প্রেমতরী পর্ব-০৩

0
365

#প্রেমতরী
পর্ব :- ৩
.
মিষ্টি এখন প্রায় সময় মামুনের রুমে আসে, ওর সেবা করে, একসাথে অনেকটা সময় কাটায়।
জেঠিমা সব জানলে ও মিষ্টির বাবা মা এই বিষয়ে কিছুই জানতো না।
ডাক্তার বলেছিলো মামুনের সুস্থ হতে প্রায় মাসখানেক সময় লাগবে।
কিন্তু মিষ্টির সেবায় সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই মামুন অনেকটা সুস্থ হয়ে ওঠে।
মিষ্টির এমন ভালোবাসা দেখে মামুন নিজেই মিষ্টিকে ভালোবাসতে শুরু করে।
আগে থেকেই মামুন মিষ্টিকে ভালোবাসতো। কিন্তু সম্পর্কের টানাপোড়নে বলা হয়নি।
মনে মনে ভাবতে থাকে সেই রাতের কথা, মিষ্টিতো ঠিকই বলেছিলো।
উচিত ছিলো দুটো থাপ্পড় দিয়ে ওকে ভালো করে বোঝানো,এবং ঘরে গিয়ে সবাইকে সবটা বোঝানো।
তাহলে এই বিয়েটা ঠিক হতো না। ইসসসস, কি ভুলটাই না হয়ে গেছে সেদিন।
গাধার মতো ছাদ থেকে লাফ দেওয়ায় সবকিছু কেমন যেনো উল্টাপাল্টা হয়ে গেছে।
সময়টা প্রায় মাঝরাত। মিষ্টি মামুনকে জড়িয়ে শুয়ে আছে।
–মিষ্টি, অনেক রাত হয়েছে, ঘরে যা।
–তোকে ছেড়ে যেতে মন চাইছে না।
–এই অবস্থায় কেউ দেখে ফেললে কি হবে বুঝতে পারছিস?
–আমি তোকেই আমার স্বামী মানি। আমাকে ছোয়ার অধিকার আমি তোকে দিয়েছি। এতে কার কি যায় আসে।
–পাগলের মতো বকিস না।
–আমাকে একটু বুদ্ধি দেনা, কিভাবে এই বিয়েটা ভাঙবো।
–আগে ওই ছেলেকে দেশে আসতে দে, আমি নিজে গিয়ে ওর সাথে কথা বলবো।
–তোকে এতো কষ্ট করতে হবে না, ওই বেটাকে আমিই সাইজ করবো।
–বেশি পাকনামি করিস না, যা ঘরে যা।
–এটাই তো আমার ঘর, কোথায় যাবো আমি? আমার জামাইকে ছেড়ে আমি কোথাও যাবো না।
–বুঝার চেষ্টা কর, চাচা চাচি কেউ যদি তোকে খুজে, তখন ধরা পড়ে যাবি। চুপিচুপি এখানে আসা তখন বের করবে।
–তোকে ছেড়ে যেতে মন চাচ্ছে না। আমার খুব সখ, তোর বুকে মাথা রেখে ঘুমাবো। মাথা তো রেখেছি, কিন্তু ঘুমটা আর হলো কই।
–বিয়ের পর ঘুমাইয়েন, এখন যান।
–একটু আদর করে দে, তাহলে চলে যাবো।
–কেমন আদর?
–যে আদরে দুজন মিশে একাকার হয়ে যায়।
–হাতে এখনো অনেক সময়, সব হবে। শুধু সময়টা সঠিক ভাবে আসুক।
–তুই একটুও রোমান্টিক না। কি দেখে যে তোকে ভালেবাসলাম।
–হয়েছে, এখন যান। আমাকে ঘুমাতে হবে। সকালে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। কাল ব্যান্ডেজ খোলার তারিখ।
–হ্যা তাইতো। আমার কলিজাটা কাল থেকে আবার হাটবে।
–হুম।
–আচ্ছা তাহলে ঘুমা, আমি চলে যাচ্ছি।
যাওয়ার আগে মিষ্টি মামুনকে লম্বা করে একটা কিস করে যায়।
প্রায় প্রতি রাতেই মিষ্টি এভাবে মামুনের সাথে সময় কাটায়।
ধীরেধীরে বিয়ের দিন আগাতে থাকে।
আর ২দিন পরই মিষ্টির হবু বর বিদেশ থেকে আসবে।
.
মামুন এখন ভালোভাবেই হাটতে পারে, যার সম্পূর্ণ ক্রেডিট মিষ্টির।
বিদেশ থেকে মিষ্টির হবু বর আসার একদিন আগেই মিষ্টি আর মামুন আলাদা আলাদা করে বাড়ি থেকে বের হয়।
এবং বাড়ির কারো অনুমতি ছাড়া বিয়ে করে ফেলে।
এটা মিষ্টিরই প্ল্যান ছিলো,
মিষ্টি ওই ছেলেকে দিয়ে বিয়ে ভাঙাবে, আর যদি এর পরও কাজ না হয়, তাহলে মামুনের সাথে বিয়ের কাগজপত্র তো আছেই।
সবকিছু হাতের বাহিরে চলে যাওয়ার আগে দুজন নিজেদের সেইফ করে নিলো।
কাজি অফিস থেকে বিয়ে করে দুজন আলাদা আলাদা করে বাড়ি ফিরে এলো।
সেদিনও প্রায় মাঝরাতে মিষ্টি মামুনের রুমে প্রবেশ করে।
মিষ্টি আজ ঘর থেকে একটা মায়ের শাড়ি নিয়ে এসেছে।
আজ যে তাদের বাসররাত, মিষ্টিকে আজ সম্পূর্ণ বউ বউ লাগছে।
মামুন মিষ্টির পাশে এসে বসে।
–জানিস, আমি কখনো কল্পনাও করিনি আমার বাসররাত টা এভাবে হবে। তবে হ্যা, এটা ভেবে খুব শান্তি লাগছে যে তুই আমার স্বামী। (মিষ্টি)
–আমার তো কাল কি হবে সেটা ভেবেই হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। এটা কি আমরা ঠিক করলাম?(মামুন)
–তুই কিছু চিন্তা করিস না, আমি সব সামলে নিবো।
–আমার ভয় করছে, না জানি কি হয়।
–ধুর, এসব ভাবিস নাতো। আজ না আমাদের বাসররাত?
–হুম,
–আমার একটা অনুরোধ রাখবি?
–কি?
–আমি বাচ্চা নিতে চাই।
–কেনো?
–যেনো আমি প্রেগন্যান্ট এই কথাটা শুনে আমার বিয়ের জন্য কেউ চাপ দিতে না পারে।
–প্রেগন্যান্ট হওয়ার কথা শুনলেতো ব্যাপারটা আরো বড় হয়ে যাবে। তখন?
–তুই কি গাধা? আমাদের বিয়ের সব কাগজপত্র আছে, কেউ কিছু করতে পারবে না। আমি তোকে কোনো মূল্যেই হারাতে পারবো না। তুই শুধু আমার।
–পাগলি একটা,
–এতদিন তো আমাকে কাছে আসতি বারণ করতি, আজ তো আমি তোর বউ? এবার কি করবি?
–কি আর করবো,
–আজ তোকে খুব ভালোবাসবো, তোকে এতটা পাগল বানিয়ে ছাড়বো যে আমি তোর থেকে একটু দুরে গেলে তুই ছটফট করবি।
–বাপরে, দেখিতো কি করবি….
–দেখবি? আয়….(বলেই মামুনকে জাপড়ে ধরে বিছানায় পড়ে যায়। বাকিটা আর নাই বলি)
.
পরদিন সকালে মিষ্টির হবু বর দেশে এসে পৌছায়। সন্ধ্যায় মিষ্টির হবু বর তার সাথে দেখা করতে মিষ্টিদের বাড়ি আসবে।
–মা, এতো রান্না বান্না কি জন্য শুনি,
–সে কিরে, তুই জানিস না? তোর হবু বর আজ বাড়িতে আসবে। তাকে আপ্যায়ন করতে হবে না?
–তোমাদের আল্লাদ দেখে আর বাচি না। করো রান্না, আমি গেলাম জেঠিমার কাছে।
মিষ্টিকে নিজের রান্নাঘরে দেখে জেঠিমা বলে উঠলো,
–কিরে? এখানে কি করিস? যা তোর মাকে সাহায্য কর।
–পারবো না। ওনাদের পছন্দ করা ছেলে, ওনারা খাওয়াক, আমি পারবো না।
–বাপরে,
–সরো তুমি, আমি রান্না করবো।
–কেনো?
–আমার পছন্দ করা ছেলেকে খাওয়াতে।
–তোর মা শুনলে তোকে মারবে। যা ঘরে গিয়ে তোর মাকে সাহায্য কর।
–না, তুমি সরো। আমি রান্না করি।
জেঠিমাকে সরিয়ে দিয়ে মিষ্টি নিজের হাতে রান্না করছে।
আর জেঠিমা দূর থেকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কি করবে এই মেয়েটাকে নিয়ে, কয়দিন পরই ওর বিয়ে। আর মেয়েটা এখনো মামুনের জন্য পাগল হয়ে আছে।
–হ্যা রে মিষ্টি, তোকে তো আজ খুব সুন্দর লাগছে।
–তাই নাকি জেঠিমা? ওসব বলে লজ্জা দিও না।
–নারে, সত্যি। বেশ কয়েকদিন যাবত লক্ষ্য করছি তোর মধ্যে কিছুটা পরিবর্তন আসছে।
–কিরকম?
–সাধারণত মেয়েদের শারীরিক ভাবে এমন পরিবর্তন হয় বিয়ের পর। তুই একদম কিউট গুলুমুলু হয়ে গেছিস। আজ দেখবি তোর হবু বর তোকে দেখে চোখ ফেরাতে পারবে না।
–যাহ, কি যে বলো না জেঠিমা। ওই বেটার সামনে কে যাবে? আমি তো যাবোই না।
–কেনো?
–কেনো সব জেনেও তুমি এমন প্রশ্ন করো? তুমিতো সবই জানো। তুমি একবার আব্বুকে বলে দেখোনা, হতে পারে আব্বু তোমাদের কথা মেনে নেবে।
–নারে মা, এখন আর কিছুই সম্ভব না, সব কিছুর ব্যবস্থা হয়ে গেছে।
–তোমায় একটা কথা বলি?
–হুম বল।
–কাউকে বলবে নাতো?
–কি এমন কথা?
–না থাক, এখন না। পরে বলবো।
–বল, সমস্যা নাই
–না এখন না।
জেঠিমা আর কথয় বাড়লো না। তবে সে ভালো করেই মিষ্টির দিকে খেয়াল করে।
মেয়েটার শারীরিক গঠন আগের চেয়ে অনেকটা বদলে গেছে।
মিষ্টির মধ্যে কেমন একটা মেয়েলীপনা এসে গেছে। দেখতেও কতটা মায়াবী লাগছে।
মনের মধ্যে কেমন যেন একটা খটকা লেগে যায় জেঠিমার।
এদিকে মামুন সারাদিনের কাজ শেষে সন্ধ্যায় বাসায় ফেরে।
মিষ্টি দৌড়ে মামুনের রুমে চলে আসে।
–আরে আরে, দরজা কেনো বন্ধ করছিস? কেউ দেখে ফেলবে।
–দেখুক, তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না। আমার বরটা সারাদিন পর বাসায় এসেছে। আমার খেয়াল রাখতে হবে না?
–বাব্বাহ, কতো খেয়াল রাখে আমার।
–আমার আর এভাবে লুকিয়ে আসতে ভালো লাগে না। এমন কিছু কর না যেনো সবার সামনেই আমি তোর কাছে আসতে পারি।
–তোর হবু বর আসছে নাকি?
–আমার কোনো হবু বর টর নাই, তুই ই আমার বর।
–বাবারে, বুঝলাম তো। ছেলেটা কি এসেছে?
–আসবে একটু পর। কেনো?
–ওর সাথে কথা বলার বায়না করে আমার ঘরে নিয়ে আসবি।
–কি বলবি ওকে?
–দেখিনা কি বলা যায়। তুই শুধু ওকে নিয়ে এখানে আসবি।
–ওক্কে বাবু, আমি তাহলে যাই, আম্মু খুজবে।
–যা।
দরজা খুলে মিষ্টি বেরিয়ে যাওয়ার সময় হঠ্যাৎ মামুনের মা আড়াল থেকে মিষ্টিকে দেখে ফেলে।
সন্দেহটা যেনো আরো ঘাড় হয়।
মিষ্টি তার নিজের ঘরে চলে যায়।
এদিকে মামুনের মা মামুনের রুমে আসে।
–আম্মু, তুমি হঠ্যাৎ?
–কেনো? আমার আসা বারণ?
–না না, কি যে বলো। কিছু বলবে?
–মিষ্টি এখানে কি করছিলো?
–কই?
–মাত্র ও এখান থেকে বেরিয়ে গেলো।
–ওর হবু বর আসবে তো? তাই আমাকে যেতে বললো। আমি বলেছি পারবো না, ওর হবু বরকে নিয়ে যেনো এখানে আসে। ক্লান্ত লাগছে তো তাই।
–কবে থেকে তুই এত গুছিয়ে মিথ্যা বলা শিখেছিস?
–মিথ্যা কই বললাম?
–কি হয়েছে আমাকে সব খুলে বল।
–কিছু হয়নিতো। হলে তো তোমাকে সবই বলতাম।
–বাবা, এমন কিছু করিস না যাতে তোর বাবাকে অপমানিত হতে হয়।
–কিচ্ছু হবে না। আমি তোমাকে পরে সব খুলে বলবো। এখনো কিছু বলার সময় হয়নি।
–তারমানে সত্যিই কিছু লুকাচ্ছিস?
–লুকাচ্ছি না, শুধু একটু সময় চাচ্ছি।
–আমি মিষ্টিকে দেখেই সন্দেহ করেছিলাম। তোদের মধ্যে কোনো একটা সম্পর্ক তৈরী হয়েছে। কি হয়েছে আমাকে সব খুলে বল।
–আগে বলো একদম চুপ করে থাকবে, চিল্লাবা না। তাহলে বলবো।
–ঠিক আছে, বল।
–গতকাল আমরা বিয়ে করে ফেলেছি।
–কিহ…???????
.
.
.
চলবে……………
.
লেখক :- #A_Al_Mamun