ডসদের তো আমি চিনি না,সন্ধ্যা হয়ে গেছে এখন যাবে তুমি যদি কোনো সমস্যা হয়,তাই ভাইয়াকে বলে যাও,ও তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আসবে”

জাহরা বাধ্য হয়ে জাবিরের কাছে গেল, অনেক কষ্টে তাকে রাজি করালো সে,তারপর জাবির ওকে পৌছে দিতে গেল,কিছুক্ষণ পরে ঝুম বৃষ্টি নেমে গেল, বৃষ্টি দেখে ফারাহর শরীফা বেগমের বলা কথাগুলো মনে পড়লো বৃষ্টি হলেই জাবির খিচুড়ি গরুর গোসত খাওয়ার বায়না ধরতো,এখন হয়তো ওকে বলবে না তাও ফারাহ নিজে থেকেই রান্না শুরু করলো,তারপর রুমে গিয়ে একটু রুমটাও গুছিয়ে নিল, জাহরার দুপুরে বলা কথাটা বার বার ফারাহর কানে বাজছিল।তখনই কলিংবেল বেজে ওঠে।ফারাহ গিয়ে দরজা খুলে দেখে জাবির পুরো ভিজে গেছে। ফারাহ দরজাটা লাগিয়ে জাবিরকে জিজ্ঞেস করলো

“তোমার না জ্বর তুমি ভিজলে কি করে”

জাবির কোনো কথা না বলে ফারাহকে একটান দিয়ে নিজের কাছে গিয়ে এলো।ফারাহর দিকে তাকিয়ে বললো

“চলো আজকে আমার বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে করছে”

“অসুস্থ তুমি,আজ না আর..”

জাবির ফারাহর ঠোঁটে আঙুল দিয়ে তাকে থামিয়ে দিল,ফারাহ জাবিরের আঙুল সরিয়ে বললো

“ড্রেস চেঞ্জ করে আসো তোমার ফেবারিট খাবার রান্না করেছি,আর জাহরা আসবে না”

“মানে তোমরা কি ঠিক করেছো সবসময় আমার মুডটা খারাপ করে দেবে”

“তোমার এসব দুষ্ট মুড না হওয়াই ভালো যাও যেকোনো সময় কারেন্ট চলে যাবে”

“চলে যাক”

“যাও না”

জাবির গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে আসলো,খাওয়া শেষ করে রুমে গিয়ে দুজনে বারান্দায় গিয়ে বসলো তখনই কারেন্ট চলে গেল, জাবির ফারাহর গালে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দিল,ছোটগুলো হাত দিয়ে সরিয়ে দিল,ফারাহ রুমের ভিতর চলে গেল,জাবির গিয়ে পিছন দিয়ে জরিয়ে ধরলো ফারাহকে,আর বললো

“যদি ছোট্ট একটা প্রিন্সেস আসে তবে কি তোমার প্রতি ভালোবাসা কমে যাবে বলে মনে করো”

“ভালোবাসা আমি কখনো কমতেই দিবো না”

বাইরে আরো জোরে বৃষ্টি পড়তে থাকে,প্রকৃতির সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্ত এই বৃষ্টি।

সকালের দিকে বৃষ্টি থেমে যায়,ফারাহ জাবিরের বুকে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে আর জাবির তাকে জরিয়ে ধরে আছে।জাবিরের কলের শব্দে দুজনের ঘুম ভেঙে যায়।

“হ্যালো কে”

“জাবির কেমন আছিস বাবা”

“আম্মু হ্যা আমরা ভালো আছি, তোমরা কেমন আছো”

“আমরাও ভালো আছি,জাহরাকে দেখেশুনে রাখিস বাবা আর ওকে বকবি না কিন্তু”

“হ্যা আম্মু ওকে আমি বকবো কেন,আচ্ছা নাস্তা করেছো তোমরা”

“হুমম,তোরা করেছিস”

“নাহ এখনো করিনি করবো”

“আচ্ছা তাহলে রাখি এখন”

“ঠিক আছে সাবধানে থেকো”

জাবির বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুমের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো, কলে কথা বলার সময় ফারাহ চলে গেছে ওয়াশরুমে।দরজা খুলতেই জাবিরকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ফারাহ ভয় পেয়ে যায়, জাবির দেয়ালে হাত রেখে ফারাহর দিকে ঝুকে বলে

“পালালে কেন তুমি,তোমার লজ্জামাখা মুখটা দেখবো আমি ভেবেছিলাম”

“মন ভরেনি”

“উহমম,তাও এই লজ্জামাখা মুখটা দেখতে ইচ্ছে করে”

“দেখি সরো,এতো লজ্জা দিও না, জাহরা চলে আসবে নাস্তা বানাতে হবে”

ফারাহ রুম থেকে বেরিয়ে গেল, জাবির ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে মুচকি হাসলো কালকের কথা মনে পড়তেই,আসলেই মেয়ে টা অনেক লজ্জা পায়।

#চলবে

#প্রিয়_হতে_প্রিয়তর
#পর্বঃ১৮
#লেখিকাঃতাসনিম

ফারাহ চেম্বারে বসে রোগী দেখছিল,একজন ৬০-৬৫ বয়সের একজন ভদ্রলোক এলো,উনি চেয়ারে বসে বললেন,

“আমি রফিক আলম,আমার ছেলে মানসিক ভাবে অনেক অসুস্থ, সে কোনো কাজ করতে পারে না খাওয়া দাওয়া করে না,সারাদিন এক রুমে চুপ করে বসে থাকে,কোনো কিছু বললেও সে উত্তর দেয় না মনে হয় কোনো কথা সে শুনতেই পায় না”

“সে এমন কীভাবে হলো,হঠাৎ করে তো কেউ এমন হয় না”

“কি আর বলবো,এখনের যুগের ছেলেমেয়ে কে ভার্সিটিতে পাঠানো হয় পড়ালেখার জন্য, কিন্তু তারা করে বসে প্রেম তারপর বিচ্ছেদ হয়ে যায়,আর তারা ডিপ্রেশনে চলে যায়,আমার ছেলের ক্ষেত্রেও একি ঘটনা সে একটি মেয়েকে ভার্সিটিতে গিয়ে অনেক ভালোবেসে ছিল,অনেক দিন একসাথে থাকার পরে মেয়েটি আমার ছেলেকে বললো তার নাকি বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে,এখন আর একসাথে থাকা সম্ভব নয়,আমার ছেলের অনেক স্বপ্ন ছিল নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে,স্কলারশিপ পেয়েছিল কিন্তু তখনই মেয়েটা ওকে ছেড়ে যাওয়ায় সে আর গেলো না কোথাও, দুবছর ধরে তার এই অবস্থা”

“ওহহ,ওনাকে কি সাথে নিয়ে এসেছেন রোগী না দেখে কিছু বলা যাচ্ছে না”

“হ্যা, বাইরে আছে”

“ঠিক আছে ওনাকে ভিতরে নিয়ে আসুন”

লোকটি তার ছেলেকে আনতে বাইরে গেলেন,ফারাহ ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো জাবির কল করেছে,রোগী দেখার সময় ফোন সাইলেন্ট থাকে বলে শুনতে পায়নি।

“হুমম বলো”

“কি করছো”

“রোগী দেখছি”

“এখন তোমার সামনে রোগী আছে”

“নাহ,রোগীর বাবা রোগীকে আনতে গেছে বাইরে আছে নাকি,ডিপ্রেসড্ অনেক মনে হয় গার্লফ্রেন্ড ছেড়ে চলে গেছে”

“আমি তো রেণুর থেকে বাঁচার জন্য ডিপ্রেসড্ ছিলাম,আর তোমার রোগীকে ছেড়ে গেছে বলে ডিপ্রেসড”

“তুমি কি রেণুকে ভালোবাসতে নাকি,সে হয়তো অনেক বেশি ভালোবাসতো,আচ্ছা রাখো এখন”

“ওকে”

লোকটি তার ছেলেকে নিয়ে ভিতরে আসলেন, ফারাহ ফোন টা সামনে রেখে তাদের দিকে তাকালো,সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটিকে দেখে সে স্তব্ধ হয়ে গেল।লোকটি তার ছেলেকে বসিয়ে ফারাহকে বললো,

“আমার ছেলে শাহিন আলম,ওর কথায় আপনাকে বলেছি এতক্ষণ”

পাঁচ বছর আগের শাহিন আর এখনের শাহিনের মধ্যে একবিন্দু মিলও নেই,চুলগুলো বড় হয়ে আছে,মুখে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি, আগের ফরসা চেহারাটায় এখন কালচে ভাব চলে এসেছে চোখের নিচে কালি,আগের সবমসময় পরিপাটি থাকা ছেলেটা এখন এলোমেলো হয়ে গেছে।

ফারাহকে চুপ করে থাকতে দেখে শাহিনের বাবা আবার বললেন,

“ম্যাডাম,কি হলো আপনার”

“সরি,উনার ট্রিটমেন্ট আমি করতে পারবো না”

“কেন,কি হয়েছে”

ফারাহ চুপ হয়ে গেল, কি বলছে সে এইসব সে এখন একজন ডাক্তার রোগী কে তার চিকিৎসা করতে হবে, কে রোগী সেটা ম্যাটার না,কিন্তু সেই ছেলে ও চিকিৎসা করবে যে কিনা তার ক্যারিয়ার গড়ার জন্য ফারাহ আর তার বাবা কে অপমান করেছিল,আজ ভাগ্য তাকে আবার ফারাহর কাছেই নিয়ে এলো।শাহিন নিচের দিকে তাকিয়ে ছিল,ফারাহ একবার তার দিকে তাকিয়ে আবার ওর বাবার দিকে তাকিয়ে বললো

“সরি আংকেল,আমি ওনাকে কিছু ঔষধ লিখে দিচ্ছি, উনার সাথে আপনাদের সবসময় কথা বলতে হবে,উনি না চাইলেও জোর করে কাজ করাবেন,ব্যস্ত রাখবেন ওনাকে একা থাকতে দিবেন না,আর এক সপ্তাহ পর ওনাকে আবার দেখাতে নিয়ে আসবেন,আর কিছু মনে করবেন না আমার কথায়,আ’ম সরি”

“নাহ ঠিক আছে, আপনি কি আমার ছেলেকে চিনেন”

“মি.শাহিন আপনি কি একটু মাথাটা তুলে উপরে তাকাবেন”

ফারাহর কথা শুনে শাহিন তার দিকে তাকালো,কিন্তু কোনো রিয়েকশন দিল না।হয়তোবা চিনতে পারলো না, ভুলে গেছে হয়তো।ফারাহ শাহিনের বাবাকে বললেন,

“আমাকে এখন যেতে হবে,আমার হাসবেন্ড আমার জন্য অপেক্ষা করছে”

“তুমি বিয়ে করেছো ফারাহ”

শাহিনের কথা শুনে ফারাহ তার দিকে তাকালো, মানে সে তাকে চিনতে পেরেছে, কিন্তু কিছু বলার প্রয়োজন বোধ করেনি।

“বাবা,তুই ওনাকে চিনিস”

“কবে বিয়ে করেছো তুমি”

“সময় তো কারো জন্য বসে থাকে না শাহিন,সময়ের সাথে মানুষকে পরিবর্তন হতে হয়,আমিও পরিবর্তন হয়ে নিজের এলোমেলো জীবনটাকে গুছিয়ে নিয়েছি,তোমাকে এখন একটা পরামর্শ দিবো ডাক্তার হিসেবে নয় পূর্ব পরিচিত হিসেবে কার জন্য পরিপাটি ছেলেটা ক্যারিয়ার নিয়ে এতো সিরিয়াস ছেলেটা এক নিমিষে এলোমেলো হয়ে গেছে তা আমি জানি না,কিন্তু সনয় থাকতে নিজেকে গুছিয়ে নেও,কেউ কাউকে ছাড়া মরে না তুমিই একদিন বলেছিলে,এক সপ্তাহ পর আবার দেখা হবে,নিজের যত্ন নিও,আসি আংকেল”

ফারাহ সেখান থেকে চলে গেল, শাহিন আবার নিচের দিকে তাকিয়ে রইল,ওর বাবা এতক্ষণ বোকার মতো ওদের কথা শুনছিল,এ মেয়েটা কি ধোঁকা দিয়েছে তার ছেলেকে নাকি একবার যে একটা মেয়ে তার জন্য পাগল ছিল সেই মেয়ে এটা,উনি কিছু বুঝতে পারলেন না,শাহিনকে নিয়ে বাসায় চলে এলেন।

জাবিরের আসার কথা আরো পরে কিন্তু ফারাহ আগেই বেরিয়ে গেছে আজ,তার আর কোনো পেশেন্ট দেখতে ইচ্ছে করছিল না বলে,একটা ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে সে দূরে তাকিয়ে রইল, যার অপমান ভোলার জন্য,যাকে ভোলার জন্য পাঁচ বছর সে তার পরিবারকে ছেড়ে দূরে ছিল,তাকে আজ আবার সামনাসামনি দেখতে হলো,এখন তাকে দেখতে হবে প্রায়ই চিকিৎসার জন্য কীভাবে সামলাবে সে নিজেকে,শাহিনকে দেখলেই তো তার পুরনো সব কথা মনে পড়ে যায়।

জাবির হাসপাতালে এসে জানতে পারলো ফারাহ অনেকক্ষণ আগে চলে গেছে, তাই সে বাসায় চলে এলো, বাসায় এসে জাহরা কে জিজ্ঞেস করলে সে বলে নাহ ফারাহ আসিনি,জাবির ফোন বের করে ফারাহ কে
দুবার রিং হয়ে শেষ হয়ে গেল ফারাহ কল ধরলো না,জাবিরের টেনশন হতে লাগলো,রাত বাড়তে লাগলো ফারাহ কল ধরছেই না তাই জাবির বাইরে যাওয়ার জন্য গেইট খুলতেই দেখে ফারাহ এসেছে।

“কোথায় ছিলে এতক্ষণ, রাত কি হয়নি তোমার,ফোন দিলে ফোন ধরো না কেন, আমার যে টেনশন হয় বুঝো না তুমি”

ফারাহ কিছু না বলে চুপ করে রুমে চলে গেল, কোনো জবাব না পেয়ে জাবিরের মাথা আরো গরম হয়ে গেল ডাইনিং টেবিল থেকে গ্লাস নিয়ে ভেঙে ফেললো সব,জাহরা রুম থেকে বেরিয়ে আসলো গ্লাস ভাঙার শব্দে, জাবিরকে এমন রেগে থাকতে দেখে কিছু বললো না,ফারাহ রুমে গিয়ে চুপ করে বিছানায় বসে রইল, পরে রুম থেকে বেরিয়ে বাইরে এ অবস্থা দেখে জাবির কোথায় তা দেখতে, ড্রইয়িংরুমে গিয়ে দেখলো সোফায় হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে,এখন পর্যন্ত যতবার জাবিরকে রেগে যেতে দেখেছে ততবারই তাকে চোখ বন্ধ করে রাগ কন্ট্রোল করছে।ফারাহ গিয়ে ওর পাশে বসে বললো

“সরি,আর দেরি হবে না”

জাবির কিছু বললো না ওঠে চলে যেতে নিতেই ফারাহ হাত ধরে আটকালো।জাবির অন্যদিকে তাকিয়ে রইল, ফারাহ ওর হাতে হাত রেখে বললো

“ভালোবাসো আমাকে”

“কেন বুঝো না,তোমাকে না দেখলে টেনশন হয় আমার”

“আর এমন হবে না প্রমিজ”

“ঠিক আছে যাও,ছেড়ে দিলাম এবার,কিন্তু কোথায় ছিলে তুমি আর তোমার মুখটা এমন হয়েছিল কেন”

“যে স্মৃতি ভুলতে গিয়েছিলাম লন্ডন সে স্মৃতির সামনে আবার ভাগ্য আমাকে নিয়ে এসেছে, তোমাকে বলেছিলাম না একজন পেশেন্ট এসেছে সে শাহিন ছিল যার জন্য ছোট্ট অবুঝ ফারাহ পাগল ছিল”

“তুমি ট্রিটমেন্ট করবে ওর”

“প্রথমে না করেছিলাম, কিন্তু পরে ভাবলাম না এটা ঠিক না,তাই ট্রিটমেন্ট করবো ভেবেছি”

“হুমম ভালো করেছো,অতীত অতীতই থাকবে সেটা নিয়ে ভেবে কষ্ট পেয়ে লাভ নেই”

“শুধু বর্তমানে যে তুমি আছো সে আমার সাথে ভবিষ্যৎ পর্যন্ত গেলেই হবে”

#চলবে