প্রেমতরী পর্ব-০৪

0
305

#প্রেমতরী
পর্ব :- ৪
.
আমি মিষ্টিকে দেখেই সন্দেহ করেছিলাম। তোদের মধ্যে কোনো একটা সম্পর্ক তৈরী হয়েছে। কি হয়েছে আমাকে সব খুলে বল।
–আগে বলো চিল্লাবা না। তাহলে বলবো।
–ঠিক আছে, বল।
–গতকাল আমরা বিয়ে করে ফেলেছি।
–কিহ…???????
–হুম।
–কখন? কিভাবে? আমি তো কিছু জানিই না।
–কাল সকালে আমরা কাজি অফিসে গিয়ে বিয়েটা সেরে ফেলেছি।
–কি করেছিস এটা? কেনো এই কাজটা করলি?
–কোনো উপায় ছিলো না। মিষ্টির জোরাজুরিতে বিয়েটা করতে বাধ্য হলাম। শুধু আব্বুকে একটু সামলে নিও প্লিজ। এদিকটা আমি সামলে নেবো।
–তোর বাবা শুনলে তোকে মেরে ফেলবে। হায় আল্লাহ, এখন আমি কি করবো। এই কোন আগুন লাগিয়েছিস।
হঠ্যাৎই মামুনের আম্মু অসুস্থ হয়ে পড়ে।
এদিকে ডাক্তার এসে জানালো হঠ্যাৎ করেই প্রেশার বেড়ে যাওয়ায় উনি অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
মামুনের বাবা পাশেই বসে আছে।
–কিসের এতো টেনশন তোমার? যে হঠ্যাৎ করেই প্রেশার বাড়িয়ে ফেলেছো(মামুনের বাবা)
–আমার জায়গায় হলে বুঝতেন কি হয়েছে। আপনাকে শুনালে এখন আপনারও একই অবস্থা হতো।(বিড়বিড় করে)
–মেনমেন করে কি বলতেছো? ডাক্তার, দেখেনতো কথাও মুখে লেগে গেছে নাকি।
–আপনি একটু চুপ করবেন? আমি আছি আমার জ্বালায়।
–আরে, এ দেখি কথাও বলে।
–ভাই থামেন, আমি গেলে ঝগড়া করিয়েন। ভাবি এখন সুস্থ আছে, আমি বরং উঠি।(ডাক্তার)
–আচ্ছা ভাই, চলেন আমপনাকে এগিয়ে দেই।
মামুনের বাবা ডাক্তারের সাথে বাহিরে চলে যায়।
মায়ের বাপাশেই মামুন বসে আছে।
–হতচ্ছারা, কি করেছিস এটা।(বলেই মামুনকে মারা শুরু করে)
ওমনি মিষ্টি রুমে এসে হাজির।
–জেঠিমা, তুমি নাকি অসুস্থ হয়ে গেছো? আমাকে কেউ একবার ডাকলো ও না।
জেঠিমা এক নজরে মিষ্টির দিকে তাকিয়ে আছে।
–কি হয়েছে জেঠিমা?
–একটু এদিকে আসবি?
মিষ্টি এগিয়ে জেঠিমার পাশে গিয়ে বসে।
ওমনি জেঠিমা মিষ্টিকে বুকে জড়িয়ে নেয়।
মিষ্টি একটু অবাক হয়। হঠ্যাৎ কি হলো জেঠিমার?
পাশ থেকে ইশারায় মামুনকে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে।
মামুনও ইশারায় বলে যে মাকে সব বলে দিয়েছে।
মিষ্টি এখন বুঝতে পারে কেনো জেঠিমা ওকে বুকে জড়িয়ে নিয়েছে।
লজ্জায় নিজেই নিজের জিব্বাহ কামড় দেয়।
–আমাকে একবার জানানোর ও প্রয়োজন মনে করলি না?(জেঠিমা)
–সরি জেঠিমা, আমি ভয়ে কিছু বলি নি।(মিষ্টি)
–কেনো এমনটা করলি? জানিস এর জন্য কতবড় ঝামেলা হতে পারে?
–আমি তোমাদের ছেড়ে কোথায়ও যাবো না। মামুনকেও হারাতে পারবো না। তাই বিয়েটা করতে হলো।
–তোর হবু বর এসেছে?
–হ্যা, বাবার সাথে কথা বলতেছে। আমি এখনো যাই নি।
–আচ্ছা যা, তোকে আবার খুজবে।
–জেঠিমা, বাবাকে সবটা খুলে বলো না।
–তোর বাবা যেই রাগি, আমি পারবো না। দেখি তোর জেঠুকে দিয়ে কিছু বলানো যায় কিনা।
–ঠিক আছে, আমি গেলাম।
–যা।
.
এদিকে মামুনের মা মামুনকে ইচ্ছামত বকে যাচ্ছে। মামুন নিরব দর্শক হয়ে সব শুনতেছে।
কিছু বলতে গেলে এখন একটা মাইরও মাটিতে পড়বে না।
এদিকে মিষ্টির হবু বর মিষ্টিকে দেখতে চেয়েছে।
মিষ্টি মা মিষ্টিকে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছে। সবার সামনে হাতে চা নিয়ে মিষ্টি হবু বরের সামনে আসে।
মিষ্টি এখনো নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। নিচের দিকে তাকিয়ে থাকলেও মিষ্টি ভালো ভাবেই বুঝতে পারছে যে ছেলে মিষ্টির দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে।
মিষ্টি কিছুটা অসস্থি বোধ করে।
এদিকে সবাই বলছে দুজনকে আলাদা করে কথা বলতে দেওয়া হোক।
ছেলে এক পায়ে রাজি আলাদা কথা বলার জন্য।
মিষ্টি হবু বরকে নিয়ে নিজের রুমে আসে।
রুমে আসার পর থেকেই ছেলেটা মিষ্টির দিকে তাকিয়ে আছে।
মিষ্টি তা ভালোভাবেই বুঝতে পারে এবং নড়েচড়ে বসে।
মিষ্টি এখনো ছেলেটাকে দেখে নি। নিচের দিকেই তাকিয়ে আছে।
–আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?(ছেলেটা)
–জ্বি করেন।
–এই বিয়েতে আপনার কেনো আপত্তি আছে?
–হুম, আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না।
–কেনো?
–আমি আগে থেকেই বিবাহিত।
–কি বলছেন এসব?
–আমি ঠিকই বলছি, আমি অন্য কারো স্ত্রী।
–কে সে?
–দেখা করবেন তার সাথে?
–হুম।
–চলেন আমার সাথে।
মিষ্টি ছেলেটাকে সাথে নিয়ে মামুনের রুমের দিকে হাটা দেয়।
–একিরে, কোথায় যাচ্ছিস তোরা?(মিষ্টির বাবা)
–ওনাকে ঘরটা একটু ঘুরিয়ে দেখাই।
–আচ্ছা যা।
মিষ্টি ছেলেটাকে সাথে নিয়ে মামুনের রুমে এসে হজির।
–হ্যালো, আমি মামুন।
–আমি আদি।
–ক্ষমা করবেন। আপনাকে কষ্ট দিতে চাইনি। চাইলে আপনার পরিবারকে ব্যাপারটা জানাতে পারতাম। কিন্তু ওনারা ব্যাপারটা কিভাবে নিবে এই ভয়ে কিচ্ছু বলি নি। আপনার জন্যই আমরা অপেক্ষা করছিলাম, সত্য টা জানানোর জন্য।
–বুঝলাম, তো এখন আমার কি করনীয়?
–আপনি প্লিজ এই বিয়েটা ভেঙে দিন। খুব কৃতজ্ঞ থাকবো আপনার কাছে।
–আরে ভাই, কিজে বলেন না। কারো কাছ থেকে কি খুশি কেড়ে নেওয়ার অধিকার আমার আছে? আপনারা নিশ্চিন্তে থাকেন। আমি এই বিয়ে করবো না।
–থ্যাংকস ভাই, অনেক বড় উপকার করলেন। আপনার এই ঋণ আমরা কখনো সোধ করতে পারবো না।
–আরে ভাই, কি যে বলেন। যত তাড়াতাড়ি পারেন বিয়ের ব্যাপারটা সবাইকে বলে দিন। নাহলে আবার সমস্যা হয়ে যাবে।
–হ্যা ভাই, বলে দিবো।
–তাহলে আজ আমি চলি, আর হ্যা, আপনার বিয়ের অনুষ্ঠানে আমাকে দাওয়াত দিতে ভুলে যাবেন না কিন্তু।
–না ভাই, ভুলবো কেনো। আপনি আমাদের এত বড় একটা উপকার করছেন। আপনাকে কি এত তাড়াতাড়ি ভুলে যাবো?
–ওকে ভাই, আল্লাহ হাফেজ।
.
লোকটা সব কিছু সুন্দর ভাবেই শেষ করে বাড়ি চলে যায়।
এবং বাড়ির সবাইকে জানিয়ে দেয় যে তার মেয়ে পছন্দ হয়নি।
এদিকে মিষ্টির বাবা রেগে একাকার। কথা বার্তা সব ফাইনাল হয়ে আছে, কাবিন ও করে রাখা আছে। এখন বলছে বিয়ে হবে না। এটা কি ধরনের অসভ্যতা?
বাড়ির সবাই মিষ্টির বাবাকে শান্ত করায়।
অন্যদিকে মিষ্টি আর মামুনের খুশি দেখে কে।
জেঠিমাও আজ খুব খুশি। যেন গলার কাটা নেমে গেছে।
এবার নির্ভয়ে মিষ্টির বাবার কাছ থেকে মেয়েকে চেয়ে নিতে পারবে।
তবুও ব্যপারটা হুট করে ঘরে যাওয়ায় মিষ্টির বাবার মাথা গরম।
তাই তিনি ঠিক করলেন আরো কিছুদিন পর মিষ্টির ব্যাপারে কথা বলবেন।
মিষ্টি আজ ভীষণ খুশি।
–জেঠিমা, তুমি খুশি হওনি?
–ওমা, কি বলে মেয়েটা। খুশি হব না কেনো? কিছুদিন অপেক্ষা কর, তারপর তোর বাবাকে বলে তোকে আমার ঘরে তুলবো?
–তুমি আমায় বউ হিসেবে মেনে নিয়েছো?
–তোকে তো আমার আগে থেকেই পছন্দ। তবে কাউকে না জানিয়ে এভাবে বিয়ে করাটা তোদের মোটেও ঠিক হয়নি।
–কি করবো বলো, টেনশনে পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম। তাইতো বিয়েটা করতে বাধ্য হলাম।
–আর চিন্তা করিস না। বাকিটা আমি আর তোর জেঠু মিলে ব্যবস্থা করবো। যা ঘরে যা।
–না, আজ মামুনের সাথে ঘুমাবো।
–কি বলিস? তোর মা জানতে পারলে আস্ত রাখবে না।
–কেনো? আমি আমার স্বামীর সাথে থাকতে পারবো না?
–পারবি, কেনো পারবি না? কিন্তু সেই সময়টা এখনো আসে নি।
–আমি মাকে বলেছি আজ একা থাকতে ভালো লাগছে না, আমি জেঠিমার সাথে ঘুমাবো। আম্মু বলছে ঠিক আছে, তাইতো চলে এলাম।
–তাহলে আয়, আজ আমরা একসাথে ঘুমাবো।
–ধুর বুড়ি, তোমার সাথে ঘুমাতে আসছি নাকি? আসছি তো আমার জামাইর সাথে ঘুমাইতে।
–শয়তান মাইয়া কোনানের, আমি বুড়ি?
–তো কি? পোলা বিয়া করছে, এখনো কি নিজেরে জোয়ান ভাবো? কয়দিন অপেক্ষা করো, নাতি নাতনি আসতেছে।
–তাই নাকি? তাইলে আর আমার পোলার কাছে যাওন লাগবো না। ঘরে চলি যান।
–এই না, আমি তো দুষ্টমি করছি। প্লিজ জেঠিমা।
–কি এক জ্বালায় পড়লাম বলতো। তোরা আবার কোন বিপদ বাধাস আল্লাহই ভালো জানে, আমি বাবা এসবের মধ্যে নাই।
–যাই?
–তোর মা যদি রাতে তোকে খুজতে আসে?
–বলবা যে ও বাথরুমে গেছে, এই সুযোগে আমাকে একবার ডাক দিও, আমি চলে আসবো।
–আচ্ছা যা।
.
মিষ্টি নাচতে নাচতে মামুনের রুমে চলে আসে।
–আজ এত তাড়াতাড়ি চলে এলি যে?
–কেনো? আমার জামাইর কাছে কি তাড়াতাড়ি ও আসা যাবে না?
–সেটা নয়, কেউ দেখে ফেললে?
–দেখবে না। আমি জেঠিমাকে বলে এসেছি। বাহিরে জেঠিমা সামলে নেবে।
–কি বজ্জাত মেয়েরে তুই, আমার আম্মুকে কাজে লাগিয়ে দিয়েছিস?
–তো?এখন থেকে তো আমারও আম্মু হয়। তো আম্মু কি আমাকে সাহায্য করতে পারবে না?
–হুম পারবে তো।
–আমার এখন আর তোকে ছাড়া ঘুম হয় না। খালি তোর কাছে আসতে ইচ্ছা হয়।
–কেনো কেনো?
–জানি না, মন চায় সারাক্ষণ তোকে জড়িয়ে ধরে রাখি।
–তাই? আর কি কি মন চায়?
–সব কি বলতে হবে? জামাই হইছিস, বুঝে নিতে পারিস না?
–সবই তো বুঝি,
–বাল বুঝস, আমি যে তোর জন্য সারাক্ষণ ছটপট করি, তুই কি সেটা বুঝিস? তোকে না দেখলে যে আমার কিছুই ভালো লাগে না, সেটা বুঝিস? তোর বুকে মাথা না রেখে শুইলে যে আমার ঘুম আসে না, সেটা বুঝিস?
–বাপরে…
–বুঝবি কেমনে? তুইতো ছাগল। সব কিছু আমাকেই করতে হয়।
–এহ, আমি যেনো কিচ্ছু করি না।
–কি করেছিস তুই? আচ্ছা সব বাদ দিলাম। এখন পর্যন্ত আমাকে একবারও কি ভালোবাসি বলেছিস? একবার ও লুকিয়ে আমার সাথে দেখা করতে গিয়েছিস? একটাও পাপ্পি দিয়েছিস? একবারও কি নিজে থেকে আমাকে বুকে জড়িয়ে নিয়েছিস? সবই আমাকে করতে হয়।
–ম্যানেজ করে নে না। আমার কেমন যেনো লজ্জা করে, তাই তো পারি না।
–লজ্জা করার কথা আমার, কিন্তু লজ্জা তোর করে। পাগল কোথাকার।
–হি হি হি…
–আচ্ছা, আমার মধ্যে কি কোনো পরিবর্তন হয়েছে?
–কিরকম?
–শারীরিক ভাবে।
–হুম হালকা হালকা।
–কিন্তু আমিতো বুঝতে পারছি না। জেঠিমা আজ আমাকে বলছিলো, আমার নাকি শারীরিক ভাবে পরিবর্তন হচ্ছে।
–কি জন্য হচ্ছে এমন?
–গাধা, ১ম ১ম মেলামেশার পর মেয়েদের এমন পরিবর্তন হয়। ও তুই বুঝবি না। জেঠিমা যখন আমাকে বলছিলো তখন আমি ভয় পেয়ে গেছিলাম, যদি ধরা পড়ে যাই।
–ভয় কিসের? বিয়ে তো করেই ফেলেছি।
–তা তো ঠিক আছে, আচ্ছা বাদ দে। আমায় একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরবি? ঘুমিয়ে যাবো।
–এত তাড়াতাড়ি?
–হুম, সকালে তাড়াতাড়ি উঠতে হবে। নাহলে আম্মু নামাজের জন্য ডাকতে আসলে ধরা পড়ে যাবো।
–আচ্ছা ঘুমিয়ে পড়।
–আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দে।
–আচ্ছা।
মিষ্টি মামুনকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে।
মামুন এক নজরে মিষ্টির দিকে তাকিয়ে আছে, আর ভাবছে।
মেয়েটা কেনো আমায় এতো ভালোবাসে? কি এমন আছে আমার কাছে? ও আমায় এতোটা ভরসা করে বিয়ে করেছে। নিজে পরিবারের কথা না ভেবে নিজেকে আমার কাছে শপে দিয়েছে, এতোটা ভালোবেসেছে। আমি বেচে থাকতে তোমায় কখনো কষ্ট পেতে দেবো না। সারাজীবন তোমায় ভালোবেসে যাবো তোমার মতো করে। তুমি যেভাবে চাও,। তুমি তো চাও আমি তোমার জন্য সারাক্ষণ ছটপট করি। হ্যা আমি তোমার জন্য ছটপট করি, কিন্তু তোমাকে বুঝতে দেই না। কারন দুজনই যদি ভালোবাসায় পাগল হয়ে যাই, পরিস্থিতি সামলাবে কে? আমার ভালোবাসাগুলো না হয় সংসার জীবনের জন্য তুলে রাখলাম।
আমার পাগলিটাকে সারাজীবন আমার করেই রাখবো।
ভোরবেলা দরজা খোলার শব্দে মিষ্টির ঘুম ভাঙে। মামুন তখনো ঘুমিয়ে।
তখনো সকালের আলো ফুটে নি।
মিষ্টি মনে মনে ভাবে, জেঠিমা হয়তো মিষ্টিকে ডাকতে এসেছে।
মিষ্টি বিছানা ছেড়ে উঠে দরজার সামনে যেতেই তার চোখ কপালে উঠে যায়।
এ যে মিষ্টির মা….
.
.
.
চলবে…….
.
লেখক :- #A_Al_Mamun